মাসুদুল হক নামের এক ব্যক্তি সম্প্রতি বুয়েট টপারের ইন্টারভিউ পড়ে একটি স্ট্যাটাস উৎপাদন করেছেন। শুনলাম তার প্রকাশিত বই আছে। গত ১২ বছর ধরেই একটা নীতি চালিয়ে যাচ্ছি- ‘নাম জানা সাপেক্ষে সমকালীন প্রত্যেক লেখকের অন্তত একটা বই পড়ার চেষ্টা করি। তার আইডিয়া এবং আর্গুমেন্ট থেকে চিন্তাপ্রক্রিয়া সম্বন্ধে নিজস্ব বোঝাপড়া তৈরি করি’।

কোনো ব্যক্তির ইন্টারনেট পারসোনালিটি দিয়ে তাকে বোঝা ৮৯% ক্ষেত্রেই ভুল এপ্রোচ মনে হয়৷ ইন্টারনেটে সে মূলত পারফরম্যান্স মুডে থাকে, যেটা আদতে স্ক্রিপ্টেড। মাসুদুল হকের কোনো একটা বই পড়ার ইচ্ছা রইলো, অনতিবিলম্বে।

মাসুদুল হকের স্ট্যাটাসের মৌল কাঁচামাল ইন্টারভিউ। আমাদের সামাজিক পারসেপশন বলে সে-ই ইন্টারভিউয়ের যোগ্য যার গল্পের চাহিদা আছে মার্কেটে। কাওরানবাজারে শুয়ে থাকা ভাসমান মানুষের একক ব্যক্তি হিসেবে মার্কেট ডিমান্ড শূন্যপ্রায় হলেও তার গল্পের চাহিদা বোয়াল মাছের সমান। যে কারণে নানা উপলক্ষেই প্রকাশিত হয় তাদের ইন্টারভিউ।

আমার বা আপনার ইন্টারভিউ নিতে একাধিক এন্টারপ্রাইজের আগ্রহ নেই মানে মার্কেটে আমরা চাহিদাযোগ্য হয়ে উঠিনি।

মাসুদুল হকের স্ট্যাটাস কনটেন্টে আগ্রহ পাচ্ছি না। তবে তার স্ট্যাটাসসূত্রে ৩টা কী-ওয়ার্ড পেলাম যা আলোচনাযোগ্য- টপার ইন্টারভিউ, বুয়েট, বুয়েট বিষয়ক আউটসাইডার ন্যারেটিভ

***

আমরা গ্রেডিং যুগের ৩য় ব্যাচ, তার আগে এসএসসি বা এইচএসসিতে রেজাল্ট দিত নম্বর সিস্টেমে। প্রতি বোর্ড থেকে নম্বরের ভিত্তিতে ২০ জন স্ট্যান্ড করত। বোর্ড স্ট্যান্ড করা ছাত্র বা ছাত্রীরা ছিল টেলিভিশন বা পত্রিকার হটকেক আইটেম৷ প্রতি বছর ২ বার স্ট্যান্ড সেলিব্রিটিদের ইন্টারভিউ ছাপা হত, টিভির ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানেও ডাক পড়তো৷ আমার শিশু মন অপার বিস্ময়ে আবিষ্কার করত সাল এবং মুখগুলো নিয়মিত বদলে গেলেও স্ট্যান্ড সেলিব্রিটিদের দুটো উত্তর থাকত কমন
১. আমি প্রতিদিন ৪-৫ ঘন্টা পড়াশোনা করেছি
২. আমার কোনো প্রাইভেট টিউটর ছিল না

ক্লাশ এইটে উঠবার পূর্বেই নিশ্চিত হয়েছিলাম আর যাই হোক আমার পক্ষে কোনোদিন স্ট্যান্ড করা সম্ভব না, কারণ আমি মাত্র ৪-৫ ঘন্টা পড়লে স্কুল পরীক্ষাতেই ফেল করব ৩-৪ সাবজেক্টে, এবং ম্যাথ-ইংলিশ প্রাইভেট পড়ি।

