বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি এবং রাজনীতিক- দুইয়েই অরুচি আমার। আমি হয়তোবা কখনোই রেলমন্ত্রী কিংবা পরিবহনমন্ত্রীকে নিয়ে লেখার সামান্যতম আগ্রহ বোধ করবো না, কিন্তু একজন নাজমুল হাসান পাপন, যিনি ঘটনাক্রমে একজন এমপিও, তিনি যদি লেখার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেন সেটা আমার বক্তব্যের স্ববিরোধীতা হয়ে যায়।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এর প্রেসিডেন্টকে নিয়ে লিখতে চাইলে অবশ্য খুব একটা সাংঘর্ষিক হয় না।
বিসিবির প্রতি ক্রিকেট দর্শকের ইমপ্রেসন কেমন?
আমরা যদি বিসিবিকে একটি সার্ভিস ওরিয়েন্টেড প্রতিষ্ঠান ধরি, যেমন গ্রামীণ ফোন বা রবি, এটা খুব সহজ অনুমান যে, কাস্টমার হ্যাপিনেসের বদলে ক্ষুব্ধ কাস্টমারের সংখ্যাই বেশি। তবে গ্রামীণের সাথে বিসিবির প্রকৃতিগত পার্থক্য বিস্তর। বিসিবির চূড়ান্ত সার্ভিস যে প্রফেশনাল ক্রিকেট টিম তার নামে বাংলাদেশ ব্যবহৃত হয়, তাদের ম্যাচ শুরুর পূর্বে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। ফলে জাতীয়তাবোধ এবং জাতীয়তাবাদী চেতনা নিয়ে বিসিবিকে ডিল করতে হয়, তাদের পরিচালিত ক্রিকেট দলটি কেবল তাদের নয়, এটা অনেকটাই পাবলিক প্রোপার্টি। প্রায় প্রত্যেক ভোক্তা (ক্রিকেটপ্রেমী) এই দলের মালিকানা অনুভব করে, যদিও বিসিবির অধীনস্থ বিভিন্ন জেলা ক্রীড়া সংস্থা, টুর্নামেন্ট, বয়সভিত্তিক দলের কার্যক্রম, মার্কেটিং, কূটনৈতিক তৎপরতা সহ সুবিশাল যে কর্মযজ্ঞ সেসবে তাদের আগ্রহ নেই। জাতীয় দল যে এই সুবিস্তৃত কর্মযজ্ঞের অন্তিম ধাপ এবং বহুজাতিক ম্যাচগুলো এর চূড়ান্ত প্রদর্শনী মাত্র—এই এনালিটিকাল বোধ কাস্টমারমাত্রই তার মধ্যে কাজ করবে না।
পৃথিবীর সকল দেশের ভোক্তা মনস্তত্বই এরকম। সিনেমার উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। একটা সিনেমা আমরা দেখি মাত্র ২ বা ৩ ঘণ্টা, কিন্তু এই সময়টুকুকে সেলুলয়েড বন্দী করতে কত দুঃখ-কষ্ট, স্যাক্রিফাইস আর রাত জাগার গল্প লুকিয়ে থাকে সেই বিবেচনা দর্শকের মনে আসবেই না কখনো, তারা কেবল সিনেমা দেখে ভালো বা মন্দ বলবে, যার ভিত্তিতে সেটি সুপার-ডুপার হিট করবে, অথবা বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়বে।
সম্পর্কটা যখন যোগান আর ভোগের এবং সেখানে যদি খরচের প্রসঙ্গ থাকে, অন্য সকল প্রসঙ্গ অবান্তর হয়ে যায়। যেহেতু খরচ করেছি, যা চাইবো যেভাবে চাইবো সেভাবেই দিতে হবে— এটাই গড় ভোক্তা মানসিকতা।
মাত্র আড়াই দশক আগেও ক্রিকেট আর হকি জনপ্রিয়তায় কাছাকাছি ছিল, এই শতাব্দীর শুরুতেও ক্রিকেট তেমন বড়ো কোনো দর্শকশ্রেণিকে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়নি, ২০১২ এর এশিয়া কাপে ফাইনালে উঠার পরবর্তীতে ব্যাপক আকারে দর্শকসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে, যার পূর্ণতা আসে ২০১৫ তে পাকিস্তান, ভারত আর সাউথ আফ্রিকাকে সিরিজ হারানোর মধ্য দিয়ে। মাত্র ৩ বছরে একটি দেশের ক্রিকেট অনুসারীর সংখ্যা দুই-আড়াই গুণ বৃদ্ধি পাওয়াটা অত্যন্ত বিপজ্জনক লক্ষণ। বিল্ডিংয়ে রডের পরিবর্তে বাঁশ গুজে দিলে যে সমস্যা, আচমকা আড়াই গুণ বৃদ্ধির কুপ্রভাবও তেমনই।
