পৃথিবীজুড়ে সফলতার যে স্বীকৃত মডেল সেখানে ৩টি মৌলিক কম্পোনেন্ট থাকে
১. সংখ্যাগরিষ্ঠের তুলনায় অধিক অর্থসম্পদের মালিক হওয়া।
২. খ্যাতিমান/কীর্তিমান হওয়া কিংবা জনপ্রিয়তা পাওয়া অন্যদের সাপেক্ষে অধিক পরিমাণে
৩. প্রভাব-প্রতিপত্তি বা ক্ষমতায় এগিয়ে যাওয়া
৩টি কম্পোনেন্ট এটাই বলছে একজন মানুষ তখনই সফল যখন সে তার সমসাময়িকদের চাইতে উচ্চতায় অনেকখানি উপরে থাকে, কিংবা বিপরীতভাবে বললে সমসাময়িকরা তার তুলনায় নিচে থাকে।
এই স্বীকৃত মডেলের সমস্যা হলো, এতে করে সফল হবার ক্ষেত্রে যে ৩টি মূল যোগ্যতা অর্জনের জন্য আরাধনা করতে হয় পাবলিকলি তার ২টিকেই দেখা হয় ঋণাত্মক দৃষ্টিতে, যে কারণে সফলতা ব্যাপারটাও এক পর্যায়ে টক্সিক অনুভূতি তৈরি করে।
সফলতার স্বীকৃত মডেলে অধিভুক্ত হতে একজন ব্যক্তিকে ৩ টি যোগ্যতা অবশ্যই অর্জন করতে হবে- এক্সপ্লোয়টেশন, ম্যানিপুলেশন এবং অভিযোজন। এই ৩ যোগ্যতাকে আরো শার্প করতে গিয়ে নানা ধরনের বৈশিষ্ট্য যুক্ত হয় চরিত্রে৷ এবং ওই ৩ যোগ্যতাকে ফাইন টিউন করার কাঁচামাল কো-ইনসিডেন্স এবং এনার্জি।
যে যত বেশি সফল তার এক্সপ্লোয়টেশন-ম্যানিপুলেশন হয়ে উঠে তত বেশি গ্ল্যামারাস, লুক্রেটিভ তথা ক্যারিশমাটিক।
সম্প্রতি সাকিবের একটা প্রেস কনফারেন্স ভাইরাল হয়েছে। পুরো আলোচনায় সে অনেক কথা বললেও নিম্নরুচির এবং হিটাকাংখী মিডিয়া তার কর্তিত অংশ হিসেবে মাত্র একটা লাইন সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বক্তব্য বিকৃত করেছে। এটা হলো সফলতাকে এক্সপ্লোয়েট করে নিজেরা সাময়িক সাফল্য কেনার বাংলাদেশিয় টেকনিক। অনেকটা ওভারট্রাম্প করা।
সেই বক্তব্যের মিসইন্টারপ্রেটেশন বিষয়ে একটা ছোট আর্টিকেল লিখেছিলাম। সাকিবপন্থীরা তাতে আপ্লুত হয়ে প্রচুর শেয়ার করেছে, আর সাকিববিরোধীরা আমাকে সাকিবিয়ান, সাকিব ফ্যান ট্যাগ দিয়ে আক্রমণ করেছে। নির্মোহ বা নৈর্ব্যক্তিক অবস্থান থেকে লেখাটা নিয়ে আলোচনা করার লোক পাওয়া গেল না।
তাই অনুভব করলাম আজ পারসপেক্টিভটা উলটে দিই। ইকুয়ালিটি, ইকুইটি প্রভৃতি থিওরিকে বরাবরই র্যাডিকাল ম্যানিপুলেশন টুলস গণ্য করি। যার ক্যাপাবিলিটি-ক্যাপাসিটি বেশি পৃথিবীতে সে-ই রাজ করেছে চিরকাল, তবে এটিকেট বা শিষ্টাচার দেখিয়ে কেউ কেউ ইনফেরিওরদের প্রতি ইমপ্যাথি বা কেয়ারিং এটিচুড দেখায়, সেটাকেই বোকারা ইকুয়ালিটি, ইকুইটি ভেবে নতুন এক্সপ্লোয়টেশনের ফাঁদে ধরা পড়ে।
