২০১৯ বিশ্বকাপের পরে বাংলাদেশ ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে ৬টি ( শ্রীলংকা-২, জিম্বাবুয়ে-২, উইন্ডিজ১, নিউজিল্যান্ড১); ২টিতে হারের বিপরীতে জিতেছে ৪টি সিরিজ। এই পরিসংখ্যান জানার পরে আপনার মনে হতেই পারে বাংলাদেশের ক্রিকেট বেশ ভালো শেপে আছে।
কিন্তু
ক্রিকেটের খোঁজ রাখা মানুষমাত্রই বাংলাদেশ দল নিয়ে হতাশ, কারণ সর্বশেষ ৩ বছরে বাংলাদেশ সবচাইতে বেশি খেলেছে টি২০, এবং টেস্ট। স্পেশাল স্কিলের এই ২ ফরম্যাটে বাংলাদেশ চিরকালই জঘন্য দল। এমন নয় যে আগে এই দুই ফরম্যাটে খুব সফল ছিল, ইদানীং জঘন্য হয়েছে। ওয়ানডে সুপার লীগের বাইরে ওয়ানডে হয়ই না তেমন; বিসিবি যদি দূরদর্শী হত তারা ত্রিদেশীয় বা চতুর্দেশীয় ওয়ানডে টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারত। বড়ো দলগুলোর স্ক্যাজুয়াল ফাঁকা না থাকলেও আফগানিস্তান, এবং পাকিস্তান/শ্রীলংকা জাতীয় দলগুলোকে পাওয়া যেত অনায়াসেই।
কিন্তু
বিসিবি আফগানিস্তানের সাথে খেলবে না, কারণ হেরে গেলে ছিঃছিঃ পড়ে যাবে, যদিও টি২০ আর টেস্টে যেভাবে হারে তাতে ছিঃছিঃ এর আদৌ কিছু কি বাকি থাকে?
প্রবলেম সলভিং একটি ক্রোনোলজিকাল প্রক্রিয়া, যেখানে এলিমিনেশন এবং প্রায়োরিটাইজেশন করে রুট আবিষ্কার করতে হয়। এমেচার বা আনাড়ি লোকেরা সমস্যার ফিরিস্তি শুরু করলে ৭০-৮০ টা সমস্যা খুঁজে পায়, যে কারণে সমস্যার ল্যাবেলিং তো হয়ই না, সমাধান চিন্তাও যায় হারিয়ে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের মূল সমস্যা আনস্কিল্ড ক্রিকেটার; এটা এমন নয় শান্ত-সাদমানদের প্রজন্মেই আনস্কিল্ড, সেই রকিবুল হাসান-লিপু-নান্নু-আকরাম- দুর্জয়- আশরাফুল-সাকিব-লিটন সকল প্রজন্মের জন্যই স্টেটমেন্টটা একইরকম প্রাসঙ্গিক।
মাঝেমধ্যে সিস্টেমের বাইরে ২-১ জন স্কিল্ড ক্রিকেটার স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়ায় এসেছে (যেমন আশরাফুল, মাশরাফি), কিন্তু স্কিল আপগ্রেডেশনের স্মার্টনেস না থাকায় পারফরম্যান্স আসেনি, অন্যদিকে স্কিল কম থাকা সত্ত্বেও মেন্টাল স্মার্টনেস দিয়ে পারফর্ম্যান্স এ একটা লেভেল বজায় রাখতে পেরেছে কেউ কেউ (সাকিব)
কিন্তু একটা পূর্ণকালীন সদস্য দেশ তো সব প্রজন্ম মিলিয়ে মাত্র ২-৩ জন ক্রিকেটার দিয়ে চলে না, যে কারণে এটা নির্বিঘ্নেই বলা যায় বাংলাদেশে স্কিল্ড ক্রিকেটার নেই, কোনোকালে ছিলোও না।
ক্রিকেট বাদ দিলাম, কোন ধরনের খেলাতেই বাংলাদেশ স্কিল্ড এথলেট তৈরি করতে পারেনি। অলিম্পিক গেমস এ বাংলাদেশের পদকের রেকর্ড ঘাঁটলেই ফ্যাক্টটা প্রকাশ্য হয়ে যায়।
ক্রিকেটের পরাশক্তিগুলোর দিকে যদি তাকাই, যেমন অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড-ভারত-নিউজিল্যান্ড-পাকিস্তান-সাউথ আফ্রিকা, প্রত্যেক দেশেই অন্য এক বা একাধিক খেলায় টপ লেভেলের দক্ষতা রয়েছে, যা ইঙ্গিত করে তাদের মধ্যে স্পোর্টস স্পিরিটটা রয়েছে। ক্রিকেট সেই স্পিরিটেরই একটা বর্ধিত বহিঃপ্রকাশ।