বিসিবির তাই দর্শকপ্রিয় প্রতিষ্ঠান হওয়ার সুযোগ নেই।তাদের নিয়তি কাস্টমারের গালমন্দ হজম করা।
যারা চাকরি করেন তারামাত্রই অবগত প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে একটি অর্গানোগ্রাম থাকে, হায়ারারকি অনুসারে রিপোর্টিং এবং জবাবদিহিতা থাকে, ডিপার্টমেন্ট ভেদে জব রেসপনসিবিলিটি এবং KPI থাকে; বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট, ফেস্টিভাল বোনাস প্রভৃতি থাকে, এবং প্রতিষ্ঠানের যিনি সিইও তার ওপর রেভিনিউ টার্গেট অর্জনের গুরুভার ন্যস্ত থাকে। এই চেইন অব কমান্ড এবং প্রোটোকল বাইরে থেকে জানার সুযোগ নেই; আমরা ওয়ালটনের শো-রুমে গেলে কেবল প্রোডাক্ট দেখবো এবং সেখানে কর্মরত কয়েকজন স্টাফ সম্বন্ধে জানতে পারবো, এবং প্রোডাক্টের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স আর ওই কর্মীদের আচার-ব্যবহার দিয়ে ওয়াল্টনকে পরিমাপ করবো। কারণ ওয়াল্টনের অভ্যন্তরীণ নীতি-নির্ধারণীতে আমাদের প্রবেশযোগ্যতা নেই।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন কালচার নিয়ে যদি গবেষণা করতে যান, একটি আপ্তবাক্য একেবারে চাক্ষুষ পাওয়া যাবে- ‘প্রতিষ্ঠানের চাইতে পারসন বা ব্যক্তি বড়ো’। এটা ভালো নাকি মন্দ সেই মীমাংসায় যাওয়া নিরর্থক, দীর্ঘদিনের ব্যক্তিনির্ভরতা ঐতিহ্য আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।
বহুজাতিক কোম্পানী বাদে স্থানীয়, ছোট বড়ো যেমনই হোক, প্রতিষ্ঠানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রধান কর্তাব্যক্তির ইচ্ছা বা মর্জি অনুসারেই সবকিছু পরিচালিত হয়, তিনি যদি বলেন রাত ১২টায় অফিসে আসতে হবে সেটাই সত্য, যদি বলেন সোমবার দুপুরের মধ্যে নীলফামারী যেতে হবে, তার কোনো অন্যথা করা যাবে না। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলেও জমিদারতন্ত্র এখনো অটুট রয়েছে মহা গৌরবে। আপনি প্রসেস, কর্মপরিধি, হিউম্যান পটেনশিয়ালিটি, ব্রান্ড ভ্যালু/ইমেজ প্রভৃতি শব্দ বা কনসেপ্ট দিয়ে যতোই প্রলুব্ধ করতে চান, প্রতিষ্ঠান প্রধানের জন্য সবকিছু শিথিল। পেইড সিইও রাখা হয় মূলত প্রতিষ্ঠান প্রধানের খেয়াল কিংবা খামখেয়ালকে সুচারুরূপে সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে, আর প্রতিষ্ঠান প্রধান বছরব্যাপী নেটওয়ার্কিং করে বেড়ান। প্রতিষ্ঠানে তিনি কিছু মোসাহেব বা তাবেদরা পুষেন ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করতে, সেই তাবেদার মূলত তার প্রতি অন্তঃপ্রাণ, তার যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন এই তাবেদার বৃন্দের চিন্তাধারারই প্রতিফলন। তাবেদারদের সাংগঠনিক বা সৃজনশীল চিন্তাভাবনা না থাকলেও নির্লজ্জ নিঃশর্ত আনুগত্যের মধ্য দিয়ে যোগ্যতার ঘাটতিটুকু পুষিয়ে নেন। ফলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর কার্যত তাবেদাররা প্রতিষ্ঠান-প্রধান আর কর্তাব্যক্তি তাবেদারদের আজ্ঞাবহ পুতুলে পরিণত হন, যা বাইরে থেকে বোঝা যায় না।
