আড়াই বছর আগে জেমসকে নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখেছিলাম, যেটি ৫০৩+ শেয়ার হয়েছিলো। আবারো তাকে নিয়ে লেখা কেন? সেই লেখাটা আদতে বাংলা ব্যান্ড বিষয়ক লেখা যেখানে জেমসকে একজন রকস্টার ধরে সমকালীন বাংলা ব্যান্ডগুলো সম্বন্ধে আলোচনা হয়েছিলো, আজম খান, মাকসুদ এবং আইয়ুব বাচ্চুর জন্য আলাদা অনুচ্ছেদ বরাদ্দ ছিলো। ফলে জেমস থেকেও সেই লেখায় ছিলেন না।
সেই সময়ে আমার লেখাগুলো হতো এনালাইটিক, ক্রিটিকাল পয়েন্ট অব ভিউগুলো সেভাবে যোগ করতাম না। অনলাইন কমিউনিটির রুচি এবং সেন্টিমেন্ট সম্বন্ধে অবগত থাকার দরুণ ক্রিটিকাল পয়েন্টগুলো অনুল্লেখিত রাখতাম যাতে বুঝে না বুঝে মানুষ শেয়ার করে। আড়াই বছর সময় বিনিয়োগ করে ন্যূনতম হলেও নিজের একটা সিগনেচার টোন তৈরি করতে পেরেছি। এখন বহু গোপন পাঠক তৈরি হয়েছে আমার যারা কমেন্ট, শেয়ার কিছু না করেও লেখাগুলোকে ক্রিটিকালি পর্যালোচনা করে, টার্গেট এটাই ছিলো।
জেমসের প্রতি ফ্যাসিনেশনের কারণ কী? ব্যান্ডের গান শৈশব থেকে শোনা হলেও আইয়ুব বাচ্চুর ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’ শোনার পর থেকেই ব্যান্ডের প্রতি ভালোলাগার শুরু। এরপর ব্যান্ডের পুরনো গানগুলোও শুনতে থাকি। জেমসকে প্রথম দেখি বিটিভির ঈদ প্রোগ্রামে ‘জেল থেকে বলছি’ গানসূত্রে। ব্যান্ডের সদস্যরা কয়েদির পোশাক পরেছিলো, বয়স কম থাকায় তাদের দেখে ভয় পেয়েছিলাম এবং জেমসের চেহারা দেখে প্রথম ইমপ্রেসন ছিলো- গাজাখোর। আমার বাসায় সেসময় এক দূর সম্পর্কের বড়ো ভাই থাকতেন, তার মুখে শুনতাম জেমসের চুল ভরতি উঁকুন, তার ভক্তরা উঁকুন পরিষ্কার করে দেয়, সে প্রচুর পরিমাণে ফেনসিডিল সেবন করে। অন্যদিকে আইয়ুব বাচ্চুর শরীর-স্বাস্থ্য ভালো হওয়ায় তাকে বয়স্ক মনে হতো, শুনেছিলাম কণ্ঠশিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল তার ছোটভাই এবং তার মেয়ে ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। তখন প্রশ্ন আসতো, এরকম বয়স্ক একজন মানুষ গিটার বাজিয়ে গান কেন গায়?
সেই ভাই চলে যায়, বাড়ে আমারও বয়স কিছুটা। স্কুলের মাঠে বড়ো ভাইয়েরা প্রায়ই সাউন্ড বক্স নিয়ে আসতো, গান বাজাতো উচ্চশব্দে। এক বিকালে শুনি ‘চেয়ে দেখো উঠেছে নতুন সূর্য, পথে পথে রাজপথে চেয়ে দেখো রঙের খেলা, ঘরে বসে থেকে লাভ কী বলো, এসো চুল খুলে পথে নামি, এসো উল্লাস করি, দুঃখিনী দুঃখ করো না’। গানের কণ্ঠটা দারুণ তেজোদ্দীপ্ত, আগে কখনো শুনিনি। ভাইদের মারফত জানি এটা জেমসের গান, বিশ্বাস করি না, কারণ ‘জেল থেকে বলছি, অনন্যা’ গানগুলো শুনেছি আগে, সেখানে জেমসের কণ্ঠ শুনে মোটেই আলাদা কিছু লাগেনি। সেই গায়কের কণ্ঠ এমন পরিবর্তিত হবে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়, তখন আমার এক বন্ধু ক্যাসেটের এলবাম এনে জেমসের নাম ও ছবি দেখিয়ে নিশ্চিত করে।
