২০১৮ এর এশিয়া কাপ ফাইনালে হারটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের পথচলার গল্পটা পুরোপুরি অন্যদিকে ডাইভার্ট করে দিয়েছে। সেদিন যদি থার্ড আম্পায়ারের বেনিফিট অব ডাউটটা ব্যাটসম্যানের পক্ষে যেত, বাংলাদেশের ক্রিকেট বুড়ো জেনারেলদের রসুইঘর না হয়ে হতে পারত নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের ঔদ্ধত্য দেখানোর প্লাটফরম, এবং এই যে হলো না এর দায় একান্তই লিটন দাসের।
২০১৮ এশিয়া কাপের সেই ফাইনালটা এমন এক ম্যাচ যেখানে প্রথম ইনিংসের ২২২ রানের ১২১ই এসেছে এক ব্যাটসম্যানের থেকে, এবং দুই দল মিলিয়েও কোনো ব্যাটসম্যান ফিফটি করতে পারেনি!
একে তো প্রতিপক্ষ ভারত, তার উপর ফাইনালে অমন ইনিংস এবং চ্যাম্পিয়ন হওয়া— অভাবনীয় ব্যাপার স্যাপার! সেই ম্যাচে থার্ড আম্পায়ার লিটনকে যদি নট আউট দিতেন কেউ প্রশ্ন তুলতো না, আউট দিয়েছেন সেটাও আসলে ভুল সিদ্ধান্ত নয়।
কিন্তু ভাগ্য যেহেতু সেদিন ফেভার করেনি তাই লিটন দাসের জুটেনি নায়কের চরিত্র, ভিলেনও নয়, বরং ভাগ্য তাকে দিয়েছে লো বাজেট সিনেমার সাইড নায়কের রোল। আমির খান এর পরিবর্তে তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বাংলা সিনেমার ‘আমিন খান’ হিসেবেই।
কেন এসব বলছি?
লিটন দাস এর নাম জিম্বাটন দাস, কেউ কেউ এমনও বলছে জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে বছরে ২ টা সিরিজ আয়োজন করলে লিটনের পক্ষে শচীন টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরির রেকর্ডও ভেঙ্গে ফেলা খুবই সম্ভব। যারা আরেকটু এলিট পশ শ্রেণির তাদের মতে লিটন দাসের রূপে শাহরিয়ার নাফিসের পুনর্জন্ম হয়েছে।
এমন চিন্তাধারার লোকদের দোষারোপ করা যায়? নাহ।
দেশের শীর্ষস্থানীয় মিডিয়া প্রথম আলো সংবাদ করেছে ‘জিম্বাবুইয়েকে পেয়েই জ্বলে উঠলেন লিটন’, অর্থাৎ বিষয়টা এমন হয়েছে জিম্বাবুইয়ে ছাড়া লিটন দাস খেলতে পারে না।
এর সপক্ষে তারা হাজির করবে ৩ ফিফটি আর ৪ সেঞ্চুরি মিলে যে ৭টা ৫০+ ইনিংস খেলেছে লিটন তার ৪টাই তো জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে। তাহলে এই কথায় ভুল কোথায়?