পক্ষান্তরে প্রতিষ্ঠানে আরেকটি সংস্কারপন্থী শ্রেণি থাকে যারা গঠনমূলক চিন্তা করেন, কিন্তু তাবেদারিতে নামতে না পারার দরুণ প্রতিষ্ঠানপ্রধানের আনুকূল্য না পেয়ে উল্টো তাবেদারদের তাফালিংয়ে কোণঠাসা অবস্থায় থাকেন। ফলে বাংলাদেশের খুব কম প্রতিষ্ঠানই গ্রেট স্তরে উন্নীত হতে পারে, প্রায় ক্ষেত্রেই ব্যাড ভেঞ্চার হিসেবে কোনোমতে টিকে থাকে। এতেই অবশ্য খুশির অন্ত নেই। যতদিন না দুর্নীতির কারণে ভাইরাল হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত বিলাস-বৈভবে জীবন তো কেটে যায়ই।
নাজমুল হাসান পাপনের মনোজগত বোঝার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান-সংস্কৃতি এবং তাবেদার চরিত্র সম্বন্ধে গভীর পর্যবেক্ষণ থাকতে হবে। নইলে উপলব্ধিতে বেহুলার নিশ্ছিদ্র বাসরঘর তৈরি সম্ভব হবে না, কালসাপ ঠিকই ঢুকে পড়ে লখিন্দরকে দংশন করে চলে যাবে।
বিসিবি সভাপতি বাংলাদেশের অন্যতম প্রেস্টিজিয়াস এবং আলোচিত পদবি। বিসিবি সভাপতি যে পরিমাণ মিডিয়া এক্সপোজার পান, একজন পূর্ণমন্ত্রীর ভাগ্যেও তা জুটে না। বিসিবির মিডিয়া উইং থেকেই যেসব ইস্যু সমাধান হয়ে যাওয়ার কথা, বড়জোর সিইও পর্যন্ত যেতে পারে, তার চাইতেও অগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মিডিয়া সরাসরি সভাপতির সাথে যোগাযোগ করে, তার কাছ থেকে বার্তা নেয়। সভাপতি এবং মিডিয়া দুই পক্ষই একে-অপরকে এক্সপ্লোয়েট করে, মজারই ব্যাপারটা।
বাংলাদেশী চিরায়ত প্রতিষ্ঠান সংস্কৃতি এবং মানুষের এক্সপোজার পাওয়ার আদি-অকৃত্রিম বাসনাকে এক পাশে সরিয়ে রাখলে নাজমুল হাসান পাপন নামের যে মানুষটিকে পাই আমার দৃষ্টিতে তিনি একজন ইন্টারেস্টিং ব্যক্তিত্ব। তিনি কোনো বৈপ্লবিক ব্যক্তিত্ব নন, তার প্রতি বিশেষ প্রত্যাশাও রাখি না, যে কারণে তাকে পর্যবেক্ষণে অনির্বচনীয় আনন্দ আছে। শালগ্রামশিলা মিডিয়া তাকে নতুন কীভাবে উপস্থাপন করছে এটাই বরং পর্যবেক্ষণে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করে।
নাজমুল হাসান বিসিবির ১৪তম সভাপতি, তবে মজার ব্যাপার হলো সাবের হোসেন চৌধুরী, আহমেদ মোস্তফা কামাল আর তিনি- এই ৩ জন ব্যতিরেকে বিসিবির বাকি সভাপতিদের নিয়ে না মিডিয়া, না পাবলিক কারো কোনো আগ্রহ আছে। এদের মধ্যে একমাত্র সাবের হোসেন চৌধুরীকে জনপ্রিয় বলা যায়। মূলত আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া আর টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার সময় দায়িত্বে থাকার দরুণ এই জনপ্রিয়তার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। তবে বহুজাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ তখনো নোবডি পর্যায়ের থাকা, প্রত্যাশার পারদ শূন্যগামী থাকা এবং বিসিবি ধনকুবের না থাকা প্রভৃতি ফ্যাক্টরগুলোর কারণে বলা সম্ভব নয় বর্তমান অবস্থাতেও সাবের চৌধুরী তার পূর্বেকার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারতেন কিনা। বাকি ২ জনই সমালোচিত, যার শুরু তাদের নাম দিয়ে। একজনকে মানুষ ডাকতো লোটাস কামাল (লোটা-কম্বল), আরেকজনকে পাপোন্দা (পাপড় ভাজা)।
