রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুর, গর্তজীবী আরশোলা, বাস্তুসাপ কিংবা জঙ্গলে থাকা জাগুয়ার, প্রত্যেকেরই একটা জন্মদিন থাকে, মানুষেরও।
জাগুয়ারের জন্মদিন ভাবনা মানুষের সমাজে জানার উপায়রহিত। মৌলিক চাহিদা নিবৃত্তিতে সক্ষম মানুষ জন্মদিনে রোমান্টিসিজমে ভোগে সাময়িক, অথবা হয়ে পড়ে নিরাসক্ত।
আমার পছন্দের মাস নভেম্বর। জোড় সংখ্যা অপছন্দের হওয়ায় আগস্ট কখনোই আকৃষ্ট করতে পারেনি, তবুও প্রতিবছর আগস্টেই নতুন কোনো উপলব্ধি তৈরি হয়, ১৫ আগস্ট তথা জন্মদিনকে ভিত্তি ধরে।
সমকালীন এবং ব্যক্তিগত পরিমণ্ডলের মানুষের চাইতে দূরবর্তী এবং কীর্তিমান মানুষদের প্রতি অনিয়ন্ত্রিত মোহ বোধ করেছি সবসময়ই, প্রচুর বায়োগ্রাফি পড়া এর মূল নেপথ্য কারণ।
এবছরের আগস্টে একটি মৌলিক জিজ্ঞাসা জেগেছে- ‘কতদিন সুস্থ্যভাবে বাঁচতে চাওয়া উচিত আমার’
যদি ভীষণ মরিয়া কোনো টার্গেট না থাকে কেবলমাত্র কনজাম্পশনের প্রয়োজনে জীবন লম্বায়িত করা একধরনের ভ্রষ্টাচার মনে হয়। টার্গেটগুলোর ব্যাপারে সুস্পষ্ট রূপরেখা জানা আছে, সেগুলো পূরণে সর্বোচ্চ কতদিন সময় পেতে পারি, ধারণা নেই।
ধারণাহীনতা থেকে আপাত উদ্ভট এক এক্সপেরিমেন্ট শুরু করেছিলাম।
৭ বয়স থেকে ৩৬ অবধি যে সমস্ত মানুষ কখনো না কখনো আমাকে ভাবিয়েছে, সেখান থেকে স্বত:স্ফূর্তভাবে ৫০ জনের তালিকা বানাই। এরপরে গুগল ঘেঁটে প্রত্যেকের আয়ুষ্কাল বের করি।
তাতে চূড়ান্ত চিত্র পেলাম:
১.মাইকেল মধুসূদন- ৪৯
২.কাফকা- ৪২
৩.দ্য ভিঞ্চি-৬৭
৪.এস এম সুলতান-৭১
৫.নীটশে-৫৬
৬.রনে দেকার্ত-৫৪
৭.পীথাগোরাস-৭৫
৮.বারট্র‍্যান্ড রাসেল-৯৮
৯.ম্যাক্স প্লাংক-৪৯
১০.গৌতম বুদ্ধ-৮০
১১.কনফুসিয়াস-৭২
১২.হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন-৭০
১৩.সক্রেটিস-৭১
১৪.নিকোলাস টেসলা-৮৬
১৫.রামানুজন- ৩২
১৬.সত্যজিত রায় -৭১
১৭.একে ফজলুল হক- ৮৮
১৮.শেন ওয়ার্ন- ৫১
১৯.আলবেয়ার ক্যামু-৪৭
১৯.জেমস জয়েস-৫৯
২০.মোজেস- ৮০
২১.মার্ক এন্টনি-৫৩
২২.জ্যাক রুশো-৬৬
২৩.জন মিল্টন-৬৬
২৪. হিউয়েন সাঙ-৬২
২৫. আর্নেস্ট হেমিংওয়ে-৬২
২৬. ভ্যান গঘ-৩৭
২৭. বব মার্লি-৩৬
২৮. স্রোডিনজার-৭৪
২৯. হুমায়ূন আহমেদ- ৬৬
৩০. জুল ভার্ন-৭৭
৩১. কিয়ের্কেগার্দ- ৪২
৩২. এডগার এলান পো-৪০
৩৩. মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ- ৬২
৩৪. জালালউদ্দিন রুমি- ৬৬
৩৫. ও’হেনরি- ৪৮
৩৬. জ্য পল সার্ত্র-৭৫
৩৭. লালন সাঁই-১১৬
৩৮. রাধারমণ দত্ত- ৮২
৩৯. গ্যালিলিও- ৭৮
৪০. হাইজেনবার্গ -৭৫
৪১. ডিয়েগো ম্যারাডোনা- ৬০
৪২. ববি ফিশার-৬৫
৪৩. স্ট্যানলি কিউব্রিক- ৭১
৪৪. জরাথ্রুস্ট- ৭৪
৪৫.শকুন্তলা দেবি- ৮৪
৪৬. ইবনে বতুতা- ৬৬
৪৭.. এইচ জি ওয়েলস-৮০
৪৮. জর্জ অরওয়েল -৪৭
৪৯. চার্লি চ্যাপলিন-৮৮
৫০. কার্ল মার্ক্স- ৬৫
তালিকা থেকে আয়ুষ্কালের কয়েকটা ব্যবধি তৈরি করি
১. যারা ৫৫ বা তার কম বয়স বেঁচেছিলেন, ১৪ জন
২. ৫৫ থেকে ৬৭ পর্যন্ত বেঁচেছিলেন ১৪ জন
৩. ৬৭ এর বেশি কিন্তু ৮০ এর কম ১২ জন
৪. ৮০ এর বেশি ১০ জন
কিন্তু ব্যবধিটা যদি ৫৫ এর পরিবর্তে ৬০ এ উন্নীত করি তখন প্রথম গ্রুপে হয় ১৭ জন, ২য় গ্রুপে ১১ জন!
অর্থাৎ তখন নিরংকুশভাবে বলা সম্ভব হয় যেসব মানুষ আমাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছেন তাদের ৩৪%ই নিজেদের নির্ধারিত কাজ করতে সর্বোচ্চ ৬০ বছর সময় পেয়েছিলেন!
১৫ আগস্ট ৩৭ এ পৌঁছুবো। যদি ব্যাপারটাকে এভাবে দেখি, আমার দেহঘড়িতে সর্বোচ্চ ৬০ বছর পর্যন্ত সময় দেয়া আছে। এর আগেই থেমে যাবে ঘড়ি, হতে পারে আগামীকাল, কিংবা ২ বছর পরে। যদি ভাগ্য অনুকূলে থাকে তবে ঘড়ি সচল থাকবে আর সর্বোচ্চ ২৩ বছর!
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ বছর। যদি ৬০ এর পরেও সচল থাকে ঘড়ি?
সে এক মহাবিপদ বটে!