ধরা যাক, খায়রুল একজন সাবেক ক্রিকেটার যিনি বাংলাদেশের হয়ে ২টি ওয়ানডে এবং ১টি টেস্ট খেলেছেন। ইতিপূর্বে তার সাথে একবার আলাপচারিতা হয়েছে। রম্য আর সিরিয়াসনেসের সমণ্বয়ে অনেক কিছুই সে আলোচনায় উঠে এসেছিল। বাংলাদেশের প্রত্যক সিরিজেই তার সাথে অন্তত একবার বসার ইচ্ছা রইলো।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ ফার্স্ট ইনিংসে প্রায় ৬০০ রান করেও হেরে গেল, এ ব্যাপারে কী বলবেন?
খায়রুল: কিছু ভুল ছিলো তোমার, কিছু আমার, তুমি করোনি স্বীকার বন্ধু, আমি করেছি…….. যদি স্বীকার করতে বন্ধু তুমি হতে জয়ী
প্রশ্ন: জেমসের গান শুরু করলেন যে
খায়রুল: বিষয়টা খুবই উদ্ভট বলবো। বাংলাদেশ কেমন যেন আনপ্রেডিক্টেবল হয়ে যাচ্ছে। এটা পাকিস্তানের মতো ভঙ্গুর দলের বৈশিষ্ট্য, কিন্তু বাংলাদেশের লক্ষ্য হওয়া উচিত অন্তত শ্রীলংকার মতো হওয়া। বাংলাদেশ যে বড় ম্যাচগুলো জিততে পারে না, বা অপোনেন্টের ওপর প্রেসার কন্টিনিউ করতে পারে না, এটার কারণ কিন্তু স্কিলের অভাব না, এরকম সিচুয়েশনে রেগুলার না পড়া। ওয়ানডেতে একটা ভালো স্টার্ট হলেই ম্যাচ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যায়, কিন্তু টেস্টে ৪টা ইনিংস, প্রত্যেকটা সেশনে ম্যাচ চেঞ্জ হয়ে যায়। এতো দীর্ঘ সময় একই হারে পারফরম করতে হলে যে স্ট্যাবিলিটি দরকার বাংলাদেশের সেই জায়গাটাতে ঘাটতি আছে। আমাদের স্কোয়াডের কোন্ খেলোয়াড়টা লঙ্গার ভারসনে খেলে, সবাই তো বিপিএল আর প্রিমিয়ার লীগ নিয়ে ব্যস্ত, জাতীয় লীগের মানও তো আশাপ্রদ নয়। তাহলে এই অভিজ্ঞিতাগুলো হবে কীভাবে, রিহার্সেল লাগবে না? আমাদের প্লেয়ারগুলো গড গিফটেড ট্যালেন্ট নিয়ে জন্মেছে বলে এতোসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ঝলক দেখায়। যে লোকের মাসিক আয় ৫ হাজার টাকা, সে যদি কোনো মাসে আপনার বিপদে ১২ হাজার টাকা দিয়ে সাহায্য করে, বুঝতে হবে সে কারো কাছ থেকে ধার করেছে, অথবা নিজের সঞ্চয় থেকে দিয়েছে। আপনার এতেই তার প্রতি যারপরনাই কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। তবু দেখেন আমরা কিন্তু আগাচ্ছি, ইনিংসে হারা একসময় নিয়মিত ছিলো, এখন অন্তত ১টা ইনিংস রেগুলারই ভালো খেলছি। অন্যদের ৫ বছর লাগলে, আমাদের ১০ বছর লাগবে, ইনভেস্টমেন্টটা সময়ের।
প্রশ্ন: তাহলে কি আমরা টেস্ট নিয়ে প্রত্যাশা করবো না?
