দীর্ঘ ১৯৩ দিন সময় নিয়ে প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠা দৈর্ঘ্যের নামহীন, দামহীন বইটি সমাপ্ত হয়েছে কিছুদিন আগে। বর্তমানে প্রুফরিডিং করছি। এতো চেষ্টার পরও মুদ্রণ প্রমাদ হয়তোবা পিছু ছাড়বে না আমার। আসন্ন বৃহস্পতি বা সর্বোচ্চ শনিবার এই বইকে তার কাক্ষিত গন্তব্য- প্রেসে পাঠিয়ে দেয়ার টার্গেট নিয়েছি যাতে স্বল্পতম সময় পরিপাটি হয়ে বই আকারে চলে আসতে পারে।
পুশ সেলিংয়ের মাধ্যমে বই হয়তো প্রচুর পরিমাণে বিক্রি করা যায়, কিন্তু তাতে বইয়ের পাঠকসংখ্যা কি বাড়ে বা কৌতূহলী পাঠক কি তাতে তৈরি হয়? মরুভূমির দেশে কম্বল বিক্রি করা যেমন পণ্যের উপযোগ নষ্ট করে, অনুরূপভাবে আমার বইতে আগ্রহ নেই এমন মানুষ স্রেফ ব্যক্তিগত পরিচয়ের বশে টাকা খরচ করে কিংবা সৌজন্যের খাতিরে বা চাপে পড়ে বই কিনে এক কোণায় ফেলে রাখলো, এটা লেখালিখির জন্য ক্ষতিকর। অধিকাংশ তরুণ লেখকেরা বই বিক্রিতে যতো কৌশল অবলম্বন করে, তার এক তৃতীয়াংশ সময় যদি লেখালিখির নিজস্বতা আর মানুষ তার বইটি কেন পড়বে এর যথাযথ কারণ খুঁজতে ব্যয় করতো, হয়তোবা নিজের সীমানা ভাঙার সাহসটা আরো বেড়ে যেতো।

আরিফা প্রায়ই বলে- ‘তুমি আসলে আজন্ম লেখক। চলন-বলন সবকিছুর একটাই লক্ষ্য থাকে, লেখার উপকরণ যোগাড় করা। তুমি যখন লিখতে থাকো একমাত্র তখনই তোমাকে প্রাণোচ্ছল লাগে।
বিয়ের আগে বড়ো আপা আরিফাকে বলেছিলো- ‘হিমেল যদি কারো সাথে প্রেমও করো এটা নিয়ে কখনো প্রশ্ন তোলা যাবে না বা অশান্তি করা যাবে না, কারণ ও প্রেম করছে না, লেখার চরিত্র খুঁজছে।
নটরডেম এবং বুয়েটের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শিহাব এক জন্মদিনে এসএমএস দিয়েছিলো- ‘তোর জন্ম হয়েছে সোনার কলম হাতে’।
লুবনা কোনো ইমেইল লিখলে একটা কথা সেখানে থাকবেই- ‘তোমার লেখা থেকে কখনোই সরা উচিত হবে না’।

আজ সকালে আরিফাকে বলছিলাম, ‘আমার তো লিখতে পারলেই সবচাইতে ভালো লাগে। বাংলাদেশের মানুষজন আমার লেখাকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনে না। আমার জন্ম ফ্রান্স বা জার্মানিতে হলে আমি হয়তোবা আরো অনেকগুলো বই লিখতাম। মানুষ বই কিনে সাজিয়ে রাখে, পড়ে কম। আমারটা কিনেও কম, পড়েও কম। অথচ একটা বই লেখা তো প্রচণ্ড কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ কাজ। সময় তো অফুরন্ত নয়। একারণে লেখা থেকে যত্ন-আত্তি উঠিয়ে ফেলেছি। লেখা এখন আমার রঙ্গ-রসিকতার জায়গা। শব্দ আর উপস্থাপন নিয়ে এখন যে পরিমাণ অবহেলা করি, অনাচার করি, ১১ বছর পরে বর্তমান ভাষাভঙ্গির কারণে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো তো?’ বুয়েটের বড়ো ভাই এবং রকমারি ডট কম এর অন্যতম উদ্যোক্তা জুবায়ের ভাই প্রায়ই বলে- হিমালয়, তুমি মিঞা লেখার মান হারাইয়া ফেলতেছো। প্রযত্নে- হন্তা আর বীক্ষণ প্রান্ত বই দুটোতে ভাষাভঙ্গি আর উপস্থাপনে যে মুন্সিয়ানা দেখতাম, তোমার ব্লগের সাম্প্রতিক লেখাগুলো পড়ে মনে হলো সেই স্ট্যান্ডার্ডটা তুমি আর ধরে রাখো নাই, ইচ্ছা করেই কেমন খাপছাড়া আর তাড়াহুড়ো যেন’।

