আজ সকালে প্রথম আলো ‘স্বপ্ন নিয়ে’ পাতায় জেনারেল মোটরস এর চেয়ারম্যানের একটা স্পিচ দেখলাম, ভেতরে কী আছে পড়া হয়নি, কারণ শিরোনামটা দেখেই জানি ভেতরের কনটেন্ট কী হতে পারে, কারণ বিগত ৭ বছরে আমি এই একটা স্পেসিফিক বিষয় নিয়েই রিসার্স করছি। শিরোনামটা ছিলো- ‘দিনশেষে মানুষগুলোই প্রতিষ্ঠান’। বাংলাদেশ সম্ভবত পৃথিবীতে একমাত্র দেশ যেখানে অযোগ্য, অথর্ব প্রকৃতির মানুষের হাতে গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্ব অর্পিত, যে কারণে ট্যালেন্ট নারচারিংয়ের প্রবণতা শূন্যপ্রায়, কিন্তু ট্যালেন্ট নিধনে সাফল্য শতভাগ। একজন মেধাবী আর ক্যাপাবল মানুষকে মিসইউজ করা, দমিয়ে রাখাকে আমি সোস্যাল ক্রাইম বলি, যেটা গণহত্যার চাইতেও ভয়াবহ। একজন মানুষ জীবনের সবচাইতে সোনালি সময়গুলো ব্যয় করে কর্মস্থলে, অথচ ৮২৯ এর বেশি চাকরিজীবীর ইন্টারভিউ নিয়ে স্ট্যাটিসটিকালি দেখতে পেয়েছি এদের মধ্যে ৯৭% এর বেশি মানুষ তার চাকরিকে ঘৃণা করে। ফলে বার্ধক্যে পৌঁছানোর পূর্ব পর্যন্ত সে এক অভিশপ্ত জীবনের এপিটাফ বহন করে চলে।
আমার প্রধানতম চ্যালেঞ্জ অন্তত নিজের পরিমণ্ডলে একটা ইকোসিস্টেম ডেভেলপ করা যেখানে ৮৩% মানুষ নিজের কাজকে ফিল করবে; অফিস-বাসা-বাজার- পরিবার বলতে আলাদা কোনো বিভাজন থাকবে না, কর্মই ধর্ম হয়ে উঠবে। এটা একটা অসম্ভব চ্যালেঞ্জ, অনেকটা ‘কিন্তু’ গল্পের ‘ষৎকো’ নামের নিঃসঙ্গ পিঁপড়াটির মতো যে এক অন্তহীন হেলানো দেয়াল বেয়ে কেবলই উপরে উঠছে, কারণ সে শুনেছে দেয়ালের শেষপ্রান্তে পৌঁছুলেই সে হয়ে যাবে ফড়িং। দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো কোনো মেডিকেল প্রেসক্রিপশন নয় যে অমুক ওষুধ খেলেই রোগ সেরে যাবে। তবু চ্যালেঞ্জ আছে বলেই কল্পনায় বেঁচে থাকার আনন্দ বাড়ে।
একটা এক্সপেরিমেন্টাল পোস্ট ক্রিয়েট করতে চাইছি এইচআর ডিপার্টমেন্টে; ফুল টাইম অপশন ( নো পার্ট টাইম)।
এই পোস্টে আপাতত ১ জন, বা ভবিষ্যতে ইফেকটিভিটি প্রমাণ সাপেক্ষে সংখ্যা বাড়তেও পারে। এদের একমাত্র কাজ প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক সদস্যের থট প্রসেস বোঝা, তার স্পেশাল ট্যালেন্ট খুঁজে বের করা এবং তার পারসোনালিটি টাইপ বিশ্লেষণ করা।
বাংলাদেশের ৮৯% কোম্পানিতে এইচআর মানে স্যালারি শিট, এটেনডেন্স, পারফরম্যান্স ইভালুয়েশন, গৎবাঁধা রিক্রুটমেন্ট আর বুকিশ ট্রেনিং এক্টিভিটিতে আবদ্ধ। রেডিমেড আউটপুট আর ইমিডিয়েট গেইনের গোলকধাঁধায় কর্মীর থট প্রসেসের চাইতে বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য কী আছে সেটাই মূখ্য হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এটা