আমার জীবনে অফট্র্যাক মানুষের প্রভাব এতো বেশি যে, প্রায় প্রত্যেক মানুষকে দেখলেই অফট্র্যাক মনে হয়, কিন্তু নিজস্ব ব্যর্থতায় হয়তোবা তার অফট্র্যাক সত্তাটিকে উন্মোচিত করতে পারি না।
অফট্র্যাক বলতে কোন্ ধরনের মানুষ বোঝাচ্ছি? সহজ ভাষায় বললে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যাদের উদ্ভট, তারছিঁড়া বা পাগল মনে করে সেই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষগুলোকে আমি বলি ‘অফট্র্যাক’। এই লাইনের পর শৌখিন মানসিকতার প্রচুর তরুণ বা তরুণী দাবি করে বসবে তাদের মা-বাবা, বা বন্ধুমহল তাদের ক্রমাগত ‘পাগল’ বা তারছিঁড়া বলে দুকথা শুনিয়ে দেয়। স্যরি টু সে, বিষয়টা এতো সরল নয়। পরিণতির ভয় নেই, মানুষের নির্বিচার অপমানে আদ্যন্ত ভাবলেশহীন থাকা, এবং শোক-সুখের ঊর্ধ্বে থেকে নিজেকে চালিত করা, এটা কঠিন তপস্যার ব্যাপার। আপনি বলতে পারেন, মানুষের কথায় আপনার কিছুই যায়-আসে না, যা ভালো লাগে তা-ই করি। উল্টোভাবে ভাবুন, এ জীবনে কতজন মানুষ আপনাকে অপমান করেছে? যদি সংখ্যাটা বলতে পারেন, তাহলে ধরে নিতে পারেন আপনি মুখে কথা বলা লোকের দলে। কারণ, অফট্র্যাক টাইপ মানুষ হলে আপনার মান-অপমান বোধই কাজ করার কথা নয়, আপনার একটাই কথা ‘হু কেয়ারস, হোয়াই কেয়ারস’? অপমানের রেফারেন্স দিতে পারলে তো সেটা আপনার মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
৫-৬ বছর বয়সের গল্প বলি। সেসময়ে আমার বাবার কাছে ২ জন মানুষ আসতো। একজনকে ডাকতো ‘তারু পাগল’, অন্যজন ‘পেনশন চাচা’। দুজনেরই বোধ-বিবেচনা খুবই কম ছিলো, কিন্তু আমার বাবা সেই ২ জন মানুষকে নিয়ে নানাভাবে মজা করতো, অন্যরাও মজা পেতো। আমার বাবা জীবনে বহুবার পেশা বদল করেছে, সর্বশেষ পেশা বোধহয় ওকালতি; তার আগের পেশাগুলো আমার স্মৃতিতে নেই। ওকালতির কারণেই আমাদের বাড়িতে প্রচুর মানুষের আনাগোণা থাকতো, ৯৫ সালে আম্মুও ওকালতিতে ঢোকায় মানুষের আনাগোণা বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। তাদের প্রায় বেশিরভাগের সাথেই আমি কথা বলেছি, বা তারা কী গল্প করে সেসব শুনেছি, কিন্তু ৫ বছর বয়সের সেই তারু পাগল আর পেনশন চাচা এর স্মৃতি এখনো ভুলিনি। অন্য সব মানুষের থেকে তাদের আলাদা করতে পারি অনায়াসেই। আমার অফট্র্যাকপ্রীতির প্রারম্ভিক পর্বে অবদান রাখা সেই মানুষ দুজনকে এখন আমি নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি, যা ঘটেনি সেটাকেও ঘটনা বানিয়ে বিশ্বাস করতে চাই এমনটা সত্যিই ঘটেছিলো। যেমন, পেনশন চাচা কে একটা পদক দেয়া (লোকটা আরও ২০ বছর আগেই মারা গেছেন), এটা এতোবার মাথায় আসে, মনে হয় সত্যিই দিয়ে ফেলেছি।