পরিসংখ্যান অতি উচ্চস্তরের চিন্তাপদ্ধতি, কিন্তু মূর্খ আর ইডিয়ট প্রকৃতির মানুষের হাতে পড়লে এই পরিসংখ্যান দিয়েই আপনাকে ঘোল খাওয়ানো ৫ সেকেন্ডের ব্যাপার।
পরিসংখ্যানে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর প্যারামিটার এবং ফিল্টার সেট করা। সেগুলো উদ্দেশ্যমূলক হলে পরিসংখ্যানকে আপনার ভুয়া মনেই হতে পারে।
যে কোনো অনুসিদ্ধান্ত তৈরির ক্ষেত্রে স্যাম্পল সেট এর সাইজ অতি গুরুত্বপূর্ণ। খুবই সীমিত স্যাম্পল সাইজের ভিত্তিতে তৈরিকৃত পর্যবেক্ষণ অসংখ্য ভুল ইমপ্রেসন তৈরি করে। কোনো ব্যাটসম্যানের এবিলিটি বা ট্রেন্ড বুঝতে ন্যূনতম স্যাম্পল সাইজ কত হওয়া উচিত? আমি মনে করি ১২ থেকে ১৫ ইনিংস, কিন্তু বাংলাদেশ ২-৩টা টিমের বাইরে অন্যদের বিপক্ষে এত কম খেলে যে ১৫ ইনিংস স্যাম্পল সাইজ হিসেবে নেয়ার ক্ষেত্রে ঝামেলা আছে কিছুটা।
তাই ১২ ইনিংস নিলাম স্যাম্পল সাইজ।
লিটন দাস তার ৪৫ ইনিংসের ক্যারিয়ারে সর্বাধিক ১০ ইনিংস খেলেছে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে; এটা কি সে সিলেক্ট করেছে? ১০ ইনিংসের মধ্যে ৩টা সেঞ্চুরি, ১ টা ফিফটি। বাকি ৬ ইনিংসে কিন্তু রান পায়নি। অর্থাৎ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে খেললেই রান করে, স্টেটমেন্টটা ত্রুটিপূর্ণ। যেহেতু এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি খেলেছে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে, তাই পারফরম্যান্স কার্ভটা এখানে তীক্ষ্ম। ১৫ ইনিংস পরেও এমন থাকবে বলা যায় কি?
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, লিটন তার ৪৫ ইনিংসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এখনো পর্যন্ত কোনো ম্যাচ খেলারই সুযোগ পায়নি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ১টা, তাও বিশ্বকাপের ৩৮৬ চেজ করা ম্যাচে; ৫ এ নেমে ২০ করেছিল। ভারতের বিপক্ষে ৬ ইনিংস, তার মধ্যে ১টা সেই বিখ্যাত ১২১; বিশ্বকাপপূর্ব প্রস্তুতি ম্যাচেও ৭৬ ছিল, তাই ভারতের বিপক্ষে একটা প্যাটার্ন তৈরি হলেও হতে পারে। ৬ ইনিংসের মধ্যেও দুটো অধ্যায়। প্রথম ৩ ইনিংস ছিল তার ওয়ানডে অভিষেকের সিরিজ, যে ৩ ইনিংস দেখে লোকজন তাকে লেগসাইড কিং খেতাব দিয়েছিল। পরের ৩ ইনিংসের মধ্যেই সেই ১২১!
জিম্বাবুইয়ের পরে ২য় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা হয়েছে উইন্ডিজের বিপক্ষে, ৭টি, তার মধ্যে ১টা বিশ্বকাপে ৩২২ চেজিংয়ে ৬৯ বলে ৯৪ এর ইনিংস, ৪০+ ইনিংসও আছে একটা।
পাকিস্তানের বিপক্ষে লিটন ম্যাচ খেলেছে মাত্র ২টা। তার মধ্যে ১টা গত বিশ্বকাপে ৫নম্বরে নেমে ৩২ আর অন্যটা ২০১৮ এশিয়া কাপে; ৩ রান করে জুনায়েদের ইনসুইঙ্গারে বোল্ড।
সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ইনিংস ৬টা। তার মধ্যে প্রথম ৩টা অভিষেকের পরে ২য় সিরিজ, অন্য ৩টা ২০১৭ সাউথ আফ্রিকা সফরে, যখন লিটনকে আমরা লিটন হিসেবে চিনতাম না, যদিও সেই সফরেই টেস্টে ৭০ রানের ইনিংস দেখেই লিটন দাস প্রথমবারের মতো নজর কাড়ে আমার। সর্বশেষ ৪ বছরে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচই খেলা হয়নি তার।
৩টি ম্যাচ খেলা পড়েছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে, সেখানে ৪১ রানের একটি প্রমিজিং ইনিংস ছিল ২০১৮ এশিয়া কাপে।
লিটনের জন্য মূর্তিমান আতংক হবে সম্ভবত শ্রীলংকা এবং নিউজিল্যান্ড। শ্রীলংকার বিপক্ষে খেলা ৩ ইনিংসের ২টাতেই ডাক মেরেছে, অন্যটায় ২৫! নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোমে বা নিউট্রাল ভেন্যুতে এখনো খেলা পড়েনি, ৬ ইনিংসের প্রতিটিই নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে। ৩ বার ১, একবার শূন্য, সর্বোচ্চ ২২, যদিও ওই ইনিংসটা খুবই প্রমিজিং ছিল।
অন্য ম্যাচটি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের হোম কন্ডিশনে, সেখানে ৭৬!
