ভাঙতি মহাভারত (পর্ব-১, মোট ৩ পর্ব লেখার ইচ্ছা, তবে বাকি ২ পর্বের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত)

ইলিয়াড, ওডিসি, ইনিড, রামায়ণ, মহাভারত- ৫টি মহাকাব্যই পড়া হয়েছে ব্যক্তিগত আগ্রহে। গ্রীক সংস্কৃতির প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, মহাভারতের সাথে কম্পারেবল নয় কোনোটিই, এমনকি রামায়ণকেও মহাভারতের তুলনায় যথেষ্ট শ্লথ ও একঘেয়ে মনে হয়। গুগলে ঘাঁটাঘাটি করলে দেখা যায়, বোদ্ধারা মহাকাব্যগুলোর মধ্যে অন্ত্যমিল আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে প্রচুর থিসিস করেছেন, বিশেষত ইলিয়াড বনাম মহাভারত খুবই পছন্দের থিসিস বোধহয় নন্দনতাত্ত্বিকদের।
এসব থিসিসে যে বিষয়গুলো খুব অহর্নিশি উঠে আসে, উভয় মহাকাব্যেই দেবতাদের ইনফ্লুয়েন্স মারাত্মক, দুটোরই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ যুদ্ধ, যার কেন্দ্রবিন্দুতে নারী (মহাভারতে দ্রৌপদী, ইলিয়াডে হেলেন), চরিত্রগুলোর জন্মের ধরন স্বাভাবিক নয় ( দেবতারা কামার্ত হয়ে বা বর দিয়ে বিচিত্র উপায়ে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন), গ্রীকরা ছলের আশ্রয় নিয়েছিল, পাণ্ডবরাও কৌরব বীরদের পরাস্ত করেছিল ছলের আশ্রয়ে, ধৃতরাষ্ট্র এবং ট্রয়ের রাজা প্রিয়াম প্রায় একইরকম অকর্মণ্য এবং অসংখ্য পুত্রের জনক। তবে সবচাইতে ইন্টারেস্টিং তুলনাটা বোধহয় একিলিস ও হেক্টর দুই চরিত্রকেই কর্ণের মধ্যে দেখতে পাওয়া। একিলিসের মতো কর্ণেরও জন্মসূত্রে কিছু এডভান্টেজ পাওয়া ছিলো, মৃত্যুর দিক দিয়েও দুজনের সাদৃশ্য আছে। অন্যদিকে হেক্টর ভাইয়ের স্নেহে অন্ধ, কর্তব্যপরায়ণ, কর্ণও দুর্যোধনের প্রতি মিত্রতাসূত্রে আবদ্ধ, কর্তব্যপরায়ণ, হেক্টর আর কর্ণ দুজনই পতিত হিরো।
পড়ার জন্য এসব থিসিস বেশ ভালো, তবে আমি যেহেতু স্বশিক্ষিত মানুষ, তাই এইসব থিসিসকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আরোপিত এবং অনেকটা জোর করে মেলানো মনে হয়। মিল খুঁজতে চাইলে কাশেম বিন আবুবকারের বইয়ের সঙ্গেও টলস্টয়ের ওয়্যার এন্ড পিস এর দূরবর্তী কোনো না কোনো মিল খুঁজে বের করা সম্ভব। এই ধরনের ইনসাইট তাই আদৌ জরুরী কিনা প্রশ্ন থেকেই যায়। সাধারণ পাঠক হিসেবে আমি ইলিয়াড পড়ে যে গভীরতা বা বৈচিত্র্যের অভাব বোধ করেছি, মহাভারত পড়তে গিয়ে তা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। ইলিয়াড গ্রীক সাহিত্য বলেই তার প্রতি আহলাদিত হতে হবে এমন কোনো সংস্কার আমার মধ্যে কাজ করে না।
