১. করোনাকালীন ফেসবুকে লেখালিখির কারণে প্রচুর ব্যাশিংয়ের শিকার হয়েছি। জ্ঞানী-গুণী থেকে শুরু করে টিনেজার প্রত্যেকেই আমায় নবিশ, মূর্খ, গোয়াড়, বিজ্ঞানবিরোধীসহ নানা ট্যাগিং দিত। কারণ আমি বলেছিলাম মানুষের মরার ১ লক্ষ কারণের মধ্যে করোনা ভাইরাস একটিমাত্র। করোনার মাধ্যমে আতংকের মার্কেটিং করা হচ্ছে, লক ডাউন দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে আরো অধিক সংখ্যক মানুষের মৃত্যুপরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। কেউ কেউ ম্যাথমেটিকাল মডেল দিয়ে দেখিয়েছিলেন ২০২০ এর জুন নাগাদ বাংলাদেশে ৩০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হবে করোনায়। সেই সময়ে বলেছিলাম পৃথিবীর প্রচলিত জ্ঞান মূলত মুখস্থবিদ্যা নির্ভর, এখানে ইনটিউশন এবং ফোরকাস্টিংয়ের সহজাত স্কিলকে রিকগনাইজ করা হয় না, তাই প্রচলিত জ্ঞান গারবেজ কারখানা। প্রচন্ড নিগৃহীত হলেও অবস্থান বদলাইনি। পৃথিবীর ইতিহাসে অদৃষ্টপূর্ব উপায়ে যে করোনাকে মিটিগেট করা হলো, তা নিয়ে বহু মেডিকেল গবেষণা, সোশ্যাল গবেষণা, ভ্যাকসিন আপগ্রেডেশন সহ কতরকম এক্টিভিটি থাকার কথা ছিল। হাসপাতালে ছোট্ট একটা এন্ডোস্কোপি করতেও করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট লাগত। মাত্র ৫ বছরের মধ্যে করোনা সংক্রান্ত কার্যক্রম কেন স্তিমিত হয়ে পড়লো!
২. জুলাই অভ্যুত্থানের সময় নীরব ছিলাম, কারণ কোটা আন্দোলন যে আইওয়াশ প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলাম, কিন্তু লেখালিখি থেকে বিরত থাকি। আমার নির্বিকারত্বের ক্ষেত্রে কথিত কোটাধারীদের কৃতিত্ব শূন্য পারসেন্ট, শেখ হাসিনার অথরেটেরিয়ান রেজিমের প্রতি বিরক্তি শত পারসেন্ট। একটা নোংরা সিস্টেমকে উৎখাত করতে তার চাইতেও নোংরা ট্রিক্স অবলম্বন করতে হয়, আমরা যদি হিস্টরিকাল স্টাডি এনালিসিস করি। সেই মেকানিজমটাই অনুসৃত হচ্ছিল, হোক। নীরব থাকলেও একটা তেলুগু ফিল্মের রেফারেন্স লিখি বেশ কয়েকদিন, যেটি কলকাতায় রিমেক হয় ‘কানামাছি’ নামে। এক শব্দেই জুলাই সংক্রান্ত আমার অবস্থান স্পষ্ট করে দিই।।
৩. নির্দলীয় এবং শান্তিপ্রিয় মানুষ S এবং Z রাজবংশের প্রতি অতিষ্ঠ কেন। চল্লিশোর্ধরা অতিষ্ঠ কারণ তাদের অনুসারীরা চাঁদাবাজি করে, ক্ষমতা খাটিয়ে জমি দখল করে অথবা মামলা দিয়ে হয়রানি করে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঘুষ ব্যতীত সার্ভিস প্রায় পাওয়াই যায় না বলতে গেলে। কিন্তু যে কোনো সুবিধা হাসিলের সুযোগ তৈরি হলে এই মানুষেরাই S বা Z রাজবংশের ওজনে ভারি কোনো কানেকশন খুঁজে। ইতোপূর্বে ‘মাইনাস টু’ নীতি গ্রহণ করে দুই রাজবংশকে অপ্রাসঙ্গিক করবার উদ্যোগ নেয়া হলেও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি, বরং সেটা চিহ্নিত হয়েছে প্রাসাদ ষড়যন্ত্ররূপে।
কেন সফল হয়নি?
