সম্প্রতি সামসুল আরেফিন নামের এক স্পোর্টস রিপোর্টারের একটা লেখা ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ বর্তমানে অলরাউন্ডার নামের প্লাটফরমে কাজ করেন, তার আগে একাত্তর টেলিভিশনে৷ তিনি লিখেছেন- কোনো ক্রিকেটার ইন্টারভিউ দিতে না চাইলে তার টপ ম্যানেজমেন্ট থেকে নির্দেশ দেয়া হত, ‘ওর ক্যারিয়ার খেয়ে দাও’!
গত কয়েকবছরে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া মিলিয়ে ৪ জন রিপোর্টার আমাকে ইনবক্সে নক করেছে- লিটন দাসের ইন্টারভিউয়ের ব্যাপারে কোনো হেল্প করতে পারি কিনা। ইনবক্সের কারণ লিটনকে নিয়ে প্রতিনিয়ত লেখালিখি-এক্সপেরিমেন্ট এবং লিটনের স্ত্রী দেবশ্রী সঞ্চিতার সঙ্গে সৌহার্দ্র্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকায়, তারা ধরেই নিয়েছে আমি লিটনের থেকে সুবিধাভোগী। যতই বলি নানা ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষের সাথে গল্প করা আমার নেশা, সঞ্চিতা তাদের একজনমাত্র, তাকে ইনডিভিজুয়াল মানুষ হিসেবে কাউন্ট করি, লিটনের সঙ্গে আমার কখনো দেখা বা কথা হয়নি, বিশ্বাস করানো যায়নি৷
লেখার শুরুতে রেফারেন্স দুটো উল্লেখ করলাম, কারণ গতবছর ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলাকালে হোটেল লবিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মিসবিহেভ করার পর থেকেই লিটন দাসের বিরুদ্ধে একটি সম্মিলিত ‘মিডিয়া ক্যু’ সংঘটিত হচ্ছিল, যার খেসারতস্বরূপ বাংলাদেশ দলের লিডারশিপ রোল থেকে তাকে ছেটে ফেলা হয়, কুখ্যাত ইউটিউবার নোমান মোহাম্মদ একাধিক কনটেন্ট প্রকাশ করেন যেখানে দায়িত্ব নিয়ে ঘোষণা দেন বাংলাদেশ দলের লিডারশিপ ভাবনায় লিটন দাস আর নেই! অথচ ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে ততদিনে সে সব ফরম্যাটেই দায়িত্ব পালন করেছে৷ ফ্রম nowhere শান্ত সব ফরম্যাটের ক্যাপ্টেন, যার টি২০ ফরম্যাটে ২৫ জনের দলেও থাকার যোগ্যতা নেই!
আমাদের জন্য এন্টারটেইনমেন্ট হলেও খেলোয়াড়দের জন্য চাকরি। প্রত্যেক চাকরিজীবীই স্বপ্ন দেখে একদিন টপ পজিশনে যাবে। অফিস পলিটিক্সের কারণে তার চাইতে যোগ্যতায় অনেক পিছিয়ে থাকা কেউ যদি পেছন দরজা দিয়ে টপ পজিশনে চলে যায়, সেটা স্থায়ী ডিমোটিভেশন তৈরি করে।
শান্তর মসনদ দখল নিয়ে একটা দীর্ঘ আর্টিকেল লিখেছিলাম ‘ক্যাপ্টেন্সি’ স্ক্যাম শিরোনামে। মিরাজকে ওয়ানডেতে আর লিটনকে টেস্ট-টি২০ ফরম্যাটের ক্যাপ্টেন্সি না দিয়ে শান্তকে সব ফরম্যাটে, বিশেষত জায়গা প্রশবিদ্ধ টি২০ ক্যাপ্টেন্সি দেয়াটা যে বিরাট চক্রান্ত সেখানে পার্ট বাই পার্ট আলোচনা ছিল৷
ডিমোটিভেশন প্রভাব ফেলেছিল লিটনের উপর। যে কারণে অন্যান্যবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে সাধারণ খেলোয়াড় হিসেবে খেলেও এবার অধিনায়কত্ব করে।
আজকের সেঞ্চুরিতে লিটন দাস মিডিয়া ক্যু থেকে লাইফলাইন পেল। সাময়িক। পরের ক্যু আসতে মাত্র ২টা ম্যাচ দূরে।
তার আগেই এই ক্যু এর বিরুদ্ধে লেখা জরুরী বোধ করছি।
মিডিয়া ক্যু এর লিডারশিপ গ্রুপ কারা? আমার পর্যবেক্ষণ বলে ক্রিকবাজের বাংলাদেশ প্রতিনিধি আতিফ আজম, উস্কানিমূলক ইউটিউবার রিয়াসাদ আজিম। তাদের কোলাবরেটর প্রথম আলোর তারেক মাহমুদ, এবং সমকালের একজন রিপোর্টার। নোমান মোহাম্মদের নাম বলাই বাহুল্য।
তাদের সহায়তা করেছিল লিটন স্বয়ং, শ্রীলংকার বিপক্ষে ২ ওয়ানডেতে ডাক মেরে!