সাকিবের চিন্তাপ্রক্রিয়া গড় বাঙালিদের চাইতে পুরোপুরি আলাদা। তার ব্যাটিং দেখলে কোনো প্রথাগত কোচ পছন্দ করবে না, বেসিক ডিফেন্সই ঠিক নেই, একারণে টেস্টে কখনোই সে টেম্পারমেন্ট দেখিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করে না, কাউন্টার এটাক নির্ভর ব্যাটিং করে গেছে সারাজীবন। বোলিংয়েও এমন কোনো স্পেশাল স্কিল নেই যার কারণে তাকে আলাদা মনে হবে। তবু আনকনভেনশনাল ব্যাটিং টেকনিক এবং লিমিটেড রিসোর্সের বোলিং নিয়ে একটা প্লেয়ার ১৬ বছর ইন্টারন্যাশাল সার্কিটে পারফর্ম করে গেলে সেখানে তার ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বিশেষ মূল্যায়নের দাবি রাখবেই। এটাকে স্রেফ মিরাকল বলে নিয়তিবাদী হলে চলবে না।
সাকিবকে আমার একজন জন্মগত মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার মনে হয়। তার পারফরম্যান্সকে সলিড মেকানিক্স, এরোডিনামিক্স এর জ্ঞানের প্রয়োগ হিসেবে দেখি।
ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতাটা পুঁজি করে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এক পর্যায়ে সে একটা স্টার্ট আপ খুলেছে যার নাম দেয়া যেতে পারে ‘পোর্টফোলিও মারচেন্ডাইজিং’ ; তার এই স্টার্ট আপ এর গ্রোথ ট্রেন্ড এনালাইসিস করলে এক অভূতপূর্ব সিনারিও আবিষ্কৃত হয়- ‘তাকে যতজন ভক্তি বা আরাধনা করে, প্রায় সমসংখ্যকই ঘৃণা বা অপছন্দ করে। ফলে মার্কেট শেয়ারের সবটাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তার দখলে’
একজন ক্রিকেটার দুর্নীতির দায়ে নিষিদ্ধ হয়েছে, সাধারণ বিচারে তার থাকার কথা নিভৃতে, অথচ তার পোর্টফোলিও মারচেন্ডাইজিং ব্যবসা এমনই স্ট্র্যাটেজিকাল রুটপ্ল্যান ডিজাইন করলো নিষিদ্ধের সময়টাতে বিজ্ঞাপনজগতে তার উপস্থিতি বেড়ে গেল আগের চাইতে বেশি। শুরুতে কো-ইনসিডেন্সের কথা বলেছিলাম। সে নিষিদ্ধ হওয়ার পরে বাংলাদেশ খেলতে পারলো মাত্র ৩টা সিরিজ, এরপর করোনা ভাইরাসের কারণে সারাবিশ্বই গেল থমকে। তার অনুপস্থিতিটা সেভাবে টেরই পাওয়া গেল না।
এবং নিষিদ্ধ হওয়ার পূর্বে ক্রিকেটার বিদ্রোহের নাটকে হিরোইক ইমেজ তৈরি। সেই বিদ্রোহের নৈতিক ভিত্তি যদি এতই শক্তিশালী হত তার ফলো আপ কোথায়?
বরং গত নভেম্বরে বিডি নিউজ ২৪ এ ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল, সেখানে উল্লেখ করা হয় সাধারণ ক্রিকেটাররা কতটা আফসোস করে সেই বিদ্রোহে অংশ নেয়ায়।
তুমি নিষিদ্ধ হবে এটা অনেক আগে থেকে জানা সত্ত্বেও বিদ্রোহের পোস্টারবয় হয়ে নিজের ইমেজ বাড়ালে, বোকা লোকজন ফাঁদে ধরাও দিল; এটাকে তোমার স্মার্টনেস হিসেবেই স্বীকৃতি দিব, কিন্তু পরাজিত বোকারা প্রশ্ন করবে কাজটা কি ইথিকাল হলো সাকিব?
পোর্টফোলিও মারচেন্ডাইজিংয়ের বিজনেস মডেলই তো এমন যে আমরা জামকে জামরুল ভেবে কিনে আনবো!