এক গান দিয়েই জেমসের প্রতি ইমপ্রেসন ওলট-পালট হয়ে যায়। আমার এক সঙ্গীতবোদ্ধা আপু মন্তব্য করেছিলো- জেমসের গলায় সুর বেশিক্ষণ থাকে না, খুব দ্রুত তাল কেটে যায়, কিন্তু কণ্ঠটা ভারি হওয়ায় শুনতে ভালো লাগে। ব্যাকস্ট্রিট বয়েজ শোনা আমার এক সহপাঠীর মন্তব্য ছিলো- গানে কোনো মাধূর্য নাই, শুধু চিৎকার। আম্মুর সাথে জেমসকে নিয়ে প্রতিনিয়ত দ্বন্দ্ব বাঁধতো। ক্রিকেটের বাইরে টেলিভিশন একদমই দেখা হতো না, কিন্তু জেমসের গান থাকলে দেখা মিস করতাম না। খন্দকার ইসমাইলের এক প্রোগ্রামে ‘লিখতে পারি না কোনো গান’ গেয়িছিলো, সেটা সম্ভবত পরবর্তী ২ পর্বেও পুনঃপ্রচার করেছিলো। ছোট আপা-বড়ো আপা আধুনিক গানের এলবাম কিনলে কোনো সমস্যা হতো না, কিন্তু আমি জেমসের বিভিন্ন এলবামের গানগুলো একত্রিত করে ক্যাসেটের দোকান থেকে রেকর্ড করলেও রোষানলে পড়তাম, আম্মু কোর্টে না যাওয়া অবধি [তিনি এডভোকেট] সেই গান শোনার অনুমতি মিলতো না।
আম্মু রবীন্দ্রসংগীত, হেমন্ত, মান্না দে, কিশোর কুমারের গান শুনতো; কিশোর আর হেমন্তের প্রতি আমার আগ্রহ সৃষ্টির ক্ষেত্রে তার সরাসরি প্রভাব রয়েছে। কিন্তু যখন থেকে জেমসের গান শুনতে শুরু করি তিনি একে আমার রুচিবিকৃতি হিসেবে দেখেন। তার একটাই প্রশ্ন- ওর গানের কথা, গায়কি কোনটা ভালো যেজন্য আপনি (তিনি আমাদের ২ ভাইকে আপনি সম্বোধন করেন) ওর গান শোনেন? এগুলো শুনবে উশৃঙ্খল ছেলেরা।
আম্মুর কথাগুলো অযৌক্তিক লাগে না, আবার জেমসের গান শুনতে ভালো লাগছে সেটাও নিরেট সত্য। বলা যেতে পারে এই প্যারাডক্সিকাল পরিস্থিতিই জেমসের প্রতি ফ্যাসিনেশন বাড়িয়ে দিয়েছিলো, যা ২০০০ সালে ভিন্ন এক ডাইমেনশন যুক্ত করে। রেসলিং এন্টারটেইনমেন্টের সাথে পরিচিত হই। মানুষ পছন্দ করে স্টিভ অস্টিন, দ্য রক, আন্ডারটেকারকে। কিন্তু আমার চরমমাত্রায় ফ্যাসিনেশন জন্মে কেইনের প্রতি। তার এন্ট্রি, মুখোশে মুখ ঢেকে রাখা, যান্ত্রিক হাঁটা-চলা, নির্দয়তা সবকিছুর সাথে জেমসের অদৃশ্য এক কাকতালীয় মিল আবিষ্কার করি। দুই ঘরানার দুই এন্টারটেইনারের মধ্যে এই অন্ত্যমিলের উৎস কী এটা বোঝার জন্য কেইন এবং জেমস দুজনকে নিয়েই বিস্তর গবেষণা চলতে থাকে। গুগলে কেইনকে নিয়ে যেখানে যতো আর্টিকেল আছে পড়ে ফেলি, জেমসের গান শোনে যারা প্রায় প্রত্যেকের সাথে গল্প করি, ইউটিউবে তার ইন্টারভিউ দেখি।
এবং বড়ো হওয়ার পর উপলব্ধি করি গ্লেন জ্যাকবস ওরফে কেইন এবং ফারুক মাহফুজ আনাম ওরফে জেমস দুজনই ইন্ট্রোভার্ট প্রকৃতির এটা মিল নয়, বরং ডব্লিউডব্লিউই এর স্টোরিলাইনে কেইন ক্যারেক্টারটা যেভাবে ডিজাইন করা হয়েছে- সেই পারসোনালিটিতে আদতে দুজন খুব চমৎকারভাবে ফিট করে যায়। ২০০০-২০০১ এই সময়টাতে কেইন ক্যারেক্টারটা ছিলো ভাবলেশহীন কিন্তু ধ্বংসাত্মক, তার মুখে কথাও শোনাও যেতো না; সমগ্র ক্যারেক্টারের মধ্যেই বিপ্লবাত্মক ইমেজ ছিলো। তৎকালে জেমসকে যদি দেখি, তিনি পাঞ্জাবি আর জিন্স পরছেন, সাথে নিয়েছেন গামছা- খুবই অপ্রচলিত কম্বিনেশন। পাঞ্জাবি-জিন্স হয়তোবা আরো আগেও অনেকে পরেছে, কিন্তু এটাকে তরুণ সমাজের মধ্যে ক্রেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব যদি জেমসকে দেয়া হয় আপত্তি করা যাবে কি?
