ধরা যাক, খ একজন সাবেক ক্রিকেটার যিনি জাতীয় দলের হয়ে ২টি ওয়ানডে এবং ১টি টেস্ট খেলেছেন। তার সাথে হাস্যরস এবং সিরিয়াসনেস এর সমণ্বয়ে একটু খোশগল্প সাজাতে চাই। যেহেতু নিউজিল্যান্ড সিরিজ চলছে, এই প্রসঙ্গেই বেশি গল্প হবে, তবে এর বাইরেও প্রশ্ন থাকতে পারে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ তো নিউজিল্যান্ডের সাথে ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ হলো
খ: এ উপলক্ষ্যে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং জেলা পুলিশ সুপার পৃথক পৃথক বাণী দিতে পারতেন, ১দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা যেতে পারতো এবং দোকান-পাট অর্ধবেলা বন্ধ রেখে তামীম-সাকিব আর তানভীর হায়দারকে নিয়ে খিস্তি খেউড় করা উচিত ছিলো।
প্রশ্ন: নাটকীয় হয়ে গেলো না উত্তরটা?
খ: বাড়াবাড়ি তো আপনারাই করছেন। নিজেদের দেশে নিউজিল্যান্ডকে ২ বার হোয়াইটওয়াশ করলে সেটা যদি রেজাল্ট হয়, নিজেরা হোয়াইটওয়াশ হওয়াটাও তো রেজাল্ট। খেলা মানে তো খেলাই, দানে দানে ৩ দান। আমরা ২-১ এ এগিয়ে আছি। চিয়ার্স। আগের সফরগুলোতেও হেরেছি, কিন্তু তখন তো গিলেস্পি ডাবল সেঞ্চুরি করতো, দানিশ কানেরিয়া ৫ এর নামতা গুনে উইকেট নিতো, সেগুলো ধরলে হবে!
প্রশ্ন: তানভীর হায়দার, শুভাগত হোম এদের নিয়ে তো দর্শকমনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
খ: ফরহাদ রেজা বা শাহাদাত হোসেনের জায়গা নিলে দর্শক তো রাগবেই। শাহাদাতের হাইট ৬ফুট৩ ইঞ্চি; আপনাদের তানভীর কতটুক!
প্রশ্ন: এর সাথে হাইটের কী সম্পর্ক?
খ: সম্পর্ক তো আপনারা খোঁজেন। একটা সহজ প্রশ্নের উত্তর দিন, যে ছেলেটা ব্যাট বল হাতে নিয়েছে সে যদি জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পায়, সে কি বলবে, ভাই আমি বাজারে যাব, ৩ কেজি পুদিনা পাতা কিনতে হবে, বোরহানি বানাতে লাগবে? সে তো খুশিমনে খেলতে নামবেই। দোষটা তো তাদের যারা এদের সুযোগ দেয়। আপনি দেখেন, প্রত্যেক সিরিজেই ১-২টা বিতর্কিত সিলেকশন থাকেই, পত্রিকাওয়ালারা সেটার ফায়দা নেয়, পাবলিককে ক্ষেপিয়ে তোলে। এই যে তানভীর, বিপিএলে মাত্র ১টা ম্যাচ খেলেছে, এই তথ্য চায়ের দোকানে বসে কাপ খালি করা ছোকড়া জানলো কীভাবে? ব্যাপারটা কি এমন যে তানভীরকে নিয়েছে বলেই হেরেছে? এরা তো খুবই নিরীহ গোছের খেলোয়াড়, যারা ৫০ ওভার ফিল্ডিং করা ছাড়া তেমন কোনো কন্ট্রিবিউট করতে পারে না। তবু দেখেন, নির্বাচক-কোচ যুগে যুগে এরকম খেলোয়াড় স্কোয়াডে রেখেই