ম্যানেজার(!) লিপু ভাই,
বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আমি বলি টেস্টটিউব বেবি। এতদিনে কারণ স্পষ্ট হওয়ার কথা।
এই টেস্টটিউব বেবি জন্ম নিয়েছিল ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফিসূত্রে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনের মধ্য দিয়ে। আপনি ছিলেন সেই দলের ম্যানেজার। মাত্র পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তাম, আবেগটাও অনেক বেশি তখন। আপনি বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে অধিনায়ক, বর্তমানে প্রধান নির্বাচক—বিস্মৃত হই, আপনাকে মনে পড়লেই আমার স্মৃতিতে সেই আইসিসি ট্রফি জয়ী ম্যানেজারটিই ফেরত আসে।
২ বছর আগে হোয়াটসআপ এ কথা হয়েছিল ২ মিনিট, আপনার সঙ্গে দেখা করবার কথা ছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেটের গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে আপনার সম্পৃক্ততা ছিল না তখন। অন্যান্য প্রায়োরিটিতে আপনাকে ২য় বার আর ফোন করা হয়নি। উচিত ছিল।
বাংলাদেশে নির্বাচক হওয়াটা সবচাইতে সহজ কাজ। আমাদের কোয়ালিটি ক্রিকেটারের এতই সংকট, আপনার পরিবর্তে যদি আমার শিষ্য কাওসার দল নির্বাচন করে ১৩টা পজিশনে আপনারা একমত হতে বাধ্য হবেন, ২টা পজিশনে দ্বিমত, সেটুকুও খুব ম্যাটার করবে না৷ যদি দলে খেলার মতো ২৯ জন প্লেয়ারের পুল থাকত, প্রতিটি পজিশনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, তখন নির্বাচকের ক্যারিশমা দেখানোর সুযোগ ছিল।
নির্বাচক হয়ে উচ্চবেতন আর ফ্যাসিলিটি ভোগ করবেন, তাতে ব্যক্তিগতভাবে আপনি লাভবান হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটে ইমপ্যাক্ট পড়বে না একচুলও।
কোয়ালিটি প্লেয়ার না হওয়ার মূল দায় ক্রিকেট অপারেশন্স এবং গেম ডেভেলপমেন্ট উইংয়ের। তারা আদ্যন্ত ব্যর্থ।
আমি মনে করি জালাল ইউনুসকে অব্যাহতি দিয়ে আপনাকে ক্রিকেট অপারেশনস এর চেয়ারম্যান করলে আপনার মুন্সিয়ানা বোঝার সত্যিকারের চান্স তৈরি হত। ছোটবেলা থেকে দেখছি এই ব্যক্তি বিসিবির কোনো না কোনো পদে যুক্ত।
আমি যদি একজন দীর্ঘদিনের ক্রিকেট দর্শক হিসেবে প্রশ্ন করি গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে জালাল ইউনুসের ইমপ্যাক্ট কী, আমার মনে হয় না কনভিন্সিং কোনো জবাব পাব।
যে কোনো সংগঠনের সাফল্য নির্ভর করে সাধারণ সম্পাদকের পারফরম্যান্সের উপর, সভাপতি ফেসভ্যালুর বাইরে কিছু না। আমাদের প্রতিটি সংগঠন ফেইল করে মূলত ক্লিকবাজ প্রকৃতির সাধারণ সম্পাদকদের বিহাইন্ড দ্য সিন কার্যকলাপের খেসারত হিসেবে।
বিসিবিতে কোনো স্বীকৃতি সাধারণ সম্পাদক পদবি নেই, তাই বিভিন্ন ডিরেক্টরদের মধ্যে যারা প্রভাবশালী, অলিখিতভাবে তারাই শ্যাডো সাধারণ সম্পাদক।এবং এখানেই জালাল ইউনুসরা এক্সপোজড হয়ে যান।