খায়রুল: ছোটবেলায় জানতাম, শুধু টেবিল-টেনিস খেলতে টেবিল লাগে, ক্রিকেটের জন্য বড় মাঠ। কিন্তু বাংলাদেশের সব খেলাই তো টেবিলে হয়, আগে টেবিল থেকে খেলাটা মাঠে নিয়ে আসুন। বিসিবি আর বিবিসি এক হয়ে গেলে, হেড়ে গলায় গান গাওয়াই শ্রেষ্ঠ বিনোদন। ‘এ যে বিষম পিরিতি পিরিত, এ পিরিতি সই, বন্ধ মনের তালা চাবি আছে কই!’
প্রশ্ন: টেস্টে বাংলাদেশ কি উন্নতি করছে,বা আগামী মাসে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট নিয়ে কী ভাবছেন?
খায়রুল: মাঝরাতে চাঁদ যদি আলো না বিলায়, ভেবে নেবো আজ তুমি চাঁদ দেখোনি, আকাশের নীল যদি আঁধারে মিলায়, বুঝে নেবো তুমি তারে মনে রাখোনি
প্রশ্ন: আজ খুব গানের মুডে আছেন মনে হচ্ছে
খায়রুল: আপনার প্রশ্নগুলো নাইন-টেনে পড়া কিশোরের মতো, যারা ক্রিকেট খেলাকে জীবন-মরণ ভেবে বসে আছে, আর ফেসবুকে ক্রমাগত তর্ক করে। আমাদের প্রথম ৭ ব্যাটম্যানের মধ্যে তামীম আর মুশফিক বাদে একজনের কথা বলেন যার টেম্পারমেন্ট ভালো, যে সেট হয়ে বড় ইনিংস খেলতে পারে। ইমরুল কায়েস আর মমিনুল কখনো সেট হয় না, যে কোনো মুহূর্তে আউট হয়ে যায়। মাহমুদুল্লাহ ওয়ানডেতে যতটা সলিড টেস্টে ততোটাই কেয়ারলেস, সাব্বির মাত্র টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করলো, সাকিব ব্যাটিংটাকে পুরোপুরি এক্সপেরিমেন্টের জায়গায় নিয়ে গেছে। আগে কাট শটটা কত ভালো খেলতো, অফ সাইডে রান করতো, এখন তার স্কোরিং জোন হয়ে গেছে ক্রস ব্যাটেড শট খেলে মিড উইকেট এরিয়া। এইবার আমাকে বলেন লম্বা সেশন ধরে ব্যাটিং করবে কে? তামীম, অথবা মুশফিক। কিন্তু কাপ্তান সাহেব ৬ এর আগে কিছুতেই নামেন না। লিটন দাসের ব্যাটিং দেখেছেন টেস্টে? বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়া টেস্টেও ফিফটি করেছিল, এরপর বিপিএল এ খারাপ খেললো, ইনজুরিতে পড়লো, আর কয়েকটা ওয়ানডেতে লেগ সাইডে বেশি খেললো, আমরা ওকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিলাম। টেস্টে রান করার জন্য সব ধরনের স্ট্রোক জানাটা জরুরী না তো। মার্শাল আইয়ুবের ব্যাটিং মনে আছে কারো? ওইরকম সলিড টেকনিকের ব্যাটসম্যান কোন্ কারণে টিমে নেই, কেউ ব্যাখ্যা করতে পারবে? সে তো ইনজুরিতেও পড়ে নাই। সাব্বির, সৌম্য এরা টেস্টে কী চায়, এরা ওয়ানডেটাই কয়েক বছর মনোযোগ দিয়ে খেলুক না।
