বাংলাদেশ সফরের নিউজিল্যান্ড স্কোয়াড দেখে মনোভাবশূন্যতায় ভুগছি। তাদের বিশ্বকাপ দলের একজন খেলোয়াড়ও বাংলাদেশ সফরে আসছে না, অর্থাৎ নিঃসংকোচে একে ‘নিউজিল্যান্ড এ’ দল বলা যায়।
ওয়ানডেতে ২ বার হোম সিরিজ জিতলেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি২০ তে জেতা হয়নি কখনো। নিউজিল্যান্ডও জানে পূর্ণশক্তির দল নিয়ে এসেও শেষ ২ বার সিরিজ খোয়াতে হয়েছিল, তবু ‘এ’ দল পাঠানোর কারণ কী হতে পারে?
তার আগে প্রশ্ন করা উচিত, অস্ট্রেলিয়া একদম ৪-১ এ বিধ্বস্ত হলো, তাতে কি তারা খুব চিন্তিত?
বড়ো দল হওয়ার প্রধান বৈশিষ্ট্য আপনাকে স্পোর্টিং হতে হবে। স্পোর্টিং মানে কী; হার অথবা জিত দুটোকেই ফলাফল হিসেবে দেখতে হবে, হারলে সব ভুল জিতলে সব ঠিক এই কুৎসিত কালচার প্রতিষ্ঠিত হতে দেয়া যাবে না। ম্যাচের শেষ বল পর্যন্ত জেতার চেষ্টা করতে হবে, জিততে না পারলে হারাটাকে স্বাভাবিকভাবে দেখতে হবে৷ একটা ম্যাচ বা সিরিজ হারা মানেই পৃথিবী বদলে যাবে না, প্রসেস ঠিকমতো নারচার করা হচ্ছে কিনা সেটাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের কাছে হেরেছে এটা প্লেনে উঠামাত্রই ভুলে যাবে, কারণ তারা জানে বাংলাদেশের দৌড় আসলে কতটুকু। নিউজিল্যান্ড যদি ৫-০ তেও বিধ্বস্ত হয় সেটাকে তারা ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে দেখবে, বিকল্প খেলোয়াড় তৈরির প্রকল্প হিসেবেই গণ্য করবে।
তিন পুরুষ ধরে অন্যের জমিতে গোলামি করা পরিবারের কেউ হঠাৎ কিছু টাকা-কড়ি পেয়ে গেলে যেমন ফুটানি করে, বাংলাদেশের মিডিয়া-সমর্থকদের অবস্থাও সেরকম। তারা মানতেই পারে না দল হিসেবে বাংলাদেশ একেবারেই নিম্ন মাঝারি, এবং প্রতিপক্ষ দলগুলোও বাংলাদেশকে সেভাবেই গণ্য করে। কিন্তু আমরা বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার নিয়ে পড়ে থাকি, দেশসেরা ওপেনারকে ত্রাতা ভাবি, মিস্টার ডিপেন্ডেবল, সাইলেন্ট কিলার নিয়ে মজে আছি। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ভারতের দলটা দেখুন; টেন্ডুলকার, আজহার আর কুম্বলে বাদে সেই অর্থে কোনো বড় পারফরমার নেই (সিধু পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯৪ করেছিল), তবু বলতে গেলে টেন্ডুলকার একাই ভারতকে সেমিতে তুলেছিল। পরবর্তীতে গাঙ্গুলী এসেছিল; সেই সীমিত সামর্থ্যের দলও তখন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শারজাহ টুর্নামেন্টে। আমাদের একাদশের ৫০% প্লেয়ার যদি এতই সমৃদ্ধ হয়, কেন আমরা বাছাই পর্ব খেলি, কেন ম্যাচ জয়ের পারসেন্টেজ এত কম— সেসব নিয়ে কোনো টিভি শো, পত্রিকায় আত্মসমালোচনা চোখে পড়ে না।
এই বিষয়ে প্রচুর লিখেছি, ওদিকে যেতে চাই না। কোয়ালিটি ক্রিকেট দেখতে চাওয়া কি নেগেটিভ প্রত্যাশা?
হোম এডভান্টেজ কনসেপ্টটা সাধারণত টেস্টে বেশি প্রযোজ্য। আমাদের লোকজন এমনকি হোম এডভান্টেজ কথাটাকেও ভুলভাল উপস্থাপন করে। অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ড বাউন্সি বা গ্রিন টপ বানায়। এসব পিচে তাদের ব্যাটসম্যানরা স্বচ্ছন্দ বোধ করে, এশিয়ান দলগুলো স্ট্রাগল করে। ভার‍ত একদা স্পিন ট্র‍্যাক বানাতো; তাদের ব্যাটসম্যানরা রান পেত, উপমহাদেশের বাইরের দলগুলো খাবি খেত। অর্থাৎ হোম এডভান্টেজের প্রধান শর্ত তোমার নিজের সেখানে কমফোর্টেবল হতে হবে। যেখানে তোমার নিজেরই গলদঘর্ম দশা, সেটা কীভাবে হোম এডভান্টেজ হয়?
