‘ইন্টারেস্টিং’ বিশেষণটা যথেষ্ট গোলমেলে লাগে। বিশেষত বিশেষণটা যখন কোনো ব্যক্তির পূর্বে বসে, সেই প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্তে আসা কঠিন মানুষটি আসলে কেমন। খুনী, রেপিস্ট- এই দুটো বিশেষণ ব্যতীত পৃথিবীর যে কোনো মানুষের সাথেই নির্বিঘ্নে আলাপ চালাতে ইচ্ছা জাগে। মানুষের পূর্বে ভালো, মন্দ, মেধাবী, গড়পড়তা প্রভৃতি বিশেষণগুলোকে কেমন যেন খাপছাড়া লাগে। আমার বিশেষণগুলো ইন্টারেস্টিং, উইলিং, আনউইলিং, ট্রেন্ডি, নিউক্লিয়ার প্রভৃতিতেই বিকশিত হয়। মানুষ তো মানুষই; এর আবার ভালো-মন্দ কী। কেউ কিছুটা ভালো, অনেকখানি মন্দ; কেউবা অনেক ভালো কিছুটা মন্দ। এতে ফ্যাসিনেটেড হওয়ার কিছু পাই না।

ইন্টারেস্টিং মানুষ বলতে তাহলে কী বোঝাচ্ছি? সেইসব মানুষ যার কথা-কর্ম-চিন্তা- বহিঃপ্রকাশ আগ্রহ জাগানোর যোগ্যতা অর্জন করে। আগ্রহ কিন্তু সবসময় পজিটিভ নয়, নেগেটিভও হতে পারে। অর্থাৎ, সেই মানুষ যার সাথে ২-৫ বছর দেখা না হলেও তাকে মনে থাকে, কিংবা কোনো একটা কথা বলার ৩ সপ্তাহ পরেও সেটার রেশ মাথায় রয়ে যায়। লেখক শাহাদুজ্জামান যেমন ইন্টারেস্টিং হতে পারে, বিপরীতক্রমে বাংলা সিনেমার ডিপজলের মধ্যেও থাকতে পারে ইন্টারেস্টিং মানুষ হবার সবরকম যোগ্যতা।

আমরা মানুষের মধ্যে ফেরেশতা দেখতে চাই, নিজেদের দেবদূত প্রমাণের প্রাণান্ত চেষ্টায় মুগ্ধতা ব্যাধি নামক দুরারোগ্য অসুখে ভুগতে থাকি। যে কারণে তরল, বর্ণচোরা, গিরগিটি প্রভৃতি বিশেষণের উদ্ভব ঘটে, কৃত্রিম মৈত্রী নামক চোরাবালিতে ডুবে মানুষের দার্শনিক মৃত্যু ঘটে। ইন্টারেস্টিং, উইলিং, আনউইলিং প্রভৃতি বিশেষণগুলোর অপমৃত্যুতে টিকে থাকে কেবল ট্রেন্ডি এবং নিউক্লিয়ার বৈশিষ্ট্যের মানুষেরা।

গায়ক আসিফ কি আমার মধ্যে আগ্রহ জাগায়? বেশিরভাগ সময়ই এর উত্তর ‘না’, কিন্তু যদি বলি ‘ব্যক্তি আসিফ’ কেমন? আমি প্রত্যেকবারই একটা উত্তর দিবো- হাইলি ইন্টারেস্টিং।

ব্যক্তিত্বের একটি অংশই তো গায়ক, এবং আসিফ আকবর নামক ব্যক্তিটিকে দেশ-বিদেশজুড়ে মানুষ চেনে বা আমলে নেয় তার গানের কারণেই। সেটাই যদি আমার কাছে মূল্যহীন হয়, তার ব্যক্তিসত্তা আমাকে এমন প্রবলভাবে আকৃষ্ট বা আগ্রহী করে তোলে কেন? জীবনে ৪০০০ মানুষের ইন্টারভিউ করলেও সেই তালিকায় খ্যাতিমান কিংবা সেলিব্রিটি মানুষের সংখ্যা ৪০ এরও বেশ কম। এর প্রধান কারণ অধিকাংশ সেলিব্রিটির প্রতিই আমি চরম বিকর্ষণ বোধ করি। তবু আগামী ১১ বছর যদি সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকি, কয়েকজন সেলিব্রিটির সাক্ষাৎকার নেয়ার ইচ্ছা রয়েছে। তালিকাটা বলি- ক্রিকেটার তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ আশরাফুল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, লিটন দাস, সাবেক ক্রিকেটার হাবিবুল বাশার, সাইফুল ইসলাম; নায়ক আলমগীর, অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম, অপর্ণা ঘোষ, গায়ক- সৈয়দ আব্দুল হাদী, জেমস এবং আসিফ।