ফাটাকেস্ট প্রকৃতির পপুলিস্ট চিন্তাধারার নির্বাচক গাজী আশরাফ লিপু ৩য় ওয়ানডের দল থেকে তাকে শুধু বাদই দেয়নি, চট্টগ্রাম থেকে একদিনের নোটিশে ডিপিএল খেলতে পাঠায়, যদিও মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই সিলেটে অনুষ্ঠিতব্য টেস্টের দলে তার থাকা ছিল নিশ্চিত। একজন প্লেয়ার আন্ডারপারফর্ম করলে তাকে একাদশ থেকে ড্রপ দেয়া হবে, কিন্তু যে প্লেয়ার টেস্টে থাকছে, তাকে এত তডিঘডি ঢাকায় পাঠানোর হয়রানি কেন; স্ত্রী এবং শিশুকন্যা সহ হোটেল ত্যাগ না করালে কী হত!
তখন লিপুর উদ্দেশ্যে স্ট্যাটাস লিখেছিলাম- বাংলাদেশের পরবর্তী ওয়ানডে সিরিজ অক্টোবরে, আমি নিশ্চিত সেই দলে লিটন থাকবে, তখন তাকে কোন পারফরম্যান্সের জোরে স্কোয়াডে নিবেন, আর যদি নেনই তাহলে মাত্র এক ম্যাচের জন্য তাকে বাদ দিয়ে ঢাকা পাঠালেন কেন’?
প্রশ্নটা ভুলিনি লিপু।
সেই ঘটনার পরে ‘আজিম এন্ড আজম’ নামের কুৎসিত ইউটিউব শো তে লিটনকে নিয়ে বানানো কনটেন্টগুলো দেখুন।
সমকালে রিপোর্ট করা হলো- লিটন প্র্যাক্টিসে সিরিয়াস না, টিম মিটিংয়ে অমনোযোগী! একটা প্লেয়ার ৯ বছর টপ লেভেলে খেলার পরে এ ধরনের ফান্ডামেন্টাল ইস্যুতে অভিযোগ আসে? এগুলো তো ক্যারিয়ারের শুরুর দিককার ইস্যু থাকে৷ তার মানে সংঘবদ্ধভাবে লিটনকে বিরক্ত করা হচ্ছিল।
সেই সময়ে প্রথম আলো প্রিন্টেড ভারসনে রিপোর্ট করা হলো ‘সাদা বলে লিটনকে নিয়ে প্রশ্ন’; লিখেছে তারেক মাহমুদ। সেই নিউজটার ছবিসহ কাউন্টার পোস্ট লিখি। মূল আর্গুমেন্ট ছিল গত ৩ বছরে টি২০ তে লিটন বাংলাদেশের সবচাইতে ইমপ্যাক্টফুল প্লেয়ার, উপরের র্যাংকের দলের বিপক্ষে শেষ ৯ জয়ের ৭টাতেই তার সরাসরি অবদান ছিল। প্রথম আলো কি জানে না সাদা বল বলতে ওয়ানডে, টি২০ দুটোই মিন করে?
আমার সেই পোস্টে বোধহয় রিপোর্ট করা হয়, যে কারণে প্রথম আলোর ছবিটা ব্লার করে দেয় ফেসবুক।
টি২০ বিশ্বকাপের দলে রাখা নিয়েও নোমান মোহাম্মদ এবং আজিমের ব্যাপক নেগেটিভ ক্যাম্পেইন চলেছিল।
সেসময় নির্বাচক লিপু বলেছিল ব্যাক আপ কিপার হিসেবে তাকে নেয়া হয়েছে! যদি সে খেলার আসলেই খবর রাখতো, তাহলে আমাদের বেস্ট এভার টি২০ প্লেয়ারকে স্কোয়াডে রাখতে এই যুক্তির অবতারণা করতে হয়, এবং তথাকথিত মূল কিপারটি যদি হয় জাকের আলি অনীক!
লিটনের ব্যাপারে আমার মূল্যায়ন কী?