অনন্যা নামে জেমসের একক যে এলবামটি প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯৮৮ এর দিকে তার প্রতিটি গানই নকল। শেরি শেরি লেডির বাংলা করেছে ‘তুমি জান আমার জান’, সেই একই জেমস কীভাবে ‘জেল থেকে বলছি’ কিংবা ‘স্টেশন রোডে’ গান গায় এটা আমাকে অবাক করেছিলো। আমি তখন তার লিরিক নিয়ে গবেষণার উদ্যোগ নিই। দেখি বিষয়বৈচিত্র্যে তার গানগুলো অনেক সমৃদ্ধ। বাংলা লোকজ সংষ্কৃতি, যেমন যাত্রা, বায়োস্কোপ খেলা, লাঠিয়াল যেমন আছে মিরাবাঈ, পেশাদার খুনী, সেলাই দিদিমনি, লেইস ফিতা, মনে পড়ে সুধাংশ, হাউজি এর মতো বিচিত্র বিষয়েও গান শোনা যায় তার কণ্ঠে। কিংবা কবি শামসুর রাহমানের লেখা ‘আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেবো’ কথামালাকেও তিনি গান বানিয়ে ফেলেন। বর্ষা আমার চোখের প্রিয় ঋতু, পত্র দিয়ো, প্রথম স্পর্শ, আমি আর একফালি নিষ্পাপ চাঁদ, ভালোবেসে চলে যেও না এর মতো রোমান্টিক কথামালার গান পাই। পথের বাপই বাপরে মনা, একজন বিবাগী, স্বপ্নহারা বিবেকের দুয়ারে, যে পথে পথিক নেই গানগুলোর মধ্যে নিদারুণ ঔদাসীন্য আর মেলানকোলিয়া পাওয়া যায়।
কবিতা তুমি স্বপ্নচারিণী হয়ে খবর নিয়ো না- এই গানটা যখন প্রথম শুনি তার পর থেকে এখনো পর্যন্ত শুনেই চলেছি। খুবই সরল লিরিক, কিন্তু কম্পোজিশনটা এতো সুন্দর, একবার শুনলে আবারো শোনার ইচ্ছা জাগে। মা, বাবা এই দুটো গানের মধ্য দিয়ে তরুণদের ছাড়িয়ে অপেক্ষাকৃত বয়সী মানুষের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়, এবং সবশেষে ‘বাংলাদেশ’ গানটা তাকে প্রায় সর্বস্তরের মানুষের কাছে প্রবেশাধিকার এনে দিয়েছে।
জনপ্রিয়তাকে আমি বলি ডায়াবেটিস রোগ, কঠোর পরিমিতি বোধ তার সুগার, যা নিয়ন্ত্রণ না করলে সমস্যা। জেমস যেমন ‘মান্নান মিয়ার তিতাস মলম’ গাইতে পারেন একই ব্যক্তি দেওয়ানা মাস্তানা, ও বিজলি চলে যেও না, দুষ্টু ছেলের দল ছন্নছাড়ার দল, গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়া, আসবার কালে আসলাম একা, রাস্তাঘাট দেইখা চলিস সময় ভালো না এর মতো অরুচিশীল লিরিকের গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে যা হয় আরকি। একে বলা যায় স্ট্র্যাটেজিক স্যাক্রিফাইস।
কিন্তু জেমস কেন এসব গান গেয়েছেন? প্রথমত টাকা পাওয়া গেছে, দ্বিতীয়ত প্রান্তিকশ্রেণীর কাছ পৌঁছুতে হলে এরকম গানেরও দরকার আছে যেটা অন্য শিল্পীরা করেনি বা করলেও চলেনি। একজন গার্মেন্টসকর্মী হয়তোবা পদ্মপাতার জল শোনে না, কিন্তু পাগলা হাওয়ার তোড়ে মাটির প্রদীপ নিভু নিভু করে শুনে নাচানাচি করে হয়তো।
এন্টারটেইনারদের দুই ধরনের ব্যক্তিচরিত্র থাকে-
১.রিজার্ভ, যাকে জনতা এরোগেন্স মনে করে। মাকসুদ, শাফিন, আসিফ, সাকিব আল হাসান প্রমুখ এই শ্রেণিভুক্ত।
২. প্রাণোচ্ছল, যার সাথে জনতা খুব সহজে মিশে যেতে পারে নিজেদের একজন ভেবে। আজম খান, আইয়ুব বাচ্চু, মাশরাফিকে এই শ্রেণিতে ফেলা যায়।