ইন্টারভিউ শব্দটা অবশ্য ভুল প্রয়োগ। আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা থট এক্সচেঞ্জ বা স্টোরি ট্রান্সফরমেশন বলা যায়। তালিকায় যাদের নাম বললাম, এদের সবার প্রতি আমার ইতিবাচক মনোভাব এমনটি ভাবার একদমই কারণ নেই, কিন্তু আমি তীব্রভাবে বোধ করেছি এদের সাথে কথা বলা উচিত। গায়ক আসিফকে হটিয়ে ব্যক্তি আসিফের রাজ করার ক্ষেত্রেও এমন একটা গভীর বোধ কাজ করেছে।

গায়ক আসিফ কেন আমাকে টানে না? তার গানের গলা খুবই আনকমন, তবু টানে না।

আমি সঙ্গীতবোদ্ধা নই, মিউজিক সেন্সও তেমন প্রখর নয়। তবু আমার কাছে একটা গানের কম্পোজিশন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ লাগে। কম্পোজিশনের ব্যাকরণ সম্বন্ধেও পুরোপুরি অজ্ঞ, তবু কম্পোজিশনের ক্ষেত্রে কান আর মনের সংযোগের উপর আস্থা রাখি। যে কম্পোজিশনটা কানে অন্যরকম দ্যোতনা জাগায় এবং বিভিন্ন উল্টা-পাল্টা সময়েও মনে পড়ে, সেটাকেই চমৎকার কম্পোজিশন হিসেবে মেনে নিই। ওয়ারফেইজের অবাক ভালোবাসা, জেমসের পদ্মপাতার জল, লেইসফিতা, এলআরবির ঘুমভাঙ্গা শহরে, হাসতে দেখো, সোলসের এ এমন পরিচয়, আর্টসেলের অনিকেত প্রান্তর, শিরোনামহীনের হাসিমুখ, ডিফারেন্ট টাচের শ্রাবণের মেঘগুলো কিংবা মমতাজের নান্টুঘটক, আমার ঘুম ভাঙ্গাইয়া গেলো গো মরার কোকিলে- প্রভৃতি গানগুলো বিভিন্ন সময়ে মাথায় চলে আসে কেবলমাত্র কম্পোজিশনটা অন্যরকম লাগার কারণে। নিজের মধ্যে একধরনের রিদম অনুভব করি।

গায়কীর কারণেও অনেক সময় গান ভালো লেগে যায়। মেঘদলের শহরবন্দী মেঘ, মমতাজের লোকাল বাস, বান্ধিলাম পিরিতের ঘর, শিরোনামহীনের বন্ধ জানালা, জেমসের দুঃখিনী দুঃখ করো না, ফিডব্যাকের মৌসুমী, আজম খানের রেল লাইনের ঔ বস্তিতে, পাপড়ি কেন বোঝে না; এই তালিকার দৈর্ঘ্য এবং দূরত্ব দুটোই স্বাস্থ্যবান। এগুলো কেবলমাত্র নমুনা হিসেবে বলা।

লিরিকের কারণেও বহু গান ভালো লেগে যায়। আগুনের মাথায় পরেছি সাদা ক্যাপ, সঞ্জীব চৌধুরীর সমুদ্র সন্তান, আমি তোমাকেই বলে দেবো, জেমসের জেল থেকে বলছি, শুভ্রদেবের নীল চাঁদোয়া, লাকী আখন্দের এই নীল মনিহার। আরো অসংখ্য গানই কেবলমাত্র লিরিকের গুণে ভালো লাগে, এই মুহূর্তে রেন্ডমলি এগুলোই মাথায় এলো উদাহরণস্বরূপ।

আসিফের গায়কী কানে বিশেষ অনুভূতি জাগায় না। মনে হয় কেবল কথা আর সুরই আলাদা, কিন্তু কানে আসছে একই ভঙ্গিমায়। স্কেল সম্বন্ধে ন্যূনতম ধারণাও নেই, তবু কেবলমাত্র কমন সেন্সের উপর নির্ভর করে বলতে পারি, তার গানগুলোতে স্কেলের তারতম্য খুব সামান্য হয়তোবা। আর যদি নাও হয়, আমার কানে একই স্কেলে প্রবেশ করে; সেটা আমার কানের ত্রুটি।

তার গানগুলোর কম্পোজিশনও বিশেষ কিছু লাগে না; খুবই প্রেডিক্টেবল একটা রিদম পাওয়া যায়।

