এক কালে সর্বভূক পাঠক ছিলাম বয়সের সংগে সব রকম বই পড়ার আগ্রহ , সময়ে ছেদ পড়েছে । বৈষয়িক হিসাব কিতাব গুরুত্ব পাওয়ার পরে পছন্দের বই ও দুই ধারায় ভাগ হয়েছে পয়সা খরচ করে পড়তে ইচ্ছুক আর মুফতে (পিডি এফ অন লাইন এপসে ) পড়তে ইচ্ছূক ।
সম্প্রতি পড়া প্রথম ঘরানার একটি বই
হিউম্যান ল্যাব (মৌন মানুষ মানসে) – মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয় ;বইটির ঠিক পাঠ প্রতিক্রিয়া শুধু নয় আসলে বইটি কেন পাঠ করা যেতে পারে সে বিষয়ক একটি প্রস্তাবনা লেখাটা জরুরী মনে করছি ।
ক . কেন পড়বেন :
১. “প্রচ্ছদশিল্পীর বক্তব্য” থেকেই শুরু করি
“ তাহলে, এই বইয়ের পাঠক কারা ? যারা ব্যবসা করে , তারা বিজনেস ফিকশন পড়েন না আর সাধারনত যারা বিজনেস ফিকশন পড়েন তারা ব্যবসা করেন না ।তবে শেকল ভাংগার সাহস যার ভিতরে বিদ্যমান , এই বই তাকে উৎসাহী করবে বলে আমি ধারনা করি । আপনিই ভাল জানেন আপনার অবস্থান কোথায় ………… “
সুতরাং নিজের অবস্থান জানার জন্য পড়তে পারেন
২. পৃষ্ঠা ১৫৮ “ আপনাদের পাঠক-ইগো আহত হলো ? আপনার কি মানুষ আদৌ; াামার দৃষ্টিতে আপনার হলেন ইগোর কারখানা । শার্টের পকেটে , প্যান্টের জিপারে , ওড়নার আড়ালে যত্রতত্র পুষে রাখেন অবিনাশী ইগো;”
কি এমন “গাছের গোটা ” হয়েছেন লেখক সেটা জানতে , কি এমন লিখেছেন সেটা পড়তে এবং একটা দাত ভাংগা জবাব দিতে দুনিয়ার সকল পাঠককূল বইটি পড়তে পারেন ।
৩. পৃষ্ঠা ৭০ :
“ প্রায় প্রত্যেক কোম্পানীতেই খাস চাকর প্রকৃতির কিছু মানুষ থাকে বুঝলে। এদের যোগ্যতা খুবই কম, তবু তারা বসের প্রিয়ভাজন, কারণ পারলে তারা রাতেও অফিসে থেকে যায়, রাত ৮টা-৯টা বেজে যাবে, তবু বের হওয়ার লক্ষণ নেই।বেশিরভাগ কোম্পানীতে বস যেহেতু অফিসেই ঢোকে দুপুরের পরে, ইমপ্লোয়ি যখন অফিস টাইম শেষে ঘরে ফিরতে উদ্যত হয়, তার মধ্যে খচখচানি কাজ করে। সে ভাবে, ৬টা বাজামাত্র বাসায় যাওয়ার কী দরকার, কোম্পানীর প্রতি কোনো ফিলিংসই নেই। পক্ষান্তরে, যে ইমপ্লোয়ি সন্ধ্যার পরেও অফিসে থাকে, মালিকপক্ষ মনে করে সে ফ্যামিলি টাইম স্যাক্রিফাইস করে অফিসে রয়ে গেছে। কিন্তু এটা ভাবে না, নির্ধারিত সময়ের পরেও সে অফিসে কেন থেকে যাবে, এতে ইলেকট্রিসিটি বিল এবং এসির অপচয় হচ্ছে এটাও কি মাথায় আসে না? নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করাও যে প্রশংসনীয় যোগ্যতা এটা ভুলে যায় বেমালুম। ফলে অফিসটা আর অফিস থাকে না, ইডিয়টখানায় রূপান্তরিত হয়।”