বহু বছর পরে যখন পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে গেছে, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের হাজারে-বিজারে ইন্টারভিউ নিয়েছি, ছেলেবেলায় দেখা সেসব ইন্টারভিউকে পুনরাবিষ্কার করার প্রক্রিয়ায় দুটো সম্ভাব্য কারণ পেয়েছি

প্রথমত, ইন্টারভিউগুলো নেয়া হত পাবলিক ডিমান্ড পূরণ করতে। রেজাল্ট নিয়ে ছেলে বা মেয়ের চাইতে মা-বাবার টেনশন বেশি। অমুকের ছেলে ৮৬৯ পাইছে, তুই কেন ৭৮৭ পাইলি, তোর খাওয়া বন্ধ, কিংবা অমুকের বাসায় গেলে দেখি তার মেয়ে পড়তেছে, তুই টিভিতে নাটক দেখোস, ওর পা ধোয়া পানি খা। রেজাল্টের পরে স্ট্যান্ড সেলিব্রিটিদের ইন্টারভিউয়ের পাশাপাশি পরীক্ষায় অকৃতকার্য বা খারাপ রেজাল্ট করে আত্মহত্যা ধরনের সংবাদও ছাপা হত প্রচুর। মা-বাবার অতিরিক্ত চাপে ছেলে-মেয়েদের দমবন্ধ অনুভূতি কমাতে ওই সাজানো ইন্টারভিউগুলো হয়ত বার্তা দিত- স্ট্যান্ড করার জন্য সর্বক্ষণ পড়াশোনার দরকার নেই।

দ্বিতীয়ত, কোচিং সেন্টার-গাইড বই-প্রাইভেট টিউশনি ব্যবসা তখন সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে গেছে। হয়তবা স্কুলের শিক্ষাকে প্রাসঙ্গিক প্রমাণ করতে সেলিব্রিটি এনডোর্সমেন্টের অংশ হিসেবে প্রাইভেট টিউটরকে অস্বীকার করা হত অবলীলায়।

তবে সেই বয়সেই এমন কাউকে পাইনি যে বা যারা ওইসব ইন্টারভিউকে বিশ্বাস করত। যে উদ্দেশ্যেই মিথ্যাগুলো বলা হোক, পূরণ হয়নি।

টপার ইন্টারভিউয়ের ক্ষেত্রেও প্রেফারেন্স ছিল। ঢাকা, চট্টগ্রাম বা সিলেট বোর্ড টপারের ইন্টারভিউ যত দেখা যেত যশোর, বরিশাল বা কুমিল্লা বোর্ড টপারদের খুবই কম। আবার ক্যাডেট কলেজ থেকে স্ট্যান্ড করলে টপার না হয়েও ইন্টারভিউতে ডাক পাওয়া যেত।

টপার ইন্টারভিউয়ের ক্ষেত্রে সিলেক্টিভিটির পরম্পরা লক্ষ্য করা যায় পরবর্তী প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোতেও।

প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি পরীক্ষা হয়। সেখানে কেউ না কেউ প্রথম হয়। কিন্তু পত্রিকায় ইন্টারভিউ ছাপার ক্ষেত্রে চয়েজ বুয়েট, মেডিকেল, ঢাকা ইউনিভার্সিটি। যদি টেকনিকাল ভার্সিটিগুলোকেও আমলে নিই কুয়েট বা রুয়েট টপারের ইন্টারভিউ কি চোখে পড়ে সচরাচর, কিংবা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় টপারের?

নন-টেকনিকাল ক্যাটেগরিতে চট্টগ্রাম বা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় টপারের ইন্টারভিউ?