সাকিবের সাথে জুয়ারি একাধিকবার যোগাযোগ করেছিল, সেটা সে আইসিসিকে জানায়নি, এবং একারণেই সে নিষিদ্ধ হয়েছে। আশরাফুলের ফিক্সিংয়ের সাথে তারটা মেলানো যাবে না—– নিরেট অন্ধভক্ত বাদে কতজন রেশনাল চিন্তাধারার মানুষ পাওয়া যাবে যারা এই রূপকথার গল্পকে ফ্যাক্ট হিসেবে মেনে নিবে? সাকিবের সেইসব ডিলিটেড whatsapp মেসেজ কোনোদিন খুঁজে পাওয়া যাবে না, সে কেন জুয়ারির সাথে দেখা করতে চেয়েছিল বা ডলার একাউন্ট কেন দিয়েছিল তারও মিলবে না সদুত্তর, এসব ভাবতে গিয়ে No one Killed Jessica ফিল্মটার নাম খুব মনে পড়ে, কিংবা ‘রাস্তার পাগলিটা মা হয়েছে বাবা হয়নি কেউ’ লাইনটা। আশরাফুল ধরা খেয়েছে, সাকিব এতটাই ঠাণ্ডা মাথার ক্রিমিনাল (অনেকটা হিন্দি সিনেমা ডন এর মতো) যে তাকে ধরা সম্ভব হয়নি। পার্থক্য যদি বলতে হয় এটাই একমাত্র ইস্যু।
বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ঘটনাকে মহাভারতে কর্ণের জন্মের সাথে তুলনা করা যায়। কুমারি মাতার সন্তান, যে কারণে লোকলজ্জার ভয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া, এবং জীবনভর অনাদর অবহেলা। এরকম কুমারি মাতার সন্তান সোসাইটিতে থাকে লক্ষ লক্ষ, খুবই নগণ্যসংখ্যকের পরবর্তীতে ভাগ্য ফেরে কর্ণের মতো৷
বাংলাদেশের ক্রিকেটে সেই সৌভাগ্য জুটেনি, তাই ক্রমাগত একই চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রথম আলো এবং আরো কয়েকটা শীর্ষস্থানীয় মিডিয়া ২-১টা বিচ্ছিন্ন পারফরম্যান্সকে অক্লান্তভাবে প্রমোট করে না গেলে, ক্রিকেটকে দেশপ্রেমের প্রতীক না বানালে, এবং সর্বপরি সাকিব অলরাউন্ডার র্যাংকিংয়ে ১ নম্বরে না উঠলে, টানা কয়েকবছর আইপিএল এ খেলার সুযোগ না পেলে ক্রিকেটকেন্দ্রিক যে অন্তঃসারশূন্য হাইপ সেগুলোর অস্তিত্বই থাকতো না।
বাংলাদেশের ক্রিকেট দর্শকের ৭০% মহাভারত পড়ে দেখেনি নিশ্চিত, কিন্তু তাদের ১০০%ই পঞ্চপাণ্ডব শব্দটা জানে। এবার শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্ট দেখতে মাঠে গিয়ে ৬ জন রেন্ডম দর্শককে জিজ্ঞাসা করেছিলাম পঞ্চপাণ্ডব কথাটার মানে কী, কোত্থেকে এসেছে এই শব্দ। মাত্র ১ জন ঠিকঠাক বলতে পেরেছিল, বাকিরা সোস্যাল মিডিয়া অথবা পত্রিকায় পড়তে পড়তে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
যেহেতু দলগত সাফল্য নেই, তাই দলের চাইতে ব্যক্তিপূজার অদ্ভুত এক্সপ্লোয়টেশন। বিদঘুটে স্ট্যাট হাজির করে বলবে তামিম কত বড় ওপেনার, মুশফিক বিশ্বের সেরা নাম্বার ফোর, মুস্তাফিজের ভুরি ভুরি উইকেট, মাশরাফির ক্যাপ্টেন্সি রেকর্ড ঈর্ষণীয়। এদের সাথে যুক্ত করুন দ্য গ্রেটেস্ট অলরাউন্ডার সাকিব। এত সমৃদ্ধ যাদের স্ট্যাট সেই দল ওয়ানডেতে আজ পর্যন্ত একটা এশিয়া কাপ পর্যন্ত জিততে পারেনি। টেস্টে ১৩৪ ম্যাচের ১০০ টাতেই হেরেছে। দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড।
একটা কথা বহুবার লিখেছি। গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়াররা একশনে থাকলে প্রতিপক্ষরা তাদের নিয়ে প্ল্যান করে। ২০০০ পূর্বসালে ভারতের ব্যাটিং অনেকটাই ছিল একক শচীন নির্ভর। আজহারউদ্দিন তখন পড়তির দিকে, গাঙ্গুলি রাইজিং, দ্রাবিড় তখনো সেটেলড নয়। সেই মিডিওকর ভারতের জন্য প্রধান প্ল্যান ছিল দ্রুত শচীনকে তুলে নাও, ম্যাচ পূর্ব প্রেস রিলিজেও বিপক্ষ অধিনায়ক শচীনকে নিয়ে কথা বলতো। সাকিব ব্যাটিংয়ে নামলে বা বোলিংয়ে এলে সেই ডমিন্যান্স কি দেখা গেছে, বা তাকে ভেবে প্ল্যান সাজাচ্ছে? সে একজন কন্ট্রিবিউটর বড়জোর। কিন্তু বায়াসড স্ট্যাটের উপস্থাপনে সাকিব কখনো জ্যাক ক্যালিস, কখনোবা গ্যারি সোবার্স হয়ে গেছে।
হাও প্যাথেটিক!
