উৎপল শুভ্রর লেখা ‘কল্পলোকে ক্রিকেটের গল্প’ বইটা যখন পড়বো ভেবেছি, তার পূর্বে একটাই প্রশ্ন ছিলো, কেন পড়তে চাই? ইতিপূর্বে তার লেখা ‘শচীন রূপকথা’ প্রকাশিত হয়েছে, পড়ার আগ্রহ বোধ করিনি সেভাবে, বছর পাঁচেক আগে তাঁর অন্য বই ‘কাছের ক্রিকেট, দূরের ক্রিকেট’ পড়েছিলাম; উচ্ছ্বসিত হওয়ার মতো অনূভূতি জাগেনি, তবু যখন এই বইটি পড়ার জন্য ক্রমাগত নিজের ভেতর থেকে কেউ একজন তাড়া দিচ্ছিল, ‘কেন পড়বো’, প্রশ্নটাই বেশি ভাবাচ্ছিল।

‘কেন’ তে ঢোকার পূর্বে ব্যক্তি উৎপল শুভ্র এর ব্যাপারে একটা শার্প লাইন ড্র করতে চাই। আমার কখনোই পেপার-পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ছিলো না, অথচ পেপার ছাড়া একদিনও চলে না, এমন অবস্থা। বাসায় পত্রিকা এলেই সবার আগে খেলার পাতায় ক্রিকেটের খবরগুলো পড়তাম, আর সম্পাদকীয় পাতায় যেসব লেখায় ইমেইল আইডি আছে সেগুলো পড়ার চেষ্টা করতাম। এর বাইরে পেপারের কোনো কিছু নিয়েই আমার ন্যূনতম আগ্রহ ছিলো না, এবং ছোটবেলা থেকেই এই অভ্যাসটা এমন নিপুণভাবে রপ্ত করেছি যে, ৩০ বছর বয়সে এসেও সেখানে কোনো নড়চড় হয়নি।

যেহেতু ক্রিকেটের বাইরে অন্য কোনো সংবাদ পড়াই হয় না বা হতো না, বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকদের লেখার সাথে শৈশব-কৈশোর থেকেই গভীরভাবে পরিচিত। আরিফুর রহমান বাবু, উৎপল শুভ্র, মোস্তফা মামুন- সেই ছোটবেলা থেকে তাদের লেখা পড়ি। এদের মধ্যে উৎপল শুভ্রর লেখাই সবচাইতে বেশি পড়া হয়েছে বাসায় প্রথম আলো রাখাসূত্রে। তার সাংবাদিকতার ধরন ভালো লাগতো; রিপোর্টিংকে তিনি নিছক তথ্য পরিবেশনের চাইতে কিছুটা স্টোরিটেলিং মুডে নিয়ে গিয়েছিলেন; এ নিয়ে ব্লগ এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে বিস্তর সমালোচনা হলেও আমি ব্যক্তিগতভাবে তার রিপোর্টিং এপ্রোচকে অনেক বেশি পছন্দ করি। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট নিয়ে যারপরনাই ফ্যাসিনেটেড হওয়ায়, এবং উৎপল শুভ্রর ক্যারিবিয় ডায়েরি, শ্রীলংকা সফরনামা প্রভৃতি রিপোর্টিংগুলো পড়ে স্কুলে থাকতে হঠাৎ হঠাৎ মনে হতো স্পোর্টস জার্নালিস্ট হয়ে যাই, দেশ-বিদেশ ঘুরতে পারবো। ফলে আমার শৈশব-কৈশোরে উৎপল শুভ্রর একটা প্রচ্ছন্ন প্রভাব ছিলো।

