যে কোনো বাংলাদেশী ক্রিকেটমোদীকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতি প্রত্যাশা কী, দু ধরনের উত্তর পাওয়া যাবে-

১. বাংলাদেশ সেমি ফাইনালে খেলবে।
২. বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ২-৩ টা ম্যাচে জিতবে, এমনকি একটা ম্যাচেও নাও জিততে পারে।

১০ দলের বিশ্বকাপ যে ফরম্যাটে হবে তাতে প্রত্যেক দল ৯টি ম্যাচ খেলার পর শীর্ষ ৪ দল সেমিতে উঠে যাবে। র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ৭, যদি ধরেও নিই ৮,৯, ১০ এ থাকা দলগুলোকে হারিয়ে দিবে, তবু শীর্ষ ৪ এ ঢুকতে হলে ৪,৫,৬ কে হটাতে হবে। এটা হলো সরল হিসাব, এর বাইরেও বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়া, পেছনের দলের কাছে সামনের দলের হেরে যাওয়া, নেট রানরেট– এরকম বহু সমীকরণ মেলানোর ব্যাপার আছে।

সেই সকল চিন্তাকে একীভূত করে ১১টি উপলব্ধি তৈরি হয়েছে। যারা কেবল স্কোরবোর্ড দিয়ে খেলা বিচার করেন তাদের সাথে আলোচনায় আগ্রহ নেই, বরং ক্রিকেটের সাইকোলজিকাল এবং সিচুয়েশনাল ইমপ্যাক্ট বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন, সেইসব মানুষের সাথে উপলব্ধি বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হতেই পারে।

উপলব্ধি ১: বাংলাদেশের ক্রিকেট দর্শকের মতো অন্তঃসারশূন্য গোষ্ঠী বিশ্বে বিরল৷ ভারতের সাথে তুলনীয় হতে পারে, তবে আয়তনে ভারত এতোই বিশাল যে তাদের টোটাল সংখ্যা থেকে প্রকৃত ইনসাইট পাওয়া যাবে না। বরং আমরা যদি ডেনসিটি বা পারসেন্টেজ আমলে নিই সেখানে ভারতের চাইতে বাংলাদেশের সমর্থকেরা বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে থাকবে। এই ব্রেইনলেস সমর্থকগোষ্ঠী যখন খেলা দেখতে বসে তখন প্রতি বলে না হোক অন্তত প্রতি ২ ওভারে বিপক্ষ দলের উইকেট প্রত্যাশা করে, তাদের ব্যাটসম্যানরা ২-১টা চার-ছক্কা মারলে সেটাকে দলীয় বোলারদের স্খলন মনে করে। পক্ষান্তরে ব্যাটিংয়ের সময় প্রতি ২ ওভারে ১টি বাউন্ডারির প্রত্যাশায় থাকে, ব্যাটসম্যান কোনোভাবেই আউট হতে পারবে না। যদিওবা আউট হয় অত্যন্ত সহীহ উপায়ে ডেডলি কোনো ডেলিভারিতে আউট হতে হবে। ফলে বাংলাদেশের সিংহভাগ দর্শক ক্রিকেট দেখতে বসে না, তারা ক্ষমতার প্রতি নিদারুণ ফ্যান্টাসিতে ভুগে নিজেদের অক্ষম আস্ফালনকে ক্রিকেটের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত করতে চায়। এই সকল দর্শকের ব্যক্তিজীবন পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, হীনম্মন্যতা, আলস্য আর শর্টকাটে সাফল্য খুঁজতে গিয়ে নিজস্বতা আর সৃজনশীলতার দেখা পায়নি কখনো।

সোস্যাল মিডিয়া পুরো দেশকেই নিয়ন্ত্রণ করছে বলা যায়। বিসিবি সোস্যাল মিডিয়ার গঠনমূলক মতামত বা আলোচনাকে আমলে নেয় না, কিন্তু কলেজপড়ুয়া বা হতাশায় ভোগা শ্যালো চিন্তাধারার সমালোচনাগুলোকে শান্ত করতে উদ্ভট সব কাজ করে ফেলে, যা মস্তিষ্কহীনতাকে প্রকট করে তোলে। বিশ্বকাপের জার্সি বদলানো, রাহির বদলে তাসকিনকে নিতে চেয়েও সোস্যাল মিডিয়ার আহাজারিতে সেই চিন্তা থেকে সরে আসা- সবকিছুর মধ্যেই মেরুদণ্ডহীনতার পরিচয় ফুটে উঠে। এরকম উগ্র এবং ব্রেইনলেস সমর্থকগোষ্ঠীকে বিসবি যতদিন প্রমোট করবে, ততদিন বড়ো টুর্নামেন্টে কেবল অংশগ্রহণই সার্থকতা হয়ে থাকবে।

