জীবনানন্দ দাশকে ফিল করার ক্ষেত্রে একটা রিয়েল লাইফ স্টোরি আমাকে প্রভাবিত করেছে।
কলেজে পড়ার সময় খুব ঘনিষ্ঠতা হয়েছিলো একজনের সাথে। ছেলেটি ম্যাথে দুর্দান্ত, বাংলাদেশের প্রথম গণিত অলিম্পিয়াড টিমে ছিলো। আমি যেহেতু মেন্টাল মাল্টিপ্লিকেশন জানি, এবং যে কোনো বিজোড় রুট বের করার ফরমুলা দাঁড় করেছিলাম, সেসূত্রে আমার সাথে তার একটা কমন ইন্টারেস্টের গ্রাউন্ড তৈরি হয়েছিলো। বুয়েটে সে কম্পিউটার সায়েন্স পায়, আর আমি একাডেমিক পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে লেখালিখি, ভাষা শেখা, ফিল্ম মেকিংসহ রাজ্যের যত অকাজে জড়িয়ে পড়ি। বুয়েটে একদিন তার সাথে দেখা হয়, সে তখন প্রতি সেমিস্টারে নিয়মিত ফোর পেয়ে যাচ্ছে, আর আমি ল্যাগের সংখ্যা বাড়িয়ে ক্লান্ত। লেখালিখি করছি জেনে প্রচণ্ড মর্মাহত হয়। ‘ তুমি ম্যাথ চর্চা ছেড়ে শেষ পর্যন্ত কবি-সাহিত্যিক হইতেছো তাইলে? কোনো সুস্থ মানুষ লেখালিখি করে! কী জানি নাম ওই লোকের, জীবনানন্দ দাশ না কী যেন, স্টুপিডের মতো ট্রামের নিচে পড়ে মরলো! কত্ত বড়ে ইডিয়ট হলে একজন মানুষ ট্রামের মতো একটা জিনিসে চাপা পড়ে’!
ছাত্রজীবন শেষে সে বুয়েটে টিচার হিসেবে জয়েন করেছিলো এবং পরে গুগলে চলে যায়। আমার বাকি লেখায় তার আর কোনো ভূমিকা নেই, তবে ‘সাফল্য’ শব্দটাকে কমাবন্দী করে রাখলাম, এ সংক্রান্ত কিছু আলোচনা হতে পারে।
আমি জীবনে কখনোই কবিতা পড়িনি। কবিতা পড়তে কেন ভালো লাগে না এর উত্তরে বিবিধ এনালাইসিস আছে, তবে সবচাইতে কনভিন্সিং যুক্তি হলো, আমি নিজে কবিতা লিখতে পারি না বলেই কবিতা পড়ার আগ্রহ পাইনি কখনো। আমার বাক্য মাধুর্যহীন, প্রকাশভঙ্গি আরোপিত, এক লাইনে এক হাজার লাইনের ভাব বোঝানোর প্রতিভা না থাকার বিষয়টি উপলব্ধি করে কবিতার প্রতি করুণাই বোধ করেছি সবসময়।
ছোটবেলায় জীবনানন্দের নাম যতবার শুনেছি, ‘আবার আসিবো ফিরে ধানসিড়িটির তীরে’- এটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন তিনি। ক্লাশ টেনে পড়ার সময় আরেক বন্ধু তার একটা কবিতার লাইন শুনিয়েছিলো,‘কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে’। কিন্তু বুয়েটের ওই অভিজ্ঞতার পর জীবনানন্দকে আমি এন্টারপ্রেট করি একজন অপ্রকৃতস্থ মানসিকতার কবি হিসেবে, যে অদ্ভুতভাবে ট্রামের নিচে চাপা পড়েছিলো। তার প্রেক্ষিতে জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে বিভিন্নজনের লেখা সংবলিত মোটা একটা বই কিনেছিলাম, লেখাগুলোর গভীরতা টানেনি বলে বইটা বেশিদূর এগুতে পারিনি।