প্রশ্ন: কী বলেন, সাব্বিরের টেস্ট পারফরম্যান্স তো ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টির চাইতেও ভালো।
খায়রুল: মামা বলতো ভাগ্নে, বেশি লোভ করিস নে। আমাকে বলেন, সাব্বির কি সাকিবের চাইতেও বেশি প্রয়োজনীয়? অস্ট্রেলিয়ার ড্যারেন লেহম্যানের নাম শুনেছেন? ঘরোয়া লীগে রান করে ফাটিয়ে ফেলতো, কিন্তু মার্ক ওয়াহ এর কারণে টেস্টে সুযোগই পেতো না। ম্যাক্সওয়েলকে দেখেন, টি২০ আর ওয়ানডেতে কত ভালো খেলে, তবু টেস্টে নেয় না। কিচ্ছু করার নেই। বাংলাদেশের যা স্ট্রেন্থ, তাতে এতো বেশি ফ্রি স্ট্রোক প্লেয়ার টেস্ট স্কোয়াডে রাখার মানে হয় না। সাব্বির ৭ নম্বরে যা করছে, একই কাজ সাকিব খুব ভালোমতোই ৭এ করতে পারবে। বয়স ৩০ হয়ে গেছে ভাই, ক্যারিয়ার ১০ বছরের বেশি। এখন তো আর নতুন করে কিছু প্রমাণের নেই। সাকিব সারা বছরে ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলে? সারা বছর তো কাটে টি২০ খেলে, সেখান থেকে টেস্টে নেমে ৫ নম্বরের মতো খুবই সেনসিটিভ একটা পজিশনে ব্যাটিং করবে, দলের প্রধান স্পিনার; একটা মানুষের লিমিট বুঝতে হবে তো। খুব বেশি হলে আর ৬-৭ বছর খেলবে সে, এখন বাংলাদেশের যা বোলিং স্ট্রেংথ, তাতে টেস্টে তার ব্যাটিংটা বোনাস ধরে বোলিংয়ের থেকেই বেশি আশা করা উচিত। ক্যালিসও কিন্তু টেস্টে শেষ কয়েক বছর সেভাবে বোলিংই করে নি, সাকিবেরও এখন যে কোনো একটাকে বেশি প্রায়োরিটি দেয়া উচিত। ৫ নম্বর জায়গাটায় সলিড একজন ব্যাটসম্যান থাকা উচিত, সাব্বিরের যা স্টাইল তাতে সে ৫ এ মানানসই না। ফিফটি করেছে, কিন্তু তাতে উৎসাহ দিয়ে তার ন্যাচারাল এবিলিটি নষ্ট করা উচিত হবে না। আমি বরং তার মধ্যে পন্টিং হওয়ার সম্ভাবনা দেখি, ওয়ান ডাউন পজিশনটা তো মুমিনুল আপাতত দখল করে আছে, সে ব্যর্থ হলে তারপর সাব্বিরকে এখানে ট্রাই করা যেতে পারে। অন্যথায়, সাব্বিরের ইনক্লুশান টিমকে আরও আনস্টেবল করে ফেলে। ওয়ানডেতে জুয়া খেলা স্মার্টনেস, টেস্টে নির্বুদ্ধিতা।
প্রশ্ন: মুমিনুল তো আপনাকে ভুল প্রমাণিত করে ৬০+ করে ফেললো
খায়রুল: আশরাফুল যে ইনিংসটাতে ৫২ বলে ৯৪ করেছিলো সেখানে প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে গিয়েছিলো, কিন্তু বেলস পড়েনি
প্রশ্ন: সেই রেফারেন্স টানছেন কেন?