নাজমুল হাসানের অজনপ্রিয়তার দৃশ্যমান যেসব কারণ পাওয়া যায় তার কয়েকটি জড়ো করার চেষ্টা করি-
১. মিডিয়ার সামনে বেফাঁস কথা বলেন। ক্রিকেটারদের ছোট করেন। যেমন, ২০১৫ বিশ্বকাপ চলাকালে তামিমকে নিয়ে বলেছেন ‘বুমবুম তামিম এখন ঘুমঘুম তামিম হয়ে গেছে’, মুশফিকের সম্বন্ধে বলেছেন ‘মুশফিক যে ছক্কা মারতে পারে জানতাম না’। এছাড়া আইসিসি র্যাং কিংয়ে বাংলাদেশ ৬ নম্বরে চলে আসা সংক্রান্ত সংবাদ নিয়েও ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছিলেন। এক ঘরোয়া আড্ডায় জনৈক ক্রীড়া সাংবাদিক বলেছিলেন- ‘পাপন ভাই লোক খারাপ না, কিন্তু যে কথাগুলো আমরা সাধারণত ড্রইং রুমে বসে আড্ডাচ্ছলে বলি, উনি সেগুলো ক্যামেরার সামনে বলে ফেলেন’। এই মন্তব্যের পর্যালোচনা যথা সময়ে করা হবে।
২. ব্যর্থতার দায় খেলোয়াড়দের, সাফল্যের কৃতিত্ব তার- এরকম এটিচুড দেখান, অর্থাৎ সবসময় ক্রেডিট নিতে চান। যেমন অমুককে আমি দলে নিতে বলেছি, তমুককে আমি বাদ দিয়েছি, আমি বলেছিলাম বলেই ওভাবে খেলেছে। এক্ষেত্রে ২০১৫ এর সাউথ আফ্রিকা সিরিজকে স্যাম্পল হিসেবে নেয়া যেতে পারে। টি২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর প্রথম ওয়ানডেতেও বাংলাদেশ খুব সহজে হেরে যায়। সিরিজের মাঝপথে তিনি সকল খেলোয়াড়কে ডেকে পাঠান, এ নিয়ে দেবব্রত মুখার্জীসহ কয়েকজন ক্রীড়া সাংবাদিক ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই মিটিংয়ের পরের ২ ওয়ানডেতে টানা জেতার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সাউথ আফ্রিকাকে ওয়ানডে সিরিজ হারায় বাংলাদেশ এবং প্রায় ১০ বছর পরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। তিনি এতে নিজের ক্রেডিট দেখতে পান।
৩. দল নির্বাচনে অতি মাত্রায় হস্তক্ষেপ করেন, নির্বাচক মন্ডলী এবং ক্যাপ্টেন-কোচ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। গত এশিয়া কাপে হুট করে ইমরুল, সৌম্যকে দলের সাথে যুক্ত করা (যে সম্বন্ধে অধিনায়ক, কোচ কেউই জানতো না), জিম্বাবুইয়ে সিরিজের ৩য় ম্যাচে স্কোয়াডের বাইরে থাকা সৌম্য সরকারকে খেলানো (যদিও স্কোয়াডে থাকার সুবাদে সুযোগটা ডিজার্ভ করত ব্যাটসম্যান নাজমুল হাসান শান্ত)— এসবের মধ্যে সেই স্বৈরাচারিতাই প্রতিভাত হয়। উৎপল শুভ্রর ‘এগারো’ বই পড়াসূত্রে আমরা এও জানতে পারি, ২০১৭ তে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চলাকালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি সাকিবকেও বাদ দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছিলেন, অধিনায়ক আর কোচ প্রতিবাদ করায় সেই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়নি। এমনকি শততম টেস্টে শ্রীলংকার বিপক্ষে জয়ের ম্যাচেও তিনি একজন বড়ো খেলোয়াড়কে বাদ দিতে চেয়িছিলেন, লিটন দাস ইনজুরিতে পড়ায় তা হয়ে উঠেনি। অনুমান করা যায়,সেই খেলোয়াড়টি সাকিব বা মুশফিকের কেউ একজন।
৪. তিনি আলোচনায় থাকতে চান। এক্সপোজার পাওয়ার ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেন, যে কারণে খেলোয়াড়দের প্রতি কর্তৃত্ব খাটিয়ে বুঝিয়ে দিতে চান তার ক্ষমতা কত দূর বিস্তৃত।