শোনা যায় বাংলাদেশের ফুটবল এককালে রমরমা ছিল। এককালে বিটিভিই যেমন বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম, ফুটবলও তাই। আবাহনী-মোহামেডান নিয়ে মাতামাতি দিয়ে নিশ্চয়ই ফুটবলের মান পরিমাপযোগ্য নয়। বিশ্বকাপ বহুদূর, কোনোদিন এশিয়া মহাদেশেই তো শীর্ষপর্যায়ে ছিল না। কূপমণ্ডুকতার সুযোগ নিয়ে মেকি ফ্যান্টাসি।
অবকাঠামো শোচনীয়, কম্পিটিশনহীন ঘরোয়া লীগ, পাতানো ম্যাচ, প্রশাসনিক দুর্নীতি, প্লেয়ার নির্বাচনে নেপোটিজম– ক্রিকেট সংক্রান্ত সমস্যার আলোচনায় ঘুরেফিরে এই ৫টি সমস্যার দিকেই আঙুল তুলে সবাই।
সমস্যাগুলোকে যদি সামারাইজ করি ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ ফ্যাক্টটাই সামনে আসবে। ক্ষমতা যেহেতু পলিটিকাল কনসেপ্ট, যদি চিন্তা করা হয় ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে, সেটা রিয়েলিস্টিক চিন্তা থাকে না। বরং বাইপাস কীভাবে তৈরি করা যায় যাতে মিনিমাল এডজাস্টমেন্টে এখনকার চাইতে বেটার রেজাল্ট আনা যায়।
এক্ষেত্রে দুটো থিওরির এক্সিকিউশন নিয়ে কাজ করা যায়। তার আগে নিশ্চিত হতে হবে দলের ক্যারেক্টার সম্বন্ধে। আমি বাংলাদেশের মাঝে ২০০০ পূর্ব ভারতের ক্যারেক্টার পাই, যারা ছিল ব্যাটিং ডমিন্যান্ট, বোলিং মাঝারি মানের। তাই এক্সিকিউশন থিওরি তে এটা বিবেচনায় রাখতে হবে।
থিওরি১- বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কেন টপ লেভেলে পারে না? কারণ প্রথমত, এ দল বা এইচপি এর হয়ে তারা পর্যাপ্ত বিদেশ ট্যুর দেয় না, যে কারণে বিরুদ্ধ কন্ডিশনে খেলার জন্য টেকনিকের এডজাস্টমেন্ট হয় না তেমন। দ্বিতীয়ত ঘরোয়াতে অত্যন্ত বাজে মানের বোলারের বিপক্ষে যাদের সুইং-গতি কিচ্ছু নেই, স্পিনারদের বোলিংয়ে নেই কোনোরকম টার্ন। এমন মানহীন বোলিংয়ের বিপক্ষে রান করে ফেইক কনফিডেন্সে ভুগে, পরে কোয়ালিটি বোলিংয়ের বিপক্ষে খেলতে গলদঘর্ম দশা হলে নিজের সামর্থ্য সম্বন্ধেই দ্বিধা তৈরি হয়। তাহলে এজন্য করণীয় কী। প্রথমত ‘এ দল’ এবং ‘ইমার্জিং’ দলকে বছরব্যাপী ভারত, সাউথ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডে খেলার উপরে রাখা। জাতীয় দল যদি বছরে ৩০ টা ম্যাচ খেলে, এ দল-ইমার্জিং দল খেলবে ৭০টি৷ ওসব দেশের রাজ্য দলগুলোও আমাদের জাতীয় দলকে বলেকয়ে হারিয়ে দেবে। সেখানকার এভারেজ, স্ট্রাইকরেট দিয়েই প্লেয়ার জাজ করা উচিত। জাতীয় দল সারাবছর যে পরিমাণ খেলার মধ্যে থাকে তাতে ঘরোয়াতে খেলার জন্য সময় বের করাটা আসলেই দুরূহ, বরং ওই গ্যাপের সময়গুলো তাদের ব্যক্তিগত কোচের তত্ত্বাবধানে স্কিল ট্রেনিং করা বেশি ফলপ্রসূ।
দ্বিতীয়ত, বিসিএল-এনসিএল-ডিপিএল-বিপিএল এ বিদেশী পেসার/স্পিনার খেলার ব্যবস্থা রাখা। ভারত বা অস্ট্রেলিয়ান লীগের সাথে বাংলাদেশের লীগ মিলিয়ে লাভ নেই। বাংলাদেশের লীগে বাইরের কোনো ব্যাটসম্যান খেললে খুব একটা লাভ হবে না।বরং ৪ জনের পরিবর্তে বিদেশী খেলবে ২ জন, এবং উভয়কেই বোলার হতে হবে, সেক্ষেত্রে ব্যাটসম্যানদের স্কিল-টেম্পারমেন্ট বাড়বে। অন্যান্য দেশে সেকেন্ড-থার্ড টায়ারেও আমাদের মূল বোলারদের চাইতে গুণে-মানে বহুগুণে এগিয়ে থাকা বোলার রয়েছে থরে থরে। টাকা খরচ করলে এদের পেছনে করা উচিত।