– টি২০ তে বেস্ট এভার
-টেস্টে তামিম আর মুশফিকের পরে
– ওয়ানডেতে বাজে।
– ফিল্ডিংয়ে সাকিব এবং কাপালির পরে ৩য় সেরা
– কিপিংয়ে স্ট্যাম্পিংয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা, লেগ সাইড কিপিং বাজে, ক্যাচিং এভারেজ। সবমিলে পাইলটের চাইতে মারজিনালি পিছিয়ে থাকতে পারে, সোহানের চাইতে অবশ্যই বেটার।
তো লিটন আসলে ওয়ানডেতে কেন পারে না? টেকনিকালি সে সাউন্ড, কিন্তু মুশফিকের মতো তারও নতুন বলের মুভমেন্টে সমস্যা হয়। টেস্টে ৬-৭ এ ব্যাট করে, বলের শাইন কিছুটা কম থাকে সেসময়৷ লিটনের জন্য ওয়ানডেতে আইডিয়াল ব্যাটিং পজিশন ৪; কিন্তু তামিম এবং মুশফিক-সাকিব ডিলেমায় ওপেন ছাড়া তার জায়গাও নেই৷
তামিম যেহেতু আজীবনই স্লো এবং সেলফিশ, তার ওপেনিং পার্টনার দরকার হাই স্ট্রাইকরেটের একজন। তেমন অপশন ছিলোই শুধু সৌম্য আর লিটন। ইমরুল, বিজয়, নাঈম শেখ, শান্ত সহ যতগুলো অপশন সবাই তামিমের মতোই স্লো স্ট্রাইকরেটের। পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে সৌম্য আর লিটনেই ঘুরেফিরে আসতে হয়েছে। সৌম্য টি২০ তে অচল, কিন্তু ওয়ানডের জন্য সবসময়ই ভালো অপশন ছিল। টি২০ তে জঘন্য খেলে বাদ পড়তো ওয়ানডে থেকে। ফলে লিটনই একমাত্র অপশন, যদিও সৌম্য এবং লিটন পুরোপুরি ২ ঘরানার প্লেয়ার। অন্যদিকে ৪-৬ এই ৩ পজিশন মুশফিক-সাকিব-রিয়াদের জন্য ফিক্সড। এর মধ্যে সাকিব ৩ এ উঠে আসায় লিটনের জন্য জায়গা ফাঁকা হয় ৫ এ, সেখানেই সে সেটেল হয়ে যেত, কিন্তু পাওয়ার প্লে কাজে লাগানোর কাউকেই না পেয়ে ওপেনেই বারবার। ইতোমধ্যে শান্ত ঢুকে পড়েছে, তাওহিদ হৃদয় এসেছে, তামিমও চলে গেছে। ফলে আবারও সেই ওপেন।
আমি বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের অংশ হলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেট আপ এ লিটনকে ৪ এ খেলাতাম, সোহানকে দলে নিতাম (তার ওয়ানডে স্ট্যাট ইমপ্রেসিভ), হৃদয় আর মিরাজকে ৫-৬ এ খেলাতাম, সৌম্য এবং শান্তকে দিয়ে ওপেন করাতাম, ৩ এ একটা নতুন ব্যাটসম্যানকে গড়ে তুলতাম।
কিন্তু সেই একই লুপে পড়ে আমরা বারবার লিটনকে ওয়ানডেতে নতুন বলের মুখোমুখি পাঠিয়ে দিই।।মুশফিক-রিয়াদ-সাকিব কী কারণে এখনো ওয়ানডে খেলছে, এই প্রশ্নের উত্তর নির্বাচক লিপুর কি জানা আছে?
লিটন পৃথিবীর একমাত্র ব্যাটসম্যান যে ৫০ এর নিচে ৪ বা ততোধিক উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে ৩ বার সেঞ্চুরি করেছে। আরেকটা ইনিংস আন্ডাররেটেড৷ ২০২১ এ জিম্বাবুয়ের সিমিং কন্ডিশনে ব্লেসিং মুজবারানির তোপে ১০০ এর নিচে ৬ উইকেট খুইয়েছিল, সেখান থেকে কাউন্টার এটাক করে ৯৫, যেখানে সেঞ্চুরি করেছিল রিয়াদ!