যে ব্যাটসম্যানের ফিফটির চাইতে সেঞ্চুরি বেশি, এবং ফিফটিরানের মধ্যেও সর্বনিম্নটি ৭৬, অর্থাৎ কনভারশন রেট দুর্দান্ত; যে অবলীলায় স্ট্রাইক রোটেট করতে পারে, যে কোনো সময় গিয়ার চেঞ্জ করতে পারে, তাকে জিম্বাটন দাস বানানোটা হীনম্মন্যতার লক্ষণ। একক কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে যে এখনো ১২টা ইনিংসও খেলার সুযোগ পেল না, তার পূর্বেই মিডিয়া আর ইউটিউব কনটেন্ট ক্রিয়েটররা বানিয়ে দিয়েছে অন্য দলের বিপক্ষে লিটন খেলে শখের বশে!
এর কারণ কী হতে পারে?
দর্শক পয়েন্ট অব ভিউ থেকে দেখলে, যেহেতু তার ব্যাটিং স্টাইল বিশ্বের যে কোনো ব্যাটসম্যানের মধ্যেও আলাদাভাবে চোখে পড়ে, তারা চায় প্রতি ম্যাচেই সে রান করুক, এবং করে না বলেই মনের জ্বালা জুড়ায় গালিগালাজ করে৷ এটা ১০০% ওকে।
কিন্তু সাংবাদিক বা মিডিয়া এরকম লিটন বিদ্বেষী কেন?
এর উত্তর খুঁজতে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছি। আজ পর্যন্ত কোনো পত্রিকা বা টেলিভিশনে লিটনের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার পড়েছেন বা দেখেছেন? কেন দেখেননি বা পড়েননি; সাংবাদিকরা কি চেষ্টা করেনি? নিশ্চিতভাবেই করেছে, কিন্তু যেহেতু লিটন স্বল্পভাষী এবং কিছুটা নিভৃতচারী, আমাদের সামাজিক কনটেক্সট এ এধরনের মানুষকে অবলীলায় অহংকারী বা ভাব বেশি ট্যাগ জুড়ে দেয়া হয়। সাংবাদিকদের টাকা পয়সা দিয়ে হাতে রাখা বা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখাটাই যেখানে অনেক ক্রিকেটারের স্ট্রাটেজিকাল এপ্রোচ, সেখানে সামান্য এক লিটনের এত স্পর্ধা বরদাশত করা যায় নাকি! আমার ধারণা এটাই হয়েছে। অলরাউন্ডার চ্যানেলের দেব চৌধুরী আর নট আউট নোমানের কনটেন্টগুলো খেয়াল করলেই লিটন সংক্রান্ত এলার্জির উৎস বোঝা যায়।
তবু লিটন টিকে যাওয়ার কারণ সম্ভবত দুটো। প্রথমত অধিনায়ক মাশরাফি তার ব্যাটিংয়ের প্রকাশ্য ভক্ত। দ্বিতীয়ত যে কোচই আসুক, তার ব্যাটিংকে আলাদাভাবে রেইট করে।
ব্যাটিংয়ের বাইরে শুধু ফিল্ডার হিসেবেও যদি কাউন্ট করা হয়, লিটনকে ফেলে দেয়া অসম্ভব।
কালকের ম্যাচেই ইনিংসটা যদি সাকিব বা তামিম খেলতো, এমনকি মোহাম্মদ মিঠুনও যদি হত, এতক্ষণে তার মহিমা অন্য লেভেলে চলে যেত। কালকের ম্যাচে ২৭৬ তোলার পরই বোঝা গেছে জিম্বাবুইয়ে হেরে যাবে। তবু সাকিবের ৫ উইকেট পাওয়া নিয়ে যতগুলো নিউজ পড়লাম, লিটনের সেঞ্চুরির নিউজসংখ্যা কম সেতুলনায়।
সাকিবও সাংবাদিকদের পাত্তা দেয় না শোনা যায়। কিন্তু তার বৈষয়িক বুদ্ধি অতুলনীয়, মানসিকভাবে অত্যন্ত দৃঢ়, তাই সে পার পেয়ে গেছে এতদিন পর্যন্ত।