৯৫ সাল, আমরা ততদিনে ঘিওর ছেড়ে মানিকগঞ্জে চলে এসেছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের আন্দোলন চলছে এবং বেশ ধরপাকড় শুরু হয়েছে। সেসময় আমাদের দুরসম্পর্কের এক আত্মীয় আমাদের বাসায় আত্মগোপন করে। অস্ত্র মামলা, চাঁদাবাজি, মারমারিসহ অনেকগুলো মামলা ছিলো তার নামে; গা ঢাকা দিতে আমাদের বাসায় উঠে। সারাদিন বাসায় থাকতো, রাতে বাইরে বের হতো। বাসায় ফিরতো রাত দশটা-এগারোটার দিকে, ফেরার সময় বেশিরভাগ দিনই ফেনসিডিল অথবা গাঁজার নির্যাস নিয়ে আসতো। সেই লোক বয়সে আমার চাইতে প্রায় ১৫-১৬ বছরের বড় ছিলো, কিন্তু তার সাথে নানারকম দুষ্টুমি করতাম, আমাদের দুই ভাইকে পড়াতো, আমি পড়ায় অনাগ্রহী থাকায় তার নাম দিয়েছিলাম ‘পাজি মাস্টার’। তার সাথে গল্প করা সূত্রে আমার লেখালিখির আগ্রহ তৈরি হয়েছে, তার হস্তাক্ষর সুন্দর ছিলো, সেটা রপ্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি; অর্থাৎ চাঁদাবাজ সেই মানুষটিই আমার চিন্তাভাবনা অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করেছে, এবং আবাসন সংকটের কারণে আমাদের বাসায় অবস্থানের পুরো ২-৩ মাস সময়টুকুই তার সাথে একই বিছানায় ঘুমিয়েছি। এই লোককে পুলিশ খোঁজে কেন, এটা তখনো মাথায় ঢুকতো না, এখনো ঢুকে না। আমাদের বাসায় অবস্থানকালেই সে আত্মসমর্পণ করেছিলো, কয়েক মাসের জেল হয়েছিলো বোধহয়।
এসএসসি পরীক্ষার পর এলাকার এক বড় ভাইয়ের সাথে ঘনিষ্ঠতা হয়, যে কিনা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল বেশ কয়েকবছর আগে। নটরডেম কলেজে পড়তো, এসএসসিতে ৮৫০ এর বেশি নম্বর পেয়েছিল, কলেজ বন্ধের সময় এলাকায় এসে প্রেম রোগের শিকার, এবং অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে ইন্টারপরীক্ষার সময় বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে নিরুদ্দেশ হওয়া; কয়েকদিন পর প্রেমিকা কাম স্ত্রী সমেত ধরা পড়ে সালিশের মুখে পড়া, এবং অন্যান্য মানসিক আঘাতের প্রেক্ষিতে ভারসাম্য হারিয়ে পড়াশোনার সেখানেই ইস্তফা দেয়া। এসবই মানুষের মুখে শোনা গল্প। আমি তাকে যখন চিনি ততদিনে সে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ফিরোজকে হত্যার মহাপরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত- ‘একটা সাপকে ফিরোজের চামড়া ফুটো করে ঢুকিয়ে দেয়া হবে, সাপের মুখে অক্সিজেন থাকবে যাতে না মরে, সাপ ফিরোজের সারা শরীরে ঘুরে বেড়াবে’! কী অদ্ভুত। সেই ভাইয়ের মুখেই জেনেছিলাম, নটরডেম কলেজে কী অদ্ভুত নিয়মে পরীক্ষা হয়, কুইজ, প্র্যাকটিকাল, ক্যান্টিন। বায়োলজি বাদ দিয়ে