লিটনের মূল সমস্যা ‘মিডিওক্রিটি’, যেটা আসলে বাঙালির জাতিগত। ধরা যাক আমার ৫টা বই প্রকাশিত হয়েছে, আমার বন্ধু দিদার শেয়ার বিজনেস থেকে টাকা পাচ্ছে— আমাদের মনে হবে, সুখেই আছি। আমার ভাবনাতে আসবেই না সমকালীন পৃথিবীতে ৩৭ বয়সী অরিজিনাল থিংকারদের মধ্যে আমি কি কোথাও এক্সিস্ট করি; ফলে আমি তখন ফেসবুকে ৪-৫ জন লেখক-চিন্তকের সাপেক্ষে নিজেকে তুলনা করেই মহাশান্তিতে টুনা মাছ খাব।
বিসিবি যদি প্রতি পজিশনের বিপরীতে ৩-৪ জন কনটেন্ডার তৈরি করতে পারত, লিটন এবং সাকিব নিশ্চিতভাবেই নিজেদের ছাড়িয়ে যেতে আরো এফোর্ট দিত!
প্রতিটি মানুষের ক্যারেক্টার আলাদা৷ মাশরাফি আড্ডা এবং সাংবাদিকপ্রিয়, আশরাফুল সব স্ট্যাট মুখস্থ রাখতো, সাকিব সিলেক্টিভ মানুষের বাইরে খুব একটা মিশে না, মুশফিক সর্বক্ষণ প্র্যাক্টিস করে৷ একেকজনের প্রস্তুতির তরিকাও আলাদা। এবং আন্ডারপারফরম করার কারণও ব্যক্তিভেদে ভিন্ন।
কিন্তু যেহেতু লিটন মিডিয়া ফ্রেন্ডলি নয়, তার আন্ডারপারফম্যান্সকে ক্রিমিনালি হাইলাইট করা হয়। যেমন ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলাকালে ক্রিকবাজ এ আতিফ আজম আর্টিকেল লিখেছিলেন- ‘The arrogant underperformer’, যদি তার ফেভারে কোনো সাংবাদিক থাকত তাহলে একই লিটনকে নিয়েই লিখত ‘বাংলাদেশি ওপেনার হিসেবে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান লিটনের’— দুটো প্রচারণাই হত উদ্দেশ্যমূলক।
ভারতে ক্রিকেটারদের তুমুল সমালোচনা করা হয়। টেন্ডুলকারের মতো কিংবদন্তীকেও তারা শেষবেলায় জর্জরিত করেছে৷ মিডিয়ার কাজই সমালোচনা করা।
মাশরাফি এবং তামিম নিজেদের ক্যারিয়ারকে দীর্ঘায়িত করতে মিডিয়াকে যেভাবে মিসইউজ করেছে, তার ফলশ্রুতে মিডিয়াও নিজেদের মাফিয়া ডন ভেবে নিয়েছে, কোনো ক্রিকেটার তাদের সমীহ না করেছে তো, he is gone!
একটা উদাহরণ দিই। ইদানীং সবগুলো মিডিয়ার ন্যারেটিভ স্থানীয় কোচ নিতে হবে, আরো নির্দষ্ট করে বললে সালাহউদ্দিন!
তো এই সালাহউদ্দিন প্লেয়ার হিসেবে ছিলেন সি গ্রেডের। কোচ হিসেবে টপ লেভেলের কোনো দলের সাথে কাজ করেছেন কখনো? বরং তার একটা ভয়ংকর বাজে প্রবণতা ক্যাপ্টেনকে দমিয়ে রাখা। ২০২০ এ করোনার পরে, বিসিবির উদ্যোগে ৫ দলের একটা টি২০ টুর্নামেন্ট হয়েছিল৷ সালাহউদ্দিনের দলে ক্যাপ্টেন মিথুন! কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে এত হাই প্রোফাইল প্লেয়ার, সেখানকার ক্যাপ্টেন ইমরুল! মাশরাফি সালাহউদ্দিনের চাইতেও পাওয়ারফুল হওয়ায় তাকে কুমিল্লায় অধিনায়কত্বের বাইরে রাখা যায়নি।
লো-প্রোফাইল ক্যাপ্টেন নির্বাচন করা কোচরা সবসময়ই ক্ষমতালিপ্সু এবং লাইকিংস-ডিজলাইকিংস কে অস্বাভাবিক গুরুত্ব দেয়। প্রতি আসরে কুমিল্লায় জাকের আলি অনিক, তানভীর, মহিদুল অংকন সহ কয়েকজন প্লেয়ারকে দেখবেনই, যারা মূলত সালাহউদ্দিনের প্লেয়ার! রিশাদ কিন্তু কুমিল্লা দলে ছিল, সালাহউদ্দিন ম্যাচ খেলিয়েছে কয়টা! রিশাদকে বিশ্বকাপে নেয়ার কৃতিত্ব হাথুরুসিংহের।
বরং সুজন যখন যে দলের কোচ থাকে ২-১টা নতুন প্লেয়ারকে ব্রেক দেয়। আলিস ইসলাম, মোহর শেখ, হাবিবুর সোহানদের কথা মনে আছে?
