গত ২ দিনে চিঠি লিখেছি ২৯টি, আগামীকাল নাগাদ লিখতে হবে ২৬টি; ৩দিনের মধ্যে লেখা ৫৫টি চিঠি চলতি সপ্তাহে পৌঁছে যাবে ৫৫ জন পৃথক ব্যক্তির কাছে।
২০২২ এও এভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। সেবার ১টা চিঠিই ফটোকপি করে দেয়া হয়েছিল প্রত্যেককে। এবার শুধুমাত্র ওই ব্যক্তিকেই লেখা।
৫৫ জনের মধ্যে ব্যক্তিগত পরিচিত মাত্র ৬জন!
এত বিপুল সংখ্যক চিঠি লিখবার সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। আমি ৩ জন মানুষ খুঁজছি, যাদের প্রতি মাসে ১টা চিঠি লিখব, ৭ বছর মেয়াদি পত্র যোগাযোগ।
জীবনভর আমি কেবল ভুল মানুষকে চিঠি লিখেছি। গত মাসে Tazkia Isaba হিসেব কষে জানালো অদ্যাবধি চিঠি লিখেছি ৩২৬০টি, এদের মধ্যে উত্তর পাইনি ২০০টিরও। এমন একতরফা চিঠি প্রেরণ আদতে সময়-এনার্জির অপচয়।
আমি চিঠি লিখি মূলত মানুষ, জগত বিষয়ক আইডিয়াগুলো লিখে রাখতে। বিভিন্ন ফ্যান্টাসি এবং কল্পনাকে শার্প ডকুমেন্টেড করতে। ডায়েরিও লেখা যেত।।প্রথম ২৪ বছরে প্রচুর ডায়েরি লিখেছিও। কিন্তু ভার্সিটির হল থেকে সবগুলো ডায়েরি হারিয়ে যায়। আমার এতদিনের ভাবনা সব হাওয়া।
চিঠি লেখার সুবিধা তিনটি
১. যাকে লিখছি সে সংরক্ষণ করবে।
২. ডায়েরির আইডিয়াগুলো থাকে সকলের অগোচরে। চিঠিসূত্রে যখন ২য় কেউ জানে, তার কাছে মুখরক্ষার জন্য হলেও আইডিয়াগুলো বাস্তবায়নের চাপ তৈরি হয়।
৩. সে যখন উত্তর লিখবে সেখানে কোনো না কোনো মতামত থাকে। তার ক্রিটিক করতে গিয়ে নতুন আইডিয়া আসে।
ইমেইলের বদলে চিঠি লেখার কারণ, ইমেইলে এডিট করার সুযোগ থাকে। ফলে সেখানে আইডিয়াগুলো ফ্যাব্রিকেটেড, কিংবা অফিসিয়াল ডকুমেন্ট হয়ে যায়৷ হাতে-কলমে লিখতে গেলে সম্পাদনার সুযোগ না থাকায় একুইরেটলি চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ে।
যদি সরাসরি লিখতাম ৩ জনকে প্রতিমাসে ১টা চিঠি লিখব, আগ্রহী মানুষের সংখ্যা হয়ত বাড়ত, কিন্তু চিঠি তাদের জন্য কতটা প্রায়োরিটিপূর্ণ পরীক্ষার সুযোগ ছিল না।
সেজন্যই সোশ্যাল এক্সপেরিমেন্ট। ৫৫ এর মধ্যে অন্তত ৭ জন উত্তর দিবে আশা করি। সেখানে যদি কারো চিন্তাপ্রক্রিয়া পছন্দ হয়, ৭ বছর মেয়াদি পত্রালাপ করা স্মুথ হলো। যদি কারো ভাবনাই স্পার্কিং না হয়, পুনরায় মানুষ খুঁজব।
কিন্তু ভুল মানুষকে চিঠি বা ইমেইল লিখে অপচয়ের খাত আর বড় করব না৷
সম্প্রতি দুটো ঘটনা ঘটেছে
ঘটনা১- তিনজন পরিচিত ব্যক্তি জানালো আমার গল্প তাদের নিকটজনের কাছে করবার পরে প্রথম প্রশ্ন ছিল এইসব ভাদাইম্মাগিরি করে সে সংসার চালায় কীভাবে? আমার ধারণা এই প্রশ্নটা বহু মানুষেরই। আমাকে যতটা ছন্নছাড়া মনে হয়, অতটাও কিন্তু নই। আমি ৩টা লোকাল কোম্পানির ক্রিয়েটিভ কনসালট্যান্ট, সেখানে খুব কঠোর কোনো কমিটমেন্ট নেই। তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক কোনো প্রয়োজন পড়লে ফোন করে, ইনসাইট বা মতামত শেয়ার করি, বার্ষিক পেমেন্ট দেয়।