চলেছে। ৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর ম্যাচে নিয়ামুর রশিদ রাহুল নামে একটা খেলোয়াড়কে খেলানো হয়েছিলো; ওই ম্যাচের পরে সে কোথায় চলে গেল? ফাহিম মুনতাসির সুমিত, আনোয়ার হোসেন, আলমগীর কবির, এহসানুল হক সেজান, আমিনুল ইসলাম ভোলা, মাজহারুল ইসলাম মৃদুল, শফিউদ্দিন বাবু, আহমেদ কামাল কর্নেল, অভিষেক টেস্টে খেলা বিকাশ রঞ্জন দাস, স্পিনার সাব্বির খান, কিপার সেলিম, মেহরাব জুনিয়র, মুশফিক বাবু…. দেখেছেন কত বড় লিস্ট? এরা কেন এসেছিল, কেন চলে গেল, জিজ্ঞেস করেন, কেউ বলতে পারবে না। তাহলে খামোখা, নির্দোষ প্লেয়ারগুলোকে দোষারোপ কেন? স্যার, লর্ড, দুধভাত কোটা. বিসিএস কোটা. হিন্দু কোটা, এইগুলো কি ইতর মানসিকতা নয়? পারলে বিসিবির কাছে জবাবদিহিতা চান, কারণ আপনারাই ভোক্তা, আপনাদের চাহিদা আছে বলেই বিসিবি ক্রিকেট সেল করে কোটি কোটি টাকা রেভিনিউ আর্ন করে। অথচ, কখনো নির্বাচকদের গালি দেন, কখনো খেলোয়াড়কে দোষ দেন, বিসিবির স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে ইন্টেলেকচুয়ালি কোনো কনফ্রন্টেশনে যান না। বিষোদগার করে তালি পাওয়া যায়, মিনিংফুল চেঞ্জ নিয়ে আসা যায় না।
প্রশ্ন: বিসিবিকে নিয়েও তো কম লেখা হয় না। আর লিখেই বা কী লাভ হবে বলুন
খ: পাপন সাহেবের স্যুটের দাম তো বাড়বে
প্রশ্ন: পাপন মানেই বিসিবি নাকি?
খ: আপনাদের ভাগতিকে তো সেটাই মনে হয়। আপনারা ভুলে যান, প্রেসিডেন্ট একটি পদমাত্র। আমার ধারণা মিডিয়া, পাপন সাহেব স্বয়ংও এই ভুলের বেড়াজাল থেকে বের হতে পারে না। পাপনের আগে লোটাস কামাল ছিলেন, আলী আসগর লবি ছিলেন, সাবের চৌধুরী ছিলেন। কিন্তু দেখেন, অযৌক্তিক খেলোয়াড় নির্বাচন সবসময়ই ছিলো, তাহলে আর প্রেসিডেন্টের নামে কী আসে-যায়। সমস্যাটা আসলে প্রোফেশনালিজম এবং অর্গানাইজড ব্রেইন ফাংশনের। ক্রীড়া সংগঠক আর রাজনীতিক, দুটো তো আলাদা ব্যাপার। ভেতর থেকে যার খেলাটার প্রতি আবেগ কাজ করে না, স্রেফ অর্থ আর ক্ষমতার মোহে পদ দখল করে থাকেন, সেইসব মানুষের কাছ থেকে কতটুকু কী আশা করেন আপনি। ক্রিকেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিষয়ে ১টা আর্টিকেল পড়েছেন জীবনে, সমগ্র বিসিবি ঘুরে এরকম মানুষ কতজন পাবেন বলেন দেখি! আন্তরিকতার চাইতেও এবিলিটির প্রশ্নটা ম্যাটারস। তবু মন্দের ভালো হিসেবেও অনেক কিছু হতে পারতো যদি ক্রীড়া সংগঠকদের অন্তত পলিসি মেকিংয়ের জায়গাটাতে সম্পৃক্ত করা যেত।
প্রশ্ন: পেসার হান্ট, বিপিএল এর মতো ফ্রাঞ্চাইজি লীগও তো আয়োজন করা হয়েছে
