ফিট এর বিপরীত আনফিট বলেই জানি আমরা। এই বৈপরীত্যের বাইরেও একটা কনসেপ্ট আছে, যাকে বলে মিসফিট। এই মিসফিট হওয়ার ইতিহাস অনেক পুরনো। তবে পৃথিবী যত এগিয়েছে, সময় বদলেছে, মিসফিট মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এই ক্রমবর্ধমানতা চলতেই থাকবে। মিসফিট ব্যাপারটা আসলে কী? এটা এক ধরনের অনুভূতি, যখন একজন মানুষ তার সমাজ, তার সময়, সিস্টেম, সোশ্যাল কনটেক্সট, গড় মানুষের আচরণ- কোনোকিছুর সাথে নিজেকে রিলেট করতে পারে না, সবকিছুকে মিনিংলেস এবং স্থূলবুদ্ধির মনে হয়। এইটুকু ব্যাখ্যায় মিসফিট বুঝা যাবে না, মিসফিট একটি দীর্ঘ মেন্টাল জার্নি, যে জার্নিতে ধাপে ধাপে একজন মানুষের ফিলোসফিকাল ক্রাইসিস তৈরি হতে থাকে, এবং ক্রাইসিস একটা লেভেলে পৌঁছে গেলে নিজেকে আর কোথাও প্লেস করার স্কোপ খুঁজে পায় না।
অধিকাংশ মিসফিট মানুষই স্বাভাবিকের চাইতে কিছুটা উচ্চ বুদ্ধিবৃত্তি সম্পণ্ন হয়ে থাকে। সাধারণত তাদের মিসফিট জার্নির শুরু হয় অস্তিত্ববাদী জিজ্ঞাসা থেকে, আমি কে? আমি কোথা থেকে এলাম, কোথায় চলে যাব, এবং বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য কী? সচেতন বা অবচেতনভাবে সে এই বোধ দ্বারা তাড়িত হয়। এই জিজ্ঞাসার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা খুঁজতে কেউ দ্বারস্থ হয় বিজ্ঞানের, কেউ দর্শনের, কেউবা সামাজিক বিজ্ঞানের। মানব সভ্যতার ইতিহাস, মানুষের মনস্তত্ত্ব, বিভিন্ন দার্শনিকের তত্ত্ব, যুদ্ধ, বিশ্বরাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে পড়াশোনা আর ডকুমেন্টারি দেখতে দেখতে তারা তখন ভিন্ন এক কল্পনার জগতে চলে যায়। বাস্তব আর পরাবাস্তবের মধ্যে টানাপোড়েন চলে, তারা বুঝতে হিমশিম খায় কোনটা বাস্তব, কোনটা পরাবাস্তব। নিজের অজান্তেই তারা আদর্শিক বন্ধু হয়ে পড়ে কোনো বিজ্ঞানী বা দার্শনিকের। সমসাময়িক মানুষকে তারা বিচার করতে শুরু করে ব্যক্তি গ্যালিলিও বা মার্ক্স এর সাপেক্ষে। ফলে তারা গ্যালিলিওর লেভেলে উত্তরিত হতে পারে না, আবার পারে না সমসাময়িক মানুষের লেভেল এ অবনমিত হতে। একধরনের তীব্র অবসাদজনিত অবস্থান সংকট তাদের ঘিরে ফেলে।
আরেক ধরনের মিসফিট মানুষ আছে যাদের কাছে প্রথাবিরোধীতাই প্রার্থিত জীবনাচরণ। গতানুগতিক, স্টেরিওটাইপ, ট্রেডিশনাল প্রভৃতি শব্দকে তারা গালি বা হীনম্মন্যতার ধারক মনে করে। ধরাবাঁধা, রিপিটিটিভ, লিনিয়ার বা একরৈখিক, আরোপিত, অর্থোডক্স প্রভৃতি ব্যাপারগুলোকে তারা ঘৃণা করে চরমভাবে। অথচ জীবন মানেই অজস্র পুনরাবৃত্তির বলয়, নিদারুণ একঘেয়েমির লুপ। জীবনের এই প্রবহতার সাথে তাদের চিন্তা মেলে না, ইচ্ছা মেলে না, তবুও অস্তিত্বের বহর তাদের বহন করে যেতে হয়। তখন জীবনকে তাদের অসহনীয় ভারি বোঝার মতো লাগে।
