২০২২ বইমেলায় হাঁটছিলাম, এক অচেনা তরুণ থামালো।
‘ভাই আপনার গ্যাপশেডিং পড়েছি, ভালো লাগেনি। আপনি শুধু ইন্টারভিউ নিয়েছেন, আলাদা করে তাদের ক্যারেক্টার এনালাইসিস করেননি। তাহলে এই বই লিখে এচিভ তো কিছু হলো না’
তরুণের মন্তব্যটা দুর্দান্ত স্পার্ক দেয়।
বছর দেড়েক পরে পুনরায় দেখা আমাদের, এক প্রকাশনী অফিসে। তার ধারণা ছিল ভুলে গেছি, এতদিন আগের রেফারেন্স দেয়ায় অবাক হলো। এরপর থেকেই তরুণের সঙ্গে মাসে অন্তত ২-৩ বার আড্ডা হয় বিভিন্ন টঙের দোকানে।
আমার কোনো ফিলোসফির সাথে সে একমত নয়। উপরন্তু আমার বিভিন্ন সংকল্পকে বলে ট্যাবু। তার ভাষ্য এরকম- ‘আপনাকে দেখলে একজন সহিংস বিপ্লবীকে দেখি যে কিনা নানা সংস্কার আর ট্যাবুর শৃংখলে বন্দী। এই বিপ্লবীর রেজাল্ট কী ভাই’?
ধানমন্ডি ২৭ এর টঙ দোকানে গল্প হচ্ছিল ডিটাচমেন্ট টু ডিপার্চার বই বিষয়ে। সে করলো এক গভীর দার্শনিক জিজ্ঞাসা
‘আপনার লেখার মূল অবজেক্টিভ কী; ক্যারেক্টারকে কাল্ট বানানো নাকি ক্যারেক্টারের চিন্তাকে। আপনি যেহেতু মূলত ননফিকশন লিখেন ফিকশনের আদলে, আমার তো মনে হয় ক্যারেক্টারের চিন্তার চাইতে ক্যারেক্টার নিজে কৌতূহল জাগালে, আপনার লেখা ভুল গন্তব্যে যাচ্ছে। নতুন বইতে কোনটাকে প্রাধান্য দিবেন’?
তরুণের সেই প্রশ্নের প্রেক্ষিতে নতুন বইয়ের উপস্থাপনে বহু পরিবর্তন আনি।
গত শুক্রবারে সে আসে, শ্যামলি গোল্ডেনস্ট্রিটের এক দোকানে বসে চা-সিগারেটের পাশে চলে আলোচনাও। সে আনে নতুন এঙ্গেল
‘ভাই আপনার পাবলিক ইমেজ তো খুবই প্রবলেমেটিক। আমার পরিচিত অনেকেই আপনাকে গিমিকবাজ, স্টান্টবাজ মনে করে’
‘তাতে আমার কী; আমার স্টান্টবাজিতে তাদের জীবনযাপনে কোথাও বাধা হয়ে থাকলে বলো’
‘ আমরা কিন্তু গল্পটা অন্যভাবেও দেখতে পারি৷ ধরে নেন আপনি একজন গিমিকবাজ। কোনটা রিয়েল, কোনটা পারফরম্যান্স বুঝতে পারেন না। আপনার লাইফস্টাইলকে যদি গিমিকের ফরমুলায় ফেলতে চাই, তাহলে মোট কতরকম গিমিক আপনি আর্টিকুলেট এবং সার্কুলেট করেন, যদি জানতে চাই, আপনার পক্ষে কি বলা সম্ভব’?
রাকিব নিজেও একজন লেখক, অনুবাদক, স্ক্রিপ্ট রাইটার।
তার প্রশ্নে বোধ করলাম, যে অনিয়ন্ত্রিত ঘোরে কাটিয়ে দিলাম জীবন, তার জন্য যতরকম স্যাক্রিফাইস আর যাতনাই থাকুক, একজন ৩য় ব্যক্তির চোখে তা সেল্ফ ব্রান্ডিং/এটেনশন সিকিং/স্টান্টবাজি মনে হতেই পারে। যে ব্যক্তি ক্রিকেট খেলার নামই শুনেনি তার পাশে টেন্ডুলকার সারাদিন বসে থাকলেও কোনো ইমপ্রেসন বোধ করবে না; এতে টেন্ডুলকারের যেমন অবমূল্যায়ন হয় না, ওই ক্রিকেট অজ্ঞ লোককেও দেয়া যায় না বিন্দুমাত্র দোষ। সবটাই সঠিক মার্কেট ভুল মার্কেটের সমীকরণ
রাকিবকে প্রতিশ্রুতি দিই তথাকথিত গিমিকের একটা তালিকা করব। ২৪টা পাই। ইমপ্রোভাইজেশন ল্যাবের সদস্যদের পাঠানোর পরে, অন্যতম সদস্য তপেন তথা Thakvir Reza Arni যুক্ত করে দেয় আরো ৮টি, মানে ৩২টি!