খায়রুল: আমরা যতই বলি ক্রিকেট একটা স্কিল, টেম্পারমেন্ট আর সাইকোলজির খেলা, এটা যে দুর্দান্ত লাকেরও একটা খেলা, সেই প্রসঙ্গটি ভুলে যাই। একই ম্যাচে বাংলাদেশের দুজন ব্যাটসম্যান গুরুতর ইনজুরিতে পড়লো, এটা কি দুর্ভাগ্য, নাকি অন্য কিছু? মুমিনুল ছেলেটা খেলার প্রতি ভীষণ ডেডিকেটেড, ক্রিকেট সেন্স ভালো, এগুলো পজিটিভ। কিন্তু ব্যাটসম্যান হিসেবে তাকে আমার সীমাবদ্ধই মনে হয়। এখন লাক ফেভার করছে, ভালো সময় যাচ্ছে, রান পাচ্ছে। সব ব্যাটসম্যানেরই দুর্বলতা আছে, লারা-টেন্ডুলকারেরও দুর্বলতা ছিলো, তাই মুমিনুলের সীমাবদ্ধতাকে বড় করে না দেখলেও চলে। কিন্তু যখন দেখি বলের পর বল ব্যাটের কানায় লাগতে লাগতে বেঁচে যাচ্ছে, অথবা ইনসাইড এজ এ চার হচ্ছে, এই টাইপ নড়বড়ে ইনিংস দেখতে ভালো লাগে না। যেহেতু বাংলাদেশের হয়ে খেলে, রান করতে দেখলে তো খুশি লাগেই, কিন্তু সমস্যাটা বাঁধে যখন এই ছেলেকে ওয়ানডেতে নেয়ার জন্য সাংবাদিক থেকে শুরু করে সমর্থকরা পর্যন্ত বাড়াবাড়ি করে। এখনো তো ক্যারিয়ারের খুবই আর্লি স্টেজ, ব্যাটিং নিয়ে কাজ করুক, যদি ত্রুটি কাটিয়ে উঠতে পারে ভালো, নইলে এই বছর যে ১১টা টেস্ট আছে, সেখানেই মুমিনুল একটি বিস্মৃত নাম হয়ে যেতে পারে। ছেলেটার মধ্যে চেষ্টা আছে, যেটা অন্য প্লেয়ারদের মধ্যে খুবই কম লক্ষ্য করা যায়।
প্রশ্ন: রাব্বি বেশ ভালো বোলিং করলো
খায়রুল: সে কি নাচ দেখাতে নিউজিল্যান্ড গিয়েছে?
প্রশ্ন: রাগার কী হলো?
খায়রুল: একটা বোলারকে দলে নেয়া হয়েছে ভালো বোলিং করার উদ্দেশ্যে, সেটাই তো করেছে। পিচটাও পেস বোলিংয়ের জন্য ভালো ছিলো। আপনারা সবকিছু নিয়েই বাড়াবাড়ি করেন। বাংলাদেশে বাউন্সি পিচ কী জিনিস, জন্মের পর কোনো বোলার চোখে দেখেছে। ইন্ডিয়ার মতো দেশে এতো বছরেও জেনুইন পেসার তৈরি করতে পারলো না। যাদব, এরন, সামি এরা জোরে বল করে, কিন্তু টিকেই তো না, বল করে আশ্বিন আর জাদেজা। ইনস্পাইরেশন লাগে, সেটা দিতে পেরেছেন?
প্রশ্ন: দলগুলো সব হোম ওডভান্টেজ নিচ্ছে, বিদেশে গিয়ে খাবি খাচ্ছে। ক্রিকেট খেলাটা কি তাহলে পাড়াভিত্তিক দাদাগিরি কনসেপ্টে ঢুকে পড়লো?
খায়রুল: পুরোটাই কিরণমালা আর পাখীর ষড়যন্ত্র।
প্রশ্ন: এর মধ্যেও ভারতীয় সিরিয়াল ঢুকিয়ে দিলেন?
খায়রুল: আপনি তো এটা শোনার জন্যই প্রশ্নটা করেছেন। পিচ ম্যানুপুলেশন অতীতের চাইতে এখন অনেক বেশিমাত্রায় হয়, খেলোয়াড়দের নিয়ে এনালাইসিস বেড়ে গেছে, সেটার প্রভাব তো পড়বেই। কিন্তু আপনারা তো সবকিছুতে ইন্ডিয়ার দোষ খোঁজেন। ক্রিকেট খেলাটা অনেকাংশেই পিচনির্ভর, কাজেই পিচের একটা স্ট্যান্ডার্ড সেট না করা পর্যন্ত এই সমস্যা যাবে না। তারপরও তো, এখনকার দিনে ব্যাটিং প্যারাডাইসই বেশি বানানো মনে হয়। এটার পেছনে ইনভেস্টরদের প্রেসার থাকতে পারে কোনো, দর্শক তো চার-ছক্কা দেখেই হাততালি দিতে চায়, ইনসুইং-আউটসুইং নিয়ে কার এতো ভাবাভাবির সময় আছে!