উপলব্ধি২: জাতিগতভাবে আমরা মধ্যমেধার। মিডিওক্রিটিকে আমরা সহাস্যে মেনে নিই, এবং সকল জায়গায় মিডিওকরদের অধিষ্ঠিত দেখতে চাই, মিডিওকরদের মনে হয় অতি আপনজন। মিডিওকরের জীবনে বড়ো কোনো ক্রাইসিস নেই, অনিশ্চয়তা নেই, আবার দৃশ্যমান কোনো গ্রোথও নেই। গ্রোথ না থাকায় পরিতাপ হয় না। ছা-পোষা জীবন পেলেই তারা খুশি। একারণে আমাদের ক্রিকেটেও মিডিওকর প্লেয়ারদের প্রতি গণ সিমপ্যাথি। ইমরুল কায়েসের জন্য যত মানুষের মন কাঁদে, ততটাই ঘৃণা তারা পুষে রাখে লিটন দাস বা সৌম্য সরকারের প্রতি। তারা জানে কায়েস কখনোই এক্সট্রা অর্ডিনারি কোনো পারফরম্যান্স করে দেখাতে পারবে না, কিন্তু গড়ে সে একটি রান মেইনটেইন করবে। এটা অনেকটাই ফিক্সড মাইনের চাকরির মতো। পক্ষান্তরে লিটন বা সৌম্য বড়ো কিছুর জন্য ঝুঁকি নিবে, তাতে চরমভাবে ব্যর্থ হবে, কিন্তু ম্যাচ জিতিয়ে দিবে। এটা দুটো কারণে মিডিওকর মানসিকতা মানতে পারবে না। প্রথমত ৭ টা ম্যাচ খেলে ৩টা জয় ৪টা হারের চাইতে ৬টা ক্লোজ ম্যাচ এবং ১টা হার তাদের অনেক বেশি আনন্দ দেয়। কারণ, ক্লোজ ম্যাচগুলো নিয়ে দীর্ঘদিন হাহুতাশ করা যায়, ইস আর যদি ৫ টা রান বেশি হত! কিন্তু জেতার জন্য খেলতে গিয়ে ১৫০ রানে হেরে যাওয়া মানে লজ্জাজনক পরাজয়, মুখ রক্ষা কঠিন। কিন্তু আদতে ৭টা খেলে ৬টাতেই যে হেরে গেলাম, এবং মানসিকতা বদলালে ১৭ ম্যাচ শেষেও জয়সংখ্যা ১-২টাই থেকে যাবে, এভাবে চিন্তা করতে অভ্যস্ত নয় মিডিওকর জাতি। আমরা দিবানিশি তাই ক্লোজ ম্যাচ চাই, জিতলে বোনাস। এক ইমরুল গেছে, তার জায়গায় এসেছে একঝাঁক মিডিওকর প্লেয়ার। মিথুন, সাইফুদ্দিন, রাহি— তিন তিনটে মিডিওকর কেরানিকে কীভাবে এফোর্ড করে সেটা খুব কৌতূহল নিয়ে দেখার প্রতীক্ষায় রয়েছি। হাতুরুসিংহকে কোচ হিসেবে একদমই পছন্দ করতাম না, কিন্তু তার একটা ব্যাপার খুবই পছন্দ করতাম- তিনি মিডিওকর প্লেয়ারদের একেবারেই পছন্দ করতেন না, বরং সেইসব প্লেয়ারের পেছনে বাজি ধরতেন যারা ম্যাচ জেতাতে পারে। এবং টিকে থাকার প্রয়োজনে মিডিওকরদেরও অভিযোজিত হতে হয়েছে। এককালের মিনি অলরাউন্ডার মিডিওকর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ পরবর্তীতে যে পঞ্চপাণ্ডব নামক ভিআইপি লাউঞ্জে ঢুকে পড়লেন সেটা হাথুরুর মিডিওকর হটাও নীতিরই প্রতিফল বলবো। বাংলাদেশ ম্যাচ জেতে টিম ওয়ার্কের জোরে, অন্তত ৩-৪ জন প্লেয়ার জ্বলে না উঠলে ফাইনাল টাচ দিতে পারে না। ফলে আমাদের ইন্ডিভিজুয়াল ব্রিলিয়ান্স অতিব জরুরী। সেই একাদশে যদি ৩-৪টা মিডিওকর প্লেয়ার ঢুকে পড়ে, ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা টসের আগেই হেলে পড়ে। নতুন কোচ স্টিভ রোডস মানুষ হিসেবে অমায়িক, কিন্তু চিন্তাধারায় মিডিওকর, যে কারণে সাইফুদ্দিন, মিথুন দের মতো প্লেয়ার একাদশে অটো চয়েজে পরিণিত হয়েছে। মিডিওকরের জায়গা হবে রিজার্ভ বেঞ্চে, মূল একাদশের কেউ ইনজুরিতে পড়লে কিংবা ব্যাড প্যাচ চললে তাকে মেন্টাল রিলিফ দিতে মিডিওকররা আসবে মেকশিফট ব্যবস্থা হিসেবে। মিডিওকর প্লেয়ারদের ক্রমাগত সুযোগ দিতে থাকলে নিশ্চিত করে বলতে পারি, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ গড়ে ২-৩টা ম্যাচ জিতবে হয়তো৷ সংখ্যাটা ৩ এর উপরে উঠাতে হলেই মিডিওকরদের রিজার্ভ বেঞ্চে পাঠাতে হবে। তাতে জয়ের সংখ্যা ৩ এর নিচে নেমে যাবারও ঝুঁকি থাকবে, কিন্তু ১টা জেতা আর ৩টা জেতা আদতে একই যদি শীর্ষ ৪ এ খেলতে না পারি। ৩ জয়ে মান রক্ষা করবো, নাকি নিঃস্ব হওয়ার ঝুঁকি নিবো সেটাই প্রশ্ন। মধ্যমেধার জাতি শেষ পর্যন্ত মুখ রক্ষার দিকেই যাবে অনুমান করছি, তাই প্রথম ৩ ম্যাচেই মিথুন, সাইফুদ্দিনকে একাদশে দেখতে পাবো সেকথা বলেই দেয়া যায়। দ্বিতীয়ত, প্রশংসা করতে গেলে মধ্যমেধার মানুষেরা নিজেদের সাথে অদৃশ্য প্রতিযোগিতা বোধ করে; হোক সে অন্য সেক্টরের। সৌম্য বা লিটনকে কিছু মানুষ প্রশংসা করে, এটা মধ্যমেধার মানুষের গাত্রদাহের কারণ হয়। নিজে জীবনে ক্রিকেট না খেললেও একজন সাকিব, তামিম কিংবা সৌম্য সরকার তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে। ফলে মিডিওক্রিটি বোমার প্লিন্টারের মতো দ্রুত ছড়িয়্ব পড়ে আঘাত করে বসে মননশীলতাকে।

