বড়ো আপা ইমোশন তথা চালশে চরিত
আমার মায়ের মা-সত্তা ৪০ পূর্ণ করলো আজ। জীবনে ৪ বার মাতৃত্বের অভিজ্ঞতা পেলেও ২৩শে জুলাই দিনটি তার দীর্ঘ মাতৃত্ব-ক্যারিয়ারের প্রশস্ত সরণিতে প্রথম পদক্ষেপ।
এবার তবে সৌরভ গাঙ্গুলির দাদাগিরি অনুষ্ঠানের আদলে একটা প্রশ্ন করা যাক- ৪০ বছর আগে আমার মা যদি এক কন্যাসন্তানের জননী হওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন, সেই কন্যাসন্তানের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কী এবং ২৩ শে জুলাই তার জীবনে বিশেষ দিন কেন?
৪০ বয়সটাকে আমি আধ্যাত্মিকতা আর সামাজিকতার মধ্যবর্তী টার্মিনাল হিসেবে দেখি; জীবনের মধ্যাহ্নকাল অতিক্রমণ শেষে অপরাহ্নগামী হওয়ার পূর্বে শেষবারের মতো পেছন ফিরে সকাল আর দুপুরকে অবলোকন করতে চাওয়া মনোচক্ষু দিয়ে। এক অহর্নিশ অবসেসন কাজ করে বয়সটাকে ঘিরে। কলকাতার কবির সুমন একে চিরকালীন কাব্যময় করেছেন অতুলনীয় লিরিকের এক গানে-
‘আজকে যে বেপরোয়া বিচ্ছু
শান্ত সুবোধ হবে কাল সে
চোখের সঙ্গী হবে চশমা
চল্লিশ পেরোলেই চালশে
……………………………..
আজকে যে প্রেমে পড়ে উন্মাদ
ঘোর সংসারী হবে কাল সে
শয্যা সঙ্গী শুধু চশমা
চল্লিশ পেরোলেই চালশে’।
…..কিশোরবেলায় গানটা যখন শুনতাম ভীতি আর অসহায়ত্ব কাজ করতো। যত চল্লিশের নিকটবর্তী হচ্ছি উত্তেজনা কাজ করে, লিরিকটাকে নিজের পাশের চেয়ারে বসে চা পানরত মানুষের চেহারায় দেখতে পাই, তার সাথে চলে অন্তহীন, অর্থহীন আলাপচারিতা।
বড়ো আপারও কি একই অনুভূতি হয়?
জিজ্ঞেস করিনি।
জীবনে প্রথমবার কোনো শিশু যখন জুতা পরিধান করে তার মধ্যে যে বিপুল উদ্দীপনা কাজ করে তার প্রাচুর্যে জুতাটিকে সে ঘুমসঙ্গী বানায় অনেক সময়। এরপর কত বার কত রকম জুতা কেনা হয় তার, সেগুলো জুতার র্যাকেই সযত্নে পালিত হয়; বিছানা অব্দি ঠাঁই হয় না; শিশুটিও যে আর থাকে না শিশু।
প্রথমবার মা হওয়ার ক্ষেত্রেও কি একই ঘটনা ঘটে?
আমার মা প্রথম সন্তানটিকে নিয়ে যতরকম এক্সপেরিমেন্ট করেছেন, তাকে শিল্প-সংস্কৃতিমনা করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, পড়াশোনাতে প্রথম বানাবার জন্য যত্ন নিয়েছেন, পরবর্তীতে প্রতিকূল পারিবারিক পরিস্থিতিতে বাকি ৩ সন্তানের প্রতি একই চর্চা করার সুযোগ পাননি অনিবার্য কারণেই।
তবে জীবনের এই পর্যায়ে এসে প্রশ্ন জাগে, প্রতিকূলতা না থাকলেও কি তিনি একই উচ্ছ্বাস জারি রাখতে পারতেন অনুজ ৩ জনের ক্ষেত্রে, নাকি অভ্যস্ততাহেতু উচ্ছ্বাসে ভাঁটা পড়তো কিছুটা হলেও?
