আমরা বই পড়ি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজের ভাবনার কিংবা পর্যবেক্ষণ এর প্রতিফলন দেখে মুগ্ধ হয়। খুব কম ক্ষেত্রেই নিজের ধ্যান-ধারণার বাইরে অন্য কোন ধারণার মুখোমুখী হয়, যা আমাদের চিন্তাকে নাড়া দেয়, এটা ঠিক সেরকমই একটা বই, যেটা পড়ে হয়তো আপনি ধাক্কা খাবেন, ভিন্নধর্মী এক স্বাদ পাবেন।
.
বায়োগ্রাফি টার্ম এর সাথে আমরা সবাই পরিচিত। কিন্তু বায়োফিকশন এই টার্ম এর সাথে কি আমরা পরিচিত? এই বই হল এক ধরনের বায়োফিকশন।


বই এর মজাদার কিছু বিষয়ঃ
.
১. এই বইটার কোন নাম নেই। হ্যা, ভুল শুনেন নি, একদম নামহীন এক বই।

২. এই বই বাজারেও পাওয়া যায় না। তাহলে কিভাবে পাওয়া যাবে এই বই? খুব সহজ, বই নেয়ার জন্য লেখককে himalay777@gmail.com এই ঠিকানায় ইমেইল পাঠাতে হবে কেন আপনি বইটি পড়তে চান। ব্যাস, বই আপনাকে পৌছে দেয়া হবে।

৩. এই বইয়ের নির্দিষ্ট কোন দামও নেই। অর্থাৎ আপনি দাম হিসেবে যা দেবেন, সেটাই এনাফ। যদি মনে হয় ১০০ দিবেন, ওকে। আবার যদি মনে হয়, ১০০০ দেবেন, তবুও ওকে। মজার ব্যাপার হোল, বই পড়ার পর যদি ভাবেন, আপনি দাম হিসেবে বেশি টাকা দিইয়ে ফেলেছেন, তবে ইমেইলে সেটা জানিয়ে দিলে টাকা ফেরত পেয়ে যাবেন। কিংবা যদি মনে হইয়, বইটা অনেক ভাল এবং বইটার দাম আরো দেয়া উচিত ছিল, তবে সেটাও দিতে পারবেন।

৪. আর্থিক মূল্যই কি সবকিছু! না, এই বই এর একটা তা আত্মীক মূল্যও আছে। সেটা হল বই পড়ার পর একটা রিভিউ লেখা এবং লেখক-কে কমপক্ষে ১১ টা প্রশ্ন পাঠানো।
.
.
.
বায়োগ্রাফি বা বায়োফিকশন যাই বলা হোক না কেন, এই বইটা একজন পাঠক কেন পড়বে? এই বই পড়ে আপনি নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবে

১. সেলফ এনলাইটেনমেন্ট
২. অবসেসন
৩. প্রচলিত কিছু মিথ
৪. বিজনেস নিয়ে লেখকের কিছু ফিলোসফি
৫. ব্যতিক্রম এবং ইউনিক এক ধরনের রিক্রটমেন্ট প্রসেস
৬. ইউনিক এক চিন্তাপ্রক্রিয়া
৭. চিন্তাশীল মানুষদের নিয়ে একটা নেটওয়ার্ক তৈরির এক মহৎ উদ্যোগ ইত্যাদি
.
.
.
বই হতে কিছু বাক্য যেগুলো কোটেশন করার মতঃ
.
১. সমাজের ৯৯% মানুষ বড় কোন ক্রাইম করে না, সমাজে কোন অবদানও রাখে না।
২. অনিচ্ছার প্রধান কারণ ইগো, কমফোর্ট জোন, অনিরাপত্তাই ভোগা
৩. সমাজ চলে এভারেজ মানুষের বোধ, বিবেচনা, রুচি আর মনস্তত্বে
৪. ব্যর্থতা তখনই সম্ভব যখন কোন একটা কিছু নিয়ে তুমি (অন্তত ৮-১০ বছর) লেগে ছিলে এবং বহুসংখ্যক উপায়ে চেষ্টা করেছ।, তারপরেও ফলাফল তোমার অনুকূলে নয়।
৫. মেধাবী/অমেধাবী, একইরকম/অন্যরকম এগুলা সবই ভেকধারী ট্যাগ
৬. পৃথিবী চালায় তিনটি ফ্যাক্টর; রাজনীতী, অর্থনীতী, সেক্স
৭. পৃথিবী আগায় পারস্পারক স্কিল আদান-প্রদানের মাধ্যমে
৮. মানুষ আসলে প্রত্যুত্তর চায় না, তার কথার প্রতিধ্বনি শুনতে চায়
৯. বস্তুপ্রিয় মানুষের প্রধান আর্কষন এপ্রিশিয়েসন আর রিকগনিশন
.
.
.
.
মারাত্মক দুইটা হিউমারঃ
.
১. তোমার বিয়ে তো আমার কাছে কি, ফার্মেসি যাও।
২. আফসোস শুধু ৫ বছরের (বন্ধুর বড় বোনের প্রতি মুগ্ধ হয়ে তার উদ্দেশ্যে)