আমার এনালাইসিস বলে আপনাকে প্রধান নির্বাচক বানানো একটা ট্র্যাপ৷
যখনই কেউ ক্ষমতাবানের বানানো সিস্টেমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পটেনশিয়ালযুক্ত হয়, তাকে রিওয়ার্ড দেয়ার মাধ্যমে ক্ষমতাবান নিজের দলে ভিড়িয়ে ফেলে৷ ক্ষমতার ডায়নামিক্সে এটা খুব বেসিক লেভেলের ট্রিক্স। আমি বিস্মিত হতাম না যদি নাজমুল আবেদিন ফাহিম স্যারকে কোনো একটা শৌখিন পদে বসিয়ে পাপেট বানিয়ে ফেলা হত, বা আগামীতে ঘটতেও পারে তেমনটা। মিডিয়াতে আপনাদের বক্তব্য আসে প্রতিনিয়িত, আপনাদের অপিনিয়নের ভ্যালু তৈরি হয়। ফলে ব্যক্তি লিপু বা ফাহিম স্যার এখানে মূখ্য নয়, আপনাদের অপিনিয়নকে কিনে নেয়া হয় বা হচ্ছে।
আপনি যদি জাতীয় দলের বাইরে থাকা খেলোয়াড়দের নিয়ে ১৫ জনের একটা কম্পিটিটিভ স্কোয়াডই গঠন করতে না পারেন যারা জাতীয় দলের সাথে ৫ ম্যাচের সিরিজ খেললে ২টাতে অবশ্যই জিতবে বলে অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস না করে, আপনার ওই নির্বাচকের চেয়ারে কোনো স্কুলবালক বসলে তার জীবন ধন্য হত, আপনার তো বরং চেয়ারে বসলে কাঁঁটা আর পেরেক বিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত বোধ করার কথা।
কখনো ফারুক আহমেদ, কখনো মিনহাজুলকে সামনে রেখে আমরা বরাবরই জালাল ইউনুসদের সেফগার্ড দিয়েছি। সেখানে লিপু আরেকটা নামমাত্র৷ বিশ্বকাপে দল ফ্লপ করবে, তারপরই পোষ্য কনটেন্ট ক্রিয়েটররা শুরু করবে ‘যাহা নান্নু তাহাই লিপু’;
আপনি কি ডিজার্ভ করেন এমন ট্রিটমেন্ট?
যেহেতু আপনার মিনিংফুল কিছু করার নেই, অলস সময়ের জালে ঢুকে পড়েছে কলকাতার সিনেমা ‘ফাটাকেস্ট’।
৭ দিনের জন্য মন্ত্রী হয়ে সমাজ পাল্টানোর উদ্ভট হম্বিতম্বিসর্বস্ব সিনেমার আইডিয়া প্রথম দেখেছিলাম অনিল কাপুর অভিনীত ‘নায়ক’ সিনেমায়। বাংলাদেশেও আছে এর মান্না সংস্করণ- ‘মিনিস্টার’! তবে কাল্ট ফিগার হয়েছে মিঠুন চক্রবর্তী সংস্করণটাই। সঙ্গে ডায়লগ- ‘শালা মারব এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানে’!
আপনার প্রথম এসাইনমেন্ট ছিল শ্রীলংকার বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচের জন্য দল ঘোষণা।
‘নতুন বলে খুবই অধারাবাহিক হওয়ায় আমরা লিটন দাসকে দলে রাখছি না’- মাত্র এক ম্যাচের জন্য একটা দল ঘোষণা করলেন, একজন রেগুলার প্লেয়ারকে একাদশ থেকে নয় দল থেকেই বাদ দিলেন, যে কিনা আবার ২ দিন পরে হওয়া টেস্ট সিরিজের দলে অবশ্যই থাকবে।
আপনার স্টেটমেন্ট কি যথার্থ ছিল ভাই? লিটন দাস ওপেনার হিসেবে সর্বশেষ খেলেছিল বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তার আগে শ্রীলংকা এবং পাকিস্তান। মাঝে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩টা ওয়ানডে খেললেও সেখানে নতুন বল নয়, খেলতে হয়েছে ৪ নম্বরে!