বাংলাদেশের দুজনমাত্র লেখকের ব্যাপারে আমার গভীর আগ্রহ কাজ করে; প্রথমজন আহমদ ছফা, অপরজন শাহাদুজ্জামান। আহমদ ছফার ঋজুতায় মুগ্ধ হই, আর শাহাদুজ্জামানের ব্যাপারটা আরো ইন্টারেস্টিং। স্টাইল, ফরম্যাট, প্লট প্রভৃতি নিয়ে নিরন্তর এক্সপেরিমেন্ট করে যাওয়া দেখে যারপরনাই অনুপ্রাণিত হই। বরং যে ‘ক্রাচের কর্নেল’ বইয়ের জন্য তিনি খ্যাতি পেয়েছেন, সেটাকেই তার দুর্বলতম সৃষ্টি মনে হয়। ‘বিসর্গতে দুঃখ’, ‘পশ্চিমের মেঘে সোনার সিংহ’, ‘কয়েকটি বিহ্বল গল্প’ বইগুলো পড়ার পর তার সাথে যোগাযোগের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠি, এবং ২০১২ তে তার সাথে ইমেইলসূত্রে চমৎকার একটি যোগাযোগের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
২০১৫ তেই জানতে পারি শাহাদুজ্জামান জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে বই লিখবার প্ল্যান করছেন। নিশ্চিত ছিলাম, তিনি লিখলে সেই বইটা গতানুগতিক ধারাবর্ণনার বাইরে স্বতন্ত্র একটা আইডেন্টিটি হয়ে উঠবে, যেখানে চিন্তা এবং পর্যালোচনার পর্যাপ্ত খোরাক থাকবে, এবং তখন থেকেই অপেক্ষায় ছিলাম বইটার।
আমি জীবনে সবচাইতে বেশি পড়েছি বায়োগ্রাফি; এরপরে সাক্ষাৎকার, আর ডায়েরি জাতীয় বই। এই পড়াশোনাসূত্রে যেটা হয়েছে, ইমাজিনেটিভ মাইন্ড এবং সাইকোলজি বিষয়ে আমার একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং বা পারসেপশন ডেভেলপড হয়েছে। শাহাদুজ্জামানের ‘একজন কমলালেবু’ বইটা পড়ার পর অবশেষে মনে হলো, এতোদিনে ‘ইমাজিনেটিভ মাইন্ড’ বিষয়ে লেখার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে, যার মূল ফোকাস পয়েন্ট জীবনানন্দ দাশ। ফেসবুক বা ব্লগের যে কোনো লেখা আমি এক বসাতেই লিখে ফেলি, পড়িও না কী লিখেছি; কিন্তু এই লেখাটা লিখবার প্রাক্কালে প্রায় ২ দিন ধরে আমার মধ্যে সুতীব্র উচ্ছ্বাস কাজ করছে। সম্ভবত ১১ বছরের গবেষণার দায়মুক্তিই এই উচ্ছ্বাসের উৎসমূল।
ইমাজিনেটিভ বনাম ক্রিয়েটিভ:
একটা ব্যাপার লক্ষণীয়, আমি একবারও ক্রিয়েটিভ শব্দটা ব্যবহার করছি না, কারণ ‘ক্রিয়েটিভ’ শব্দটাকে বরাবরই ওভাররেটেড মনে হয়। যে কোনো কাজ স্বাভাবিকের চাইতে ব্যতিক্রমী এপ্রোচে করতে পারার কৌশল থেকেই ক্রিয়েটিভিটি তৈরি হতে পারে। কিন্তু ইমাজিনেশন ক্রিয়েটিভিটির চাইতে অনেক বেশি পাওয়ারফুল। পৃথিবীতে ক্রিয়েটিভ মানুষের সংখ্যা অজস্র, কিন্তু ইমাজিনেটিভেরা বরাবরই সংখ্যালঘু। গল্প-কবিতা, সিনেমা বা যে কোনো আর্টস মিডিয়াম নিয়ে ডিল করলেই আমরা তাদের ক্রিয়েটিভ বলি, এমনকি সায়েন্স, টেকনোলজির ক্ষেত্রেও ‘ক্রিয়েটিভটি’ শব্দটা সমহারে ব্যবহৃত হয়। ফলে মিডিওকার বা তার চাইতে একটু উচ্চমেধার মানুষমাত্রই কম-বেশি ক্রিয়েটিভ। কিন্তু ইমাজিনেশন একেবারেই ইউনিক বৈশিষ্ট্য। ক্রিয়েটিভিটি আর ইমাজিশন মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ। জীবনানন্দ দাশকে আমার খুব বেশি ক্রিয়েটিভ মনে হয় না, কিন্তু শাহাদুজ্জামানের বই পড়ে একটাই অনুভূতি, এমন ইমাজিনেটিভ মানুষ সহস্র বছরে এক-দুইবার পৃথিবী পরিভ্রমণে আসে।
“আলো-অন্ধকারে যাই— মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়,– কোন এক বোধ কাজ করে!
স্বপ্ন নয়- শান্তি নয়- ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়”!