প্রশ্ন: ২০১৯ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে হলে তো সেপ্টেম্বর পর্যন্ত র্যাংকিং এ ৮ এর মধ্যে থাকতে হবে। এ বছর তো খেলাও প্রচুর। রিস্কি হয়ে যাচ্ছে না?
খায়রুল: তাহলে বরং সেলিম শাহেদ আর ফারুক আহমেদকে বলেন জার্সি গায়ে বিচ ক্রিকেটে নেমে পড়তে; মাশরাফি-সাকিব-তামীমরা বসে বসে স্কোরিং করুক।
প্রশ্ন: ধুর, কী যা তা বলেন!
খায়রুল: বেশি খেললে র্যাংকিং এগিয়ে যাওয়ারও যে সুযোগ, সেটা না ভেবে মাথায় এলো, যদি পিছিয়ে যাই! আপনাদের এই মানসিকতার কারণেই আমরা বড় ম্যাচগুলোতে হেরে যাই, কারণ স্নায়ুচাপ নিতে পারি না, বড্ড নেগেটিভলি চিন্তা করি। নির্বাচকরা যদি কোচের আবদার পূরণে আরেকটু সতর্ক হয়, তাহলে বোধহয় বছরটা ভালোই কাটবে। কিন্তু দেখা গেল কবে কাকে নেটে দেখে কোচের মন গলে গেল, আর তাকে সিরিজের ২টা ম্যাচে সুযোগ দেয়া হলো, এই বদোভ্যাসটা নিয়ন্ত্রণ করলেই এনাফ। ইনজুরি ইস্যু ছাড়া আগামী দেড় বছরে দলে বড় ধরনের পরিবর্তন না আনার সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এবং গ্যাম্বলিং খেলা বাদ দিতে হবে। আর খেলা তো শুধু বাংলাদেশের একার না, অন্যদেরও আছে। যেমন, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে খরচার খাতায় ধরতে পারেন, ইংল্যান্ড ভারতে হোয়াইটওয়াশ না হলেও সিরিজ হারবে নিশ্চিত, শ্রীলংকার অবস্থাও সুবিধার ঠেকছে না, ভয় পাওয়ার কী আছে ম্যান! জাস্ট হাথুরুসিংহকে প্রোফেশনালি হ্যান্ডল করুন, আর কিচ্ছু দরকার নেই।
প্রশ্ন: অনেক বোদ্ধা হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে বলাকে মূর্খতা বলছেন।
খায়রুল: মিরাজ হোসেন আন্না, টিআর চান্নু, শফিক সাদেকী, সমু চৌধুরী, সিথিমা এনাম, ডিএ তায়েব প্রমুখ অভিনয়শিল্পীকেও অনেকে জনপ্রিয় টিভিতারকা আখ্যা দেন, তাতেই বাস্তবতা চেঞ্জ হয়ে যায় না।
প্রশ্ন: এরা তো খুবই অপরিচিত, আমি নামই শুনিনি জীবনে, সত্যিই কি কেউ তাদের জনপ্রিয় বলেন!