বুয়েট-মেডিকেল-ঢাকা ভার্সিটি টপারদের ইন্টারভিউ দেখে দেখে সাধারণের মনে হতে পারে মিডিয়ায় এদের অতিরিক্ত এটেনশন দেয়া হয়।

যদি প্রশ্নটা ঘুরিয়ে দেয়া হয়- সিট লিমিট নেই, ফর্ম কেনার যোগ্যতা পূরণ হলেই আপনার সন্তানকে পছন্দের প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর সুযোগ দেয়া হবে, এবার বলুন কোথায় পড়াবেন, আমার অনুমান ৯৯% অভিভাবকই বুয়েট-ঢাকা মেডিকেল-ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে টিক দিবেন। বিপুল জনগোষ্ঠীর দেশে সমস্ত অভিভাবক যখন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্বপ্নে বিভোর থাকেন, সেখানে সুযোগ পাওয়াটা সামাজিকভাবে প্রেস্টিজিয়াস, এবং টপার হওয়া গ্লোরিয়াস।
আপনি ৩৫ বা ৪০ এ গিয়ে হয়ত ফিল করবেন প্রেস্টিজ বা গ্লোরি মিনিংলেস, অপ্রয়োজনীয় গোলযোগ, কিন্তু ১৮-১৯ বয়সের একটা বাংলাদেশী টিনেজারের মনোজগতে ওই প্রেস্টিজ বা গ্লোরির যে সিগনিফিক্যান্স, সেটা আপনার ৩৫ বা ৪০ বয়সী লেন্সে দেখা পৃথিবীর সাপেক্ষে বিচার করা অর্বাচীনতা৷

অনুন্নতা দেশগুলোতে নিয়তি মানুষকে যে সিস্টেমের মধ্যে ঠেলে দেয় সেখানে ব্যক্তির জন্য অপশন থাকে মাত্র ৩টি, সবগুলোই F যুক্ত- Fight, F**k, Flee;

ভোক্তাশ্রেণির মানুষেরা প্রথমটা বাছাই করে, নৈরাজ্যবাদীরা করে মাঝেরটা, ভীতু বা সন্ত শ্রেণিরা ৩য়টা।

আপনি যে অপশনটা নিলেন আপনার সমালোচনা হওয়া উচিত সেই শ্রেণিকেন্দ্রিক৷ আপনি বাছাই করলেন ২য় বা ৩য়টা, অথচ প্রথম অপশন বাছাইকারীদের উড়িয়ে দিচ্ছেন— এটা দুর্নীতি। একজন ফাইটারই কেবল জানে অন্য ফাইটার কোথায় ভুল বা সঠিক কৌশল অবলম্বন করলো।

তবে ফাইটমাত্রই ফলাফল। একটা বিশ্বকাপ ট্রফির জন্য ফাইট করে ৩২ দল, জেতে মাত্র ১জন। সেই ৩২ এ ঢুকতে ফাইট করে মহাদেশীয় এবং আঞ্চলিক দেশগুলো৷ এটাই স্পিরিট।

একাকীত্ব এবং নি:সঙ্গতাই কীর্তিমানের শ্রেষ্ঠ ট্রফি। দল নিয়ে চলে ভেড়া কিংবা মহিষ।

যেহেতু পরাজিতরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, নিজেদের ব্যর্থতাতে মহত্ত্ব আরোপ করতে তারা নানা তত্ত্বের উদ্ভাবন করে, চ্যাম্পিয়ন হওয়া বিশেষ কিছু নয় বোঝানোর চেষ্টা করে, তাতে অন্যান্য পরাজিতবর্গ ঐকমত্য পোষণ করে, এবং বিজয়ী হওয়ার এম্বিশন ছোট হতে হতে হারিয়ে যায়। যদি তুমি মুদি দোকান করো সেখানে টপার হও, রিকশা চালানো-হকারি-মুচি-ধোপা যা ইচ্ছা কর, কিন্তু টপার হও— এই কথা পরাজিতরা বলে না বিধায় কোথাও কোনো এক্সিলেন্স আসে না। সংখ্যাধিক্যের জোরে তারা টপার হওয়াকে পোরট্রে করে ‘মোরাল ক্রাইম’ হিসেবে। ফলে লুজারদের মধ্যে কখনো টপ লুজার হয় না, লুজার চিরকালই সংঘবদ্ধ।