খ: আম্ব্রিন, আর চৌহানের মধ্যে কে বেশি ক্রিকেট বোঝে এটা নিয়েও একটা রিয়েলিটি শো আয়োজন করা উচিত ছিলো। কিংবা মারিয়া নুর কেন ক্রিকেট শো এর সঞ্চালক, এটা নিয়ে কেস স্টাডি কম্পিটিশন করা যেত।
প্রশ্ন: সাকসেসের ব্যাপারটা কিন্তু এভোয়েড করে গেলেন।
খ: থার্ড ডিভিশন এখনো ম্যাট এ খেলা হয় জানেন? ঢাকার বাইরের টার্ফের উইকেটগুলো দেখেছেন? বা লীগের ম্যাচগুলো দেখেছেন, এখনো বেশিরভাগ দল স্পিনার দিয়ে বোলিং ওপেন করায়। স্পোর্টিং উইকেট বলতে কিছু নেই, যারা আগামী দিনে ক্রিকেটার হবে তাদের খেলতে দিচ্ছেন ম্যাট এ, এই সিচুয়েশনে কাকে হান্ট করবেন, আর সেইসব হান্টেড প্রতিভাদের কাছ থেকে কী আশা করেন? শূধু ঢাকা শহরে, কয়টা মাঠ আছে যেখানে প্রোপার উইকেট পাবেন! ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ হওয়া উচিত দেশের সবচাইতে বড় আসর, কোন্ জেলা চ্যাম্পিয়ন হবে এটা একটা বিরাট প্রেস্টিজ ইস্যু। অথচ, ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে কারো হোধ-বোধই নেই। তাহলে বলেন, পেসার হান্টকে সাফল্য বলা কি উচিত হবে?
প্রশ্ন: আমরা প্রসঙ্গ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। বাংলাদেশের হোয়াইট ওয়াশের কারণ কী মনে হয়?
খ: নিউজিল্যান্ডে কিছুদিন আগে হওয়া ভূমিকম্প, সেটার ট্রমা থেকে খেলোয়াড়রা বের হতে পারেনি।
প্রশ্ন: এটা তো ক্রিকেটিয় যুক্তি হলো না
খ: একটা দল হেরে গেছে, কারণ অন্য দল জিতবে। ব্যাপারটা তো সিম্পল। হেরেও মুক্তি নেই দেখি। কন্ডিশন, মন্ডিশন, স্ট্যাট এইসব হাবিজাবিতে আমার আস্থা কম। যতদিন আমরা ২ জন পারফেক্ট ওপেনার, আর ৭, ৮ এ নির্ভেজাল অলরাউন্ডার না পাবো, আমরা মাঝেমধ্যেই হারবো, হয়তোবা কিছু কিছু জিতবোও। কিন্তু কোনো ধারাবাহিকতা বা কনসিসটেন্সি তৈরি করতে পারবো না। আমাদের ওপেনার হলো ইমরুল কায়েস, যাকে বোলিং করে বোলাররা আনন্দ পায় তার কন্টিনিউয়াস স্ট্রাগল করা দেখলে। আর ভাই ওপেনার যদি এজ, টপ এজ এ ৪ মারে বোলারের কনফিডেন্স কত বেড়ে যায় ভেবেছেন। তার এরকম স্ট্রাগল করা দেখে ওয়ান ডাউন ব্যাটসম্যানের নার্ভের উপর কীরকম প্রেসার পড়ে চিন্তা করুন। সে যদি ৭৯ রানও করে একদম ইনিংসের শুরুর মতো শেকি, এই ব্যাটসম্যান দিয়ে দলের কোন্ উপকারটা হবে? তামীম ইকবালকে আমাদের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান বলছেন, অথচ সে ইনিংস বিল্ড আপ করতে জানে না, সিঙ্গেলস এ খেলতে পারে না। ইনিশিয়াল মোমেন্টাম আসবে কীভাবে! আপনি