৫. ক্রিকেটের অবকাঠামো উন্নয়ন বা বাংলাদেশের বিদেশ সফর(বিশেষত ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড) আদায়ে সাংগঠনিক দক্ষতা দেখানোর পরিবর্তে অতি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পড়ে থাকেন।
৬. পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং আর অন্যায্য সুবিধা দিয়ে আবাহনীকে বারবার প্রিমিয়ার লীগে চ্যাম্পিয়ন বানানোর ক্ষেত্রে তার প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে, যেহেতু তিনি আবাহনীর কার্যক্রমের সাথে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জড়িত ছিলেন।
৭. নিকৃষ্ট আম্পায়ারিংয়ের মাধ্যমে ২য় ও ৩য় বিভাগ ক্রিকেটকে কলংকিত করার মাধ্যমে দেশের ক্রিকেটকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তার মদদপুষ্ট দোসরেরা।
৮. হাথুরুসিংহকে সর্বময় ক্ষমতা প্রদান করে তিনি জাতীয় দলের প্লেয়ার সিলেকশন প্রসেসকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। শর্টকাটে সাফল্য খুঁজতে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদে বড়ো ক্ষতি করেছেন।
অভিযোগের পাশাপাশি কিছু কারণে খুব সিলেক্টিভ একটি গোষ্ঠীর মাঝে তার জনপ্রিয়তাও রয়েছে। সেই জনপ্রিয়তার ভিত্তি নিয়ে নাড়াচাড়া করা যাক-
১. তার জিরো টলারেন্স নীতির কারণেই বিপিএল ম্যাচ ফিক্সিংয়ের শাস্তি দেয়া সম্ভব হয়েছে। নইলে আশরাফুল যেরকম জনপ্রিয় ক্রিকেটার ছিলেন, বিসিবি চাইলেই বিষয়টা উপেক্ষা করতে পারতো।
২. তিনি একজন কঠোর প্রকৃতির প্রশাসক, খেলোয়াড়দের শৃংখলা বোধ উন্নত করতে তিনি কোনো ছাড় দেননি। নাসির, সাব্বির, আলআমিন কেউ বাদ পড়েনি, এমনকি সাকিবের মতো মহাতারকাকেও তিনি নিষিদ্ধ করেছিলেন।
৩. এ’ দল, যুবদল, এইচপি ইউনিট প্রভৃতি প্রোগ্রামের কলেবর বেড়েছে, ট্যুর এক্সচেঞ্জ হচ্ছে।
৪. প্রমীলা ক্রিকেটে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ৬০০ টাকা ম্যাচ ফি নিয়ে আন্দোলন হলেও পূর্বের তুলনায় এই খাতে বিসিবি মনোযোগ বাড়িয়েছে।
সাংখ্যিকভাবে যদি হিসাব করি, ৮টি অভিযোগের বিপরীতে প্রশংসা ৪টি, অর্থাৎ নেতিবাচকতারই প্রাধান্য লক্ষণীয়। এগুলোর কোনোটাই আমার বক্তব্য নয়, বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া জনমতের সংকলন বলা যেতে পারে।
এই সকল অভিযোগ, অনুযোগের বাইরে গিয়ে আমি বরং খোঁজার চেষ্টা করি জনাব পাপন আসলে এরকম কেন।
বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষই মতামত প্রকাশের স্বাধীনতাকে মিসইউজ করেন, বাকস্বাধীনতার নামে পরনিন্দায় আনন্দ পান। রেন্ডমলি যে কোনো মানুষ নির্বাচন করে তার সম্বন্ধে ৫টা কথা কথা বলতে গেলে সেখানে ৪টিই ত্রুটি বা দুর্বলতা থাকবে, ১টি থাকবে পজিটিভ, তাও সেটা ‘ভালো মানুষ, কারো সাতে-পাঁচে নেই’ জাতীয় দায়সারা গোছের মন্তব্য। এই জনপদে কাজ করতে চাওয়া বিপজ্জনক। যে কারণে সাকিব আল হাসানের ফ্যান আর হেটারসের অনুপাত সমান, কাছাকছি কারণে পাপনের হেটারসংখ্যা অনেক বেশি।
কী সেই কারণ?
