বাংলাদেশের ৩ জন তুমুল জনপ্রিয় মানুষের নাম বললে সেখানে কে কে থাকবেন নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না হলেও অনুমানের বশে যে ৩জনকে রাখতে পারি- ফোকশিল্পী মমতাজ, রকস্টার জেমস, ক্রিকেটার মাশরাফি।
জনপ্রিয়তার মানদণ্ড হিসেবে ৩টি শর্ত আরোপ করা হয়েছে-
১. যে কোনো শ্রেণী, পেশা, বয়স, অবস্থান, রুচি-চিন্তাধারার মানুষ তার সম্বন্ধে জানে বা জেনে যায়।
২. যার নিন্দুক আর অনুরাগীর অনুপাত ১:১০ বা তার বেশি
৩. যাকে নিয়ে সমালোচনা লিখতে বা যারা বিরুদ্ধাচারণ করতে গেলে প্রতিক্রিয়া কী হবে সেই আশংকায় থাকতে হয়।
যে কোনো জনপ্রিয় মানুষের ক্ষেত্রেই উল্লিখিত শর্ত ৩টি সত্য, তবে এগুলোর মাত্রা এবং তীব্রতা কেমন তার উপর নির্ভর করেই জনপ্রিয়তার ব্যাপ্তি-বিস্তৃতি বোঝা যায়।
***
সাদাত হোসাইন নামটা প্রথম শুনি ২০১৮ এর দিকে, শুধু জানতাম তিনি একজন তরুণ লেখক যার বই মোটামুটি চলে। বাংলাদেশের প্রচলিত সাহিত্যধারণার সাথে আমার ধারণা মেলে না কখনোই, যে কারণে এদেশের কোনো লেখকের ব্যাপারেই তেমন আগ্রহ কাজ করে না। যে বই ভাবায় না বা প্রশ্ন জাগায় না সেটা পড়াকে অনর্থক মনে করি। বাংলাদেশের ফিকশন সাহিত্য অনেকটাই রিফ্লেক্টিভ আর রিয়েলিস্ট ঘরানার, অনেক বেশি বর্ণনাপ্রবণ; পর্যবেক্ষণের তুলনায় মতামতের আধিক্য পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা।
ফিকশন থেকে প্রত্যাশা কী সেটাও একটা প্রশ্ন। আমার প্রত্যাশিত ফিকশনে কল্পনা আর ফ্যান্টাসির সর্বোচ্চ প্রয়োগ থাকবে, যা দেখছি বা শুনছি সেটারই ব্যাখ্যা শোনা, তার মাথার ভেতরে কী ঘটছে তা লাইনের আইল ধরে হেঁটে গিয়ে শুনতে থাকা পৃথুল বর্ণনাময়তায়- এসব টানেনি কোনোকালেই। তবু বাংলা সাহিত্ পর্যবেক্ষণ করে অতুলনীয় আনন্দ পাই, যে কোনো লেখকের বই পেলেই পড়ার চেষ্টা করি; বেশিরভাগই মনোযোগ দিয়ে পড়া হয় না, কিন্তু নেড়েচেড়ে দেখি পুরোটা। সাহিত্য কীভাবে বিবর্তিত হচ্ছে, বা মানুষ কতটুকু সম্পৃক্ত হচ্ছে গল্পের নিউক্লিয়াসে- এসব দেখে মানুষের গড়দার্শনিকতার স্বরূপটা বুঝে নিতে চাই।
যে কোনো কারণেই হোক সাদাত হোসাইনের কোনো বই নেড়েচেড়ে দেখারও সুযোগ ঘটেনি; আদতে তার নামটিই ভুলে গিয়েছিলাম। এবছরের শুরুর দিকে হঠাৎ বন্ধুপ্রতিম চমক হাসান তার ফেসবুক টাইমলাইনে নিজের গাওয়া একটি গান পোস্ট করে, যার লিরিক সে লেখক সাদাত হোসাইনের কোনো একটি উপন্যাস থেকে চয়ন করেছে। তার সেই পোস্ট থেকেই নিশ্চিত হই সাদাত হোসাইনের বই মোটামুটি চলে বললে দায়সারা বক্তব্য হয়, বলা উচিত সাদাত হোসাইন এই সময়ের জনপ্রিয়তম ফিকশন লেখক।
এই আবিষ্কারের পর সিদ্ধান্ত নিই তার একটি হলেও বই পড়বো। রকমারি ডট কম এ কর্মরত এক প্রাক্তন সহকর্মীকে বলি সাদাত হোসাইনের যে কোনো একটি বই পড়বো, সাদাত হোসাইনের সাথে যোগাযোগ করে বলা সম্ভব কিনা মাত্র একটা বই পড়তে চাইলে তিনি কোনটা সুপারিশ করবেন। লেখকসূত্রে ‘অন্দরমহল’ বইটি সুপারিশকৃত হয়, কিনে ফেলি ঝটপট। কিন্তু কেনার পরদিনই পরিচিত একজন বাসায় এসে ৪-৫টি বই ধার নিয়ে যায় পড়ার উদ্দেশ্যে, সেখানে ‘অন্দরমহল’ থাকায়, এখনো পড়ার সুযোগ পাইনি বইটি। তবে পড়বো অবশ্যই।