থিওরি২- বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা মানসিকভাবে এত ভঙ্গুর কেন? শুনতে অদ্ভুত লাগলেও টিভিতে খেলা দেখালে অনেকেরই নার্ভ দুর্বল হয়ে পড়ে। একটা মিসফিল্ডিং বা ক্যাচ ড্রপ করলে মাথায় কাজ করে কত লোকে গালি দিচ্ছে। কিংবা শট খেলতে গিয়ে আউট হলে ভয় ঢুকে যায়। ঘরোয়া লীগের ম্যাচগুলো টিভিতে দেখানো হলে মেন্টাল টাফনেস তৈরির এটাও একটা প্রশিক্ষণ। ইউটিউবে স্ট্যাম্প ভিশনে বিসিএল এর ম্যাচ দেখানো হয়েছে, তাতেই যে পরিমাণ দর্শক দেখেছে, টিভি সম্প্রচার করলে দর্শক বাড়বে ১০ গুণ; ফলে স্পন্সর পাওয়া ইস্যুই নয়। টিভি সম্প্রচারের কারণে আম্পায়ারিং নিয়ে দুর্নীতিগুলো কঠিন হবে, মূলত এ কারণেই বিসিবির অনাগ্রহ এবং ভীতি। তাছাড়া টিভিতে সম্প্রচারের বৃহত্তম সুবিধা হলো, সাদমান-সাইফ-শান্ত ধরনের ব্যাটসম্যানরা ঘরোয়াতে রান করে, কিন্তু টিভিতে দেখানোর কারণে বহু খেলাপ্রেমী মানুষ বিস্তারিত এনালাইসিস করে প্রথমেই দেখিয়ে দিবে এরা আদতে ইন্টারন্যাশনাল ম্যাটেরিয়াল নয়। আবার অনেক বোলার বা ব্যাটসম্যান প্রচুর রান বা উইকেট না পেলেও ব্যাটিং টেকনিক, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ পজিটিভ যাদের গ্রুম করলে বেটার রেজাল্ট দিতে পারবে। যেমন, মোসাদ্দেক ঘরোয়াতে ২টা ডাবল সেঞ্চুরি করেছে, ফার্স্ট ক্লাস গড় ৫০ এর উপরে, কিন্তু কাদের বিপক্ষে কোন এপ্রোচে খেলেছে, তার ব্যাটিংয়ের বিশেষত্ব কী কিছুই না জেনে কেবলমাত্র ওই তথ্যের ভিত্তিতে তাকে জাজ করছি। অনুরূপ তাসামুল, তাইবুর, আব্দুল মজিদ, মাইশকুর সহ অনেক ব্যাটসম্যান প্রতি লীগেই রান করে, কিন্তু আমরা খেলা না দেখার কারণে জানি না আসলেই তাদের সামর্থ্য কেমন, কিংবা বাংলাদেশের ঘরোয়ার মান খারাপ বিধায় তাদের কেউ কেউ ডিজার্ভিং হলেও বাতিলের খাতায় ফেলে দিই। আরেকটা গুরুতর সমস্যা দৃষ্টিভঙ্গিজনিত। ক্রিকেট নিয়ে মতামত দিতে হলে প্রফেশনাল ক্রিকেট খেলাটাকে পূর্বশর্ত বানিয়ে নেয়া হয়েছে। একজন প্রফেশনাল ক্রিকেটার ব্যাটিং বা বোলিংয়ের কৌশল জানে, এটুকু মতামত দেয়ার ক্ষেত্রে এডভান্টেজ হিসেবে কাজ করে। কিন্তু প্রচুর পরিমাণে খেলা না দেখলে, খেলা সংক্রান্ত পড়াশোনা না থাকলে তার পক্ষে কখনোই মিনিংফুল মতামত দেয়া সম্ভব নয়। পারফরমার আর এনালিস্ট পুরোপুরি আলাদা এবং বিপরীতধর্মী আইডেন্টিটি। ইদানীং ক্রিকেট বিষয়ে উৎকৃষ্ট মানের অনেক লেখাই চোখে পড়ছে।
আমাদের স্কিল্ড ক্রিকেটার নেই সত্যি, তবু ডমেস্টিক সার্কিটে থাকা স্যাম্পলের মধ্যে নাঈম শেখ, শান্ত, সোহান, সাদমান, মিঠুন, সাইফই সেরা এটা কোনো বোধসম্পন্ন মানুষের পক্ষে বিশ্বাস করা রীতিমত অসম্ভব।
সুতরাং বর্তমান সকল দূরাবস্থাকে স্বীকার করেও যদি ‘এ’ দলকে বছরব্যাপী ট্যুর করানো, লোকাল লীগগুলোতে শুধুমাত্র বিদেশী বোলার খেলানো, এবং লোকাল লীগ টিভিতে সম্প্রচার করা হয় পরিস্থিতি এখনকার চাইতে বেটার হতে বাধ্য।
প্রথম ধাপের পরে আমরা এবার চিন্তা করতে পারি ওই দুটো প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের পরে সেখান থেকে প্রত্যাশিত রেজাল্ট আসার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতা কী কী?