৩য় ধরনের মিসফিট যারা তারা বিদ্রোহী ধরনের। চিন্তার সাথে বাস্তবতার পার্থক্য তাদের মনে মনে হতাশ করে তোলে, হতাশা পুঞ্জীভূত হয়ে ক্ষোভে রূপান্তরিত হয়। তারা তখন মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে কটাক্ষ করে, সামাজিক ইনস্টিটিউশন আর ধ্যান-ধারণা, অনুশাসনগুলোকে চ্যালেঞ্জ ও বিদ্রুপ করে। তারা নিজেরাও বুঝতে পারে না এক অলৌকিক বিচ্ছিন্ন জীবন তারা বেছে নিয়েছে। ফলে তারা যতটুকু অর্জন করতে পারতো, যতটুকু কন্ট্রিবিউট করতে পারতো বা যেখানে পৌঁছাতে পারতো তার থেকে অনেকটা দূরে থেকেই এক অতৃপ্তির জীবন কাটিয়ে তারা নিঃশেষিত হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এই নীরব অপচয়ের কোনো ট্র্যাক রেকর্ড রাখা হয় না।

মিসফিট মানুষদের প্রতি ফিট বা আনফিট মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কী? কয়েকটা প্রচলিত শব্দে একে উত্থাপন করা যায়। প্রথমেই আসবে ‘আঁতেল’। আরও খুঁজলে চলে আসবে অহংকারী (এরোগেন্ট), উদ্ধত, ক্যালাস, ভাবুক, বেশি বুঝা লোক, এবং সবশেষে ‘ লুজার’। অন্য সব শব্দকে বাদ দিয়ে চূড়ান্ত বিচারে লুজার শব্দটাকেই আমি পিক করবো। সমাজের সিংহভাগ মানুষের দৃষ্টিতে মিসফিটরা ‘লুজার’ হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে। এতে মিসফিটদের তেমন কিছু যায়-আসে না, কারণ তারা মানুষের মতামতকে গ্রাহ্য করে না, নির্বিকার থাকার অসাধারণ গুণ, উপেক্ষা করার প্রবল শক্তি তারা আয়ত্ত করতে পারে, যদিও কেউ তাদের প্রশংসা করলে বা সমর্থন দিলে তখন উদ্বেলিত, উচ্ছ্বসিত হতে কার্পণ্য করে না একটুও। তখন তাদের উপেক্ষা বা অগ্রাহ্য করার এজ ইউজুয়াল প্রবণতাকে মনে হয় এক ধরনের ডিফেন্স মেকানিজম, যা তাদের কমফোর্ট জোনকে আরও সুরক্ষিত করতে চায়। ফিলোসফিকাল গ্রাউন্ডে চিন্তা করলে, এটা হিপোক্রিসি। ছদ্ম বা নকল বিজ্ঞানীর মতো ছদ্ম মিসফিটের সংখ্যাও প্রচুর, যাদের বড় অংশ এই ‘হিপোক্রিসি’ ইস্যুতে ধরা খায়। ইতিমধ্যেই বলেছি, মিসফিট একটা দীর্ঘ মেন্টাল জার্নি।
মিসফিট মানুষ মূলত আত্মকেন্দ্রিক ও তীব্র সংবেদনশীল হয়। তারা অনেক বেশি জাজমেন্টাল, একটা বিষয় বা মানুষকে ২ মিনিটের পর্যবেক্ষণেই তার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায়। নিজেদের তারা সিস্টেম, ট্রাডিশনের প্রতিপক্ষ মনে করে, অথচ একটা সহজ ব্যাপার মাথায় আসে না তারা নিজেরাও একটা সিস্টেম বা ট্রাডিশন দাঁড় করানোরই স্বপ্ন দেখে। অধিকাংশ মানুষ কেন বস্তুবাদী, ভোগবাদী দর্শনের অনুসরণ করে এই হতাশা তাদের ক্লান্ত করে দেয়। অথচ, এটাই তো হওয়ার কথা ছিলো এবং এটাই হবে। প্রশ্ন থেকেই সংশয়ের শুরু হয়, যুগে যুগে সংশয়বাদীরাই ইনোভেশন নিয়ে এসেছে, চেঞ্জ মেকার হয়েছে, যার ফল ভোগ করেছে বিনা প্রশ্নে সবকিছু