বাংলাদেশে জনপ্রিয় ফিকশন বইগুলোর একটি প্যাটার্ন আছে।
প্রথমত, পড়েই মনে হবে, আমার গল্পটাই যেন বলছে।
দ্বিতীয়ত, উদ্ধৃতি দেয়ার মতো, বইজুড়ে, ছোট ছোট বাক্য থাকবে যেগুলো দিয়ে মানুষকে ইমপ্রেস করা যায়।
তৃতীয়ত, গদ্য হবে সরল এবং ঝরঝরে; প্রকাশভঙ্গিতে রূপক, ইঙ্গিত না থেকে যা বলার সোজাসুজি বলা হবে।
চতুর্থত, হিউমারের চাইতে কমেডির প্রাধান্য থাকবে। কমেডিতেও সহজে হাসি আসে বা মজা পাওয়া যাওয়ার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। অথবা প্রচণ্ড দুঃখবোধ থাকবে, বর্ণনার শক্তিতে চোখ ছলছল করে উঠবে।
পঞ্চমত, কাহিনীতে গতি থাকবে। ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ে অজস্রবার রবীন্দ্রনাথের ‘শেষ হইয়াও হইলো না শেষ’ লাইনের সাথে যোগাযোগ ঘটায় আমাদের পাঠকমনন পড়ার ক্ষেত্রে টুইস্ট, সাসপেন্স, ক্লাইম্যাক্স, এন্টি-ক্লাইম্যাক্সে বুঁদ হতে মুখিয়ে থাকে। কেবল যথায়থ প্লটের অপেক্ষায়।
এটুকু শোনার পর মনে হতেই পারে জনপ্রিয় বই যেহেতু প্যাটার্ন মেনে চলে, এই রেসিপি অনুসরণ করে লিখলেই তো হয়। আদতে ফিকশন লেখকেরা এটা অনুসরণেরও চেষ্টা করে, বই ১০ টা বা ১০ হাজার কপি বিক্রি হোক, রেসিপি কাছাকাছিই; তবু জনপ্রিয়তার নাগাল পায় খুব নগণ্যসংখ্যক লেখক। মূলত চিন্তাণ্বেষণের শুরুটাও এখান থেকেই।
***
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যূর পরে বাংলাদেশে মোটিভেশনাল এবং সেল্ফ হেল্প বইয়ের একটা মার্কেট তৈরি হয়েছে। শুধু মার্কেট না বলে বলা উচিত বেস্ট সেলার তালিকা এগুলোই সদর্পে নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশ্বজুড়েই এই জনরার চাহিদা আছে। কেজো সাহিত্যের প্রতি দিনকে দিন মানুষের আগ্রহ আরো বাড়বে। ফিকশন পড়ে পর্যবেক্ষণ, চিন্তাশক্তি বা অন্তর্দৃষ্টি শাণিত করার চাইতে কীভাবে ফ্রিল্যান্সিং করা যায়, কীভাবে ফটোগ্রাফি করা যায় বা ইংরেজি শিক্ষার ১০১ উপায় জাতীয় এন্টিবায়োটিক বড়ি সেবন করে দ্রুত উপার্জনে নেমে যাওয়াতেই অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সিদ্ধান্তপ্রক্রিয়া প্রায়োরিটি খুঁজে নেয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিচারে যাদের আমরা লেখক হিসেবে চিনি তারা মূলত ২ ঘরানার-
১. অন্য কর্মক্ষেত্রে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে প্রচুর ফ্যান-ফলোয়ার পেয়ে গেছেন। সেই জনপ্রিয়তাকে এনক্যাশ করতে প্রকাশকের অনুরোধে কিছু একটা পাণ্ডুলিপি তৈরি করে বইমেলায় লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছেন। ফ্যান-ফলোয়াররা দেদারছে তাদের বই কিনে, সম্ভব হলে মেলায় একসাথে সেলফি তুলে, কিন্তু পাবলিকলি সেই বইয়ের রিভিউ লেখার বা আলোচনার সাহস পান না। কারণ, সেগুলোর গায়ে লেগে থাকে ‘বাজারী’ ট্যাগ।