জেমস নিঃসন্দেহে রিজার্ভ ব্যক্তিচরিত্র ধারণ করে। এ ধরনের চরিত্রের মানুষদের বাংলাদেশের মতো পরচর্চাপ্রবণ দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া অসম্ভব। তাদের হিতাকাঙ্ক্ষী এবং বিদ্বেষীর সংখ্যা প্রায় সমান, কখনোবা বিদ্বেষীরা দলে ভারি থাকে। রক গান শোনে অথচ জেমসকে অপছন্দ করে এমন মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়, তবু বাংলাদেশে গান-বাজনা করে এমন সেলিব্রিটির জনপ্রিয়তা পরিমাপ করতে গেলে জেমস হয়তোবা মমতাজ বাদে যে কারো চাইতেই অনেক বেশি জনপ্রিয়। বাংলাদেশ যেহেতু গ্রামপ্রধান এবং মুরব্বিদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ মারফতি এবং দেহতাত্ত্বিক গান পছন্দ করেন, মমতাজ এক্ষেত্রে বাকিদের পিছনে ফেলে দেয়।
কিন্তু জেমস এরকম ব্যক্তিচরিত্র নিয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া, ধরে রাখাটাও সমান চ্যালেঞ্জিং। মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের মধ্যেও জেমসের খুব ঘনিষ্ঠ মানুষ হিসেবে কারো কথা শোনা যায় না তেমন, পত্রিকায় তার সাক্ষাৎকার ছাপা হয় কদাচিত, নিজের পারফরম্যান্স না থাকলে কোনো মিডিয়া অনুষ্ঠানেও নিছক দর্শক হিসেবে সচরাচর দেখা যায় না তাকে, তবু তিনি অতুলনীয় জনপ্রিয়। বলিউডে আমির খান যে ধরনের পারসোনালিটি ইমেজ বহন করেন, জেমসের ইমেজ পলিসিকে সেই কাতারে ফেলা যায়। কিন্তু আমিরকে পারফেকশনিস্ট হিসেবে চেনে যেমন, জেমসের ক্ষেত্রে তো বাছ-বিচার নেই, আজেবাজে লিরিকেও পরম স্বচ্ছন্দ্যে কণ্ঠ দিয়েছেন।
কেবলমাত্র গান দিয়ে তিনি এতোটা জনপ্রিয়তা পেয়েছেন? মেলাতে পারি না। তখনই মনে পড়ে, জেল থেকে বলছি যে কণ্ঠে গেয়েছেন দুঃখিনী গানটাও যদি একই কণ্ঠে গাইতেন জেমস কি আমার মধ্যে কোনো ইমপ্রেসন তৈরি করতে পারতেন? নিঃসঙ্কোচে না বলতে পারি। কিন্তু কীভাবে গায়কি বদলে ফেললেন এই এডাপ্টেশন আমাকে মোহমুগ্ধতায় আচ্ছন্ন রাখে। আমাদের কৈশোরকেই বলা যায় জেমসের বিকাশকাল। ফলে কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে কনফারমেশন বায়াস তুলনামূলক কম কাজ করবে। সেই সময়টাতে স্কুল, কলেজ এবং ভার্সিটি পড়ুয়া তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ব্যান্ডক্রেজ বেশি লক্ষণীয় ছিলো। তাদের মধ্যে জেমস ফার্স্ট চয়েজ হয়েছে ব্যান্ড পারফরমার হিসেবে নয়, সোলো পারফরম্যান্সের কারণে। তার যে সমস্ত গান তুমুল জনপ্রিয় বেশিরভাগই প্রিন্স মাহমুদের করা বিভিন্ন মিক্সড এলবামের।
