হতাশা কি পজিটিভ হতে পারে? শব্দটাই যেখানে নেগেটিভ মেন্টাল স্টেট নির্দেশক, সেখানে পজিটিভ হওয়ার সুযোগ কোথায়! হতাশাকে যদি বীক্ষণের চেষ্টা করা যায়, তাহলে বোঝা যাবে হতাশাও একটি প্রবল পজিটিভ মেন্টাল এটিচুড হতে পারে।

আমি হতাশাকে দুইভাবে দেখি- বৈষয়িক হতাশা, প্রমিজিং হতাশা। দ্বিতীয়োক্ত হতাশাটি বেশ ইন্টারেস্টিং এবং এর প্রেক্ষাপট অতি বৃহৎ। দীর্ঘদিনের অবক্ষয়, যা কালক্রমে ক্যারি ফরোয়ার্ডেড হয়, তা থেকে আমাদের বোধ আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত হতেই পারে, এবং সেখান থেকে তৈরি হয় চেঞ্জমেকার মানসিকতা। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের লোভ, সংকীর্ণতা, নীচতা, প্রবল স্বার্থাণ্বেষীতা এ সবকিছুই সামাজিক অবক্ষয়ের ফলাফল, চিন্তাশীল এবং উদার মানসিকতার যে কেউই এই অবক্ষয় দেখে হতাশ হয়ে পড়বে স্বাভাবিক। নির্বিচারে বাড়ছে শিশু নির্যাতন, ডিভোর্স, অনৈতিক সম্পর্ক, দুর্নীতি, অপরাধপ্রবণতা- এই বিপুল অবক্ষয়ের মধ্যে পজিটিভ ইনটেন্ট আহত হবেই, এবং সেখান থেকে গভীর হতাশাও আসবে। নিমজ্জিত হতে হতে মন ঘুরে দাঁড়াবে, এবং চিত্র পাল্টানোর জন্য কাজ করতে চাইবে। যে কোনো চেঞ্জমেকিং এক্টিভিটির পেছনেই আছে পরিপার্শ্বের অবক্ষয় অবলোকন করে সুগভীর হতাশাজনিত বোধ। সুতরাং প্রমিজিং হতাশা ছিলো এবং আছে বলেই কিছু মানুষ অন্যদের চাইতে মেধা, মনন আর দর্শনে স্বতন্ত্র অবস্থানে বিরাজ করে।

কিন্তু বৈষয়িক হতাশা পুরোমাত্রায় ব্যক্তিগত, যার বৃহৎ কোনো প্রেক্ষাপট নেই, সুনির্দিষ্ট প্রতিকারও নেই। এটা একধরনের সামাজিক ভাইরাস যা নীরব ঘাতকের মতো ব্যক্তির মনে ঘাঁপটি মেরে থাকে, সময় পেলেই চাউর হয়, এবং আরও ব্যাপক আকারে সংক্রমিত হয় অন্যদের মাঝে। ভাইরাসরূপী ব্যক্তিগত বৈষয়িক হতাশাগুলোই সৃষ্টি করে অবক্ষয়ের, এবং সেখান থেকে জন্ম নেয় গুটিকয় প্রমিজিং হতাশাবাদী। কলুর বলদের মতো বৈষয়িক হতাশাবাদীরা ক্রমাগত হতাশা ছড়িয়ে অবক্ষয়ের চূড়ান্ত করে ছাড়ে বলেই প্রমিজিং হতাশাবাদীরা নাম-যশ করতে পারে, বা ব্যতিক্রমী হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু অবক্ষয় বাড়িয়ে বৈষয়িক হতাশাবাদীরা যে পৃথিবীটাকেই বাসের অযোগ্য করে তোলেন সেই বোধটুকুই তাদের মধ্যে কাজ করে না; করলে তো আর হতাশ হতো না!

