ক্রিকেট ইতিহাসের জনপ্রিয়তম ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার বিশ্রামের আড়ালে একবার দল থেকে বাদ পড়েছিলেন; বলতে হবে সময়টা কখন? ২০০৭ বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড থেকেই ভারত যখন বিদায় নেয়।

ভারতের ২০০৭ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়া আর ২০১৯ বিশ্বকাপে ১০ দলের মধ্যে বাংলাদেশের ৮ম হওয়া, তুল্যতা বিচারে দুটি প্রায় একইরকম। তবু ক্রিকেট সাংবাদিক আর প্রাক্তন ক্রিকেটারদের লেখা পড়ে বা মন্তব্য শুনে মনে হচ্ছে নিচের দিক থেকে শীর্ষ ৩ এ থাকাটাও খুব খারাপ অর্জন নয়।

নিম্নমানের কোচ স্টিভ রোডস বিশ্বকাপের পূর্বে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নবম ফেভারিট বলেছেন। বহু মানুষ তার এই মন্তব্যকে এপ্রিশিয়েট করেছিলেন, তিনি শিষ্যদের চাপমুক্ত রাখতে নাকি একথা বলেছিলেন! এমন হাস্যকর যুক্তি গেন্ডারিয়া চায়ের দোকানেও শোনা যায় না নিশ্চিন্তে বলতে পারি। যাদের ক্রিকেট বাজার এত বড়ো, তারা যদি চাপ নিতে না পারে সেই দলের আইসিসি বিশ্বকাপ খেলার দরকার কী!

জিম্বাবুইয়ে যেমন নেদারল্যান্ডের সাথে সিরিজ খেলে বেড়াচ্ছে, আমরাও জিম্বাবুইয়ে, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, হংকং, আরব আমিরাত, নেপাল, ওমান, আফগানিস্তানকে নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে মিরপুর, চট্টগ্রাম, ফতুল্লাহ, সিলেট, খুলনায় ১০ দলের বিশ্বকাপ আয়োজন করি, আর হট ফেবারিট হিসেবে আসর জমিয়ে ফেলার অপেক্ষায় থাকি। তাতে ক্রিকেটার বিশ্বায়ন হবে, আমরাও ক্রিকেট পরাশক্তি হিসেবে হুংকার ছাড়তে পারবো।

আফগানিস্তান জানে ওদের সামর্থ্য বড়োজোর ২-১ টা ম্যাচ জেতা, তবু ওরা প্রতিনিয়ত বলেছে আমরা বিশ্বকাপ জিততে চাই, আমরা তা নিয়ে ট্রল করে যৌনসুখ লাভ করতে চেয়েছি।

কিন্তু স্পোর্টস সাইকোলজির পয়েন্ট অব ভিউতে চিন্তা করলে আফগানিস্তানের স্পিরিট ১০০% সঠিক, তারা জেতার জন্য মাঠে নেমেছে, এবং দলের নাম দেখে ভড়কে যায়নি। বিশ্বকাপে তাদের একমাত্র বাজে ম্যাচটি গেছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। নিছকই অনভিজ্ঞতার কারণে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকার বিপক্ষে ৩টা ম্যাচের রেজাল্ট নিজেদের পক্ষে আনতে পারেনি।

তাদের ক্রিকেটে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ভয়াবহ, নিজেদের দেশে খেলতে পারে না, ফিল্ডিং-ফিটনেস খুবই বাজে, প্রোপার ব্যাটসম্যান নেই,তবু মনের জোর আর অদম্য ঔদ্ধত্যে তারা যে ক্রিকেটটা খেলেছে তা বাংলাদেশের চাইতে অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং ছিল। যদি ২০২৩ বিশ্বকাপের এশিয়ান কন্ডিশনে খেলার সুযোগ পায়, ৪ বছর আগেই গ্যারান্টি দিয়ে বলছি তারা বাংলাদেশের চাইতে পয়েন্ট টেবিলে বেটার পজিশনে থাকবে।

ম্যাচ ফিক্সিং না করলে কোনো ক্রিকেটার ইচ্ছা করে খারাপ খেলে না। প্রত্যেকেই চায় পারফর্ম করতে, তবু কেউ পারে, অনেকেই পারে না, না পারলে খেলোয়াড়ের খারাপ লাগবে এটাই স্বাভাবিক। এটা যতখানি খেলার প্রতি কমিটমেন্টের কারণ, সমপরিমাণে ক্যারিয়ার বিপাকে পড়ে যাওয়ার আশংকাতেও।