উপলব্ধি৩- বিশ্বকাপের প্রথম ৩ ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ যথাক্রমে সাউথ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের খেলা রিদম নির্ভর। যদি শুরুতে রিদম না পায় পরের দিকে গিয়ে আরো তালগোল পাকিয়ে ফেলে। ৯৯ বিশ্বকাপকে শিক্ষা সফর হিসেবেই দেখি, ওটাকে বিবেচ্য ধরছি না। বাকি আসরগুলোর পারফরম্যান্স অনেকটাই নির্ধারিত হয়েছে প্রথম ৩ ম্যাচ কেমন খেলেছে সেই নিয়ামকের উপর। ২০০৩ বিশ্বকাপ যে বিস্মরণযোগ্য তার মূল কারণ প্রথম ম্যাচেই সহযোগী সদস্য কানাডার কাছে হেরে বসা। প্রথম ৩ ম্যাচের মধ্যে অন্তত ১টিতে জিততেই হবে, যদি ২টায় জিতে তাহলে নিশ্চিত করে বলতে পারি বাংলাদেশ ফাইনালে খেলবেই। সুতরাং প্রথম ৩ ম্যাচেই সর্বোচ্চ ঝুঁকি এবং এগ্রেসন দেখাতে হবে৷ এখান থেকে অনুকূলে রেজাল্ট না এলে বাকি ৬ ম্যাচে অংশগ্রহণই সার্থকতা হবে। বাংলাদেশীরা মেন্টালি অস্ট্রেলিয়ার মতো টাফ না, নিউজিল্যান্ডের মতো ডার্ক হর্স না, কিংবা ইংল্যান্ডের মতো অল এটাকিংও নয়, যে কারণে খাদের কিনারা থেকে ফেরার মতো মনোবল আমাদের থাকবে না। প্রথম ৩ ম্যাচের একাদশ তাই মিডিওকর প্লেয়ারমুক্ত হোক।