আরেকটা বিষয়ের কারণে উৎপল শুভ্রর প্রতি এদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের ঋণী থাকা উচিত, সেটা হলো লোকাল স্টারডম কনসেপ্টকে মোবালাইজ করা। আমাদের শৈশব-কৈশোরের প্রায় পুরোটাই স্টারডম বলতে আমরা হয় ভারত অথবা পাকিস্তানী ক্রিকেটারদের বুঝতাম। সেখান থেকে বাংলাদেশী একজন ক্রিকেটারকে মেগাস্টার বানিয়ে ফেলার যে যজ্ঞ, সেটাকে তিনিই ভিত্তি দিয়েছেন। আশরাফুল যে বিশ্বমানের ক্রিকেটার, বিরল প্রতিভা, আশার ফুল এসব ভাবনা বাংলাদেশী দর্শক পেল কোত্থেকে? অনেকেই, আশরাফুল বন্দনাকে নেগেটিভ দৃষ্টিতে দেখেন, প্রচুর নিন্দা করেন, কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন, আমরা সাধারণ ক্রীড়ামোদীরা স্টারবন্দনায় তৃপ্তি পাই; সেটা মেটাতে যদি স্থানীয় একজন ক্রিকেটারকে ব্যবহার করা হয় তাহলে তো দেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো। যে কোনো কিছু শুরু করতে, বিশ্বাস করতে অধিকাংশ মানুষ উদাহরণ/রেফারেন্স চায়, তারপর বিশ্বাস করতে শুরু করে। এভারেস্টে কোনো বাঙালি উঠতে পারবে এই বিশ্বাসটিই তো ছিলো না; একজন একদিন উঠে পড়লো, এরপর আরও কতজন এভারেস্ট বিজয় করে ফেললো। মানুষের ইন্টারনাল সাইকোলজি এভাবেই কাজ করে।

আশরাফুলকে নিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে প্রফেশনাল এপ্রোচের চাইতে ব্যক্তিগত ভালোলাগাটাই অনেক সময় প্রকট হয়ে উঠেছিলো, সেটা কিছুটা দৃষ্টিকটুও লেগেছে। কিন্তু তিনি তো শুধু আশরাফুলে থেমে থাকেননি। মাশরাফি, অলক কাপালি এদের দিয়েও লোকাল স্টারডম কনসেপ্টকে প্রমোট করার চেষ্টা করেছেন। এখনো তার একটা রিপোর্টের কথা মনে পড়ে, যেটার শিরোনাম ছিলো ‘অলকের ঝলক’,এবং শুরুটাই ছিলো এমন, ‘আশরাফুল, আর মাশরাফি; বিশ্ব ক্রিকেটে দেখানোর মতো এই দুইটা জিনিসই ছিলো আমাদের।একজন অফ ফর্ম, অন্যজন ইনজুরিতে’, তার পরম্পরায় টেনে এনেছিলেন অলক কাপালীকে। অন্য কোনো ক্রীড়া সাংবাদিককে দেখিনি, এই ব্যাপারটা নিয়ে এতো ভাবিত হতে। অথচ, যে কোনো খেলা বা এন্টারটেইনমেন্ট মিডিয়ামে স্টার লাগেই, নইলে ক্রেজ তৈরি হবে কীভাবে! ভারতের উদাহরণটাই দেখুন। এক টেন্ডুলকারকে ঘিরে কত কোটি টাকার ইন্ডাস্ট্রি দাঁড় করিয়ে ফেলেছে।

উৎপল শুভ্র সমালোচিত হওয়ার প্রধান পয়েন্টও সম্ভবত আশরাফুলমুগ্ধতাটা প্রফেশন ছাপিয়ে ব্যক্তিগত জায়গায় চলে যাওয়া। এটা শুধু আশরাফুল ইস্যু নয়, তার অন্যান্য রিপোর্টিংয়েও আনবায়াসডনেস এর চাইতে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বিষয়গুলো লক্ষণীয় হয়ে উঠে। আমি জার্নালিজমের ছাত্র নই, জার্নালিজম এথিকস সম্পর্কেও ন্যূনতম ধারণা নেই, তবু কমন সেন্স থেকে মনে করি, একজন জার্নালিস্ট যখন একটি বিশাল প্লাটফরমে কোনো তথ্য বা সংবাদ পরিবেশন করছেন, সেখানে ফ্যাক্টটাই প্রাধান্য পাওয়া উচিত, নিজস্ব আইডিওলজি নয়। আমার মনে হওয়া ভুলও হতে পারে।

বড় হওয়ার পর পড়াশোনা মারফত জানতে পারি উৎপল শুভ্র একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু খেলাধুলাকে ভালোবেসে সাংবাদিকতায় ঢুকে পড়েছেন। ট্র্যাকচ্যুত মানুষদের প্রতি বরাবরই আমার আগ্রহ কাজ করে, মনে হয় নিজের দলে আরও একজন অগ্রজ পাওয়া গেল। এটাকে বোধহয় ‘ইজম’ বলে।