আমার সবচাইতে পছন্দের কাজ কী? ইন্টারভিউ নেয়া। জীবনে সবচাইতে বেশি সময় গেছে কিসে? ইমেইল আর চিঠি লেখায়। ইন্টারভিউ নিয়ে আমি কী করেছি? চিঠি বা ইমেইল লেখায় ব্যবহার করেছি। জীবনে সবচাইতে বেশি কী করেছি? উদ্যোগ নিয়েছি? উদ্যোগের চিন্তাগুলো যাতে ভুলে না যাই সেজন্য কী করেছি? চিঠি বা ইমেইল লিখেছি। ঘুরেফিরে আমি সেই লেখালিখিতেই ফেরত যাচ্ছি।

আমার ৪টা বইয়ের একটাও বেশিসংখ্যক মানুষ পড়েনি কেন? প্রথমত, আমি কথাসাহিত্য খুবই কম পড়েছি, কবিতা একদমই পড়িনি জীবনে, যে কারণে নির্মেদ-সতেজ-সুললিত ভাষাভঙ্গি এবং কাহিনীবিন্যাসের প্রাথমিক কৌশলটুকুও জানা নেই, সেই বোধটুকু তৈরি হয়নি। দ্বিতীয়ত, পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারের কারণে পরিমিতিবোধের ব্যাপক অভাব। বন্ধু ওমর বহ্নি বলে, ‘তুই মূল কথা বলার আগে অপ্রাসঙ্গিক কথা এতো বেশি বলোস, আগ্রহটাই নষ্ট হয়ে যায়’। নাম না জানা এক পাঠক ইমেইল করেছিলো- আপনি ১ লাইনে যা বলা যায় তার পেছনে ৫০ লাইন খরচ করেন। তৃতীয়ত, আমার চিন্তা এবং কল্পনাগুলো সহজ-স্বাভাবিক নয়, কিছুটা উদ্ভট, এবং বোধকে ধাক্কা দেয়, যেটা মানুষ নিতে চায় না। সাহিত্য ধারণা এই জনপদে একটু আলাদা। সেই ধারণার সাথে আমারটা মিলে না।

যেহেতু এটা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত, মানুষের মধ্যে আমার বইয়ের ব্যাপারে আগ্রহ নেই, পুশ সেলের আবশ্যকতা হাস্যকর। তবু ৭টা হার্ডকপি বই প্রকাশ করার ইচ্ছা; এরপরও বই প্রকাশিত হবে, তবে সেগুলো ই-বুক আকারে। ৭ম বই অবধি ৩০৭ জন পাঠক যোগাড় হয় কিনা সেটাই দেখার চ্যালেঞ্জ একটা।

আমাকে নিশ্চিত হতে হবে আমার বই মানুষ কেন পড়তে চায়। দাম যা-ই হোক, পড়ছে কিনা এটাই প্রধান বিবেচ্য। মূলত একারণেই ইমেইল লিখতে বলা। ইমেইল একটা চমৎকার ফিল্টারিং প্রসেস। কারণ, আমাদের দেশে ইমেইল লেখার চল কেবলমাত্র একাডেমিক পড়াশোনা আর ব্যবসায়িক যোগাযোগের ক্ষেত্রে, এর বাইরে ফেসবুক মেসেঞ্জারই একমাত্র অপশন। এই ট্রেন্ডের বাইরে গিয়ে একজন মানুষ বই পড়তে ও কিনতে চেয়ে ইমেইল পাঠালে ধরে নেয়া যায় তার আগ্রহটা অকৃত্রিম। ৫০০ পৃষ্ঠার বই শেষ করবে কিনা এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা না থাকলেও অন্তত ১৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়বে এটুকু নিশ্চিত।

