মানুষের আয়ু কত হওয়া উচিত এ সংক্রান্ত জিজ্ঞাসায় সচরাচর কচ্ছপের উদাহরণ চলে আসে। কচ্ছপের গড় আয়ু ৩০৭+ বছর, অন্যদিকে মানুষ ৭১ পেরুনোর আগেই জরাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। হুমায়ূন আহমেদের এক ইন্টারভিউতে এ ব্যাপারে আফসোস করতে দেখেছিলাম, অনুযোগের স্বরে তিনি বলেছিলেন- একটা কচ্ছপ কেন ৫০০ বছর বাঁচবে!
মানুষকে ২ শ্রেণিতে বিভক্ত করি আমি- বৈষয়িক, অবৈষয়িক। অর্থ, সম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি মিলে একজন বৈষয়িক মানুষের যে জীবনযাপন, তাতে তার বাঁচা উচিত অন্তত ১৩৭ বছর; নইলে বৈষয়িকতার দাম থাকে না আসলে। অবৈষয়িক মানুষের মধ্যে বিভাজন আছে- ইন্টারটেইনার, ইন্টেলেকচুয়াল, স্কলার।
স্কলার বলতে বোঝাচ্ছি যারা জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করে এবং তার মাধ্যমেই জীবিকা আহরণ, সামাজিক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। ইন্টেলেকচুয়াল বলতে বোঝাচ্ছি যারা মৌলিকতার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে জীবিকা/প্রতিষ্ঠা কিংবা সামাজিক জীবনযাপনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেন। স্কলারের চর্চা জ্ঞান, আর ইন্টেলেকচুয়ালকে জ্ঞানকে প্রজ্ঞায় রূপ দেয়ার সাধনা-সংগ্রাম করেন।
ইন্টারটেইনারের সংজ্ঞা সহজ। যারা সহস্র-লক্ষ-কোটি মানুষকে স্টিমুলেট বা উদ্দীপ্ত করতে পারেন।
একটি ব্যালান্সড সোসাইটিতে সবচাইতে বেশি জরুরী স্কলারের; গ্রহণযোগ্যতায় এগিয়ে ইন্টারটেইনার, আর ইন্টেলেকচুয়াল প্রয়োজনীয়তা-গ্রহণযোগ্যতা দুটোতেই পিছিয়ে থেকেও সমাজের অন্তর্দৃষ্টি পরিগঠনে তাদের প্রচ্ছন্ন প্রভাব থাকে।
অবৈষয়িক মানুষের জীবনে বৈষয়িকতার হাহাকার তুলনামূলক কম। একজন বৈষয়িক মানুষ হয়তোবা একটা ফ্ল্যাট কিনতে না পারার হতাশায় মুহ্যমান কিংবা ৩ লাখ টাকা লোকসান করে পেরেশান হয়ে পড়ে, কিন্তু একজন অবৈষয়িক মানুষের হতাশার ধরন আলাদা। তিনি একটি পছন্দসই লাইন লিখতে না পেরে গুমড়ে কাঁদেন, কিংবা সুর সৃষ্টি করতে না পেরে যন্ত্রণাবিদ্ধ হন।
ইন্টারটেইনাররা তো আর্থিকভাবে স্বচ্ছল, খ্যাতিতেও এগিয়ে যে কারো চাইতে; তাদের কি তবে অবৈষয়িক বলা যায়? সম্পদের সাথে অবৈষয়িকতার সংঘাত নেই তো। তিনি ম্যাস পপুলেশনের পালস ধরতে পেরে সেই অনুসারে যদি নিজেকে গড়ে-পিটে নিতে পারেন সেটা তার যোগ্যতা।
ইন্টারটেইনারের কি সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকতে নেই? অবশ্যই আছে। যিনি তা পালন করেন তিনি বব মার্লি, জর্জ হ্যারিসন হন, যিনি কেবলমাত্র ইন্টারটেইনমেন্টকেই দায় গণ্য করেন তিনি আদ্যন্ত ইন্টেরটেইনারই থাকেন। এটা ভালো নাকি মন্দ, সেই ইন্টেলেকচুয়াল আর্গুমেন্ট এই লেখার লক্ষ্যবিন্দু নয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইন্টারটেইনারদের আর্থিক স্বচ্ছলতা চলে আসে, কিন্তু সেই স্বচ্ছলতা ধরে রাখার মতো বৈষয়িক বুদ্ধির ঘাটতি থাকে। যে কারণে বাংলাদেশের মিউজিক বা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আর্টিস্টদের শেষ বয়সে অর্থকষ্টে থাকার অজস্র নজির চোখে পড়ে।