হাথুরু যেসব অভিযোগে অভিযুক্ত ( লাইকিংস-ডিজলাইকিংস, ক্ষমতার অপব্যবহার) প্রতিটিতে টিক মার্ক পাওয়া সত্ত্বেও আমরা সালাহউদ্দিন ক্যাম্পেইন গিলছি, কারণ এটা মিডিয়া ক্যু!
ফারুক আহমেদ জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন, তিনি যখন প্রেস কনফারেন্সে বলেন ‘তামিম ইকবালকে আরো ২-৩ বছর দেখতে চাই’, তখন তাকে পাপনের চাইতেও নিম্নবুদ্ধির লাগে। তামিম টি২০ থেকে রিটায়ার করেছে, টেস্ট খেলার ফিটনেস নেই নিজেই স্বীকার করেছে, সেই ৭৬ স্ট্রাইকরেটের ওপেনার যার পরের বিশ্বকাপ খেলার কোনো চান্স নেই নিজেই ইন্টারভিউতে বলেছিল, তাকে ২-৩ বছর দেখতে চান ফারুক, কারণ তাকেও প্রেসিডেন্ট বানানো হয়েছিল মিডিয়া ক্যু য়ের মাধ্যমেই।
নইলে ফারুক কবে কোন সংগঠন চালিয়েছেন যার জন্য তিনি বিসিবি প্রধান হয়ে গেলেন। এক্স প্লেয়ার হিসেবে গেম ডেভেলপমেন্টে কাজ করতে পারতেন, প্রেসিডেন্ট তো অনেক বেশি প্রশাসক রোল। ফারুকের পোর্টফোলিওতে আছে সেটা? সৈয়দ আশরাফুল হকের কিন্তু ছিল।
কিন্তু মিডিয়া ক্যু য়ের মাধ্যমে নির্বাচিত ফারুক, পাপনের মতোই ক্রমাগত বাক্য বর্ষণ করে যাচ্ছেন। মিডিয়া গেরিলা রিয়াসাত আজিম তাই প্রেস কনফারেন্সে হাথুরুসিংহ নিয়ে প্রশ্ন করে ব্যাপক বাহবা পান, এবং হাথুরু এতই অসহনীয় যে তাকে আড়াই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে হলেও বিদায় দিতে হবে!
পাকিস্তান সিরিজ জেতা বা ড্র করা সত্ত্বেও কোচ কেন বরখাস্ত হবে, জিজ্ঞেস করলে উত্তর নেই। কারণ মিডিয়া ক্যু বলছে সালাহউদ্দিনকে চাই!
লিটনের ক্ষেত্রেও এই মিডিয়া ক্যু সবসময়ই বিরাজ করে।
সে এক্সট্রা অর্ডিনারি কোনো প্লেয়ার নয়, এভারেজ বা এবাভ এভারেজ, কিন্তু দেশে এভেইলেবল যেসব অপশন আছে তাদের তুলনায় সব ফরম্যাটেই বেটার হওয়া সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত তার বিরুদ্ধে উস্কানি দেয়া হয়।
আজকের ইনিংসটা যদি শান্ত বা মুশফিক খেলত, গল্পগুলো অন্যরকম হতে পারত!
লিটনের আজকের ইনিংসটা আমি ভুলবো না। এতদিন লিটন মানে আমার কাছে ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপে উইন্ডিজের বিপক্ষে ৬৯ বলে ৯৪; আজকের ইনিংস সেটাকে ছাড়িয়ে গেল।
তাহলে মিডিয়া ক্যু য়ের বিরুদ্ধে আমাদের করণীয় কী?
যা বুঝলাম লিটনের আন্ডার পারফরম্যান্স নিয়ে আমাদেরই তুমুল সমালোচনা করতে হবে, যাতে মিডিয়া ক্যু বাহিনীকে আউটস্মার্ট করা যায়। কারণ ডার্টি সিস্টেমকে উৎখাত করতে তার চাইতেও ডার্টি গেম খেলতে হয়!
সমালোচনা করতে হবে, প্রচুর সমালোচনা৷ আজকের সমালোচনা হোক- মাত্র ১৩ রান করলেই লিড পেয়ে যাই, সেট ব্যাটসম্যান হয়েও যেভাবে আনাড়ির মতো উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এলেন লিটন দাস, এমন ব্রেইনফেডের ব্যাখ্যা কী! তবু কি নির্বাচকদের লিটনকে লাগবেই?
কারেকশন- ভুলবশত আতিফ আজমকে ক্রিকফেঞ্জি প্রতিনিধি লিখেছিলাম, সে ক্রিকবাজ এ জব করে।