……………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………

বইটা আসলে কি নিয়ে? খুব সংক্ষিপ্ত আকারে সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।(গল্প আকারে, এভাবে লিখতে আমি বেশি কমফোর্টেবল ফিল করি)
…..
…..
রাত তিনটা। দুই হাতে দুই কাপ চা, মাথায় অবিরাম চিন্তা। এ আর নতুন কি! চিন্তাই হিমালয় এর নিত্য সঙ্গী, তবে আর দশজন মানুষের মত দুঃশ্চিন্তা না সেটা। আর দুঃশ্চিন্তা হবেই বা কেমন করে, জাগতিক মোহ থেকে যে মুক্তি পেতে অবিরাম সাধনা করে যাচ্ছে, তার আবার দুঃশ্চিন্তা কিসের! চারদিকে সব ইন্দ্রিয়তাড়িত মানুষ, তারা চিন্তার নামে যা করে, তা আসলে দুঃশ্চিন্তা। এরা বোধ দ্বারা নয়, পঞ্চইন্দ্রীয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় প্রতি মুহূর্তে। যাদের অধিকাংশকেই অর্থ আর শরীরের মোহ দ্বারা বশীভুত করা যায়। আচ্ছা, সেও কি তাই? না, সে আর বাস্তবজগতে কতটুকু বাস করে, সে তো সময় কাটায় কল্পনার জগতে, সে তো নিজেকে ডিফাইন করে এই বলে “চিন্তায় চলি, কল্পনায় বাঁচি”। পরক্ষণেই তার মনে হতে থাকে, আসলেই কি তাই! আসলেই কি সে ইন্দ্রিয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, এপ্রিসিয়েশন এর লোভ কি এখনো এড়াতে পারে? হয়তো না, তবে সে দিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয় যখন সে তার নিজের এই দুর্বলতা টুকুও জয় করে ফেলবে।
.
আচ্ছা, সে কি লেখক? লেখক যদি নাই হয়, তবে কেন বই লেখা? না না, লেখক সে নয়। সে হয়তো বা সাধক, জীবনকে নিয়ে কঠোর সাধনায় লিপ্ত সে। জীবনের লুকায়িত অর্থ জানতে চাই সে, তাই কি? হবে হয়তো। না না, এটার চেয়েও শক্তিশালী চাওয়া আছে তার, সে চায় মানুষকে জানতে, মানুষ নিয়ে গবেষণা করতে। জীবনের ত্রিশটা বছর তো কাটিয়ে দিয়েছে সে এভাবেই, মানুষকে গভীরভাবে জানতে সে ৩০০০+ মানুষের ইন্টারভিউ নিয়েছে, সেই তালিকায় যেমন আছে সমাজের উচু শ্রেণীর মানুষ তেমনি রয়েছে নিচু শ্রেণীর মানুষও। তার কাছে মনে প্রতিটি মানুষ আসলে বিগ ডাটার একএকটা স্যাম্পল। মাঝে মাঝে সে ভাবে, কেন সে মানুষের ইন্টারভিউ নেয়? সে আসলে মানুষের চিন্তাধারা জানতে চায়। বড় বড় মানুষের চিন্তার দৈন্যতা যেমন সে আবিষ্কার করে, তেমনি খুব সাধারণ মানুষের মাঝেও খুজে পায় নিখুঁত দর্শন। সে যেমন অনুভব করতে পারে মানুষের ব্যাক্তিকেন্দ্রিক চিন্তার দুর্গন্ধ, তেমনিভাবে কিছু পজিটিভ ইনটেন্টসম্পন্ন মানুষের তীব্র সদিচ্ছা যারা কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টে কাজ করতে চায়। হিমালয় একটা লংটার্ম প্ল্যান করতে থাকে একটা বিশাল নেটওুয়ার্ক তৈরি করার যেখানে যুক্ত থাকবে সকল ভাবুক শ্রেণীর মানুষ যারা তাদের চিন্তা দিয়ে কাজ করবে আর থাকবে সেই সম্পন্ন পজিটিভ ইনটেন্ট সম্পন্ন লোকেরা। তৈরি হবে হিউম্যান ল্যাব।
.