ইন্টারটেইনারদের আমরা চিনি তাদের পারফরমিং আর্টের বদৌলতে। সেখান থেকে তাদের বিচ্যুতি মানে এক ধরনের মৃত্যুই, যদিও ইন্টারটেইনারদের জন্ম থাকলেও শারীরিক মৃত্যু দিয়ে তাদের তিরোধান ঘটে না আদতে। টেন্ডুলকার যেদিন ক্রিকেট মাঠ থেকে বিদায় নিয়েছেন, মৃত্যু তার সেদিনই হয়ে গেছে, এখন বাকি জীবন কাটবে তার খেলোয়াড়ি জীবনের স্মুতিচারণে। কিন্তু ইউটিউব বা অন্য ডিজিটাল মিডিয়ার সৌজন্যে ৬৭ বছর পরেও হয়তোবা তার খেলা দেখতে পাবে মানুষ; সুতরাং শারীরিকভাবে তার বেঁচে থাকা না থাকা কেবলমাত্র তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের ভাবনার বিষয় হলেও সাধারণ ক্রীড়া দর্শকদের কাছে তিনি ওই ২২ গজেই চিরবন্দী আর্টিস্ট একজন।
ফলে টেন্ডুলকার আজ শরীর ত্যাগ করা যা, ২৩ বছর পরে করাও একই কথা। এখন করলে কিছুসংখ্যক বেশি মানুষ ব্যথাতুর হবেন, ২৩ বছর পরে রাষ্ট্রপতির শোকবাণীতেই হয়তোবা ব্যথাকাতরতা সীমায়িত থাকবে।
ইন্টারটেইনারদের জীবন তাই বৈষয়িক মানুষের শতায়ুর হিসাব মেনে চলা উচিত নয়। তারা কোটি কোটি মানুষের হাসি-কান্নার উপলক্ষ্য তৈরি করেন নিমেষে; সেই কোটি প্রাণের দৃষ্টি যখন তাদের থেকে সরে যায় সেই যন্ত্রণা সওয়াটা সত্যিই দুরূহ। ৫-৭ বছর পরে যখন সাকিব আল হাসান অবসর নিয়ে নিবেন ক্রিকেট থেকে, ফ্যান-ফলোয়ার-মিডিয়া যারা এতোবছর তাকে ঘিরে ছিলো মুহূর্তের মধ্যে হাপিস হয়ে যাবে। আরো ১১ জনের ১ জন হয়ে নিতান্ত সাদামাটা জীবন তিনি কীভাবে যাপন করবেন!
যখন থেকে ইন্টারটেইনার হিসেবে কেউ গ্রহণযোগ্যতা হারাতে শুরু করেন, তখন থেকেই তার মৃত্যুপর্ব শুরু হয়ে যায়। ৮১ বছর বয়সেও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এখনো অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন, সেদিন তার এক সাক্ষাৎকারে তাকে বলতে শুনলাম ‘অভিনয় ছেড়ে দিলে একদিনও বাঁচতে পারবো না’। তবু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বললে একদা যে নায়কোচিত ইমেজ আসতো মানুষের মাথায়, ৮১ এর অশীতিপর বৃদ্ধ সৌমিত্রকে দেখে তার কথা মনে পড়ে? মানুষের মনে এখনো ভাসে উত্তম কুমার যিনি ৫৫ বছর বয়সে চলে গেছেন। নায়কোচিত ক্যারিশমা চলে গেছে ততোদিনে, কিন্তু নিঃশেষিত হয়নি একেবারে।
কিংবা হুমায়ুন আহমেদ যদি ৬৪ এর পরিবর্তে ৫৩-৫৪তে চলে যেতেন, তাকে ঘিরে হয়তোবা ভালোবাসার বেষ্টনী আরো দৃঢ় হতো মানুষের। জীবনভর যারা মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন সেই মানুষগুলো যখন একটু হলেও ভালোবাসাহীনতায় ভুগেন সেটা তাদের মানসিক বৈকল্যৈর কারণ ঘটায়। পৃথিবীর আলো-অক্সিজেন অপচয় করা নিরর্থক যখন একজন ইন্টারটেইনার তার মূল মঞ্চটি হারিয়ে ফেলেন। আলো-বাতাসের ভোগ-দখল নিয়ে তো কাড়াকাড়ি করবে বৈষয়িক মানুষেরা। কোন্ ব্যাংকে কত টাকা জমলো, কোথায় কোন্ প্লট কিনলো এইসকল প্রাত্যহিকতার হিসাব কষার জন্য হলেও তো শতায়ু পাওয়া উচিত।
যে কোনো ইন্টারটেইনারই যখন বয়স ৫৩ পার করে ফেলে আমি তার প্রস্থানের প্রতীক্ষায় থাকি। শাহাদুজ্জামানের একজন কমলালেবু বইটা পড়ার পর তাকে ইমেইল করেছিলাম, এক জায়গায় লিখেছিলাম- বয়স তো ৫৭ হয়ে গেলো, চলে যাওয়ার আগে আর কী বিশেষ লেখা লিখতে চান?