২. সাংবাদিক, লিগল ম্যাগ গোষ্ঠী, ভার্সিটির অধ্যাপক, বাম ঘরানার রাজনীতিবিদ প্রভৃতি গং মিলে এক লেখক-সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। সেই সিন্ডিকেটভুক্ত হয়ে সিন্ডিকেট মুরুব্বীদের কৃপাধন্য হওয়ার চেষ্টায় তাদের সাথে সুনির্দিষ্ট নেটওয়ার্কিং রক্ষা করে চলা মানুষ যারা গল্প-উপন্যাস বা কবিতা লেখার চেষ্টা করেন, এবং স্বপ্ন দেখেন পত্রিকায় লেখা ছাপা হবে, টিভিতে সাক্ষাৎকার নিবে এবং নামজাদা বুদ্ধিজীবীরা বইয়ের ব্যাককভারে বা ভূমিকায় শংসাবচন লিখে দিবেন।
এই ঘরানার বাইরেও এক ধরনের লেখক আছেন যারা সাহিত্য বাজারে মূলত ফ্রিল্যান্সার। লিখবার দুর্নিবার আকর্ষণ, কিন্তু যথাযথ চ্যানেল রক্ষা করতে পারে না, নিজের লেখা লিখে নিজেই পড়ে জ্ঞানহারা হন এবং উপরোক্ত ২ শ্রেণির লেখক আর তাদের পাঠককূলকে গালমন্দ করে চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে অসাবধানতাবশত জিহ্বা পুড়িয়ে ফেলে।
তো বাংলাদেশে সেল্ফ হেল্প বা তথাকথিত মোটিভেশনাল বই হিসেবে যেগুলো বিক্রি হয়, সেগুলোর কনটেন্ট নিরীক্ষণ করলে গুগলের কপি-পেস্ট সংস্করণ হিসেবে হাতেনাতে প্রমাণ মেলে। মৌলিক ভাবনা বা পর্যবেক্ষণশূন্য এসব কনটেন্টকে যে বাংলাদেশের কালচার অনুযায়ী পরিমার্জনা করে নিতে হবে এই বোধটুকুও কাজ করে না, যে কারণে সেল্ফ-হেল্প বইগুলো কিছুটা এডভান্সড চিন্তাধারার মানুষের কাছে হাস্যকর মনে হয়।
তবু মোটিভেশনাল বইগুলো চলে মূলত লেখকের ব্যক্তিগত প্রোফাইলের ওজনের কারণে। এসব বই যারা লিখে তারা সরাসরি মানুষের সাথে ইন্টারেকশন করার প্রচুর সুযোগ পায়। অমুক নেটওয়ার্কিং প্রোগ্রাম, তমুক ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে তারা হরহামেশা স্পিকার হিসেবে আমন্ত্রিত হয়, সেসবে জনসমাগম হয় প্রচুর। সমবেত মানুষগুলো কেবলমাত্র স্পিকারকে সামনে দেখার আনন্দেই তার লেখা বই কিনে ফেলে, কনটেন্ট যা-ই হোক।
একারণে মমতাজ বা জেমসের কোটি কোটি ফ্যান থাকলেও তারা কখনো বই লিখলে তা ৫ হাজার কপি বিক্রি হওয়াও দুঃসাধ্য হবে, পক্ষান্তরে আয়মান সাদিক বা সোলায়মান সুখনের লেখা বইয়ের বিক্রিসংখ্যা ১৫-২০ হাজার কপি ছাড়িয়ে যেতে পারে অবলীলায়। তারা কি জেমস বা মমতাজের চাইতে জনপ্রিয়? মূল ফ্যাক্টর হলো, বাংলাদেশের বইয়ের মার্কেট ১৫ থেকে ৩০ বছরের মানুষেরা নিয়ন্ত্রণ করে। এদের সাথে যত ফ্রিকোয়েন্টলি ইন্টারেক্ট করা যাবে বইয়ের বিক্রি বাড়বে। মমতাজ বা জেমসের কনসার্টে ১০-২০ হাজার দর্শক এলেও তারা তখন গান শোনার মোডে থাকে, কোনো উপদেশ নয়। পক্ষান্তরে অনলাইন স্কুল চালানো, মোটিভেশনাল স্পিচ বা ইয়ুথ প্রোগ্রামসূত্রে প্রতিনিয়ত ইন্টারেক্ট হচ্ছে। বই বিক্রিতে এর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ে।
উপরোক্ত প্রসঙ্গ অবতরণের কারণ হলো, সাদাত হোসাইনের বই বিক্রি হওয়ার ক্ষেত্রে এরকম কোনো ফ্যাক্টর কাজ করে কিনা এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার ফেসবুক প্রোফাইল বিশ্লেষণ এবং গুগলে তাকে নিয়ে যত লেখালিখি হয়েছে সবগুলো পড়ে আবিষ্কার করলাম, তার ঘটনাটা আলাদা, এবং বাংলাদেশের কনটেক্সট এ ব্যতিক্রম। যতদূর জানতে পারলাম তিনি ফটোগ্রাফি করেন, ফিল্ম বানানোর সাথে যুক্ত। অর্থাৎ মানুষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ডের সাথে তিনি যুক্ত নন, যার এডভান্টেজ নিতে পারবেন।