খায়রুল: হাথুরুসিংহে লংটার্মের কথা চিন্তা করে টিম বানান, কনভেনশনাল প্লেয়ার তার পছন্দ না, দলটা যে ভালো করছে এর কৃতিত্ব হাথুরুর, মধ্যম মানের কোচরাই সিরিজ বাই সিরিজ চিন্তা করে দল সাজান, সৌম্য-মোস্তাফিজ-সাব্বিররা হাথুরুর আবিষ্কার- এসব কথা বলা যদি বোদ্ধার পরিচায়ক হয়, তাহলে মিরাজ হোসেন আন্নাকেও বিরল প্রতিভার অভিনয়শিল্পী বলার মতো বিজ্ঞজন অবশ্যই আছে। পাড়ার ক্লাব আর জাতীয় দলের ফরম্যাট যে এক নয় কখনোই, এই সিম্পল বিষয় নিয়ে যদি তর্ক করতে হয়, তার চেয়ে বরং মূর্খ হওয়াই বেশি আনন্দের।‘ আছেন আমার মোক্তার, আছেন আমার বারিস্টার, শেষ বিচারের হাইকোর্টেতে তিনি আমায় করবেন পার……..”
প্রশ্ন: বাংলাদেশ তো দুই অধিনায়ক তত্ত্বে সফলই বলা যায়।
খায়রুল: আমার পিঠে পিচুটি লেগেছে, একটু মুছে দেবেন?
প্রশ্ন: ছ্যা, কী নোংরা!
খায়রুল: মাশরাফি ইনজুরির কারণে টেস্টে খেলে না, আর মুমিনুল টেস্টের বাইরে সুযোগ পাচ্ছে না। এর বাইরে আমাকে বলেন, বাংলাদেশের ৩ ফরম্যাটের দলে পার্থক্য কী? ৭ ব্যাটসম্যানের সবাই আছে, বোলারদের মধ্যেও তাইজুল আর শহীদ মনে হয় অন্য ফরম্যাটগুলোতে সুযোগ পায় না। তাহলে ২ অধিনায়ক তত্ত্ব আসলে কী জিনিস। এই মুহূর্তে ৪ জন টপমোস্ট সিনিয়র প্লেয়ার আছে, তাদের ২ জন করে দুইটা গ্রুপে ভাগ করে পিঠা ভাগ করে দেয়া হয়েছে। টি২০ কোনো খেলা হলো? হাথুরু এতো এক্সপেরিমেন্ট করতে চায়, টি২০ তে করুক। তামীম, মুশফিক এরা টি২০ টিমে কী করে, টি২০ এর ক্যাপ্টেন হবে সাব্বির, সেখানে মিথুন, মেহেদী মারুফ, আবু জায়েদ সহ যত নতুন খেলোয়াড় আছে সবাইকে ট্রাই করুক। সেই মেরুদণ্ডই তো নেই। খেলা যেটাই হোক, একই প্লেয়ার। প্লেয়াররা তো ইনজুরিতে বেশি পড়বেই।
প্রশ্ন: মোস্তাফিজের ইনজুরি তো দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে।
খায়রুল: ৩০০ টাকার এনার্জি লাইট পাচ্ছেন ১০০ টাকায়, শুধুমাত্র কোম্পানীর প্রচারের উদ্দেশ্যে।
প্রশ্ন: এই মাইকিং শুনে কান ঝালাপালা, আপনিও শুরু করছেন?