মানুষের মতো আত্মপ্রেমী আত্মকেন্দ্রিক প্রাণী দ্বিতীয়টি নেই। তার ভাবনা এবং আচরণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয় ব্যক্তিগত প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির নিখুঁত ভুলভাল ক্যালকুলেশনে। ফলে বৈষয়িক হতাশার পরিধি এবং বিস্তৃতি অসীম। একদম বাচ্চা বয়স থেকে যে বৈষয়িক হতাশার শুরু, ৭৩ বছর বয়সে বার্ধ্যকে পৌঁছেও তা শেষ হয় না, এমনকি মরে যাওয়ার আগেও বুঝতে পারে না সমগ্র জীবনটা হতাশার গারবেজ ছাড়া কিছুই ছিলো না।

চিন্তা যখন সংকীর্ণ ব্যক্তিগত সীমানায় আবদ্ধ থাকে, মাল্টি কালার হতাশাও তড়তড়িয়ে বাড়ে সুদে-আসলে! ছাত্রজীবনে ভালো রেজাল্ট না করার হতাশা, প্রেমে ব্যর্থতায় হতাশা, ভালো ভার্সিটিতে না পড়ার হতাশা, পড়াশোনা শেষে ভালো চাকরি না পাওয়ার হতাশা, চাকরি পেলে বেতনসংক্রান্ত হতাশা, দাম্পত্যের হতাশা, মধ্য বয়সে চাকরিতে প্রমোশন না পাওয়ার হতাশা, ছেলে-মেয়ে স্বপ্নপূরণ করতে পারছে না এ নিয়ে হতাশা, বৃদ্ধ বয়সে ছেলে-মেয়ের সাথে মানসিক দূরত্বের হতাশা— কেবল বয়স আর কনটেক্সট বদলে যায়, কিন্তু হতাশার শেষ নেই।

এইসব বৈষয়িক হতাশা কোনোদিন কোনোভাবেই শেষ হবার নয়, কারণ সমস্যাটা দৃষ্টিভঙ্গির। এম্বিশন থেকেই যাবতীয় বৈষয়িক হতাশার শুরু, কারণ এম্বিশন প্রকট ব্যক্তিগত কনসেপ্ট। একজন মানুষের যদি এম্বিশন থাকে সমাজের কেউকেটা পর্যায়ের কেউ হবেন, সেখানে অন্য সবকিছু গৌণ হয়ে পড়ে, ব্যক্তিগত সমৃদ্ধিই মূখ্য। এবং আমাদের দৈনন্দিন লাইফস্টাইল, গ্লোবাল বিজনেস স্ট্র্যাটেজি প্রভৃতি আমাদের ক্রমশই আত্মকেন্দ্রিকতার দিকে ধাবিত করে, ফলে কী করছি, কেন করছি কিছুই জানি না, কিন্তু মন ভালো নেই, শান্তি নেই। ভোগবিলাস আর ইন্দ্রিয়পরায়ণতার মহামারিতে কী করলে ভালো লাগে সেটাও জানি না; এই অদ্ভুত ব্যক্তিগত আচ্ছন্নতা থেকে মুক্তির ইচ্ছাটুকুও নেই। প্রতিটি মানুষ যেন কয়েক লক্ষ- হাজার টাকার প্যাকেজ। এতো কনজিউম করলে চেতনালুপ্ত হবেই, এবং সেটাই হচ্ছে।

আমাদের বৈষয়িক হতাশার শুরু হয় স্কুলিংয়ের মাধ্যমে। সমষ্টিগতভাবে আমরা বিশ্বাস করি, স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির ভূমিকা ক্যাপাবল মানুষ তৈরিতে, কিন্তু ব্যবহারিক প্রয়োগের কারণেই বোধকরি সামগ্রীক স্কুলিং সিস্টেমটাই অবক্ষয়ের সূচনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, স্কুলের একমাত্র কন্ট্রিবিউশন সোশ্যালাইজেশন স্কিল এবং পারসোনালিটি ডেভেলপমেন্টে, কারণ স্কুলে গেলে বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের ও চিন্তা-ভাবনার মানুষের সংস্পর্শে আসার সুযোগ ঘটে; ভালো ইনস্টিটিউশনে হয়তোবা ভালো মেধার মানুষের সংখ্যা বেশি, কিন্তু একজন ব্যতিক্রমী এবং চ্যাম্পিয়ন মানসিকতার মানুষের জন্য স্থান বা কাল কোনো বিষয়ই নয়, অথর্ব প্রকৃতির মানুষই কেবল নিজের দূরবস্থার জন্য আশপাশের সবকিছুকে দোষারোপ করে। অথচ স্কুলে ঢোকা থেকে যে হতাশার শুরু, তা যেন মহাজীবনের কেতন উড়িয়ে অবিনশ্বরতা খোঁজে।