থট প্রসেস নিয়ে যারা ডিল করেন তারামাত্রই বুঝবেন, ‘বোধ’ এর ওজন আসলে কত ভারি। বোধকে এরকম স্ট্রং ভিজুয়ালাইজেশন, এটা চিন্তা করে বের করে আনা সম্ভব নয়, এটা কল্পনা করতে হয়, বোধকে অনুভব নয়, কোনোকিছু রূপে দেখতে পেতে হয়। হতে পারে বোধ দেখতে আলমারির মতো, জাহাজের মতো, কিন্তু তার কোনো একটা শেপ আছে। এখানেই ক্রিয়েটিভিটি পিছিয়ে পড়ে ইমাজিনেশনের কাছে। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হওয়ার সুবাদে বিদেশী কবিদের কবিতা পড়ার সুযোগ তাঁর হয়েছিলো, বিশেষত শেলী, ইয়েটস বা হুইটম্যানের কবিতার ধরন তাকে কিছুটা হলেও প্রভাবিত করেছে হয়তোবা, কিন্তু সেটা তো বাহ্যিক, ভিজুয়ালাইজেশন বা ইলাস্ট্রেশন সেই জায়গাটা পুরোপুরি তার নিজের পৃথিবী।
ডায়েরির পাতায় পাতায় ইমাজিনেশন:
শাহাদুজ্জামানের বইসূত্রে দেখলাম জীবনানন্দ দাশ জীবনে আড়াই হাজার কবিতা, বিশটি উপন্যাস,৫০+ প্রবন্ধ, এবং ১০০+ গল্প লিখেছেন। এই পরিসংখ্যান থেকে কোনো প্রতিক্রিয়াই হয়নি যেটা হয়েছে তিনি ৪হাজার পৃষ্ঠা ডায়েরি লিখেছেন এই তথ্যটা জানবার পর। তিনি ডায়েরির নাম দিয়েছিলেন ‘লিটারেরি নোটস’। এককালে বহু অন্তর্মুখী মানুষই নিয়ম করে ডায়েরি লিখতেন; ওরাল কমিউনিকেশনে খুব বেশি কমফোর্টেবল না হওয়াতে তাদের যাবতীয় ভাবনা লিখে রাখতেন ডায়েরির পৃষ্ঠায়। ফলে ডায়েরি হয়ে উঠতো তাদেরই অলটারনেটিভ ইগো বা বিকল্প সত্তা। জগতজোড়া মুখচোরা মানুষটি ডায়েরির ক্যানভাসে হয়ে উঠতেন সম্রাট নেপোলিয়ন।
ডায়েরির সাইকোলজি বড়ই অদ্ভুত। ডায়েরি তাদের সাথে কথা বলে, এবং যেহেতু নিজেদের ক্রমাগত বঞ্চনার শিকার হয়, জাগতিক সবকিছুর প্রতি ক্ষোভ, অসন্তোষ কাজ করে, ডায়েরি হয়ে উঠে ‘ডিভাইন জাস্টিস’ এর জায়গা যেখানে মনের সকল অর্গল খুলে দেয়া যায়। এবং এক পর্যায়ে তাদের কাজ-কর্মের অনেকটাই ডায়েরি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ইমাজিনেশন বাড়ানোর ক্ষেত্রে অন্য অনুষঙ্গের চাইতে ডায়েরির ভূমিকা অনেক বেশি। তবে সেটা নির্ভর করছে, ডায়েরি কতোটা আপন হতে পারছে তার ওপর।
যে মানুষ জীবনের একদম শুরুতে ডায়েরিতে লিখেন ‘ অনেক অযোগ্য লোক ইতিহাসে খ্যাতি পেয়ে যায় অথচ ঢের কৃতি ব্যক্তিদের খবর ইতিহাস রাখে না’, তার অবজারভেশন এবং এন্টারপ্রেটেশনকে নিঃসংকোচে স্যালুট না জানিয়ে উপায় কী। সাফল্য বিষয়টা বরাবরই বৈষয়িক, তীক্ষ্ম বৈষয়িক বুদ্ধি নেই যাদের তারা কখনোই পৃথিবীর দৃষ্টিতে রিমার্কেবল কিছু করতে পারে না। মৌলিকত্ব বা মেধা নয়, বৈষয়িক বুদ্ধির