এইটুকু পড়ার পর খটকা লাগতে পারে, উৎপল শুভ্রকে নিয়ে যত সমালোচনা হয় আমি কি সবকিছুরই বিপক্ষে? এতোটা লিনিয়ার নয় ব্যাপারটা। প্রথমত, ১০০% পজিটিভ বলতে কোনোকিছু বিশ্বাস করি না আমি; বাই ডিফল্ট যে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর ক্ষেত্রে আমি ১০% বাদ দিয়ে দিই নির্মাণত্রুটি হিসেবে। বাকি ৯০ এর মধ্যে আমি মূল্যায়ন করি। সেই স্কেলে উৎপল শুভ্রর প্রতি আমার মনোভাব ৬০% (পজিটিভ), ৩০% (বিরূপ)।
৩০% বিরূপ হওয়ার ক্ষেত্রে, আশরাফুলের ফিক্সিং কেলেংকারিতে তার অবস্থানটা ধোঁয়াশাপূর্ণ লেগেছে আমার। মনে হতে পারে, এই একটামাত্র ইস্যু দিয়েই এতো বড় মন্তব্য করে ফেললাম! এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে বলতে চাই, ৫ কেজি মটরশুটি হতে যে পরিমাণ মটরশুটি লাগবে, ৫ কেজি তরমুজ হতেও কি তাই? অথচ ভর তো সেই একই। ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়েই মানুষ, এটা নিয়ে ঢালাও সমালোচনা করা যেমন বাড়াবাড়ি, অপরিমিত প্রশংসাও বিভ্রান্তিকর। কিন্তু সমস্যা হলো, আমরা প্রশংসা আর সমালোচনার শার্প লাইনজনিত ব্যালান্সিং পয়েন্টটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিস করে যাই। সম্ভবত একারণেই আমাদের দেশে খুব সহজেই একজন পীর হয়ে যায়, তার চাইতেও দ্রুত ঘৃণা বা নিন্দার পাত্র হয়ে উঠে। প্রতিক্রিয়াশীলতার দুই চরমপ্রান্তে আমাদের বসবাস অহর্নিশ।

আগের বই দুইটি খুব বেশি না টানলেও ‘কল্পলোকে ক্রিকেটের গল্প’ পড়তে চাওয়ার মুল কারণ ‘ক্রিকেট লিটারেচার’ ব্যাপারটার প্রতি আমার প্রবল ভালোবাসা। ২০১৫ তে ক্রিকেট বিষয়ক আমার একটা বই প্রকাশিত হয়, নাম ‘বেনিফিট অব ডাউট’। আমি ওই বইটাকে সরাসরি ক্রিকেট লিটারেচার হিসেবে উল্লেখ করেছিলাম বইয়ের ফ্ল্যাপসহ সর্বত্র; সেখানে ‘পিচ’ একটি চরিত্র; হেলমেট, স্ট্যাম্প, রোলার সবাই কথা বলে এবং ‘পিচ’ বিভিন্ন ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার, আম্পায়ার, ক্রিকেট প্রশাসকদের চিঠি লিখে। ৩০০ কপি প্রিন্ট হওয়া বইয়ের বিক্রি হয় ৪৫ কপি মাত্র, এবং প্রায়জনই আমার ব্যক্তিগত জীবনের পরিচিত মানুষ (১৫০ কপি অবশ্য ইন্টারনাল এক প্রোগ্রামে পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয়েছিল)। আমার চেষ্টাটা মাঠে মারা গেছে, যেহেতু আমার তেমন কোনো পরিচিতি নেই এবং কমিউনিকেটিভ ল্যাঙ্গুয়েজে লেখার ক্ষেত্রে আমার শিশুতোষ দুর্বলতার বিষয়টি প্রমাণিত।