শুনতে নির্মম, নিষ্ঠুর লাগলেও এই ব্যাপারগুলোতে ভাবলেশহীন থাকতে পারি কেন যেন। আইয়ুব বাচ্চু দেহ রাখলেন ৫৬ বছর বয়সে; এবং বিশ্লেষণ করে মনে হলো, জগতে তার করণীয় আর বাকি ছিলো না তেমন হয়তোবা। সামিয়া জামান তার একটা ইন্টারভিউ করেছিলেন, সেখানে তিনি বলেছিলেন- আমার কোথাও চলে যেতে ইচ্ছা করে। একই ইচ্ছা হয়তোবা জেমসেরও করে। এখনো কনসার্টে জেমস যেসব গান করেন, কিংবা আইয়ুব বাচ্চু কনসার্ট বা টেলিভিশন লাইভ প্রোগ্রামে যেসব গান করতেন, বৃহত্তর অংশই ২০০০ পূর্ব গান; ২০০৫-০৬ এর পরের গান খুবই কম; ২০১০ এর পরের গান নেই-ই বলতে গেলে। জেমসের এখনকার কনসার্ট দেখলে মায়া লাগে, গলায় সেই জোর নেই; আইয়ুব বাচ্চুর কনসার্টেও একই অনুভূতি হতো, যে গলায় উত্তাল হয়েছিলো আমার শৈশব-কৈশোর, সেই গলায় কেউ যেন চুপি চুপি থার্মোমিটার বসিয়ে দিয়েছে/দিয়েছিলো।
ইন্টারটেইনারদের কি তবে আত্মহত্যা করা উচিত? কক্ষণো নয়, কিন্তু জৌলুস হারানো সেনাপাতি যখন ঘোড়ায সওয়ার হওয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে, সেই ব্যথার ভার বইতে পারে কে? ফলে সাধারণ আটপৌরে জীবনচিত্র দিয়ে আমরা আইয়ুব বাচ্চুকে বুঝতে পারবো না।
আজম খানের পরবর্তীতে ৯০ এর দশকে অসংখ্য ব্যান্ডের উন্মাদনা ছিলো। বিভিন্ন নব্য ব্যান্ডের বাইরেও মাইলস, ফিডব্যাক, রেঁনেসা, আর্ক, সোলস দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিলো, কিন্তু জনপ্রিয়তায় আইয়ুব বাচ্চু আর জেমসের বাকিদের ছাপিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে কোন্ বিষয়গুলো ভূমিকা রেখেছিলো তা আজও অস্পষ্ট লাগে। প্রিন্স মাহমুদ, লতিফুল ইসলাম শিবলী, মারজুক রাসেল, দেহলভী, তরুণ মুন্সী প্রমুখ গীতিকারের গান, নাকি তাদের স্বকীয় পরিবেশনা, নাকি কম্পোজিশন? এটা ভীষণরকম গোলকধাঁধা এক।
নাকি তারা দুজন ব্যান্ডঘরানার গান করলেও আদতে ব্যান্ডে বিলং করেননি কখনো, সোলো আর্টিস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, এটাই কারণ? ডটগুলো মেলে না। যেমন, এসআই টুটুল এককালে এলআরবিতে কী-বোর্ডিস্ট ছিলেন, হঠাৎ ২-১টা গান করতেন কনসার্টে; তখন কেউ কি তাকে সেভাবে চিনতো যতটা তাকে এখন চেনে গায়ক হিসেবে। কিংবা এলআরবির বেইজ গিটারিস্ট স্বপন, যিনি ব্যান্ডের ফাউন্ডিং মেম্বার এবং এখনো যুক্ত আছেন লাইন আপে এতো অদল-বদল সত্ত্বেও, তার নাম জানে কতজন? জেমস যতদিন ফিলিংস ব্যান্ড চালাতেন ততদিন পর্যন্ত আসাদ এবং ড্রামার ফান্টি কিছুটা হলেও আলোচনায় ছিলেন, কিন্তু ফিলিংস যখন ‘নগর বাউল’ হয়ে গেলো, এটা কি আর ব্যান্ড থাকলো, ‘নগরবাউল’ তো একজন ব্যক্তি জেমসকে নির্দেশ করে।
অন্যদিকে তুমুল জনপ্রিয় মাকসুদ ফিডব্যাক ছেড়ে দেয়া সত্ত্বেও ফিডব্যাকের মৌসুমী, মেলায় যাইরে গান এখনো শোনা যায়। ওয়ারফেইজ থেকে সঞ্জয়, বাবনা, বালাম, মিজানের মতো ভোকাল চলে গেলেও অবাক ভালোবাসা, হতাশা, অসামাজিক গানে কোনো প্রভাব পড়ে না। এমনকি মাইলস থেকে শাফিন আহমেদ চলে গেলেও মাইলস থাকে মাইলসই।