বড়ো আপার সাথে বয়সের ব্যবধান ৬ বছরের হওয়ায় সে আমার শিশু-মাতা হয়ে উঠেছিল অনেকটাই, কিংবা বলা যায় প্রকৃতিই তাকে হয়ে উঠতে বাধ্য করেছিল, কারণ আমার অনুজের সাথে বয়সের ব্যবধান মাত্র ২ বছর ১ মাস ২৫ দিনের, এবং তাকে ভূমিষ্ঠ করতে আরো অন্তত ৮-৯ মাস আগে থেকে মাকে সতর্ক-সাবধানতার রুটিন মেনে চলতে হয়েছে। আমি নিজেও তো সিনিয়র নবজাতক তখন। সেই সময় থেকেই বড়ো আপাকে ৬ এর পরিবর্তে ১৬ বছরে উন্নীত হতে হয়েছে হয়ত।
আমাদের সম্পর্ক মিথস্ক্রিয়ায় সময় অনেকটা মেঘ আর রোদের অপূর্ব লুকোচুরি খেলার রেফারির ভূমিকা নিয়েছে।
মেঘ থেকে কিছুটা বৃষ্টি ঝরেছিল কি?
১৯৯৯ এর সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে বড়ো আপা ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ার উদ্দেশ্যে যখন মানিকগঞ্জ ছাড়ে, আমি তখন মাত্র ১৩ তে। এই ১৩ বছরের তীব্রতা যেন ১৩ হাজার বছরের সমান বা তারও বেশি। আমার মধ্যে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে মিস করার অনুভূতি কোনোকালেই কি ছিল? নির্বিকারত্ব আর ঔদাসীন্যের আশীষ হয়ত জন্মকালীনই। এই যে বড়ো আপার অনেকটাই চিরতরে বাসা ছাড়া তা কি আমার মধ্যে শূন্যতা সৃষ্টি করেছিল কোনোরকম?
যোগাযোগের ফ্রিকোয়েন্সি অন্তত সে সাক্ষ্য দিচ্ছে না। মোবাইল ফোনের দুষ্প্রাপ্যতাহেতু যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল অনিয়মিতভাবে লেখা চিঠি। সে মাকে পত্র লিখলে ভাই-বোনদের জন্য ২-৩টা বাক্য বরাদ্দ থাকতো, তার মধ্য থেকে এক-দেড়টি হয়ত ভাগে পেতাম। তাতেই খুশি হয়ে উত্তর দিতাম, তবে তা হঠাৎ উল্কাপতনের ন্যায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নিয়মিত নয় কোনোভাবেই ।
পরবর্তীতে ২০০৩ থেকে ২০০৬ এর মে পর্যন্ত প্রায় ৩ বছর একটানা তার বাসাতেই আস্তানা-আশ্রয়।
২০০৬ থেকে ২০১২ এর জুন পর্যন্ত মধ্যবর্তী ৬ বছরে বুয়েটের হলে থাকা এবং বুয়েটে অত্যন্ত জঘন্য একাডেমিক রেজাল্টহেতু তার সাথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধই ছিল। যেটুকু জারি ছিল নিছকই পূর্বজীবনের আত্মিক বন্ধনের রেশসূত্রে। হল থেকে আচমকা বিতাড়িত হয়ে পুনরায় তার বাসায় ফেরত যাই, এবং ২০১৩ এর মার্চ পর্যন্ত সেখানেই সময় কাটে। ২০১৭ এর অক্টোবর থেকে আবারো আমরা একই পাড়ায় অবস্থান করছি। তখন থেকে প্রায়ই মনে হয় ছেলেবেলার মতো যেন একই বাসায় ভিন্ন রুমে বসবাস করছি, কেবল বয়স উলম্বাকারে বেড়ে গিয়ে কিছু শাখা-প্রশাখা তৈরি করেছে আমাদের।
পথের পাঁচালি বইটা পড়ে কৈশোরে আলোড়িত হওয়ার মূল কারণ ছিল অপু-দুর্গার সম্পর্ক-রসায়ন। যদিও আমাদের সম্পর্কটা অপু-দুর্গার চাইতে কিছুটা টম এন্ড জেরি প্রকৃতির, এবং সেটাও বাহ্যিক, বস্তুত মারামারি বা ঝগড়াঝাঁটির চাইতে তার প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যই আমাদের সম্পর্কের মূল ইশতেহার, তবু কিশোর বয়সে অপু-দুর্গার কার্যকলাপ ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছিল, এবং দুর্গা যখন অকালপ্রয়াত হয়, দুর্গার জন্য কষ্ট হওয়ার পরিবর্তে ভয় জেকে বসে : তবে কি বড়ো আপারও একই পরিণতি ঘটবে!
