কিছুক্ষণ আগে হিউম্যান ল্যাব (মৌন মানুষ মানসে) বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রকাশককে ইমেইল করে দিলাম। পেজসংখ্যা ২০৫, শব্দসংখ্যা ১০০২২৩; টার্গেট ছিলো ১১ই মার্চ, একদিন আগেই লক্ষ্যপথে পৌঁছে যাওয়ায় স্বস্তি বোধ করছি। উনিশ, তেইশকে সাথে নিয়েই আনন্দটা উদযাপন করলাম। ছবি এডিটের দায়িত্বে ছিলো আরিফা।

আমার বইটাকে বলা যেতে পেরে কাউন্টার ন্যারেটিভ। সাইন্স ফিকশনের মতো বিজনেস ফিকশনও লেখার একটি ধারা। বাংলাদেশে মার্কেটিংয়ের বেশ কয়েকটি বই ইতিমধ্যে লেখা হয়েছে, বিজনেস ফিকশন লেখা হয়েছে কিনা বলতে পারবো না৷

তবে বিজনেস ফিকশন বলা হলেও এটা আদতে বিজনেস ফিলোসফিকে কিছুটা গল্পের আদলে উপস্থাপন। ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট, ক্লাইম্যাক্স বা স্টোরিলাইনকে ন্যূনতম গুরুত্ব দিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি নির্মাণেই যাবতীয় প্রয়াস বিনিয়োগ করার চেষ্টা করেছি। এটা হতে যাচ্ছে আমার ৬ষ্ঠ বই, তবে পছন্দের ক্রম বললে নামহীন আর বীক্ষণ প্রান্তের মাঝামাঝি যে দেড়তম অবস্থান সেখানে রাখবো এটিকে।

বাংলাদেশের মার্কেটের চরম ট্রাজেডি হলো এখানে লেখককেই নিজের বইয়ের মার্কেটিং করতে হয়। নিজের মার্কেটিং করার সমস্যাটা হলো তাতে পরিমিতিবোধ টা সুরক্ষিত থাকে না- হয় অতি বাড়াবাড়ি অথবা অতি রক্ষণশীল হতে হয়।

আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবারের বইটির জন্য পাঠকের কাছ থেকে মার্কেটিং সংক্রান্ত পরামর্শ নিবো।

তার পূর্বে বলে নেয়া উচিত বইয়ের টার্গেট মার্কেট আসলে কোনটা। শুরুতেই বলেছি ‘কীভাবে বিজনেস করবেন’ বা ‘বিজনেস চালাতে কী কী জিনিস খেয়াল রাখতে হয়’ জাতীয় কনটেন্টের কোনো বই এটি নয়, বরং যারা মনে করেন মানুষের সৃজনশীলতা এবং চ্যালেঞ্জ প্রদর্শনের বৃহত্তম প্লাটফরম হলো বিজনেস এবং যে কোনো কর্মের ন্যায় বিজনেসেও কিছু নৃতাত্ত্বিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং দার্শনিক আলোড়নের প্রয়োজন যা মানুষকে প্রাণিত্বের ঊর্ধ্বে আহরণের প্রেরণা যোগায়- সেই সকল মানুষের সাথে দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময়ের যোগসূত্র হতে পারে এই বই। আমার বিবেচনায় এই বইয়ের টার্গেট মার্কেট তাই নিম্নরূপ-

১. যে কোনো যুক্তিবাদী মানুষ, যে কেন এবং কোথায় দ্বারা তাড়িত।

২. একাডেমিক জীবনে যারা এন্ট্রাপ্রেনারশিপ এবং বিজনেস থিংকিং বিষয়ে পড়াশোনা করেন।

৩. যারা গতানুগতিকতার বাইরে ভিন্ন ধ্যানধারণায় বিজনেস চালানোর ইচ্ছা পোষণ করেন।

পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে জনপ্রিয় মানুষ বাদে কারোরই বই প্রকাশ করার এখতিয়ার নেই। বছরে একজন লেখকের যদি ১৭০০০ কপি বই বিক্রি হয় এবং বইপ্রতি ৪১ টাকা রয়্যালটি পান তাতে বছরে তার ৭ লাখ টাকার কাছাকাছি উপার্জন হয়, মানে মাসে ৫৮ হাজার। কিন্তু ১৭০০০ তো বহুদূর, অধিকাংশ লেখকের বই ১৭০০ কপির ধারেকাছেও যায় না।

লেখালিখি কোনো পার্ট টাইম চাকরি হতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন বিস্তর গবেষণা আর নিরলস অধ্যবসায়। সারা পৃথিবী বিচরণ করেও ১৭০০০ পাঠক খুঁজে পাওয়াটা অসম্ভব এক অভিযানে পরিণত হচ্ছে, হয়তোবা আরো ১১ বছর পরে পাওয়া যাবে, কিন্তু ততদিনে ১৭০০০ পাঠকে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। তবু বই লেখা কি থেমে থাকবে?

