২০২১ শেষ হয়েছিল সঙ্গীতা আপুর কান ডলা খাওয়ার মাধ্যমে, তাতে ২০২২ প্রায় পুরোটাই ট্র্যাকে ছিলাম। ২০২২ এর শেষ সূর্যাস্তেও সমপাতিত হলো পূর্ববছর, অভিন্ন কার্যকারণে।
২০২৩ কি পারবে অতিক্রম করতে ২০২২ কে?
সংরক্ষণ-সঞ্চয় উভয়ক্ষেত্রেই আমার অদক্ষতা এবং অর্বাচীনতা প্রমাণিত ফ্যাক্ট। চলতি পথে পেছন ফিরে তাকানো অপছন্দের কাজ। বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়রা একত্রিত হলে সময়ের বড় অংশই অপচয় করে স্মৃতিচারণে। ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এর চাইতে স্থবির অনুভূতি হওয়া সম্ভব নয়। আমি ক্রমাগত অনাগত দিনের সম্ভাবনা এবং অনিশ্চয়তাকে উপভোগের পক্ষে, যে দিন যায় তা ধুয়ে মুছে সাফ করে ফেলি। সংরক্ষণ এবং প্রযত্নশীলতায় অনাগ্রহের পেছনে এই প্রবণতার সংযোগ থাকতে পারে।
সঙ্গীতা আপু স্যুভেনির হিসেবে উপহার দিল একটি মানিপ্ল্যান্ট গাছ। যদি ৭৯ দিন এটি রক্ষণাবেক্ষণে সমর্থ হই ধরে নেয়া যাবে নিজেকে একটু অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে এক্সপ্লোর করা হলো। না পারলে চ্যালেঞ্জে পরাজিত।
ফলাফল জানতে অপেক্ষা করতে হবে ২০ মার্চ পর্যন্ত!
ইতোপূর্বে বহুবার লিখেছি আমার চিন্তা-কর্ম এবং আচরণের পেছনে অন্তত ২ হাজার মানুষের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে, তবু সুনির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তির কন্ট্রিবিউশনকে বলি স্ফূলিঙ্গ!
সঙ্গীতা আপুর সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম ২০ বয়সে। ইঞ্জিনিয়ারিং, সামাজিক স্ট্যাটাস, পারিবারিক সম্পর্ক, প্রাচুর্য কোনোকিছুর প্রতিই মোহাবিষ্ট হবো না, অনেকে যেমন বায়োমেডিক্যাল ল্যাবে দেহদান করে, আমিও দেহদান করেছি লেখালিখি আর লিসেনিংয়ে, জগত রসাতলে যাক অথবা আমাকে গোল্লায় পাঠাক, লক্ষ্যচ্যুত হওয়া চলবে না—– এটাই ছিল ২০ বয়সী হিমালয়ের মনোজগত।
সেই প্রখর আর কঠোর সংকল্পলের তারুণ্যে হাইপার ক্যারিয়ারিস্টিক মানুষদের গ্যালাক্সি বুয়েটে একজনের সম্বন্ধে জেনেছিলাম সে ছবি আঁকে, নাচে, গান গায়, আবৃত্তি করে। অনেকেই ছিল এমন, কিন্তু যে কোনো প্রথমের প্রতি কিছুটা বাড়তি উচ্ছ্বাস কাজ করবেই। ডিপার্টমেন্ট এক হওয়ায় তার সম্বন্ধে জানাটা সহজ হয়েছিল। তার সঙ্গে সমগ্র বুয়েটজীবনে স্মরণযোগ্য কোনো স্মৃতি নেই, তবে তখনই নিশ্চিত হয়েছিলাম ভবিষ্যৎ ক্রিয়েটিভ জার্নিতে জ্বালানী কিংবা ইন্টেলেকচুয়াল ক্যাপিটাল যোগান দিতে সে একজন ‘এনজেল ইনভেস্টর’ হতে যাচ্ছে।
তবে এনজেল ইনভেস্টমেন্ট কনসেপ্ট সম্বন্ধে যথেষ্ট ধারণা না থাকলে আপনি ভুলের সাম্রাজ্যে বিভ্রান্ত নৃপতি।
মনে মনে মনকলা খেলি চলুন।
আপনি ৪০ বছর একভাবে জীবন কাটিয়ে দেয়ার পরে জানলেন শ্রীমঙ্গলে আপনার নামে ৩০০ বিঘা জমি রয়েছে, জনৈক সৈকত আহমেদ কৃতজ্ঞতাবশত স্থাবর-অস্থাবর সমুদয় জমি আপনার নামে উইল করে দিয়েছে। সৈকত আহমেদ আপনার স্বল্প পরিচিত, বার কয়েক আলাপ হয়েছে, নাথিং সিগনিফিক্যান্ট।
যে কোনো স্বাভাবিক চিন্তাগতির মানুষ মন্তব্য করবে আপনি বিপুল জমি পেয়ে গেলেন without doing anything, আপনিও একই প্যাটার্নে ভাববেন- ‘মোটিভ কী বেটার’, অথচ এমন হতেই পারে সৈকত আহমেদ হ্যালুসিনেশনবশত ভাবে ওই জমিগুলো আদতে আপনার থেকে বর্গা নিয়েছিল’!