প্রাবল্যেই সাফল্য আসে। এরকম চরম বস্তুবাদী যে সাফল্য, সেই হিসাবে কৃতি মানুষরা আসবে না এটাই স্বাভাবিক। ধরা যাক, আপনি ই-লারনিং বা টিউটোরিয়াল বিষয়ক উদ্যোগ নিলেন, লাখ লাখ মানুষ আপনাকে এপ্রিশিয়েট করবে, কারণ তাদের জীবনে সরাসরি কাজে লাগে এমন কিছু একটা নিয়ে আপনি ডিল করছেন। ‘নিড ফুলফিল’ ফ্যাক্টর দিয়েই সাফল্য মাপা হবে। অথচ, সকল নিডই কমবেশি আরোপিত বা আর্টিফিশালি ক্রিয়েট করা। সুতরাং আপনি বুঝতে পারছেন বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কী দরকার, ব্যস আপনি সফল।
‘আমি অত তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না,
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব’সে অপেক্ষা করবার অবসর আছে”
এরকম গভীর অন্তর্ভেদী কথা বলবেন যে মানুষ তার পক্ষে সফল হওয়ার কোনোরকম সম্ভাবনাই থাকার কথা নয়। বহুদিন আগে একটা নাটকে দেখেছিলাম, বাবা তার কবি ছেলেকে জিজ্ঞেস করছে কয়টা কবিতা লিখেছো; ছেলে জবাব দিচ্ছে ৩০ টা। বাবা কবিতার খাতা হাতে নিয়ে ছেলেকে বলছে, এগুলো দিয়ে পারলে ১ কেজি চাল এনে দেখাও। জীবনানন্দ নিজেও এ ব্যাপারে সজাগ ছিলেন, তার ডায়েরিতেই লেখা আছে সে কথা। ‘মানুষের কথার বিষয় শুধু ধন, সম্পত্তি, বস্তু’।
ইমাজিনেটিভ এলিয়েন:
‘আর্ট মানুষকে না দেয় সুখ, না দেয় সোনা’
‘যে জিনিস অভ্যস্থ বুদ্ধি বিচার ও কল্পনাকে আঘাত করে যা পরিচিত নয় তার অপরাধ ঢের’
লাইনগুলো জীবনানন্দের ডায়েরির।
পৃথিবীজুড়ে বেশিরভাগ সাহিত্যিক, বিশেষত বাংলা ভাষার লেখকরা তাদের মেধা, মননের পুরোটাই খরচ করে ফেলেছেন যাপিত জীবনের ঘটনাবলী শব্দের ভারে ভারাক্রান্ত করতে। ‘কামরুল অফিস থেকে বেরিয়ে যখন বাসের উদ্দেশে হাঁটা ধরলো তার সাথে সাথে চললো দাম্পত্যের টানাপোড়েন, অফিসের বস এর প্রেসার, হারাতে বসা সুকোমল বৃত্তি। এতোসব সহযাত্রীর সাথে পাল্লা দিয়ে কীভাবে সে উঠবে বাসে!”….. এই টাইপ বর্ণনাসর্বস্ব কাহিনীবিত্তান্তে ঠাঁসা যেসব লেখালিখি,এটা লেখার জন্য খুব বেশি প্রতিভার কি দরকার? যা দেখিনি, ভাবিনি বা বুঝিনি এমন কিছু লিখলেই সেটা এন্টেনার বাইরে চলে যাবে। জীবনানন্দের লেখা এই অপরাধে অভিযুক্ত। তিনি ‘আমার নাম ভোলা, মনে লাগে দোলা’ টাইপ কবিতা লিখেননি, ছন্দবিন্যাস করেছেন নিজের মতো, প্রচুর ড্যাশের ব্যবহার তার লেখায়। সুতরাং নিন্দা তো হবেই। এটা বুঝেও তিনি কেন এসব লিখেছেন?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চাইতেও জরুরী, ইমাজিনেটিভ লেখকরা আসলে কেন লেখেন, কাদের জন্য লেখেন, এবং কী প্রত্যাশা করেন?