এই লেখাটিতে আমি মহাভারতে মানুষের প্রিয় চরিত্র, কর্ণ বনাম অর্জুনের ভিন্ন দৃষ্টিকোণ, এবং কিছু ছোট কিন্তু ইনফ্লুয়েন্সিয়াল চরিত্র নিয়ে কথা বলতে চাই। বাকি ২ পর্বের কনটেন্ট এখনো ঠিক করিনি।
মহাভারতের প্রিয় চরিত্র প্রশ্নে ৩ ধরনের ক্যাটেগরি পাওয়া যায়: কিশোর, বুদ্ধিবৃত্তিক সংবেদনশীল এবং নারীবাদী। কিশোরদের পছন্দের তালিকায় ১ নম্বরে আছে ভীম, বোদ্ধাগোষ্ঠীর কাছে কর্ণ অথবা কৃষ্ণ, এবং নারীবাদীদের কাছে দ্রৌপদী। এর বাইরেও একটি জনগোষ্ঠী আছে যারা ঘটোৎকচ এবং অশ্বত্থামাকে পছন্দ করে। (এই ফলাফলের উৎস ইন্টারনেটে মহাভারত বিষয়ক অজস্র আর্টিকেল, এবং ব্যক্তিগত জরিপ যেখানে প্রায় ৫০ জন বিভিন্ন বয়সের মানুষ মতামত দিয়েছে)
অর্জুনকে নিয়ে আলাদা করে লিখতে চাই, কারণ কর্ণের এতো জনপ্রিয়তার অন্যতম প্রভাবক হিসেবে অর্জুন ক্যারেক্টারটার ভূমিকা আছে। সে প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি।
কিশোররা ভীমকে পছন্দ করার কারণ খুব সিম্পল। ভীম প্রচণ্ড বলশালী, মহাভারতজুড়ে সে শুধু রাক্ষস মেরেছে আর বিভিন্ন শক্তিশালী যোদ্ধাকে বধ করেছে (জরাসন্ধ, কিচক), ধৃতরাষ্ট্রের শত পুত্রকে হত্যা করেছে, প্রধান ভিলেন দুর্যোধনের সাথে কন্টিনিউয়াসলি ঝামেলা বাঁধিয়েছে, যুধিষ্ঠিরের মতো নরম-শরম না থেকে বারবার মাথা গরম করেছে, তার মধ্যে দেবত্ব কম। এই বৈশিষ্ট্যগুলো কিশোরদের আকৃষ্ট করে, এবং বাচ্চাদের কার্টুনের গল্প হিসেবেও তার কাহিনীগুলো খুব মানিয়ে যায়। অন্য সব চরিত্রের মধ্যে ম্যাচিউরড কনটেন্ট বেশি।
মহাভারতের জনপ্রিয়তম চরিত্র কর্ণ। আমি জীবনে বহু গল্প-উপন্যাস পড়েছি, নিজেও বই-টই লিখেছিলাম একটা বয়সে, কিন্তু কর্ণের মতো এমন ইউনিক চরিত্র কোথাও পাইনি। রামায়ণের মেঘনাদ হয়তোবা কিছুটা সম্ভাবনা জাগিয়েছিল তার সমপর্যায়ের হওয়ার, কিন্তু রাবণের প্রভাবে সে অঙ্কুরেই হারিয়ে গেছে।
বুদ্ধিজীবী টাইপের মানুষ কর্ণকে কেন পছন্দ করে এর বেশ কিছু কারণ আমি বোঝার চেষ্টা করেছি। প্রথমত, ভিলেনের প্রতি ভালোবাসা বোদ্ধা হওয়ার লক্ষণ, অনেকেই শুধুমাত্র এই লক্ষণ মেটাতেই কর্ণকে পছন্দ করে। দ্বিতীয়ত, মানুষ নিজেকে ভিকটিম ভাবতে পছন্দ করে। সে সচেতন অবচেতনভাবে মনে করে সে বঞ্চিত, তার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। সোসাইটি, রাষ্ট্র, ফ্যামিলি সবকিছু তার দুর্ভাগ্যের জন্য দায়ী। কর্ণের সবচাইতে বড় এডভান্টেজ এই ভিকটিমাইজেশন। জন্মের সময় মা তাকে ফেলে দিয়েছিল, জীবনভর তাকে