সাকিব একটা স্টেটমেন্ট দিয়েছিল ক্রিকেট কালচারহীনতার ব্যাপারে। স্টেটমেন্টটা আমি সমর্থন করি বলেই বক্তব্যের মিসইন্টারপ্রেটেশন নিয়ে লিখেছিলাম। কিন্তু সেই স্টেটমেন্টের সম্পূরক প্রশ্ন হিসেবে তো এটাও আসে বাংলাদেশ ক্রিকেটের একমাত্র গ্লোবাল এম্বাসেডর হয়ে ক্রিকেট কালচার তৈরিতে তার কন্ট্রিবিউশনের যদি প্লাস-মাইনাস হিসাব করা হয় নিট রেজাল্টে সে প্রফিটে থাকবে নাকি লস এ?
ক্রিকেট মাঠে আম্পায়ারকে গালি দেয়া, স্ট্যাম্পে লাথি মারা, ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচ চলাকালে ক্যামেরার সামনে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করার বিপরীতে অলরাউন্ডার র্যাংকিংয়ে ১ এ থাকা, বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগে দল পাওয়া আর কিছু দ্বিপাক্ষিক সিরিজের ম্যাচ বা আইসিসি ইভেন্টের ১-২টা ম্যাচ রাখলাম। আমার পাল্লায় তো নেগেটিভগুলোরই ওজন বেশি লাগে।
তবু যদি কনফিউশন থাকে টাই ব্রেকার হিসেবে ফিক্সিং এবং টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে ২০১৭ থেকে চলমান টালবাহানাকে যুক্ত করি— এরপরে আর সন্দেহের অবকাশ থাকে না গ্লোবাল এম্বাসেডর হয়েও ক্রিকেট কালচারে তার কন্ট্রিবিউশন যতটা হেলদি তার চাইতে বেশি টক্সিক। এই টক্সিসিটির দায় তার একার নয়, এখানে মিডিয়া-ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান-মাশরাফি-তামিম-পাপন প্রত্যেকেই অংশীদার, তবু যার উচ্চতা বেশি দূর থেকে দেখলে ভিড়ের মধ্যে তাকেই প্রথমে নজরে পড়া স্বাভাবিক।
সাকিব টেস্ট খেলতে চায় না, মুস্তাফিজও নয়। মুস্তাফিজ সরাসরি বলেও দেয়। কিন্তু সাকিব চাণক্য নীতি দেখিয়ে বারবার দর্শকদের ম্যানিপুলেট করে। যে কারণে নানা স্টেকহোল্ডারের কাঁধে বন্ধুক রেখে বা দোষ চাপিয়ে সে জনপ্রিয়তা ধরে রাখে। তার সবচাইতে ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক সম্ভবত উৎপল শুভ্র। সাকিবের সাথে দীর্ঘদিন মেলামেশার অভিজ্ঞতায় গত বছর তিনি একটা আর্টিকেল লিখেছিলেন নিজের সাইটে যার ভাবার্থ হলো, সাকিব সম্ভবত ক্রিকেটটাই আর উপভোগ করছে না। কেবলমাত্র এনডোর্সমেন্ট এর জন্য খেলে যাচ্ছে এখনো’
সাকিবের সাথে আমার দেখা বা কথা হয়নি কখনো। তাকে পর্যবেক্ষণ করে আমার হাইপোথিসিস হলো সাকিবের আরো কিছুদিন মার্কেটে থাকার প্রয়োজনীয়তা আছে। দুটো এঙ্গেল থেকে এই উপলব্ধি
প্রথমত, গত বছর বণিক বার্তায় এক প্রতিবেদন এসেছিল সাকিবের ব্যবসা-বাণিজ্যের খতিয়ান দেখিয়ে। প্রায় সবকটিই লোকসান প্রজেক্ট। নতুন করে সে অনেকগুলো ভেঞ্চার শুরু করেছে, এগুলোকে স্টেবল করতে তার ফেসভ্যালু আরো কিছুদিন বিক্রির দরকার আছে। যদিও আগের ভেঞ্চারগুলোর লোকসান প্রজেক্ট হওয়ার গল্প কতটুকু সত্য শিওর না, কারণ ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার জন্যও এসব টেকনিক ব্যবহৃত হয় অনেক সময়।