শ্রীলংকার বিপক্ষে টানা দুটো শূন্য রানে আউট না হলে কি তাকে বাদ দিতেন? ধরা যাক প্রথম ম্যাচে ১৭, দ্বিতীয় ম্যাচে ০; দুটোই খারাপ পারফরম্যান্স!
কিন্তু যেহেতু ২ ম্যাচে শূন্য, ফেসবুক উত্তাল, আপনি কেবল ফেসবুককেই ফিড করেছেন। নইলে একটা অগুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সিরিজের মাত্র ১ ম্যাচের একটা স্কোয়াড দিতে একটা ছোট্ট প্রেস রিলিজই যথেষ্ট, সেখানে বাদ পড়া খেলোয়াড়ের নাম এবং যে কারণটা ভিডিওতে বলেছেন ওটাই উল্লেখ থাকতে পারত।
ভিডিও ক্লিপিংস দিয়ে ফাটাকেস্ট হওয়ার বাইরে কিছু কি এচিভ হয়েছিল?
আপনার একটা স্টেটমেন্ট আমার মনে ধরেছিল, আমি প্রবল প্রতাপে অপেক্ষায় আছি একটি সিম্বলিক মুহূর্তের। বিসিবি প্রেসিডেন্টকে তোষণ করাই সর্বজনীন নীতি। আপনার ১৯৯৭ দলের খেলোয়াড় সুজন তোষণকে নিয়ে গেছেন উচ্চ পর্যায়ের স্মার্টনেসে। প্রায়ই টিভি ক্যামেরায় তাকে বলতে শুনি- ‘আমি খেলোয়াড়ি জীবনে সবসময় ক্যাপ্টেনের কথা মেনে চলতাম। এখন পাপন ভাই আমার ক্যাপ্টেন, উনি কিছু বললে আমার অবশ্যই শুনতে হবে’
শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্টে লিটন দাসকে কেন খেলানো হলো প্রশ্নে জনাব পাপনের উত্তর ছিল- তাকে না খেলালেই ভালো হত, ব্রেক দেয়া দরকার ছিল।
আপনি বলেছিলেন- ‘উনি উনার মতামত দিয়েছেন, ফাইনাল কল আমাদেরই’
বাংলাদেশের কালচারে এটা বৈপ্লবিক দৃষ্টান্ত। তবে এসব খুচরা বিপ্লবে পোষাবে না৷ আমি বৈপ্লবিকের পূর্বে ‘বিরাট’ বিশেষণটি বসানোর প্রতীক্ষায়।
আমরা জানি অধিনায়ক নির্বাচন বোর্ডের সিদ্ধান্ত৷ আপনি যখন দল নির্বাচন করেন প্লেয়ারের নাম নয়, পারফরম্যান্সই নিশ্চয়ই থাকে বিবেচ্য। সেই পারফরম্যান্স প্যারামিটারে আপনার ১৫ সদস্যের টি২০ দলে নাজমুল শান্ত চান্স পেল না, আপনি মিডিয়াতে ঘোষণা দিলেন পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে টি২০ টিমে নাজমুল শান্তকে আমরা রাখছি না, কিন্তু যেহেতু সে অধিনায়ক, বোর্ড যদি মনে করে আমাদের দেয়া ১৫ জন থেকে একজনকে সরিয়ে তাকে রাখতে পারে!