কিন্তু আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর এলআরবি ব্যান্ডে ভোকাল হিসেবে এখন যাকেই আনা হোক, বিভিন্ন অজনপ্রিয় শিল্পী কনসার্টে যেমন জেমস-আইয়ুব বাচ্চুর গান কভার করে, সে গাইলেও সেটাকে কভার সঙ হিসেবেই দেখবে দর্শক। গানটা এলআরবি এর না হয়ে আইয়ুব বাচ্চুর গান হয়ে থাকবে। নগরবাউলের ক্ষেত্রেও পরিণতি ঘটবে অভিন্ন।
আইয়ুব বাচ্চু তবে কেন এতোটা জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন? ডাবল অ্যালবাম রিলিজ দিয়ে যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, সেজন্য? গান দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ার সাথে সিঙ্গেল-ডাবল-মিক্স অ্যালবামের কোনো যোগসূত্র নেই আদতে। আমার কেন আইয়ুব বাচ্চুকে ভালো লেগেছিলো? ফিরিয়ে দাও, মৌসুমী, মেলায় যাইরে গানগুলো শুনেছি, ভালোও লেগেছিলো, কিন্তু যখনই ‘কোনো সুখের ছোঁয়া পেতে নয়, নয় কোনো নতুন জীবনের খোঁজে, তোমার চোখের তাকিয়ে থাকা আলোকিত হাসি নয়’ কথামালার গান শুনি, গানের চাইতে গান শুরু হওয়ার কম্পোজিশনটা বেশি আকৃষ্ট করে, কিংবা ‘হাসতে দেখো, গাইতে দেখো’ গানটা শুনতে গেলে শুরুর কম্পোজিশনটা আমার কিশোর মনকে থামিয়ে দেয় সাময়িক, কিংবা জেমসের ‘দুঃখিনী দুঃখ করো না’ শোনার সময়ও কম্পোজিশনের মাধূর্য আকৃষ্ট করে আলাদাভাবে।
লিরিকে কি খুব বেশি তারতম্য ছিলো অন্য ব্যান্ডগুলোর সাথে? মাইলসের ‘পলাশীর প্রান্তর’ ‘পাহাড়ি মেয়ে’ এর লিরিক কি ‘সেই তুমি’, ‘রূপালী গিটার’ এর চাইতে খুব বেশি পিছিয়ে?
তবু ঢাকা পেরিয়ে মফঃস্বল বা গ্রামের তরুণদের কাছেও যে আইয়ুব বাচ্চু-জেমস পৌঁছে গিয়েছিলো, তার কারণ কী আসলে? বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো নামী ব্যান্ডের কনসার্ট দেখারই সুযোগ হয়েছে; একজন আইয়ুব বাচ্চু বা জেমস কনসার্টে যতখানি করতালিতে-উদ্দামতায় মুখরিত করতে পারেন, আর কোনো ব্যান্ড তা পারেনি কেন?
আইয়ুব বাচ্চুকে আমরা ঠিক কী কারণে স্বতন্ত্র বলবো? গিটারের জাদুকর বলছি, কিন্তু পরক্ষণেই ওয়ারফেইজের কমল কিংবা নিলয় দাসের নাম মাথায় চলে আসছে। গিটারিস্ট হিসেবে কমলের যে সুখ্যাতি, আইয়ুব বাচ্চু কি সে তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে ছিলেন? বলা মুশকিল। সোলস এর মতো ব্যান্ডে তিনি ১০ বছর লিড গিটারিস্ট ছিলেন, তখনো তিনি গায়ক এবি হননি। তার কনসার্টগুলোতেও কেবল গান পরিবেশনা থাকতো না, গিটারের কারুকার্য থাকা ছিলো অবধারিত। একবার আরটিভির এক লাইভ অনুষ্ঠানে সোলস এর পার্থ বড়ুয়া চলে এসেছিলেন, এলআরবি গান পরিবেশন করছিলো, সঞ্চালক ছিলো শিল্পী জুয়েল। আইয়ুব বাচ্চুকে দেখিয়ে পার্থের প্রথম কথাটিই ছিলো- ‘এই মানুষটি আমাকে গিটার শিখিয়েছেন, উনি যখন বলছেন, আমাকে আসতেই হবে’। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আইয়ুব বাচ্চু যদি গায়ক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি না পেতেন, তার গিটারিস্ট পরিচয়টা কি এভাবে হাইলাইটেড হতো, যেমনটি এখন হয়? ব্যান্ড মিউজিক ঘরানার মানুষ বাদে গিটারিস্ট হিসেবে কমলের কদর কি আসলেই সেভাবে আছে? অথচ যারা মিউজিকের সাথে সংশ্লিষ্ট, প্রায় প্রত্যেকেই গিটারিস্ট কমলের ক্যালিবার সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল!