উপলব্ধি৪ঃ ফর্ম যেমনই থাকুক, ইনজুরি ব্যতীত সকল ক্ষেত্রে সৌম্য সরকারকেই ওপেনে খেলাতে হবে। সৌম্যের মতো ফ্রি ফ্লাইং ব্যাটসম্যান অতীতেও কেউ ছিল না, নিকট ভবিষ্যতেও কেউ আসবে না। আগে ব্যাট করলে যেমন-তেমন চেজ করতে গেলে সৌম্য যেভাবে ব্যাট করে তাতে কোনো স্কোরকেই চ্যালেঞ্জিং মনে হয় না। টেকনিক একটি ওভাররেটেড বিষয়, প্রত্যেক ব্যাটসম্যানেরই ছোটখাটো দুর্বলতা থাকে, কিন্তু কে কীভাবে এডজাস্ট করে নেয় সেটাই তার প্রকৃত টেকনিক। সে যেভাবে পেস বল মোকাবেলা করে তা অবিশ্বাস্য। আগে শট রেঞ্জ কম ছিল, এখন নতুন কিছু শট যুক্ত হয়েছে, স্পিনের বিপক্ষে নড়বড়ে লাগতো, সেখানেও চোখে পড়ার মত উন্নতি হয়েছে; সবমিলিয়ে ইন ফর্ম সৌম্য বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ভাগ্যের এক নম্বর ফ্যাক্টর।তামিম যেমন সব ম্যাচেই নিশ্চিত, সৌম্যের জায়গাটাও তেমন সিল গালা করে দেয়া হোক। সে হতে পারে ৯৬ বিশ্বকাপের জয়াসুরিয়া কিংবা ২০০৭ এর গিলক্রিস্ট। অসভ্য, বর্বর ফেসবুকাররা তার খারাপ পারফরম্যান্সে যত কুৎসিত লেখালিখি করবে স্পোর্টিং মানসিকতা সম্পন্ন দর্শকদের উচিত তাকে নিয়ে আরো বেশি লেখা, এমনকি মূল ধারার সংবাদপত্রেও বিশ্বকাপ চলাকালে সৌম্যকে পর্যাপ্ত ব্যাক আপ দেয়া উচিত।

উপলব্ধি ৫: সৌম্য সব ম্যাচে নিশ্চিত হয়, লিটন দাস কি তবে রিজার্ভ বেঞ্চেই বসে থাকবে? কোনোভাবেই না, তাকে প্রথম ম্যাচ থেকেই একাদশে রাখতে হবে। আমি একসময় লিখেছি সৌম্য-লিটনকে একসাথে একাদশে খেলানো এক্সপেনসিভ হয়ে যায়। সাকিব ৩ নম্বরে উঠে এসে সেই জটিলতাকে সহজ করে দিয়েছে। প্রথম ৪ ব্যাটসম্যানের মধ্যে তামিম, সাকিব, মুশফিক, এরপর ব্যাক আপ হিসেবে আছে মাহমুদুল্লাহ। সুতরাং ৫ এ লিটনকে খুব সহজেই প্লেস করা যেতে পারে। লিটন পেসের তুলনায় স্পিন যথেষ্ট ভালো খেলে, ৫ এ যখন নামবে বলের সুইং কিছুটা কমে যাবে, ফলে সুইংগিং ডেলিভারিতে শুরুর দিকে যে নড়বড়ে থাকে কিছুটা, সেই ঝুঁকি কমে যাবে। তাছাড়া বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে টি২০ স্টাইলে খেলতে হলে তখন ৩ এ নামিয়ে দেয়া যাবে। লিটনের ঘটনার সাথে মিলতে পারে ৯৬ এর রোশান মাহানামা, ২০১৫ এর রাহানে কিংবা রোহিত শর্মার শুরুর দিকের ঘটনা। মাহানামা ওপেনার ছিলেন, কিন্তু জয়াসুরিয়া আর কালুভিথুরানাকে স্পেস দিতে মিডল অর্ডারে চলে যান।রাহানে ওপেন করেছেন, মিডলেও খেলেছেন পরিস্থিতি অনুসারে। রোহিত শর্মাও ওপেন করার পূর্বে মিডলে ব্যাট করেছেন। ইনফর্ম লিটনকে বসিয়ে রাখা পাপ। ৯ ম্যাচে সুযোগ পেলে ৩টাতে সে ভালো করবেই, এবং ৫ এ খেললে এর সাথে আরো ২টা ইনিংস যোগ হবে। লিটন গ্যাপে ঠেলে রান নিতে পারে, শট রেঞ্জ অনেক বেশি, সৌম্যের মত সে অত বেশি লফটেডও খেলতে পারে না। কিন্তু মিডল ওভারগুলোতে গ্যাপ শট খেলে রান রেট ঠিকই বজায় রাখতে পারবে। তাই প্রথম ৩ বাঁচা-মরার ম্যাচে লিটনকে ৫ এ খেলাতেই হবে। মিথুনকে আমি অপছন্দ করি না ইমরুল কায়েস পর্যায়ের, কিন্তু তাকে বিশেষ পছন্দও করি না। সে ব্যাক আপ প্লেয়ার হিসেবে চলতে পারে। কিন্তু তার কাছ থেকে একক কোনো কন্ট্রিবিউশন পাওয়া যাবে না, অপরপ্রান্তে একজন ডমিনেটিং ব্যাটসম্যান লাগবে, সে তাকে সঙ্গ দিবে। এভাবে ৩০-৩৫ বা তার কিছু বেশি রান করে আউট হয়ে যাবে। এটা নাম্বার ৫ এর বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। তাছাড়া তার শট রেঞ্জ খুবই কম, কোয়ালিটি বোলিংয়ের বিপক্ষে স্ট্রাগল করতে হয় প্রচুর। এশিয়া কাপের ২ ইনিংস বা নিউজিল্যান্ড সফরের ২ ইনিংস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রতিটিতেই তাকে প্রচণ্ড সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, নিশ্চিত আউটের হাত থেকে বেঁচে গেছে এবং আল্টিমেটলি ভরসার জায়গা তৈরি করতে পারেনি। মিথুন তাই পরিসংখ্যানের প্লেয়ার, ম্যাচ উইনার বা ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার নয়, সেই ক্যালিবারও তার নেই। সুতরাং সে রিজার্ভ বেঞ্চে থাকলেই দলের জন্য মঙ্গল। লিটন কিন্তু সৌম্যের মতো ডমিনেটিং নয়, সে মূলত টাইমিং আর প্লেসমেন্ট নির্ভর ব্যাটসম্যান, যে কারণে মিডলে মানিয়ে নিতে একটুও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ব্যতিক্রমী কিছু করতে হলে ব্যতিক্রমী ভাবেই চিন্তা করতে হবে। গতানুগতিক চিন্তার অন্তিম ফলও গতানুগতিকই আসবে।