তবে লিরিকের গুণে তার কয়েকটা গান অসংখ্যবার শোনা হয়েছে জীবনে। আমার দুঃখ সারি সারি, উড়ো মেঘ- আরো অনেক গানই থাকতে পারে, কিন্তু যেহেতু তার গানের মুগ্ধ শ্রোতা ছিলাম না কখনোই, লিরিকের কথা আলাদাভাবে মনে পড়ছে না।

আমার আগ্রহ-অনাগ্রহতে বাস্তবতার কিছুই যায়-আসে না। আসিফ ৬ বার মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার, ১ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া শিল্পী। তার বেশ কয়েকটা পাবলিক ইন্টারেকশনে বলতে শুনেছি, প্রায় ২০০০টি গানে কণ্ঠ দিয়েছে সে (যদিও তার সাম্প্রতিক প্রতিপক্ষ প্রীতম আহমেদ কোনো এক ফেসবুক লাইভে তার এই দাবিকে মিথ্যাচার বলে উল্লেখ করেছে। তার মতে, সংখ্যাটা ৬০০ এর কিছু বেশি)। উইকিতে তার বায়োগ্রাফি পড়াসূত্রে জানলাম, তার একক এলবামের সংখ্যা ৩২টি, মিক্সড আর ডুয়েট এলবাম ৯০টি; প্লেব্যাক বা সিনেমায় গাওয়া গানের সংখ্যা সেখানে উল্লেখ করা হয়নি। এই পরিসংখ্যানগুলো বিবেচনায় নিলে তার গাওয়া গানের সংখ্যা ২০০০ না হলেও ১০০০ এর বেশি হওয়া উচিত।

এর চাইতেও তাৎপর্যপূর্ণ একটা তথ্য শেয়ার করার আগে আসিফ কীভাবে আসিফ হলো সেই প্রসঙ্গের অবতারণার তাগিদ বোধ করছি।

তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। বিটিভিতে সেরা পাঁচ নামে একটা গানের অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো, দিনাত জাহান মুন্নী ছিলো সেটার সঞ্চালক। এক পর্বে আনকোড়া এক শিল্পীর গান সেরা পাঁচে ঢুকে পড়ে- বুকের জমানো ব্যথা, কান্নার নোনা জলে ঢেউ ভাঙ্গে চোখের নদীতে, অন্যের হাত ধরে চলে গেছো দূরে, পারি না তোমায় ভুলে যেতে, ও প্রিয়া ও প্রিয়া তুমি কোথায়’- এমনই সাদামাটা লিরিক আর সিনেমাটিক সুরের এক গান। লিকলিকে এক গায়ক, অথচ কণ্ঠ কী ভরাট। এই চেহারার সাথে ওই কণ্ঠ তো মেলেই না; আমি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম সেই অসঙ্গতি মেরামতে।

কিন্তু তার কিছুদিন পর যেখানেই যাই ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ গানটা বাজতে শুনি। সেলুন, বাস, মুদি দোকান, বিয়ের অনুষ্ঠান তো ছিলোই, আশপাশের বাসা থেকেও অবিরত আসতে থাকে ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ গানের আওয়াজ। সারা দেশ এক অদ্ভুত ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ গানে আবিষ্ট হয়ে পড়ে। আমি সচেতনভাবে গান শুনি ১৯৯২ থেকে, কিন্তু ওই গানের মতো এমন সর্বব্যাপী আর কোনো গানের উদাহরণ আর একটিও ছিলো না আমার ততোদিনকার জীবনে। এ প্রসঙ্গে একটা মজার ঘটনা মনে পড়ে গেলো। আমাদের পাশের বাসায় কলেজ পড়ুয়া এক ভাইয়া ছিলেন। সকাল থেকে সারাদিন কেবল একটা বাজতো তার ক্যাসেট প্লেয়ারে। একদিন আমাদের বাড়িওয়ালা শিল্পীর প্রতি বিরক্ত হয়ে সেই ভাইয়াকে বলেন- ওই শিল্পীর গলায় একটু পানি দিয়া আয়, সারা দিন ধইরা গান গাইতেছে। সারা দেশ যে প্রিয়ার জ্বরে আক্রান্ত, তার প্রভাব পড়ে আমার ছোট আপার উপরেও। সেও দোকান থেকে কিনে আনে ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’!

গতরাতে নাগরিক টিভিতে লাইভ গানের প্রোগ্রামে শিল্পী হিসেবে এসেছিলো আসিফ। এক পর্যায়ে উপস্থাপিকা তানিয়া জানায়- ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ এলবামটি ৬৫ লাখ কপি বিক্রি হয়েছিলো সেই সময়ে। তখন আসিফ একটি সম্পূরক তথ্য শেয়ার করে- এলবাম যত কপি বিক্রি হয়েছে পাইরেটেড কপি তৈরি হয়েছিলো তার চাইতেও বেশি; সবমিলিয়ে ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ এলবামটি বৈধ-অবৈধ পন্থায় ১কোটি ৩০ লাখ কপির বেশি বিক্রি হয়েছে। বিক্রির দিক থেকে এর সাথে কম্পিট করার মতো কোনো এলবাম কি বাংলাদেশে এসেছে কখনো?