যারা এই সহজ সত্যটা মেনে নিয়ে সরল জীবন বেছে নিতে চায়, সামাজিকভাবে আমরা তাদের সাধু-সন্ত বানিয়ে ফেলি। একজন মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করে না, টিভি দেখে না, বা টেকনোলজি সম্পর্কে কিছুই জানে না, এটা রীতিমতো গল্পের বিষয় হয়ে যায় এখন, কিংবা মোবাইল ফোন ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছে এই গল্প তো সাংঘাতিক আশ্চর্য হওয়ার মতো। সামাজিক প্রেসার এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, কিছু বিষয় ফর গ্রান্টেড হয়ে গেছে যেন। যেমন, কারো বাসায় যদি কোনো ফার্নিচার না থাকে এবং অতিথি এলে ফ্লোরে বসতে দেয়া হয়, এটা তার সামাজিক স্ট্যাটাসের সাথে যেন যাবেই না। তার আত্মীয়-স্বজন মানুষের কাছে মুখ দেখাতে পারবে না, অথবা সে হয়ে যাবে গল্পের এলিমেন্ট। বলবে, ‘আমার ছেলে বা মেয়ে এতো সৎ, এতো পরহেজগার যে বাড়িতে কোনো ফার্নিচার নেই’। বৈষয়িক মানুষের এই যে রেফারেন্সপ্রিয়তা এবং তুলনাপ্রীতি এরও এক দীর্ঘ ইতিহাস এবং ট্রাডিশন আছে।

আমরা সবকিছুর জন্য রেফারেন্স চাই,নইলে সেটা কোনোভাবেই মানতে পারি না। কারণ, আমরা উদাহরণ তৈরি করতে সাহস পাই না, উদাহরণ অনুসরণ করতে দারুণ স্বচ্ছন্দ্য। ফলে আমাদের গবেষণাপত্রগুলো রেফারেন্সসর্বস্ব, আমাদের যে কোনো স্টেটমেন্ট রেফারেন্সসর্বস্ব; রেফারেন্সই ক্রেডিবিলিটি বাড়ায়। ঠিক এ কারণেই সামষ্টিকভাবে আমরা উদ্ভাবন বন্ধ্যাত্বে ভুগি; সাহস করে নিজে কিছু বলবে, করবে বা তৈরি করবে, রেফারেন্সহীনতায় সেটাই আর করা হয়ে উঠে না। এজন্য আমরা নতুন বা যে আনইউজুয়াল কিছুকে নির্দ্বিধায় উদ্ভট বলে বাতিল করে দিই, অথচ সেটার মর্মার্থ ধরার মেধাই নেই, সেই অক্ষমতাটুকু স্বীকারে চরম কুণ্ঠা বোধ করি। হাজার বছর ধরে চলে আসা আরামপ্রিয় অভ্যাস আর আদর্শ ছেলে হওয়ার বাসনা আমাদের মাথার মাঝখানে সিথি করে বোকা বোকা চেহারায় হেঁটে যাওয়াতেই আটকে রাখে; দরজার ওপাশে কী আছে সেটা দেখতে চিরকালই নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ, বৈষয়িক হতাশা কেবলই হারানোর ভয় বৃদ্ধি করে চলে; এতো ভয় নিয়ে মানুষ বাঁচে; আদৌ কি বাঁচে!

ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, বৈষয়িক হতাশাকেও বিজনেসের অধীনে নিয়ে এসে সেটা বিক্রি করে জীবন ধারণের ব্যবস্থা করে নিচ্ছে অনেকেই। অনলাইন পোর্টাল, বিভিন্ন সাইট, সোশ্যাল মিডিয়া- যেখানেই হোক, সর্বত্র পপুলারতম কনটেন্ট হলো মোটিভেশনাল আর্টিকেল বা স্পিচ। নির্বিচারে মানুষ মোটিভেশনাল আর্টিকেল লিখে যাচ্ছে, ভিডিও বানিয়ে আপলোড করছে, সেগুলো আবার হাজার হাজার শেয়ারও হচ্ছে, ভাইরাল হচ্ছে ধুন্ধুমার। এতো যাদের হতাশা, মোটিভেশন শূন্যে তারা অনলাইনে আসার মতো মানসিক অবস্থায় থাকে? তারা কি তবে হতাশা বিক্রি করে মোটিভেশন কেনার নিয়তে থাকে? খুবই অদ্ভুত লাগে এই ব্যাপারটা। মানুষ বিভিন্ন মোটিভেশনাল সেমিনারে যায় স্পিকারের কথা শুনতে, এবং সেসব শুনে নাকি তারা চার্জড আপও হয়। স্পিকার জীবনে স্ট্রাগল করেছে, সেই স্ট্রাগলের গল্প সে সেল করছে, এবং ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প ছড়িয়ে দিয়ে শ্রোতাদের চার্জিত করছে। একেকটা মোটিভেশনাল সেশনের জন্য স্পিকারকেও একটা পারিশ্রমিক দেয়া হচ্ছে। কী আশ্চর্য, যার মন ভালো নেই, সে আরেকজনের গল্প শুনে মন ভালো করছে, উদ্দীপ্ত হচ্ছে! যে বলছে সেও বলছে ব্যক্তিগত হতাশার গল্প, যারা শুনছে তারাও হতাশ। ট্রাক থেকে যেভাবে মালামাল আনলোডেড হয়, তেমনি করে হতাশাগুলোও খালাস করা হয়। এইসব হতাশার উৎস এবং পরিণতি কোনোটারই ঠিকুজি-কুষ্টি নেই!