যে উইকেটে বল ব্যাটে আসতে আসতে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় দুইবার ঘুরে আসা যায়, বল হাঁটুর উপর উঠে না, মার্বেলের ন্যায় গড়াতে গড়াতে বল গিয়ে আঘাত করবে প্যাডে অথবা স্ট্যাম্পে, সেখানে ক্রিকেট খেলাটাকেও নৈতিকভাবে সমর্থন জানাতাম যদি তোমার ব্যাটসম্যানরা খেলতে পারত। পারছে না তো। কিংবা এই উইকেটে স্ট্রাগল করলেও স্পোর্টিং উইকেটে ঠিকই কড়ায় গণ্ডায় পাওনা উসুল করতে পারত।
বরং এসব আন্ডারপ্রিপারড পিচে খেলার কারণে ভুল প্লেয়ারের প্রতি আস্থা তৈরি হয়। এধরনের পিচে তারাই সফল যারা ওভারের ৩টা বল ডট দিয়ে ৩ টা সিঙ্গেল নিয়ে ৪০ বলে ৪২ করতে পারবে। এধরনের সেলফিশ ব্যাটিং দেখে মনে হবে ওই ইনিংসটা না হলে ১০০ রানই পার হত না। কিন্তু ওই সেলফিশ ব্যাটসম্যান যে ব্যাটিং পিচেও একই এপ্রোচে খেলবে সেই ভাবনা আসবে না, এবং যারা উইকেটের পেসকে কাজে লাগাতে পারে তারা সঙ্গত কারণেই ব্যর্থ হবে, এবং দল থেকে বাদ পড়ার শংকায় থাকবে।
তাতে প্রাপ্তিটা কী হবে? আপনি বড়ো টুর্নামেন্টের জন্য দল গঠন করছেন একরাশ ভুল ইমপ্রেসনের উপর ভিত্তি করে।
তামিম, মুশফিক খেললো না তাতে কি সিরিজ জয়ে সমস্যা হয়েছে? এমনকি সাকিব আর মাহমুদুল্লাহও যদি বাইরে থাকতো বাংলাদেশ সিরিজ হারতো কার কার মনে হয়? অস্ট্রেলিয়া হেরেছে মূলত একক মুস্তাফিজের কাছে। তার সহযোগি ছিল শরীফুল, মাহেদি এবং নাসুম। সাকিব শেষ ম্যাচে ৪ উইকেট পেয়েছে, কিন্তু বাঁহাতি তানভীর বা রাকিবুল যে এরকম বোলিং করতো না তা কেন মনে হচ্ছে; পিচটাই তো স্লো বোলারদের স্বর্গরাজ্য। কিংবা ইয়াসির রাব্বিকে সুযোগ দিলে সে যে কনসিসটেন্ট হত না তা মনে হওয়ারই বা কারণ কী। আফিফ বাদে দুই দলের একজন ব্যাটসম্যানও কনফিডেন্ট ছিল না; সেই আফিফকে যদি উপরে ব্যাট করার সুযোগ দেয়া হত, দলের রান নিঃসন্দেহে বাড়ত।
বাংলাদেশ টি২০ তে কেন পারে না? কারণ
১.এখানে ওপেনে খেলে তামিম ইকবাল, ২০ টার বেশি টি২০ খেলা ৫০ জন ওপেনারের মধ্যে যার স্ট্রাইকরেট সর্বনিম্ন
২. এখানে ৩ নম্বরে ব্যাট করে তথাকথিত বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, যার তেমন কোনো স্কোরিং শটই নেই, এবং দ্রুতগতিতে রান তোলার সামর্থ্য যার প্রশ্নবিদ্ধ, এবং বিশ্বজুড়ে টি২০ লীগগুলোতে যিনি একজন ব্যাটিং জানা লেফট আর্ম অর্থোডক্স বোলার রোলে খেলে থাকেন। সেই প্লেয়ার জাতীয় দলের হয়ে টি২০ তে নেমে পড়েন ৩ নম্বরের মতো কার্যকর জায়গায়।