তারা মন রক্ষা করে কথা বলেন না। বাংলাদেশের কালচারে মন রক্ষা করার চাইতে ব্রহ্মাস্ত্র ২য়টি নেই। কিন্তু জনাব পাপনের প্যারাডক্সটা অন্যত্র। তিনি কথা বলার সময় মন রক্ষা করেন না, আবার আচরণে পাবলিক সেন্টিমেন্টকে পুঁজি করতে চান- যে কারণে ফিলোসফিকালি এবং পলিটিকালি দুই ক্ষেত্রেই তিনি ইনকারেক্ট অবস্থা তৈরি করেন, যেটা ওষুধের সাইড এফেক্টের মতো কাজ করে।
তার চরিত্রের প্যারাডক্সিকাল প্রকৃতি বোঝার ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিজীবনের অন্য ডাইমেনশনগুলো বোঝার চেষ্টা করি। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানী বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস এর এমডি, তিনি একজন সংসদ সদস্য। এর সঙ্গে সংযুক্তি হিসেবে আসবে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এবং ২১ শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়মিলীগ নেত্রী আইভি রহমানের পুত্র। যে কোনো দেশী কোম্পানীর এমডি এর লাইফস্টাইল এবং চিন্তাপ্রক্রিয়ার সাথে যদি আপনার পরিচয় থাকে, কিংবা স্থানীয় এমপিদের কার্যবিধি যদি পর্যবেক্ষণ করেন, দেখবেন ক্ষমতা আর আভিজাত্যের সংমিশ্রণে এক ধরনের জৌলুস তৈরি হয় তাদের মধ্যে। কিংবা যারা মঞ্চে উঠে কখনো ভাষণ দিয়েছেন, বা কনসার্টে হাজারো দর্শকের সামনে গান পরিবেশন করেছেন তারাও কিছুটা অনুভব করতে পারবেন, সহস্র-লক্ষ চোখ যখন অনুসরণ করে বা কথা শোনার অপেক্ষায় থাকে সেটা মনের মধ্যে অদ্ভুত এক কমপ্লেক্সিটি তৈরি করে। নিজের ব্যাপারে চরম মাত্রায় ক্রিটিকাল না হলে সেই কমপ্লেক্সিটি থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়।
পৃথিবীর ক্ষমতাশালী বা খ্যাতিমানেরা পরিসর বৃদ্ধির সাথে সাথে স্তাবকের সংখ্যা বাড়ান, নিজেকে ক্রিটিকালি দেখতে এক পর্যায়ে তারা ভয় পেতে শুরু করেন। ফলে ক্ষমতা আর পরিচিতির জটিল মনস্তাত্ত্বিক খেলায় জনাব পাপন একজন নিরীহ সৈনিকমাত্র। বরং অনেক ক্ষেত্রেই তাকে তুলনামূলক কম মন্দ মনে হয় আমার। তার পরিবর্তে যদি বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বকেও বিসিবি সভাপতি বানানো হয় ৬ মাসের মধ্যেই তিনি ইস্তফা দেবেন অথবা জনপ্রিয়তা হারিয়ে পাপনের চাইতেও অজনপ্রিয় মানুষে পরিণত হবেন।
জনাব পাপনের কথাগুলোকে বরং অনেকটাই বড়ো মামাসুলভ লাগে। কিন্তু আমাদের কলেজ-ভার্সিটি পড়ুয়া সমর্থকগোষ্ঠী এবং দলিল লেখক থেকে ক্রীড়া সাংবাদিক বনে যাওয়া মানুষদের বদৌলতে সেই সব কথার এন্টারপ্রেটেশন হয়ে পড়ে ভয়ানক। এই মুহূর্তে দুটো স্টেটমেন্ট মনে পড়ছে-
স্টেটমেন্ট ১- নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব ২১৭ রান করা সত্ত্বেও ২য় ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশ হেরে যায় ম্যাচটা। পাপন বলেছিলেন এক ইনিংসে রানটা না করে ২ ইনিংসে করলে ম্যাচটা হারতাম না। তার কথায় কোনো ভুল নেই, তিনি বোঝাতে চেয়েছেন ২ ইনিংসেই যদি কন্ট্রিবিউট করতে পারতো সাকিব তাতে ম্যাচটা বাঁচানো যেত। কিন্তু তার এন্টারপ্রেটেশন কী দাঁড়িয়েছিলো অনলাইনে এখনো সেসব চিন্তাশূন্যতার প্রমাণ রয়ে গেছে।