বাংলাদেশের চলতি বইয়ের ক্ষেত্রে আরেকটা গুরুতর বাধা বইয়ের কলেবর এবং দাম। ১৫০-১৭০ পৃষ্ঠার মধ্যে বই শেষ করতে হবে এমন এক অপ্রকাশিত নিয়ম আছে। কিন্তু সাদাতের বইয়ের গড় ব্যাপ্তি ৩০০+ পৃষ্ঠা। তা সত্ত্বেও মানুষ তার বই লাইন ধরে কিনছে। নিশ্চয়ই এর গভীর কারণ রয়েছে যা গবেষণার দাবিদার।
***
গুগল ঘেঁটে সাদাত হোসাইনের জনপ্রিয়তা উপলব্ধির জন্য যেসব রসদ পেলাম, তার নির্যাস উপস্থাপনের চেষ্টা করি কিছুক্ষণ।
আরশিনগর উপন্যাসের রিভিউ পেলাম কয়েকটা। একজন রিভিউয়ার বইয়ের কিছু লাইন উদ্ধৃত করেছেন যেগুলো তাকে নাড়া দিয়েছে। সেখান থেকে নির্বাচিত কিছু লাইন পর্যবেক্ষণ করা যাক-
১.“মৃত্যুর পর এই জগতের কোনো কিছুরই কি আর কোনো মূ্ল্য থাকে না? সবকিছুই কি ঢেকে যায় শ্রেফ শূণ্যতায়? যদি তাই হবে, তাহলে এই রাতজাগা তীব্র কষ্ট, এই দিনমান বয়ে বেড়ানো সুদীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস, এই মায়া এই এত এত মমতা, এদের মূ্ল্য কী?”
২. “কাইল কী হইব, সেইটা যদি মানুষ আইজ জানত, তাইলে মানুষ বাঁচতে পারত না। এইটা একটা সুবিধা।…..মানুষের জীবনে এই জন্যেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হইল সময়। আর এই সময়ের খারাপ-ভালো বইলা কিছু নাই। হয় সবই খারাপ, না হয় সবই ভালো”
৩. “জগৎ জুড়ে কী অপার ভালোবাসা ছড়ানো ছিটানো। তার কতটুকুইবা নিতে পারি আমরা! আমরা খুঁজে খুঁজে কেবল ঘৃণা আর দুঃখ নেই।ভালোবাসারা পরে থাকে আড়ালে-আবডালে”।
৪. “জীবন রোজ খানিকটা করে আয়নার সামনে দাঁড়ানোর মতন। আমরা তাতে শুধু শরীরটাই দেখতে পাই। বুকের ভেতরটা না। অথচ আমাদের দেখার কথা ছিল চোখে। সে দুটোই দেখে, শরীর ও মন।”
কথাগুলোকে খুব চেনা চেনা মনে হয় না? ৮০ বা ৯০ এর দশকের নাটকের সংলাপগুলো যদি মনে করার চেষ্টা করি, সাথে চরিত্রগুলো স্মরণ করি— ইমদাদুল হক মিলন, হুমায়ূন আহমেদের সেইসব চরিত্রের কারণে এই প্যাটার্নের সংলাপের সাথে আমরা অভ্যস্ত। এগুলো মননে নাড়া না দিলেও শুনতে খারাপ লাগে না, অনেকটা ফ্যান্টা বা মিরিন্ডার মতো সুপেয় কোল্ডড্রিংকস।
সৌদি আরব প্রবাসী বশির আহমেদ রাকিব প্রথম আলো অনলাইন সংস্করণে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। সেখানকার কয়েকটি লাইন- ‘লেখকের সব চেয়ে বড় যে গুণটা আমাকে প্রচণ্ড মুগ্ধ করেছে তা হলো, তার গল্প বা উপন্যাসের চরিত্রগুলোতে আমি নিজের ছায়া দেখতে পাই। মনে হয় আমিই গল্পের মূল চরিত্র। মনে হয়, ঠিক আমার মনের কথাগুলোই নিংড়ে নিংড়ে কলমের খোঁচাই তুলে এনেছেন’।
বেশ কিছু সাক্ষাৎকার পড়া হয়েছে। কয়েকটি সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ উল্লেখ করা যেতে পারে-
সাক্ষাৎকার১: পিডিএফ ও বই বিমুখীতার যুগে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আপনার বই কিনছে।বিষয়টাকে কিভাবে দেখেন?