সেই ভয় এখনো পিছু ছাড়েনি, অক্লান্ত দুষ্টচিন্তার লুসিফারের ন্যায় ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকে । মৃত্যু সংক্রান্ত দার্শনিক উপলব্ধিতে পরিণত বয়সে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, তবু যখনই কল্পনা করি বড়ো আপার বাস্তব অস্তিত্বহীন এক শূন্য পৃথিবী, তার ভার দুর্বিষহ লাগে, এবং কল্পনাতেই প্রার্থনামগ্ন হই তার চাইতে আমিই শরীরের অধিকার ত্যাগ করি বরং সেই নিস্পন্দন পৃথিবীকে অনুভবের পূর্বে।
তো কেমন কাটলো ৪০ বছর?
কেবলমাত্র পর্যবেক্ষকের অবস্থান থেকে একজন মানুষের যাপিত জীবন সম্বন্ধে নির্মোহ মূল্যায়ন করা যায় যা আদতে ব্যক্তিগত কিছু ধারণারই সমষ্টি, কিন্তু তার জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো কি ধরা যায়? আমরা এখন আলবেয়ার ক্যামুর জীবনকে মূল্যায়ন করতে গেলে তার লেখা, কর্ম এবং বিক্ষিপ্তভাবে পাওয়া কিছু তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া ব্যক্তিগত উপলব্ধিগুলোই লিপিবদ্ধ করবো, ক্যামু নিজে তাঁর জীবনকে কেমন দেখেছেন তা কি বোঝা সম্ভব?
তাছাড়া আমি অন্তত ব্যক্তি বড়ো আপাকে কখনোই মূল্যায়নের পক্ষে নই, এটা এক সুস্পষ্ট পক্ষপাতিত্ব কিংবা সীমাবদ্ধতা বললেও অত্যুক্ত হয় না।
মূল্যায়নে শুধু প্রশংসা আর ইতিবাচক মনোভাবগুলোই থাকে না, সঙ্গে ক্রিটিকাল পর্যবেক্ষণ থাকতে হয় প্রচুর। আপনি যখন কাউকে ক্রিটিক করবেন তাকে ঘিরে তৈরি হওয়া দেবদূত ইমেজের বায়বীয় ইমারতকেও তখন দৃশ্যমান এক সাধারণ আটপৌরে মানবীয় বসতঘর মনে হবে, কারণ মানুষ কোনো পরমসত্তা নয়। কেবল বোন চরিত্রটাকেই যদি ধরি, আমার বাকি ২ ভাই-বোন কি তার প্রতি আমারই মতো মনোভাব পোষণ করে?
কিংবা সন্তান চরিত্রে সে কেমন? মা চরিত্রে, প্রেমিকা বা স্ত্রী, সহকর্মী, বন্ধু, ভাবী, মামী-চাচী-খালা-ফুপু-নোনাস-শিক্ষক-ক্রেতা-গৃহকর্ত্রী, কত অসংখ্য চরিত্র তাকে ধারণ করতে হয়। সেসব পর্যালোচনা করলে ক্রিটিকাল না থাকা কি সম্ভব?