মেনে নেয়া মানুষেরা। আমরা জীবনভর শুনি,’ বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর‘’। এই প্রবচন আমরা শুনি, কারণ শত বছর ধরে মানুষ এভাবেই ভেবেছে, এটাই সত্য বলে মেনেছে। এর মাঝখান থেকে কেউ যদি প্রশ্ন করে, সংশয় প্রকাশ করে সেটা তার ব্যক্তিগত রুচি ও অন্তর্গত সাহসের ব্যাপার, সে কোথাও সমর্পিত নয় এটা তার নিজস্ব লড়াই। সংশয়ী মানুষ কখনো ধ্রুবতায় আস্থা পায় না, ব্রাউনীয় ইলেকট্রনের মতো সে সতত ভ্রমণশীল। এই যে অস্থিরতা, মানসিক পীড়ন এই অসহনীয় অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সিংহভাগ মানুষই যেতে রাজি হবে না, জীবনকে এতো কমপ্লিকেটেড করার কী দরকার- এই সরল জিজ্ঞাসার জবাবে সংশয়ীরা ৫ হাজার শব্দের যে ব্যাখ্যা দিবেন তার মধ্যে হয়তো বড়জোর ৫-৬টি শব্দ বোধগম্য হবে, বাকিগুলো সব খরচার খাতায়। তো মানুষ শর্টকাট খুঁজবে, সংশয়বাদীতাকে এড়িয়ে যাবে, এটা না করলে তাঁর টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে। গভীরভাবে চিন্তা করলে, জীবনের অধিকাংশ কাজই সুনির্দিষ্ট পারপাস বা মিনিং ছাড়া, স্রেফ অভ্যাসবশত করে ফেলি আমরা। এই সত্যটা একজন মানুষ ফিল করা শুরু করলে এবসার্ডিটি তাকে গ্রাস করে ফেলবে, বৈচিত্র্যময় জীবনকেও মহিষের গাড়ি মনে হবে। যে মানুষটি বাথরুমে যাওয়ার আগে সেলফি তুলে, বাথরুম থেকে বেরিয়ে সেলফি তুলে, মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করে, যে মধ্যবয়স্ক মানুষটি প্রতিদিন সকালে বাজার থেকে ব্যাগভর্তি করে পটল, শিম বা মুলা কিনে এনে অফিসে গিয়ে ঘুস খায়, যে মহিলাটি জি-বাংলার সিরিয়াল দেখতে গিয়ে স্বামীর সাথে ঝগড়া করে, যে তরুণটি নিত্য-নতুন পোশাক কেনে, রূপচর্চা করে, যে ছেলেমেয়েগুলো হিন্দিতে কথা বলাকে স্মার্টনেস মনে করে, গুলশানের শপিং মলগুলোতে গেলে উগ্র পোশাকের যে সমস্ত তরুণীকে দেখা যায়, বা যে কোনোভাবে টাকা কামানোকেই জীবনের লক্ষ্য মনে করে যে পেশাজীবীটি- এরা প্রত্যেকেই সোসাইটির একটি গ্রেটার এক্সপেক্টেশনকে বিলং করে। তারাই মেজরিটি। মিসফিটরা এই আচরণকে মেনে নিতে পারে না, তাদের নিম্নবুদ্ধিতাকে উপহাস করে তৃপ্তি পায়, কখনো প্রচণ্ড বিরক্ত হয়, কখনোবা বিধ্বংসী হয়ে উঠে। কিন্তু তারা এটা ভাবে না, যে ফিলোসফিকাল ক্রাইসিস তাদের নিজেদের মধ্যে চলছে, সেই একই ক্রাইসিস হয়তোবা সেই মানুষগুলোরও আছে,এবং এই ক্রাইসিস থেকে বাঁচার একটা অবলম্বন হিসেবে তারা এসব করছে। মিসফিটরা সমাজ বীক্ষণ করে নিজেকে দিয়ে যাচাই করে, বড় স্কেলে বা থার্ড পারসন পারসপেক্টিভ থেকে দেখার চোখটা তারা অন্য মানুষের কর্মকাণ্ডজনিত বিরক্তির তোড়ে হারিয়ে ফেলে।