***
৭ বয়সের পর থেকে ইন্টারভিউ নেয়া আর গল্প করার বাইরে আমার কোনো জীবন ছিল না কখনো। যতদিন ছাত্র ছিলাম এ নিয়ে কথা শুনতে হয়নি, গ্রাজুয়েশনের পর থেকেই ইন্টারভিউ নেয়াকালে যদি বুয়েট ব্যাকগ্রাউন্ড প্রকাশ করি নানারকম অভিজ্ঞতা হয়। সেখান থেকে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি

১. ‘বুয়েটিয়ানদের তো ভাব বেশি, তারা নিজেদের এলিট এবং এলিয়েন ভাবে’— বুয়েট সংক্রান্ত সবচাইতে জনপ্রিয় ন্যারেটিভ হয়ত এটা। ১০ বছর আগেও এ ধরনের কমেন্টে পালটা প্রশ্ন করতাম – ‘প্রতিবছর বুয়েটে ৮০০+ স্টুডেন্ট ভর্তি হয়, আপনি এ জীবনে কি ৪০ জন বুয়েটিয়ানের সাথেও ক্লোজলি মিশেছেন; তাহলে এত বড় সরলীকরণ কেন। বেশিরভাগই উত্তর আসতো অমুক অনুষ্ঠানে, তমুক অফিসে, অমুক ফ্রেন্ডের ফ্রেন্ডসূত্রে মিলিয়ে ৫-৭ জন বুয়েটিয়ান যা দেখেছে সবার ক্যারেক্টার প্রায় একইরকম। একটা ন্যারেটিভ যখন তৈরি হয় পুরোটা হাওয়ায় ভেসে নয়, কিছুটা ভিত্তি থাকে। আমিও এই ন্যারেটিভের অনুসন্ধান চালিয়ে গেছি দীর্ঘদিন।

বাংলাদেশের সবচাইতে কম্পিটিটিভ পরীক্ষা হয় কোথায়, যদি জিজ্ঞেস করি দুটো অপশন বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী হবে- বুয়েট এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি আইবিএ। বুয়েটের তুলনায় আইবিএ তে আসনসংখ্যা যেহেতু কম, এবং এটা একটা পূর্ণাঙ্গ ভার্সিটি নয়, ইনস্টিউট, তাই আইবিএকে সরিয়ে রাখলে টাফেস্ট কম্পিটিশন প্রশ্নে বুয়েটই থেকে যায়। ফলে কেউ যখন এই ফিল্টার পার হয়ে সুযোগ পায় বা মেধাক্রমে উপরের দিকে থাকে, এটা অবধারিত ফাইট এবং কম্পিটিশনের নেশা তার রক্তে। আপনি হলে থাকা রেন্ডম ১০০ জন বুয়েটিয়ানের স্যাম্পল নিলে দেখবেন এদের ৯০% ই তার এলাকায় কিংবদন্তী পর্যায়ের ছাত্র/ছাত্রী। মানে ছোট থেকেই এটেনশন সে আদায় করে নিয়েছে, বহু মানুষের গল্পে সে ক্যারেক্টার। তার মধ্যে আলাদা একটা এটিচুড তৈরি হয়ে গেছে অজান্তেই৷ সে নিজেকে এলিয়েন ভাবলো, নাকি আপনি বা আপনারা বানালেন? ক্লাস টু এর বাচ্চাকে পড়াতে আপনার বুয়েটিয়ান টিউটর কেন লাগবে, এবং অন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠানের টিউটরের চাইতে ৩-৪ গুণ বেশি টাকায়? কোচিং সেন্টারগুলোতে কেন বুয়েটিয়ান টিচার শব্দটা এত বেশি হাইলাইট করার দরকার পড়ে? যে যেভাবে পারছেন বুয়েটের সিল বিক্রি করছেন, বুয়েটকে বানাচ্ছেন ভিনগ্রহ, সেখানে ১৮-১৯ বছরের একটা ছেলে বা মেয়ে যার জগত দেখা বা বোঝার বাকি পুরোটাই, সে যদি এই ট্র‍্যাপে পড়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করে, আমি তো বরং তাকে ভিক্টিম বলতে চাই৷

