বছরে সর্বোচ্চ ২টি বই লেখা সম্ভব আমার পক্ষে, কিন্তু বছরে ক্রিয়েট করতে চাই অন্তত ১৩টি বই; কীভাবে পূরণ হবে বাকিগুলোর ঘাটতি; কোথায় পাব এত সময়!
এমন নয় যে কেউ আমার সংসার খরচের স্পন্সর হলেই বেশি বই লিখতাম। আমার কাজগুলো পরিপূর্ণরূপে উপভোগ করি, জীবন থেকে এগুলো চলে গেলে নিজেকে মনে হবে বাংলা সিনেমার আমির সিরাজি; এসব থেকেই চিন্তা-কল্পনা-পর্যবেক্ষণ তৈরি হয়।
কিন্তু প্রচুর বইও তো তৈরি হওয়া বাকি। যেমন বেশ কিছুদিন ধরে মাথায় ঘুরছে নগরজীবনে এতগুলো রাইড শেয়ারিং apps (পাঠাও, উবার, ও ভাই, সহজ) এলো, তার ভিত্তিতে মানুষের লাইফস্টাইলে কতটা ইমপ্যাক্ট পড়লো, এটা নিয়ে বই হওয়া উচিত।
এটার জন্য যে ফিল্ডওয়ার্ক এবং লেখালিখি, সেই সময় কে দেবে!
আবার রাস্তায় যেসব হকার দেখি এরা ২০০ টাকার জিনিসও ৩০ টাকায় বিক্রি করে দেয়, তাহলে এরা চলে কীভাবে! এটাও তো বই হওয়ার দাবিদার।
প্রকাশক ম্যানেজ করা একেবারেই সমস্যা নয়, এমনকি যদি কাউকে বলি ভাই অমুক টপিকে বই লিখব লেখকের চা-নাস্তা খরচ হিসেবে ২০ হাজার টাকা দেন, একটা সিগনিফিক্যান্ট কাজ হবে, তেমন লোকও পরিচিত আছে কয়েকজন।
কিন্তু
লেগে থেকে বইটা লিখবে তেমন মানুষই নাই।
অথচ
প্রায় প্রতিমাসে ইনবক্সে ৪-৫ জন যোগাযোগ করে প্রকাশক যোগাড় করে দিতে, বই প্রকাশ করতে চায়।
সেসব বইয়ের কনটেন্ট কী?
পারিবারিক অথবা প্রেমের গল্প সংবলিত উপন্যাস, রাশি রাশি থ্রিলার-সাইন্স ফিকশন, অপরিণত রম্য প্রভৃতি। এইসব টপিকে বাংলা ভাষায় গত ১৫০ বছরে যা লেখা হয়েছে নতুন কিছু লেখা না লেখায় কতটা ভ্যালু যুক্ত হবে? কিংবা থ্রিলার আর সাইফাইয়ের বেশিরভাগই তো কপি ক্যাট।
যদি আসলেই লিখতে ইচ্ছে করে সেইসব এরিনা কভার করা উচিত যেখানে শূন্যতা রয়েছে, সেইসব শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে তো।
আজিজ সুপারে ২০০১ এ যখন প্রথমবার গেলাম কত বইয়ের দোকান, বুয়েটে পড়াকালে যখন যেতাম বইয়ের দোকান কমছে বাড়ছে টি-শার্টের দোকান, গত বছর গিয়ে দেখি হাতে গোনা কয়েকটা বাদে বইয়ের দোকানই নেই। এত এত বইয়ের দোকানী তারা গেল কোথায়, কেবল এটা নিয়ে কাজ করেই তো বই হয়ে যায়।
সম্পূরক মতামত আসে, বই পড়ার মানুষ নেই, কী হবে এসব লিখে!
একটা বই যদি মাত্র ১৫০ কপি বিক্রি হয় তাতেই প্রকাশকের লোকসান ঠেকিয়ে দেয়া যায়৷ প্রফিটের জন্য ভোকাবিল্ডার- লাইফ হ্যাক্স আছে, বহু সোস্যাল মিডিয়া সেলিব্রিটি আছে, কিছু বই তো হতেই পারে যেগুলো কেবলমাত্র লোকসান ঠেকানোর জন্যই যথেষ্ট।
বাংলাদেশের পড়ুয়া কমিউনিটির একটা উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশী বই পড়ে; সংখ্যাটা যদি কমও ধরি ১৫ হাজার হবে। বাংলাদেশে পড়ার মতো কনটেন্ট নেই, কিন্তু যদি বাংলা ভাষায় ওরকম ইন্টারেস্টিং বিষয়ের বই প্রডিউস হয় তাদের মাত্র ১% কিনলেও ১৫০ হয়ে যাবে, তাছাড়া বিভিন্ন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কোনোভাবে বাল্ক কোয়ান্টিটি ঢুকিয়ে দিতে পারলে সম্ভব। ১৫০ সংখ্যাটা আসলে আহামরি বড়ো নয় যে ১২ মাসেও তা পূরণ করা যাবে না।
কিন্তু ওই যে, আমরা ফিল্মি স্টাইলের কনটেন্ট ক্রিয়েট আর কনজিউমে আনন্দ পাই। যারা পাচ্ছে পাক, তবে এই ফানেলের বাইরেও যদি কিছু দূরদর্শী চিন্তাধারার তরুণ-তরুণী থাকে যারা জীবনকে এক্সপ্লোর করতে চায়, কানেক্ট করতে চায় আর্থসামাজিকতার সূত্র, এবং সেখান থেকে উপলব্ধ প্রজ্ঞার ভিত্তিতে লিখতে চায় বই, আমি আসলে তাদের অপেক্ষায় বসে আছি ডাবের দোকানে। ডাব খেতে খেতে তাদের সাথে বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলবো, তারা কাজে নেমে পড়বে, বই লিখবে, QC পাশ করে সেটি প্রকাশিত হবে।
বইয়ের কপিরাইট সমস্তটাই তাদের, আমাকে ২ কাপ গ্রিন টি খাওয়ালেই যথেষ্ট, না খাওয়ালেও সমস্যা নেই।
আমি জানি না আমার নেটওয়ার্কে থাকা ১৭০০০ মানুষের মধ্যে ১৯ থেকে ২৯ বয়সী মানুষ কতজন আছে, এবং তাদের কত শতাংশ লেখক হতে চায় (প্রথাগত গল্প-উপন্যাস-থ্রিলার-সাইফাই নয়), যদি মাত্র ৩ জনও থাকে, তাদের বলবো ডাব খেয়ে যাও, তারপর চলো কিছু হাতি-ঘোড়া মারি!
না মারলেও সমস্যা নাই, ফেসবুকের নির্দোষ লাইক বাটন তোমাদের জীবনকে কত মোলায়েম করে দিয়েছে!
আমি এইসব হাজারে-বিজারে গল্প-উপন্যাস-থ্রিলারের বাইরে একটা পৃথক উইন্ডো তৈরি করতে চাই।
কারো চাওয়া যদি আমার সাথে মিলে সমস্ত ডাব তোমার জন্য!
whatsapp এ মেসেজ দিয়ো- 01838666487