শুনতে হয়েছে সে সূতপুত্র- এজন্য ভীষ্ম, দ্রোণ তাকে অবজ্ঞা করেছে, দ্রৌপদী প্রত্যাখ্যান করেছে, পরশুরাম অভিশাপ দিয়েছে, কবচ-কুন্ডল ইন্দ্র ছিনিয়ে নিয়েছে, নিরস্ত্র অবস্থায় প্রতিদ্বন্দ্বী অর্জুন হত্যা করেছে- এইসব কিছুর মধ্যে অধিকাংশ মানুষ নিজেকে খুঁজে পায়, সেও একজন কর্ণ হয়ে উঠে। তখন কর্ণের খল ব্যাপারগুলো হয়ে উঠে বৈচিত্র্য এবং মানবিক। যেমন, নিজেকে জাহির করার প্রবণতা, কোনোকিছু নিয়ে লেগে না থাকা, দুর্যোধনের প্রতি নিঃশর্ত মিত্রতা (এটাকে অনেকে খারাপ চোখে দেখলেও আমি বলবো বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা চলে না, বন্ধুত্ব অন্ধই হওয়া উচিত), এবং ক্রমাগত হিংসা (অর্জুনের প্রতি তার বিদ্বেষটা মারাত্মক দৃষ্টিকটু। অর্জুন ভাই জানা সত্ত্বেও সে তাকে হত্যার সংকল্প নিয়েছিল, তার সারাজীবনের লক্ষ্য ছিলো অর্জুনের চাইতে সে শ্রেষ্ঠ এটা প্রমাণ করা, আর কিছু নয়।), দ্রৌপদীকে নোংরা ভাষায় আক্রমণ করা ও বস্ত্রহরণে দুঃশাসনকে প্ররোচিত করা (অনেকেই বলেন, এটা দ্রৌপদীর পূর্বে করা অপমানের প্রতিশোধ, কিন্তু চড় মারার প্রতিশোধ যদি হত্যা হয়, এটা ব্যালেন্সিং হলো না), বালক অভিমন্যুকে ৬জন মহারথী মিলে হত্যা করা- এসব বিষয়কে বোদ্ধারা ভাবেন চাঁদের কলঙ্ক আর মানবিক হিসেবে। কর্ণের প্রধান সুবিধা, লেখক সবরকম চেষ্টা করেছেন তাকে ভিকটিমাইজড প্রমাণ করতে, এবং সেটা করতে গিয়ে অর্জুনকে এতোবেশি হাইলাইট করেছেন যে একই মানুষের অর্জুন এবং কর্ণ দুজনের ব্যাপারেই সমান ইন্টারেস্ট থাকার সম্ভাবনা তিরোহিত করে দিয়েছেন।
তৃতীয়ত, প্রতিভা অপচয়, এই হাপিত্যেশ করাটা বোধহয় আরেকটা ফ্যাশন। কর্ণের ক্ষেত্রে প্রতিভা অপচয় টার্মটা বারবার ব্যবহার করা হয়। কর্ণের সম্ভাবনা ছিলো সম্রাট হওয়ার, সে পাণ্ডবদের বড় ভাই, ৫ পাণ্ডবের প্রত্যেকের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে সে ইউনিক হয়ে উঠেছিল, কিন্তু দুর্যোধন আর শকুনির সান্নিধ্যে সে বিকশিত হয়নি, দুষ্টসঙ্গে নিজে কেবলই পতিত হয়েছে। ৪র্থত, নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতে মানুষের ভালো লাগে। কর্ণ পরশুরামের ঘুমের ব্যাঘাত যাতে না ঘটে সেজন্য বিছার কামড় সহ্য করলো, অথচ বিনিময়ে জুটলো অভিশাপ, ভুল করে গাভী হত্যা করে আবারো অভিশাপ পেল, এবং চরমতম পরীক্ষার দিনে রথের চাকা বসে গেল। why always me?- এটা যেমন হতাশাবাদী মানুষের প্রধান আক্ষেপ, কর্ণের দুর্ভাগ্যগুলোকেও মনে হয় অতি আপন। পঞ্চমত, এরোগেন্স। মানুষ বোধহয় এরোগেন্স শো করতে পছন্দ করে, বিনয় বা নমনীয়তা এক ধরনের ভনিতামাত্র। এরোগেন্স মানে বোধহয় একসেপশনাল। ভদ্রতাকে অনেকেই দুর্বলতার প্রতীক গণ্য করে। কর্ণ চরিত্রের পরতে পরতে এরোগেন্স। তাই সবমিলিয়ে কর্ণকে পছন্দ করা মানেই হলো সংক্ষেপে চিন্তাশীল মানুষ।