অনেকেই বাংলাদেশের ব্যান্ড কালচার নষ্ট করার পেছনে জেমস-আইয়ুব বাচ্চুর সোলো ক্যারিয়ার গড়ার দিকে ঝুঁকে পড়াকে কারণ হিসেবে দেখে। আমি একে কারণের চাইতে এক্সকিউজ বলবো। জেমস বা আইয়ুব বাচ্চু ব্যান্ড গড়ে পরিচিতি পেয়েছিলো ঠিকই, কিন্তু ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যান্ডের চাইতে মিক্সড এলবামই বেশি কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে। দোষারোপ যদি করতে হয় সেটা তপন চৌধুরীর প্রাপ্য। তিনি কেন সোলস ছেড়ে সোলো ক্যারিয়ার গড়লেন, সেই প্রশ্ন কারো মাথায় আসবে না, কারণ তপন চৌধুরি তরুণদের মধ্যে জেমস বা আইয়ুব বাচ্চু পর্যায়ের জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেননি।
তবে কি প্রিন্স মাহমুদকে দায়ী করা যায়? তিনি একজন গীতিকার, সুরকার; নিজের সৃষ্টি গান কাকে দিয়ে করাবেন সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্ণ অধিকার তার আছে নিশ্চয়ই।
ব্যান্ড শহুরে তরুণের বাইরে যেতে পারেনি সেটা ব্যান্ডের চরিত্রের কারণেই। বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যান্ডই শুরুর দিকে ইংরেজি গান করতো, ব্যান্ড মেজাজে বাংলা গান করা যায় এটা তারা নিজেরাই বিশ্বাস করতে পারেনি, দর্শক করবে কেন। তাছাড়া ব্যান্ডের প্রধানতম শর্ত, টিমওয়ার্ক। ৩ জন বাঙালি একত্রিত হলে যেখানে দল-উপদল তৈরি হয়ে যায় সেখানে দিনের পর দিন টিমপ্লে করাটা আমাদের সংস্কৃতিতে বেমানান। একারণে আমাদের ব্যান্ডগুলো তৈরিই হয় ভাঙার উদ্দেশ্যে। এরকম ভালনারেবল অবস্থায় কেবলমাত্র মিউজিক করে সংসার চালানোটাই যেখানে দুঃস্বপ্ন, সেখানে সোলো ক্যারিয়ার গড়াটা তুলনামূলক নিরাপদ অপশন। কনসার্ট অপশন না থাকলে, আমার ধারণা, জেমস হয়তোবা ব্যান্ডমেম্বারদের বয়ে বেড়াতেন না।
জেমসের ব্যক্তিচরিত্রের সাথে ‘গুরু” উপাধিটাও বেমানান। বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত ৩ জন মানুষের নামের পূর্বে গুরু বিশেষণ জুটেছে- ক্রিকেটে মাশরাফি, মিউজিকে আজম খান এবং জেমস। আজম খানের গুরু উপাধি অনেকটাই তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক, তার ব্যক্তিত্বও দিলখোলা ধরনের, মাশরাফির ব্যক্তিত্বও কাছাকাছি ধরনের। সুতরাং তার ‘গুরু’ প্রাপ্তিও বোধগম্য, কিন্তু চরম রিজার্ভ প্রকৃতির জেমসকে কেন গুরু বলা হয়?
প্রশ্নটা করেছিলাম, জাহাঙ্গীরনগরে পড়ুয়া এক বড়ো ভাইকে। তিনি বলেছিলেন, জেমস হইলো নেশার গুরু। ওর কনসার্টে পোলাপান নির্বিচারে গাঁজা খায়। গাঁজায় টান মাইরা লালন সাঁইজিরে যেমন গুরু বলে বাউলরা, কনসার্টে জেমসের গান শুনতে গিয়া আমাদেরও একই অবস্থা হয়।
সঙ্গত কারণেই এই ব্যাখ্যা অত্যন্ত লেইম মনে হয়েছে। আমি নিজেই বোঝার চেষ্টা করেছি, আজম খানের কাছ থেকে ব্যাটন সরে গিয়ে জেমসের হাতে উঠলো কীভাবে। এটা বুঝতে আমাকে সহায়তা করেছে জেমসের বিভিন্ন কনসার্ট, টিভিতে গানের লাইভ অনুষ্ঠান এবং দেশের বাইরের শো গুলো।