যদি বলেন ইমরুলের বিকল্প কে, অনেস্টলি বলি, কেউ নেই। আমাদের দেশে এতো ওপেনার, অথচ ইমরুলকে রিপ্লেস করার মতো কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। সে ২০-৩০ রান করে, মাঝেমধ্যে ফিফটি করে, স্কোরবোর্ড দেখলে তাকে তো উপেক্ষা করতে পারবেন না। কিন্তু ভালোমতো চিন্তা করুন, কায়েস কীভাবে পুরোপুরি ব্যক্তিগত স্ট্যাটিসিটক্সনির্ভর খেলা খেলে। তার রান দলের সংগ্রহে যোগ হয় সত্যি, কিন্তু কায়েস ক্রিজে থাকা অবস্থায় এক মুহূর্তের জন্যও ভাবতে পারবেন না দল একটা স্টেবল পজিশনে আছে। রিয়াদ, তামীম, বা মুশফিক যদি দাঁড়িয়ে যান, মোটামুটি নিশ্চিত থাকা যায় দল এগিয়ে যাচ্ছে। একজন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে যদি এইটুকু রিলায়েবিলিটি আশা না করা যায়, সেই ব্যাটসম্যানকে বিক্রয় ডট কম এ বেচে দেয়া ছাড়া সত্যিই কি কোনো কাজে আসবে?
প্রশ্ন: লাস্ট ওয়ানডে দুটোতে তো ড্রাইভিং পজিশন থেকে হেরে গেল, ব্যাটিং কলাপসটাই কাল হয়ে দাঁড়ালো
খ: হেল্পার যদি গাড়ির ড্রাইভার হয়, এক্সিডেন্ট তো করবেই।
প্রশ্ন: হেয়ালি করছেন কেন?
খ: এটা হলে ওটা হতে পারতো, এইসব হাপিত্যেশ দিয়ে কোনো খেলা চলে না। আমরা দীর্ঘদিন সাকিবনির্ভর ছিলাম, এখনো তা-ই আছি, মাঝে কিছুদিন ট্রেন্ডটা সামান্য বদল হয়েছিল মাত্র। সাকিব ভালো ব্যাটিং করেছিলো বলে ইংল্যান্ডের ৩০০+ স্কোরকেও মনে হচ্ছিল ইজিলি চেজেবল। সাকিব এরকম গ্যাম্বলিং স্টাইলেই ব্যাটিং করে, কোনোদিন সফল হয়, কোনোদিন হয় না। যেহেতু সাকিবের গ্যাম্বলিং শেষ ম্যাচ দুটোতে কাজে লাগেনি, আমাদের মনে হচ্ছে ব্যাটিং কলাপস করেছে। মোসাদ্দেক, নুরুল, তানভীর- এরা কি ব্যাটিংয়ে এখনো নির্ভরযোগ্য বলার মতো হতে পেরেছে? সাব্বির ১ ম্যাচ ভালো খেললে ২টাতে ২০ এর নিচে স্কোর করবে, তাহলে রানটা আসবে কার ব্যাট থেকে? পুরো সিরিজে মাহমুদুল্লাহ ব্যর্থ। তাই এটাকে কলাপস না বলে সাকিবনির্ভরতার ফলাফল বলবো। শচীন দীর্ঘদিন এই যন্ত্রণা ভোগ করেছে, এখন করছে বিরাট কোহলি; আমাদের ক্ষেত্রে সেটা করছে সাকিব। একটা প্রমিজিং দল কখনো ইনডিভিজুয়াল পারফরমারের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠে না। এটা টক্সিক কালচার।
প্রশ্ন: সিরিয়াস প্রশ্ন, বাংলাদেশ কে ওয়ানডেতে রাইজিং দল বলা যায়?
খ: রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়ার দাবিকে কি যৌক্তিক বলা যায়। আরও সহজ করে বলি, নায়লা নাঈমের সাথে সাব্বির যে ওসকার এর বিজ্ঞাপন দিলো, কাজটা কি ঠিক হলো?