২. ‘ইনস্টিটিউশনাল প্রাইড সবচাইতে বেশি বুয়েটের। অন্য কোথাও পড়লে লোকেরা বলে ভার্সিটি সিনিয়র বা জুনিয়র, বা ভার্সিটি লাইফ। বুয়েটিয়ান কারো সাথে আলাপ করলে সে কোনো বা কোনোভাবে বুয়েটি প্রসঙ্গ আনবেই। অথবা এভাবে বলবে আমার বুয়েটের বড় ভাই বা ছোট ভাই’— এটা বুয়েট সংক্রান্ত আরেকটি ন্যারেটিভ।

চিন্তায় এবং অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর ‘পাওয়ার ড্রিভেন সোসাইটি’তে যেখানে রিমার্কেবল এচিভমেন্ট অতি নগণ্য, সেখানে এইসব তুচ্ছ প্রাইডই মানুষকে সম্রাট আকবরের কাজিন ভাবার প্রশান্তি দেয়। মেজর জেনারেল অমুক, ব্যারিস্টার তমুক, প্রফেসর নমুক, ডাক্তার সমুক, ইঞ্জিনিয়ার গমুক এর পাশাপাশি সংগ্রামী নেতা, সমাজসেবক সহ নানা পদবি আর বিশেষণ হয়ে পড়ে তার নামের অংশ। তিতুমির কলেজ বা এশিয়া প্যাসিফিক এ পড়াটা যদি তোমাকে প্রাইড দিতে না পারে সেই দায় বুয়েট বা জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটি কেন নিবে? ফেসবুকে খাবারের ছবি আপলোড করলেই একদল লোক এসে নসিহত করে- কত লোক আছে যারা ৩ বেলা খেতে পায় না, বা দামি খাবার খায় না; তারা এসব দেখলে কষ্ট পাবে। খাবার বা যে কোনো ব্যক্তিগত ইভেন্টের ছবি ফেসবুকে দেয়া উচিত কিনা সে বিষয়ে আলাপ করা যেতে পারে, কিন্তু আরেকজনের মন খারাপ হবে, এধরনের নিম্নবর্গীয় মন্তব্যে আমি সাধারণত বলি ‘কতজন আছে টাকার অভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছে না, তারা ফেসবুক একাউন্ট আছে শুনলে কষ্ট পাবে’। একটা রাষ্ট্র যখন ম্যাক্রো স্কেলে প্রাইড প্রডিউস করতে পারে নিয়মিত তার প্রভাবে ব্যক্তিরও প্রাইড ধারণায় পরিবর্তন আসে। সে তখন ফিল করে আমার প্রাইডের লেভেল কেবল নামের আগে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার সেটে দেয়াতে নয়। আমরা ম্যাক্রো স্কেলে প্রাইড প্রডিউস করি কদাচিৎ, তাই প্রাইডগুলো পারিবারিক-ধর্মীয়-গোত্রীয়-পেশাগত-প্রাতিষ্ঠানিকতায় বিন্যস্ত হয়েছে।

৩. ‘জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পড়ে বুয়েটিয়ানরা বিদেশে চলে যায়, ব্রেইনড্রেইন হচ্ছে’— বুয়েটিয়ানদের নিয়ে ২য় প্রচলিত ন্যারেটিভ। এ বিষয়ে গত ১৫-১৬ বছরে বহুজনে লিখেছেন। আমি তাই নতুন কোনো বক্তব্য দিতে চাচ্ছি না।