লেখেন তো মানুষের জন্য, কিন্তু তারা আসলে আশপাশের চরম বস্তুবাদী মানুষ নয়, সেই মানুষগুলো বসবাস করে কল্পনার পৃথিবীতে। ইমাজিনেটিভ মানুষেরা পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারে ভোগেন, তারা বুঝতেই পারে না, কোনটা বাস্তব পৃথিবী আর কোনটা চিন্তার পৃথিবী। মানুষের চেহারায় তারা কেউ সংখ্যা দেখেন, কেউ স্টিমার, কেউ শব্দ, কিংবা ছবি। আপনি একজন ইমাজিনেটিভ মানুষের পাশে বসে আছেন, কিন্তু সে হয়তো আপনার চেহারা নয়, দেখছে একটি উড়ন্ত মাছরাঙা পাখি। বেতের ফলের মতো চোখ বা অন্যান্য শব্দ বিন্যাসকে যারা উপমা বলছেন, তারা আসলে তার ব্রেইনের ফাংশনটাই ধরতে পারেননি। সত্যি সত্যিই চোখ নয়, বেতের ফলই দেখেছেন। ফলে, এই মানুষগুলো লিখেন বা লিখেছেন সেইসব অনির্দিষ্ট পাঠকের উদ্দেশ্যে বা কাল্পনিক কোনো প্যারালাল ইউনিভার্সের প্রাণীদের উদ্দেশে। আমি এইসকল মানুষকে বলি এলিয়েন, যারা কখনোই পৃথিবীতে ছিলেন না, সাময়িক একটা শরীর ধারণ করেছেনমাত্র।
মানুষ বস্তুবাদী হবে এটাই স্বাভাবিক। সিভি রাইটিংয়ের বই বা ভিডিও লাখ লাখ মানুষ সংগ্রহ করবে, কারণ বস্তুবাদী পৃথিবীতে এটাই দরকার। এর পেছনে ট্রিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট। সে নিজেও জানে না তার কী দরকার, কিন্তু অনুভব করে একটা দামী পোশাক, দামী ফোন, গাড়ি, ভালো বেতনের চাকরি তার দরকার, এবং তাকে ক্রমাগত পণ্য কিনতেই হবে। প্রতিটি মানুষ একেকটি প্রকাণ্ড পণ্যশপিং মল। কন্ট্রোলড হবে বলেই সে বস্তুবাদীতাকে মেনে নিয়েছে, এবং না মেনে উপায়ও নেই। ছাঁচে ফেলা মানুষ তৈরির জন্যই ডিজাইন করা হয়েছে অজস্র সিস্টেম; যা-ই করো, যেখানেই থাকো, তোমাকে শুধু কিনতে হবে, কিনতেই হবে; দরকার আছে কিনা পরে দেখা যাবে, আগে কেনো। সুতরাং সেইসব মানুষের থট প্রসেস শেখার প্রয়োজন নেই, মাইন্ডসেট এর প্রয়োজন নেই, তারা শুধু কনজিউম করে যাবে।
তাহলে এরা লিখে কেন? কারণ লেখা ছাড়া আর কিছু ভালোও লাগে না। জীবনানন্দ দাশ জীবনভর চাকরি খুঁজেছেন, কারণ কোনো কাজই তাঁর ভালো লাগেনি, কোনো প্রতিষ্ঠান ভিশনারী মানুষ চায় না, কারণ কোম্পানী যারা চালায় তাদের নিজেদেরই ভিশন আছে, তাদের প্রয়োজন কর্মী, যারা তাদের ভিশন বাস্তবায়নে জীবন যৌবন উৎসর্গ করবে।
পৃথিবীতে নাই কোনো বিশুদ্ধ চাকুরী
এ কেমন পরিবেশে রয়ে গেছি সবে
বাকপতি জন্ম নিয়েছিলো সেই কালে……….
তাহলে তাদের চাওয়া কী? খুব সিম্পল, ৩ বেলা খাওয়া, আর পরার মতো ১-২টা পোশাক। জীবনানন্দ দাশ ১ কোটি টাকার মালিক বা তার অটোগ্রাফ নেয়ার জন্য মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, এটা তাঁর নিজের কল্পনাতেও থাকার কারণ নেই। শুধুমাত্র লিখতে চান, এবং অন্নকষ্ট এড়াতে চান। চাহিদা সিম্পল। তবু তারা ক্রমাগত বিপর্যয়ে পড়েন, কারণ পৃথিবীর নিয়মকানুন তাদের জানা নেই, তাদের ব্যক্তিগত পৃথিবীতে এসব অনেক কিছুই অচল।
তাহলে তারা চলবেন কীভাবে?