এখনো পর্যন্ত মার্কেটিংয়ের যেসমস্ত চিন্তা মাথায় আসছে-
১. পাঠকদের টেক্সট এবং ভিডিও রিভিউ
২. বই পড়ার পর পাঠক-লেখক ইন্টারভিউ
৩. অনলাইন পোর্টালে রিভিউ
৪. ভার্সিটি কোলাবরেশন
৫. উদ্যোক্তাদের রিকমেন্ড করা।

এছাড়া একটা উল্লেখযোগ্য সেলস চ্যানেল হতে পারে, কর্পোরেট গিফট আইটেম।

আপনাদের কাছে আরো পরামর্শ চাই। পুশ সেলিং ব্যাপারটা অপছন্দ করি যারপরনাই।

কিছুদিন আগে একটা ডাটা নিয়ে চিন্তা করলাম। অনলাইনে আমাকে সবমিলিয়ে হয়তো ১৫০০০ মানুষ চেনে, আমার বই বিক্রি হয় সাকুল্যে ৩৬০ বা তার কিছু কম-বেশি। কনভারশন রেট ২.৪%, অন্যদিকে ইউটিয়বার বা মোটিভেশনাল স্পিকার তাদের হয়তোবা অনলাইনে চেনে ১৫ লাখ মানুষ, তাদের বই বিক্রি হয় গড়ে ১৫০০০-২০০০০, তার মানে তাদের কনভারশন রেট ১%;

তার মানে কনভারশন রেট বেশি হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র স্যাম্পল সাইজ ছোট হওয়ার কারণে বইয়ের বিক্রি সংখ্যায় বিশাল তারতম্য।।

তবে স্যাম্পল সাইজ মডারেট রেখেও কনভারশন রেট বাড়ানো যায় যদি ডেনসিটি আর ইনটেনসিটি বাড়ানো যায়। ধরা যাক, আমাকে অনলাইনে ৭৯০০০ মানুষ চেনে এবং কনভারশন রেট ২৩%, তাহলেও পাঠকসংখ্যা ১৮০০০ এর বেশি হয়। কিন্তু ২৩% কনভারশন রেট অকল্পনীয় প্রত্যাশা, সর্বোচ্চ ১১% এ উঠতে পারে হয়তোবা। সেক্ষেত্রে ১৮০০০ পাঠকে উন্নীত হতে ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষের কাছে পরিচিত হতে হবে। কেবলমাত্র এনালাইটিক লেখালিখি দিয়ে সেটা ফ্যান্টাসি লেভেলের চিন্তা হয়ে যাচ্ছে।

মানে দাঁড়াচ্ছে কোনো স্ট্র‍্যাটেজিতেই বিক্রি সেই লেভেলে উঠবে না যা দিয়ে আশাবাদী হওয়া যায়৷ তবু আমি চাই মানুষ বইটি সম্বন্ধে জানুক।

বইয়ের কন্টেন্টঃ
মিথে মিথে মিথস্ক্রিয়া
১. সফলতা মিথ
২. আইডিয়া মিথ
৩. নেটওয়ার্কিং মিথ
৪. মিটিং মিথ
৫.প্রোডাক্টিভিটি মিথ
৬. আনুগত্য মিথ
৭. ব্যস্ততা মিথ
৮.বিজনেস ফ্যাবল মিথ
৯. ইনভেস্টমেন্ট মিথ
১০. লিডারশিপ মিথ

এক্সপ্লোর অপরাপর
১.ডিসিসন মেকিং মেহনত
২. ভিশনের বিজনেস অভিধান
৩.বিজনেস ইথিক্স
৪.মাইক্রো ম্যানেজ বনাম থার্ড আম্পায়ার
৫.ইগো হিলিং
৬. ইউনিকনেস ইলিউশন

ইনভেলপের প্রস্থচ্ছেদ
১.কালচার ক্যারিকেচার
২.হায়ারিং হেয়ালি
৩. ট্যালেন্ট নারচারিং
৪ সিভি সার্কাস
৫.প্রভৃতি প্লেবুক
৬.মূল্যায়ন রেলগাড়ি

ইত্যকার ইমপ্রেসন
১. শুনতে চিনতে
২.গল্প গাঙচিল
৩.নেগোশিয়েশন লুপ
৪. কনভারশন ল্যাব
৫. প্রফিট প্যারাডাইম

ব্যাঙ উপপাদ্য

বইয়ের সকল কনটেন্টই মৌলিক পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে লেখা, গুগল বা অন্য কোনো বইয়ের রেফারেন্স পয়েন্ট ব্যবহার করা হয়নি, বা কেইস স্টাডি দেয়া হয়নি। তবে বাস্তব জীবনের চেনা বহু মানুষকে ক্যারেক্টার হিসেবে ঢুকিয়ে দিয়েছি, তাতে চিন্তা আর কল্পনা দুর্দমনীয় ঔদ্ধত্যে বিন্যস্ত-বিকশিত হয়েছে। বইয়ের প্রোটাগনিস্ট চরিত্র পাপড়ির সাথে আড্ডা মারতে আপনারাও শামিল হোন সেই হিস্টোরিয়াগ্রস্ত সময়ের প্রস্থচ্ছেদে।