যারা জীবনে জেমসের একাধিক কনসার্ট দেখেছেন তারা কি একটা প্যাটার্ন খুঁজে পান? তার যন্ত্রীরা স্টেজে উঠে টিউনিং করছে, একজন ক্রমাগত সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারকে কোন্ মনিটরে কোন্ ভয়েস যাবে সেই নির্দেশনা দিচ্ছে, তুমুল বাদ্যবাজনার মধ্যে জেমস যখন স্টেজে উঠে তার একটা ইউনিক স্টাইল আছে দুহাত উপরে তুলে অভিবাদন জানানোর। এরপর মাইকের সামনে কিছুক্ষণ গিটারের টুংটাং, তারপর লেইস ফিতা গান দিয়ে শুরু। বিগত ২-৩ বছরে অবশ্য প্রথমে পদ্মপাতার জল গানটা দিয়ে শুরু করছেন।
দুষ্টু ছেলের দল গানের আগে বলবেন আমার দুষ্টু ছেলের দল কি আছে? গানের একটা লাইন আছে ‘সুন্দরী মেয়ে দেখি বাজাই সিটি’- লাইনটা যাতে অফেন্সিভ না লাগে সেজন্য ওই জায়গায় বলবে ‘সকল সুন্দরী মেয়েদের স্যালুট জানাই’, একটা লাইন ‘বাতাসে চুমু খাই’, এই জায়গায় বিরতি দিয়ে বলবেন ‘তোমরা আমরা জান, তোমরা আমার প্রাণ। তাই তোমাদের জন্য ছোট্ট একটা উপহার’- এরপর মাইকে চুমু খাবেন ‘উম্মা’। প্রতিটি গান শেষে বলবেন ‘লাভ ইউ’। গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়া গানটা নকল সুরের, কিন্তু তুমুল জনপ্রিয়, ‘আসবার কালে আইলাম একা’ এটারও দর্শক ডিমান্ড প্রচুর, প্রায় সকল কনসার্টেই গান দুটি পরিবেশন করেন, কিন্তু এরপরে খেয়াল করবেন এই দুটো গান কখনোই তিনি পুরো রিদমে গান না, কিছুটা গেয়ে দর্শকদের জন্য ছেড়ে দেন, তারা অনেকগুলো লাইন গেয়ে দেয়, তিনি কেবল ফ্লোটা ধরে রাখেন। কনসার্টে দর্শকদের ইনভলভ করার জন্য অনেক গায়কই এই কৌশলটি ব্যবহার করেন, কিন্তু জেমস প্রতিবার শুধুমাত্র এই ২টা গানেই কেন এমন করেন এটা বিশেষ গবেষণার দাবি রাখে।
শেষ করবেন ভিগি ভিগি গানটা দিয়ে। তারপর বলবেন আবারো দেখা হবে বন্ধুরা যদি আমরা একই পথে থাকি। তারপর চপ করে নেমে পড়বেন। সম্ভবত ১২-১৩টা গানের প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন, এর চাইতে বেশি দেখি না সচরাচর। ফলে কখন এলেন, কখন নেমে পড়লেন দর্শকের ঘোর কাটে না।
টিভিতে লাইভ প্রোগ্রামগুলো দেখলে একটা ইন্টারেস্টিং চিত্র পাওয়া যায়। তিনি প্রায় প্রতিটি গান নতুন স্টাইলে গাওয়ার চেষ্টা করেন। মূল গানের সাথে সুরে-পরিবেশনে মিল থাকে সামান্যই। নানা বৈশিষ্ট্যের বাদক নিয়ে আসেন, কোরাস আনেন, ফলে শ্রোতার মনে হয় নতুন গান শুনছি। দুঃখিনী দুঃখ করো না কিংবা বিজলি চলে যেও না গানগুলো এলবামে শুনতে কেমন লাগে, আর টিভি প্রোগ্রামে কীভাবে গান? এটা কি ইচ্ছাকৃত? একটা গান যখন জনপ্রিয় হয়ে যায় শ্রোতা সেই সুরেই শুনতে চায় গানটা, কিন্তু তিনি সম্ভবত মনে করেন রেকর্ডেড গানের মতো করেই যদি গাই তাহলে আর লাইভে এসে গাওয়ার দরকার কী, লিপ সিং করলেই তো হয়। তাছাড়া শ্রোতা নিজেও জানে না, কোনটা তার পছন্দ, কেন পছন্দ, সে শুধু জেমসকে গাইতে দেখতে চায়। যে কারণে যে কোনো গায়কের লাইভ প্রোগ্রামের সাথে জেমসেরটার পার্থক্য অনেক বেশি। সেখানে একঘেয়েমিতার সুযোগ নেই।
দেশের বাইরের কনসার্টগুলোতে তার গানের সিলেকশনগুলো চিন্তার উদ্রেক করে। সেলাই দিদিমনি সেখানে শুরুর দিকে থাকে; পদ্মপাতার জল আসে তারপর। এটা কি কাকতালীয়, নাকি বিশেষ কোনো ভাবনা?