“আমার সবসময়ই মনে হতো, সাধারণ পাঠক গল্পটা শুনতে চায়। তারা চায় তাদের অনুভূতি, ভাবনা স্পর্শীত হোক। তারা তাদের গল্পটা তাদের ভাষায় তাদের মতো করে শুনতে চায়। ধরুন, আপনি একটি অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফির সিনেমা বানালেন, কিন্তু তাতে গল্প নেই। বা গল্প দুর্বোধ্য। এখন সেই সিনেমা কিন্তু ফিল্ম ক্রিটিকরা তাদের বোদ্ধা মন বা কৃটিসিজমের জায়গা থেকে দেখবেন। কিন্তু একজন সাধারণ দর্শক কিন্তু ক্যামেরার এঙ্গেল, লাইট, মেটাফোর এসব বোঝেন না, সে বোঝে গল্পটা, যে সিনেমাটা তাকে স্পর্শ করতে পারছে কিনা। তার গল্পটা, তার ভাবনাটা প্রকাশ করতে পারছে কি না। এখন আপনি কাদের জন্য সিনেমা বানাবেন, সেই সিদ্ধান্ত আপনার।
তেমনি কাদের জন্য লিখবেন, সেই সিদ্ধান্তও আপনার। আমি চেয়েছি আমার গল্পটা, আমার মত করে বলতে, মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমার সেই ‘আমার মতো’ করে বলা আমার গল্পগুলো খুব অল্পসময়েই একটা বৃহৎ পাঠকের গল্প হয়ে উঠেছে। সেই গল্প ওই পাঠককে স্পর্শ করতে পেরেছে। আমার ধারণা আমার গল্প এবং তা প্রকাশের ধরণ তাদের ভালো লেগেছে। এটা এমনও হতে পারে যে আমি দুর্বোধ্য গল্প বলতে চাই নি। চেয়েছি আমার গল্প পড়ে মানুষ কাঁদুক, হাসুক, ভালোবাসুক। আমার গল্প পড়ে মানুষ খুব সহজ করে ভাবুক।
হয়তো অবচেতনেই আমি সাধারণ মানুষের কাতারে ছিলাম, সাধারণ মানুষের মতো করেই ভাবতাম। এ কারণেই আমি অবচেতনেই বোদ্ধাদের লেখক হতে চাইনি, আমি সাধারণ পাঠকের লেখক হতে চেয়েছি। আমি বোদ্ধাদের কাছে নয়, সাধারণ পাঠকের কাছে পৌঁছাতে চেয়েছি।
আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, আমি চাই না আমার গল্প পড়ে বুঝতে হলে পাঠককে নন্দনতত্ত্ব জানতে হবে, সাহিত্যের ছাত্র হতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে হবে। আমি চেয়েছি একজন অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন মানুষও যেন আমার গল্পটা বুঝতে পারে। কারণ আমি সাধারণ মানুষের গল্পকার হতে চেয়েছি”।
সাক্ষাৎকার২: ‘লেখককে তার লেখা দিয়েই প্রমাণ করতে হবে সে পাঠকের কাছে যাবে, না দূরে থাকবে। সে কোন পাঠকের কাছে যাবে।দিন শেষে পাঠকই নির্ধারক। এই জায়গাটিতে সেন্সিবল আচরণ করা গেলে আক্ষেপ কমবে। বইমেলা শেষে অবিক্রিত বইয়ের বিশাল মজুদ ঘরে নিয়ে লুকিয়ে রাখতে হবে না’।
সাক্ষাৎকার৩: ‘আমার একটা অবজার্ভেশন বলি। আমার লেখা নিয়ে ফেসবুকে যেসব কঠোর কঠিন, ভয়াবহ, সম্পূর্ণ বিস্ফোরক, একশনধর্মী, সাস্পেন্সিভ সমালোচনা দেখেছি, তার প্রায় ৯৯ ভাগ-ই হচ্ছে লেখালেখি করেন। লেখক, কবি বা কোন না কোনভাবে ‘সৃজনশীল’ লেখালেখির সাথে যুক্ত এমন মানুষের কাছ থেকে। আবার মজার ব্যাপার হচ্ছে আমার লেখা নিয়ে ঠিক একইরকম ভূয়সী প্রশংসা আমি যাদের কাছ থেকে পেয়েছি, তারাও প্রায় শতভাগই সাধারণ পাঠক। যারা লেখালেখির সাথে সেই অর্থে যুক্ত নয়, যারা কেবলই পাঠক’।
সাক্ষাৎকার ৪: “আমার মনে হয় শীল্প ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে দুটি লাইন আছে, একটা হচ্ছে এবাভ দ্যা লাইন, আরেকটা হচ্ছে বিলো দ্যা লাইন।