প্রথমবার শুনেই যে গানের সুরকে সিনেমাটিক লেগেছিলো, পরবর্তীতে সত্যি সত্যিই এই নামে একটা সিনেমা নির্মিত হয়; শাবনুর, রিয়াজের সাথে ২য় নায়ক হিসেবে শাকিব খান তাতে অভিনয় করেছিলো (দেখা হয় নাই, দাউদ রনি নামক জনৈক সাংবাদিকের রিভিউ পড়েই যা বোঝার বুঝে নিয়েছিলাম)।

কিছুদিন আগে ‘অপরাধী’ টাইটেলের একটা গান ব্যাপক পরিমাণে ভাইরাল হয়। সেই গান পৌঁছে যায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ড্রেসিংরুমেও। ভাইরালিটির দিক থেকে একে তুলনা করা হতে থাকে আসিফের ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ গানটির সাথে, যদিও ভাইরালিটির ক্ষেত্রে দুই গানের মধ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। তখন মোবাইলে ইন্টারনেট ছিলো না, স্মার্টফোনের ব্যবহারও ছিলো গালগল্প, ইউটিউব নামক কোনো ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যাটফরম ছিলো না। এই ৩টি স্পষ্ট এডভান্টেজের বিপরীতে আসিফের একমাত্র এডভান্টেজ তখন চ্যানেল হিসেবে কেবলমাত্র বিটিভি থাকা আর ইটিভির টুকটাক সম্প্রচার।

তবে অপরাধী গান ভাইরাল হবার পর, ইন্টারেস্টিং কয়েকটা লেখা চোখে পড়ে বাঙালির মিউজিক রুচির প্রতি প্রশ্নবোধকতাসূচক। সেইসব পোস্টের সারমর্ম হলো- ও প্রিয়া তুমি কোথায় আর অপরাধী আদতে একই ঘরানার গান, দুটোতেই ভিক্টিমের হাহাকার ফুটে উঠেছে। সুতরাং দুই গানের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান ১৮ বছর হলেও এই দীর্ঘ দেড়যুগেও রুচি বদল হয়নি। এখনো ভিক্টিম বা সিমপ্যাথি সেল করা গেলেই সেই গান ভাইরাল হয়; এই হলো হাইপোথিসিস।

এই হাইপোথিসিসকে আমি ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিতে চাই ( মারজুক রাসেলের কথায় ‘ফুঁ’ শীর্ষক একটা গানে কণ্ঠ দিয়েছে আসিফ)। আমি-তুমি এর শক্তিশালী বলয়ে যত গান লেখা হয়েছে বাংলা ভাষায়, বেশিরভাগই ভিক্টিম আর সিমপ্যাথিকেই সেল করতে চেয়েছে। তবুও ভাইরালিটির দিক থেকে ও প্রিয়া তুমি কোথায় কিংবা অপরাধীর কাছাকাছি যেতে পেরেছে কয়টা গান? সুতরাং অন্য কোনো ফ্যাক্টর আছে। সেটা নিয়ে গভীর ভাবনার অবকাশ রয়েছে। আমি এখনো ভাবিনি, কোনোদিন ভেবে কূলকিনারা করতে পারলে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা রয়েছে।

মিউজিকরুচি একটি ভূখণ্ডের সাংস্কৃতিক মানদণ্ড নির্ধারণে অন্যতম প্যারামিটার। ভার্সিটির তরুণ-তরুণীদের বড়ো অংশই হয়তোবা আসিফের শ্রোতাশ্রেণীতে পড়ে না। কিছুদিন আগে প্রখ্যাত গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলির সাথে দীর্ঘ আড্ডা দেয়ার সুযোগ ঘটেছিলো। জেমস, আইয়ুব বাচ্চুর অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গীতিকার এই শিবলি ভাই। আলাপনে জানা গেলো, আসিফের সাথেও শিবলি ভাই কাজ করেছেন। আমি সরাসরি জিজ্ঞাসাই করেছিলাম, আপনি যে ধরনের গান লিখেন আর আসিফ ভাইয়ের যে অডিয়েন্স গ্রুপ, দুটো তো পুরোপুরি আলাদা; আসিফ ভাইয়ের সাথে কাজে আগ্রহী হলেন কেন তাহলে? তার উত্তর ছিলো- অডিয়েন্স গ্রুপ আলাদা হলেও আসিফ ভাইয়ের প্রচণ্ড স্ট্রং একটা ভোকাল টোন আছে, আমি সেটাকে কাজে লাগাতে চেয়েছি।