কিন্তু আমি তো মনেপ্রাণে চাই বাংলাদেশে ক্রিকেট লিটারেচার এর ফ্লো আসুক। যাদের পরিচিতি আছে তারা যদি লিখে, নিজেদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সেই বইয়ের পাঠক তৈরিতে তাদের খুব বেগ পোহাতে হবে না। এক্ষেত্রে, উৎপল শুভ্র যোগ্যতম ব্যক্তি। প্রথমত, বাংলাদেশে ক্রিকেট জার্নালিজম বললেই তার নাম চলে আসবে, সেই পর্যায়ের ব্র্যান্ড ভ্যালু তিনি ধারণ করেন; ২য়ত, বাংলাদেশের সবচাইতে শক্তিশালী মিডিয়া হাউজ প্রথম আলোর একটা সাপোর্ট তার আছে। সুতরাং ক্রিকেট লিটারেচারকে পপুলারাইজ করতে এই ব্যক্তির চেয়ে অগ্রণী ভূমিকা আর কে নিতে পারেন!

কল্পলোকে ক্রিকেটের গল্প- নামেই বোঝা যায় এখানে মর্ত্যলোকের বাইরের বিষয়াদি উঠে আসবে। ছোটবেলায় বিরূপাক্ষ পালের ‘কী ছিলো বিধাতার মনে’ সিরিজের বইগুলো পড়ার সূত্রে এই ফরম্যাটটার সাথে আমি পরিচিত, যেখানে মৃত ব্যক্তিরা স্বর্গে বসে নানা গল্প করে, কেউ পৃথিবীতে নেমে আসে; অর্থাৎ মায়া তৈরির কৌশল। বইয়ের কাভারে ব্র্যাডম্যানের ছবি এবং পেছনের চুম্বক অংশ পড়েই বুঝে ফেলি ক্রিকেটের আদিপুরুষদের নিয়ে কথা-বার্তা।

আমি বায়োগ্রাফি, হিস্টোরি এসব পড়তে পছন্দ করি, ক্রিকেট হলে তো অবশ্যই। সুতরাং এই বই না পড়ার তো ব্যাখ্যা থাকতে পারে না।

এই বইকে কি ক্রিকেট ইতিহাস বলা যায়? হয়তো, হয়তো নয়। লেখক বলেছেন, টেস্ট শুরুর সময় থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্তই বইয়ের টাইমফ্রেম। খুবই প্রাসঙ্গিক বোধ করায়, এর সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন ব্র্যাডম্যানকে। আমরা বিষয়টাকে এভাবে দেখতে পারি, বাংলাদেশের ইতিহাস যদি লিখতে হয়, কোথা থেকে শুরু করা উচিত? এক আর্কিটেক্ট ভাইকে প্রশ্নটা করেছিলাম, তিনি বললেন, প্রথমে ভাবলাম ৭১ থেকে লিখলেই হবে, কিন্তু এটা নিয়ে পড়তে গিয়ে মনে হলো, ৪৭ এর দেশভাগ নিয়ে না জানলে ডায়নামিক্সটা ধরা যাচ্ছে না; দেশভাগ নিয়ে পড়ার সময় বুঝলাম, ১৯০৫ এর বঙ্গভঙ্গটা এর সাথে কতো ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সেটা নিয়ে পড়ার সময় বুঝলাম, আর্যদের আগমনের বিষয়টাও জড়িত।

অনুরূপভাবে, ক্রিকেটের লিখিত ইতিহাস ধরলেও তো সময়টা ১৮৭৭ এ চলে যায়। তার আগে কি ক্রিকেট ছিলো না? কিংবা ১৯৭০ এর পরে ক্রিকেটের যে অভাবনীয় পরিবর্তন, ২০০০ সালের পরে যে পাল্টে যাওয়ার বিপ্লব, ইতিহাস একে কীভাবে মূল্যায়ন করবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মেলাতে গেলে, এই বইটা ‘ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট’ এর মতো বিশাল কলেবরের কোনো উপন্যাস হয়ে যেত। এখনকার সময়ে অত মোটা বই পড়ার পাঠক এবং লেখার লেখক, দুটোরই দারুণ আকাল। তবু আমি মনে করি, এই বইয়ের সিকুয়েল হওয়া উচিত। যেমন, কল্পলোকে ডব্লিউ জি গ্রেস, ট্রাম্পার বা কেম হিল রা ওয়ানডে ক্রিকেট নিয়ে কী ভাবছে, অস্ট্রেলিয়ার একাধিপত্য, ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভিভ রিচার্ডস প্রভৃতি ফ্যাক্টরকে কীভাবে দেখে। কেরি প্যাকার যেহেতু কল্পলোকে আছে, জগমোহন ডালমিয়া আছে, সেক্ষেত্রে ক্রিকেটের বাণিজ্যিকরণ নিয়েও তাদের ইনসাইট চলে আসতে পারে। তাতে আকর্ষণ বাড়বে, বৈ কমবে না!