ঐতিহাসিকভাবেই এখানকার মানুষের হয় প্রভু অথবা রাজা লাগে৷ রাজবংশকে রিপ্লেস করে নতুন যে রাজা হবে তাকে সভাসদরাই মানবে না, প্রজারা দূরস্থান। আছিমুদ্দি বেপারির ছেলে ছলিমুদ্দি যদি রাজা হতে চায় সেই অসাধ্য সাধনের পটেনশিয়াল পন্থা হলো , তাকে প্রচন্ড ক্যারিশমাটিক এবং ধুরন্ধর হতে হবে। কালক্রমে দুই রাজবংশের বঞ্চিত এবং বিদ্রোহী নেতৃবৃন্দকে সংগ্রহ করবেন মূলত তাদের কাছে বাড়তি লোভ বিক্রি করে৷ এরপরে প্রজাতোষণ, এলিটশ্রেণি এবং বুদ্ধিজীবীতুষ্টিমূলক কর্মকান্ডের শো-কেসিং হিসেবেঅনবরত পেইড ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাবেন। ভাগ্য পক্ষে থাকলে তারপরে যদি রেজাল্ট পক্ষে আসে। দীর্ঘযাত্রা, অন্তত দশসালা কর্মপরিকল্পনা৷
৩.নির্দলীয় সুবিধালোভী মানুষের প্রত্যাশা এবং প্রতীক্ষা তৃতীয় শক্তির জন্য, যদিও অজান্তেই তারা নতুন এক রাজবংশকেই অনুমোদন দিতে চায়। এটা অনেকটা সামন্তবাদ এবং রাজতন্ত্র, দুইয়ের সংমিশ্রণে তৈরি কাস্টমাইজড গণতন্ত্র।
S এবং Z এর বাইরে আমরা যদি ৩য় একটি বর্ণ পিক করি, ধরা যাক ‘Y’, এটা ‘Yরাজবংশ’ নাকি ‘Y ফ্যাক্টর’ হিসেবে পরিগণিত হবে, নাকি আরো একটি ফেইল্ড কেইস, নির্ভর করছে অনেকগুলো মিসিং লিংকে ঠিকঠাক ট্রেস করবার শর্ত পূরণের উপর।
যদি আপাতত ‘Y Factor’ কেই বিবেচনায় নিই, ফিজিবিলিটি টেস্টে বেশিরভাগ পয়েন্টই প্রতিকূলে।
প্রথমত, এখানকার প্রজারা দুই ধরনের কমান্ড একেবারেই পছন্দ করে না। প্রথমত বয়সে অনেক জুনিয়র কেউ যখন খবরদারি করে। দ্বিতীয়ত যারা জীবনের বেশিরভাগ সময় বিদেশে অবস্থান করেছে, এরপর দেশ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে চেষ্টা করে। ওই সমস্ত লোককে স্থানীয়রা সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে এবং ‘অনাহূত’ বা ‘উপযাচক’ মনে করে
দ্বিতীয়ত সাধারণ পারসেপশনে ‘এনজিওবাদ’ একটি ঋণাত্মক এজেন্ডা। আপনি রেন্ডমলি ১১ জন ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন NGO এর প্রতি ইমপ্রেসন কী, উত্তর পেয়ে যাবেন।
তৃতীয়ত, যে ‘মাইক্রো ফিন্যান্স’ তত্ত্বের জন্য জনাব Y স্বীকৃতি এবং প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন তার টার্গেট অডিয়েন্স দরিদ্র জনগোষ্ঠী, তুলনামূলক এলিট গোষ্ঠীর জন্য প্রস্তাবিত ‘সোশ্যাল বিজনেস’ মডেল কিন্তু সফল হয়নি, আহামরি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি এদেশে। সোসাইটির ভয়েস এবং ন্যারেটিভ নির্মাতা মূলত এই শিক্ষিত এলিটরাই। সেখানকার রাজনৈতিক প্রজ্ঞাহীন একটা অংশ জনাব Yকে এপ্রিসিয়েট করে একজন নোবেল লরিয়েট, গ্লোবাল পারসোনালিটি হিসেবে। ফিজিক্স, ইকোনমিক্স বা চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেলের সাথে শান্তিতে নোবেলের প্রকৃতিগত প্রভেদ আছে। শান্তিতে নোবেলজয়ী অনেকেই পরবর্তীতে বিতর্কিত কর্মকান্ডে নিন্দিত হয়েছেন। দেশ একটা পলিটিকাল আইডিয়া, পলিটিকাল প্রজ্ঞা ব্যতীত দেশ চালানো সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথ বা কাজী নজরুলকে যদি দেশের নেতৃত্বভার দেয়া হত ডাহা ফেইল করত।