লিটন দাসের ব্যক্তিত্ব অনেকটা চিত্রশিল্পী বা মিউজিক কম্পোজারের মতো; এখনকার কঠোর ডিপ্লোম্যাটিক এবং কর্পোরেট পলিটিক্সের যুগে তার পক্ষে টিকে থাকা অসম্ভব হবে যদি পিআর কৌশলে সে উন্নাসিকতা দেখায়। এক্ষেত্রে অনেক বড়ো রোল প্লে করতে হবে তার স্ত্রীকে। আমার ফ্রেন্ডলিস্টের যদি কেউ লিটনের স্ত্রী সঞ্চিতাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনে থাকেন, তার সঙ্গে লিটনের পিআর স্ট্র‍্যাটেজি বিষয়ে আলোচনা করবার অনুরোধ রইলো।
পারফর্মিং আর্টে প্রতিদিন জন্ম-মৃত্যুর অভিজ্ঞতা হয় একজন আর্টিস্টের। চরাই-উতরায় পেরিয়ে টিকে থাকতে হয়। যখন আপনার পারফরম্যান্স পক্ষে থাকবে এসব কিছুই লাগবে না, কিন্তু শরীর যেমন অসুস্থ হয়, পারফরমারেরও ব্যাড প্যাচ আসে, আসবেই। সেই সময়ে সাপোর্ট লাগে, এই সাপোর্টটাই আপনাকে দেবে বিভিন্ন মিডিয়া। আপনি সলো আর্টিস্ট, যেমন লেখক-গায়ক-ফটোগ্রাফার হলে এসব ব্যাপারে শতভাগ নির্লিপ্ত থেকেও টিকতে পারবেন, কিন্তু যখন আপনি গ্রুপ আর্টিস্ট অর্থাৎ আপনার সঙ্গে আরো ১০ জন মিলে পারফর্ম করছে, এবং আপনার জায়গা নিতে মুখিয়ে আছে আরো ১০ জন সেসময় কেবলমাত্র পারফরম্যান্স একেবারেই যথেষ্ট নয়। লিটন শুধুমাত্র পিআর ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে আরেকটু কৌশলী হলেই জিম্বাটন দাস বলা ফেসবুকাররা বুঝতেও পারবে না কখন কীভাবে মিডিয়া তাকে লিটনের অনুরাগী বানিয়ে দিয়েছে। আদতে জনমত একটি মিথ, সমস্তটাই কারখানায় ম্যানুফ্যাকচারকৃত।
প্রতিপক্ষ অনুসারে নাহয় দেখালাম লিটন অন্য দলের সাথে ব্যর্থ এটা বলার মতো ডেটা তৈরিই হয়নি। তবু আর্গুমেন্টটা ইনভ্যালিড বা অসম্পূর্ণ যতক্ষণ পর্যন্ত অন্য কারো সাপেক্ষে তা মূল্যায়ন করা হয়। লিটন তার ৪৫ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ওপেনে খেলেছে ৩১টি, ৩ নম্বরে ৯টি, ৪ নম্বরে ১টি এবং ৫ নম্বরে ৪টি ইনিংস, অর্থাৎ স্বল্প ক্যারিয়ারেই ৪টি পৃথক পজিশনে খেলা হয়ে গেছে তার।
বিপরীতে আমরা তামিম ইকবালকে রেফারেন্স হিসেবে নিতে পারি, যে ২১৫ টা ইনিংসের সবগুলোই খেলেছে ওপেনার হিসেবে।
কেমন অবস্থা তামিমের, যে কারণে ৪টা বিশ্বকাপে সুপারফ্লপ হয়েও সে দেশসেরা ওপেনার, এবং বর্তমানের অধিনায়ক?
তামিম সর্বাধিক ৪২টি ম্যাচ খেলেছে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে। অর্থাৎ লিটন এখনো পর্যন্ত সব প্রতিপক্ষ মিলিয়ে যা খেলেছে তামিম এক জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেই তার সমান বা কাছাকাছি। ৪২ ইনিংসে তার ৩ সেঞ্চুরির বিপরীতে ফিফটি ৯টি, গড় ৪২.১০, স্ট্রাইকরেট ৭৯.৯৬; কেমন এটা?