পরচর্চাপ্রবণ বাঙালিদের মাঝে ২য় বিয়ে করা, জেল খাটার মতো ঘটনাগুলোও তার জনপ্রিয়তায় ধ্বস নামাতে পারেনি। এটা অনেকটা মিরাকলের মতো। এবার ডটগুলো যোগ করলে দেখা যাবে, তিনি আসলে শ্রোতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন না, নিজের এরোগেন্স দিয়ে শ্রোতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কনসার্টের সময়গুলোতে তিনি সম্মোহিত করে ফেলেন দর্শককে; কিছুই বলেন না, করেন না, তবু দর্শক তার সাথে গলা মেলায়, গিটারের ঝংকারে নেচে উঠে। এই সম্মোহন ফ্যাক্টরটা বাংলাদেশের বাকি গায়কদের ক্ষেত্রে ভালোমাত্রায় অনুপস্থিত থাকে।
কিন্তু সম্মোহনের উৎস কী আসলে? আমার ধারণা সংযোগটা ছায়া আর কায়ার। আমরা সাহসের অভাবে ভুগি বলে ছায়াকে অনুসরণ করে চলি, কিন্তু তিনি ছায়ার আগে চলতে চান। ফলে নির্বিকারত্ব নিয়েও তিনি জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন ৩দশকের বেশি সময় ধরে। সাধারণত, রকস্টারদের জনপ্রিয়তা একটি নির্দিষ্ট দশক পর্যন্ত সীমায়িত থাকে; সেই হিসেবে অনেকদিন আগেই মার্কেট আউট হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো তার। তার পরিবর্তে বলিউডের সিনেমাতেও গান গাওয়ার ডাক পান। কলকাতাতেও তার শ্রোতা আছে, যে কারণে সেখানকার পরিচালক অনুরাগ বসু তাকে পিক করেছিলেন। তার গাওয়া গানটি মাহীনের ঘোড়াগুলি ব্যান্ডের জনপ্রিয় গানের সুরের অনুকরণ হলেও জনপ্রিয়তায় সেটি মূল সুরের গানের চাইতে পিছিয়ে থাকে না খুব একটা।
তবে তাকে যতোটা নির্বিকার মনে হয় ফ্যাশনসচেনতা দেখে সেখানে আবার থমকে দাঁড়াতে হয়। পাঞ্জাবী-জিন্স ছেড়ে তিনি ফিরে গেছেন টি-শার্টে, ভ্রুতে লাগিয়েছেন আংটার মতো দেখতে একটা জিনিস। গান গাইতে যতোটা জড়তাহীন মুখে কথা বলার ক্ষেত্রে ততোটাই জড়তাগ্রস্ত। ইন্ট্রোভার্ট প্রকৃতির হয়েও লক্ষ লক্ষ এক্সট্রোভার্টের মনোরঞ্জনের উপলক্ষ্য হয়েছেন, এটাও এক বিস্ময়।
জেমস কি জানতেন গান ছাড়া জীবনে কিছুই করা হবে না? নইলে কিশোর বয়সে বাড়ি ছাড়ার সাহস এলো কোত্থেকে? আমরা বিদেশী রকস্টারদের জীবনে এ ধরনের ঘটনা পড়ে অভ্যস্ত। বাংলাদেশের একটি শিক্ষিত পরিবারের ছেলে ৮০ এর দশকে বাড়ি ছাড়বে এ যেন বাড়াবাড়ি কল্পনা। তবু তিনি করে দেখিয়েছেন তা।
মাদকবিরোধী কোনো কনসার্টে তাকে দেখা যায় না, যেহেতু তার মাদকসংশ্লিষ্টতা নিয়ে বহু গল্প প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু যারা সেসব কনসার্টে অংশ নেন, তারা কি মাদকমুক্ত? একারণে এই কনসার্টগুলোই হাসির খোরাক যোগায়। এদিক থেকে জেমসের সোজাসাপ্টা আচরণ বরং প্রশংসনীয়। অন্তত ভনিতা ব্যাপারটা নেই তার মধ্যে।
মানুষ হিসেবে জেমস কেমন?
এই প্রশ্নটা ইনভ্যালিড। একজন এন্টারটেইনারের জীবন আলো-আঁধারির খেলা। সাধারণ মানুষের জীবনের নীতি, শিষ্টাচার দিয়ে তাদের পরিমাপ করতে চাওয়াটা ফিলোসফিকাল ভুল। আমরা তাকে কীভাবে বিচার করবো? তার সাথে ছবি তুলতে গেলে হেসে কথা বলে কিনা, কিংবা আড্ডা মারতে গেলে অনর্গল গল্প করে কিনা, এইসব প্যারামিটার দিয়েই তো? আপনি নিজে একজন অপরিচিত মানুষের সাথে কেমন আচরণ করেন, এই প্রশ্নটা তলিয়ে দেখলেই মানুষ হিসেবে অমুক এন্টারটেইনার কেমন এটা মাথায় আসা উচিত না।