আমি জানি বেসরকারী অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাই খুশি হবেন নিজেদের মনের কথা লিখেছেন লেখক এই ভেবে , কিন্তু একটু এগিয়ে পৃষ্ঠা ৭১ এ পাবেন :
“ তুমি আসলে কাকে ইডিয়ট বললে; সিস্টেম, নাকি মানুষকে? আমি যেহেতু অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশের মার্কেটে কনসালটেন্সি করে টিকে থাকার চেষ্টায় আছি, আমি জানি বাংলাদেশের বেশিরভাগ বিজনেসই আসলে খুব কষ্টে চলে; পরের মাসে ইমপ্লোয়ি সবার বেতন দিতে পারবে কিনা এই অমানুষিক চাপ নিয়েই উদ্যোক্তাকে দিন পার করতে হয়। তুমি যে বললে, মূল উদ্যোক্তা অফিসে আসে দুপুরের পরে, সে থাকে কোথায়? কোনো না কোনো প্রজেক্টের খোঁজে। তুমি বড়ো কোম্পানী বা সরকারী অফিসে যদি প্রজেক্ট করতে চাও, সেই নবাবফৌজেরা কোম্পানীর মালিক ছাড়া কারো সাথে কথা বলবে না। ফলে উদ্যোক্তাই প্রধান সেলস পারসনের কাজ করে। তারা মনের দিক থেকে অসহায় বোধ করে, কোনো ইমপ্লোয়ি যদি বেশি সময় অফিসে থাকে, তাদের মনে হয় যুদ্ধটাতে সেও অংশ নিচ্ছে বাড়তি লোড নেয়ার মাধ্যমে। এখান থেকে মেন্টাল এটাচমেন্ট এবং ডিপেন্ডেন্সি তৈরি হয়। কেউ যদি ঘড়ি ধরে অফিস করে তার সাথে কমার্শিয়াল রিলেশনের বাইরে মানসিক যোগাযোগটা গড়ে উঠে না ”
পুরো বই জুড়ে এরকম কয়েনের দুপিঠই দেখানো হয়েছে । লেখক অবশ্য কোন সিদ্ধান্ত দেন নি । ডট গুলো দিয়েছেন , ডট কানেক্ট করে হনুমান না ডায়নোসার আকবেন সেটা পাঠকের বিচার বিবেচনা । (আর কোটেশন বাড়াতে চাই না , অনেকদিন পর কোন বই প্রায় পুরোটা দাগিয়ে শেষ করেছি। )
৪. নন প্রফিট সেক্টর এনজিওতে প্রায় ৫ বছর আর ব্যাংকে ৮ বছরের অভিজ্ঞতা সব মিলিয়ে এইচ আর , সিস্টেম , উদ্যোক্তা এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন বিষয় সর্ম্পকে যে সব ইনসাইট তৈরি হয়েছিল এবং যে গুলো পাবলিকলি বললে চাকরী থাকবে না সেরকম অনেক কিছুই লেখক যথাযথ ভাবে তুলে ধরেছেন বইয়ে । সুতরাং উদ্যোক্তা , সি ই ও, এইচ আর , ক্যারিয়ার কাউনিসলার , মার্কেটিয়ার সবাই পড়তে পারেন ।
এর বাইরেও “ সফলতা”, “ জীবনের মানে ” র মতো জটিল বিষয় যারা খুজে বেড়াচ্ছেন , ফিলসফি নিয়ে আগ্রহ আছে পড়তে পারেন । তবে মনে রাখবেন লেখক চামুচে তুলে খাওয়ানোতে বিশ্বাসী না সুতরাং “ইহাকে উহা বলে” টাইপের কিছু পাবেন না , চিন্তার নতুন এংগেল পাবেন ।
খ. কি বিষয়ক বই :