পরিসংখ্যান নেয়া যায়, এটাও তার মুখেই শুনেছিলাম। ব্রায়ান এডামস, স্ট্যানলি কিউব্রিকের নাম জানতাম না, সে বলেছে; অঞ্জন দত্তের ‘জংলা পারের ঢাকেশ্বরী শাড়ি’ কিংবা ‘ মেরিয়েন’ গানগুলোর খবরও তার কাছে পাওয়া। অদ্ভুত সব আইডিয়া তার কাছ থেকে পাওয়া, তার সাথে মানুষের বাসায় গিয়ে অপমানিত হওয়ার অভিজ্ঞতাও হয়েছে, বয়সে ৮ বছরের বড়, এবং আমি মাত্র এসএসসি দিয়েছি, তবু তার সিগারেটের টাকা আমাকেই শোধ করতে হতো; তার সাথে আড্ডা দেয়ার কারণে মুরব্বিদের বহু উপদেশনামা শুনতে হয়েছে, তবু আমি জানি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা সেই মানুষটি আমার মনন গঠনে কত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বুয়েটে হলে ওঠার পর যার সাথে আমার সবচাইতে ঘনিষ্ঠতা হয় সে আমার চাইতে ৫ বছরের সিনিয়র। ২৬ ঘন্টা ঘুমানোর বিরল রেকর্ড করা মানুষটার অদ্ভুত শখ ছিলো একুইরিয়ামে কচ্ছপ পোষা। নিজে গোসল করা, দাঁত ব্রাশ করার মতো প্রাত্যহিক কাজগুলোতে চরম উদাসীন ছিলো, কিন্তু কচ্ছপকে গোসল করানোতে দারুণ আন্তরিক। তার সাথে জীবনে কোনো বিষয়েই একমত হইনি, সর্বসময় তর্ক করেছি, এবং বিরুদ্ধ মতাদর্শের মানুষের সাথে মেশার গুণ আর শক্তি রপ্ত করার পেছনে যাবতীয় কৃতিত্ব এই মানুষটিকে দিতে চাই। তার কচ্ছপ নিয়ে ইংরেজিতে একটা কবিতা লিখেছিলাম, পুরস্কারস্বরূপ স্টার হোটেলে আনলিমিটেড খাওয়াদাওয়া জুটেছিলো। মুভি দেখার প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি হওয়ার পুরোটাই তার কৃতিত্ব। প্রায় প্রতিরাতে তার সাথে গড়ে ২টা মুভি দেখা হতো, এমনকি হল ছেড়ে দেয়ার পরও টানা ৫ বছর নিয়মিত সে হলে আসতো, এবং অফুরন্ত গল্প-গুজব চলতো। অনুতপ্ত হওয়া আমার স্বভাবে নেই, যত বড় অন্যায়ই করি অনুতাপ হয় না, তবু অদ্যাবধি জীবনে মাত্র যে ৩টা কাজের জন্য আমি অনুতপ্ত হয়েছি, তার অন্যতম এই মানুষটির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা, এবং এতোটাই তুচ্ছ কারণে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে, সেটা ভাবলে নিজের চিন্তাশীলতাকে প্রহসন লাগে। অথচ, আমার বিকাশে এই মানুষটির অবদান অপরিসীম।
বুয়েটের নির্ধারিত সময় শেষে অতিরিক্ত দেড় বছর যে থাকতে হয়েছিলো পুরনো পাপের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ, সেই দুর্বিষহ দিনে ঘনিষ্ঠতা হয় জনি ভাইয়ের সাথে। তার সাথে বুয়েটে ঢোকার কিছুদিন পরই পরিচয় গড়ে উঠে, কিন্তু ঘনিষ্ঠতা বুয়েটের নির্ধারিত সময় পার করে। সেও ল্যাগার, আমিও তা-ই; ল্যাগার-ল্যাগার পরমাত্মীয়।