প্রশ্ন: কিসের মধ্যে কী!
খ: সবাই যদি জিওফ্রে বয়কট আর ইয়ান চ্যাপেলের স্টাইলে কথা বলতে শুরু করে, আমরা কই যাই বলেন তো! আমার ক্যালকুলেশনটা সহজ। ৭-৮ বছর আগে অপোনেন্ট টিম ২৫০ করে ফেললেই আমরা সমর্থকেরা আশা ছেড়ে দিতাম, বা আগে ব্যাটিংয়ে নামলে ২০০ করতে পারবো কিনা সংশয়ে থাকতাম। এখন দেখেন, ২৯০ চেজ করতে হলেও আমরা বলি ব্যাটিং ভালো হলে জেতা সম্ভব, বা ২৫০ এর নিচে স্কোর করলে বলি ব্যাটিং কলাপস করেছে। এই যে মাইন্ডসেট চেঞ্জ হয়ে গেছে, এটাকে কী বলবেন। সব ম্যাচ সমান সমান ফাইট দেবে, এটা তো ভিডিও গেম ছাড়া পসিবল না। ২০১২ সাল থেকেই আমাদের ক্রিকেটের প্যারাডাইম শিফট হচ্ছে। বয়কট সেজে বলতে পারেন, সাফল্য সব হোম সিরিজে, দেশের বাইরে কিছু করে দেখাক তারপর মানবো। নিশ্চিত করে বলতে পারি, সেটা করলে তখন উঠবে ওয়ানডেতে ভালো খেলাই সব না, টেস্টে সাফল্য না পেলে অর্জন বৃথা। কাজেই এই রেসের কোনো শেষ নেই। একটা দলে যখন ৫ জন ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডের ক্রিকেটার থাকে, সেটা দিয়েই বাকি ৬ জন এভারেজের ঘাটতি পূরণ করে দেয়া যায়। একটু গুনুন, সাকিব, মুস্তাফিজ, তামীম- ৩ জন আছে। মুশফিক, রিয়াদ, তাসকীন, রুবেল, সাব্বির এভারেজ মানের আছে। ইনজুরি জর্জরিত মাশরাফিকেও এভারেজ ধরতে পারেন। এই দলকে রাইজিং বলতে সমস্যা কোথায়। একজন ভালো ওপেনার, আর ৮ নম্বরে ইফেকটিভ খেলোয়াড় নিয়ে আসুন। কোথায় খেলবেন, চাঁদের দেশে খেললেও সেই টিম ফাইট দেবে।
প্রশ্ন: নাসিরের সমস্যা কী?
খ: রাত-বিরাতে পটল ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে চায়।
প্রশ্ন: Are you kidding me?
খ: আমাকে কি আপনার বেয়াক্কেল মনে হয়? নাসির হলো ওয়ানডের জন্য স্পেশালি ডিজাইনড সফটওয়্যার, অথচ আপনারা ছেলেটাকে পিওর ব্যাটসম্যান মনে করেন। কোচ-নির্বাচকরা তো গোস্বা করবেনই। নাসিরের ব্যাটিং ক্যালিবার ৮ নম্বরে ব্যাট করার জন্য পারফেক্ট। ওর আসল অস্ত্র তো নিয়ন্ত্রিত বোলিং আর সুপার এথলেটিক ফিল্ডিং। আপনারা ওর বোলিং নিয়ে কোনো কথাই বলেন না, শুধু ব্যাটিং। আরে ভাই, ২০১২ তে কিছু ইনিংস সে ভালো খেলেছিলো, কিন্তু একটু চোখ বন্ধ করে নাসিরের জাস্ট ১টা শট চিন্তা করুন, যেটা প্রোপার ব্যাটসম্যানশিপ দেখাতে পারে। অথচ, ইফেকটিভ বোলারটি যে কাজ চালানোর মতো ব্যাটিংও জানে, থেকে যায় উপেক্ষিত। একবার ভাবুন, ৮ নম্বরে যদি নাসির ব্যাট করে (আমাদের টেল এন্ডার পৃথিবীর দুর্বলতম টেল এন্ডার), আমাদের স্ট্রেন্থ কোন্ পর্যায়ে চলে যায়। আপনারা ভাবেন, নাসির ব্যাটিংয়ে নেমে রানের ফুলঝুরি ফুটাবে, নির্বাচকরা তো বাঁকা চোখে দেখবেই। আপনি তা না করে ৮ নম্বরে জেনুইন ব্যাটসম্যান খেলিয়ে বোলিং দুর্বল করে দিচ্ছেন। নাসিরের এই দুর্গতির জন্য আপনাদের সমর্থকদের ভুল মানদণ্ডই দায়ী।
প্রশ্ন: হাথুরুসিংহে সম্পর্কে যদি মূল্যায়ন করতেন
খ: তার থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে মাঠে যাওয়া উচিত না, আর যে পরিমাণ বেতন পান আরেকটু গর্জিয়াস চশমা ইউজ করা উচিত।
প্রশ্ন: এটা কেমনতর মূল্যায়ন!