যেনতেনভাবে বই বিক্রিই যদি টার্গেট থাকতো, আমি অতি অবশ্যই বই মেলাতে বই প্রকাশ করতাম, বইয়ের ব্যাপ্তি ১৫০ পৃষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতাম ফরমার হিসাব ঠিক রাখতে, এবং নিজের টাকা খরচ করে হলেও কোনো একটি প্রকাশনীর অধীনেই বই প্রকাশ করতাম। ৯০% তরুণ লেখকই যে নিজের টাকায় বই প্রকাশ করে অথবা তাদের একটি নির্দিষ্ট সেলস টার্গেট দেয়া থাকে প্রকাশকের কাছ থেকে, এই নির্জলা সত্যকে কি এখনো সিক্রেট হিসেবে্ই চালিয়ে দিতে হবে? একটাও যেহেতু করছি না আমি দেখতে চাই আমার প্রোডাক্ট মার্কেট ফিট কতটুকু। বই অবশ্যই একটি প্রোডাক্ট। প্রতিটি মানুষই সারা শরীরে কয়েক হাজার টাকার প্রোডাক্ট বহন করে বেঁচে থাকার স্বার্থে। কাজেই প্রোডাক্ট শব্দে নাক সিঁটকানির দলে আমাকে রাখার যৌক্তিকতা নেই।

আমার প্রোডাক্টে মানুষ কেন আগ্রহী, কতটুকু আগ্রহী, এর একটা নিবিড় ও গভীর পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। ইমেইল নেয়ার আরো কমপক্ষে ৫টা উদ্দেশ্য আছে। এই লেখার জন্য ১টাই প্রযোজ্য থাকুক।

আজকের দিন পর্যন্ত আমার বইয়ে আগ্রহী ইমেইল পাঠানো সংখ্যা ১১৬টি। আমি যেহেতু আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল জীবন যাপন করি, এই বইটা ছাপাতেও বড়ো আপার সহায়তা নিতে হবে (বাকিটা আমি বহন করবো), সর্বসাকুল্যে প্রিন্ট করবো ৩০০ কপি। প্রেসে পাঠানোর আগেই ১১৬ হয়ে গেলে বাকি থাকে ১৮৪; পাঠক প্রতিক্রয়া আসতে শুরু করলে আরো অনেকেই ইমেইল পাঠাবে আশা করছি। সুতরাং আমি বাজিতে জিতে যাবো আশা করছি।

বাজির প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে, আমার বইটা আসলে কোন্ ঘরানায় পড়ে বা বইয়ের মূল কনটেন্ট কী এ সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা দেয়া আবশ্যক।

বইয়ের সর্বশেষ অধ্যায়ে মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাথে আমার একটা ঠাট্টা-মশকরার অংশ আছে। আমি মাইকেলকে কী বলেছিলাম সেই অংশটুকু বই থেকে হুবুহু তুলে দিচ্ছি:

“কাকা, একটা সত্যি কথা কইবা? মেঘনাদবধ কাব্য কি তুমি নিজে লিখছো, নাকি অন্য কারো লেখা নিজের নামে চালাইয়া দিছো? সাহিত্যবোধ এতো দুর্বল হইলে কেম্নে কী? আমার বইটারে সংজ্ঞায়িত করো পারলে। আমিই তোমারে হেল্প করি:
অপশন১: যদি বলি এটা একটা অস্তিত্ববাদী বই, যেখানে ‘আমি ধারণা’ কীভাবে বিকশিত হয়ে এক পর্যায়ে কর্তৃত্ব নিয়ে নেয়, সেটাই কৌশলের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে; অগ্রাহ্য করতে পারবা? বইজুড়ে যে কেবলই আমি আর আমি; এই আমি আসলে কোন্ আমি?

অপশন ২: যদি বলি এটা একটা গভীর প্লেটোনিক প্রেমের উপন্যাস, যেখানে প্রেমকে শরীর আর পঞ্চইন্দ্রিয়ের বাইরে তীব্র এক আকুতি আর অনুভূতি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে; অত্যুক্তি হবে?

অপশন৩: যদি বলি এটা মহাকবি মাইকেল মধুসূদনের প্রতি একটা ট্রিবিউট, এবং সাহিত্য ধারণাকে বিনির্মাণের প্রয়াস, কীভাবে বিরোধীতা করবে?

অপশন৪: যদি বলি মানুষের অভ্যন্তরীণ Glorification Vs Godification দ্বৈরথকে ভিন্ন একটা আঙ্গিক থেকে দেখবার প্রয়াস ছিলো,এবং সংখ্যা, শব্দ, বর্ণ সেই প্রয়াসের টুলস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, অস্বীকার করে টিকতে পারবে?

অপশন৫: যদি বলি, পুরো বইটাই মানুষকে মূল্যায়নের এক বিরাট ফাঁদ, এবং আলামতও প্রচুর, মানতে আপত্তি থাকবে না নিশ্চয়ই?

