বাংলা চলচ্চিত্রের বাঁক বদলের ক্ষেত্রে তেজী সিনেমাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ বলা যায় কিনা সে সংক্রান্ত সংশয় চলে যায় যখন ফ্লপ নায়ক দিপুর ডিপজল হয়ে উঠার গল্পটা আলোচনায় চলে আসে।দীর্ঘদিন ধরে বেশিরভাগ সিনেমাতেই সাইডনায়ক হয়ে থাকা মান্নার একক নায়ক হওয়ার অভিযাত্রাতেও একে অন্যতম সংযোজন বলা যেতে পারে (যদিও একক নায়ক হিসেবে ইতিপূর্বে তার কয়েকটা হিট সিনেমা ছিলো)।
তবে এই নিবন্ধে তেজী সিনেমাকে টেনে আনার কারণ মান্না বা ডিপজল নয়, এর একটি আলোচিত গান- ‘ঘর নাই রে বাড়ি নাই রে, মা নাই রে বাপ নাই রে/ টাকা নাই রে পয়সা নাই রে, চাকরি নাইরে বেতন নাই রে/ এই তো জীবনধারা, বড়ো কষ্টে আছি আমরা বেকার যুবক যারা’/- এই গানে মূলনায়ক মান্নার পোশাকে বিশেষত্ব না থাকলেও পার্শ্বনায়ক মাথায় মাফলারের মতো কিছু একটা জড়িয়ে দৃশ্যায়ণে অংশ নেয়, যে কারণে সবার মধ্য থেকেও আলাদাভাবে নজরে পড়ে তাকে। সাইডনায়ককে আলাদাভাবে নজরে আনতে চাওয়ার পেছনে পরিচালকের কোন্ চিন্তাধারা কাজ করেছিলো জানা হয়নি, তবে সাইডনায়কটিকে মনে রেখেছিলাম।
১৯৯৮ এর দিকে আলমগীর, জয়াপ্রদা, ঋতুপর্ণা, রঞ্জিত মল্লিক, প্রসেনজিত, অভিষেক চ্যাটার্জিকে নিয়ে যৌথ প্রযোজনার এক সিনেমা নির্মিত হয়েছিলো, যার নাম ‘আমি সেই মেয়ে’। সেই সিনেমায় আলমগীর আর জয়াপ্রদার অংশ নেয়া ‘আগুনের দিন শেষ হবে একদিন’ গানটি এখনো জনপ্রিয়। সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে বাংলাদেশী নায়িকা কবিতার সাথে খুবই অগুরুত্বপূর্ণ কিছু দৃশ্যে স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন একজন দেশী অভিনেতা। তিনিই সেই মাফলারওয়ালা সাইডনায়ক।
লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান, আপনাদের সামনে আসছেন বাংলা সিনেমার তর্কসাপেক্ষে অবিসংবাদী সাইডনায়ক শাহীন আলম!
শাহীন আলমকে নিয়ে লেখার ইচ্ছা আরো বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই। হঠাৎ একদিন ফেসবুকে এক সংবাদে চোখ পড়ে যায়- গাউসিয়া মার্কেটে কাপড়ের দোকান দিয়েছেন নায়ক শাহীন আলম। তাৎক্ষণিক আরো এক সংবাদ মনে পড়ে, অর্থাভাবে যাত্রাপালা আর সার্কাসে নেচে বেড়াচ্ছেন আরেক কিংবদন্তী সাইডনায়ক মেহেদী। তারই প্রভাবে বহুদিন পূর্বে অপরাধচিত্র ম্যাগাজিনে পড়া আরেক সংবাদ মনে পড়ে- ‘কক্সবাজারে শুটিং করতে গিয়ে ফিটিং কেসে ধরা খেলেন নায়ক আলেকজান্ডার বো আর নায়িকা ময়ূরী’। (ফিটিং কেস কী জানতে হলে ঢাকার সুনির্দিষ্ট কিছু এলাকার চিহ্নিত আবাসিক হোটেলগুলোর কার্যক্রম সম্বন্ধে জেনে নিয়েন)।
এতোদিন আগে যে ইচ্ছার জন্ম তার বাস্তবায়ন দেরি হলো মাঝে বিজনেস ফিকশন হিউম্যানল্যাব (মৌন মানুষ মানসে) লেখায় নিমগ্ন থাকার দরুণ।
***
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে ১৯৮৬ সাল নানা কারণেই গুরুত্ব বহন করে। ৮০ এর দশকে নতুন মুখের সন্ধানে নামে এক ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম আয়োজিত হতো। ৮৬ সালে যে পর্বটি চলে সেখান থেকে আমরা পাই মান্না, সোহেল চৌধুরী, দিতি, অমিত হাসান, মিশা সওদাগর, এবং শাহীন আলমকে। (হয়তোবা আরো অনেকেই ছিলেন কিন্তু তাদের নাম মনে পড়ছে না এই মুহূর্তে)।গুগলসূত্রে জানতে পারি শাহীন আলম তার প্রথম ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন নায়িকা ববিতার বিপরীতে, যদিও সেটি শেষপর্যন্ত মুক্তি পায়নি।
সিনেমায় সাইডনায়ক কনসেপ্টটা এলো কীভাবে?