কিন্তু আমাদের প্রাক্তন ক্রিকেটার আর ক্রিকেট সাংবাদিকরা এইসব মেয়েলি কথা-বার্তাকেই প্রমোট করছেন। ( অনলাইনে শব্দচয়ন খুবই স্পর্শকাতর ব্যাপার। মেয়েলি শব্দটা লেখামাত্রই বহু নারীবাদী ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন। তাই শব্দটার ব্যাখ্যা প্রয়োজন। পুরুষালি, মেয়েলি এই শব্দ দুটো লিঙ্গনির্ভর নয়। পুরুষালি মানে এগ্রেসিভ, একটিভ এবং ফিয়ারলেস। মেয়েলি মানে সাবমিসিভ, প্যাসিভ আর পলায়নপর। শারীরিকভাবে পুংলিঙ্গের একজন মানুষ যেমন মেয়েলি বৈশিষ্ট্যের হতে পারে, বিপরীতক্রমে স্ত্রী লিঙ্গের মানুষও পুরুষালী বৈশিষ্ট্যের হতে পারে)।

মেয়েলি চিন্তা-ধারাকে প্রমোট করতে গিয়ে তারা বলছেন, খেলোয়াড়রা চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি, তাদের যেন সমালোচনা করা না হয়।

যে খেলোয়াড়টি দল থেকে বাদ পড়ে যায় সে কি চেষ্টায় কমতি রাখে। তবু পারফর্ম করতে না পারার কারণে তাকে শাস্তি দেয়া হয়। কারণ, তাকে দিয়ে হচ্ছে না, তার জায়গায় অন্য কাউকে দিয়ে চেষ্টা করতে হবে। কোনো খেলোয়াড় ভালো খেললে তাকে নিয়ে যখন হৈ-হুল্লোড় করা হয়, কেউ তো বলে না, খেলোয়াড়টি ভালো পারফর্ম করতে পারঙ্গম বলেই তাকে দলে নেয়া হয়েছে, সে কেবল তার উপর অর্পিত দায়িত্বটুকুই পালন করেছে মাত্র, তাকে নায়ক-মহানায়ক বানানোর প্রয়োজন নেই! মাথায় উঠাকে প্রশ্রয় দিবেন, অথচ মাথা থেকে ছুড়ে ফেলার সময় আহা উহা করবেন, এটা তো ডাবল স্ট্যান্ডার্ড, কারণ আপনার যথেষ্ট ওজন আছে, আপনাকে সর্বক্ষণ মাথায় তুলে রাখার শক্তি মানুষের নেই। নিরাপদ অপশন হলো, মাথায় উঠার ক্ষেত্রেই সতর্কতা অবলম্বন করা।

বাংলাদেশ বিশ্বকাপে জঘন্য পারফর্ম করেছে, সাকিবের একক পারফরম্যান্স বাদ দিলে দল হিসেবে দেউলিয়া দশা। এ ব্যাপারে মূলধারার মিডিয়াতে বিসিবির নীতি, কোচের গেমপ্ল্যান আর খেলোয়াড়দের এক্সিকিউশন ব্যর্থতার কঠোর-কর্কশ সমালোচনা করা উচিত, কিন্তু প্রথম আলো সহ আরো কয়েকটা মূল ধারার দৈনিক কী করেছে?

বিশ্বকাপ ব্যর্থতার অন্যতম কুশীলব তামিম ইকবালের বক্তব্য ছেপেছে, যেখানে সে শ্রীলংকা সফরে ভালো খেলার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে, ২৯ গড়ে রান করাটা একেবারে খারাপ বলা যায় না বলে সান্ত্বনা দিয়েছে, এমনিতে বিশ্বকাপ তার কাছে অন্য যে কোনো টুর্নামেন্টের মতোই, কিন্তু অনেক মানুষ এটা দেখে বলে এর গুরুত্ব বেশি, সে ব্যাটিং কোচের সাথে কথা বলেছে, তার টেকনিকে সমস্যা নেই, সে আউট হচ্ছে দুর্ভাগ্যজনকভাবে।

বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলে আমার সর্বাধিক পছন্দের ক্রিকেটার ছিল তামিম ইকবাল। তাকে নিয়ে অনলাইনে দীর্ঘতম আর্টিকেলটিও আমার লেখা (শিরোনাম ‘ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর তামিম ইকবাল’)। তবে আমি কখনো ব্যক্তির প্রতি অন্ধভাবে সমর্পিত হই না, তার চিন্তা আর কর্মের যতটুকুকে সমর্থনযোগ্য লাগে করি, যেটুকু লাগে না তার বিরোধীতা করি।