তালিকা করার পরে বোধ হলো, এটা ওপেন সোর্স হিসেবে প্রকাশ করা যেতে পারে।
‘হিমালয় পাই’ গিমিকযোগ্য ফিচারসমূহ:
১. পানীয়- চা এবং ডাব
২. খাবার- কমলা, জিলাপি, শন পাপড়ি, আনারস, টেংরা মাছ, বাইম মাছ, কোয়েল পাখির ডিম, বাতাবি লেবু, চিতল মাছ।
৩. রঙ- কমলা
৪. শখ- চিঠি লেখা, গল্প করা/ইন্টারভিউ নেয়া
৫. প্রাত্যহিক পোশাক- টি শার্ট
৬. অবসেসন- ব্যতিক্রমী নাম, ভয়েস, ক্রিকেট
৭. যানবাহন- ট্রেন এবং ভ্যান
৮. আইডেন্টিটি নম্বর-৭৭৭
৯. সিগনেচার শব্দ- স্পার্ক, চ্যালেঞ্জ, গ্যাম্বলিং, কানেক্টিভিটি, রিজন, রিসোর্স, ভ্যালু
১০. সামাজিক অনুষ্ঠানের পোশাক- পাঞ্জাবি
১১. রিচুয়াল- উদ্ভট গিফট দেয়া, ক্রেস্ট এবং খেতাব দেয়া
১২. ঝোঁক- সোস্যাল এক্সপেরিমেন্ট এবং মেমরি ক্রিয়েট
১৩. ভ্রমণের ধরন- কালচারাল এনকুয়ারি
১৪. আমৃত্যু দার্শনিক প্রেম-গায়ত্রি মিত্র
১৫. ক্রেজিনেস- মৌলিক সংখ্যা
১৬. নিষেধাজ্ঞা- মদ এবং গভীর আধ্যাত্মিক কারণহীন যৌনতা
১৭. সিগনেচার ক্যারেক্টার- লিটন দাস, সারাফান সাহুরা
১৮. ফিলোসফি- রিয়েলিটি রিক্রিয়েট করা। সবচাইতে মুল্যবান কারেন্সি সময়।
১৯. বন্ধুত্ব প্রেফারেন্স- ফিলোসফিকালি এলাইন্ড কিন্তু প্রতিনিয়ত ডিজএগ্রিমেন্ট হয়
২০.যৌনতা প্রেফারেন্স- বয়সে বড় নারী
২১. যোগাযোগ প্রেফারেন্স- টেক্সটিং
২২. সম্পর্ক প্রেফারেন্স- বায়োলজি এবং বৈবাহিকসূত্রে আত্মীয়তা মানি না
২৩. লেখার প্রেফারেন্স- ফিকশন এবং ননফিকশনের লেয়ার ভেঙ্গে একীভূত করা
২৪ জ্ঞানাহরণের উপায়- প্রশ্ন করা, আড্ডা দেয়া
২৫. মূদ্রাদোষ- নার্সিসিজম, কূপমণ্ডুকতা, ইমপ্যাথিহীনতা, শিষ্টাচারহীনতা
২৬ সেলিব্রেটি ক্রাশ (সৌন্দর্য)- মনিকা বেলুচ্চি
২৭. সেলিব্রেটি ক্রাশ (কোয়ালিটি)- অপর্ণা সেন, রূপা গাঙ্গুলী, নয়নতারা, টাবু, লিলিয়ান গার্সিয়া, ইশা গুহ
২৮. অর্থনীতি- উপার্জন করতে হবে কেবলমাত্র লিসেনিং এবং লেখালিখিসূত্রে।
২৯. রাজনীতি- দাবার ঘোড়া
৩০. ভিশন- পৃথিবীর সেরা লেখকদের একজন হওয়ার স্বপ্ন পূরণে প্রয়োজনবোধে পরিবার, সমাজ, দেশ সহ যে কোনো পিছুটান অবলীলায় ত্যাগ করা। ২০২৯ এর ১১ নভেম্বর নাগাদ ২০০০ চিঠি লেখা একই ব্যক্তিকে৷
৩১. শীর্ষ ১১ইনফ্লুয়েন্স- মাইকেল মধুসূদন, গৌতম বুদ্ধ, ইন্দিরা গান্ধী, শচীন টেন্ডুলকার, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, হুমায়ূন আহমেদ, ফ্রেডরিখ নীটশে, ফ্রানজ কাফকা, জ্যাক রুশো, নিকোলাই টেসলা এবং রনে দেকার্ত।
৩২. প্রায়শ্চিত্ত- চুল আজীবন বৌদ্ধ ভিক্ষুদের আদলে রাখা এবং সকল প্রকার মাংস বর্জন।