খ: অন্য কিছু বললে তো বলবেন আবেগের বশে বলছি। আমার মনে হয়, হাথুরুসিংহে টাইপ কোচদের জন্য পারফেক্ট প্লেস হলো ঘরোয়া ক্লাবগুলো, যেখানে ইচ্ছামতো র ট্যালেন্ট নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা যাবে। একজনের ২-১টা ডেলিভারি বা শট দেখেই স্পেশাল ট্যালেন্ট মনে হওয়া আন্দাজে ঢিল ছুঁড়ার মতো ব্যাপার। কোচের কাজ যদি হয় স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্ট, সেখানে আসলে ‘দেখি কী হয়’ মনোভাব দেখানোর সুযোগ নেই, এটা পুরোপুরিই মেথডোলজিকাল ডিসিশন মেকিং প্রসেস। আমার ধারণা, সে দাবা ভালো খেলে, তাই আনঅর্থোডক্স মুভ দিয়ে কিস্তিমাত করার একটা প্রবণতা তার মধ্যে লক্ষণীয়। তার শাসনামলে বাংলাদেশ ওয়ানডেতে ভালো করেছে এটা স্পষ্ট, কিন্তু জার্গেনসনদের আমলে যে উত্থানের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে সেটার ক্রেডিট হাথুরুসিংহের একাউন্টে চলে যাওয়াটা একটু ইনজাস্টিস মনে হয়। খেলোয়াড়দের কনফিউজড করে দেয়া যদি ক্রেডিট হয়, আমি তাকে ১০০ তে ফুলমার্ক দেব। একটা জাতীয় ক্রিকেট দলের জন্য কোচের প্রয়োজন খুব বেশি নেই, কিন্তু স্ট্র্যাটেজি মেকারের ভূমিকা সাংঘাতিক। হাথুরু যাবেন, বাটাল আসবেন। কিন্তু প্রত্যেকে নিজেদের শাসনামলে দেশের ক্রিকেট ডেভেলপমেন্ট প্রসেসকে যেমন ইচ্ছামতো নাচান, এটা অন্য কোনো দেশে বিরলপ্রায়। অনেকটা ৫ বছর ধরে একটা ব্রিজ গড়ার পর, সেটাকে পুরোপুরি ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণের প্রক্রিয়ার মতো যা চলতেই থাকবে, কিন্তু পথচারীদের ব্যবহার উপযোগী হওয়া হবে না ব্রিজটির কোনোদিনও।
প্রশ্ন: টেস্ট আর টি২০ নিয়ে কী ভাবছেন?