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৯ ইনিংসে ২ সেঞ্চুরির বিপরীতে ৮ ফিফটি, গড় ৪১.৯৬, স্ট্রাইকরেট ৭৫.২৯; কেমন?
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৬ ইনিংসে ফিফটি মাত্র ৬টি, গড় ২৫.২৩, স্ট্রাইকরেট ৬৬.২৩!
শ্রীলংকার বিপক্ষে ২৬ ইনিংসে ২ সেঞ্চুরি ৫ ফিফটি, গড় ২৯.৯২, স্ট্রাইকরেট ৭৫.১৭!
ভারতের বিপক্ষে ১৮ ইনিংসে ৭ ফিফটি, সেঞ্চুরি নেই, গড় ৩৩.১১, স্ট্রাইকরেট ৮৪.৯০
পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৭ ইনিংসে ২ সেঞ্চুরি ৫ ফিফটি, গড় ৪২.৭৫, স্ট্রাইকরেট ৮৫.১৮
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪ ইনিংসে ২ সেঞ্চুরি কোনো ফিফটি নেই, গড় ৩৪.৮৫, স্ট্রাইকরেট ৮৮.৮৬
সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ১২ ইনিংসে ২ ফিফটি সেঞ্চুরি নেই, গড় ২৭.৫৪, স্ট্রাইকরেট ৭২.৬৬!
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ ইনিংসে ১ সেঞ্চুরি ৩ ফিফটি,গড় ৫৬.৪৪, স্ট্রাইকরেট ৮০.২৫
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পর্যাপ্ত খেলা হয়নি। ৯ ইনিংসে সেঞ্চুরি নেই, তবে ফিফটি ৪টি, গড় ৩৮.১১, স্ট্রাইকরেট ৮২.৪৪
আফগানিস্তানের বিপক্ষেও খুবই কম। মাত্র ৫ ইনিংস, ১ সেঞ্চুরি ১ ফিফটি, গড় ৫৪.৬০, স্ট্রাইকরেট ৭৮.৬৭!
কানাডা, বারমুডা, স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ১-২টা ইনিংস
তামিমের সমগ্র পরিসংখ্যান ফিল্টার করলে এটা তো পরিষ্কারভাবেই বলা যাচ্ছে পাকিস্তান বাদে বাকি কোনো দলের সাথেই তার পারফরম্যান্স সিগনিফিক্যান্টলি চোখে পড়ার মতো না, এবং একজন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের ৫০টা ফিফটির বিপরীতে সেঞ্চুরি ১৩টা, কী ভয়াবহ বাজে কনভারসন রেট!
কিন্তু মিডিয়া আপনাকে এমনভাবে পরিসংখ্যান প্রেজেন্ট করবে যার ভিত্তিতে মনে হবে তামিম ছাড়া ভাবাই যায় না।
প্রায় প্রতি ক্রিকেটারেরই প্রিয় প্রতিপক্ষ, প্রিয় মাঠ যেমন থাকে বিভীষিকাময় প্রতিপক্ষও থাকে। আমার অনুমান লিটনের সেই বিভীষিকা হবে শ্রীলংকা, যদিও ইনিংস মাত্র ৩টা, নিউজিল্যান্ড হয়তবা বিভীষিকা হবে না, তবে খুব আহামরি ভালোও হবে না, যদিও তামিমের তুলনায় বেটার না হওয়ার কারণ নেই৷ বাকি সব প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই তার রেকর্ড চেঞ্জ হয়ে যাবে,যদি শুরুতেই বাউন্ডারি চেষ্টা না করে সিঙ্গেলস এ মনোনিবেশ করে। কোনোভাবে ২৫-৩০টা বল টিকে গেলে রান আসবেই।
মাঠের খেলাটা ম্যানেজেবল, কিন্তু শত্রুভাবাপন্ন মিডিয়াকে এড়িয়ে টেকাটা অসাধ্য হবে, কারণ সাকিবের মতো পারসোনালিটি রপ্ত করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এই জায়গাটাতেই সঞ্চিতার মেন্টরিং বা কোচিং তার সর্বাধিক প্রয়োজন। অগভীর, হুজুগপ্রিয় এই সোস্যাল মিডিয়ার ভুজংভাজং ট্রায়াল থেকে বাঁচতে ভিন্ন কোনো উপায়ও নেই খোলা!