অপশন৬: যদি বলি এটা আমার সিভি, যেটা ইংরেজি ভাষাতেও অনুদিত হবে, এবং নিজের বিজনেস কনসালটেন্ট ক্যারিয়ার গড়বার লক্ষ্যে সচেতনভাবে নিজেকে জাহির এবং ভিক্টিম প্রমাণ করেছি, অর্থাৎ সমগ্র বইটাই একটা ‘স্টোরি সেলিং’ কনসেপ্টের পারফেক্ট কেস স্টাডি, দেখো তো হিসাব মেলে কিনা?

অপশন৭: যদি বলি জীবনের গূঢ় রহস্যগুলো সম্বন্ধে ইঙ্গিত দিতে বাকি কাহিনীগুলো ইচ্ছাকৃত আনা হয়েছে, অর্থাৎ এটা একটা মেসেজ চালাচালির বই, সেই হিসাবটাও মিলে যাবে।

অপশন ৮: যদি বলি এটা বাংলা সাহিত্যের দীর্ঘতম ‘মনোলোগ’, পারলে বাতিল করো তো।

বাকি অপশনগুলো তো খুবই সহজ: আমার থট প্রসেস কীভাবে গড়ে উঠলো, মানুষ পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত উপলব্ধি, বায়োগ্রাফি বা বায়োফিকশন প্রভৃতি। কেবলমাত্র চরিত্রগুলোতে বাস্তব মানুষের পরিবর্তে কাল্পনিক নাম ব্যবহার করতাম, এটাকে ফিকশন বলতে তুমি মোটেই কার্পণ্য বোধ করতে না। ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট, প্লট ডেভেলপমেন্টগুলো লক্ষ্য করো- একটা সুনির্দিষ্ট ক্রমধারা পাবে; কেবল কাহিনী বিন্যাস আর সংলাপগুলো একটু খাপছাড়া। এই বইটাকে আরো ৪-৫ টা পয়েন্ট অব ভিউ থেকে দেখে পৃথক পৃথক জনরায় ফিট করা সম্ভব। সুতরাং বইটাকে এতো হালকাভাবে নিয়ো না। খরচের প্রসঙ্গে যদি বলি; আমি জুয়াড়ি মানুষ, বাজি ধরাই নেশা। তোমার সাথে একটা বাজি হয়ে যাক। ৩০০ কপি বই প্রকাশ করতে যত টাকাই খরচ হোক, প্রকাশের ৭ মাসের মধ্যে এই বই থেকে প্রফিট আসবে। সেটা ৭টাকা হলেও। তোমরা জীবন কাটিয়ে দিলে গর্তের ভেতর, ভয়ের কারবালায়। আমার যেহেতু ভয় নেই, জুয়া খেলে নিঃস্ব হওয়া না হওয়াতে কী এমন হলো, বলো”।

১১৬টি ইমেইল পর্যালোচনা করে বই পড়ার কারণগুলোকে ৩টি প্রধান অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়:
. হিউম্যান সাইকোলজি বিষয়ে প্রচণ্ড আগ্রহ।
. ফেসবুকে আমার লেখা পড়ে আমার ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আমার থট প্রসেস বা চিন্তাপ্রণালী কীভাবে গড়ে উঠলো সে সংক্রান্ত কৌতূহল।
. আমি জীবনের সবকিছকে সংখ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করি। সংখ্যা বিষয়ে আগ্রহ।

তবে ১১৬ ইমেইলকারীর লিঙ্গানুপাত আমার জন্য বিস্ময়ের ও কিছুটা আশঙ্কার। ১১৬ এর মধ্যে ১০৭ জন পুরুষ, ৯ জন মাত্র নারী! আমি কি তবে প্রবলমাত্রায় পিতৃতান্ত্রিক মনোভাবসম্পন্ন লেখক হয়ে উঠলাম? আমার লেখার প্রধান শক্তিময়তা, এনালাইটিক ও নির্মোহতা। এটা কীভাবে লিঙ্গসাপেক্ষ হয়ে উঠলো?