আদিকালের ক্রিকেট নিয়ে মজা করার মতো প্রচুর এলিমেন্ট পাওয়া যায়। যেমন, আগের টেস্টে আম্পায়ারিং করে পরের টেস্টে খেলতে নেমে যাওয়া, ছক্কা হতে হলে বল আক্ষরিক অর্থেই মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার বাধকতা, রিটায়ার করার ৮-১০ বছর পর আবার খেলতে নামা, নির্বাচক থেকে নিজেই সহঅধিনায়ক হয়ে যাওয়া, খেলোয়াড়-নির্বাচক মারামারি বাঁধানো, বিপক্ষ দলের হয়ে ফিল্ডিং করে নিজের দলের ব্যাটসম্যানকে আউট করে দেয়া, অদ্ভুত সব কীর্তি!

সেইসময়ে ক্রিকেট খেলে ডব্লিউ জি গ্রেস কাড়ি কাড়ি টাকা উপার্জন করেছেন, এই সত্য জানার পর তাকে নিয়ে নতুন করে ভাবার অবকাশ পেয়েছি। এতোদিন পর্যন্ত তার ছবি, ব্যাটিং স্ট্যান্স এসব দেখে ‘গ্রেস’কে একটা ক্রিকেটীয় মিথ ভাবতাম, কিন্তু সেই আমলে তিনি যেভাবে দাপট দেখিয়েছেন, এখনকার যুগের টেন্ডুলকার, কোহলি বা ব্রায়ান লারার সাথে তার মিল পাই।

বই শেষ হয়েছে, প্রয়াত মানজারুল ইসলাম রানাকে লিংকড আপ করার মাধ্যমে। রানা নাকি সর্বকনিষ্ঠ প্রয়াত টেস্ট ক্রিকেটার। সম্ভবত, তার অন্তর্ভুক্তিটা পিপলস চয়েজ ফ্যাক্টরকে মাথায় রেখেই, কারণ বইয়ের কনটেক্সট যেভাবে এগিয়েছে, তাতে বাংলাদেশকে স্পেস দেয়ার স্কোপ ছিলো না। রানাকে ঢুকিয়ে দেয়া, এক অর্থে দেশীয় ক্রিকেট ক্রেজকে ইন্টেলেকচুয়ালি ইউটিলাইজ করার চেষ্টা। একে পজিটিভলিই নেয়া যায়।

উৎপল শুভ্র সোজাসাপ্টা কার্যপ্রণালী বলে দিয়েছেন ‘ওয়ার্ক লাইক আ রিপোর্টার, রাইট লাইক আ নভেলিস্ট’। ঔপন্যাসিকরা কীভাবে লেখে ধারণা নেই, তবে পড়ার সময় ঘটনাগুলো যেভাবে এসেছে, তাতে ব্যাপারগুলো স্বতঃস্ফূর্ত কম ছিলো, মনে হয়েছে তথ্য বা ইতিহাস জানানোর অভিপ্রায়েই সংলাপ সাজানো হয়েছে। যেহেতু লেখক একজন রিপোর্টার, ফিকশন লেখক নন, সেই বিবেচনায় উপস্থাপন কৌশলের এই অনাড়ম্বড়তাকে স্পোর্টিংলি দেখা যেতেই পারে।

এই বই পড়ে, পাঠক হিসেবে প্রত্যাশা বা অনুভূতির কথা জানতে চাইলে, আমি বলবো, এটা অবশ্যই দ্বিতীয় খণ্ড দাবি করে, যেটা হবে প্রকৃত ক্রিকেট লিটারেচার; সেখানে আরও বহু ডাইমেনশন যুক্ত হবে আশা করতেই পারি। এই ধরনের একটা বইয়ের জন্য যদি স্বেচ্ছাশ্রমও দিতে হয়, স্ট্রেইট ড্রাইভের কসম, একবারও নো বল ডাকবো না!