এজন্য তাদের একজন সাপোর্টিভ লাইফ পার্টনার প্রয়োজন যে তাকে উৎসাহ দেবে এবং আর্থিক যোগানের জন্য বস্তুবাদী কাজ করবে। টলস্টয়ের স্ত্রী তার পাণ্ডুলিপি টাইপ করে দিতেন। প্রত্যেক কীর্তিমানের সাথেই জড়িয়ে থাকে তার লাইফ পার্টনারের অবিসংবাদী স্যাক্রিফাইস; ইতিহাসে তা মূল্যায়ন করা হয় না এটাই ট্রাজেডি। ইমাজিনেটিভ মানুষগুলো বড্ড আত্মনিমগ্ন হয়ে থাকে। স্ত্রী বা স্বামীর প্রতি কোনোরকম দায়িত্ব পালনে মন নেই, অথচ তার সাপোর্ট ঠিকই প্রয়োজন। খুব যৌক্তিকভাবেই একে স্বার্থপরতা বলা যায়। কিন্তু সেলফিশ ফর এ গ্রেটার পারপাস। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কাছে একবার এক লোক মদ খাওয়ার টাকা চাইতে আসে, বিদ্যাসাগর বলেন আমি মদ খাওয়ার টাকা দিই না। লোকটি তখন বলে, মিথ্যা কথা, আপনি মাইকেল মধুসূদনকে মদ খাওয়ার টাকা পাঠাতেন। বিদ্যাসাগর হেসে বলেন, ‘ আগে তুই একটা মেঘনাদবধ কাব্য লেখ, তোকেও মদের টাকা দেবো’। এইসব আত্মনিমগ্ন মানুষের চিন্তা বা কর্ম কোনোটাই যেহেতু সাধারণ জীবনে কাজে লাগে না, তাদের জন্য বস্তুবাদী মানুষের স্যাক্রিফাইস লাগবে কেন তাহলে? কারণ, তারা একটা অদৃশ্য কমিউনিটি ডেভেলপ করছেন, নিজের সময়, ভাবনাকে অনাগত দিনের জন্য তুলে রাখছেন, যা ১০০ বছর পরের পৃথিবীর কোনো এক মানুষকে কানেক্ট করবে; এভাবেই গড়ে উঠে মহাকালের হিউম্যান চেইন নেটওয়ার্ক; আমরা বাঁচি আজকের জন্য, তারা বাঁচে ১০০ বছর পরের জন্য। এজন্যই স্যাক্রিফাইস লাগে।
তারা তাহলে কী চান? স্রেফ একটু এপ্রিশিয়েশন আর রিকগনিশন। এটা তো চরম বস্তুবাদী বৈশিষ্ট্য হয়ে গেলো। জীবনানন্দ নিজের বইয়ের রিভিউ চেয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমথ চৌধুরীসহ অনেকের কাছে ধরনা দিয়েছেন. কিন্তু এতোটাই নির্বিকার আর নির্মোহ হলে এইসব এপ্রিশিয়েশনের প্রয়োজন পড়তো না তার। এটাও এক ধরনের মানবিক বিচ্যুতি। একজন রিকশাওয়ালাকে প্রেমের উদ্দেশ্য জিজ্ঞেস করলে সে বলবে সেক্স করা, আর ইমাজিনেটিভ কেউ বলবে প্রেম মানে তার সাথে দূরত্ব ঘুচিয়ে একবিন্দুতে বিলীন হওয়া। একটা র আরেকটা ক্লাসিকাল; পার্থক্য এটুকুই।
মানবিক বিচ্যুতি আরও আছে। যেমন, বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দকে বরাবরই সাপোর্ট করেছেন, কিন্তু বুদ্ধদেবের সাফল্যকে তিনি ঈর্ষা করতেন, তাকে ব্যঙ্গ করে গল্পও লিখেছেন। সুপেরিওরিটি কমপ্লেক্স থেকে কাউকেই নিজের চাইতে ভালো অবস্থানে দেখতে মন চায় না, সেটা যদি ঘনিষ্ঠ কেউ হয় তখন ঈর্ষাটার মাত্রা বাড়ে আরও। এস্টাব্লিশমেন্ট আর এপ্রিশিয়েশনের মোহ পিছু ছাড়ে না; তবু কি তারা ব্যতিক্রম? বড় আলো ঢাকতে বড় অন্ধকারও লাগে, এটাই ব্যালান্স। একজন মানুষ যতখানি সমৃদ্ধ সে ঠিক ততখানিই দৈন্য ধারণ করে।
যৌনতার আফিম:
প্রশ্ন জাগে না, এরকম চরম অবৈষয়িক বেখেয়ালি মানুষ সংসারের মতো স্বীকৃত বৈষয়িক এবং বস্তুবাদী আয়োজনে কেন অংশ নেয়। ইমাজিনেটিভ এবং হাইলি ক্রিয়েটিভ মানুষমাত্রই প্রচণ্ডভাবে যৌনতাড়িত। অস্বাভাবিক এবং অপরিমিত যৌনাকাঙ্ক্ষা তাদের চরমমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করে। যৌনতাকে তাদের মনে হয় কমিউনিকেশন। ফ্যান্টাসি আর অবসেশনের যূথবদ্ধ সংক্রমণে পিষ্ট হয়ে তারা সংসারী হয়ে পড়ে। এবং একটা পর্যায়ে যৌনতা একটা সাধনার মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ব্যক্তিইমেজ, সামাজিক অনুশাসন প্রভৃতি ফ্যাক্টরের কারণে সংসারে জড়িয়ে পড়েন, কিন্তু তাতে যৌনফ্যান্টাসি কিছু কমে না। সঙ্গীর শরীরে অন্য অনেককে বসিয়ে নিয়ে যৌনতা উপভোগ করে; খুবই পিকুইলিয়ার