হিমালয় ভাই উনার এই বইটি পড়ার সময় উনাকে চিন্তা না করতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু সত্য কথাটা হচ্ছে তার প্রত্যেক বাক্য, এমনকি শব্দের মধ্যেও তিনি উপস্থিত। যেহেতু হিমালয় ভাইয়ের সাথে আমি রিয়েল লাইফে মিশেছি আর তার লেখার সাথেও পরিচিত, আর যেহেতু আমার সীমিত চেনাজানার জগতে উনাকে আলাদা করা খুবই সহজ, তাই তাকে আমার সেন্সে না রেখে বইটা পড়া অসম্ভব ছিল। যেহেতু বইটিতে হিমালয় ভাই “আমি”র মধ্যেই থেকেছেন কল্পনা কিংবা বাস্তবতায়, ভাইয়ের নিজের জীবন আর বই মিলে একাকার। তাই তার এই বইটির রিভিউ দেয়া মানে হিমালয় ভাইয়ের জীবনেরই রিভিউ দেয়া অনেকটা।উনার এই বইটিকে আসলেই অনেক ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, তবে “মনোলগ”,“বায়োফিকশন”-এইসব ভারিক্কি শব্দ এভারেজ অধিকাংশ পাঠকের কাছে বোধগম্য না অথবা তারা ওভাবে চিন্তা না করে সিমপ্লি ৩১ বছর বয়সে উপনীত হওয়া এক মানুষের আত্মজীবনী হিসেবেই ইন্টারপ্রেট করবে, কারণ আত্মজীবনীতে “আমি” কথাটার বাহুল্য চর্চা থাকবেই।
বইটিতে নিজের প্রশংসা সমালোচনা সবকিছুই অবলীলায় বলে গেছেন, কল্পনার মানুষের সাথে কথোপকথনে কত অদ্ভুত ব্যাপার উঠে এসেছে।মনীষী হওয়ার বাসনা,পারিবারিক ট্র্যাজেডির পরে প্রতিক্রিয়া,স্ট্রাগলের অসংখ্য কাহিনী,সংখ্যাকেন্দ্রিক অবসেশন-নিজেকে তুলে ধরার ব্যাপারে সততা আর স্পষ্টবাদিতারই আশ্রয় নিয়েছেন লেখক,নিজের গল্প তুলে ধরার ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষের মধ্যে যে গুণ অনুপস্থিত।পাঠকদের কাছে ইন্টারেস্টিং হওয়ার মত উপাদান অনেক কিছুই আছে বইতে, ৩৫০০+ মানুষের ইন্টার্ভিউ নেয়ার অভিজ্ঞতা থেকে মানুষের কেইস স্টাডি করার ব্যাপারে লেখকের মুন্সিয়ানার প্রভাব দেখা গেছে বইতে। বইতে তিনি কাছের মানুষদেরও সৎ মুল্যায়ন করার ব্যাপারে পিছপা হননি, সোহাগ ভাই আর চমক ভাইও এই তালিকার বাইরে ছিলেন না। হিমালয় ভাইয়ের নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে এই মানুষগুলোর ইনসাইড স্টোরিজ। লেখক অন্যরকম গ্রুপের ক্রিয়েটিভ কনসালটেন্ট, তার বইতে অন্যরকম গ্রুপের ভিতরকার কথা উঠে এসেছে,কর্মক্ষেত্রে এথিক্সের প্রাসঙ্গিকতা আর বাইরের মানুষের সাথে সব শেয়ার করা নিয়ে পাঠকের কী প্রতিক্রিয়া হবে জানি না,কিন্তু এ ব্যাপারে ব্যক্তি হিমালয় ভাইয়ের এপ্রোচকে আমি সমর্থন করি না।কারণ ইমোশনালি আপনি যতই বায়াসড হন, মানুষকে মুল্যায়ন করার ব্যাপারে যে নিরপেক্ষ থাকতে হয়-এই দীক্ষা দেয়ার জন্যে ব্যক্তি হিমালয় ভাই একজন আইকন।