চতুর্থত, মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামের সাথে ভারতবর্ষের ইসলামের তফাত আছে, এই রিয়েলিটি এলিট ক্লাস বুঝলেও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠীর অজ্ঞতা আর দারিদ্রকে এক্সপ্লোয়েট করে ইসলামকে ডানপন্থী রাজনীতির টুলস হিসেবে ম্যানিপুলেট করে একটা গোষ্ঠী। ৯ থেকে ১১ শতকে আরব বণিক আর সূফিরা যখন কেরালা বন্দরে এবং উত্তর ভারতে আসতে শুরু করে, তখন থেকে এই অঞ্চলে ইসলামের আবির্ভাব। ফলে ভারতবর্ষের ইসলাম মূলত কনভার্টেড মুসলিমদের৷ শিক্ষিত এলিট শ্রেণি হলিউড-বলিউডের ফিল্ম দেখে, সেটেল হওয়ার স্বপ্ন দেখে ইউরোপ-আমেরিকায়। মিডল ইস্টে প্রচুর টাকা পয়সা থাকলেও তাদের লাইফস্টাইল এখনো শিক্ষিত এলিটশ্রেণির খুবই মিনিমাল একটি অংশের কাছে কনভিন্সিং মনে হয়েছে। অনগ্রসর গোষ্ঠীর শতভাগ অংশগ্রহণও যদি নিশ্চিত হয়ে যায়, শিক্ষিত আরবান এলিটের মেজরিটি অংশ একসেপ্ট না করা পর্যন্ত বাংলাদেশে ডানপন্থামুখী আইডেন্টিটি পলিটিক্স কখনোই রুল করবে না। মব ভায়োলেন্সের বিপরীতে মানুষের অবস্থান দেখলেই বুঝা যায়। জনাব Y ডানপন্থীর প্রতি আনুকূল্য প্রদর্শন করেছেন।
পঞ্চমত, বাঙালি কথা বলার ক্ষেত্রে মাধ্যম রাখাকে বাঁশের চাইতে কঞ্চি বড় হিসেবে দেখে। ধরা যাক আপনি দেখা করতে গেলেন একটি কোম্পানির মালিকের সাথে। মালিক আপনার সাথে দেখা করলেন, কিন্তু নিজে কিছুই বললেন না, সব কথা বলালেন তার সেক্রেটারিকে দিয়ে। আপনি ফিল করবেন মালিক আপনাকে তার সেক্রেটারি স্তরের একজন হিসেবে গণ্য করছেন, অন্যদিকে সেক্রেটারিও over empowered বোধ করে ধরাকে সরাজ্ঞান করতে শুরু করবে। এ সংক্রান্ত খুব চমৎকার একটা ঈশপের গল্প পড়েছিলাম- এক ব্যাঙ জলে-স্থলে মিলে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছিল বিন্দাস৷ একদিন সে দেখে এক ষাঁড়ের ভয়ে লোকজন দৌড়ে পালাচ্ছে। সে ভাবলো আহা ষাঁড়ের কত ক্ষমতা। সেও ষাঁড়ের মত হওয়ার ইচ্ছায় পেট ফুলাতে আরম্ভ করলো, বেশ খানিকটা ফুললো। এতে তার উৎসাহ আরো বাড়লো, ষাঁড়ের সমান হলেই লোকে তাকে ভয় করবে। খানিকবাদেই তার শরীরে সমস্যা বোধ হলো, তবু পেট ফুলানো বন্ধ হলো না। যা ভবিতব্য ছিল, তা ই হলো- পেট ফেটে গেল! জনাব Y ইতোমধ্যেই একজন প্রেস সেক্রেটারি প্রতিষ্ঠা করেছেন যিনি স্মৃতির দুর্বলতায় ছেলেবেলায় পড়া ঈশপের গল্প ভুলে গেছেন!