আমার সমৃদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে জনি ভাইয়ের কি প্রত্যক্ষ বা প্রচ্ছন্ন কোনো অবদান আছে? সম্ভবত না। তবু এই লোকটিকে আমি যথেষ্ট পছন্দ করি মূলত কনভারসেশনাল স্যাটিশফেকশন গ্রাউন্ডে। ‘আনন্দের জন্য খরচ করবো প্রতিটি শব্দ’- এটা আমার জীবনের ব্রত, কিন্তু এটা পুরোপুরি রক্ষা করতে পারি পরিবারের বাইরে ৩ জন মানুষের ক্ষেত্রে। ১. বন্ধু আরমান ২. পিঁপড়া টিমের সনেট এবং ৩. জনি ভাই। যেমন জনি ভাইকে ফোন করলে সে প্রথম ৬-৭ বারে রিসিভ করবে না এটা নিশ্চিত জেনেও হুট করেই ফোন করি, এবং ক্রমাগত দুষ্টুমি মুডে থাকি। কখনো তাকে পদক দিই, হিপোক্রেট ক্লাবের ভাইস-প্রেসিডেন্ট বানাই (প্রেসিডেন্ট আমি স্বয়ং), শখের গান চ্যানেলের কার্যক্রমে যুক্ত করি, এবং অপদস্থ করার প্রক্রিয়া চলতেই থাকে। তবু তার সাথের আলোচনায় আমার ফুসফুসে প্রচুর বিশুদ্ধ অক্সিজেনের যোগান নিশ্চিত হয়।
তাকে কি অফট্র্যাক বলা যায়? পুরোপুরি নয়, কারণ অফট্র্যাকের অধিকাংশ শর্তই সে পূরণ করে না, তবু আমার কল্পনায় তার একটা চরিত্র আমি নির্মাণ করে নিয়েছি, সেই মানদণ্ডে তাকেও অফট্র্যাকে রাখা যেতে পারে?
আমি কি অফট্র্যাক? সম্ভবত না। আমি তো ক্যালকুলেটিভ পাগল। সুতরাং, আমি প্রথম শর্তেই বাদ। যুদ্ধে হারার ১০১ টা কারণ ছিলো, ১ নম্বর কারণ হলো বন্দুকে গুলি ছিলো না- এই যদি হয় অবস্থা তাহলে আর বাকি ১০০ টা না শুনলেও চলে।
তবু মানুষ আসলে অফট্র্যাক হয় কেন, এবং এই মানুষগুলোকে নিয়ে তার পরিবারের মানুষেরা কতোটা অসুখী সেটা বলার অবকাশ রাখে না। এবং চূড়ান্ত বিচারে, সোসাইটিতে এদের কন্ট্রিবিউশনও সেভাবে নেই। এরা অনেকটাই কচুরিপানার মতো ভাসমান, পরাশ্রিত।
বিচ্ছিন্নতাবোধ তাদের এতোটাই প্রবল আর প্রকট যে, কোনোকিছুই তাদের মধ্যে সংবেদন জাগায় না। এরকমটা কেন হয়? প্রায়ই মনে হয়, দায়িত্বভীতি থেকেই এই সংকটের সূচনা। তাদের মনের ভেতরে বসবাস করে লালনফকির, কিংবা গৃহত্যাগী গৌতম বুদ্ধ, কিন্তু তারা যাপন করে অন্য এক জীবন। লালন আর বুদ্ধের সংমিশ্রণে সৃষ্ট বুদ্বুদে তারা এক বৈকল্যের ভেতর দিয়ে যায়, এবং সময় বহতার সাথে সাথে সেটি কেবল মেরামত অযোগ্য হয়ে উঠে। ‘মন আমার দেহঘড়ি, সন্ধান করি- কোন্ মিস্তরি বানাইয়াছে; একখান চাবি মাইরা দিছে ছাইড়া,জনম ভইরা চলতে আছি’- এটাই এই বৈশিষ্ট্যের মানুষগুলোকে বুঝবার জন্য শ্রেষ্ঠতম টিউটোরিয়াল।