ঠিক একই কারণে অর্জুনকে পছন্দ করা মানে গৎবাঁধা চিন্তা-চেতনা, অগভীর মানসিকতা এবং বুদ্ধিহীনতার পরিচায়ক। বোদ্ধাসমাজ অর্জুনবিমুখ এরও কিছু বহুলচর্চিত কারণ আছে। প্রথমত, মহাভারতজুড়েই অর্জুনকে দেখানো হয়েছে প্রিভিলেজড মানুষ হিসেবে। সে কৃষ্ণের প্রিয়পাত্র, তাকে বলা হয়েছে পূর্বজন্মে নারদ ঋষি ছিলো, তার জন্মের সময় দেবতারা পুষ্পবৃষ্টি বর্ষণ করেছিল, এবং তার শ্রেষ্ঠত্ব নিরঙ্কুশ করার জন্য দ্রোণাচার্য একলব্য নামের এক চরিত্রকে বৃদ্ধাঙ্গলি বিসর্জন দিতে বলেছিল। প্রিভিলেজ পাওয়ার চাইতেও একলব্যের কাটা আঙুল অর্জুনকে সমালোচকদের অপছন্দের পাত্র বানাতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। দ্বিতীয়ত, বেশ কিছু ঘটনা এমনভাবে ফুটে উঠেছে যার মাধ্যমে এটা প্রায় সহজ এন্টারপ্রেটেশন যে অর্জুন অন্যায় সুবিধা নিয়েছে। কবচ-কুন্ডল থাকা অবস্থায় কর্ণকে হারানো যাবে না, কাজেই অর্জুনের মৃত্যু নিশ্চিত, এজন্য ইন্দ্র কর্ণের কাছ থেকে তা নিয়ে নেয়, কর্ণ বুক চিড়ে সেটা দিয়ে দেয়। কুন্তী কর্ণের কাছে গিয়ে পুত্রদের জীবন ভিক্ষা চায়, অনেকের প্রিয় ক্যারেক্টার ঘটোৎকচ স্রেফ অর্জুনকে রক্ষা করার জন্য কর্ণের অস্ত্রের আঘাতে মারা যায়, অভিমন্যু চক্রব্যুহে আটকে পড়ার সময় সে সেখানে ছিলো না, সূর্যাস্তের পরও জয়দ্রথকে হত্যা করেছে, শিখণ্ডির আড়ালে লুকিয়ে থেকে ভীষ্মকে হত্যা করেছে, দ্রৌপদীর অপমানের সময় ভীম প্রতিবাদ করলেও সে নীরব ছিলো, তাকে সাইকোলজিকাল এডভান্টেজ দিতে শল্য ক্রমাগত কর্ণকে গালমন্দ করে গেছে এবং সবশেষে সেই ঘটনা যেখানে সকলের প্রিয় কর্ণকে সে কৃষ্ণের প্ররোচনায় নিরস্ত্র অবস্থায় হত্যা করেছে। সুতরাং অর্জুনকে পছন্দ করা তো নির্বুদ্ধিতা ভাববেনই বোদ্ধারা। কিন্তু বোদ্ধারা সম্ভবত এটা দেখেন না যে, কর্ণকে মহিমাণ্বিত করতেই অর্জুনকে এরকম করে দেখানোর প্রয়োজন ছিলো। সে কখনো যুধিষ্ঠির, কখনো কৃষ্ণের ছায়ার নিচে ঢাকা পড়ে ছিল, অর্থাৎ সে আসলে সৈন্যমাত্র, মাস্টারমাইন্ড নয় বা স্ট্রং পারসোনালিটিরও অধিকারী নয়। কিন্তু অত্যন্ত ভ্যালিড এই ব্যাপারটি বোদ্ধারা এড়িয়ে যান। তারা দ্রৌপদীর সাথে তার রিলেশনটা নিয়ে গবেষণা করেন, সুভদ্রা