সাইকোলজি। জীবনানন্দ দাশ পতিতালয়ে গেছেন, নির্বিচারে মাস্টারবেট করেছেন, কিন্তু যৌনতার রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছেন বা আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে এমনটা মনে হয়নি। অবশ্য আমার ধারণা, যৌনতায় নিজে পারটিসিপেট না করে অন্যদের যৌনতা পর্যবেক্ষণ করাটাই হয়তোবা বেশি প্রায়োরিটি পায় এসব ক্ষেত্রে। পারভার্ট আর যৌনাকাঙ্ক্ষা অবশ্যই সমার্থক নয়, কিন্তু ইমাজিশনের কোনো একটা স্তরে দেহকেন্দ্রিক কৌতূহলগুলো বড্ড প্রকট হয়ে উঠে। কিন্তু সংসার মানে তো শুধুমাত্র যৌনতা নয়, এর সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত থাকে ডিউটি এবং রেসপনসিবিলিটি। পলায়নপর মানসিকতার এই মানুষগুলো এই বিশাল বস্তুবাদীতার ভার আর বইতে পারে না, ফলে চরম অসুখী দাম্পত্যের মধ্য দিয়েই জীবন অতিবাহিত হয়ে যায়।
ডিভাইন ডেস্টিনেশন:
জীবনানন্দ দাশের সমগ্র জীবন তাড়িত হয়েছে তার চাচাতো বোন শোভনাকে ঘিরে। তার সমস্ত সৃষ্টির নেপথ্যে ছিলো শোভনাকে ঘিরে অবসেশন। প্রায় প্রত্যেক ইমাজিনেটিভ মাইন্ডেই এরকম একটি ‘শোভনা’ চরিত্র বসবাস করে, যাকে বলা যেতে পারে ডিভাইন ডেস্টিনেশন। অন্তর্মুখী, আপাত আনস্মার্ট জীবনানন্দের শোভনাকে ঘিরে যে ইনফ্যাচুয়েশন তৈরি হয়েছিলো, সেটার ভিত্তি, শোভনা শহরে থাকা মেয়ে এবং পোশাক-আশাকে আধুনিক। শোভনার সাথে শারীরিকভাবেও ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ মিলেছে, কিন্তু তিনি যেটা বুঝেননি সেটা হলো শোভনা আসলে বাস্তব পৃথিবীর কোনো চরিত্র নয়, এটা একটা ক্যারেক্টার, যে বসবাস করে কল্পিত পৃথিবীতে। শোভনার সাথে তার বিয়ে হলেও এই ক্যারেক্টার থেকে তার মুক্তি মিলতো না, এবং নিজেকে বিশুদ্ধ রাখতে হলেও সেই ক্যারেক্টারের ইনস্পাইরেশন লাগতো।এই সম্পর্কটা প্রেমের নয়, কামের নয়, এমনকি অনুভবেরও নয়; সম্পর্কটা পুরোটাই আত্মপ্রেমের মিরর রিফ্লেকশন। যৌন ফ্যান্টাসির পিউরিটান রূপ বলা যায় একে। কারণ, কল্পনায় একজন পুরুষ থাকলে সেখানে তার চোখে নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের কিছু থাকে না, কিন্তু একজন নারী চরিত্র মানে তাকে ঘিরেই বিপুল আয়োজন, এবং ক্রমাগত নিজেকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। ফলে শোভনারা না হয় স্ত্রী, না হয় প্রেমিকা, শোভনারা জীবনভর একটি সমান্তরাল সরলরেখার মতো পাশাপাশি বয়ে যায় রেল লাইনের মতো, যা সোর্স অব ক্রিয়েটিভিটি এবং ইমাজিনেশন এর রোল প্লে করে। স্ত্রী বা স্বামী এই চরিত্রের কারণে নিজেদের প্রতারিত ভাবতে পারে, কিন্তু শোভনারা আসলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে, এমনকি শোভনা সামনে থাকলেও মনে হবে শোভনা আসলে অন্য কেউ। নাম একটা উছিলামাত্র। হয়তোবা সেই কল্পিত চরিত্রটি শোভনারূপে প্রথমবার আবির্ভূত হয়েছিলো বলে জীবনভর সে ‘শোভনা’ নামটি ধার করে চলে, কিন্তু বাস্তবের শোভনা থেকে কল্পিত চরিত্রটি অনেকদিন আগেই চলে গেছে; এই জটিল মনস্তাত্ত্বিক বিকিরণ বুঝতে পারে না বলেই স্ত্রী বা স্বামীর সাথে বিবাদ হয়। স্বামী বা স্ত্রী চরমভাবে বৈষয়িক একটি আইডেন্টিটি, কিন্তু ‘ডিভাইন ডেস্টিনেশন’ পুরোপুরিই আলাদা ব্যাপার, তার প্রভাবেই চোখ বেতের ফল হয়ে যায়, ঘাইহরিণি আসে, মহিনের ঘোড়াগুলি ঘাস খায়। ইমাজিনেটিভ মাইন্ড বুঝতেও পারে না কখন সেই ডিভাইন ডেস্টিনেশন, যা আসলে তার নিজেরই একটি সত্তা, বিপরীত লিঙ্গের ছদ্মবেশে তাকে দিয়ে উদ্দেশ্য সাধন করে নেয়।
কিসের কবি, কোথায় কবি:
‘একবার যখন দেহ থেকে বার হয়ে যাব
আবার কি ফিরে আসবো না আমি পৃথিবীতে?