৩. এখানে রান এক্সিলারেট করার দায়িত্বে নিয়োজিত একজন সাইলেন্ট কিলার, যার রানিং বিটুইন দ্য উইকেট প্রাক্তন পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান ইনজামাম উল হকের সঙ্গে মানানসই, যিনি ১২০ বলের খেলাতেও ডট দিয়ে যান অকাতরে, তারপর ১-২টা বাউন্ডারি মেরে রান আর বলের ভারসাম্য রাখেন।
৪. পৃথিবীর সবচাইতে ওয়ান ডাইমেনশনাল বোলিং এটাক, যাদের বিপক্ষে একটু ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেট হলে এমনকি আয়ারল্যান্ড-নেদারল্যান্ডও অবলীলায় ১৭০-৮০ রান তুলতে সক্ষম। না আছে ভ্যারিয়েশন জানা পেসার, না আছে কোনো রহস্য বোলার, না আছে গতি দিয়ে ভড়কে দেয়ার মতো কেউ, বা প্রোপার গুগলি জানা কোনো লেগস্পিনার। সবেধন নীলমনি মুস্তাফিজ, স্পোর্টিং উইকেটে যার কার্যকারিতা বহুলাংশে হ্রাস পায়।
ট্যাকটিকালি এতগুলো ত্রুটি নিয়ে টি২০ তে ভালো করার কারণই নেই।
তবে এগুলোর কোনোটাই টি২০ তে খারাপ করার মূল কারণ নয়। আমরা যদি মূল কারণ খুঁজি, আউট হওয়ার ভয় থেকেই যাবতীয় রক্ষণাত্মক এপ্রোচের সূত্রপাত। ক্রিকেট নির্দিষ্ট দিন নির্ভর খেলা, যেদিন আপনি ভালো খেলবেন সেদিন সবকিছু ঠিকঠাক হবে, টপ এজড কিপারের মাথার উপর দিয়ে চার হয়ে যাবে। যেদিন ভালো খেলবেন না সেদিন প্রথম থেকেই গড়বড়ে লাগবে, এমনকি সুন্দর শট খেলেও ফিল্ডারের নৈপুণ্যে আউট হবেন। তাই সর্বাবস্থায় নিজের ন্যাচারাল খেলাটা খেলতে হবে, রান এলে এভাবেই আসবে, না এলে আউট— সিম্পল। বাংলাদেশের মিডিয়া, কোচ, ক্রিকেট বোর্ড, ধারাভাষ্যকাররা একটা উদ্ভট শব্দ উদ্ভাবন করেছে- দায়িত্বশীল ইনিংস। এই প্যাকেজের অধীনে আপনি শট খেলা বাদ দিবেন, ইমপ্রোভাইজের সামান্যতম চেষ্টা করবেন না, এবং অনবরত ডট দিয়ে মাঝেমধ্যে সিঙ্গেল নিবেন। এভাবে ৪৭ বলে ৪১ করার পরে একটা শট খেলার চেষ্টা করে আউট হবেন, বলবে দলের বাকিরা যখন ব্যর্থ সেসময় অমুকে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন। যে কারণে মুশফিকুর রহিম রিভার্স সুইপ খেলে এত নিন্দিত; অথচ রিভার্স সুইপ তার আরো বেশি বেশি খেলা উচিত। আউট হওয়ার তীব্র ভয়ের কারণে মাত্র ২ উইকেট পড়লেই এমনভাবে ব্যাট করে মনে হয় টেইলএন্ডাররা ব্যাট করছে। এই এপ্রোচে আপনি ম্যাচ জিততে পারবেন?