উপলব্ধি ৬: বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবির প্রধানতম কারণ হতে পারে নতুন বলে সাইফুদ্দিনকে বোলিং করানো। অনেকেরই বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছে আমি একজন সাইফুদ্দিন বিদ্বেষী মানুষ, আমার প্রকাশভঙ্গির দায় থাকতে পারে এক্ষেত্রে। তাই ব্যাপারটা খোলাসা করা প্রয়োজন। ব্যাটসম্যান ডমিনেন্ট আধুনিক ক্রিকেটে বেশিরভাগ দলই ৪ জন জেনুইন বোলারের সাথে ৫ম বোলারের কাজটি পূরণ করে মিনি অলরাউন্ডার দিয়ে। বাংলাদেশের এডভান্টেজ হলো সাকিবের মতো জেনুইন অলরাউন্ডার একাদশে থাকায় ১৩ জন নিয়ে মাঠে নামতে পারে। ফলে আর ৩ জন জেনুইন বোলার নিয়ে অবশিষ্ট ১০ ওভার মিনি অলরাউন্ডার দিয়ে করানোর সুযোগ থাকে। এই মিনি অলরাউন্ডার ৬-৭ ওভার বোলিং করবে, যে ম্যাচে ছন্দে থাকবে সেটায় ১০ ওভার কোটাও পূরণ করবে। ইকোনমি ৪ এর আশপাশে রেখে বোনাস হিসেবে ১-২টা উইকেট পেয়ে গেল। সাইফুদ্দিন এই ক্যাটেগরির প্লেয়ার। সে ২০ থেকে ৪০ ওভারের মাঝখানে বোলিংয়ে আসবে, উইকেট টু উইকেট বোলিং করবে, ব্যাটসম্যান ডট বল প্রেসার রিলিজ করতে তার উপর চড়াও হয়ে উইকেট পড়ার উপলক্ষ্য তৈরি করবে। জিম্বাবুইয়ের গাই হুইটাল বা ভারতে রবিন সিং এই রোল প্লে করতো। কিন্তু সমস্যা হয়েছে মিরাজ থাকায়। দুজনকে একাদশে রাখার কারণে সাকিবকে ধরে জেনুইন বোলার হচ্ছে ৩ জন, ২০ ওভার হয়ে পড়ছে ভালনারেবল। এতে সাইফুদ্দিনকে খেলতে হচ্ছে ফ্রন্টলাইনার বোলার হিসেবে। নতুন বলে টার্গেট থাকবে পাওয়ার প্লে তে অন্তত ২ টা উইকেট নেয়া। এতে ম্যাচের মোমেন্টাম নিজেদের কাছে থাকবে। কিন্তু সাইফুদ্দিন নতুন বল নিলে ব্যাটসম্যান সেট হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পেয়ে যাচ্ছে। তার বলে লেগবিফোর হবে না, কট বিহাইন্ড হবে না, খুবই বিরল কিছু ক্ষেত্রে প্লেইড অন হতে পারে। তার উইকেটগুলো আসবে, ব্যাটসম্যান চার্জ করতে গিয়ে ৫০-৫০ অবস্থায় উইকেট দিয়ে এসেছে। প্রত্যেক দলের ওপেনিং জুটি যদি দেখি সেখানে স্ট্রোক প্লেয়ারের ছড়াছড়ি। তারা যদি ১০-১২ ওভার পর্যন্ত সময় পায় সেট হওয়ার জন্য ম্যাচের লাগাম ওখান থেকেই আলগা হয়ে ছুটে যাবে। এরপরে যেসব বোলার আসবে তাদের খেলা কোনো সমস্যাই হবে না। সাইফুদ্দিন যদি একাদশে থাকেও সেক্ষেত্রে নতুন বল নিতে হবে মুস্তাফিজকে। প্রথম চেঞ্জে সাকিব বা রুবেল আসবে। মিরাজ আর সাইফুদ্দিন কোনোভাবেই একসাথে একাদশে থাকবে না। যেহেতু উইকেট টু উইকেট বল করে তার ইকোনমি হয়তোবা বেশি থাকে না, কিন্তু তাতে দলের ক্ষতি হয়।১১ জনের ১১ রকম রোল থাকে টিমে, সেই রোলের সাথে চরম মিসফিট হলে সেটা দলের হার ডেকে আনে। এমনকি সম্প্রতি শেষ হওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজেও আর্লি ব্রেকথ্রু পাওয়া হয়নি। নিছকই ওয়েস্ট ইন্ডিজের চালচুলোহীন ব্যাটিং হওয়ায় তারা শেষে কলাপ্স করেছে, নইলে প্রতিটি ম্যাচেই ৩৩১+ রান চেইজ করতে হত। নতুন বলে লাগবে উইকেট টেকিং ডেলিভারি, ইকোনমি যতই হোক। এজন্যই রুবেল এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সে রান দেয়, কিন্তু উইকেট আনে। নতুন বলের বোলার এমনই হওয়া চাই। মূলত এখান থেকেই সাইফুদ্দিনের প্রতি বিরক্তি। নইলে ওয়ানডের জন্য সে খুব খারাপ না, ব্যাটিংয়ে ২০-২৫ টা রান করে দিতে পারে।