শিল্পরুচি ধারণাটাই ঝাপসা লাগে আমার। নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী, সুবীর নন্দী কিংবা ওপার বাংলার মান্না দে, কিশোর কুমারের গান শুনলে উন্নত রুচি, আর এসডি রুবেল, মনির খান কিংবা আসিফের গান শুনলে সস্তারুচি- এই মনোভাবটাও খুব উন্নত কিছু মনে হয় না; এর মধ্যেও এক ধরনের কলোনিয়াল আভিজাত্যবোধ কাজ করে। নকল সুর আর যৌন সুড়সুড়ির লিরিক ব্যতীত যে কোনো গানকেই আমি গান হিসেবেই দেখি। নকল সুরের বিপক্ষে থাকার কারণ এটা একজন মানুষের সৃষ্টিশীলতাকে অবমাননার শামিল। বৌধিক বিভাজন একটি সমাজের অনিবার্য পরিণতি। যাদের প্রচুর পঠন-পাঠনের অভ্যাস আছে, জীবন-যাপনে সৃষ্টিশীলতার যোগাযোগ রয়েছে, তাদের রুচিগত উৎকর্ষ এমনিতেই স্বাতন্ত্রের দাবিদার। কিন্তু সেই রুচিটা যখন অপরের রুচিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস খোঁজে, সেটাও প্রবল হীন মানসিকতা এবং রুচি প্রতিবন্ধীতার শামিল।

আসিফের বিপুল জনপ্রিয়তা কোনো মিথ নয়, হেলাফেলার বিষয়ও নয়; এর একটি শক্তিশালী ভিত্তি রয়েছে। ভাইরাল করে কারা? এই গোষ্ঠীটি কিন্তু ইনফ্লুয়েন্সিয়াল। এদের দেখাদেখিই তার বা তাদের পরিমণ্ডলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রভাবিত হয়। ডিপার্টমেন্টের বড়ো ভাই বা আপু শেয়ার দিলো বা তার পিসিতে গানটা শুনে ভালো লাগলো, তার থেকে একজন, তার থেকে আরেকজন। এভাবেই কিন্তু ভাইরাল হয়। ফলে যারা আসিফের গান শোনে না বলে ধারণা করা হয়, আদতে তাদের প্রত্যক্ষ-প্রচ্ছন্ন প্রভাবেই আসিফের জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে এবং দুই দশক ধরে টিকেও আছে। তার মানে এই শ্রেণিটি আসিফের গান শোনে, কিন্তু স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করে, কারণ প্রবাসী শ্রমিক, মহল্লার মুদি দোকানী, কিংবা গার্মেন্টসের সুপারভাইজারও ‘ও পাষাণী বলে যাও কেন ভালোবাসোনি, মুছে দিয়ে যাও তুমি এই চোখের পানি’ গান শুনে। কাজেই তাদের রুচির সাথে সাদৃশ্য স্বীকার করে নেয়া মানে তো স্থূলতার বহিঃপ্রকাশ।

যে কোনো কিছু ব্যবহারের লাইসেন্স নিতে হয়। সেটা বিয়ে হোক, আর ব্যবসা হোক। কিন্তু গান শোনা বা সিনেমা দেখার জন্য লাইসেন্সের প্রয়োজন পড়ে না। কারণ লাইসেন্স মানেই সুনির্দিষ্ট করে দেয়া, ব্যাপ্তি সংকীর্ণ করে ফেলা। একবার ভাবুন, একটা গান শোনার আগে আপনাকে তাল-লয় সম্বন্ধে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে, কিংবা সিনেমার টিকিট কেনার আগে স্টোরিলাইন-প্লট-এক্টিং-সিনেমাটোগ্রাফি বিষয়ে জ্ঞানের প্রমাণ দিতে হচ্ছে। খুবই হাস্যকর না কল্পনাটা?

গায়ক আসিফ বিষয়ক বক্তব্য শেষ। এবার ব্যক্তি আসিফ, যাকে সবসময়ই ইন্টারেস্টিং বলি তাকে বোঝার চেষ্টা করি।

প্রথমেই বলবো বাচনভঙ্গি। আসিফের বাচনভঙ্গি অসাধারণেরও উপরে; একটা বিমূর্ত সৌন্দর্যময়তা আছে তাতে।

