আমি এযাবৎকালে যত সিরিয়াস লেখালিখি করেছি তার বেশিরভাগ এবং আগামীতে যত লেখালিখি করবো তার সবগুলোকে ইংরেজিতে রূপান্তরের উদ্যোগ নিচ্ছি। ২০১৬ এর নভেম্বরেই চিন্তা করেছিলাম ২০১৭ এর ডিসেম্বরের পর বাংলা ভাষা বাদ দিয়ে পুরোপুরি ইংরেজিতে অথবা দুই ভাষাতেই লিখবো। কিন্তু লেখালিখি কখনোই আমার জীবনের শীর্ষ ৫ প্রায়োরিটিতে ছিলো না, একইসাথে বাংলা, ইংরেজি দুই ভাষাতেই লিখতে গেলে লেখার বাইরে অন্য কাজে সময় বের করাই মুশকিল হয়ে যাবে। তখন ভাবি, শুধু ইংরেজিতেই লিখবো। ২০১৭ এর পুরোটা প্রায় এ ভাবনাতেই কেটেছে। নভেম্বরে এসে ফিল করি আমি ইংরেজিতে লিখতে পারি সর্বোচ্চ এভারেজ লেভেলের, কিন্তু বাংলায় লিখতে পারি তার চাইতে অনেক ভালো। অনেক ভালোভাবে যেখানে কল্পনা/ চিন্তা প্রকাশ করতে পারি, সেই অপশন বাদ দিয়ে যেখানে আমার স্ট্যান্ডার্ড গড়পড়তা বা তার চাইতেও নিচে সেটাকে বেছে নেয়া ভুল ভাবনা।

কিন্তু ২০০৯ এ যখন মিলান কুন্ডেরার আনবিয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং অনুবাদ করেছিলাম, বা নাইজেরিয়ান লেখকদের বই পড়তাম তখনই মনে হতো, শুধুমাত্র ইংরেজিতে না লেখার কারণে বিশ্বের বহু দেশেই আমার লেখাগুলো পৌঁছুতে পারবে না, আমি তো গণ্ডিবদ্ধ মানুষ হিসেবেই থেকে যাবো তাহলে!

গত বছর নিজের ব্যক্তিগত ব্লগ চালু করেছি himalaypi.com নামে। ফেসবুকে প্রকাশিত আমার সমস্ত লেখাই সেখানে জমিয়ে রাখি। ২০১৫ তে যখন ক্রিকেট লিটারেচার ‘বেনিফিট অব ডাউট’ লিখছিলাম তখনই প্ল্যান করেছিলাম বইটা একই সাথে ইংরেজিতেও প্রকাশ করবো। নিজেই ইংরেজি লেখার দায়িত্ব নেয়ায় তা আর পেরে উঠিনি। এবার যখন ২৫ বছরের মানব গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ বিষয়ে বই লিখতে শুরু করি, প্রথম থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এটাকে ইংরেজিতে কনভার্ট করবোই। এই পরম্পরাতেই একদিন মনে হলো, ভাষা তো স্রেফ কমিউনিকেশন টুলস; আমি যে ভাষায় সবচাইতে সুন্দরভাবে চিন্তা প্রকাশ করতে পারি, আমি সেটাই চালিয়ে যাই, ইংরেজিতে ভাষান্তর করার কাজটা নাহয় আরেকজন করে দিবে।

এই ভাবনা থেকেই একজন চিন্তাচালক এর সাহায্য নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শব্দটা লক্ষ্য করুন, আমি কিন্তু অনুবাদক বা দোভাষি চাইছি না, আমি চাইছি একজন চিন্তাচালক যে আমার চিন্তাকে ইংরেজি ভাষায় চালনা করবে। এজন্য আমার লেখালিখি সম্পর্কে ধারণা, আমার থিংকিং, ফিলোসফি, ভিশন প্রভৃতি সম্বন্ধে গভীর এটাচমেন্ট জরুরী। আমার ব্যক্তিগত ব্লগের ইংরেজি ভারসন নিয়েও কাজ চলছে, এবং প্রতিটি লেখায় ‘কো-থিংকার’ হিসেবে চিন্তাচালকের নামও উল্লেখ থাকবে। এটা ১-২ মাসের প্রজেক্ট নয়, বলা যায় দীর্ঘদিনের এক জার্নি। চলতি পথে বহু চিন্তাচালক্ই বদল হবেন জানি, তবু যতদিন কাজটা করা হচ্ছে আনন্দটুকু সতেজ থাকুক।

যেহেতু ইংরেজিতে পুরো লেখাকে রিপ্রোডিউস করতে হবে, এর জন্য শ্রম, মেধা, সময় ব্যয় হবে। এর কোনোটাকেই মূল্যায়ন করার যোগ্যতা আমার নেই, তবু এটা জানি পোশাক কিনতে, মোবাইলে রিচার্জ করতে, বই কিনতে, বা বাসে যাতায়াত করতে বিনিময় মাধ্যম হিসেবে কাগজের নোট দিতে হয়। সৃষ্টিকর্তা আমাকে অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়েছেন, কিন্তু কাগজের নোটের প্রতি মোহ বা আকর্ষণ দেননি, যে কারণে ভদ্রস্থ সংখ্যক কাগজের নোট দেয়ার সামর্থ্য আমার নেই (থাকলে অবশ্যই দিতাম), তবে যতগুলো নোট মিলে ৩৭০০ টাকা হয় মাসে, সেই কয়টা নোট আমি ম্যানেজ করতে পারবো আশা রাখি। চাকরি মনে করলে অবশ্যই আপনার এই কাজকে বেগার খাটুনি মনে হবে, তবে আপনি যদি ‘চিন্তাচর্চায়’ উৎসাহ পান, হয়তোবা কাজটাতে আনন্দও পাবেন। আমার সামর্থ্য বাড়লে আপনাকে দেয়া কাগজের নোটের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে।

ভাবুন, সিরিয়াসলি ভাবুন, নিজেকে প্রশ্ন করে ক্লিয়ার হন, তারপর সিদ্ধান্ত নিন ‘চিন্তাচালক’ হবেন কিনা। ফেসবুকের বাইরেও আছে বৃহৎ জীবন এক। সেই জীবনে চিন্তায় চলুন, কল্পনায় বাঁচুন। আপনার/আপনাদের অপেক্ষায়