পত্র বা মেইল লিখা লেখকের চরম ভালো লাগার জায়গা এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই, কীভাবে হাজারো মানুষকে জীবনে এত মেইল করার ধৈর্য পেয়েছেন তার উত্তর একটাই-প্যাশন!পত্র লেখার ব্যাপারে বয়সে বড় নারীর প্রতি অবসেশন্টা ইন্টারেস্টিং, যদিও তার নিজের পারিবারিক অতীত অভিজ্ঞতা, উনিশ-তেইশের বড় হওয়া- অনেক কারণে তার অবসেশনটা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।হিমালয় ভাই সাধারণত অনেক বড় লেখা লিখতেই ভালোবাসেন,কারণ তার পছন্দ রাহুল দ্রাবিড়ের মত অনেকক্ষণ ক্রিজে থেকে বড় ইনিংস খেলা।তিনি অর্থ খ্যাতির মোহ থেকে নিজেকে দূরে রেখে গৌতম বুদ্ধের মত ধ্যানের দর্শনে জীবন কাটাতে চেয়েছিলেন।তিনি সংসারী হয়েছেন বটে, কিন্তু বস্তুবাদী চিন্তার বাইরে ব্যতিক্রমী কিছু করার বা হওয়ার তাড়নায় নিয়েছেন উদ্যোগ, উদ্যোগগুলো কেমন সেটা তিনি এক্সপেরিমেন্ট করতে করতে জীবনের ৩১টি বছর পার করেছেন।উদ্যোগগুলোর ভালো মন্দ দিক তর্কসাপেক্ষ,কিন্তু কৌতূহলউদ্দীপক সন্দেহ নেই।
এভারেজ মানুষের চিন্তার লেভেল অনুযায়ী জীবনের লক্ষ্য ও কার্যক্রম ঠিক করাকে শুধু বংশবৃদ্ধির সমার্থক হিসেবেই গণ্য করেন লেখক। তাই প্রচলিত ধারায় জনপ্রিয় হওয়ার চেয়ে ধারার বিপরীতে কিছু করে তীরবিদ্ধ হতে তার আপত্তি নেই।তাই তাৎক্ষনিক ফলাফলের দর্শন দিয়ে তার উদ্যোগগুলোকে বিচার করা যাবে না। যেমন অনলাইন বুক সেলিংয়ের প্রতিষ্ঠান রকমারিতে তিনি গঠন করেছেন ক্রিকেট টিম “টিম রকমারি”। এই টিম দিয়ে কোম্পানির কী লাভ ক্ষতি হল-সেটা যাচাইয়ের দায়ভার পাঠকের।আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এরকম নতুন নতুন ডাইমেনশন যোগ করা একটা কোম্পানির ইমেজ বৃদ্ধিতে বেশ ফলপ্রসূ।লেখক মানুষের চিন্তায়ও নতুন নতুন ডাইমেনশন তৈরি করতে চান, তাই বইটিকে মোটেও গৎবাঁধা ক্যাটেগরিতে ফেলা যাবে না, সর্বোপরি পাঠককে অন্যরকম স্বাদ দিতে বইটি ভালো অপশন।
হিমালয় ভাই মানুষকে ভালোবাসেন, ভালোবাসা দিতে জানেন।তার এই গুণটা বইতে এসেছে আর এটা সত্যও।আমার বার্থডেতে রকমারি থেকে বই গিফট দিয়েছিলেন (আমাকে চয়েস করতে বলসিলেন), এই কাজ গুলো তিনি অনেকের সাথেই করেন।আর সবচেয়ে বড় কথা, আমি বড় বই পড়ার ধৈর্য একদমই পাই না, কিন্তু ৬১৯ পেইজের বই শেষ করলাম, এখানে লেখকের ব্যক্তিসত্তার কৃতিত্ব অনেক বেশি।বইটির কোন নাম নেই, নির্ধারিত দামও নেই। কোন দোকানেও পাওয়া যাবে না। কিন্তু বইটি কেন পড়তে চান- তা জানিয়ে আগ্রহীরা লেখককে মেইল করুন himalay777@gmail.com এ।লেখক বই পাঠিয়ে দিবেন আপনার দুয়ারে, আপনি হাজার টাকা দিতে পারেন এমনকি কোন টাকা নাও দিতে পারেন এটা আপনার ব্যাপার ।