আপনি আফিফকে দেখেন, মাহেদি-সোহানকে দেখেন, কিংবা পারভেজ ইমনকে— এরা ২ রান করুক বা ২৫,এদের দেখে একবারও মনে হবে না আউট হওয়ার ভয় করছে; ব্যাটিং করতে থাকবে, রান না পেলে বুঝতে হবে দিনটা তার ছিল না।
কিন্তু মিডিয়া এক ভয়ানক তথ্যসন্ত্রাস চালায় সিনিয়র সিন্ডিকেটকে ঘিরে। নতুন কাউকে তারকা তারা হতে না দেয়ার সবরকম কৌশল জারি রাখে। যে সিরিজে মুস্তাফিজকে কেউ খেলতেই পারলো না, সেখানে ম্যান অব দ্য সিরিজ পুরস্কার পেল সাকিব আল হাসান! কারণ কী? সে কিছু রান করেছে, বোলিংয়ে উইকেট পেয়েছে। কিন্তু ৫ ম্যাচের ৩টাতেই যে তার ব্যাটিং টি২০ উপযোগি তো নয়ই উপরন্তু দল হারানোর মতো সেই ফ্যাক্ট বিবেচনাতেই নেয়া হলো না। এতটা কনফিডেন্ট ব্যাটিংয়ের পরও আফিফকে ৫ ম্যাচে ৩টা আলাদা ব্যাটিং পজিশনে (৫,৬,৭) কেন নামানো হলো সেই গেমপ্ল্যানের কোনো সমালোচনা পেলাম না একটা পত্রিকাতেও। উপরন্তু মিঠুনের মতো একজন মেধাহীন ক্রিকেটারকে মিডল অর্ডারে না খেলিয়ে আফিফকে সেখানে ট্রাই করা উচিত কিনা সেই জিজ্ঞাসাও নেই, তাকে বানানো হচ্ছে ফিনিশার; স্বভাবতই সেখানে সে ব্যর্থ হবে, এবং বাদ পড়বে দল থেকে। আমরা আবারো জানবো অভিজ্ঞদের রিপ্লেসমেন্ট নেই। আপনি চেষ্টা করবেন মিঠুনকে, নাঈমকে— রিপ্লেসমেন্ট আসবে কীভাবে! এংকর রোলের জন্য যথার্থ প্লেয়ার লিটন দাসকে বলবেন মেরে খেল, আর তামিম ইকবাল আরামসে খেলে যাবে, লিটন-সৌম্য ব্যর্থ হবে এবং আপনারা রটিয়ে দিবেন তামিমের রিপ্লেসমেন্ট নেই। যতদিন পর্যন্ত তামিম ইকবালকে সাদা বলের ক্রিকেট থেকে অপসারণ করতে না পারবেন কোনো টুর্নামেন্টে কম্পিটিটিভ ম্যাচ খেলার আশা চিরতরে বন্ধ রাখুন।
অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ড উভয় দলই বিশ্বকাপে অবধারিতভাবে ভালো করবে। আপনারা কেমন ফলাফল করবেন? বিশ্বকাপের পূর্বে এত বড়ো দুটো দলকে সিরিজ হারিয়ে আত্মবিশ্বাস তো তুঙ্গে থাকার কথা, পক্ষান্তরে আন্ডারডগ দলের বিপক্ষে হেরে তাদের কনফিডেন্স থাকবে তলানীতে। রেজাল্টে যদি এতই বৈপরীত্য ঘটে, তাহলে এই স্লো-লো বাউন্সি পিচে খেলে জেতাটা যে অভিশাপে পরিণত হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে?
নিউজিল্যান্ড কেন তাদের বিশ্বকাপ দলের একজনকেও বাংলাদেশে পাঠালো না; বায়োবাবলের দোহাই দিবেন? সেটা ২-৫ জনের জন্য সত্য হতে পারে, পুরো স্কোয়াডই বাদ কেন? আমি বলছি, তারা চায়নি বিশ্বকাপের ঠিক আগে আগে এরকম ফালতু পিচে খেলে ব্যাটসম্যানদের ফর্ম নষ্ট করুক; ৫টা ম্যাচ তো নেহায়েত কম নয়। এখানে এমন একটা ক্রিকেট হয় যেখানে নিম্নমানের ক্রিকেট ডিসপ্লে এর মধ্যে কোন দলটি তুলনামূলক কম নিম্নমানের সেই প্রেক্ষিতে নির্ধারিত হয় ম্যাচের ফলাফল। আপনার যদি এতই ভয় থাকে স্বাভাবিক ব্যাটিং পিচে আপনার বোলাররা লুথা এবং অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ১৪০-৫০ ডিফেন্ড করতে পারবেন না, বা ১৭০ চেজ করার যোগ্যতা নেই, আপনি ক্রিকেটটা খেলছেন কেন? আপনার কি কোনোদিনও বাইরের দেশে সিরিজ জিততে ইচ্ছা করে না, কিংবা বড়ো টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে? নাকি জিম্বাবুইয়ে আর উইন্ডিজের কল্যাণে ক্রিকেট থেকে যা পাওয়ার সবই পাওয়া হয়ে গেছে?