আবার যখন ভোকাল প্রসঙ্গ আসে সেখানে অবধারিতভাবেই জেমসের নাম চলে আসে। এতোটাই অঙ্গাঙ্গিভাবে আসে, আলাদাভাবে জেমস বা আলাদাভাবে আইয়ুব বাচ্চুর নাম বলাটা কঠিনই। আইয়ুব বাচ্চু-জেমস, এভাবে বলতে বলতে বই-টই, খেলা-টেলা প্রভৃতি সমোচ্চারিত শব্দের মতো হয়ে গিয়েছিলো বিষয়টা। সেই আইয়ুব বাচ্চুর প্রয়াণের দিনে বরগুনায় কনসার্টরত জেমস যখন গিটার বাজাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন, কিংবা গান শেষে দর্শকদের বলেন ‘তোমরা আমাকে ৫মিনিট সময় দাও’- আরো তীব্রভাবে বোঝা যায়, সমোচ্চারিত শব্দের উপসংহার পর্ব।
জেমস ছাড়াও ভোকাল হিসেবে মাকসুদের নাম আসে, শাফিনের নাম আসবে, হাসানের নামও বাদ দেয়া যাবে না। আর ঢাকার তরুণদের কাছে ওয়ারফেইজের সঞ্জয়ের নামও থাকবে।
ফলে গিটারিস্ট, ভোকালিস্ট কোনোটাতেই তার নিরঙ্কুশ আধিপত্য নেই, সাদা চোখে এমন উপসংহারেই আসবেন অনেকে। কিন্তু এর সাথে যদি যোগ করা হয় তিনি একজন সুরকার এবং কম্পোজার- তাহলে তাকে কিন্তু একজন কমপ্লিট মিউজিশিয়ান বলতে কোনো বাধা থাকে না, যে জায়গাটায় তার সাথে তুমুল কম্পিট করার মতো কেউ নেই। কম্পিট করতে পারে অনেকেই কিন্তু সেটা তুমুল পর্যায়ের হবে না। এখানেই তিনি অনন্য।
একজন কমপ্লিট মিউজিশিয়ানের জীবন যেরকম হওয়া উচিত হয়তোবা তার লাইফস্টাইলে আরো বেশি কিছু ছিলো। যেমন, বাংলা সিনেমায় প্লেব্যাক করা। এটাকে অনেকেই তার স্খলন হিসেবে দেখে। তিনি একজন পেশাদার মিউজিশিয়ান, একটু বেশি উপার্জনের আশায় তিনি যদি প্লেব্যাকে গাইতে যান, আমার তাতে সমস্যা লাগে না। তাছাড়া তিনিই কি একমাত্র ব্যান্ডশিল্পী যিনি প্লেব্যাক করেছেন? তারও আগে প্লেব্যাক করেছেন মাকসুদ ( ও ও রুবি বলো না তুমি বলো না, কেন যে তুমি মোর সাথে করেছো এতো ছলোনা। কিংবা তোমাকে দেখলে একবার, মরিতে পারি শতবার, তুমি তো নও কভু হারাবার। কিংবা ঘর ছেড়েছি দুজনে, শুধু প্রেমেরই কারণে), প্রমিথিউসের বিপ্লবও প্লেব্যাক করেছেন। জেমসের মিরাবাঈ, পথের বাপই বাপরে মনা সিনেমায় ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া শুধুমাত্র সিনেমার উদ্দেশ্যই গাওয়া গান আছে তার বেশ কয়েকটা ( গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়া, আসবার কালে আসলাম একা, তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম)
কিন্তু তাদের কারো প্লেব্যাক নিয়ে ততটা কথা হয় না যতটা হয় আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ কিংবা ‘আম্মাজান আম্মাজান আপনি বড়োই মেহেরবান’ জাতীয় গানগুলো শোনা নিয়ে। বাংলা সিনেমার স্ট্যাটাস নেই বা তারুণ্যের সাথে যায় না, এমন কোনো স্ট্যান্ট, নাকি বাকিদের তুলনায় তিনি প্লেব্যাকে সফলতা বেশি পেয়েছিলেন- কোনটা যে প্রধান কারণ আমার বোধগম্য নয়। প্লেব্যাক সিংগিং যদি ক্ষ্যাত হয়, তাহলে সৈয়দ আব্দুল হাদী, এন্ড্রু কিশোর নামের দুজন শিল্পী বাংলাদেশের ইতিহাস থেকেই স্রেফ লোপাট হয়ে যাওয়ার কথা।
অন্য একটা দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখা যেতে পারে বিষয়টা। জেমস যখন গ্যাংস্টার সিনেমায় গান করেন, তিনি হয়ে উঠেন আন্তর্জাতিক তারকা, অথচ সেটাও তো প্লেব্যাক সিংগিংই করছেন। নাকি হিন্দি সিনেমা অনেক বেশি গ্ল্যামারাস হওয়ায় সেটা জেমসকে আরো জাতে উঠালো?