যদি তেমন কিছু করতে পারেন আপনার ফাটাকেস্ট হওয়ার ফাঁদে পড়তে হবে না, ব্যক্তিগত গ্রিট আর ভিশনের আলোতে এমনিতেই সম্মানিত হবেন।
আপনার খেলোয়াড়ি জীবনে ওয়ানডে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে, শারজাহ কাপ হাইপ তুলছে। সেসময় ওয়ানডেতে স্ট্রাইকরেট ৮০ রাখাটাই ছিল এক্সিলেন্স লেভেল। টি২০ এসেছে অনেক পরে। আমার পর্যবেক্ষণ বলছে টি২০ খুব বেশি দেখেন না, বা এই ফরম্যাটকে ক্রিকেটই মনে করেন না।
কিন্তু টি২০ টিকে গেছে, একে আর অবহেলা করা যাচ্ছে না।
আইসিসি ট্রফির কারণে আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা কাজ করে। সেই শ্রদ্ধার্ঘ হিসেবে একটা প্রস্তাব রাখতে পারি- আপনি অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড-ভারত-সাউথ আফ্রিকা এই ৫ দলের টি২০ খেলা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখবেন।।আইপিএল বা ফ্র্যাঞ্চাইজি ২০ রেকমেন্ড করব না, কারণ ওখানকার ক্যারেক্টার আলাদা।
দেখলে অবাক হবেন তারা সবকিছুর উপরে গুরুত্ব দেয় স্ট্রাইকরেট, এরপরে প্যাকেজ টাইপ ক্রিকেটার, যারা ভাঙতি স্টাইলে কন্ট্রিবিউট করে।
মেহেদি মিরাজকে টি২০ সেট আপ থেকে ছেটে ফেলাটা ব্লান্ডার হয়েছে৷ তার স্ট্রাইকরেট ১১৮.৬৬ খুব ইমপ্রেসিভ নয়, কিন্তু আপনার অধিনায়ক যেখানে মাত্র ১১১ স্ট্রাইকরেটের টপ অর্ডার, সেখানে তার ২ ওভার বোলিং-ফিল্ডিং এবং ব্যাটিং মিলিয়ে কেন বিবেচনায় রাখা হলো না, এর একটাই ব্যাখ্যা হতে পারে আপনার ক্রিকেট সংক্রান্ত সাবেকি ধাঁচের চিন্তা।
আপনি গতকাল প্রেস কনফারেন্সে বলেছেন কোন খেলোয়াড় দলে না থাকা নিয়ে সমালোচনা করলে সে কার জায়গায় থাকতে পারত সেটাও যেন প্রস্তাব করা হয়। আমি বলছি তানভীর ইসলামকে ট্রাভেলিং রিজার্ভ রেখে সেখানে মিরাজকে অনায়াসে এফোর্ড করা যেত। সাকিব যেহেতু খেলবে, আমার মনে হয় না তানভীরের শ্রীলংকা বা সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে কোনো সুযোগ থাকবে।
শ্রীলংকা বোলিং ওপেন করায় থিকসানাকে দিয়ে। গত এশিয়া কাপে মিরাজ তাকে দারুণ সামলেছে৷ আপনার ওপেনার তানজিদ এবং সৌম্য স্পিনে খাবি খায়, ইতোমধ্যেই ডেটা দিয়ে প্রমাণিত৷ মিরাজ কখনো শেখ মাহেদির কম্পিটিটর হতে পারে না। মিরাজকে অনায়াসে ৫-৬ এ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলিয়ে দেয়া যায়, হ্যান্ডি অপশন।
মিরাজকে সেট আপ এ না রাখা টি২০ অজ্ঞতার নির্ণায়ক হলে, ওয়ানডে আর টি২০ কে গুলিয়ে ফেলার পারফেক্ট নজির সৌম্য সরকারকে রাখা৷ সৌম্য টি২০ তে ৬০+ ইনিংসে ব্যাট করেছে, ইমপ্যাক্ট সম্পন্ন ইনিংস মনে করতে পারবেন ৬টা? রিসেন্ট পারফরম্যান্সও কি তাকে দলে নেয়া সমর্থন করে? সর্বশেষ বিপিএল এ সে নিয়মিত ব্যাট করেছে মিডল অর্ডারে। এমনকি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যে ম্যাচে রান করলো ৪০ করতে বল খেললো কতগুলো? তবু সৌম্য ফিরেছে, কারণ সে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি তুলেছিল।
ম্যাচটা যে ওয়ানডে ছিল, মনে পড়ে কি?