স্টেটমেন্ট২- মাশরাফি নির্বাচনের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ মিস করবেন কিনা এরকম এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন ‘ও আমাদের দলে খেলোয়াড় হিসেবে খেলে না, ক্যাপ্টেন হিসেবে খেলে’। তিনি মাশরাফির ইমপ্যাক্ট আর ইনফ্লুয়েন্স বোঝানোর জন্য বড়ো এক কমপ্লিমেন্ট দিলেন, ১০ ওভার করার জন্য পেস বোলার তো পাওয়াই যাবে, কিন্তু মাশরাফির অধিনায়কত্বটা কোনোভাবেই রিপ্লেস করা সম্ভব নয়- এটাই ছিল বক্তব্যের সারকথা। আমাদের উর্বর মস্তিষ্কের ক্রিকেট দর্শকেরা পরিসংখ্যান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন মাশরাফির মাহাত্ম্য প্রমাণে, আর পাপনের মণ্ডুপাত করতে। এতে যে তারাই উল্টো মাশরাফিকে অবমূল্যায়ন করলো সেই ন্যূনতম বোধটুকুও নেই তাদের।
আমি জনাব পাপনের যে কোনো স্টেটমেন্টের এসেন্সটা ধরার চেষ্টা করি, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেখানে নির্জলা সত্যকথনই আবিষ্কার করি। ‘নাসিরকে দলে চাই’ ইস্যুতে নিখিল-বাংলা ক্রিকেটমোদী গোষ্ঠী যখন আহাজারি করতো, তখনো এটার পেছনে পাপনের গোয়ার্তুমিকেই মূখ্য হিসেবে দেখা হতো। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কথিত বুদ্ধিজীবী আসিফ নজরুলও এক টেলিভিশন টকশো তে নাসিরকে উপেক্ষা করার জন্য সরাসরি পাপনকে অভিযুক্ত করেছিলেন। তারও আগে পাপন যখন বলেছিলেন নাসিরের ৮০টা সিম, কয়েকশো গার্লফ্রেন্ড- এই মন্তব্যকে অরুচিকর হিসেবেই দেখেছিলো সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থকেরা। তারপর যখন কিছুদিন আগে নাসিরের অডিও ক্লিপ ফাঁস হলো,তখন বুদ্ধিজীবী আসিফ নজরুল কিংবা সেইসব সমর্থকের স্ট্যান্ড পয়েন্ট বা বক্তব্য কী তা জানতে পারলে ভালো হতো।
আমি জীবনে কখনো চাকরি করিনি, তবে বহু উদ্যোক্তার সাথে মেশা হয়েছে, এবং অনেকেরই দীর্ঘ ইন্টারভিউ নিয়েছি। সেসূত্রে উপলব্ধি হলো, এমডি/চেয়ারম্যান বা সিইও, যা ই বলি, প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তি তার অধঃস্থনদের যোগ্যতা সম্বন্ধে খুবই নেতিবাচক থাকেন, কখনো কখনো অবচেতনভাবেই তাদের নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেন, এবং মন থেকে সহসা কাউকে বিশ্বাস করতে পারেন না। যে কারণে প্রতিটি কাজেই নিজের ইনপুট দিতে পারাটাকে এক ধরনের স্মার্টনেস গণ্য করে। যে কারণে বাংলাদেশের স্মল আর মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজগুলোতে লিডারশিপ চর্চা খুবই নাজুক, মাল্টি টাস্কিং আর মাইক্রো ম্যানেজিংয়ের চর্চা হরদম চলতেই থাকে।
জনাব পাপনও পারফেক্ট বাংলাদেশী কর্তাব্যক্তি। তিনি যে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের এমডি, বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে বিসিবি তার চাইতে স্বতন্ত্র হলেও অভ্যাসবশতই তিনি দুটোকে এক করে ফেলেন, হয়তোবা তার মনে হয় উভয়ক্ষেত্রেই তিনি তো মানুষই ম্যানেজ করছেন। তাছাড়া ‘বাঙালি শক্তের ভক্ত নরমের যম’ তত্ত্বটাও হয়তোবা মাথায় ঘোরে তার, যে কারণে চাপে রেখে পারফরম্যান্স আদায়ের কৌশলটাকেই প্রেফার করেন। এধরনের ম্যানেজমেন্ট কৌশল যে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর তাকে আমলে নেয়ার গুরুত্ব বোধ করেন না। কারণ এধরনের পদগুলোর ক্ষেত্রে মাথায়ই থাকে ‘আমার রাজত্বকাল ৫ বছর মাত্র, এর মধ্যে যতটুকু যা করতে পারি সেটাই সার্থকতা; ১০ বছর পরে কী হবে সেটা আমার দেখার বিষয় না’। সমগ্র জাতি চলে ৫ বছর মেয়াদী ইজারাদারি নীতিতে, তাদের মধ্যে দূরবর্তী ভাবনা ভর করবে কোন্ ভরসায়!