দর্শকশ্রোতার এই উদ্ভট মানসিকতার ব্যাখ্যা দাঁড় করানো দুরূহ। তাদের এলার্জিটা কি বাংলা সিনেমার মানহীনতা, নাকি সিনেমায় গান গাওয়াটা, তা সুস্পষ্ট নয়।
যে সময়টাতে আইয়ুব বাচ্চু সিনেমায় গান শুরু করেছিলেন তখন অডিও বাজারে তার অবস্থান কেমন ছিলো সেটাও একটা বিবেচ্য বিষয় হতে পারে। সাকিব বা মাশরাফি যেমন ইউক্যাশ-বিকাশের বিজ্ঞাপন করেন, আইয়ুব বাচ্চুর প্লেব্যাক করাটাকেও আমি সেরকম ক্ষ্যাপ মারা বা পুরোপুরি কমার্শিয়াল দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েই বিচার করি। একজন জনপ্রিয় ব্যান্ডশিল্পী যদি সিনেমায় গায় তার শ্রোতাদের একটা অংশ সিনেমামুখী হতে পারে, এরকম কোনো স্ট্র্যাটেজি থেকে তাকে সিনেমায় গাওয়ানো হয়েছিলো কিনা সেই মীমাংসাও অবান্তর এখন।
ব্ল্যাক ব্যান্ডের একদার ভোকাল পরবর্তীতে সোলো আর্টস্ট তাহসান মডেলিং+ নাটকে অভিনয় করেন, সোলসের প্রধান ভোকাল পার্থ বড়ুয়া নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি আয়নাবাজির মতো কমার্শিয়াল সিনেমাতেও অভিনয় করেন, গায়ক আগুনও অনেকদিন ধরেই অভিনয়ের সাথে জড়িত, এমনকি দলছুটের বাপ্পা মজুমদার, ক্রিকেটার আশরাফুল এরাও নাটাকে অভিনয় করেছেন। এগুলো কখনো করতে হয় টাকার প্রয়োজনে, কখনোবা অনুরোধে ঢেকি গিলতে। একজন মিউজিশিয়ান, যার স্টুডিওর নাম এবি কিচেন, (নামের ‘কিচেন’ শব্দটাতে বেশি জোরারোপ করতে চাই। অর্থাৎ গানটাকে তিনি খানা-খাদ্যের জায়গায় নিয়ে গেছেন। মানে গানেই বাঁচেন, গানেই তরতাজা হন), তিনি গান গাইবেন এটাই তো স্বাভাবিক; প্লাটফরম যেটাই হোক। গানের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন কিনা সেই নৈতিক প্রশ্নটা করা যেতে পারে বরং। কিন্তু ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ আর ‘মেয়ে তুমি কি দুঃখ চেনো চেনো না, তবে চিনবে কেমন করে এই আমাকে’ গান দুটি দুই ঘরানার হলেও এর গায়কের আন্তরিকতাতে কোনো কমতি পাই না আমি; একই লাগে।
বরং বিরক্ত লাগতে পারে অনুরোধে ঢেকি গেলার প্রাদুর্ভাবে। বাংলা ব্যান্ডে সবচাইতে জনপ্রিয় গানগুলো যেমন আইয়ুব বাচ্চু-জেমসের, অনুরূপভাবে বাজে লিরিকের গানের দিক থেকেও এই দুজন যে কারো চাইতে এগিয়ে থাকবেন বলেই বিশ্বাস আমার। ‘আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেবো আকাশে’ , কিংবা ‘দেওয়ানা মাস্তানা, রাস্তা ছেড়ে যাবো না’ জাতীয় গানগুলো শুনলে কিছুটা আক্রোশ তৈরি হয়েই যায়। কেন তারা আরো বেশি চুজি হবেন না? যে কণ্ঠে আমরা ‘একদিন ঘুম ভাঙ্গা শহরে’ কিংবা ‘কবিতা তুমি স্বপ্নচারিণী হয়ে খবর নিয়ো না’ শুনি, তারা তো লিরিক দেখলেই বুঝতে পারেন, তবু কেন এতো ঢেকি গেলা? নাকি ঢেকির সংখ্যা এতো বেশি হয়ে গিয়েছিলো যে কিছু না গিলে উপায়ও ছিলো না আসলে।