আসিফকে ইন্টারেস্টিং লাগার প্রধান কারণ তার অকপটতা। তার পারসোনালিটি ট্রেইট ENFP (আগ্রহীরা গুগলিং করে নিতে পারেন)
মানুষ হিসেবে তার প্রচুর দোষ থাকা খুবই সঙ্গত; কিন্তু দোষমুক্ত মানুষ আসলে কে বা কারা? সুতরাং দোষের দপদপানি বন্ধ রাখাই সঙ্গত।
আমার সবচাইতে ভালো লাগে তার উপস্থিত বুদ্ধি এবং সাহসিকতা। টেলিভিশন বা পত্রিকাতে সেলিব্রিটিদের যেসব ইন্টারভিউ পড়ি আমরা, সেখানে নামগুলোই কেবল আলাদা, উত্তরগুলো প্রেডিক্টেবলই থাকে মোটামুটি। কিন্তু আসিফের ইন্টারভিউগুলো শুনলে বা পড়লেই তাকে বাকিদের চাইতে আলাদা করা যায় অবলীলাক্রমে। সৌজন্য, বিনয়, ডিপ্লোম্যাসি প্রভৃতি মেকিসর্বস্ব বুলির ধার না ধেরে নিজের প্রকৃত মনোভাবটিই সে ব্যক্ত করে। এতে অনেক সময়ই আপনি বিব্রত হবেন, ক্ষুব্ধও হতে পারেন, বিশেষত আত্মম্ভরিতার বাড়াবাড়িতে তাকে রামছাগল গালি দিয়ে শান্তি খুঁজতে পারেন, তাকে আত্মরতিপরায়ণ নার্সিসিস্ট বলতে পারেন, কিন্তু একবার ভাবুন তো এর কোনটা থেকে আপনি নিজে মুক্ত? গিরগিটির মতো ক্রমাগত রঙ বদলানোর নামই যদি হয় বিনয়ী হওয়া, সেই বিনয়কে যদি আসিফ ফ্রিজে রাখতে চায়, আমি তার মধ্যে বড়োরকম হিউমারই আবিষ্কার করি।

তাহলে কি সিনিয়রদের প্রতি সম্মান থাকবে না? প্রথমত, সম্মান বিষয়টা আমি ফর গ্রান্টেড হিসেবে মানার পক্ষে নই; এটা আদায় করে নেয়াও এক ধরনের যোগ্যতা। স্রেফ বয়সে বড়ো হলেই সিনিয়রিটির দোহাই দিয়ে সম্মান দিতে হবে, এটা আংশিক দৃশ্যপট। সিনিয়রটি দিয়ে সর্বোচ্চ ‘আপনি’ সম্বোধনটুকু বরাদ্দ পাওয়া যেতে পারে, সম্মান নিজ কর্মগুণে অর্জনীয়। আসিফের সাথে বহু সিনিয়র আর্টিস্টের ঝামেলা বেঁধেছে, পেপার-পত্রিকা পড়লেই সেগুলো জানার কথা। প্রীতম আহমেদ, শফিক তুহিনদের নিয়ে তার মন্তব্যগুলো অশালীন ছিলো অবশ্যই, কিন্তু শওকত আলি ইমনকে যেভাবে সে সম্মান জানায়, প্রায় প্রতিটি প্রোগ্রামেই আজম খানের কোনো একটা গান কাভার করে তাকে ট্রিবিউট জানায়; ভক্তির এই নিদর্শনটা এতো সুন্দর আর সুচারুভাবে রাখতে পেরেছে আর কোন্ তথাকথিত বিনয়ী শিল্পী!

তার মানে যাকে সে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তাকে সর্বোচ্চ সম্মান দেয়ার চেষ্টা করে, যাকে গুরুত্বহীন ভাবে অন্যরা তাকে হিমালয়ে উঠালেও তাতে তার মনোভাব বদলায় না। স্বকীয়তার প্রতি প্রচণ্ড আকর্ষণ, এই গুণটাই তাকে ইন্টারেস্টিং মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে।

তার মধ্যে নীচতাও প্রচুর। মানুষের নীচতাকে আমি উপভোগ করি। আলোর আকার যতো বড়ো হবে, তাকে ঢাকতেও তো সমআকারের অন্ধকারই লাগবে। কেবল আলোটা নেবো, অন্ধকারটা নেবো না তা কী করে সম্ভব! যেমন, কয়েকটা প্রোগ্রামে তাকে বলতে শুনলাম, সে ২০১০ এ পাইরেসির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে রিটায়ারমেন্টে গিয়েছিলো, অথচ তার উইকি বায়োগ্রাফিতে স্পষ্ট ভাষায় লেখা, মূলত রাজনীতিতে আরো বেশি সক্রিয় হবার পরিকল্পনা থেকেই সে গান থেকে সরে গিয়েছিলো।