তার চেয়ে এই ঢের ভালো মূল্যায়নের ঊর্ধ্বে রেখে নিঃশর্ত কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসার ভূমিতে শৌখিন চাষাবাদ করা। এতে স্বস্তি না থাকলেও শান্তি অনাবিল।
আমার পৃথিবীতে বড়ো আপা জীবনের প্রথম ১৩ বছরেই একমাত্র সত্য। যে বয়সে ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয় এবং দার্শনিকতা উঁকি দেয় সেই মহাগুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমরা বিচ্ছিন্ন ছিলাম, এবং যৌবনের ঊষাকালে নিজস্ব চিন্তাপদ্ধতি যখন পূর্ণাঙ্গতা পায় কাকতালীয়ভাবে তখনো বিচ্ছিন্নতা নিয়তি হয়ে উঠেছিল। তার ফলশ্রুতে জগত দেখবার, বুঝবার এবং অন্যকে তা বোঝাবার ভাব, ভাবনা আর ভাষায় আমাদের মধ্যে ভিন্নতা বিস্তর অনুমিতভাবেই, তবু প্রথম ১৩ বছরে বন্ধনের গাঁথুনি এতোটাই পোক্ত যে ১১ মাত্রার ভূমিকম্পতেও তা অটুট থাকার সম্ভাবনাকে অতিকল্পনা ভাবা বিলাসিতা হতে পারে।
আমার লেখা যারা নিবিড়ভাবে পড়ে, কিংবা ব্যক্তিগত সাহচর্যে আসে প্রায় প্রত্যেকেরই বড়ো আপা সম্বন্ধে বিচিত্র কৌতূহল জাগে, তাকে দেখবার বা কথা বলবার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়, জানি না কৌতূহল মিটে গেলে ইমপ্রেসনে কতটা পরিমার্জন ঘটে। তবে যখনই বড়ো আপার কথা বা আচরণ নিজেকে বক্রবিদ্ধ করে একটা প্রশ্নে তা উপশম হয় মুহূর্তেই- যদি বড়ো আপা নানারকম এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটি না করতো, তার সাথে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মানুষের যোগাযোগ না থাকতো, আমার কি লিসেনিং হ্যাবিট তৈরি হত ৫-৬ বছর বয়সেই? কিংবা যদি সে প্রচুর বই পুরস্কার না পেত, কিংবা চিঠি লেখার অভ্যাস তার না থাকতো আমি কি ১০ পেরুনোর পূর্বেই বিভিন্ন মনীষির জীবনি পড়া আর লেখালিখির চিন্তা করতাম?— প্রতিবারই দৈত্যস্বরে কেউ চিৎকার করে উঠে- ‘না না কখনোই না’।
আমার এখনো মনে পড়ে ১৯৯১-৯২ তে ঘিওরে বাড়ির উঠোনে সমবয়সী প্রতিবেশি বাচ্চাদের নিয়ে ফুপাতো ভাই শাহাদত ভাইয়ের সাথে বড়ো আপা এক প্রতিভা প্রদর্শনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। কেউ কবিতা আবৃত্তি করছে, গান গাইছে, কৌতুক বলছে, এবং বিজয়ীরা কলম, কসকো সাবান সহ বিভিন্ন ধরনের পুরস্কার পাচ্ছে। তখন তার নিজের বয়স ১২-১৩ এর কম নিঃসন্দেহে। সেই প্রতিভা প্রদর্শন অনুষ্ঠানের ইমপ্যাক্ট কতটা সেই সময়ে বুঝিনি, বড়ো হবার পরে যখনই আত্ম অনুসন্ধানে ব্যাপৃত হই, ইমপ্যাক্টের প্রখরতা ঝলমল করে।