সৌম্যের চাইতে ডিজার্ভিং ছিল নাঈম শেখ, যদি বিপিএল এর পারফরম্যান্সকে আমলে নিই। কিন্তু সে পাবে না, কারণ ফেসবুকে তার অপবাদ স্লো খেলার দায়ে। যে দলের অধিনায়ক শান্ত, সেখানে স্ট্রাইকরেটের চাইতে নাঈম শেখের ৫টা ফিফটিই কি অধিক বিবেচ্য হওয়া উচিত না? আপনাদের নীতির মধ্যে কনসিসটেন্সি থাকতে হবে তো।
সাইফুদ্দিনকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তকে এপ্রিসিয়েট করি। ১২৫-২৬ গতির বোলিং যে মিথ এবং শ্রীলংকা বা সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে অচল, এটা অনুধাবন করায় সাধুবাদ। তার ব্যাটিংয়ের গল্পই শুনে গেলাম জীবনভর, দুর্ভাগ্যক্রমে টি২০ তে কোনো ইনিংস মনে করতে পারছি না।
তবে ‘ফাটাকেস্ট প্রলোভন’ উপেক্ষা করা কঠিন। আপনাকে তা এনে দিতে পারে লিটন দাস ইস্যুতে ঝেড়ে কাশলে।
আশা করছি কোনো একটা প্রেস কনফারেন্সে বলবেন- ‘একজন প্রফেশনাল এথলেট হিসেবে যতটুকু ওয়েল ম্যানারড হওয়া উচিত, লিটন দাসের ম্যানারে খুবই ঘাটতি থাকায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এক্সেপশনাল পারফরম না করলে কেবল এভারেজ পারফরম্যান্সের জন্য লিটন দাসকে আর সুযোগ দিব না। এভারেজ পারফরমই যদি করে সেখানে একজন ওয়েল ম্যানারড প্লেয়ারকে সুযোগ দেয়া উচিত, কারণ তাদের কাছে মিডিয়াকর্মীদের অনেকরকম প্রত্যাশা থাকে, তারা সমাজের আইডল’
আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি এই স্টেটমেন্টটা সাহস করে একবার দিয়ে দিলে বুক থেকে বিরাট পাথর নেমে যাবে আপনার, রাতারাতি আপনি মিঠুন চক্রবর্তীর মর্যাদা পাবেন ৩ দিন ধরে।
লিটন দাস ইস্যুতে আপনার মন্তব্যগুলো অফেন্সিভ।
টি২০ তে বাংলাদেশ অতি বাজে দল, এর মধ্যেও যদি জিজ্ঞেস করি বাংলাদেশের বেস্ট টি২০ ব্যাটসম্যান কে; স্ট্রাইকরেট-পারফরম্যান্স আমলে নিয়ে দেখেন লিটনকে কেউ ক্রস করতে পেরেছে কিনা।
অথচ সেই বাংলাদেশ এতটাই উন্নতি করেছে যে লিটন দাসকে বিশ্বকাপের দলে রাখার যুক্তি হিসেবে বলতে হচ্ছে ব্যাক আপ কিপার এবং কনকাসন সাব!
বিপিএল এ অধিনায়ক শান্তর পারফরম্যান্স কী, বিপরীতে লিটনের কী!
নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সর্বশেষ জেতা টি২০ তে কে জেতালো। শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৬৫ চেজ করা ম্যাচে ৬ ওভারে ৬৮ তোলার পরই জয় ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র, সেখানে একজন ওপেনার দেড়শো স্ট্রাইকরেটে ৩৬ তুলেছিল। বলতে হবে তার নাম কী!