মানুষ দেহত্যাগ করলে তার গুণকীর্তন করতে হয়, দোষত্রুটি ক্ষমা করতে হয়। কিন্তু ঐতিহাসিক চরিত্রদের ক্রিটিকালি না দেখলে সেখানে ওভারগ্লোরিফাইং প্রবণতা চলে আসে, যা মানুষটি সম্বন্ধে কোনো মানিবক ইমপ্রেসন তৈরিতে বাধা দেয়, সে হয়ে উঠে ঐশ্বরিক সত্তা। যেহেতু মিউজিক তার ক্যারিয়ার/জীবিকা সবকিছু, ক্যারিয়ার মেইনটেইন করতে গিয়ে অন্য পেশার মানুষেরা যেরকম ডিপ্লোম্যাটিক-স্ট্র্যাটেজিক হয়, তিনিও তেমনটা করেছেন। সেগুলো সব আপনার-আমার পছন্দ না-ই হতে পারে, তবে এও মনে রাখা বাঞ্ছনীয় তার সাথে আমাদের কোনো প্রফেশনাল কম্পিটিশনের সম্পর্ক ছিলো না, কোরাম মেইনটেইনের দায় ছিলো না, যে কারণে অর্থহীনের সুমন কিংবা মাইলসের হামিন-শাফিন তাকে যেভাবে দেখবেন, আমাদের সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ থাকে না কোনোভাবে। তবু আমরা অতিকৌতূহলবশত মানুষের ভালো-মন্দ মাপতে বসি; সেলিব্রিটি হওয়ার অনেক বিড়ম্বনার মধ্যে এটাও একটা।
সর্বশেষ ১০-১১ বছরে তার কোনো গান কেন আলোড়ন তুলতে পারলো না এটা খুব বেশি অবাক করে না আমায়। একজন সোলো পারফরমার ৭১-৭৯ বয়স পর্যন্তও নির্বিঘ্নে গাইতে পারেন, সৈয়দ আব্দুল হাদী এই ৮০ বছর বয়সেও টিভি প্রোগ্রাম করতে পারেন। কিন্তু ব্যান্ডসংগীতের ধরন আলাদা। এখানে প্রচুর এনার্জি খরচ হয়, যে কারণে বয়স কিছুটা বাড়লেই ফিটনেস ধরে রাখা বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠে। তাছাড়া ড্রাগসের প্রভাব তো থাকেই। যে কারণে শরীর বিদ্রোহ করে বসে। ২০০৯ সালেই তার হার্টে রিং পরানো হয়েছিলো, সাধারণ কেউ হলে ডাক্তাররা চলা-ফেরায় কত বিধি-নিষেধ আরোপ করতেন; অথচ হৃৎপিণ্ডের মাত্র ৩০ শতাংশ কার্যকারিতা নিয়েও মৃত্যুর মাত্র ২দিন আগে কনসার্ট করেছেন তিনি। হয়তোবা শরীর সাঁয় দিচ্ছে না, তবু দর্শকের মোহ উপেক্ষা করার শক্তি পাওয়া যায় না আসলে। উপার্জনের মাধ্যমও তো এটাই। এলআরবির ভোকাল হিসেবে অন্য কেউ প্রক্সি দিবে, এটাও তো দর্শকরা মেনে নিবে না। সেই দাবি মেটাতে গিয়েই দাবির কাছে হেরে যেতে হলো।
এখনকার সময়ে যদি ‘সেই তুমি’ গাওয়া হতো সেটা কি ভুবনভুলানো জনপ্রিয়তা পেতো? উত্তর আসবে, যদি মিউজিক ভিডিওটা হিট হয়, তাহলে সম্ভাবনা আছে, নয়তো নয়। পাইরেসির কারণে অডিও ইন্ডাস্ট্রি অনেকদিন আগেই ধ্বসে পড়েছে, এরপরে টেকনোলজিকাল শিফটিংয়ে গান এখন শোনার চাইতে দেখার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। এই সময়ের তরুণ-তরুণীর চাহিদা পূরণের সাধ্য আইয়ুব বাচ্চু-জেমসের থাকার কথা নয়. তারা বরং তাদের সময়কে প্রতিনিধিত্ব করেন সেটাই অধিক সম্মানীয়।
তাছাড়া টানা ২৫-২৬ বছর জনপ্রিয়তা ধরে রাখাও একটু অস্বস্তিকর। নতুন কোনো ব্যান্ড কেন কনসার্ট বা লাইভ টিভি প্রোগ্রামে আইয়ুব বাচ্চু-জেমসের চাইতে বেশি পারিশ্রমিক/সম্মানি আদায় করতে পারলো না, এটা কি নতুন ব্যান্ডদলের ব্যর্থতা, নাকি নতুনের প্রতি চিরন্তন অস্বস্তি? তাই যদি হবে আইয়ুব বাচ্চুরাও তো তরুণ ছিলো এককালে? তারা আইস ব্রেকিংটা করেছিলো কোন্ তরে?