আমি ব্যক্তিগতভাবে মোটিভেশন কনসেপ্টটাকে মিথ মনে করি। কেউ কাউকে উদ্দীপ্ত করতে পারে না যদি সে আন্তরিকভাবে নিজেকে বদলাতে চায়, আর এটার জন্য সদিচ্ছাই যথেষ্ট। আমরা ইন্দ্রিয়পূর্তির পেছনে যত সময় দিই, তার কিয়দংশও যদি মেমোরি ক্রিয়েট করতে দিতাম, হতাশা বলতে কোনোকিছুর অস্তিত্ব থাকতো না। সপ্তাহে অন্তত ১টা মেমরি বা স্মৃতি তৈরি করতে পারলেও বছরে ৫২ টা। একজন মানুষ এতোগুলো মেমরির অধিকারী হলে সে কোন্ কারণে হতাশ হবে? ক্ষুদ্র ব্যক্তিগত অর্জন বা অপ্রাপ্তিগুলোকে তখন ডানকানি মাছের মতোই ভাসমান মনে হবে। ‘তোমাকে পারতেই হবে’, ‘তুমিই পারবে’ জাতীয় কথা যতবার শুনবেন, নিক ভুজিসিক এর জীবনকাহিনী যতো পড়বেন, মনে হবে মারাত্মক মোটিভেশন চলে এসেছে, কিন্তু ২দিন পরেই সেটা আর স্থায়ী হয় না, যা ছিলো সব আগের মতো। এইসব গল্প বা উদাহরণ দিয়ে সাময়িক ইমোশনাল স্টিমুলেশন তৈরি করা যায়, সাসটেইনবেল চেঞ্জ নিয়ে আসা অসম্ভব; এর জন্য সাধনার প্রয়োজন, যা করার মতো ইচ্ছা, রুচি কোনোটাই বৈষয়িক হতাশাবাদীদের মধ্যে কাজ করে না। তারা চায় পেইনকিলার, যেটা ব্যবহার করামাত্র মাথা ব্যথা সারবে; ২দিন পর আবার মাথা ব্যথা করলে আবারো পেইনকিলার!

মোটিভেশন ব্যাপারটা অনেকটা ছিদ্রযুক্ত বালতিতে পানি ঢালার মতো; যতক্ষণ বেগের সাথে পানি ঢালা হবে বালতিতে পানির কমতি থাকবে না, পানি ঢালা বন্ধ, বালতিও খালি। পানি ধরে রাখার জন্য যে ছিদ্র বন্ধ করতে হবে এটাই বুঝে আসে না; আর যাদের আসে তাদের মোটিভেশনও লাগে না। তারা নিজেরাই নিজেদের জীবনপথ ঠিক করে নেয়।

তবু সিংহভাগ মানুষই তো স্বতঃস্ফূর্তভাবে চিন্তা করতে বা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, তাদের জন্য গাইডলাইন তো লাগবে। এই কথাটা ভুল। গাইডলাইন নিয়ে যারা ব্যস্ত তারা ওই গাইডের মধ্যেই আটকে থাকে, কারণ একই গাইড তো আরও ১২৭ জন পড়েছে, সবার নিয়ম যদি একই হয়, পার্থক্য হবে কিসের ভিত্তিতে! মূল ফ্যাক্টরটা তাই থটপ্রসেস। আপনি খুব চাল্লু, সব বুঝেন, লাইনঘাট সব জানেন, কিন্তু একটা ছার্টেইন লেভেলে গিয়ে আপনি আটকাবেনই। ফাউন্ডেশন ছাড়া ১০ তলা বিল্ডিং তলা দিব্যি সুখে থাকতে পারেন, তবু জানবেন এই বিল্ডিং ধ্বসে পড়বেই, কারণ এটাই নিয়তি।