৪. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ বাংলাদেশের জন্য প্রমাণিত অকার্যকর একটি আইডিয়া। কোনো প্রতিষ্ঠানে এর চর্চা নেই৷ মৌলিক প্রতিষ্ঠান পরিবারের দিকে যদি তাকাই, বাংলাদেশের কয়টা পরিবারে মা-বাবার বয়স হয়ে যাওয়ার পরও সন্তানের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাকে উদারমনে গ্রহণ করেন? ৪৭ বয়সী পুত্র বা কন্যাও মা-বাবাকে না জানিয়ে কিছু করলে তারা আহত হন, অসম্মানিত হন। এর রুট কজ সেই ক্ষমতা আকড়ে থাকা। সেই দেশে অফিসে, রাজনৈতিক দলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ কাজ করবে কেন মনে হচ্ছে? প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান চলে আর্মি স্টাইলে, চেইন অব কমান্ডই যার মূলমন্ত্র। গণফোরাম, এলডিপি, কাদের সিদ্দিকীর দল– এদের জন্মের প্রেক্ষাপট সেই চেইন অব কমান্ড ভাঙতে চাওয়া থেকেই। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ যেসব দলে আছে, তাদের বেশিরভাগেরই নাম আমরা জানি না অথবা কোনোদিন ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাতেই নেই। এজন্য নিজের দেশ আর দেশের মানুষকে চেনা ভীষণ জরুরী। কেউ ৫ পেগ ওয়াইন খেয়েও ফুল কন্ট্রোলে থাকে, আবার কেউ এনার্জি ড্রিংক খেয়েই বেশামাল হয়ে পড়ে। আমার শরীর কতটুকু লোড নিতে পারে তা আরেকজনের শরীরের সাথে মিলিয়ে নির্ধারণ করলে তো হবে না।
৫. মুহাম্মদ ইউনুসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আমার আইডিয়াল চয়েজ মনে হয়নি। কে আইডিয়াল তাও জানা ছিল না আমার, তাই নীরবতা অবলম্বন করেছিলাম। তবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং আসিফ নজরুলের প্রতি গত বছরের ৭ আগস্টই অনাস্থা প্রকাশ করে লিখেছিলাম। সৈয়দা রিজওয়ানার সম্বন্ধে কিছুই জানতাম না, তাকে প্রথম দেখি জুলাই অভ্যুত্থানকালীন ফেসবুকে তার ২-৩ মিনিটের এক ভাইরাল ভিডিওতে যেখানে তিনি পুলিশকে হুশিয়ারি দিয়েছিলেন। যেহেতু সবসময় মানুষ নিয়ে অবসেসড থাকি, তার ভোকাল টোন-বাচনভঙ্গি এবং ফেসিয়াল এক্সপ্রেসন ডিসেক্ট করে ‘Pretentious’ ভাইব পাই। এই মনে হওয়াকে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণের উপায় জানা না থাকায় সময়ের হাতে ছেড়ে দিই বিষয়টা। আসিফ নজরুলের অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা ধরনের থিওরি আগেই শুনেছিলাম, জাহানারা ইমামের আমলে তার এক্টিভিটিকে সন্দেহ করে বইও আছে। এই দুজন ব্যক্তিকে উপদেষ্টা পরিষদে দেখবার পরে আবারো নিশ্চিত হই ৩য় শক্তি হিসেবে যে ‘Y factor’ আশা করছে এলিট গোষ্ঠী, সেটা কোনো ক্ল্যান হবে না, একক ব্যক্তি Y নির্ভর, এবং তা ফেইল করবেই। তাছাড়া আরো ১৮ বছর আগে মুহাম্মদ ইউনুস রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেই চেষ্টায় কেন সাড়া পাননি এটার উত্তর তিনি যা দেন খুবই দুর্বল মানের মনে হয়েছে। এবং তখনই পরিচিত অনেকের কাছেই ‘Y factor’ এর টাইমলাইন বিষয়ে ফোরকাস্ট করি৷ কারো কাছে ছিল ২০২৫ এর ৮ আগস্ট, কারো কাছে ১১ অক্টোবর, কারো কাছে ৩১ ডিসেম্বর। সর্বোচ্চ লিমিট যাকে বলেছিলাম সেটাও ২০২৬ এর ২৮ ফেব্রুয়ারি৷ উল্লিখিত লিমিট বিষয়ক ফোরকাস্টিংগুলো গতবছর ৬ আগস্ট থেকে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।