তামিম ইকবালের আজকের স্টেটমেন্টের সাথে খুন করে বুক ফুলিয়ে দাপিয়ে বেড়ানো সরকার দলীয় ক্যাডার, কিংবা নির্লজ্জ-বেহায়া প্রকৃতির মানুষের অসার তর্জন-গর্জনের সাথে আচরণগত সাদৃশ্য প্রকট।

তামিম আর সৌম্য বিশ্বকাপে যা পারফর্ম করেছে, তাতে তাদের দল থেকে বাদ পড়া অনিবার্য হওয়া উচিত। একে বলে জাস্টিস। আফগানিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ এ দল সিরিজ খেলছে, মুমিনুলের নেতৃত্বে ভারতে যাচ্ছে বিসিবি একাদশ। দুই দলে ৩ জন করে মোট ৬ জন ব্যাটসম্যান আছে যারা ওপেনার। সেখান থেকে ২ জন বা নিদেনপক্ষে ১ জনকে শ্রীলংকা সফরে সুযোগ দেয়া হলেও হতে পারে, এমন একটা আশংকা কেন থাকবে না? তামিম কেন ধরে নিল শ্রীলংকা সফরের দলে সে থাকবেই?

এখান থেকেই আমাদের ক্রিকেটের ভিত্তিহীনতা প্রমাণিত হয়। ২৯ গড় কি একজন ওপেনারের জন্য সন্তোষজনক? হ্যাঁ অথবা না এর চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, বাংলাদেশের প্রতিটি ম্যাচ যারা দেখেছেন তামিমের বিচ্ছিরি ব্যাটিং আর বাজে ফিটনেস তাদের ভ্রু কুঞ্চিত করতে বাধ্য করার কথা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইনিংসটা বাদ দিলে কোন ম্যাচে তার আউট দেখে দুর্ভাগ্যজনক বলবেন? গত ১০ ম্যাচে তার আউটের ডেটা নেন, প্লেইড অন আর টপ এজড টাইপ আউট বেশি। এতো বছরেও রানিং আর সিঙ্গেলস নেয়ার ক্ষমতা বাড়েনি, ফিটনেসের কারণে রিফ্লেক্স কমে গেছে– এই নিরেট সত্য অস্বীকার করে কোন বাস্তবতা প্রমাণ করতে চায় সে? দর্শকরা কি সবাই মূর্খ?

একজন খেলোয়াড় ৪টি বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছে, ৪টিতেই ফ্লপ, ডেটা দিয়েই প্রমাণিত সে বিশ্বকাপ ম্যাটেরিয়াল নয়। বিগত ৪ বছরে তার ব্যাটিং গড় কত ছিল এই ফাতরামি পূর্ণ স্ট্যাটিসটিক্সের তো মূল্যই নেই, যদি বিশ্বকাপে তার কোনো প্রতিফলন না থাকে। ওয়ানডে ক্রিকেট টপ অর্ডারদের খেলা, ৪টা আসরে যে হতাশ করেছে, তবু তাকে সুযোগ দিয়ে যাওয়ার একটাই অর্থ হতে পারে– জাতীয় দলের ওপেনিং স্লটটা তামিম ইকবালদের পারিবারিক ব্যবসা, যতদিন পর্যন্ত নাফিস ইকবালের বা তার নিজের ছেলে সাবালক না হয়ে ওপেনারের দায়িত্ব না নিচ্ছে সে যক্ষের ধনের মতো পজিশনটা আগলে রাখবে।

তামিম সারা ক্যারিয়ারেই স্লো ব্যাটসম্যান ছিল। আগে বাউন্ডারি মেরে বাকি বল ডট দিলেও বাউন্ডারির স্মৃতিটাই মাথায় থেকে যেত, বিগত ৪ বছরে বাউন্ডারি কম মারছে বলে ডটগুলো চোখে লাগছে। কিন্তু তার ক্যারিয়ার স্ট্রাইকরেট কখনোই প্রশংসনীয় ছিল না। সে সিঙ্গেলস বের করতে পারে না, এই মৌলিক টেকনিক দুর্বলতাই যে ১২ বছরে কারেকশন করতে পারলো না, আমরা অপেক্ষায় আছি শ্রীলংকা সফরে ৩ ওয়ানডেতে ১ সেঞ্চুরি, ১ হাফ সেঞ্চুরি করে সে সমালোচনার জবাব দিবে সেই আশায়।

বাংলাদেশ যদি শ্রীলংকাকে ৩-০ তে হোয়াইটওয়াশ করে তবুও কি ৮ম হওয়ার ফ্যাক্ট বদলে যাবে।