১. বইটা একটা বিজনস ফিকশন । কিন্তু আলোচনা আবর্তিত হয়েছে বিজনেস ফিলসফিকে ঘিরে । উদ্যোক্তা , বিজনেস প্রসেস , মার্কে টিং , রেভেনিউ জেনারেশন , সিভি থেকে হায়ারিং , সবই এ বইয়ে উঠে এসেছে ।
২. এর পাশাপাশি কিছু নতুন মৌলিক কিংবা প্রায় মৌলিক টার্মস বোনাস । যেমন ফিট আর আন ফিট এর পাশাপাশি মিসফিট :
লেখকের ভাষায় : “মিসফিট ব্যাপারটা আসলে কী ? এটা এক ধরনের অনুভূতি , যখন একজন তার সমাজ , তার সময়, সিস্টেম , সোশ্যাল কনটেক্সট, গড় মানুষের আচরণ -কোনো কিছুর সঙ্গে নিজেকে রিলেট করতে পারে না , সবকিছুকে মিনিংলেস ও স্থুলবুদ্ধির মনে হয়” পৃষ্ঠা ২২২ তার পাশাপাশি মিসফিটের ৩ টা ধরন ও তুলে ধরেছেন ।
৩. হলিউডি মুভির একটু পরিচিত পরিচালকদের যার দুই একটা মুভি হিট হয়েছে তাদের দেখা যায় নতুন মুভির শুরুতে বা ট্রেলারে লেখতে From the Director of X, Y Z . এটা পার্সেোনাল ব্রানিডং এর একটা কৌশল । পরে যখন পরিচালক বিখ্যাত হয়ে যায় তখণ এটা উল্টা হয় তখন সবাই বলে কুবরিক এর মুভি , কিংবা স্পিলবার্গের মুভি ।
লেখকদের ক্ষেত্রে ও তাই নন্দিত নরকের লেখক হুমায়ূন আহমেদ থেকে কিংবা হুমায়ূন আহমেদের বই এর জার্নি টা ও সে রকম । এই আলাপটা তোলার কারন হলে আমার সাথে এই লেখকের পরিচয় তার একটি নামহীন বই আছে , সেটির মাধ্যমে । যে বইটিকে আমার মনে হয়েছে ব্যাক্তি মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয় এর বিজনেস কার্ড , পার্সোনাল ব্যান্ডিং
টুলস ( লেখক অবশ্য এটা কোথায় ও বলেন নি ) সে দিক থেকে তিনি বলেই নিয়েছেন
হিউম্যান ল্যাব (মৌন মানুষ মানসে) তার উদ্যোগ Human Lab 777 এর ব্রোসিউর , সুতরাং পাঠক বইটি পড়লে বই তো পেলেন তার প্রতিষ্ঠান থেকে কি ধরনের সেবা পেতে পারেন তারও একটি ধারনা পাবেন । এ ক্ষেত্রে পাঠক ভেদে লক্ষ্য ও উপলক্ষ্য (বই পাঠ এবং প্রতিষ্ঠানের সর্ম্পকে জানা ) ভিন্ন হওয়ায়ই স্বাভাবিক ।
গ. হোচট : জগতের কোন কিছুই আসলে নিখুত নয় । বইটি পড়তে গিয়ে হোচট খাবার মতো বিষয় মনে হয়েছে :
সেলস , মার্কেটিংএর বেসিক কিছু টার্মিনোলজি না জানা থাকলে মাঝে মাঝে একটু হোচট খেতে হতে পারে (অবশ্য গুগল সমাধান )
কোন , কোন জায়গায় ফিকশনের ক্যারেকটার আর উত্তম পুুরুষ লেখকের বক্তব্যের ট্রানজিশন খেই হারিয়েছে বলে মনে হয়েছে ।
আর কিছু জিনিস আমি নিশ্চিত নই লেখকের আগের নামহীন বই পড়া না থাকলে পাঠক হুট করে রিলেট করতে পারবে কীনা