গতকালকের প্রোগ্রামে এক দর্শক ফোন করে বলেছিলো- আসিফ ভাই, আপনার প্রথম দিককার গানগুলোর কারণেই আপনাকে ভালোবাসি। এর মানে সে বোঝাতে চাইছিলো, আসিফের এখনকার গানকে সে মানতে পারে না। আসিফের উত্তরটা যথেষ্ট ম্যাচিউর ছিলো, যেটা বাংলাদেশের কোনো গায়ক লাইভ অনুষ্ঠানে দেয়ার চিন্তাও করবে না হয়তোবা। তার বক্তব্যের সারমর্ম ছিলো- শ্রোতার কাজ শোনা, সে শিল্পীকে কন্ট্রোল করতে চাইবে কেন; এগুলোতে সে বিরক্ত। বিশেষত ফেসবুক আর ইউটিউবে যেসব মানুষ মন্তব্য লিখে, তাদের মেরিট নিয়েও তার তীক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ রয়েছে। তার ভাষ্যমতে, তার ৩টা লাইব্রেরি আছে, প্রতিদিন ৮-১০টা পত্রিকা পড়ে; অর্থাৎ নিজেকে সে একজন মননশীল মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করতে তৎপর। একে সমর্থন করবেন নাকি করবেন না অভিরুচি আপনার, কিন্তু এর মধ্যে তার সেনসিটিভিটির পরিচয় পাওয়া যায়।

কিছুদিন আগে ইউটিউবে সেন্স অব হিউমার নামে এক অনুষ্ঠানে সে এসেছিলো দর্শক হিসেবে। উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয় কথা প্রসঙ্গে বলছিলো, এক নায়িকার সাথে আপনার সম্পর্কের গুঞ্জন শোনা যায়। সে জয়কে বোল্ড করে দেয় উত্তরে- ‘নাম বলতে সমস্যা কী, সেটা তো সেই ২০০৮ এই স্বীকার করেছি, দীপা খন্দকার। আপনি আর মীর সাব্বির আমাকে দুলাভাই ডাকতেন কেন; এতোদিন পরে সেই প্রসঙ্গ টানতেছেন কি প্রোগ্রামের হিট বাড়ানোর উদ্দেশ্যে’?

তার চালচলনে একটা প্রকট ‘ডোন্ট বোদার’ এটিচুড বিদ্যমান। সেটা আপনি পছন্দ না-ই করতে পারেন, কিন্তু তার থটপ্রসেস আপনাকে ধাক্কা দিবেই। Everyone wants to be liked, এটা আপ্তবাক্যের মতো। আসিফও ‘লাইকনেস’ এর মোহতে ভুগে হয়তোবা, তার আচরণকে অনেকেই এটেনশন সিকিং ট্যাগ দিয়ে খারিজ করে দিতে পারেন, কিন্তু পছন্দনীয়, পূজনীয় হওয়ার মোহে সে যে তুলতুলে, মোলায়েম কথা বলে না- এটা মানতে আপত্তি থাকার কথা নয়। এটাও কি পাবলিসিটি স্ট্যান্ট? হতে পারে। কিন্তু ক’জনের সাহস এবং যোগ্যতা আছে এই স্ট্যান্টকে এক্সিকিউট করার!

আসিফের জীবনের গ্রাফটাও খুবই ইন্টারেস্টিং। ছেলেবেলা থেকেই ডানপিটে, ক্ষ্যাপা প্রকৃতির, ক্রিকেট নিয়ে তার মাতামাতি
সর্বজনবিদিত। প্রফেশনাল ক্রিকেটার হওয়ার চেষ্টাও করেছে অনেকদিন পর্যন্ত। সেটাতে সফল না হলেও বাংলাদেশের বিজয় উদযাপনে দীর্ঘদিন পর্যন্ত তার গাওয়া ‘বেশ বেশ সাবাস বাংলাদেশ, যাও এগিয়ে আমার বাংলাদেশ’ – গানটা ছিলো সিগনেচার টোন। রাজনৈতিক কর্তৃত্বপরায়ণতা সর্বগ্রাসী হওয়ায় এই গানটি এখন আর সেভাবে বাংলাদেশের বিজয়ে বাজানো না হলেও আজ পর্যন্ত এই গানের সমপর্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে পারেনি কোনো স্পোর্টস গান। এটাকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আসিফের কন্ট্রিবিউশন হিসেবেই দেখতে চাই।

২০০১ এ ও প্রিয়া তুমি কোথায় এলবাম রিলিজ হলো যখন, তখনো পর্যন্ত আসিফ অখ্যাত এক স্ট্রাগলিং শিল্পী, অথচ সে বিবাহিত এবং দুই সন্তানের পিতা। অল্প বয়সে বিয়ে করতে হলে পারিবারিক এবং সামাজিক যে বিরাট বাধা অতিক্রম করতে হয়, সেটাও করা হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর নানা সময়েই নিন্দিত হয়েছে সিনিয়রদের সাথে দ্বন্দ্বে, শেষ পর্যন্ত জেলেও যেতে হয়েছে রেষারেষির জেরে। আপনি যদি ডিরেক্টর কিংবা ঔপন্যাসিক হন, আপনার কাঙ্ক্ষিত চরিত্রটির মাঝে যে সকল বৈশিষ্ট্য দেখতে চাইবেন, আসিফ বোধহয় সবগুলোর বাইরেও অতিরিক্ত কয়েকটা পূরণ করে। তাকে তবে ইন্টারেস্টিং মানুষ বলতে বাধাটা কোথায়!