জীবনের অনিশ্চয়তা, জটিলতার বোধগুলো হ্যান্ডল করার মতো মানসিক ধকল মেজরিটি মানুষই নিতে পারবে না। সেটা পারলে এখনো আমাদের পাথর ঘষে আগুন জ্বালাতে হতো, পশু শিকার করে অন্নসংস্থান করতে হতো, পিতা স্বামী-পুত্র স্বামী-ভাই স্বামী সিস্টেম জারি থাকতো। প্রাগৈতিহাসিক যুগে আফ্রিকার একটা দল যখন এশিয়ার অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছিল তখন থেকেই গোষ্ঠী বিভাজন, গোষ্ঠী রীতি, গোষ্ঠী চেতনা জাতীয় ধারণাগুলো ঢুকে পড়েছিল। গোষ্ঠী ধারণাটাই গড় বা মেজরিটির প্রবণতাগুলোকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। সুতরাং, মানুষের কর্মকাণ্ডে হতাশ হওয়া, মানিয়ে নিতে না পারা একটা অযোগ্যতা। ট্রাডিশন গড়ে উঠে শত বছরের অভ্যাসচর্চার সমণ্বয়ে, সেই ট্রাডিশন পরিবর্তন করতে চাইলে ট্রেডিশনটাকেই সবচেয়ে ভালোভাবে বুঝতে হবে, তার গভীরে ঢুকতে হবে। তা না করে একজন মানুষকে ট্রাডিশনালিস্ট বলে, নিজেকে প্রথাবিরোধী ভেবে পুলক বোধ করা অনেকটা দাঁড়কাকের ময়ূর সাজার মতোই হাস্যকর চেষ্টা। মিসফিট মানুষেরা এই সুইট মিসটেক এর প্রলোভনের সহজ শিকার বা ভিকটিম এ পরিণত হয়।

দুজন মিসফিট মানুষ যখন কথা বলে, তখন তাদের কথা-বার্তার বড় অংশ জুড়েই থাকে সমাজ কাঠামোর সমালোচনা, মানুষের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিরক্তি, আর বিভিন্ন বই, নিবন্ধের রেফারেন্স। যে যত বেশি রেফারেন্স দিতে পারবে সে তত ভ্যালুয়েবল মিসফিট। তারা অন্যকে মূল্যায়ন করে ‘অগভীর’, এবং ‘শ্যালো থিংকিং’ এই দুটো ফ্রেজ এর মাধ্যমে। তাদের নিজেদের মনোজগতে কয়েকটা পাওয়ারফুল ম্যাজিক ওয়ার্ড আছে। যেমন, মুক্তমনা, প্রগতিশীল, আধুনিক, লিবারেল, মডারেট, স্বাধীনচেতা, ক্রিয়েটিভ, ইনোভেটিভ প্রভৃতি। অপর মানুষের বিশ্বাস ও চিন্তাপ্রণালীকে রেসপেক্ট না করা, নিজেদের ফ্রেমওয়ার্কে সবকিছুকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা তাদের ন্যাচারাল টেন্ডেন্সি। ফলে মিসফিট মানুষরা একইসঙ্গে কয়েকটা উপজীবন যাপনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়। সেইসব উপজীবনে কোনো কনক্লুসিভ পয়েন্ট নেই, কেবলই অস্থিরতা আর মানিয়ে না নিতে পারার অসহায়ত্ব।
মিসফিট মানুষ সাধারণত ইন্ট্রোভার্ট প্রকৃতির হয়। প্রাথমিক শৈশব থেকেই তাদের সোশ্যালাইজেশন স্কিল ভোঁতা থাকে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেই স্কিল আরও ভোঁতা হয়ে পড়ে।এক পর্যায়ে তারা অনুধাবন করে, যথেষ্ট বয়স হয়েছে, ইন্টেলেকচুয়াল ম্যাচিউরিটি পর্যাপ্ত হয়েছে, কিন্তু কংক্রিট রিয়েলিটির সাথে কানেক্ট করার এবিলিটি গড়ে উঠেনি। সে বইতে রুশোর সোশ্যাল কনট্রাক্ট পড়েছে, রাসেলের দর্শন পড়েছে, সোশ্যাল ফেনোমেনা বিষয়ে কয়েকশত ডকুমেন্টারি দেখেছে, জ্য পল সার্ত্র পড়েছে, কিন্তু মানুষ সালমান খানের দাবাং সিনেমা দেখে বিনোদন পায় কেন তার ব্যাখ্যা খুঁজে পায় না, অপরিচিত একজন মানুষের সাথে কীভাবে কথা চালিয়ে নেয়া যায় তার কৌশল বুঝতে পারে না। এই সোশ্যালাইজেশনের ঘাটতি তাকে আরও খোলসবন্দী করে ফেলে।