১. কোয়ালিটি ক্রিকেটার তৈরির সাসটেইনেবল কোনো মডেল ডিজাইন হয়নি এতদিনেও। এর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগ, তারা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ। সুতরাং গেম ডেভেলপমেন্টের দায়িত্বে যিনি আছেন (সম্ভবত সুজন) তাকে বরখাস্ত করতে হবে। সেটা কি সম্ভব? না।
২. খেলোয়াড়রা নিজেদের ওয়ার্ক এথিক্সের চর্চা করছে না, অর্থাৎ যতটুকু পরিশ্রম করা দরকার করছে না। এ দল এর কোনোরকম ট্যুর হচ্ছে না। এটার দায় ক্রিকেট অপারেশন্স এর, যার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আকরাম খান। তাকেও বরখাস্ত করা উচিত। সেটা কি সম্ভব? না।
৩. নির্বাচক প্যানেলের থট প্রসেস অনেকদিন ধরেই প্রশ্নবিদ্ধ। তারা মিঠুন এর মতো প্লেয়ারকে টেস্টে নামিয়ে দেয়, আবার নাঈম শেখ খেলে টি২০; অজস্র উদ্ভট সিদ্ধান্ত তাদের কাছ থেকে অনবরত আসতেই থাকে। কোন প্লেয়ার কোন ফরম্যাটের জন্য উপযুক্ত সে সংক্রান্ত আইডিয়াই তাদের স্পষ্ট নয়, এবং নিজেদের কোনো সিদ্ধান্তকেই তারা ডিফেন্ড করতে পারে না। সুতরাং তারা অযোগ্য, নির্দ্বিধায় বরখাস্ত করা উচিত্। সেটা কি সম্ভব। অবশ্যই, এবং হয়ত হবেও। কিন্তু ১ আর ২ কে বহাল রেখে নির্বাচক হিসেবে যাকেই আনা হোক, পরিবর্তন আসবে না ফলাফলে।তাই ১ এবং ২ এর মধ্যে অন্তত ১ জনকে সরিয়ে ফেলতে হবে, অথবা ক্রিকেট অপারেশন্স বা গেম ডেভেলপমেন্টের কোনো একটির কাজকর্ম প্রেসিডেন্টকে সরাসরি দেখভাল করতে হবে।
এবার আসা যাক মাঠের খেলায়৷ টেস্টে বাংলাদেশের মূল সমস্যা টপ অর্ডার৷ টেস্ট মূলত প্রথম ৪ ব্যাটসম্যানের খেলা, এখান থেকে ৬০% কন্ট্রিবিউশন না এলে ম্যাচ জেতা বা ড্র করা অসম্ভব যদি বিপক্ষ দল অতি জঘন্য না খেলে। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে মূল প্লেয়ার ছিল যারা( তামিম, মুশফিক, সাকিব) তাদের মধ্যে তামিম বাদে বাকি ২ জন সারা ক্যারিয়ারে ব্যাট করেছে প্রথম ৪ এর বাইরে। যে কারণে ভ্যাকিউয়াম তৈরি হয়ে যায় শুরুতে, সাকিব আর মুশফিক নামতে নামতে ম্যাচের লাগাম ছুটে গেছে। তামিম টেস্ট থেকে সেমি-অবসরে যাওয়ায় সমস্যাটা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ক্রিকেটে যতগুলো ফ্লুক ঘটনা হওয়া সম্ভব, টেস্টে মমিনুলের ডাবল ডিজিট সেঞ্চুরি তার মধ্যে উপরের দিকে থাকবে। সুইং-বাউন্স-স্পিন কোনো বলেই কমফোর্টেবল না হয়েও টেস্টে এতগুলো সেঞ্চুরি সম্ভব, মমিনুলকে দেখার আগে বিশ্বাসই