শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে বিলং করা শহুরে অথবা মফস্বল নিবাসী বাঙালি পুরুষ পৌনে চল্লিশ বছর যাবৎ অকৃপণ অক্সিজেন গ্রহণ করেছে, জীবনে একমুহূর্তের তরেও চায়ের স্বাদ পরখ করেনি— আমার বিচরণের পৃথিবীতে এটা বিরলতম ঘটনা। পৌনে পয়ত্রিশের এ যাযাবর জীবনে চা পানে অনাগ্রহী কিংবা চা পানে ইস্তফা দেয়া কয়েকশত মানুষের সংস্পর্শে এসেছি, কিন্তু কোনোদিনই চা মুখে তুলেনি এমন মানুষের দেখা পাওয়াটা বিস্ময়ের চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত আমার জন্য।
আপনি/আপনারা কি উল্লিখিত শর্তসাপেক্ষে এমন মানুষ চেনেন?
কেননা,
আমার জন্য চা পান ছিল এক ধরনের চাকরি। ধরা যাক আপনি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট অথবা সেলস-মার্কেটিংয়ে চাকরি করেন, প্রতিদিন আপনার সুনির্দিষ্ট কিছু কর্তব্য পালন করতে হয়। চা পানের চাকরিটাও তেমন। প্রতিদিন ন্যূনতম পরিমাণে চা পানের বিপরীতে আপনি বেতন পাবেন, শর্ত হলো নতুন বা পৃথক মানুষের সঙ্গে চা পান করতে হবে। ২০১৫ তে একটা আলাপন সাইট তৈরি করেছিলাম ‘খোশগল্প ডট কম’ নামে। তার লোগো ছিল ধূমায়িত চায়ের কাপ। ৬ বছর পরে নিজের জন্য যে ভিজিটিং কার্ড ব্যবহার করছি সেখানেও চা-চায়ের কাপকে এড়াতে পারিনি। ভবিষ্যতে চা-পান কেন্দ্রিক কয়েকটা চাকরি ডিজাইনের সংকল্প তীব্রভাবেই ধারণ করি, যারা মূলত সোসিওলজিকাল ডায়নামিক্স গবেষণায় ডেটা কালেকশনের কাজ করবে।
এবছর ঈদের সময় এক শুভাকাঙ্ক্ষী মন্তব্য করেছিলেন ‘আপনার সঙ্গে ক্রেজি কয়েকজন ধনীর পরিচয় থাকা উচিত, যারা আপনার উপর ইনভেস্ট করবে’
শারীরিক সম্পর্কের অভিজ্ঞতাহীন ব্যক্তিকে বলা হয় ভার্জিন, ধূমপানের ক্ষেত্রে ননস্মোকার, মদ্যপানের ননড্রিংকার। চা পান কি ধূমপান বা মদ্যপানের মতো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, কিংবা বাংলাদেশের সোসিও-কালচারাল আসপেক্টে নিন্দনীয় অভ্যাস? কোনোক্রমেই নয়। তাই পুরোপুরি চা-সঙ্গ বিবর্জিত এ ব্যক্তির সঙ্গেকার আলাপে ‘চার্জিন’ শব্দটাই প্রথম কড়া নেড়েছিল ভাবনায়।
আমার পৃথিবীর একমাত্র চার্জিন এ ব্যক্তির নাম জনি চৌধুরী। বাংলা সিনেমার বদৌলতে চৌধুরী টাইটেলের যে মনোজাগতিক গ্রহণযোগ্যতা তাতে এই ব্যক্তির প্রতি বাংলা সিনেমার বিখ্যাত কমেডিয়ান জসিমের সংলাপ হয়তবা হত এমন- ‘চৌধুরী অর্থ আর আভিজাত্যের মোহে আজ আপনি চায়ের মত নিষ্পাপ আর সম্ভ্রান্ত পানীয়কে অপমান করছেন, কিন্তু আমার উইগের নামে শপথ করে বলছি একদিন আসবে যেদিন বাড়ি বাড়ি ঘুরবেন এক কাপ চায়ের আশায়, সেদিন সবাই আপনাকে গার্গল করতে আদা-লবণ পানি দিবে, তবু এক ফোঁটা চা দিয়ে তৃষ্ণা মেটাবে না’!
জনি চৌধুরীর সঙ্গে আলাপের যোগসূত্র ব্যক্তিগত কৌতূহল নিবারণ। মহাখালি ডিওএইচএস এর আলো নেভা সন্ধ্যায় স্ট্রিট লাইটের ঠিক নিচে দাঁড়িয়ে একজন চার্জিনের সঙ্গে আত্মস্বীকৃত চার্ভার্ট এর যে মিথস্ক্রিয়া, এর মূল্য বুঝবে সাধ্য কার!
অথচ প্রতিটি স্ট্রিট লাইটকেই কোনো না কোনোভাবে সঞ্চিতা দে নামে ডাকি! এ প্রসঙ্গে ষৎকো নামে পিঁপড়া মন্তব্য করেছে- ‘চার্জিন শব্দটা ইন্টারেস্টিং, কোনো বইতে ব্যবহার করতে পারো’!