গায়ক হিসেবে জেমস তার মেয়াদ ফুরিয়ে ফেলেছেন আরও ৭-৮ বছর আগেই; তার যা দেবার প্রায় সবই দিয়ে ফেলেছেন, এখন কেবল প্রথমজীবনের সঞ্চয়গুলোই ভাঙিয়ে খাচ্ছেন বলা যায়। তবু জেমস এখন ব্যক্তির চাইতে একটি বোধ বা কমিউনিটির প্রতীক হয়ে উঠেছেন। গলার সেই ইউনিকনেস হারিয়ে যাক, বয়স ক্ষিপ্রতায় লাগাম টেনে ধরুক, তবু ব্যক্তিটি যখন জেমস, এবং মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন, নেশা কাটানো মুশকিল হয়ে পড়ে।
তার গান নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ নেই, এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু যাদের আছে, তারা কখন কীভাবে তার সাথে মেন্টালি এটাচড হয়ে পড়েন এটা টের পাওয়া যায় না, অনেকটা চেতনানাশক ওষুধের মতো কাজ করে এটাচমেন্ট প্রক্রিয়াটা।
জেমস কি ইনডিভিজুয়ালের ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছেন? তার চাইতেও জরুরী হলো, উঠতে চেয়েছেন কিনা সেই মীমাংসায় পৌঁছানো। কিংবা আরো ১৯ বছর পরে জেমসের প্রাইম শ্রোতাদের প্রায় প্রত্যেকেরই বয়স ৪৭ পেরিয়ে যাবে, যে ছেলে বা মেয়েটি আজ তার গান শোনা শুরু করলো, তার বয়স যদি ১৩ হয় সেও পৌঁছে যাবে ৩২ এ, এন্টারটেইনারদের যেরকম অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন তাতে ৭২ বছর পর্যন্ত সুস্থ্যভাবে জেমসের বেঁচে থাকাটা চ্যালেঞ্জিং মনে হয়, সেই সময়টাতে বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে জেমস কোন্ জায়গাটায় থাকবেন? এই উত্তরটা এখনো ধোঁয়াশাপূর্ণ বলেই ইনডিভিজুয়াল প্রশ্নে অনুসিদ্ধান্ত স্তরেই উপনীত হতে পারছি না, সিদ্ধান্ত তো বহুদূরের পথ।
জেমসের জন্ম যদি ইউরোপ বা আমেরিকায় হতো, তিনি কি গ্লোবাল এন্টারটেইনার হতে পারতেন? এ ধরনের প্রশ্নকে কখনোই জুতসই লাগে না, স্রেফ ফাঁপরবাজি মনে হয়। ঔপনিবেশিকতার প্রভাবে ইউরোপ-আমেরিকার এন্টারটেইনাররা কিছুটা এডভান্টেজ পায় এক্সপোজারের ক্ষেত্রে এটা যেমন সত্যি, সেখানকার মার্কেট অনেক বড়ো সেটা আরো রূঢ় বাস্তবতা। ফলে বাংলা মিউজিকে জেমস যতো বড়ো নাম, গ্লোবাল মিউজিকে সেরকমটা নাও হতে পারতেন। তাই কী হলে কী হতে পারতো এসব চিন্তায় বুঁদ না হওয়াই বুদ্ধিমানের লক্ষণ।
আমি কেন জেমসকে মনে রাখবো?
তার গান আমাকে টানেও না, ছাড়েও না; অনেকটাই স্ট্যাচু হয়ে যাই। আমার মূল আগ্রহের জায়গা ফোকগান। তার গায়কী এবং পরিবেশন ভিন্নতা তার প্রতি কৌতূহল বাড়িয়ে তোলে, প্রতিটি মানুষের মধ্যেই বিট আছে। কার জন্য কোন্ বিটটা উপযুক্ত এটা কোনোভাবে ধরতে পারলে সেই মানুষকে মিউজিক দিয়ে চালিত করা যায়। আমি বহুদিন নিজের বিট খুঁজেছি, দুটো গান শোনার পর মনে হয়েছে এই বিটটা আমার হতে পারে- পদ্ম পাতার জল, লেইস ফিতা। যে কোনোভাবেই হোক, দুটো গানই জেমসের গাওয়া। গানের কথা বা গায়কী নয়, বিটগুলো আমাকে আরো বেশি আকৃষ্ট করেছে। কিন্তু আমার বিটগুলো জেমসের ওই গান দুটোতে কেন ও কীভাবে পেলাম, এই জিজ্ঞাসার যথার্থ ব্যাখ্যা দাঁড় করাতেই জেমসকে মনে রাখতে হয় আমায়, এবং সেকারণেই ভবিষ্যতে তাকে নিয়ে আরো অনেকবার লিখতে হবে। এমনও হতে পারে, জেমসের অভ্যন্তরীণ মনোজগত বিষয়ে জীবনে কোনো একদিন আস্ত একটা বই লিখে ফেললাম। কিছুই অসম্ভব নয়!
লেইস ফিতা লেইস, চুরি ফিতা রঙিন সূতা, রঙিন করিবে মন
এই ফিতাটা মাথায় রবে, আদর-সোহাগ-যতন পাবে
এই ফিতাটাই জনম জনম বাইন্ধা রাখে
লেইস ফিতা লেইস
#himalay777