কিংবা ঘিওরে কাটানো আর্লি শৈশবে ঢাকাকে মনে হত বিদেশ। বাসা থেকে বাস চলাচলের শব্দ শোনা যেত, কখনো চড়া হয়নি, চলন্ত বাস দেখে বিস্মিত হতাম। বড়ো আপা বাসে চড়ে ঘিওর থেকে ঢাকা যাচ্ছে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এটাই তাকে মনীষী গণ্য করার জন্য যথেষ্ট ছিল। সেই নির্দোষ সারল্যটাকে সযত্নে বাঁচিয়ে রেখেছি বলেই হয়ত চাহিদা, প্রত্যাশা, পরিচিতি কিংবা প্রাপ্তিপ্রশ্নে কখনোই জীবন-একাউন্টের লেজার শিট মেলাতে ইচ্ছা জাগে না। থাক না কিছু খুচরো অথবা বৃহৎ গোঁজামিল! এতে কল্যাণ নাকি অনর্থ ঘটলো অনুভবের ক্ষেত্রে গণ্ডারের চামড়া পরিধান করে নিঃশ্বাস নিই নিঃশব্দে।
বড়ো আপার পুত্র জারিফের শারীরিক অবয়ব অনেকটা আমার আদলের, আমার কন্যা তেইশ যেন অবিকল বড়ো আপার প্রতিচ্ছবি। এই ইন্টারচেঞ্জেবল অন্তঃমিলটা অবিমিশ্রিত সুখের সারথি হয়ে উঠছে দিনকে দিন।
প্রিয় বড়ো আপা, যেহেতু ৪০ এ স্পর্শ করলে, আয়ুষ্কাল যা-ই হোক অনুমান করতে পারি অর্ধেক বা তারও বেশি খরচ হয়ে গেছে। এখন প্রতিটা বছর বাড়বে আর নিশ্চিত হতে থাকবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সেই শোকার্ত মুহূর্তের দিকে ক্রমশ ধাবমান হচ্ছি। মৃত্যু কি শূন্যতা, নাকি স্মৃতির পূর্ণতা? ধরা যাক, তুমি কিংবা আমি ডেনমার্কে অভিবাসী হলাম। সেটাও তো যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা একধরনের, যদিওবা ভারচুয়ালি কানেক্টেড থাকা যায়। এই বিচ্ছিন্নতাও তো মৃত্যুর কাছাকাছিই। অমোঘ শূন্যতার যে পরিণতি আহ্বান জানায় প্রতিটি মানুষকে তার সান্নিধ্যে গেলে জাগতিক মিথস্ক্রিয়াগুলোও কি নিশাদল হয়ে হারিয়ে যায়? এইসব অমীমাংসিত ভাবনাগুলোকে সাময়িক রূপকথার সেই বাক্সবন্দী প্রাণভোমরার সাথে খেলাধুলায় মগ্ন রাখি।
মৃত্যু নামক দুরন্ত রাজপুত্র তার সন্ধান পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রতিটি ২৩ শে জুলাই পৃথিবীর রঙ,রূপ,রস, গন্ধ নতুন সাজে তোমার বাসার বারান্দায় প্যারেড করতে থাকুক, যে বারান্দার সীমানা শ্যামলি রিংরোড থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের ওপারের দেশ ছাড়িয়ে এন্টার্কটিকার গহীনতম প্রকোষ্ঠ পর্যন্ত বিস্তৃত!
আবেগের হেঁশেলে বহু গুরুপাক খাবার রান্না হলো এতোক্ষণ, একটু বোরহানি বা ডেজার্ট না হলে হজমে গোলোযোগ দেখা দিতে পারে। শেষ বৈঠকে সেটাই পরিবেশন করি এবার;
জীবনানন্দ দাসকে ঘিরে যে অবসেসন তোমার সেটা বিশুদ্ধ নাকি ফরমালিন মেশানো সেই সত্যাসত্য নির্ণয়ের জন্য হলেও একখানা সুডৌল ফিকশন লিখো তাকে নিয়ে, শরীর অচল হবার পূর্বেই। শুনতেছি তুমি বইটই লিখতেছো ইদানীং, অটোগ্রাফও নাকি দিতেছো? মাহফুজুর রহমানের জন্য একটা গান লেখার ব্যাপারটা চিন্তা করে দেখবা নাকি?