অর্থাৎ, আমাদের বেশিরভাগ মানুষের যাপিত জীবন, অনুভূতি, স্পর্শময়তা, সংবেদনশীলতার যেই টাচ পয়েন্ট, আমরা হয় সেটার এবাভ দ্যা লাইন গল্প বলি, মানে এমন এবস্ট্রাক্ট, এবং দুর্বোধ্য, যে সেটি আমাদের স্পর্শময়তা, উপলদ্ধি, ভাবনা, বোঝাবুঝির অনেক উপর দিয়ে চলে যায়। আর আরেকটি এতোই ‘স্থুল’ যে সেটি হয়ে যায় বিলো দ্যা লাইন। একটি অতি সুক্ষ্ম, আরেকটি অতি স্থুল। সেখানে আমাদের গল্পটা, আমাদের উপলদ্ধিটা, আমাদের স্পর্শময়তাটা থাকে না। এটি থাকলে গল্প বড় না ছোট, সেটি ম্যাটার করতো না। কারণ, আমি চাই, আমার জীবনের যেই অনুভূতিটা, ভাবনাটা আমি ধরতে পারি না, ব্যখ্যা করতে পারি না, যেই গল্পটা আমার কিন্তু আমি বুঝতে পারি না, সেই গল্পটাই কেউ একজন বলুক। আমাকে উপলদ্ধি করাক। এটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট।
আমার মনে হয়, আমি সেই আমাদের গল্পটা কিছুটা হলেও বলতে পারছি। যেটি এখনো অব্দি এবাভ দ্যা লাইন বা বিলো দ্যা লাইন না গিয়ে, ওই টাচ পয়েন্টটার দিকে খুব সামান্য হলেও এগিয়ে গিয়েছি। আমি আরোপিত কিছু করতে চাইনি, আমি আমার দেখা চারপাশের জগত ও জীবনকে আমার মতো করেই বলতে চেয়েছি। হয়তো সেখানে ওই একটা বড় অংশের মানুষ নিজেদের জীবন ও জগত খুঁজে পেয়েছেন”।
***
গুগল বা ফেসবুকের এইসকল রেফারেন্স উল্লেখের একটাই কারণ, সাদাত হোসাইনের জনপ্রিয়তার ব্যাপারে অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছুতে চাই। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাওয়া মৃত মানুষের বৈশিষ্ট্য, তখন আর ভাবনার অদল-বদল পছন্দ করে না চিন্তাপ্রক্রিয়া। অনুসিদ্ধান্ত স্তরে থাকলে ক্রমাগত এক্সপ্লোর করার সুযোগ বহাল থাকে।
ফেসবুকে তার ফলোয়ার সংখ্যা ১৫৮২৪২; একজন ফিকশন লেখক যিনি গান করেন না, মোটিভেশনাল ভিডিও বানান না তার এতো বেশি ফলোয়ারসংখ্যা অতি অবশ্যই আনইউজুয়াল দৃষ্টান্ত। ২০১৫ এর আগে তার ফলোয়ারসংখ্যা কত ছিলো জানা নেই, তবে অনুমানবশত বলতে পারি সংখ্যাটা ১৫ হাজারের নিচে হবে, অর্থাৎ ১০ ভাগের ১ ভাগেরও কম। ফলোয়ার কীভাবে এতো বাড়লো, এবং প্রথম উপন্যাস কীভাবে অন্যতম বেস্টসেলার হলো এ সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ করার জন্য যে ইমপ্রেসনাল ডাটা প্রয়োজন তার অপ্রতুলতায় মন্তব্য করা কঠিন।
তবে ফেসবুক প্রোফাইল ঘোরাঘুরি করে এটা বোঝা গেছে তার সেলসম্যানশিপ এবং মার্কেটিং স্কিল দুটোই উচ্চমানের। বিশেষত আপনি যদি তার প্রোফাইলে ১১ মিনিট সময় ব্যয় করেন আপনার মনে হতে বাধ্য ‘নির্বাসন’ বইয়ের ২য় খণ্ড লেখার দাবিটা কোটা সংস্কার আন্দোলনের চাইতে কোনোক্রমেই পিছিয়ে নেই, অন্তত ভারচুয়াল জগতে। আমরা ছোটবেলায় শুনেছি, ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি বন্ধের দাবিতে কয়েক জায়গায় মিছিল বের হয়েছিল। একটা বইয়ের ২য় খণ্ড বের হবে কিনা এটাও পাঠক নির্ধারণ করে দিচ্ছে, তাও ১-২ জন নয়, লাইন ধরে দাবি জানাচ্ছে; ব্যাপারটা কি কাকতাল, ট্রেন্ড, নাকি বইয়ের প্রতি তীব্র আসক্তি? যেটাই হোক, এই আরোপিত স্ট্যান্টবাজিকেও তিনি চমৎকারভাবে মার্কেটিংয়ে ব্যবহার করতে পেরেছেন। তার কোনো পাড়ভক্তের চোখে যদি এটা পড়ে তখন সেও বুঝে না বুঝে দাবি জানাবে। কিংবা ২-৩ লাইনের ছোট ছোট ছড়া যেগুলো পড়তে খারাপ না, এবং লাইক দেয়ার জন্য অতি উত্তম অপশন, সেগুলোও প্রোফাইলজুড়ে বিচরণ করছে।