১১৬ জনের মধ্যে ৪০+ বয়সী মাত্র ৪ জন, ২৩-৩৭, এই সীমারেখার মধ্যেই ইমেইলকারীর সংখ্যা সবচাইতে বেশি। তার মানে ভার্সিটি সেকেন্ড- থার্ড ইয়ার এবং কর্মজীবী মানুষেরাই বেশি আগ্রহী। এর কম বয়সী মানুষের সংখ্যা ১৭ এর কম। অথচ বই সবচাইতে বেশি পড়ে স্কুল, কলেজ আর ভার্সিটি জীবনে। তার মানে পাঠকের ঘনত্ব যেখানে বেশি, সেই পপুলেশন মার্কেটেই আমি ঢুকতে পারিনি।

তবে আমার জন্য এটাই সবচাইতে আনন্দের বিষয়, যে বয়সব্যবধিতে (২৩-৩৭) বিবিধ কারণে মানুষের পাঠোভ্যাস কমে যায়, সেখানেই আমার গ্রহণযোগ্যতা সবচাইতে বেশি; হোক না সেটা মাত্র ১১৬ জন। তবে স্যাম্পল সাইজ হিসেবে ১১৬কে খুব ছোট বলা উচিত হচ্ছে না, যেহেতু আমার সর্বোচ্চ টার্গেটই মাত্র ৩০০ জন। সেক্ষেত্রে বই প্রেসে যাওয়ার আগেই ৩৮.৬৬% মানুষ আমার প্রতি বিশ্বাস রাখতে পেরেছে।

ইমেইল থেকে আমার আপ্লুত হওয়ার ৫টি উপলক্ষ্য লিখি:
. একজন লিখেছে, আপনি একটি কাল্পনিক গ্রাম তৈরি করেছেন, আমি সেই গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামের নাম উপরন্তু!
. ৫০০ পৃষ্ঠার একটা বইয়ের বাজারমূল্য কত হওয়া উচিত? ৪২০, বড়োজোড় ৫২০। দেবব্রত মুখার্জীর মাশরাফি বইটা কিনেছিলাম যখন বইমেলা থেকে, সেটার পৃষ্ঠাসংখ্যা ৫০০ বা তার কিছু কম-বেশি ছিলো; দামটা মনে নেই, তবে ৫০০ এর বেশি ৬০০ এর কম, এই সীমায় ছিলো। তার মানে বাজারমূল্য সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া গেলো। কিন্তু কেউ যদি বইয়ের মূল্য ধার্য করে ২০০০ টাকা; একে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়?
. একজন লিখেছে সে ছোটবেলা থেকেই আশপাশের কারো সাথে মিশতে পারে না, কারো চিন্তাধারার সাথে মিলতো না এ কারণে হীনম্মন্যতায় ভুগতো। আমার মিসফিট বিষয়ক লেখাটা কে যেন শেয়ার দিয়েছিলো, সেটা পড়ে তার ধারণা জন্মেছে সে সঠিক পথেই আছে।
. পরিচিত একজন লিখেছে, আমার ধারণা ছিলো আপনি একজন এভারেজ টাইপ মানুষ; একজন মানুষ এতো আজাইরা আলাপ কেম্নে করে, যেগুলারে সে হিউমার বলে চালানোর চেষ্টা করে তার মধ্যে রসবোধ পাই না। কিন্তু লেখা পড়ে আপনার ব্যাপারে আমার মধ্যে আগ্রহ তৈরি হইছে। আমি বুঝেছি আপনারে আসলে দেখার চাইতে পড়ে আরাম বেশি ।
. একজন লিখেছে আপনার চিন্তা-ভাবনা আমাকে মুগ্ধ করে কিনা জানি না, সম্ভবত করে না, তবে অবশ্যই প্রভাবিত করে। এজন্য আপনার প্রতি আমি ঋণী এবং এই ঋণ শোধের কোনো ইচ্ছাই আমার নাই।

প্রতিটি ইমেইল যেন একেকটি পূর্বজন্মের ইতিহাস। মানুষ বাঁচে কয়দিন; আনন্দটুকুই স্মৃতি হয়ে থাকুক না।

যারা ইমেইল করেছেন, বই চলে এলে আপনাদের সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো দ্রুত।
দেশের বাইরে থাকেন, অথচ পড়তে চান, তাদের জন্য ই-বুক আকারেও বইটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইমেইল করে রাখলে ই-বুক পাঠিয়ে দেয়ার নিয়ত প্রকাশ করলাম।

যারা ইমেইল করতে আগ্রহী, কিন্তু ঠিকানা জানেন কিনা জানেন না, তাদের প্রতি আরো একবার himalay777@gmail.com

বইয়ের বৈচিত্র্যে বিবশিত হোক অস্থিরতার ধারাপাত।

চিন্তায় চলি, কল্পনায় বাঁচি। প্রশ্নে বাঁচি, প্রাচুর্য বেচি