আর দ্রৌপদীর মধ্যে সে কাকে বেশি পছন্দ করে সেটা নিয়ে গবেষণা করেন, কিন্তু এটা অলক্ষ্যেই থেকে যায়, রাজপুত্র হয়েও ভিক্ষা করে খাবার সংগ্রহের স্ট্রাগল, শেখার বা পারফেকশনের জন্য ক্রমাগত সাধনা করে যাওয়া, কিংবা বীরত্বের প্রদর্শন করে পাওয়া স্ত্রীকে অন্য ভাইদের জন্য স্যাক্রিফাইস করে দেয়া, তার মতো বীর ১ বছর বৃহন্নলা হয়ে থাকা (জেন্ডার বিসর্জন দেয়ার স্যাক্রিফাইস), যুদ্ধ শুরুর পূর্বেও একমাত্র তার নিজেরই যুদ্ধ করতে নিরুৎসাহিত হওয়া, ভীষ্ম-কর্ণ-কৃপ-দ্রোণাচার্য-দুর্যোধনদের মতো বীরদের বিপক্ষে পাণ্ডবপক্ষের একমাত্র মহারথী হয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সাহস পাওয়া, এগুলো বোদ্ধাদের কৃপাদৃষ্টি পাবে না। আমি তো বলবো কর্ণের তুলনায় অর্জুনই বরং বেশি বঞ্ছনা এবং নিগ্রহের শিকার। সে এমনকি কর্ণের পা ধুয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। ইন্টারনাল ইগো কনফ্লিক্টের এরকম ক্লাসিক দৃষ্টান্ত অর্জুনের মধ্যেই পাওয়া যাবে, তবু অর্জুন ফ্যান্টাস্টিক নয়, কারণ সে কর্ণের বাই বর্ন শত্রু, যাকে হত্যা করার শপথ নিয়ে কর্ণ দানবীর হয়ে গিয়েছিল (অর্জুনকে হত্যা না করা অবধি কাউকে না বলবো না), মাংস আর মদ পান ছেড়ে দিয়েছিল, জুতা পরা বন্ধ করেছিলো। তবু অর্জুনই দোষী, কারণ সে তো কর্ণের মতো ডায়নামিক হতে পারেনি। কর্ণকে ওভারগ্লোরিফাই করার উদ্দেশ্যে অর্জুনের মতো এতো সুপার একটা চরিত্রকে যে এরকম ক্লিশে করে উপস্থাপন করা হবে, এটা সত্যি দুঃখজনক।
মহাভারতে খুব অল্প উপস্থিতি কিন্তু জনপ্রিয় এমন দুটো চরিত্র অশ্বত্থামা আর গান্ধারী। অশ্বত্থামা নানা কারণে উল্লেখযোগ্য। সে অমরত্ব পেয়েছে, সে উপপাণ্ডবদের হত্যা করেছে, অর্জুনের সাথে তার একটা ইগো কনফ্লিক্ট ছিলো, যুধিষ্ঠিরের সেই বিখ্যাত ‘অশ্বত্থামা হত’ মিথ্যার কেন্দ্রবিন্দুতেও তো সেই।
গান্ধারীর স্যাক্রিফাইস এবং ধীশক্তি নিয়ে বলার কিছু নেই। ভীষ্মকে নিয়েও অনেক কিছু বলা যায়। সেটা অন্য কোথাও লিখবো। মাদ্রী এবং নকুল-সহদেব মহাভারতের সবচাইতে নিভু নিভু চরিত্র। মারা যাওয়া ছাড়া মাদ্রীর ভূমিকা কী, পঞ্চপাণ্ডবের তিন পাণ্ডব যেখানে নানা গল্পের নায়ক, সেখানে শেষ দুজনের বিশেষত্ব কী সেটাই বোঝা দুষ্কর।
এই লেখাটা এখানেই শেষ করতে চাই। ২য় পর্বটা কী নিয়ে হবে সেটা ভাবতে হবে, এটা একমমই ভাবনা চিন্তা ছাড়া লেখা। মহাভারতের মতো এতো বিশাল ক্যানভাস নিয়ে লেখার জন্য চিন্তার প্রয়োজন। দেখি পরের ২ পর্বে সেটা ঘুঁচাতে পারি কিনা।