ক্রিকেট নিয়ে মূলধারার লেখালিখি করে যারা তারাও বিপুল বিক্রমে পপুলিস্ট চিন্তায় আচ্ছন্ন। তারকাকে লাইভে আনা, ইন্টারভিউ বাগানো বা ইনসাইড নিউজের লোভে তাদের সেইফগার্ড দিয়ে রাখা হয়, ক্রিটিক করার প্রবণতাই নেই। তাদের যাবতীয় সমালোচনা বরাদ্দ তারকার বাইরে অন্য ক্রিকেটারদের জন্য। তরুণরা দায়িত্ব নিতে পারছে না।
যারা জীবনে ১ ঘন্টা হলেও প্রোবাবিলিটি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তাদের জন্য একটা ধাঁধা। আপনার কাছে ৬ জন প্লেয়ার আছে, যার মধ্যে ৪ জন কখনো বাদ পড়বে না, যেমনই পারফর্ম করুক। অন্য ২ জন থাকবে গান পয়েন্টে, ২ ম্যাচ খারাপ করলে সর্বোচ্চ ৩য় ম্যাচে সুযোগ মিলতে পারে, এরপর অবশ্যই বাদ।
প্রথম প্রশ্ন, আপনার দল যদি জিতে কাদের পারফর্ম করার সম্ভাবনা বেশি; ওই ৪ জনের, নাকি ২ জনের?
দ্বিতীয় প্রশ্ন, কাদের খারাপ করার সম্ভাবনা বেশি, এবং পারসেন্টেজ কত?
গাণিতিক মডেলটা এবার ঘুরিয়ে দিই। লিটন, আফিফ, শান্ত, মাহেদিকে ৪টা পজিশনে ফিক্স করি, এবং রিয়াদ-তামিম-মুশফিক-সাকিবের যে কোনো দুইজনকে বাই রোটেশনে খেলান ৩-৪টা সিরিজ, তারপর পারফরম্যান্স কার্ভ তুলনা করুন। তা না করে ক্রমাগত দোষারোপ, অভিযোগ দিয়ে তারকাদের বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে সাকিবের ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হওয়া এবং ৩য় ম্যাচে মুস্তাফিজের অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে ১২৭ ডিফেন্ড করা— এ দুটো ঘটনা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আরো ৩ বছর স্থবির করে দিল। মানুষ এখন বিশ্বাস করছে মাহমুদুল্লাহ এর ওই সেলফিশ ইনিংস টি২০ এর জন্য দারুণ উপযোগি, নইলে দল জিততো না, এবং সাকিব এখনো তার সেরা সময়ে অবস্থান করছে, তার অবশ্যই ৩ নম্বরে ব্যাট করা উচিত টি২০ তে।
আমি ২০২২ টি২০ বিশ্বকাপে আফিফকে অধিনায়ক দেখতে চাই, সহ অধিনায়ক লিটন দাস।
সেখানে ওপেন করবে পারভেজ ইমন আর মুনিম শাহরিয়ার। এরপর পর্যায়ক্রমে আসবে লিটন, আফিফ, শান্ত/রাব্বি, সোহান, মাহেদি, শামীম, তানভীর/রাকিবুল, মুস্তাফিজ, শরীফুল এবং খালেদ আহমেদ। রিজার্ভে থাকবে সৌম্য, তানজিদ তামিম, নাহিদুল, শহিদুল, রিশাদ।
জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে নিকট ভবিষ্যতে আর সিরিজ নেই। বিশ্বকাপে তারকারা সেইফ ব্যাটিং করে লিটন, আফিফ, মাহেদিদের দায়িত্ব দিবে মেরে খেলার, যে কারণে তাদের এপ্রোচ দেখে প্রজ্ঞাহীন দর্শক মণ্ডুপাত করবে; এই মেকানিজম দিয়েও কি শেষরক্ষা হবে?
সাকিব-মুশফিকদের প্রজন্ম অত্যধিক ভাগ্যবান কারণ তারা দলে ঢোকার কিছুদিনের মধ্যেই কী-প্লেয়ারদের প্রায় সবাই আইসিএল এ চলে গিয়েছিল, এবং আশরাফুলের মতো চরম অধারাবাহিক একজন ছিল দলের মূল ব্যাটসম্যান। যে কারণে প্রাইম পজিশনগুলো অনায়াসেই তাদের আয়ত্তে এসে গেছে; লিটন বা আফিফরা সেই ভাগ্যটা পেল না, বরং পেইড মিডিয়া আর ক্রিকেট গ্রুপগুলো এমন একটা অবস্থা তৈরি করেছে তারকা বনাম অতারকা ইস্যুটা বিএনপি-আওয়ামিলীগের মতো মুখোমুখি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে রূপান্তরিত হয়েছে। সবারই সেরা সময় শেষ হয় একদিন, সেই অমোঘ সত্যটাই নানা গোঁজামিল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত এই সিস্টেমে সেই সত্য আদৌ কোনোদিন উন্মোচিত হবে কিনা বা ততদিনে অনেকটা দেরি হয়ে যাবে কিনা, ভবিষ্যতের কাঁধেই অর্পিত হোক সেই বিচারকের দায়িত্ব