তবে এগুলো জনপ্রিয় হওয়ার পরবর্তী বহিঃপ্রকাশ। এগুলো দেখে অনুমান করা সম্ভব নয় ২০১১ বা ২০১৩ এর দিকে তিনি ঠিক কী কী ধরনের কার্যক্রম চালিয়েছেন যার প্রভাবে তার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। আমার হাইপোথিসিস হলো, তিনি প্রথমত ছবির সাথে গল্প জুড়ে দিয়ে এক ধরনের হালকা ট্রেন্ড তৈরি করেছেন, পরবর্তীতে ধারবাহিক আকারে গল্প লিখে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।
‘হাইত্যা মজিদ’ নামে তার একটি লেখা পড়লাম। এছাড়া সামহোয়ার ইন ব্লগে অন্দরমহল এর প্রথম অংশ পড়া হয়েছে। তার ভিত্তিতে বলা যায় তিনি গল্প তৈরি করতে পারেন, তবে গল্পতৈরির দক্ষতায় তার তুলনায় আরিফ আর হোসেনকে এগিয়ে রাখবো এক্ষেত্রে। এসি, কিংবা ডান্ডাবেড়ি বিষয়ক তার স্ট্যাটাস দুটো পড়লেই বোঝা যায় তরতর করে গল্প বলার ক্ষমতাটা তার কতখানি সহজাত। সঙ্গে হিউমার।
আরিফ আর হোসেনকে টানার কারণ ৪-৫ বছর আগে ফেসবুক খুললেই এই ভদ্রলোকের স্ট্যাটাসগুলোর পাশে ১০০০-১৫০০ বা তারও বেশি শেয়ার দেখতাম। লেখালিখিতে ক্যারিয়ার না গড়ার দরুণ লেখক হিসেবে তার উত্থানটা হয়তোবা দেখা হলো না, কিন্তু যদি লেখক হতে চাইতেন?
এই প্রশ্নটাই সম্ভবত সাদাত হোসাইনকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রভাব হিসেবে কাজ করেছে। দেশের বাইরেও তার অগণিত পাঠক, অস্ট্রেলিয়ায় তার জীবনের গল্প শোনার অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। সুতরাং ধীরে ধীরে তিনি একটি নিজস্ব কমিউনিটি তৈরি করতে সমর্থ হচ্ছেন। তার গল্প বলার ধরন আমার পছন্দ হয়নি, কিন্তু হাজার হাজার মানুষ যেহেতু গ্রহণ করছেন, তিনিই মানুষের সংবেদনকে সঠিক ভাষায় ও চিন্তায় স্পর্শ করতে পেরেছেন। তার এই বিশেষ যোগ্যতাকে প্রশংসা না করলে হীনম্মন্যতার পরিচায়ক হবে।
***
এখনকার সময়টাই অস্থিরতার। কারণে-অকারণে মানুষ ভাইরাল হতে চায়। কোনো প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো মাধ্যমের পৃষ্ঠপোষকতা ব্যতীত কেবলমাত্র লেখালিখির উপর নির্ভর করে জনপ্রিয়তা পাওয়াটা একটি বিরল ঘটনা। অনুরূপ স্ট্র্যাটেজি হয়তোবা আরো অনেকেই অনুসরণ করছেন, কিন্তু তারা সফল হচ্ছে না তো। অর্থাৎ তার কনটেন্টের জোর রয়েছে, যার ভেদযোগ্যতা অসীম।
তবু অনলাইনে সাদাত হোসাইনের নিন্দুকও নেহায়েত কম নয়। এটা একটা অসুস্থ চর্চা। যে কোনো দেশের কিশোর-তরুণদের প্রচুর পরিমাণে ফিকশন পড়া উচিত। ফিকশন ভাবালো কিনা সেটা ২য় চিন্তা,প্রথম কথা- পড়তেই হবে। যিনি পড়াতে পারছেন তাকে আরো অনুপ্রাণিত করা উচিত। আমি সঠিক জানি না সাদাত হোসাইনের বই কত কপি বিক্রি হয়। আমি বরং বছরে ৪১ হাজার বই বিক্রি দেখতে চাই। জে.কে রাউলিং হ্যারি পটার লিখে বিপুল পরিমাণে রয়্যালটি পেয়েছেন। বাংলাদেশের যে মার্কেট তাতে ৪১ হাজারও খুব রক্ষণাত্মক মাইলস্টোন, বরং ৭ লাখ বই বিক্রি হোক। ফিকশন বিক্রি স্থবির হয়ে পড়লে দেশে হাঁস-মুরগীর প্রজননক্ষমতা বাড়বে, মননশীল মানুষের বিলুপ্তি ঘটবে। সিংহভাগ বাংলাদেশী ফিকশন হয়তোবা বাংলা সিনেমার মতোই প্রেডিক্টেবল আর নিজস্ব পর্যবেক্ষণবিহীন, তবু মানুষের মধ্যে পড়ার অভ্যাস জারি থাকলে চিন্তাজাগানিয়া বইয়েরও মার্কেট তৈরি হবে।
