২জন ব্যতিক্রমী কিশোর-কিশোরীর জন্য মাসিক বৃত্তি!!
বাংলাদেশের যে কোনো সেকেন্ডারি স্কুলে ৭ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ১জন কিশোর এবং কিশোরীকে ২০২২ এর ৩১মার্চ পর্যন্ত প্রতি মাসে ১৭১১ টাকা হারে বৃত্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেটি শুরু হবে আসন্ন সেপ্টেম্বর থেকে; পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে পরবর্তীতে বৃত্তির মেয়াদ বাড়বার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশে বৃত্তির আবশ্যিক শর্ত হলো তাকে আর্থিকভাবে দরিদ্র অথবা একাডেমিক মেধাবী হতে হবে। শুরুতেই জানিয়ে রাখি, আমার কল্পিত বৃত্তিতে দুটো শর্তই প্রত্যাখ্যান বা বাতিল করা হয়েছে। তুমি দরিদ্র নাকি একাডেমিকালি তুখোড় তাতে আমি বিন্দুমাত্র ভাবিত নই, আমার একমাত্র বিবেচ্য তোমার মধ্যে ব্যতিক্রমীতার লক্ষণ রয়েছে কিনা, একমাত্র সেক্ষেত্রেই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।
আবেদনের প্রাথমিক শর্তসমূহ:
১. অনর্গল প্রশ্ন করার জন্য পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং শিক্ষকদের নিকট প্রায়ই বকাঝকা শুনতে হয়।
২. স্যার বা গাইড বইয়ের সহায়তা ব্যতিরেকে নিজেই ৪০% গণিত সমাধান করতে পারো অথবা ফ্রি হ্যান্ডে বাংলা/ইংরেজিতে রচনা লিখতে পারো।
৩. সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়টা পড়তে বিশেষ ভালো লাগে, এবং নিজে নিজে বইয়ের বিষয়াদি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে পারো
৪. দুইটার বেশি প্রাইভেট বা কোচিং করো না।
৫. সর্বশেষ ১ বছরে প্রতি মাসে গড়ে ২টার বেশি বই পড়েছ
৬. লেখালিখি-আবৃত্তি-বিতর্ক-বিজ্ঞান প্রজেক্ট-গিটার বাজানো-গান গাওয়া-দাবা খেলা-ছবি আঁকা-সাইক্লিং-ক্রিকেট দেখা-স্কাউটিং-প্রোগ্রামিং-ফটোগ্রাফি-সিনেমাটোগ্রাফি-ইন্টারভিউ প্রভৃতি কার্যক্রমের অন্তত ৩টিতে দক্ষতা এবং সপ্তাহে ২৩ ঘন্টা সময় ব্যয় কর।
৭. কোনো সেলিব্রিটির প্রতি ভক্তি কাজ করে না, বরং তার/তাদের কাজের প্রতি আগ্রহ রয়েছে, এবং কেউ তাদের সমালোচনা বা নিন্দা করলে খারাপ লাগে না তথা অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হয় না।
৮. মা-বাবা বা যে কোনো অগ্রজ কোনো সিদ্ধান্ত দিলে বা মন্তব্য করলে বিনা বাক্য ব্যয়ে বা যুক্তি ব্যতীত মেনে নাও না, বরং মন্তব্যের কারণ শুনতে চাও।
৯. স্মার্টফোন ব্যবহার করো না, এবং টিকটক-পাবজি জাতীয় কার্যক্রমে কোনোরকম আসক্তি নেই।
১০. সমবয়সীদের চাইতে বয়সে বড়োদের সঙ্গে অধিক ঘনিষ্ঠতা
১১. ডাক টিকেট সংগ্রহ/মুদ্রা সংগ্রহ/অটোগ্রাফ-ফটোগ্রাফ সংগ্রহ/গাছ লাগানো জাতীয় বা এর বাইরেও যে কোনো একটি ব্যতিক্রমী শখ রয়েছে।
৭ নং শর্তকে আবশ্যিক ধরে বাকি ১০টির মধ্যে অন্তত ৫টি শর্ত পূরণ করো এমন কিশোর/কিশোরী বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারো।
তোমার নাম, স্কুলের নাম, শ্রেণি এবং আইডি কার্ড এর ছবি তুলে whatsapp করতে পারো। যেহেতু স্মার্টফোন ব্যবহার না করা শর্তের মধ্যে উল্লেখ করেছি, whatsapp করাটা সাংঘর্ষিক মনে হতে পারে। এক্ষেত্রে অভিভাবকের ফোন ব্যবহার্য।
স্পেশাল ফিল্টারিং: নির্বিচারে আবেদন ঠেকাতে একটি নিবন্ধ লিখে পাঠাতে হবে তোমাকে। ‘এক্সকিউজ মি’- এই বিষয়ে বাংলা অথবা ইংরেজিতে ন্যূনতম ৭০০ শব্দের একটি নিবন্ধ লিখে পাঠাও। কোনো বই বা বড়োদের সহায়তা নিলে আবেদন বাতিল গণ্য হবে। নিবন্ধ লিখে whatsapp করো 01838666487 নম্বরে
বৃত্তির নিয়ম:
১. নিবন্ধ এবং অন্যান্য ডকুমেন্টসহ আবেদনকারীদের প্রথমে শর্টলিস্টেড করা হবে। শর্টলিস্ট করা কিশোর-কিশোরীদের অনলাইনে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হবে।
২. নির্বাচিত ২জন কিশোর-কিশোরীকে প্রতি মাসে ২টি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। কোনো মাসে অ্যাসাইনমেন্ট মিস করলে সেই মাসের বৃত্তি স্থগিত থাকবে। ৭ মাস ব্যাপী বৃত্তিতে ২ মাসের অধিক অ্যাসাইনমেন্ট মিস করলে বৃত্তি বাতিল হয়ে যাবে। অ্যাসাইনমেন্টগুলো মূলত চিন্তাপ্রক্রিয়া ডেভেলপ করা এবং মেন্টাল টাফনেস তৈরির অংশ।
৩. প্রতি মাসের ১১ তারিখে নির্ধারিত নম্বরে বৃত্তির টাকা বিকাশ করে দেয়া হবে।
কেন দিচ্ছি বৃত্তি?
ক্লাস সেভেন থেকে এসএসসি- এই সময়টাই একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব আর মননশীলতা বিকাশের উপযুক্ত সময়। এখানে যদি গ্রুমিং বা স্কুলিংটা মেথডলজিকাল হয় তাকে ব্যতিক্রমী হওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে দেয়া যায়। গত ২ বছর ধরে কামরুন্নেসা স্কুলের এক কন্যাশিশুকে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে তার চিন্তাপ্রক্রিয়ায় যে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি মূলত সেই এক্সপেরিমেন্টের সাফল্যই আমাকে উৎসাহিত করেছে আরেকটু বড়ো স্কেলে কাজ করার। একই বয়সের একজন কিশোর আর কিশোরীকে যদি একইরকম টাস্কের অধীনে ৩ বছর রাখা হয়, নির্দিষ্ট সময় শেষে কিশোর আর কিশোরীর মধ্যে মাত্রাগত কী কী পরিবর্তন আসে সেই পর্যবেক্ষণ এবং উপলব্ধি তৈরির মানসেই এই বিনিয়োগ। ঝাঁকের কৈ নয়, একাকী নক্ষত্র চাই।
আবেদনের শেষ সময় ২৯ আগস্ট, ২০২১।
দেখা হবে!