তামিম রানগুলো করেছে কীভাবে? সে মিনিমাল রিস্ক নীতিতে ব্যাটিং করে ৫০ রান করেছে, তার সাথের ওপেনার ম্যাক্সিমাম রিস্ক নিতে গিয়ে আউট হয়ে গিয়েছে। এটা তো অবিচার এবং অন্যায়। বিগত ৪ বছরে যারা তামিমের গড় নিয়ে আস্ফালন দেখান, তারা একটু পরিসংখ্যান দেখে বলবেন, ওই ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের দলীয় রান কত হয়েছিল, এবং সেটা এখনকার ক্রিকেটের জন্য পার স্কোর কিনা। সেই সাথে আরো একটা ডেটা চেক করুন। ব্যাটিং গড়ে তার আশপাশে থাকা অন্য ওপেনারদের কন্ট্রিবিউশনের কারণে সেই সময়ে তাদের দলীয় স্কোর কত হয়েছে। সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ থাকা সত্ত্বেও ব্যাটিংয়ে তার এই অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক টাইপ ক্যারেক্টার গ্রহণের কারণ কী, এটা কি শুধুই টিম ম্যানেজমেন্টের চাওয়া, নাকি নিজের অক্ষমতা?

বিগত ৪ বছরে বাংলাদেশ নিচের টায়ারের দলগুলোর বিপক্ষেই বেশি খেলেছে। তারা নিচের টায়ারে কেন থাকে? তাদের বুদ্ধিমান বোলার নেই, ফিল্ডাররা নিবেদিত কম, ব্যাটসম্যানরা কৌশলী কম। উপরের টায়ারের দলগুলো এর বিপরীত। যে কারণে নিচের টায়ারের বিপক্ষে শুরুতে স্লো খেলে ৫০ করে স্লগিংয়ের মাধ্যমে বল আর রানের ব্যবধান কমিয়ে আনা যায়। উপরের টায়ারের বিপক্ষে যে এই কৌশল পুরোপুরি ব্যর্থ হবে তা নয়, তবে ১০ ম্যাচের ৭ টাতেই আপনি ধরা খাবেন, কারণ তাদের বোলার আর ফিল্ডাররা অনেক বেশি তৎপর।

তামিম কীভাবে নিশ্চিত হলো, সে শ্রীলংকাগামী দলে থাকবেই? হয়তোবা নির্বাচক বা বোর্ড সভাপতি তাকে সান্ত্বনা বা আশ্বাস দিয়েছে তোমার প্রতি আস্থা হারাচ্ছি না। ৪টি বিশ্বকাপে ফ্লপ করার পরও একজন ব্যাটসম্যানের প্রতি আস্থা রাখার বিরল দৃষ্টান্ত ক্রিকেট ইতিহাসে একমাত্র বাংলাদেশই স্থাপন করতে যাচ্ছে।

তামিম ২০২৩ বিশ্বকাপে কেমন করবে বা আদৌ খেলবে কিনা সেটা পরের ব্যাপার, শ্রীলংকা সিরিজের পরে আগামী অনেকদিন কোনো ওয়ানডে নেই বাংলাদেশের, ততদিনে মানুষ ভুলে যাবে বিশ্বকাপে অশ্বডিম্ব প্রসবের ঘটনা। ফলে বিশ্বকাপ ব্যর্থতার শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে এই সিরিজটাই হতে পারতো মূল প্ল্যাটফরম, ব্যর্থতার স্মৃতি তখনো তরতাজাই থাকবে।

কিন্তু সেই দলের হয়েও তামিম-সৌম্যকে ওপেন করতে দেখা মানে তারকা খেলোয়াড় সকল জবাবদিহিতার বাইরে। স্পন্সরদের কাছ থেকেও কি চাপ থাকে কোনো? যেমন তামিম, সাকিব, মাশরাফি এদের খেলালে একরকম টাকা, এরা না খেললে আরেকরকম।

কিন্তু স্পন্সররাও তো বরাবর ট্রেন্ড দিকে সেই স্রোতে গা ভাসায়। এই মুহূর্তে যদি কোনো জরিপ চালানো হয় তামিম ইকবালকে কি জাতীয় দল থেকে বাদ দেয়া উচিত, অন্তত ৭০-৩০ ব্যবধানে ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হবে। তাছাড়া স্বজনপ্রীতি খোঁজায় সিদ্ধহস্ত ভেতো বাঙালির একটা বৃহৎ অংশ অনেকদিন আগে থেকেই তামিমকে ‘চাচার জোরে খেলা’ প্লেয়ার বলে আসছে। স্পন্সররা এসবও মাথায় রাখে নিশ্চয়ই।