দ্বিতীয়ত, পরবর্তী নির্বাচনে মনোনয়ন নেয়ার জন্য হলেও তার মার্কেটে থাকা প্রয়োজন। রিটায়ার করে ফেললে ২ সিরিজ পরেই সে মার্কেট আউট। মাশরাফি আজ কোথায় আছে, কী করছে, সেরকম খবর নেই। তবু তার টুকটাক সংবাদ যা আসে অলরাউন্ডার এবং একাত্তর টিভির খেলাযোগ সূত্রে— যেগুলো পেইড ক্যাম্পেইন হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। গত নির্বাচনেই সাকিবের অংশ নেয়ার কথা শোনা গিয়েছিল, এ ব্যাপারে উৎপল শুভ্র এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্নও রেখেছিলেন, সাকিব বলেছিল সব কথা সবার জানার দরকার নেই।
সাকিবের এই ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে বিসবি তথা প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন। সে চায় তামিম-মুশফিক টি২০ খেলুক, রিয়াদ খেলা চালিয়ে যাক, সাকিব টেস্ট খেলুক।
কেন চায় তারও নিশ্চয়ই কারণ আছে।
২০১৯ বিশ্বকাপে তামিমের যা পারফরম্যান্স তার তখনই বাদ পড়ার কথা, অথচ মাশরাফিকে সরিয়ে তাকে বানানো হলো অধিনায়ক। ক্রিকেট পেছন দিকে হাঁটা শুরু করেছে সেদিনই। ওয়ানডে লীগের সাফল্যে এই সিদ্ধান্তের গোঁজামিল প্রকাশ্য না হলেও যথাসময়ে ঠিকই বেরিয়ে আসবে কংকাল। ২০১৯ এর ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজ চলাকালে যে রিয়াদের দলে জায়গা পাওয়া নিয়েই সংশয়, ইনজুরির কারণে যে বোলিং করতে পারে না সে শুধু টি২০ এর ক্যাপ্টেন হয়েই ক্ষান্ত নয়, একটা ভয়াবহ বাজে বিশ্বকাপের পরেও সে আরেকটা বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বারবার শোনা যায় পাইপলাইন দুর্বল, রিপ্লেসমেন্ট নেই। নতুন প্লেয়ারগুলো তোমাদের চাইতে অন্তত বেশি জোরে দৌড়াতে তো পারে। এটাই যথেষ্ট। স্কিলে পার্থক্য সতের-বিশ বড়োজোর। ওই ৩ পার্থক্য না থাকায় রেজাল্টে কি তারতম্য হচ্ছে? বাংলাদেশ ক্রিকেটের বৃহত্তম জয় যে নিউজিল্যান্ডকে টেস্টে হারানো সেখানে সাকিব-তামিমকে দরকার পড়েনি, মুশফিকের কোনোরকম কন্ট্রিবিউশন ছিল না।
তখনই লিখেছিলাম এই জয়কে ফ্লুক প্রমাণ করা হবে অচিরেই, কারণ তাতে এক্সপ্লোয়টেশন মেকানিজম ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। দেখুন মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে আপনিও বিশ্বাস করে নিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জেতাটা কিচ্ছু না। আপনি বিশ্বাস করেননি, করানো হয়েছে, এটাই তো বিশ্বাস করবেন না।
যে সাকিব টেস্ট খেলে কেবলমাত্র মার্কেটে থাকতে, সে ৩৫ বছরে হয়ে গেল ক্যাপ্টেন। এই মুহূর্তে সে-ই সম্ভবত প্রবীণতম টেস্ট অধিনায়ক। এবং সাকিবের যে প্যাটার্ন তাতে শুধুমাত্র এক ফরম্যাটের ক্যাপ্টেন্সিতে সে তুষ্ট থাকার কথা নয়, অন্য ২ ফরম্যাটের কোনো একটা সে চাইবে, এবং সেটা যাতে না দেয়া হয় এ নিয়ে চলবে অভ্যন্তরীণ পলিটিক্স, লবিং; পত্রিকার নিউজ, টিভির রিপোর্টগুলো একটু খেয়াল করবেন।