কিছু মানুষের ক্যারেক্টার একটু আন অর্থোডক্স প্রকৃতির হয়। ব্যাটসম্যানদের ব্যাপারটাও তাই। লিটন হালকা পুশ করে চার মারছে দেখে যেমন অবাক লাগে, আউট হলেও মনে হবে আগলি শট কেয়ারলেস শট— দর্শক যে যার মতো ক্ষোভ ঝাড়বে। আবার আনন্দে হুল্লোড় করবে। আপনিও যদি সেলুনের কর্মচারী কিংবা আমার বুয়েটিয়ান সিনিয়র ওয়াহিদ ইবনে রেজার আদলে চিন্তা করেন বা একশন নেন, এতদিন ধরে ক্রিকেট খেলে উপলব্ধিটা হলো কী তবে!
বরং সাংবাদিকদের বলা যেত পারত- ‘লিটনের স্ট্রাইকরেট কম থাকছে ইদানীং, এটা নিয়ে আমরা চিন্তিত’! জাকের আলি অনিক না কিপার না ফিনিশার ধরনের এক প্লেয়ার যার দলে আসাটাও কোচ সালাহউদ্দিনের ভাইরাল হওয়া মন্তব্যসূত্রে, তার ব্যাক আপ অপশন আমাদের সেরা টি২০ ব্যাটসম্যান!!
আমরা যদি শান্ত, সৌম্য, হৃদয়, সাকিব, রিয়াদ, লিটনের শেষ ১৫ টি২০ পারফরম্যান্স আমলে নিই, আমার মনে হয় আপনি লজ্জা পাবেন!
বিশ্বকাপ সন্নিকটে তাই টি২০ কেন্দ্রিক আলাপই করলাম বেশি। এবছর ওয়ানডে আছে মাত্র ৩টি৷ টেস্টে দুটো ম্যাচ গেছে।
নির্বাচকের পারফরম্যান্স প্যারামিটারে ১ নম্বরে থাকবে কোয়ালিটি ক্রিকেটারকে সুযোগ দেয়া।
আমি দেখতে চাই আপনার শাসনামলে বাংলাদেশ ৩ জন কোয়ালিটি ব্যাটসম্যান এবং ৩ জন কোয়ালিটি বোলার খুঁজে পেয়েছে, যাদের উপর আপনি আস্থা রেখেছিলেন। পেসার নাহিদ রানাকে টেস্টে সুযোগ দেয়ায় ১ জন বোলারের কোটা পূরণ হয়েছে। বাকিগুলোর অপেক্ষায়।
প্রতিষ্ঠিত প্লেয়ার যেমন লিটন-শান্ত-মিরাজ-সৌম্য-তাসকিন-মুস্তাফিজ-তাইজুল কে কীভাবে হ্যান্ডেল করেন,
ইমার্জিং প্লেয়ার, যেমন হৃদয়-তানজিদ-রিশাদ-তানভীর-জয়-দিপু-শরীফুল প্রমুখকে কীভাবে সুযোগ দেন,
স্ট্রাগলিং প্লেয়ার, যেমন মাহেদি-নাসুম-সোহান-নাঈম শেখ-আফিফ- হাসান মাহমুদ-জাকির-খালেদ-সাইফুদ্দিন এর কামব্যাকে কীভাবে অবদান রাখেন—- সেটাও আপনার অনেক বড় এসাইনমেন্ট।
এখনো পর্যন্ত সেই অংশে আপনি আকাশ-বাতাস সাক্ষ্মী রেখে ফেইল।।
ফাটাকেস্ট সিনেমাতেই থাকুক বরং, আপনি মাইক্রোফোন নামিয়ে হেডফোন গুজুন কানে, মস্তিষ্ক চালু হোক।
২ বছর আগে যে দেখাটা হওয়ার কথা ছিল, এখন বাস্তবতা বদলে গেছে বিস্তর। তবে তখনো আমার নাম হিমালয় ছিল, আপনার গাজী আশরাফ হোসেন লিপু!