৪.’বুয়েটের একটা ছেলে বা মেয়ে যদি বিসিএস দিয়ে এডমিন-পুলিশ-ফরেন বা যে কোনো ক্যাডারে যায়, সে তো একটা সিট নষ্ট করলো’—- বর্তমানের আলোচিত ন্যারেটিভ। এর বিপক্ষে যেসব বক্তব্য চোখে পড়েছে সেগুলো সুশীলিয় ঘরানার। তাই নিজের মতামত ব্যক্ত করার স্কোপ পাচ্ছি এখানে।

ধরা যাক আপনি সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী, আপনার চাইতে লোকাল থানার ওসি অধিক ক্ষমতাশালী, এসপি তো বহুদূরের ব্যাপার। আপনি সফটওয়্যার ডেভেলপার, মাসে বেতন দেড় লাখ, কিন্তু সেই অর্থে আপনি ক্ষমতাকাঠামোতে কোথাও বিলং করেন না। গ্রাজুয়েশন করতে বয়স ২৪-২৫ পেরিয়ে যায়। যদি আপনি ৭০ বছর আয়ু পান, এবং ৬০ পর্যন্ত সক্রিয় থাকেন, তার মানে অর্ধেক জীবন পর্যন্ত যারা আপনার চাইতে পড়াশোনায়-অর্জনে অনেক পিছিয়ে ছিল, এরপরে একটা মুখস্থশক্তির পরীক্ষা দিয়ে রাতারাতি ক্ষমতার গোলকে ঢুকে পড়লো, এবং তাকে দেখে আপনার পরিচিতরা বলবে ‘অমুকে ওই জায়গায় পড়ে এখন এসপি বা এডমিন ক্যাডার, তুমি বুয়েটে পড়ে কী করলা’, কিংবা বিভিন্ন মোটিভেশনাল সেমিনারে বিসিএস সেলিব্রিটিরা বলবে আমাদের সাথের অনেকেই বুয়েট-মেডিকেলে পড়েছিল, আজ তারা কোথায় আমি কোথায়, ফাইট যাদের রক্তে তাদের জন্য এসব টিপ্পনী হজম করা কঠিন। সে তখন ভাবতেই পারে- ‘মাইগ্রেট করলে ট্যাক্সের সাথে বেঈমানী করেছি বলেন। দেশে থাকলে বিসিএস ক্যাডারদের প্রশস্তি গাওয়ার ফাঁকে শুনিয়ে দেন বুয়েটে পড়ে কী করলা— তবে কি বুয়েটে পড়াই জীবনের অমার্জনীয় অপরাধ ছিল? বুয়েট এডমিশনের সাপেক্ষে বিসিএসের প্রশ্ন সিম্পলি নাথিং; ইন্টারেস্ট পাইনি বলে এতদিন পরীক্ষা দিইনি, সেই সুযোগে এভারেজ স্টুডেন্টরা টিকে গেল, আর বাকিজীবনের জন্য সাম্রাজ্য জয় করলো। সাম্রাজ্য আর সম্মানের নিয়ামক যদি একটা এমপিথ্রি গাইড হয়, লেটস স্টার্ট দ্য গেম’——- তার এই ভাবনাটা স্বত:প্রণোদিত নাকি সোশ্যাল ইডিওক্রেসি?

মাসুদুল হক এর ক্ষুদ্র স্ট্যাটাস সামগ্রিক সোশ্যাল ইডিওক্রেসিরই খানিকটা বহি:প্রকাশ।

fight, f**k, flee এর অপশনে আমি ১৭ বয়সেই ২ নম্বরটা বাছাই করেছি। কিন্তু ১ নম্বরে যারা টিক দেয় অথবা ৩ এ, তাদের চিন্তাটাও সবসময় বুঝতে চেয়েছি। ফাইটে পরাজিতরাই টিকে থাকবার প্রয়োজনে উস্কানি মার্কেটিং করে, বিজয়ীদের মার্কেটই খুঁজে নেয়।