ইদানীং অবশ্য মিসফিট মনে করাটাও একটা ভাবের লক্ষণ। কিছু ম্যাজিক ওয়ার্ড, কিছু কমন ফিলোসফির চর্চা করাটাই মিসফিট হওয়ার শর্টকাট গাইডলাইন হয়ে উঠছে। এই ছদ্ম মিসফিটেরা অতি চতুর ও সুযোগসন্ধানী।

মিসফিট মানুষদের নিয়ে এতো কথা বলার কারণ, তারা মেধাবিচারে অনেক এগিয়ে। সেই মেধাকে তারা গ্রেটার পারপাস এ ব্যয় করতে পারে না কেবলমাত্র ইনটলারেট মানসিকতার কারণে। আত্মকেন্দ্রিক জীবন নিয়ে অনেকেই খুশি, কেউ কেউ এসকেপিস্ট হয়ে টিকে যায়, কিন্তু তার মেধাটাকে বেস্ট ইউটিলাইজ আর করা হয়ে উঠে না। একটা বিষয় বুঝতে হবে, লক্ষ তারার মাঝে চাঁদ একটাই থাকে, এজন্য তারকারাজিকে লঘু মনে করার অবকাশ নেই। হাজার হাজার মানুষ জীবনে টিকে থাকার সংগ্রাম করবে, অর্থবিত্তের জন্য মরিয়া থাকবে, সেটা তারা করবে বলেই একজন মিসফিট তার আবিষ্কৃত মোবাইল ফোন তাদের কাছে বিক্রি করতে পারবে, একজন মিসফিট তার ডিজাইন করা বাড়ির নকশা তাদের কাছে বিক্রি করে আরও অভিনব ডিজাইনে মন দিতে পারবে। যত বেশি মানুষ বস্তুবাদী, ভোগবাদী হবে, মিসফিটদের জন্য অপরটুনিটি তত বাড়বে। মিসফিটকে বুঝতে হবে সে আসলে কীভাবে কন্ট্রিবিউট করতে চায়; সে কি মেজরিটি মানুষের মাইন্ডসেট, লাইফস্টাইল বদল করতে চায়, নাকি তাদের মধ্যে নিজের ট্যালেন্টকে পুশ-ইন করতে চায়। বদল করতে চাওয়া একটি ভেক চিন্তা, এর মধ্যে কর্তৃত্ববাদী মনোভাব স্পষ্ট। যে প্রথম পারফিউম আবিষ্কার করেছিল, সে নিশ্চয়ই আশা করেনি একদিন বিবিধ ব্রান্ডের পারফিউম ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে, তার হয়তো কাজটা করতে আনন্দ লেগেছিল। গোষ্ঠী বা মেজরিটি মানুষ আমাদের কর্মযজ্ঞের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। তাদের সাইকোলজি বুঝার চেষ্টা না করে নিজের নিজস্ব নিক্তিতে সবকিছুকে পরিমাপ করতে চাওয়া একটি ভুল কৌশল।
মিসফিট সংক্রান্ত ফ্যান্টাসিতে ভুগে সময় নষ্ট করার যৌক্তিকতা নেই। ইচ্ছা থাকলেই কানেক্টেড হওয়া যায়, এতে স্বকীয়তা হারানোর ভয় করা নিরর্থক। ১০০ টা ভেড়ার পালের মধ্য থেকেও হরিণশাবককে ঠিকই চিনে নেয়া যায়। মেজরিটির সাথে কানেক্টেড হওয়াকে মিসফিট কমিউনিটির অনেকেই স্খলন, বা নৈতিক পরাজয় হিসেবে দেখে। কিন্তু সত্যি কথা হলো, কম্প্রোমাইজ আর স্যাক্রিফাইস ছাড়া গ্রেটার কোনো এচিভেমেন্ট অসম্ভব। কম্প্রোমাইজকে যদি পতন হিসেবে দেখে কেউ সেই লোক তিল আর তাল এর পার্থক্য বুঝে না। এই নাবুঝ মানুষরা দ্যরিদা, ফুকোর বই পড়ে আর হিচককের মুভি দেখে সময় পার করুক। দিনশেষে, ইমপ্যাক্ট ম্যাটারস।