এছাড়া ‘অর্গানাইজেশনাল রিভিউ’ আমার একটি জনপ্রিয় সার্ভিস। বই বা ফিল্মের যেমন রিভিউ হয়, একটা কোম্পানিকেও রিভিউ করা যায়। আমি সেটাই করি বিভিন্ন লোকাল কোম্পানিতে।
এছাড়া বিভিন্ন লোকাল কোম্পানির সিইও অথবা ব্যবসা করতে চাওয়া মানুষেরা আমার সঙ্গে গল্প করে। আমি তাদের বিভিন্ন ক্রিটিকাল প্রশ্ন করি, তার ভিত্তিতে তাদের সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়।।সেজন্য সম্মানি দেয়।
সর্বোপরি নানা ধরনের মানুষ আমার সঙ্গে গল্প করে, গল্পের শেষে তার ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ শুনতে চায়, আমি রিপোর্ট লিখে দিই। বিপরীতে সম্মানি পাই।
নানা জোড়াতালি দিয়ে অর্থ আসে। প্রাচুর্য নেই, তবে অভাবীও বলা যায় না।
ফলে আমার হাতে অখন্ড সময় থেকে যায়। সেই সময়ের সবটা আমি খরচ করি লেখালিখির রিসোর্স এবং ক্যারেক্টার সংগ্রহে।
কারো ইন্টারনেট পারসোনালিটি দিয়ে তাকে বিচার করাটা নির্বুদ্ধিতা। তাই এরপরে কারো সাথে আমার ব্যাপারে গল্প করার সময় আমাকে যদি তার ছন্নছাড়া বা বেকার মনে হয় এই লেখাটা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
ঘটনা২- আমার ৪৫ দিন ভারত ভ্রমণের গল্প শুনে এক নিকটাত্মীয় মন্তব্য করেছে মানুষ তখনই ভ্রমণে যায় যখন তার পায়ের নিচে শক্ত জমিন থাকে। মানুষের দয়া দাক্ষিণ্য নিয়ে কেউ ভ্রমণ করে?
তার মত করে অনেকেই ভাবে। আমার এ সংক্রান্ত কোনো জড়তা নাই।
কলম্বাস যে আমেরিকা আবিষ্কার করলো, সে তো বেরিয়েছিল অন্য গন্তব্যের উদ্দেশে। পুরো খরচটা দিয়েছিল রাজা। নইলে কলম্বাসের কিসের এত দায় নিজের জীবনের ঝুঁকি নেয়ার। মার্কো পলো, ইবনে বতুতা, হিউয়েন সাঙ সহ যাদের গল্প জানি প্রত্যেককেই তৎকালীন ধনীরা পৃষ্ঠপোষকতা দিত। আমার সারা বছরের খরচ কারো কাছ থেকে নিতে হয় না। আমি আনন্দ-ফূর্তির উদ্দেশ্যেও বিদেশে যাই না বা যাইনি। আমি একটা বই লিখতে চেয়েছিলাম, যারা মনে করেছে বইটা মূল্যবান হতে পারে তারা আমাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে, যারা ভাবেনি দেয়নি। আমি কারো কাছে ধার চাইনি বা বই লেখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বই লিখিনি তেমনটাও ঘটেনি। এবছর মনে করছি ভিয়েতনাম নিয়ে বই লেখা উচিত।।যদি শুভাকাংখীরা মনে করে বইটা মূল্যবান হতে পারে, এবং তারা সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য হয় তবে ভিয়েতনামে যাব, নইলে না। এখানে দয়া-দাক্ষিণ্যের প্রসঙ্গটাই ছোটলোকি। শুধুমাত্র ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আমি একটা দেশেই যাব, মিশরে। নিশ্চয়তা দিচ্ছি সেই ভ্রমণের একটি টাকাও ৩য় কোনো পক্ষ থেকে আসবে না, কারণ মিশর-পিরামিড, এবং নীলনদ—- তারপরে গল্প কোনদিকে যাবে জানি না।
যারা চিঠির জন্য মেসেজ দিয়েছিলেন, বড় অংশের মনোভাবই ফ্যানডম ঘরানার। উদ্দেশ্য কতটুকু পূরণ হবে অনিশ্চিত। তবে চলতি বছরে সেই ৩ জন ‘রিমোট রিলেটিভ’ আমার আবিষ্কার করতেই হবে।।আমার আইডিয়া-আর্গুমেন্ট এবং ফ্যান্টাসির পরিবর্ধনে এটা জরুরী।