খ: টেস্টে ৪ ইনিংস মিলিয়ে মমিনুল ১টা ৩০+ স্কোর করবে, তামীম ১টা ৪০, ১টা ৫০ করবে, কায়েস একটাতে ৫০ এর আশপাশে স্কোর করবে , সাকিব ৭-৮টা উইকেট পাবে।
প্রশ্ন: প্রেডিকশন জানতে চাইনি তো।
খ: যতদিন না ২০ উইকেট নেয়ার মতো বোলিং লাইন আপ গড়ে তুলতে না পারছি, টেস্ট নিয়ে আশা করার কারণ কিছু নেই। মমিনুল প্রথম ৬ টেস্টে যে এভারেজ বানিয়েছে, সেটা নিয়ে গল্পের অন্ত নেই। তাকে কেন ওয়ানডেতে নেয়া হচ্ছে না, এটা নিয়ে মায়াকান্নার মহোৎসব। অথচ, এই মমিনুল যে প্যাডের বল ছাড়া খেলতেই পারে না, পেস বোলিংয়ে বিরক্তিকর পর্যায়ের দুর্বল টেকনিক, সেটা এই সিরিজে ভালোমতোই চোখে পড়বে। শুধু ওর আউটগুলোর ধরনের দিকে একটু নজর রাখবেন। তামীম আর মুশফিক যদি কিছু করতে পারে, তাহলে হয়তোবা ৪র্থ দিন টি-সেশন পর্যন্ত ম্যাচ যাবে, নইলে সাড়ে তিন দিনেই রেজাল্ট হয়ে যা্ওয়ার কথা।
প্রশ্ন: মিরাজকে কেমন দেখলেন?
খ: লাজুক টাইপ ছেলে, আরেকটু লম্বা হলে হ্যান্ডসাম লাগতো
প্রশ্ন: পাত্র চাই বিজ্ঞাপনের ইন্টারভিউ নিচ্ছেন কেন?
খ: সোহাগ গাজী, আবুল হাসান রাজু এদের কথা মনে আছে আপনাদের। শুরুর দিকে তারাও কিন্তু হুলস্থূল বাঁধিয়েছিলো। মিরাজকে মূলত ব্যাটসম্যান হিসেবেই বেটার মনে হয়, যদি টিকতে হয় সেটার জোরেই টিকতে হবে। তার যা বোলিং দেখেছি, তাতে সোহাগ গাজীর চাইতে কোনোভাবেই এগিয়ে রাখা যায় না। নিতান্তই ফ্লুক হিসেবে ইংল্যান্ডের সাথেকার সিরিজে উইকেট পেয়েছে। অবশ্য, ওটা না হলে নিজ খরচে বাড়ি বানাতে হতো, ভালোই হয়েছে সেই হিসেবে।
প্রশ্ন: একটা কথা শোনা যাচ্ছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর মাশরাফি অবসর নিতে পারেন। এটা দলের ওপর কীরকম প্রভাব ফেলবে মনে হয়?
খ: শহরের সব বাস বন্ধ করে ঘোড়ার গাড়ি চালু করলে সেটা নগরবাসীরা যেভাবে নেবে সেরকম।
প্রশ্ন: মানে?
খ: প্রথমে মনে হবে বিশাল চেঞ্জ হয় গেছে, এরপর জীবনের তাগিদেই এডজাস্ট করে নেবে। পৃথিবীতে কেউ অপরিহার্য নয়, চলে যেতে হবে সবাইকেই। তবে মাশরাফিকে টিম ম্যানেজার হিসেবে ভাবতে পারে বিসিবি, ছেলেটার মধ্যে কিছু একটা আছে।
প্রশ্ন: রুবেলকে তো ১টা ওয়ানডেতেও খেলানো হলো না
খ: রবির বিজ্ঞাপনে রুবেলের অভিনয় (একেবারে ভাইঙ্গা দেব) যথেষ্ট সাবলীল ছিলো না।
প্রশ্ন: you are intolerable, শেষ প্রশ্ন, বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কী ভাবছেন?
খ: আতা গাছে তোতা পাখি ডালিম গাছে ম্যাও
ইঁদুর ঠিকই দৌড়ে যাবে, জানবে না তো কেউ……….