ক্রিকেট খেলাটায় হঠাৎ করেই অঢেল পরিমাণ টাকার সমাগম ঘটে গেছে। মাত্র এক জেনারেশন আগেও ক্রিকেটাররা অনেকটাই নিম্ন মধ্যবিত্ত জীবন যাপন করতেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ জনপ্রিয়তা পাওয়ায় ২০-২২ বছর বয়সেই লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জনের সুযোগ তৈরি হয়েছে, কেউ কেউ কোটিপতিও হয়ে যাচ্ছে। আঙুল ফুলে কলাগাছ বাগধারাটির অর্থ যদি স্মরণ করি, এবং একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি, শ্রেণি কাঠামোতে হুট করে বিরাট শিফটিংটার অভ্যস্ত হওয়ার জন্য মেন্টালি যতখানি স্মার্ট হওয়া উচিত, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ তরুণ ক্রিকেটারের তাতে শোচনীয় রকম ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে তরুণ ক্রিকেটারদের অনেকেই স্টারডমের উত্তাপে ট্র্যাকচ্যুত হয়ে পড়ছে।
স্টারডম যাদের জন্য ব্লেজিং না হয়ে বারডেন হয়ে উঠে, সেই প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিকে অবশ্যই বিশেষ পারসোনালিটি সম্পন্ন হতে হবে, সেটা সর্বক্ষেত্রে সমর্থনীয় হয়তোবা নয়, তবু বেটার বিকল্পও পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ জিতলে তিনি ক্যামেরার সামনে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেন, এখানেও সেই হায়ারারকি সিস্টেম, কারণ তারও পারফরম্যান্স দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তুষ্ট রাখার দায় আছে। এইসব প্রোটোকল বুঝতে না পেরে কেবল ট্রল করা, ভাইরাল করার মধ্যে নিজের হীনম্মন্যতাই পরিস্ফূট হয়ে উঠে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের কতখানি উন্নতি হলো বা অবনতি হলো, এতে দর্শকের এবসোলিউটলি কিছু যায়-আসে না। যখনই ইমেজ সংকট তৈরি হবে জিম্বাবুইয়ে বা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোম সিরিজে ইনভাইট করতে হবে, সিরিজ জিতলেই সবকিছু ঠাণ্ডা। কোনোক্রমে যদি র্যাং কিংয়ের উপরে থাকা দলকে ১-২টা ম্যাচে হারিয়ে দেয় সেই রোমান্থন দিয়েই ২ বছর ঠেকিয়ে রাখা যাবে। বাংলাদেশ যে বিদেশে কম খেলে এর পেছনে এটাও একটা বড়ো কারণ হতে পারে। নিউজিল্যান্ড সিরিজে যেভাবে হোয়াইটওয়াশ হলো, পরের ২টা সিরিজেও যদি একই ফলাফল আসে, দর্শকমহাজনেরা অসন্তুষ্ট হবেন, স্পন্সরের পরিমাণ কমে যাবে। সে কারণে আমরাও ম্যাচ জেতার চাইতে ক্লোজ ম্যাচ খেলাকে উৎসাহিত করি; একমাত্র আমাদের অভিধানেই ‘সম্মানজনক পরাজয়’ নামে এক শব্দবন্ধ পাওয়া যায়।
এরকম যাদের গড় মানসিকতা সেখানকার ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতিত্ব করার জন্য জনাব পাপনই উৎকৃষ্ট ব্যক্তিত্ব। সেক্ষেত্রে তার বক্তব্যে উইট আর হিউমার যা পাওয়া যায় সেগুলো বরং চিন্তাপ্রক্রিয়া শাণিত করতে সহায়ক। আমি তার সেন্স অব হিউমারের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত; সমগ্র জাতির প্রশাসন সংস্কৃতিই গেড়ো দিয়ে লুঙ্গি পরার মতো আলগা, কী আসে-যায় যদি একজন জনাব পাপন সেই আলগা লুঙ্গিতে বেল্ট বাঁধতে চাওয়ার ব্যতিক্রমীতা না দেখান!