৬. যেহেতু অসংখ্য মানুষের সাথে ফোরকাস্টিং বিষয়ক চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাখা, মুহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়ে মাঝেমধ্যে স্ট্যাটাস লিখি। তাতে অনেকে আমায় বলে এসব লেখা আপনার সাথে যায় না বা আপনি রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামিয়েন না, কেউ বলে বিএনপির দালালী করছেন, রাজনৈতিক প্রজ্ঞাহীন এলিটশ্রেণি বলে সফট লীগার, ভারতের দালাল। বাংলাদেশের ক্ষমতায় Z বা S রাজবংশ যে ই থাকুক, তাতে আমার লাইফস্টাইল ম্যাটার করবে না। আবার ‘Y Factor’ দীর্ঘমেয়াদে বা স্বল্পমেয়াদে থাকলেও লাইফস্টাইল একই থাকবে। যেহেতু নিজে ভোট দিই না, ইলেকশন ২০২৫ নাকি ৩৯ এ হবে তাতে আমার কী!
৭. তবে আমার ফ্যাসিনেশনের রুটটা অন্যত্র৷ নেটফ্লিক্স বা এমাজন প্রাইমে যতই হলিউডি কমোডিটি সাবস্ক্রাইব করি, হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ বা রয়টার্স পড়ি, বা প্রতি মাসে ঘুরে আসি বিদেশ থেকে, শারীরিকভাবে আমাদের বসবাস করতে হয় জিওগ্রাফিকাল বাংলাদেশেই। তাই বাংলাদেশের মানুষের ক্যারেক্টার পর্যালোচনা এবং তার ভিত্তিতে একশন ফোরকাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে ‘Y factor’ এর মেয়াদ একটা ক্রিটিকাল অবজার্ভেশনাল স্টাডি।
৮. যদি ব্যক্তি মানুষ হিসেবে বলি ‘Y factor’ এর দুটো কেইস ভীষণ অপছন্দ করেছি
প্রথমত, দেড় শো-দুইশ ছেলে জড়ো হলো, এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল। ১০ লক্ষ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলবার অধিকার কে দিল তাদের”
দ্বিতীয়ত আশিক চৌধুরীর প্রেজেন্টেশনকে ওভারগ্লোরিফাই করে পিআর ক্যাম্পেইন চালানো। দেশের মানুষ কি ডেস্টিনি ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে, নাকি স্টুপিড যে একটা প্রেজেন্টেশন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হাইপ তুলতে হবে? সেই প্রেজেন্টেশনের রেজাল্ট কী? ইদানীং চিয়াসিড নামে এক ধরনের ডায়েট আইটেম জনপ্রিয় হচ্ছে।।আপনি যখন এক প্যাকেট চিয়াসিডের গুরুত্ব বুঝাতে টম ক্রুজ, শাহরুখ খান, নয়নতারা, তামিম ইকবাল সহ নানা অঙ্গনের সেলিব্রিটিকে এনগেজ করেন, আপনার সামর্থ্য থাকলে যে পারবেন, ভারতের আম্বানী গ্রুপের ছেলের বিয়ে প্রমাণও করেছে, কিন্তু তাতে করে চিয়াসিড কি ভাত-মাছের ঘাটতি পূরণ করতে পারবে? চিয়াসিড কিন্তু চিয়াসিডই থাকবে, বরং মানুষের সন্দেহ জাগবে ‘হোয়াই দিস চিয়াসিড’?