করিনি। শান্ত বয়সভিত্তিক দলে কবে কী পারফর্ম করেছিল সেই গল্প ভাঙিয়ে দলে ঢোকার আগে থেকেই ব্যাটিংয়ের ভবিষ্যৎ হিসেবে বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সাদমানের স্ট্যান্স দেখলেই প্রেডিক্ট করা যায় লেগবিফোর অথবা স্লিপে ক্যাচ দিবে। টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং যতটুকু যা ভরসা দেবার মতো তা লিটন আর মুশফিক থেকে আসে, কিন্তু দুজনই আসে ৫ আর ৬ এ। মুশফিক ক্যারিয়ারের প্রায় শেষ প্রান্তে, প্রাইম টাইমেই ৪ এ খেলেনি, পড়ন্ত বেলায় সেখানে পুশ করা অর্থহীন। বরং লিটনকে ৪ এ সেটেল করে একজন ব্যাটিং জানা কিপার আনাটা প্রফিটেবল সিদ্ধান্ত। মাহমুদুল জয় যদিও ২ ইনিংসে রান তেমন করেনি, তবু তার ব্যাটিং দেখে মনে হয়নি সাদমান-সাইফ, মমিনুল বা শান্ত এর মতো প্রেডিক্টেবল। তাছাড়া অল্প কয়েকটা ইনিংসেই তার একটা প্যাটার্ন পেয়েছি; সে শুরুতে আউট হয়ে যায় অথবা বডো রান করে। ৩ নম্বরে তাকে দিয়ে ৫টা সিরিজ ট্রাই করা উচিত। সে রেজাল্ট দিবে, পজিটভ মাইন্ডসেট মনে হলো।
টেস্টে মূল সমস্যা হয়ে রইলো ওপেনিং; নির্বাচক-কোচেরা এই স্পটে অপশন খুঁজুক।
টি২০ তে মূল সমস্যা মানসিকতায়। অমার্জনীয় ব্যর্থতা সত্ত্বেও তামিম, মুশফিক, রিয়াদকে একটানা খেলিয়ে গেছে, সাকিবকে ব্যাট করিয়েছে ৩ নম্বরে।।ব্যাটিং পজিশনের মূল পজিশনগুলোতে যেহেতু এরা খেলেছে বিচ্ছিন্ন পারফরম্যান্স যা এসেছে এদের থেকেই বেশিরভাগ, কিন্তু ম্যাচ খেলার অনুপাতে পারফরম্যান্সের কোরিলেশন করলে নেগেটিভ কার্ভ আসবে। এই জায়গাটায় আনকোড়া প্লেয়ারদের এক্সপোজার দেয়ার সুযোগ ছিল। এবং টি২০ তে কোন এপ্রোচে খেলতে চাই সেটাও ক্লিয়ার না। নইলে নাঈম শেখ, সোহানের মতো প্লেয়ার টি২০ তে কোনোভাবেই আসে না বিবেচনায়। টি২০ তে বড়োজোর ১ জন প্লেয়ার থাকতে পারে ধরে খেলার যে ৩ বা ৪ এ ব্যাট করে, বাকিদের অবশ্যই রিস্ক নিতে হবে, আউট হওয়ার ভয় করা যাবে না। নাঈম শেখ যখন হয় টি২০ ওপেনার তখন গেমপ্ল্যানই হয়ে যায় যে কোনোভাবে ২০ ওভার ব্যাট করা, রান হয় গৌণ ব্যাপার।
টেস্ট এবং টি২০ উভয় মানদণ্ডেই বাংলাদেশের গলার কাঁটা বোলিং, এমন নখদন্তহীন বোলিং দিয়ে ২০ উইকেট নেয়া বা ১৬০ এ আটকে রাখা অসম্ভব প্রায়। তবু ব্যাটিংটা যদি স্মার্ট চিন্তাধারার হয় এই বোলিং দিয়েও কিছু ম্যাচ বের করে আনা যাবে।
কিন্ত
কেন হয় না শেষ পর্যন্ত? সেজন্যই প্রবলেম সলভিং ক্রোনোলজি নিয়ে বললাম এতক্ষণ।