কিছুক্ষণ আগে গল্প হলো এক শুভাকাঙ্ক্ষীর সঙ্গে, বহুদিন পরে। ভারত ভ্রমণে অনুদান দেয়া ১১৮ জনের মধ্যে তিনি অন্যতম৷
ডিটাচমেন্ট টু ডিপার্চার বইয়ের আউটলাইন সম্বন্ধে জানতে চাইলেন, ইংরেজি সংস্করণ এমাজন এ বিক্রির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহায়তাও করবেন।
বইয়ের আউটলাইন শুনে মন্তব্য- ‘তুমি মানুষকে নানা কথায় ভুলিয়ে টাকা হাতিয়ে ইন্ডিয়ায় ফূর্তি করছো, পরিচিত কয়েকজনের থেকে এমন ফিডব্যাক পেয়েছিলাম। এখন তো মনে হচ্ছে তোমার বইটা এসেট। ইবনে বতুতা যখন ভ্রমণে বেরুত তাকেও স্থানীয় লোকজন খাওয়াত, টাকা-পয়সা দিত। এজন্যই তার সেসব অভিজ্ঞতা আমরা জেনেছি। তোমার পেছনে ইনভেস্ট করাটা বোধহয় ঠিকই আছে’
কলকাতার তরুণ শৌর্যের থেকেও অনুরূপ অভিজ্ঞতার মন্তব্য পেয়েছিলাম।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ম্যাচ শুরুর পূর্বে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম এক ইউটিউব চ্যানেলে। সঞ্চালক আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন শুধুমাত্র বাংলাদেশের খেলা দেখতে অত দূরে যাওয়া ডেসপারেট ভক্ত হিসেবে, ভুল ভাঙ্গিয়ে বলি আমি মোটেই ভক্ত নই, ভারতে এসেছি লেখার রিসোর্স এবং ক্যারেক্টার সংগ্রহের উদ্দেশ্যে, এবং ১১৫ জন শুভাকাংখী স্পন্সর করেছে। কমেন্ট সেকশনে নাকি কয়েকজন লিখেছে স্পন্সর নয়, ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেছি।
আত্মপক্ষ সমর্থন সবচাইতে বিরক্তিকর কাজগুলোর একটি।
যে কোনো সেন্সিবল এবং সামাজিক বিবেচনায় আত্মসম্মান সম্পন্ন মানুষের এ সংক্রান্ত কথায় আঘাত পাওয়া উচিত৷ আমি যেহেতু পরিবার, অনুশাসন, সিস্টেম, রাষ্ট্র, চাকরি— প্রায় সকল ইনস্টিউটকেই disown করি ফিলোসফিকালি এবং লাইফস্টাইলেও তার প্রতিফলন, disown এর তালিকায় আছে আইডেন্টিটিও। তাই কথাকে আমলে নিইনি।
তবে একটা ক্লারিফিকেশন দিয়ে রাখা দরকার।
প্রথমত আমি কেন চাকরি বা ব্যবসা করি না? ব্যবসা না পারলেও চাকরি অনায়াসেই করতে পারতাম, এবং আর্থিকভাবে অনেকের চাইতে বেটার অবস্থানেই থাকা সম্ভব হত। কিন্তু কলেজ জীবনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ও পথে হাঁটব না। চাকরিতে অর্থ আসবে, বিপরীতে গচ্চা যাবে সময়। আমি লিখতে চাই, মানুষের থেকে রিসোর্স এবং ক্যারেক্টার সংগ্রহ করতে চাই। দুটোর জন্যই প্রয়োজন বিরতিহীন সময়। সেটার তাগিদেই বিকল্প উপায়ে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা স্বেচ্ছায় এবং সজ্ঞানে পরিত্যাগ করেছি।
দ্বিতীয়ত, আমার প্রাত্যহিক বা সাংসারিক খরচ যোগাতে কোনোদিন কাউকে অনুরোধ করিনি, করবোও না। আমার দায় আমিই বহন করি।
তৃতীয়ত, আমি তাদের কাছেই অনুদান চাই যাদের মনে হয়েছে আমার চিন্তা-কর্মের প্রতি প্রত্যক্ষ বা প্রচ্ছন্ন এপ্রিসিয়েসন রয়েছে। টাকা ধার চাওয়া বা মিথ্যা বলে টাকা নেয়া, কোনোটাই আমার ন্যাচার নয়। এমনকি ভারত ভ্রমণের সময়ও অনুদান চাওয়ার মতো শুভাকাংখী পেয়েছিলাম ১৬০ জন, ১১৫ জন রেসপন্স করেছে, নিশ্চুপ ছিল ৪৫ জন! তাদের প্রতি কোনো অভিমান বা অনুযোগ পোষণ করিনি। ভারত থেকে ফিরবার পরেও অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে।
পক্ষান্তরে ১১৫ জনের মধ্যে অনেকেই হয়ত ২য় বার অনুদান দিবে না। এ বছর অক্টোবরের মাঝামাঝিতে ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণের সিদ্ধান্ত। তার পূর্বেই ডিটাচমেন্ট টু ডিপার্চার বই সমাপ্ত করা আবশ্যক। বায়োডাইভার্সিটিতে পৃথিবীর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দেশ ইন্দোনেশিয়া। এখানকার সোস্যাল ইকোসিস্টেম নিয়ে বই হওয়া উচিত। ১১৫ জনের মধ্যে যারা ইন্দোনেশিয়া পরিব্রাজনে অনুদান দিবে না, তাতে কি ভারত ভ্রমণের কৃতজ্ঞতা ফিঁকে হয়ে যাবে?
৪র্থত, যেহেতু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র সময় এবং এনার্জি এক জায়গায় খরচ করব রিসোর্স তৈরির উদ্দেশ্যে, সুতরাং আমাকে পেলে-পুষে বড় করা বিত্তশালীদের কারো কারো মোরাল অবলিগেশন হওয়া উচিত। যারা বোধ করেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যারা করেন না, তারা তাদের মতো করে সঠিক৷ কিন্তু যখন ভিখারি, প্রতারক বা নিষ্কর্মা প্রভৃতি বিশেষণযুক্ত ক্রেস্ট বা মেডেল দিয়ে আমাকে সম্মানিত করেন বা করছেন, তখন এটাও বলিয়েন আমি আপনার জীবনযাপনের কোন অংশে সমস্যা তৈরি করছি?