সঙ্গীতা আপুর কন্ট্রিবিউশন মেকানিজমকে অনুরূপ মেটাফরযোগে ব্যাখ্যা করা যায়। ইমাজিনেশন আদতে স্বনিয়ন্ত্রিত হ্যালুসিনেশন।
আমি কি তার শিল্পীসত্তার প্রতি মুগ্ধ? নাহ, কারণ তার শিল্পকর্ম দেখিইনি কখনো। আর্টিস্ট হিসেবে সে কোন স্তরের এর চাইতে আর্টিস্ট হিসেবে সে কেমন হলেও হতে পারে, সেই স্বনির্মিত হ্যালুসিনেশনই মূলত প্রভাব প্রাচীর গড়েছিল। যদি অন্তত ৫০ জন থিংকার বা বৈজ্ঞানিকের লাইফস্টাইল সম্বন্ধে জানাশোনা না থাকে, প্রভাব প্রাচীরের গল্পটাকে আপনার ফাঁপরবাজি মনে হতে বাধ্য, কিংবা বলতে পারেন সবকিছু মাথার উপর দিয়ে গেছে। কিংবা প্যারানরমাল অভিজ্ঞতা হিসেবেও ভাবতে পারেন। এই যে ক্রিকেটার লিটন দাস রান করলে পুরস্কার বাবদ প্রায় লাখ টাকা খরচ করে ফেললাম, আমি খুব জানি সে মুশফিক-তামিমের চাইতে সামান্য উন্নত কিন্তু কোহলি-রুটদের তুলনায় বহুযোজন পিছিয়ে থাকা একজন, সে রান করলে আমি কেন ফতুর হব, আমার মোটিভ কী! যতদিন না এই জট না খুলতে পারছেন, বিভিন্ন ক্যারেক্টারকেন্দ্রিক আমার ইমাজিনেশনকে নিজেদের ফ্রেমওয়ার্ক দিয়ে জাজমেন্টে না যাওয়াই সমীচিন!
২০২৩ সাল নতুন কোন চ্যালেঞ্জ আর পরিস্থিতি নিয়ে অপেক্ষমান জানা অসম্ভব। প্রাইম নম্বরের বয়সগুলো আমার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ হয় সাধারণত, এবছর স্পর্শ করব ৩৭, থ্রিল কিঞ্চিৎ বেশি। স্বনির্মিত হ্যালুসিনেশনে তৈরি হচ্ছে কাজকর্ম আর চিন্তার নকশা, তার ৭৯ শতাংশ বাস্তবায়িত হলেও বর্ণিল একটা বছর কাটার কথা।
সঙ্গীতা আপুর প্রতি আমার ইমোশনের যে ধরন তাতে বছরে ৫ থেকে ৭ দিন দেখা হওয়া উচিত আমাদের। গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক দেখা হয়েছে ২০২২ এ, তাও টেনেটুনে ৩ দিন! নতুন বছরে কি প্রথমবারের মতো পূর্ণ হবে ৫ দিনের লক্ষ্যমাত্রা? হোক বা না হোক, সারা বছর কেটে যাক যেমনই, শেষ দিনটা সঙ্গীতা আপুর থাকুক, পরের বছরের ইশতেহার তৈরির অনুঘটকস্বরূপ!