হীনম্মন্যতায় ভোগা সিন্ডিকেটবাজ লেখকদের কনটেন্টের সাথে সাদাতের কনটেন্টের কি খুব বড়ো কোনো পার্থক্য আবিষ্কার করা যাবে? উভয়েই রিফ্লেক্টিভ লেখালিখি করেন, তবু এই বিষোদগার মানুষের শুভচেতনাকে হত্যার শামিল।
তবে যে কোনো বিজনেসের ৫টা পর্যায় থাকে- ১. সারভাইভ- যখন যে কোনোভাবে টিকে থাকাই একমাত্র লক্ষ্য। ২. সাসটেইন- টিকে থাকা নিশ্চিত হওয়ার পর সেটাকে ধরে রাখা। ৩. গ্রো- এই সময়ে বিজনেস পরের লেভেলে যায়। ৪. প্লে- এই সময়ে বিজনেস মাফিয়া হয়ে উঠে। ৫. ডিক্লাইন- যখন তার পতন হতে থাকে। অধিকাংশ বিজনেস সাসটেইন পর্যায়েই জীবন পার করে দেয়, কিছু কিছু গ্রো পর্যায়ে যায়, খুবই কম সংখ্যক মাফিয়া হয়ে উঠতে পারে।
সাদাত হোসেনের বর্তমান অবস্থাকে যদি সাসটেইন ধরি, সেখান থেকে গ্রো বা প্লে স্তরে উন্নীত হতে পারবেন কিনা বলা মুশকিল। তার কনটেন্টে নিজস্বতা চোখে পড়লো না; সমসাময়িক অন্য দশজনের মধ্যে তিনি ৫ম বা ৬ষ্ঠ হবেন। পাঠকপ্রিয়তা পেয়ে গেছেন। এখন হয়তোবা ফিল্ম বানাবেন, কিছু নাটকও পরিচালনা করতে পারেন। হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তার পেছনে তার নাটকের অনেক বড়ো অবদান রয়েছে সেটা তার বিভিন্ন সাক্ষাৎকারসূত্রেই জেনেছি আমরা। সাদাত তার জনপ্রিয়তাকে গ্রো এবং প্লে স্তরে উন্নীত করতে সিনেমা বা নাটককে ব্যবহার করবেন হয়তো। এক্ষেত্রে একটা প্যারাডক্সিকাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। নতুন পাঠক যেমন যুক্ত হবে, একটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পাঠক ঝরেও যাবে সিনেমার প্রতি বিরক্ত হয়ে।
এই পরিস্থিতি সাদাত কীভাবে ট্যাকল দেন সেটা একটা ইন্টারেস্টিং পর্যবেক্ষণ হতে পারে। তবে যেহেতু তিনি একজন দক্ষ মার্কেটার এবং বইকে পূত-পবিত্র কিছু না ভেবে প্রোডাক্ট ভাবার মতো প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন মানসিকতা ধারণ করেন, তিনি হয়তোবা একটা সুয়েজ খাল খনন করে নিতে পারবেন।
২০১৫ এর সেই স্পার্কিং মোমেন্টটা কীভাবে তৈরি হয়েছিল, ৪ বছর পরে নিখুঁত বিশ্লেষণ দাঁড় করানো নিতান্ত অসম্ভব। তাই তার জনপ্রিয়তা সম্বন্ধে সুনির্দিষ্ট অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চেয়েও পেরে উঠা হলো না। এটা বরং ভালো, তাকে পর্যবেক্ষণে রেখে তাকে ঘিরে পরিভ্রমণ করা যাবে।
বিভিন্ন জনের রিভিউ পড়ে অনুমান করা যাচ্ছে, সাদাত হোসাইনের ফিকশনগুলো আমাকে ভাবাবে না, ভোগাবেও না। তবু একজন ইমার্জিং জনপ্র্রিয় ফিকশন লেখকের অন্তত একট উপন্যাস না পড়লে তার লেখক-জার্নির প্রতি সম্মান জানানো হয় না। রিভিউ লিখলে সেখানে ক্রিটিকাল এনালাইসিস থাকবে প্রচুর যা তার অগণিত পাঠক স্পোর্টিংলি নিতে পারবেন না, সুতরাং রিভিউ লেখার চিন্তা বাদ।
অনুসদ্ধিান্তের অনুসন্ধানে পর্যবেক্ষণ চলতে থাকুক। সাদাতের পঙক্তিতেই আপাতত বিশ্রামে যাই-
আমি একদিন নিখোঁজ হবো, উধাও হবো রাত প্রহরে,
সড়কবাতির আবছা আলোয়, খুঁজবে না কেউ এই শহরে।
ভাববে না কেউ, কাঁপবে না কেউ, কাঁদবে না কেউ একলা একা,
এই শহরের দেয়ালগুলোয়, প্রেমহীনতার গল্প লেখা।