সিংহাসনেও পালাবদল হয়। রাজা আজীবন রাজা নাও থাকতে পারে। তামিম যদি ঘরোয়া লীগে বা বিসিবি দলের হয়ে পারফর্ম করতে পারে, ফেরত আসবে, না পারলে আসবে না। কিন্তু তামিমকে সরানোই যাবে না এই চিন্তা তো অক্রিকেটিয়।

বিগত ৭-৮ বছরে সমাজে অবক্ষয়, নৈরাজ্য আর বীভৎসতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আমিত্বের বাইরে কোনো চিন্তাই কাজ করছে না। বিচারহীনতা আর জবাবদিহিহীনতা সংস্কৃতি আমাদের অভ্যাসের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। যার ক্ষমতা আছে সে আরো ক্ষমতাবান হবে,ক্ষমতাহীন নিষ্পেষিত হতে হতে বিলুপ্ত হবে অথবা জিঘাংসাকে প্রতিবাদ- প্রতিরোধের মাধ্যম গণ্য করে আরো বিধ্বংসী আচরণ করবে, ক্ষমতাহীন অথচ বুদ্ধিমানেরা দেশ ত্যাগ করে নিরাপদ জীবনের আশ্রয় খুঁজবে। এই ক্ষয়িষ্ণু সমাজে ক্ষমতাবান আর ক্ষমতাহীনের মধ্যে শ্রেণিসংঘাত অনিবার্য, সেটা আজ বা আগামীকাল যখনই হোক।

তামিম ইকবালের স্বপদে বহাল থাকা ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিশ্বকাপে রাহির একটি ম্যাচেও সুযোগ না পাওয়া ক্ষমতাহীনের দুর্ভোগেরই সামাজিক একশন সিনেমা। তামিমের জায়গায় আরেকজন সুযোগ পেয়ে তিন ম্যাচেই শূন্য রানে আউট হতে পারে, তবু তাকে বাদ দেয়ার মাধ্যমে এটা সুস্পষ্ট বার্তা হতে পারতো যে, বাংলাদেশের ক্রিকেট রেজাল্ট চায়, বড়ো দল হতে চায়, এবং ব্যর্থ হলে তুমি যে-ই হও শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।

তামিম আর সৌম্যকে বাদ দিলে সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে?

পৃথবীতে কোনোদিন সমস্ত সমস্যা নির্মূল হয়নি, আগামীতেও হবে না, হলে সেটা পৃথিবীর বদলে স্বর্গরাজ্য হয়ে যেত। কিন্তু সমস্যা তুলনামূলক কমানো যায় কীভাবে সেটাই বিচক্ষণ চিন্তাপ্রক্রিয়া।

দ্বন্দ্বটা প্রসেস বনাম প্রসেসহীনতার, শর্ট টার্ম বনাম লং টার্ম চিন্তা,নীতি বনাম নীতিহীনতা, এবং সামন্ত বনাম সমাজতান্ত্রিকতার; তামিম বা সৌম্য নিছকই উদাহরণ বা অনুষঙ্গমাত্র। প্রতিটিতেই বিসিবি সাদা খাতা জমা দিয়ে শূন্য নম্বর পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।

তাই, ২০৩৯ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ মিডিওকর দল হিসেবেই প্রতিটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণেই সার্থকতা ধরে নিয়ে চলতে থাকবে সেই প্রেডিকশন দিতে খুব বেশি দূরদর্শী না হলেও চলে।

তবু কি বাংলাদেশের খেলা দেখবো?

ইমরুল কায়েস যতক্ষণ ব্যাটিং করতো বাংলাদেশের খেলা দেখা বন্ধ রাখতাম। তামিম আর সৌম্যের জন্যও একই নীতি গ্রহণ করলাম আজ থেকে। বিসিবি যেহেতু সামন্ততোষণ আর মিডিওক্রিটিকেই প্রমোট করে যাবে, ব্যক্তিগত জায়গা থেকে এর প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপনের পূর্ণ অধিকার নিশ্চয়ই আছে আমার। তামিম বা সৌম্য ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি করলেও তা আমার কাছে শূন্য রানের চাইতেও মিনিংলেস। তবে বাদ পড়ে যদি ফেরত আসে, তখন অবশ্যই তাদের এপ্রশিয়েট করবো।

আপাতত বিচারহীনতার বিরুদ্ধে নৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করলাম।