ভাবতে ভাবতে ভাবনার ডালপালা বিস্তার হতে থাকে হিমালয় এর। আচ্ছা, সে এত ভাবে কেন? এভারেজ মাইন্ড হয়তো বলবে, তার কাজ নেই তাই ভাবে কিংবা এত ভাবে বলেই হয়তো কাজ নেই। দীর্ঘ নিঃশ্বাস পড়ে তার, কাজ! কাজ কাকে বলে? শুধু কি শারীরিক শ্রমকেই কাজ বলে! অথচ কত দার্শনিক, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী তাদের চিন্তাভাবনা দ্বারা পৃথিবীকে বদলে দিল! মানুষ নিয়ে ভাবতে ভাবতে, শব্দ নিয়ে বিশ্লেষণ করতে করতে সে সবকিছুকে নিজের মত সঙ্গায়ন করে ফেলে, যার ফলে ভাবনা তার নিজস্ব হয়ে ওঠে, নিজেকেও আর বুকিশ মনে হয় না। চিন্তাধারার এই প্রক্রিয়াকে তার কাছে এক ধরনের ইউনিকনেসও মনে হয়।
.
এসব ভাবতে ভাবতেই চিন্তার জগতে হারিয়ে যায় সে। হঠাত হিউমার নিয়ে খেলতে ইচ্ছে হয় তার। নিজেকে টেনশন মুক্ত রাখার জন্য এর চেয়ে ইফেক্টিভ কিছু কি আর আছে! কল্পনায় সে হিউমার প্র্যাক্টিস শুরু করে তার অবসেসন চরিত্রগুলার সাথে।
.
এত কিছু ভাবতে ভাবতে কিছু মানুষের কথা মাথায় আসে তার, কিন্তু কল্পনায় তাদের নাম আসে না, যা আসে তা হল সংখ্যা। আশেপাশের মানুষকে সে সংখ্যা দিয়ে মনে রাখে। সেই ছোটবেলা থেকেই তার সংখ্যার প্রতি অবসেশন কাজ করে। সংখ্যার মাঝে সে ম্যাজিক দেখতে পায়। শুধু সংখ্যা না, আরো কিছু মানুষের প্রতি তার রয়েছে অবসেশন, যারা তাকে, তার কাজকর্মকে নিয়ন্ত্রণ করে। এদের মাঝে রয়েছে বিখ্যাত কিছু মনীষী, যেমনঃ মাইকেল মধুসুদন দত্ত, বুদ্ধ, কাফকা, গ্যালিলিও এই রকম কিছু মনীষী। রয়েছে নিজের পরিচিত কিছু প্রতিভাবান মানুষ।
.
প্যারালাল ইউনিভার্স কি? এর অস্তিত্ব কি আসলেই আছে? সে তো এর অস্তিত্ব টের পায়। তার অন্যতম একটা জার্নিও এই প্যারালাল ইউনিভার্সাস এর সন্ধান করা। কল্পনাতেই বাঁচে সে, তাই বলে কি বাস্তবতাকে অস্বীকার করে, না, কখনোই না। বাঁচতে হলে তো একটা পেশা দরকার, কি করবে সে? বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করেই তো সে এতটা বছর কাটিয়ে দিল, সেটাকেই কাজে লাগানো চাই। বিজনেস হবে যার সবচেয়ে বেস্ট প্ল্যাটফর্ম। যার উদ্দেশ্য হবে নিজের একটা মিনিমাম উপার্জন, কমিউনিটি ডেভোলপমেন্ট, সৃজনশীল মানুষের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম।
.
তার নিজের মাঝেই একটা প্রশ্ন আসে। আচ্ছা সে চিন্তাশীল, মেধাবীদের বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চাই কেন? উত্তর তো সিম্পল। তারা নিজেদের মাঝে স্কিল/আইডিয়া/ইন্টিলেকচুয়ালিটি এক্সেচেঞ্জ করবে। এতে তারা একদিকে যেমন নিজেদের ডেভোলপ করতে পারবে, অন্যদিকে তেমনি সোসাইটিও ডেভোলপ হবে। কারা সেই চিন্তাশীল ব্যক্তি যাদেরকে সে নিয়ে কাজ করবে? না, একাডেমিক এক্সপার্ট তারা নয়। তাদের সে মেধাবী বলার চেয়ে বরং ভ্যালিয়েবল বলতে চায়। ভ্যালিয়েবল মানুষ তারাই, যারা কমপক্ষে ১১ জন মানুষের জীবনে পজিটিভলি ইমপ্যাক্ট রাখতে পারেম, কিংবা তারা প্রচন্ড ইমাজিনেটিভ। এরাই হবে তার পথ চালার সাথী।
.
সে কি পারবে সফল হতে? না হোক সফল, ব্যর্থতাকে সে ভয় পায় না। কিন্তু সে অসফল হতে চায় না। অসফল তারাই, যারা কোন চেষ্টা না করেই পরাজয় মেনে নেয়। অসফল হবার মত কাপুরুষতা আর কিছু নেই মনে হয়।
,
“একা ভাবে পোকা”, মানুষ নয়। কিছু ক্রেজি মানুষকে নিয়ে তাই পাড়ি দিতে চায় এক দীর্ঘ পথ, এটা তার চ্যালেঞ্জ। আপাতত এটাই তার ফিকশন, যাকে বাস্তব রূপ দিয়ে সে তার চ্যালঞ্জ পূরণ করতে চায়।