আবার যেন ফিরে আসি
কোনো এক শীতের রাতে
একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে
কোনো এক পরিচিত মুমূর্ষের বিছানার কিনারে
আমি কবিতা পড়ি না, জীবনানন্দের লেখাগুলোকে আমার কবিতাও মনে হয়নি। তার প্রতিটি শব্দে বোধ, গভীর কল্পনা, এবং পুরোপুরি আলাদা এক জগত তৈরির আয়োজন। ‘বিশ্বকবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা, রূপের যে তার নেইকো শেষ’— জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে সবচাইতে বাজে মূল্যায়ন হলো অন্নদাশঙ্করের এই কবিতা। প্রকৃতি, সৌন্দর্য এইসব হাবিজাবি দিয়ে তার লেখাকে মূল্যায়ন করতে চাওয়া চিন্তার সীমাবদ্ধতা, এমনকি সুররিয়ালিজম, এবসার্ডিটি দিয়েও তাকে পুরো ব্যাখ্যা করা যায় না। কথা সাহিত্যে কাফকা যেমন পুরোপুরি নিজস্ব একটা বলয় তৈরি করেছেন, জীবনানন্দের লেখা পড়ে আমার মনে হয়েছে তিনিও তেমন একটি স্বতন্ত্র অবস্থান অধিকার করার সবরকম যোগ্যতা রাখেন। জীবনানন্দের অনুরাগীদের বড় অংশই আমার ধারণা তার লেখা না বুঝেই ঘোর লাগা/ আবেশিত হওয়া টাইপ ন্যাকামো করেন, এবং অনুসারীরা তার প্রেক্ষিতে জীবনানন্দকে ভালো বলার বাধ্যকতা অনুভব করেন, কিন্তু ইমাজিনেটিভ মাইন্ড এবং সাইকোলজির ভাবনা নিয়ে গভীর অনুসন্ধান করার পর তার লেখাগুলো নিয়ে বসলে একটা প্রবল ঝাঁকুনি খাওয়ার কথা। শব্দের পরে শব্দ নয়, এ যেন মহাকালের পাজল সাজিয়ে রাখা, যা সমাধান করলে পাওয়া যাবে প্যারালেল ইউনিভার্সের সন্ধান যেখানে আবার যেতে হবে, এবং যাওয়াটাই ভবিতব্য।
উপলব্ধিতে অনুরুক্তি:
শাহাদুজ্জামান ২০১৪ তে বলেছিলেন, আমার গল্পগুলো গল্প হয় না, পড়লে বুঝা যায় বানিয়ে লেখা। আমার গল্পগুলো কারো কাছেই ভালো রিভিউ পায়নি। যারা কম বই পড়েন তারা বলেছে দুর্বোধ্য, আর যারা প্রচুর পড়েন, তাদের ভালো লাগেনি। ফলে আমি আসলে কোনো গ্রুপেই বিলং করতে পারিনি। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বই প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকবো; ৪টা বই-ই আমার লেখালিখি জীবনের শেষ স্মৃতিচিহ্ন। সেই শাহাদুজ্জামানের বই পড়েই আবার নতুনভাবে উপলব্ধি করলাম,আমার আসলে লেখালিখি নিয়ে আরও বেশি সিরিয়াস হওয়া উচিত। প্রয়োজনে ই-বুক হোক, তবু লেখার জায়গায় কম্প্রোমাইজ করার মানে নেই। ব্লগ বা ফেসবুকের লেখাগুলো এরকম এক বসাতেই লিখতে থাকি, কিন্তু বই লেখার সময় যে গবেষণা এবং পর্যালোচনা সেই মানসিকতাটা আবারো ফিরে আসুক। জীবনানন্দ দাশের সবগুলো কবিতা পড়বো, এবং আবারো বই লিখবো।
আদরের ১৯এবং ২৩, কমলালেবু এখানে…………