‘হোয়াই সো সিরিয়াস?’- এটা খুব জনপ্রিয় একটা ট্যাগলাইন। এর প্রস্তাবক কে জানা নেই আমার, তবে যে-ই হোন, অফ ট্র্যাক মানুষের একদম মোক্ষম জায়গাটা তিনি ধরতে পেরেছেন। এতো সরল অথচ সাংঘাতিক গভীর লাইন সচরাচর পাওয়া যায় না। মানুষের মধ্যে সিরিয়াসনেস না থাকলে তার কাছ থেকে কিছুই প্রাপ্তিযোগ ঘটে না, এটা প্রমাণিত সত্য। আপনি তার প্রতি বিরক্ত হচ্ছেন, তার কারণে শেষ হয়ে যাচ্ছেন, সেটা সে বুঝবেই না, বা বুঝলেও প্রতিক্রিয়াশূন্য। এই মানুষগুলোকে সহ্য করাটা ঈর্ষণীয় গুণ মনে হতে পারে, কিন্তু সহ্য করাটা আদৌ কি দরকার? এসব প্রশ্নের যথার্থ উত্তর হয় না, তবু উত্তর খুঁজেই কেটে যায় বেলা।
আমি জীবনে ২৫০০+ মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছি, তার মধ্যে ১৫০০ এর বেশিই হবে চাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা, রিকশাওয়ালা, ফকির, ঝালমুড়িওয়ালা, মিছিলের মানুষ প্রভৃতি প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষ; ফলে এস্টাব্লিশমেন্ট, স্ট্যাটাস, সিকিউরিটি প্রভৃতি ব্যাপারগুলোর প্রতি একদম শৈশবকালীন বিকর্ষণ আমার, এবং সেটা এতোটাই প্রকট হয়ে উঠেছে, সারাজীবনেই এর প্রভাবমুক্ত হতে পারিনি। আমার মধ্যে ‘এম্বিশন’ ধারণাটাই ঢুকেনি। এজন্য আমার কন্ট্রিবিউশন জিরো, এচিভমেন্টও জিরো; একটা ‘পরমশূন্য’ আবহ নিয়েই জীবন পার করে দিচ্ছি।
অফট্র্যাক মানুষদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করার কারণ কী? ভেবে দেখা হয়নি, বা এখন ভেবেও বের করতে পারছি না। এটা আসলে শ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই স্বতঃস্ফূর্ত। অফট্র্যাক মানুষদের সাথে মেলামেশার কারণে আমি সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, জাগতিক অর্জনও কিছু নেই, কিন্তু নিজেকে বরাবরই সুখী মানুষ মনে হওয়ার যতগুলো কারণ পাই, তার মধ্যে এটা অবশ্যই টপ থ্রি তে থাকবে।
বন্ধুমানুষ চমক হাসানের সাথে কথা হলো সম্প্রতি। এককালে তার সাথে একটা গান করেছিলাম, ‘শেষ বলে কিছু নেই’; সেটা মোটামুটি পরিচিতি পেয়েছিলো; ‘একটুখানি স্পেস চাই’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘উচ্ছ্বাসের উচ্চতা’, ’২২ গজে সমুদ্রচোখ’, ‘লাল পিঁপড়ের কল্পনা’ এরকম ৫টা লিরিক নিয়েও তার সাথে স্বল্পবিস্তারে কাজ হয়েছিলো, এগোয়নি আর। চিন্তা করছি, মাসে ১টা লিরিক লেখার চেষ্টা করবো। প্রথম গানটা অফ ট্র্যাক মানুষ নিয়েই হোক, যদিও নচিকেতা বহুবছর আগেই ‘আমি ভবঘুরেই হব, এটাই আমার এম্বিশন’- এরকম একটা বাস্তববাদী গান লিখে ফেলেছেন, এবং অনুপম রায় ‘তুমি নামতে নামতে, থামবে কোথায়’ গানের মধ্যেও বার্তা দিয়ে গেছেন, তবু ‘অফট্র্যাক মানুষ’ থিমে একটা লিরিক লিখতে চাই এপ্রিল মাসে। এবং নিশ্চিত করে জানি, অফট্র্যাক থিমে লিখতে চেয়ে যা শুরু করবো, এবং চূড়ান্ত লিরিক যা দাঁড়াবে- দুয়ের মধ্যে বিষয়গত মিল থাকার সম্ভাবনাই নেই।
চিন্তাপ্রক্রিয়াটাই বোধহয় এমন।