৯. মবতন্ত্র, ডানপন্থার আগ্রাসন, নারীবিদ্বেষ, রাজনৈতিক দল হিসেবে নুরুল হক নুরু বা জোনায়েদ সাকির দলের চাইতেও কম অনুসারীর একটি দল এনসিপিকে বিএনপি-জামাতের মতো প্রাচীন দলের চাইতেও গুরুত্ব দেয়া প্রভৃতি এক্টিভিটিকে পলিটিকাল ধারাভাষ্যকাররা সমালোচনা করলেও, আমি করব না, কারণ ‘Y factor’ যে সমস্ত স্টেকের উপর নির্ভর করে টিকবার ক্যালকুলেশন করছে, সেখানে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। জনাব মুহাম্মদ ইউনুস গতকাল জাপানে বলেছেন, কেবল একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়। এর আগে বিএনপি উপদেষ্টা আসিফের পদত্যাগের দাবি জানালো, তাদের সাথেকার মিটিংয়ে রাখলেন আসিফকেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এর চাইতে বড় অপমান নিকট অতীতে মনে পড়ছে না। আবার ক্রমাগত সেনাবাহিনীর সাথেও সংঘাতে জড়াচ্ছেন। দুটো বৃহৎ শক্তিকে অবলীলায় উপেক্ষা এবং তাচ্ছিল্য করবার জন্য যে ব্যাক আপের প্রয়োজন সেটা লোকালি যাদের থেকে পাওয়ার আশা করেন তাদের ছাড় দিতেই হবে। যদি মুহাম্মদ ইউনুসকে অপসারণ করা হয় যুক্তরাষ্ট্র কি স্যাংশন দিবে, ইইউ নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দিবে না, কিংবা চীন বা জাপান বিনিয়োগ বন্ধ করে দিবে, আইএমএফ লোন দিবে না—– এরকম এক বা একাধিক আশ্বাস কি তিনি পেয়েছেন? সেসব আমার আগ্রহের জায়গা নয়। আমি কেবল দেখতে চাইছি বাংলাদেশীদের প্রবণতা বিষয়ক আমার হাইপোথিসিস কতটুকু সঠিক, কতটা rethink করতে হয়। ‘Y factor’ আমাকে সে সুযোগ করে দিয়েছে বলেই এ বিষয়ে লিখি৷ এটা একান্তই ব্যক্তিগত স্টাডি, আমার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন, কোনোপ্রকার পার্টিজান পলিটিক্সের সাথে এফিলিয়েশন পান কিনা
৯. ফেসবুকবাসীদের কাছে এত ক্লারিফিকেশনের কিছু নেই। কিন্তু চেনা ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যেই বিএনপি, আওয়ামিলীগ, জামাত, বাম, Y factor পন্থী সহ অসংখ্য পলিটিকাল মতাদর্শের মানুষ। রাজনৈতিক টপিকে দুটো শব্দ লিখলেও এক পক্ষ খুশি, অন্য পক্ষ বেজার হয়। ভালো মানুষ, মন্দ মানুষ থিওরিতে বিশ্বাস করি না। মাত্র ৫টা প্রিন্সিপাল মেনে চলি
– কমিটমেন্ট দিলে রাখার চেষ্টা করি
– অন্যায় করলেও ট্রান্সপারেন্টলি করি, ট্রান্সপারেন্সি সর্বাবস্থায় ফার্স্ট প্রায়োরিটি
– আমার যে কোনো প্রস্তাবে কেউ ‘না’ বললে কখনোই সেটা ‘হ্যা’ তে রূপান্তরের চেষ্টা করি না।
– অনুশোচনায় ভুগি না, স্মৃতিকাতর হই না
– ৭২৩ কোটি মানুষ বিপক্ষে থাকলেও বেটার এক্সপ্লেনেশন না দেয়া পর্যন্ত নিজের অবস্থান পাল্টাই না।
এজন্যই শুরুতে করোনার দিনগুলোতে হওয়া ব্যাশিংয়ের অভিজ্ঞতার রেফারেন্স দিলাম। লিটন দাসের মতো একজন আন্ডার এচিভড প্লেয়ারের পেছনেও গত ৮ বছর ধরে এক নাগাড়ে সময়,,এনার্জি, অর্থ খরচ করে যাচ্ছি কারণ সে আমার বইয়ের ক্যারেক্টার।
এতসব দৃষ্টান্তের পরেও চেনা মানুষদের মধ্যে যাদের হৃদয়ে আঘাত লাগে, তাদের জন্য একটাই পরামর্শ- Do ‘NGOগ্রাম’!