একজন কবির কি মেয়র হওয়া উচিত, নাকি মেয়রের বন্ধু বা পরামর্শক?
প্রশ্নটা গভীর মেটাফরিকাল। কবি এখানে শিল্প-বিজ্ঞান-বিনোদনের প্রতিনিধি, মেয়র সকলপ্রকার ক্ষমতা পিরামিডের শীর্ষবিন্দুর৷
গোষ্ঠী রাজনীতিতে গ্রাম-থানা-জেলা-বিভাগ-দেশ-বহির্বিশ্ব প্রভৃতি যন্ত্রাংশ মিলেই তৈরি হয় একটি গাড়ি। কোনো একটি যন্ত্রাংশ বিচ্ছিন্ন হওয়া মানেই প্রভাব পড়বে পারফরম্যান্সে।
দীর্ঘ মানব পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় আমার সর্বশেষ উপলব্ধি হলো, শেষ পর্যন্ত মানুষ ৩ প্রকার- উৎপাদক, ভোক্তা, নেতা। যদি পাইচার্টে আনুপাতিক বিভাজনে যাই, ভোক্তা ৯০ শতাংশ, উৎপাদক ৬ শতাংশ, নেতা ৪ শতাংশ!
তবে একটা অমীমাংসিত ধাঁধায় সমস্ত বন্টন করে দেয় গুবলেট। ১০০% ব্যক্তিই কোনো না কোনো স্তরে ভোক্তা। ফলে ভোক্তা পরিচয় বিশেষত্বহীন, প্রত্যেকে নেতা আর উৎপাদক হওয়ার প্রলোভনে পড়ে। ভোক্তা হিসেবে তার যা করণীয় ছিল সেদিকে লক্ষ্যপাত না করে নেতা-উৎপাদক হওয়ার মরিচীকায় সময় এবং এনার্জির বৃহদাংশ অপচয় করে একটা সময়ে উপজাত হিসেবে পায় পরশ্রীকাতরতা, কূপমণ্ডুকতা এবং হতাশা!
নেতার চূড়ান্ত টার্গেট ক্ষমতা, উৎপাদকের খ্যাতি। দুটোই ঐশ্বরিক বৈশিষ্ট্য।
ক্ষমতা সবসময়ই বাইনারি নিয়মে চলে ; হয় শিখরে অথবা শিকলে। এজন্য এমনকি জীবন নিয়েও বাজি ধরতে হয়। তাকে একই টেবিলে একজন ডাক্তার, বাটপার, সন্ত্রাসী, ব্যাংকার, কবি, সাংবাদিক, গায়ক এর সাথে একই সময়ে কথা বলতে হয়, কোনোরকম তারতম্য না করেই, যদিও প্রত্যেকে অনেক বেশি আলাদা একে অন্যের চাইতে। বিরল এই স্কিল উৎপাদকের থাকে না, ভোক্তার বলাই বাহুল্য। ফলে নেতার জীবনে ‘গ্রে এরিয়া’ তে প্রাবল্য এবং চাপল্য!
উৎপাদকের স্কিল একমুখী। তাকে ওই টেবিলে বসিয়ে দিলে সে প্রত্যেককে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে, কাজ আদায় করা বা ডিলিং অসম্ভব। কিন্তু যেহেতু সে খ্যাতিমান, তার মধ্যে কৃত্রিম বিশ্বাস জন্মে সে সবকিছুতেই পারদর্শী।
খ্যাতির জার্নি দুরূহ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। আপনার জীবনে বিসর্জনের তালিকা দৈর্ঘ্যে ছাড়িয়ে যাবে হোয়াংহো নদীকে, প্রাপ্তিযোগ ঘটতে পারে, নাও পারে৷ ফলে খ্যাতির জীবনঘাতি পথ ছেড়ে সে জনপ্রিয়তার বিদ্যে রপ্ত করতে যায়।
জনপ্রিয়তা এক মেয়াদনির্ভর ধারণা। ভোক্তাশ্রেণি বরাবরই জনপ্রিয়তা নামক বিধানসভায় নিজেদের প্রতিনিধি দেখতে চায়, এবং মেয়াদশেষে সেখানে আসে নতুন প্রতিনিধি। ফলে অধিকাংশ উৎপাদক খ্যাতি বা জনপ্রিয়তা, কোনোটারই নাগাল না পেয়ে অভিযোগের ইমারত নির্মাণে বসে।
ভোক্তা নিজেদের অবদমননে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে তৈরি করে প্রচুর ছদ্ম নেতা এবং ছদ্ম উৎপাদক। তাতে ইকোসিস্টেম বিকশিত না হয়ে এগিয়ে চলে বিনাশের দিকে।
ভোক্তা যখন মননে এবং যাপনে নিজেকে ভাঙতে চায়, সেখানে উৎপাদক এবং নেতাদের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।
আবারো একটা গোলযোগ বাঁধে যখন নেতা মনে করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে নির্বোধ ভোক্তা অধিকতর উপযোগি। উৎপাদক ভাবে খ্যাতির তপস্যা করে যৌবন না ফুরিয়ে জনপ্রিয় হওয়া দরকার, সংবেদনশীল ভোক্তা জনপ্রিয়তার অন্তরায়।
ফলে রিভার্সিবল প্রক্রিয়ায় নেতা এবং উৎপাদক ক্ষমতা আর জনপ্রিয়তাকে নিরংকুশ করতে নির্বোধ ভোক্তা তৈরি মিশন ডিজাইন করে। এতে শুধু ভোক্তাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, নতুন নেতা আর উৎপাদক আসবার পথও সংকুচিত হয়ে আসে৷
এবং সেই পরিস্থিতিতে নেতা ভাবে ক্ষমতা পেয়েছি, এবার খ্যাতি লাগবে। উৎপাদক ভাবে খ্যাতি বা জনপ্রিয়তায় পোষাচ্ছে না, ক্ষমতাও চাই।
একটা স্যাচুরেশন তৈরি হয়, এবং ভ্যালু গ্রাফ ক্রমশ নিম্নমুখী হতে শুরু করে।
কবি যদি স্বীকার করে নিত যে কোনো এক জায়গার মেয়র হয়ে আটকে না গিয়ে ১০ জন মেয়রের বন্ধু হই, তাতে অনেকগুলো ধাঁধা মিলে যেত!
কিন্তু প্রলোভন এবং পিছুটান মানুষের অলিন্দ এবং নিলয় হয়ে প্রতি পাম্পে বলে যায় ‘পারবে তুমিও’