খায়রুল: ব্যাপার তো একই, রাস্তায় এনার্জি লাইট, ক্রিকেটে মোস্তাফিজ- কিন্তু মাইকিং তো দুই ইস্যুতেই একই বেগে হচ্ছে। মোস্তাফিজের ফিজিকাল স্ট্রাকচার দেখেছেন? কত ওজন হবে ওর? এই স্ট্রাকচার নিয়ে এতো বেশি খেলবে, আবার সুস্থ থাকবে, এটাতো চৌধুরী সাহেবের সিনেমার শেষ দৃশ্যে ভালো হয়ে যাওয়ার মতো বুলি হয়ে গেল। লোভের একটা লিমিট রাখতে হবে তো। ভারতের সাথে ২টা ওয়ানডে, সাউথ আফ্রিকার সাথে ১টা টেস্ট, আর বোধহয় নিউজিল্যান্ডের সাথে ১টা টি২০, এই ৪টা ম্যাচ বাদে মোস্তাফিজের ক্যারিশমা কতটুকু দেখতে পেরেছি আমরা? হ্যাঁ, আইপিএল এ সে দারুণ খেলেছে, সাসেক্সের হয়েও কিছু ম্যাচে ভালো খেলেছিল, আইপিএলসূত্রে সে ‘দ্য ফিজ’ হয়ে গেছে, কিন্তু তাতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের কোন্ লাভটা হয়েছে? আপনাদের মনে আছে কিনা জানি না, ২০০১ এর নিউজিল্যান্ড সফর থেকেই কিন্তু মাশরাফির ইনজুরির শুরু। এরপর থেকে যতগুলো সিরিজে সে খেলেছে, তার দ্বিগুণ সিরিজে আমাদের আফসোস করতে হয়েছে, ইস মাশরাফি যদি থাকতো! আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, মোস্তাফিজও আরেকটা মাশরাফি কেস হবে, তবে মাশরাফি যেরকম তাগড়া আর স্ট্রং মাইন্ডের, মোস্তাফিজ সেরকম না, ওর ব্যাক করা টাফ হয়ে পড়বে। ১৬ বছর পরেও যদি দৃশ্যপট না বদলায় তাহলে বিসিবির উচিত হেয়ার কাটিং সেলুন খোলা, ভালো বিজনেস হবে।
প্রশ্ন: সমর্থকরা যে যাকে-তাকে স্যার, লর্ড ট্যাগ দেয়
খায়রুল: সব দোষ ওই ব্যাটা মেহেদীর। কে বলছিলো তোমাকে অভ্র বানাইতে!
প্রশ্ন: বাহ কী যুক্তি, সব দোষ এখন অভ্র আবিষ্কারকের!
খায়রুল: ওই লোকই তো নষ্টের গোড়া। ২০১০ এর পরে যারা খেলা দেখা শুরু করেছে, যারা ওয়াইড হলে ফ্রি হিট দেয় না বলে আম্পায়ারের সমালোচনা করে, সেইসব মানূষ একযোগে কী-বোর্ড সৈনিক হয়ে উঠেছে, ঠ্যালা সামলাও এখন। প্রবীর মিত্র যেমন নায়ক-নায়িকার বাবা হওযার উদ্দেশ্যেই অভিনয় করে যায় বছরের পর বছর, এরাও তেমন নিরীহ। মূলত এরা আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগে।
প্রশ্ন: দল হারলেই গ্রুপিংয়ের কথা উঠে
খায়রুল: হুম কেউ সায়েন্স, কেউ আর্টস, কেউ কমার্স গ্রুপে। কারো ব্লাড গ্রুপ পজিটিভ, কারোরটা নেগেটিভ।
প্রশ্ন: সেই গ্রুপিং না, ওই যে নিজেরা জোট পাকানো
খায়রুল: সবকিছুতে বিএনপি-আওয়ামিলীগে অভ্যস্ত জাতি আমরা, ক্রিকেটের মতো একটি ভদ্র খেলাকে সেখান থেকে নিস্তার দেব কীভাবে। এসব না ভাবলে তো মন নিশপিশ করে। এরা সামর্থ্যও বোঝে না, সীমাবদ্ধতাও মানে না, এরা শুধু জানে জয়। বাংলাদেশের উচিত সব খেলায় ওয়াকওভার নেযা, কষ্ট করে মাঠে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। কোনোদিন বিশ্বকাপ জিতলে সেই খুশিতে মনে হয় কেউ ২য় বিবাহও করে বসতে পারে!
প্রশ্ন: নিউজিল্যান্ড সফর নিয়ে মূল্যায়ন কী?
খায়রুল: রাত আর দিন ভাই, রাত আর দিন
মধুমতি লবণে আছে আয়োডিন
লবণ খাটি ভাই লবণ খাটি, মধুমতি
তফাৎটা তাই রাত আর দিন