উপলব্ধি ৭- সাব্বিরকে নিয়ে যত আলোচনা হয় সে অনুপাতে পারফরম্যান্স কম, তবু তার ক্যালিবার নিয়ে সংশয় থাকা উচিত নয়। লোয়ার মিডল অর্ডারে সে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান, সেই সাথে সে মাঠে থাকা মানে ফিল্ডিংয়ে অন্তত ২৫-৩০ রান সেইভ করে দেয়া। রুবেল, মুস্তাফিজ, মাহমুদুল্লাহ, মিথুন, সাইফুদ্দিন- ৫ জন অত্যন্ত দুর্বল মানের ফিল্ডার থাকলে ফিল্ডিং এমনিতেই নাজুক হয়ে পড়ে। সেখানে সাব্বির, মিরাজ, সাকিব, লিটন, সৌম্য, তামিম দের ফিল্ডিং দলকে সুরক্ষিত করে। অক্রিকেটিয় কারণে নিন্দিত হওয়ার কারণেই তাকে নিয়ে বেশি কথা হয়, একটা শ্রেণি প্রতিনিয়ত তাকে ট্রল করতেই থাকে। একজন লেট অর্ডার ব্যাটসম্যানের কাছে ফিফটি বা সেঞ্চুরি আশা করা ক্রিকেট প্রজ্ঞার লক্ষণ নয়, সে যেটা করতে পারে ম্যাচ ফিনিশ অথবা স্ট্রাইক রেট বেশি রাখা। এই পজিশনে সাব্বিরের চাইতে বেটার বিকল্প নেই। যদিও গতকাল মোসাদ্দেক দুর্দান্ত ফিনিশ করেছে, তবু বলবো ওটা তার ন্যাচারাল প্লেয়িং স্টাইল না। তবে বর্তমান কনটেক্সট এ যদি বলি, মুশফিক আর মাহমুদুল্লাহ যথেষ্ট ভালো স্লগিং করতে পারে, ৭ এ মোসাদ্দেককে খেলালে তার বোলিংটা কাজে লাগবে। তাই প্রথম ৩ ম্যাচে মোসাদ্দেককে খেলানোই যুক্তিসংগত হবে। তবে সাব্বিরকে বাতিল ফেলে দেয়া যাবে না, টিম কম্বিনেশনের কারণেই কিছু ম্যাচ হয়তোবা বাইরে কাটাতে হবে তাকে। তবে মাহমুদুল্লাহ যদি বোলিং করতে পারে, সেক্ষেত্রে সাব্বির মোসাদ্দেক দুজনকেই একাদশে রাখা যায়।