এতে যেটা হবে টিমের ভেতরে হবে অসংখ্য সাব-টিম। উদাহরণস্বরূপ লিটন, তাসকিন, আফিফ প্রমুখ যদি সাকিব ভাইয়ের লোক হয় মুস্তাফিজ, মিরাজ, বিজয় তামিম বা রিয়াদ ভাইয়ের লোক। দলের মধ্যে আওয়ামিলীগ-বিএনপি ধরনের বিভাজন। এরা যখন মাঠে নামবে, এমনিতেই সামর্থ্য ৪১, গ্রুপিংয়ের কারণে ডেলিভার করবে ২৯— টিম কালচার পুরোপুরি ধ্বংস করে একটি বিষাক্ত কালচারের পরম্পরা তৈরির খলনায়ক হিসেবে মাশরাফি, সাকিব এবং তামিমের মধ্যে কে কোন অবস্থানে থাকবে সেই হিসাবটা কি করা আছে?
এরা যখন কালচারের কথা বলে কথাটা যতই শতভাগ সত্য হোক, মনে রেখাপাত করতে পারে না।
পুরো গেমটাই যেহেতু সফলতা মডেলের নীতির উপর ভিত্তি করে ডিজাইন করা, এখানে সে-ই শ্রেষ্ঠ, সে-ই নায়ক যে এক্সপ্লোয়েট আর ম্যানিপুলেট করায় গ্র্যান্ডমাস্টার। এখানে হিসাবটা ভালো-মন্দ এর নয়, কিংবা ইথিকাল-আনইথিকাল এরও নয়, হিসাবটা চাতুর্য এবং ভোদাইগিরির। ২য় শ্রেণিরাই নিজেদের অক্ষমতা আর অযোগ্যতাকে সততা বা স্বচ্ছতার মলম দিয়ে ক্ষত সারায়।
বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে যদি কোনোদিন লেখা হয় মহাভারত, সেখানে দুর্যোধন মাশরাফি, শকুনি তামিম, সুজন জয়দ্রথ, প্রথম আলো কৃষ্ণ দ্বৈপায়ণ, এবং পাপন হবে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র। সেখানে সাকিবকে বহু চেষ্টা করেও অশ্বত্থামার বাইরে অন্য চরিত্রে ভাবা সম্ভব হলো না। অশ্বত্থামা অমরত্ব পেয়েছিল, কিন্তু সেটা তার জন্য আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ সেই প্রশ্নটাও রাখা উচিত।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের ভবিষ্যৎ কী, কিংবা পরিবহন বা গণপূর্ত খাত? কিংবা এফডিসির সিনেমার?
কোনোটার ভবিষ্যৎই যদি ইমপ্রেসিভ ইনডেক্স না দেখায়, ক্রিকেটের কি দায় পড়েছে একা দলছুট হবার!
স্কিল ইমপ্রুভ না করেই যদি প্রচুর টাকা, খ্যাতি, এনডোর্সমেন্ট, বিদেশ ট্যুর, ভি আইপি মর্যাদা পাওয়া যায় ৯৯% বাংলাদেশীই স্কিল ইমপ্রুভ করবে না, গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। অন্তত আমি নিজে করবো না এটা দায়িত্ব নিয়ে বলছি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলটা হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র মিরাকল ফ্যাক্টরি যেখানে ঢুকতে পারলে সবগুলো চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে।
মিরাকল কি কালচার হয়েছে কোনোদিন কোথাও?
সাকিব নামের পোর্টফোলিও মারচেন্ডাইজাররা সেই মিরাকল ফ্যাক্টরির চিফ অপারেটিং অফিসার।
ওয়েলকাম টু দ্য ডার্কনেস অব এনলাইটেনমেন্ট!