আমাদের জীবনের কোথাও ক্রাইসিস বা কষ্টসহিষ্ণুতার প্রশিক্ষণ নেই। ছোটবেলা থেকেই আমাদের গার্ড দিয়ে রাখা হয়, ফলে বাইরের পৃথিবীটা কতো কঠিন সেই ধারণাই থাকে না; অতি স্নেহের কারণে কখন যে আমাদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেয়া হয় টেরই পাই না। পরীক্ষায় প্রথম হলে পুরস্কার, ফেল করলে তিরস্কার। যে মানুষ জীবনে ২৯ বার বড়সড় ধাক্কা খায়নি, সে কীভাবে ৭টি বড় সাফল্যের জন্ম দেবে? আমরা না হই অসাধারণ, না হই সাধারণ, জীবনটাই কেটে যায় কেবলাকান্তের জীবনি চরিত্রে অভিনয় করে। জীবনপথে হতাশাই তাই একমাত্র সম্বল আমাদের।

আমাদের মেজরিটির মধ্যে পর্যাপ্ত প্রশ্ন নেই, কারণ আমাদের কৌতূহল নেই, আমাদের আকাঙ্ক্ষাও নেই। প্রশ্নহীন মানুষের রোজ নামচায় এমন কী আর থাকবে; সেই তো রিপিটেশন, একঘেয়েমির ক্লান্তি, অথচ প্রতিটি দিন বদলে যাচ্ছেন আপনি, বদলে যাচ্ছে আপনার চারপাশ; আপনি তা আবিষ্কার করতে পারেন না, কারণ প্রশ্নহীনতা আপনার মননকে স্থবির করে দিয়েছে। হতাশ তো লাগবেই।

দার্শনিক নীটশে একবার রাস্তায় ঘোড়ার গলা ধরে কেঁদেছিলেন। কারণ মানুষের স্বপ্নহীনতা, হৃদয়হীনতায় ব্যথিত হয়ে হতাশা শেয়ার করার জন্য তিনি ঘোড়াকেই শ্রেয়তর সঙ্গী মনে করেছিলেন। আমাদের জীবনে যদি মাত্র ৩ জন ঘনিষ্ঠ মানুষ থাকতো যাদের সাথে সপ্তাহে নিয়মিত কথা হয়, চিন্তা আদান-প্রদান হয়, এবং গভীরভাবে এটাচমেন্ট কাজ করে, যেটা কেবলমাত্র বৈষয়িকতার সীমায় আবদ্ধ নয়, সেখান থেকেই আমরা ইনস্পায়ারড হওয়ার রসদ পেতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সেই ৩ জন বিশুদ্ধ মানুষও আমাদের বেশিরভাগের জীবনে নেই। এই মর্মান্তিক বিচ্ছিন্নতা আর নার্সিসিস্ট মানসিকতা কোন্ মহাশূন্যে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে এটা ভাবলেই প্রমিজিং হতাশা গাঢ়তর হতে থাকে। কিন্তু সেই হতাশার আউটকাম কী সেটা ভাবার আগেই বস্তুবাদীতার চোরাবালি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। তার চাইতে মোটিভেশনাল স্পিকার হয়ে বিভিন্ন সেমিনারে বক্তব্য দিয়ে হাত তালি, আর ইমোশনাল মেসেজ পাওয়াই সহজ সমাধান। পকেটে টাকা আছে, হতাশার কেনা-বেচা চলবে; ভালোই তো। শিব খেরা, ডেল কার্নেগী, স্টিভেন কোভিদের বাজার সম্প্রসারিত হোক।

প্রতিমুহূর্তে পৃথিবীতে যত নিঃশ্বাসের ঘটে ব্যাপন
মানুষে মানুষে মতে আর পথে তারও বেশি ব্যবধান

এতো বেশি ভিন্নতার আস্তরণ ভেদ করবার প্রমিজিং হতাশার আছে কি আদৌ?