কখনো মাথায়ই আসে না স্কিল যখন তখন রপ্ত করা যায়, রিপ্লেসও করা যায়; থট প্রসেস দিয়েই একই ক্লাসের কেউ কেরানি হয়, কেউ হয় সিইও। অবশ্য আমাদের আধ্যাত্মিকতায় আবিষ্ট হিপোক্রেট সোসাইটিতে বিজনেস একটি নেগেটিভ শব্দ, কারণ ঐতিহ্যগতভাবেই আমাদের এই জনপদে বিজনেস শব্দটার ইন্টারপ্রিটেশন হলো লোক ঠকানো, অথচ বিজনেস যে কতটা চরম ইন্টেলিজেন্ট ব্রেইন গেম, এই বোধ তৈরি হতে আরও ২৯ বছর লাগবে সম্ভবত। তার আগ পর্যন্ত সামাজিক বেড়াজালের কারাভোগই অনিবার্য নিয়তি।
যেহেতু এটা একটা এক্সপেরিমেন্টাল উদ্যোগ, শুরুতেই পর্যাপ্ত সম্মানি রাখার ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। তবে আমি সম্মানির পরিবর্তে ‘ফেলোশিপ ভাতা’ বলতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করবো।
প্রাথমিক পর্যায়ে ভাতার পরিমাণ ধরা হয়েছে সর্বনিম্ন ১১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার। জীবনে অন্তত ৫৩ জন মানুষের বায়োগ্রাফি পড়েছেন, কেবলমাত্র এই মানুষদেরই আবেদনে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
আবেদন এবং বাছাইয়ের নিয়মাবলী:
১. আপনি যে ৫৩ জন মানুষের বায়োগ্রাফি পড়েছেন তাদের নাম এবং এতোগুলো বায়োগ্রাফি পড়ার পর উক্ত মানুষগুলোর মধ্যে যে কমন প্যাটার্ন পেয়েছেন সেটা লিখে ইমেইল করুন himalay777@gmail.com এ।
২. এই ইমেইলের ভিত্তিতে আপনাকে কেন শর্টলিস্ট করা উচিত তার কারণ ব্যাখ্যা করে আরও একটি ইমেইল পাঠান একই এড্রেসে। ফিরতি মেইলেই জানানো হবে আপনি আগ্রহ তৈরি করতে পেরেছেন, নাকি পারেননি।
৩. যদি আপনি আগ্রহ তৈরি করতে পারেন, আপনাকে আমার একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিতে হবে, যার ন্যূনতম ব্যাপ্তি হবে ১৫৭ মিনিট। আমার সাক্ষাৎকারটা আপনি কেমন নিলেন সেই ভিত্তিতে আপনাকে নিয়োগ দেয়া হবে। অর্থাৎ আপনি কাজে ঢোকার আগে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন না, বরং নিজে ইন্টারভিউ নিচ্ছেন।
মেইল পাঠানোর সর্বশেষ সময় ডিসেম্বর ৭, ২০১৭, রাত ১১টা ৪১ মিনিট। আমাদের অফিস লোকেশন মিরপুর ১০ (ফলপট্টির গলি)। তবে নিকট বা দূরবর্তী ভবিষ্যতে লোকেশন বদল হবার সম্ভাবনা যথেষ্ট। আপাতত এটুকুই।
গতানুগতিকতাকে সম্মান জানাই, তবে তেমন ভাবনার মানুষদের এই পোস্ট উপেক্ষা করাই সময়ের শ্রেষ্ঠ সাশ্রয়। আমরা আপনার জন্য পারফেক্ট ম্যাচ নই, দেখা হবে অন্য কোথাও। আনঅর্থোডক্স বা উদ্ভট চিন্তার মানুষরা রিস্কি, কিন্তু তারাই আসলে এই কাজের জন্য বেস্ট অপশন। আপনার/ আপনাদের সাথে শ্যামলি মাঠে চা আর ইক্ষু খেতে চাই ইন্টারভিউ দিতে দিতে….. দেখা হবে, কথাও হবে….