মিষ্টভাষী, সদাচারী এধরনের মানুষকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধুরন্ধর এবং সবদিকে তাল মিলিয়ে চলা নির্জীব মানুষ মনে হয়। সে প্রতিনিয়ত নিজেকে লুকায়। লুকাতে লুকাতে একদিন হয়তোবা পৃথিবীর ছাদের সাথে গিয়ে ধাক্কা খায়, তবু লুকানোর বাসনা মরে না। লুকোচুরি খেলার শেষ কোথায় কে জানে? এদের সাথে ১১ মিনিট কথা বলার পরই আগ্রহ ঝরে পড়ে আমার। ভদ্র হওয়া আর মিনমিন করা দুটোর পার্থক্য যতদিন পর্যন্ত পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে, ততদিন পর্যন্ত বিরাট কোহলি ক্রিকেটের সমস্ত রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়া সত্ত্বেও প্রধান পরিচিতি হবে বেয়াদব হিসেবে!

বলতে পারেন, এরকম ডমিনেন্ট এবং এরোগেন্ট মানুষের সাথে কথা বলতে যাওয়াই তো বিপদ, শুধু তার মন মতলুবি কথা বলতে হবে, তাকে অফেন্ড করতে গেলেই আলোচনা সমাপ্ত। অত্যন্ত ভুল অনুমান। এপ্রসঙ্গে সাকিব আল হাসানের উদাহরণ দেয়া যায়। সাংবাদিক দেবব্রত মুখার্জীর সাথে আলাপসূত্রে জেনেছিলাম, সে যখন সাকিবনামা বই লিখতে সাকিবের সাথে যোগাযোগ করেছিলো, সাকিব তাকে সরাসরি বলে দিয়েছিলো বইয়ের ব্যাপারে তাকে সে কোনো সাহায্যই করতে পারবে না, কিন্তু বইতে যদি আপত্তিকর কিছু লিখে সে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিবে। দেবব্রত দা তখন যোগাযোগ করে সাকিবের কোচ সালাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি সাকিবকে বলে দেন সহায়তা করতে; এরপর সাকিব আর কোনো উচ্চবাচ্যই করেনি; এতোটাই সম্মান তার কোচের প্রতি।

সূত্রটা খুবই সহজ। ডমিনেটিং মানুষকে ঘায়েল করতে চাইলে বা দীর্ঘক্ষণ আলাপ করতে চাইলে তার পছন্দের সাথে হ্যাঁ বলতে বলতে যৌক্তিক এক বা একাধিক কারণ দিয়ে বিরোধীতা করলে তারা তখন চ্যালেঞ্জ বোধ করে, জয়ের নেশা পেয়ে বসে। ব্যস, আপনার জন্য সহজ হয়ে গেলো সমীকরণ।

গায়ক আসিফকে মনে রাখার মতো একটি কারণও আবিষ্কার করতে পারিনি আমি। তবে ব্যক্তি আসিফের ইন্টারভিউ নেয়ার প্রচণ্ড ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ হলেও আসিফকে উপেক্ষা করা আমার জন্য অসম্ভব।

বহুবারই তো বলেছি, খুনী আর রেপিস্ট ব্যতীত সকল মানুষই আমার কাছে উনিশ-বিশ পার্থক্যে থাকে। নিউক্লিয়ার, আর ট্রেন্ডি মানুষের মহাপ্লাবনে বিরলপ্রায় ইন্টারেস্টিং মানুষগুলোকে কানেক্ট করতে চাই বলেই তো সেই ১০-১১ বছর থেকে মানুষের ইন্টারভিউ নিয়েই চলেছি, চলছিই। তবু ইন্টারেস্টিং এলিমেন্টের সংকট তৈরি হলো না আজ অবধি।

ব্যক্তি আসিফ, ইন্টারেস্টের মহাসমুদ্রে জলোচ্ছ্বাসের ঢেউ হয়ে প্লাবিত করে চর্চিত বোধ, চর্বিত চিন্তা।

আমার পাগলা ঘোড়ারে, কই থিকা কই লইয়া যাস…