কিংবা রাজনৈতিক কারণেও, ওপেন এয়ার কনসার্টের সংখ্যা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। তার চাইতে টেলিভিশনে লাইভ প্রোগ্রাম বেশি ট্রেন্ডি এখন। তবু সেখানে সোলো যে কোনো আর্টিস্টের চাইতে এখনো একজন জেমস বা আইয়ুব বাচ্চুর ডিমান্ড বেশি কেন? অথচ, ইউটিউবে যেসব মিউজিক ভিডিও দুর্দান্ত জনপ্রিয় হয় সেগুলো প্রায় সবগুলোই সোলো আর্টিস্টের গাওয়া। ইউটিউব ভিউয়ার শ্রেণি তবে কারা?
ডি রকস্টার নামে একটা প্রোগ্রাম বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। আইয়ুব বাচ্চু সেটার প্রমোশনে একটা লাইন বলতেন- ‘আওয়াজ পাঠাও’।
লাইনটা খুবই সিম্বলিক লাগে। তিনি যে ভবিষ্যত জীবনে এতো জনপ্রিয় গায়ক হবেন, তা কি তিনি আঁচ করতে পেরেছিলেন সোলসে লিড গিটারিস্ট থাকাকালে? এক দশক গিটারিস্ট হিসেবে কাটানোর পর ঠিক কী কারণে তার নিজে গায়ক হওয়ার সাধ জাগলো এটাও একটা অদ্ভুত পট পরিবর্তন লাগে। সোলসের বহু জনপ্রিয় গানের সুরকারই তিনি, অথচ সোলস ছেড়ে যখন এলআরবি গড়লেন গানের প্যাটার্ন পুরোপুরি বদলে গেলো। এই ঘরানার গানই কি তার প্রার্থিত ছিলো, যা সোলস এর রুচির সাথে মিলছিলো না, নাকি গিটারিস্ট হিসেবে পর্যাপ্ত লাইমলাইটে না আসতে পারার ক্ষোভ কিংবা হতাশা থেকে পরবর্তীতে এমন এক ব্যান্ড বানানো যেখানে মানুষ কেবলমাত্র তাকেই চিনে, ব্যান্ডের আলাদা গুরুত্ব বহন করে কম? তিনি কি এটাই চেয়েছিলেন যে সমস্ত মনোযোগ কেবলমাত্র তার দিকে টেনে নিবেন? এসআই টুটুল ব্যান্ড ছাড়ার পর এলআরবিতে আর কোনো কী-বোর্ডিস্ট আসেনি; এটাও কি সেই মনোযোগপ্রিয়তারই বহিঃপ্রকাশ? টুটুল যদি নিজে গায়ক ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা না করে অন্য কোনো ব্যান্ডে কী-বোর্ডিস্ট হিসেবে চলে যেতো, তবুও কি কী-বোর্ডিস্ট ফাঁকা থাকতো এলআরবিতে? অত্যন্ত জটিল প্রশ্ন!
আইয়ুব বাচ্চু একজন পারফেকশনিস্ট মানুষ ছিলেন। বিভিন্ন মানুষের মুখে তার সম্বন্ধে যা শুনতে পাই, তাতে এই বিশ্বাস প্রগাঢ় হয় আরো। প্রস্থানের ক্ষেত্রেও আমি বলবো পারফেক্ট টাইমিং; ডাই লাইক এ হিরো, নেভার লাইক এ বারডেন……
ঘুমন্ত শহরে রূপালী রাতে
স্বপ্নের নীল চাদর বিছিয়ে
কষ্টের শীতল আবরণ জড়িয়ে
আমি আছি আছি তোমার স্মৃতিতে,
ভালোবাসার সরল বাঁধন ছিঁড়ে
চলে গেছ এই হৃদয়টাকে ভেঙে
তুমি আমি একই শহরে
তবুও একাকী ভিন্ন গ্রহে!