উপলব্ধি৮- ভারতের জন্য ভিরাট কোহলির উইকেট যতটুকু, বাংলাদেশের কনটেক্সট এ তামিমের উইকেটের মূল্য তার চাইতেও বেশি। তামিম দ্রুত আউট হয়ে গেলে দল মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে, এটা প্রমাণিত সত্য। তামিম ডট দিক, মেইডেন দিক, বাকি ব্যাটসম্যানদের মোরালি বুস্ট আপ করার জন্য হলেও তাকে অন্তত ৩০ ওভার উইকেটে থাকতে হবে। আর সে যদি থাকে ডট বল পুষিয়ে নেয়ার সামর্থ্য তার ভালোমতোই বিদ্যমান। তামিম যদি ৯ ম্যাচে ৬১+ গড় ধরে রাখতে পারে তাহলে র‍্যাংকিংয়ের উপরের সারির অন্তত ২ টা দলকে হারানো খুবই বাস্তব সম্ভাবনা। সম্প্রতি বিডি নিউজে তার এক ইন্টারভিউ পড়লাম যেখানে সে ডট খেলার ব্যাপারে নিজেকে ডিফেন্ড করছে। তার মানে এটা তাকে মেন্টালি প্রভাবিত করেছে। ইন্টারভিউয়ের পরের ম্যাচগুলোতে তার ব্যাটিং দেখলেই অস্থিরতাটা টের পাওয়া যায়। ফ্যান- ফলোয়ার হলো প্রবহমান নদীর মতো, সেই স্রোতে ময়লা-আবর্জনা, নৌকা, পোকা-মাকড় কত কিছু ভাসবে, তাতে নদীর ধর্ম কি বদলে যাবে? ফ্যানরা গালি দিবে, মাথায় তুলে নাচবে বলেই তো তারা ফ্যান, নইলে তারও তো পরিচয় হতো কলিগ কিংবা বন্ধু। ফ্যান-ফলোয়ারদের প্রতিক্রিয়াকে স্পোর্টিংলি নিতে না পারলে বাউন্সি বল মোকাবেলা করে ফায়দাটা কী হলো!

উপলব্ধি ৯- মাহমুদুল্লাহ এর ইনজুরি তার ক্ষিপ্রতার উপর প্রভাব ফেলেছে মনে হলো। সিরজের সবগুলো ম্যাচে সে কম-বেশি রান করেছে সত্যি, কিন্তু মাহমুদুল্লাহ শুনলে যে চার্মিং ইমেজ মাথায় আসে সেটা অনেকটাই অনুপস্থিত ছিল তার ব্যাটিংয়ে। সাব্বির বা মোসাদ্দেক যে-ই খেলুক মূল ফিনিশারের ভূমিকা পালন করতে হবে মাহমুদুল্লাহকেই। তার জায়গা থেকে যথাযথ কন্ট্রিবিউশন না এলে সৌম্য বা তামিমের মোমেন্টামকে ক্যাশ ইন করা সম্ভব হবে না।

উপলব্ধি ১০- মাঝের ৪-৫ বছরে সাকিবের ব্যাটিং দেখা খুবই প্যাথেটিক অভিজ্ঞতা ছিল। ক্রমাগত ক্রস ব্যাটেড শট আর বিগহিটিং করতে গিয়ে সফট ডিসমিসাল তার মানের প্লেয়ারের সাথে বড্ড বেমানান ছিল। এমনকি গত বছরও যখন সে ৩ উঠে এলো, ক্রস ব্যাটেড খেলার প্রবণতা একই রকম ছিল। চলতি সিরিজে তার ব্যাটিং দেখে ২০০৮-০৯ এর সাকিবের ব্যাটিংয়ের ছাঁচ পাওয়া গেল। ক্রিকেটের সবচাইতে ক্রুশিয়াল ব্যাটিং পজিশন নাম্বার থ্রি, ক্যারিয়ারজুড়ে ৫ এ ব্যাট করে শেষবেলায় ৩ এ উঠে যেভাবে অভিযোজন করে নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। আমার ক্রিকেট জীবনে সাকিবই একমাত্র ক্রিকেটার যাকে কখনোই দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যাড প্যাচে পড়তে দেখিনি। ২০১৫ এর পূর্বে কোহলিও এমন অতিমানবিক পারফরমার ছিল না, সাকিবের নাম বলার পর কোহলি চলে এসেছিল বিধায় এই লাইনটুকু জুড়ে দিলাম। তবে গত ১ বছরে ইনজুরি আর ফিটনেস তাকে প্রচণ্ড ভুগাচ্ছে, যদি ৯টা ম্যাচেই খেলতে পারে তাহলে ব্যাটিংয়ের শংকা দূর হবে অনেকটাই।

উপলব্ধি ১১- বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বোলিংটাকে পূর্ণতা পেতে দিল না কালের কণ্ঠের ইয়েলো জার্নালিজম। কেবলমাত্র তাদের উস্কানিমূলক রিপোর্টের কারণেই আবু জায়েদ রাহি বিশ্বকাপ দলে টিকে গেল। ‘৯৯ এর জাহাঙ্গীর হতে চলেছেন রাহি’- এই রিপোর্টের পরই রাহিকে ২ ম্যাচ খেলানো হলো, এবং ৫ উইকেটের সেই প্রহসন দেখা গেল। এর চাইতে হাস্যকর ৫ উইকেট ইতিপূর্বে ওয়ানডেতে কোনো বাংলাদেশী বোলার পেয়েছে কিনা স্মরণ করতে পারছি না। রাহি দলে আছে জেনুইন বোলার হিসেবে, কিন্তু প্রতি ওভারেই গড়ে ২টি হাফভলি ডেলিভারি দেয়া তার অভ্যাস, এবং বলের যা গতি আর লেন্থ তাতে সাধারণ ডেলিভারিতেও অবলীলায় ছক্কা মারতে পারবে গাপ্টিল বা জেসন রয় টাইপ ব্যাটসম্যানেরা। তার যা বোলিং মেরিট তাতে আর্লি ব্রেক থ্রু কোনোভাবেই আনা সম্ভব নয়। ফলে এরকম বোলার দলের জন্য বারডেন। বোর্ড যদি যথেষ্ট সাহসী হত ওই হাস্যকর ৫ উইকেটের পরও তাকে সরিয়ে তাসকিনকে ১৫ জনের দলে রাখতো। ইতিপূর্বে শুনেছি, নিজেদের খরচে একজন ক্রিকেটারকে তারা বিশ্বকাপে নিবে ১৬ তম সদস্য হিসেবে; এখন সেই প্রসঙ্গটাও শোনা যাচ্ছে না আর। তাসকিন রান বেশি দেয়, কিন্তু সে জেনুইন উইকেট টেকিং বোলার। নতুন বলে তাসকিন বা রুবেলের কোনো একজনকে অবধারিতভাবে প্রয়োজন ছিল। ক্লীব লিঙ্গীয় নীতিমালার বলি হয়ে একজন স্টক বোলার সাইফের কাছে জায়গা হারিয়েছে, আরেকজনকে বিদায় দিল কালের কণ্ঠ নামের ট্যাবলয়েড ধর্মী জাতীয় দৈনিক। তাতে যার যার ইগো পূর্তি ঘটলেও আদতে দলের জন্যই ক্ষতি হলো।

অতিরিক্ত উপলব্ধি- চলমান সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে প্রশংসা পাওয়া গেলেও আমি ব্যক্তিগতভাবে মর্মাহত হয়েছি। টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দলের একজন ব্যাটসম্যানও শীর্ষ রান সংগ্রাহকের সংক্ষিপ্ত তালিকায় নেই, প্রতি ম্যাচেই ব্যাটসম্যানরা স্টার্ট পেয়েছে, কেউ ক্যারি করতে পারেনি। এটা বড়ো দলগুলোর বিপক্ষে জোরেশোরে ভুগাবে।

তবু চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় মোরাল বুস্ট আপ পাওয়া গেছে, এটা কাজে দিবে।

প্রথম ৩ ম্যাচের অন্তত ২টিতে জয়ের মরিয়া টার্গেটে আমার পছন্দের একাদশ দিয়ে বিশ্রামে যাচ্ছি-
তামিম, সৌম্য, সাকিব, মুশফিক, লিটন, মাহমুদুল্লাহ, মোসাদ্দেক, সাইফুদ্দিন/ মিরাজ, মাশরাফি, মুস্তাফিজ, রুবেল। ( সাউথ আফ্রিকা আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরাজ, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাইফ)

বিশ্বকাপে বিবশিত হই