সালমান খান আর আমির খান যদি একই সিনেমায় অভিনয় করেন তাদের চরিত্রের গুরুত্ব প্রায় কাছাকাছি হতে হবে, নইলে তারা স্ক্রিন শেয়ার করবে না, অথবা কেউ একজন অতিথি চরিত্রে অভিনয় করবেন। কাজেই এখানে সাইডনায়ক বলতে থাকবে না কেউ। কিন্তু আমির খানের সাথে নবাগত বা কম জনপ্রিয় কোনো নায়ককে রাখা হলে সঙ্গতকারণেই তার চরিত্র সমগুরুত্ব পাবে না। সিনেমার ব্যবসার স্বার্থেই সে তখন সাইডনায়ক হিসেবে আখ্যায়িত হবে।
আমার পর্যবেক্ষণ হলো, নায়ক হওয়ার দীর্ঘ যাত্রায় সাইডনায়ক একটি ধাপ বা পর্যায়; বলা চলে ব্যাঙ হওয়ার পূর্বে ব্যাঙাচি দশা।ব্যতিক্রম বাদে নবাগত নায়কের উপরে শুরুতেই সাধারণত পরিচালক-প্রযোজকরা বাজি ধরতে চান না; তাকে গ্রুমিংয়ের অংশস্বরূপ প্রতিষ্ঠিত নায়কের সাথে ছোট্ট চরিত্রে সুযোগ দিয়ে দেখেন সে কতটা মানিয়ে উঠতে পারে। সেখানে পাশ মার্ক পেলে তাকে মূল নায়ক করে স্বল্পবাজেটের সিনেমা নির্মাণ করা হয়, যেটা মূলত তার ক্যারিয়ার নিয়ে প্রথম বাজি। যদি কোনো কারণে দর্শক গ্রহণ করে তার এক্সপোজার বদল হতে থাকে ধীরে ধীরে।
দেখা গেলো, সাইডনায়ক থাকা সিনেমাটি মুল নায়ক/নায়িকার গুণে হিট করেছে, তখন অন্য পরিচালকরাও তাকে ক্রমাগত সাইডনায়ক হিসেবেই নিতে থাকেন, টিকে থাকার প্রয়োজনে কেউ কেউ কম্প্রোমাইজ করতে বাধ্য হন, যে কারণে ১০-১৫ বছর পার করে ফেলেও ক্যারিয়ারে তার কোনো অবস্থান তৈরি হয় না। ততদিনে মার্কেটে চলে আসে আরো সাইডনাযক, যে কারণে তাকে আবারো টিকে থাকার প্রয়োজনে বাবা-চাচা-মামা-ভাইয়ের মতো চরিত্রাভিনেতা বনে যেতে হয়।
এই প্রবণতার সার্থক উদাহরণ বলা যেতে পারে কলকাতা বাংলার নায়ক অভিষেক চ্যাটার্জির কল্যাণ।তিনি হলেন কিংবদন্তী সাইডনায়ক। প্রসেনজিত, তাপস পাল, চিরঞ্জিত প্রমুখ নায়কের সাথে অজস্র সিনেমায় অভিনয় করলেও প্রায় প্রতিটিতেই তার ভাগ্যে জুটেছে সাইডনায়কের চরিত্র। এমনকি শুরুতে উল্লেখিতে ‘আমি সেই মেয়ে সিনেমায়’ ঋতুপর্ণার বিপরীতে নাচ-গান করেও আলমগীর বা প্রসেনজিতের চরিত্রের কাছে ম্লান হয়ে গেছেন; অনেকেই হয়তো বলতেও পারবেন না ওই সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন কিনা।
বাংলা সিনেমার আলিরাজকেও একজন প্রথিতযশা সাইডনায়ক বলা যেতে পারে। ‘আর যাবো না আমেরিকা/ পেলাম যখন তোমার দেখা, তোমার বাড়ির পাশে বাড়ি ভাড়া করে থেকে যাবো ঢাকা’- ৯০ এর দশকে যারা রেডিও শুনতেন তারা এই গান জীবনে অন্তত ৭বার শোনেনি এটা স্রেফ অবিশ্বাস্য। এই গান কোন্ সিনেমার জিজ্ঞেস করলে সেই সময়ের যে কেউই বলবেন ছায়াছবির নাম‘অচেনা’, শ্রেষ্ঠাংশে শাবানা, আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, চম্পা ও আরো অনেকে। আলিরাজ নামের সাইডনায়কও যে সিনেমার বিভিন্ন দৃশ্যে উপস্থিত হয়েছিলেন তা হয়তো খুব দর্শকই মনে রেখেছে। আলমগীর, কাঞ্চন কেউই আর সিনেমায় নিয়মিত অভিনয় করছেন না, কিন্তু চরিত্রাভিনেতা হিসেবে আলিরাজের দেখা মেলে এখনো।
সাইডনায়ক হওয়ার দৌড়ে অনেকদূর চলে গিয়েছিলেন যীশূ সেনগুপ্ত, টাচিং লাইন প্রায় ধরেও ফেলেছিলেন, অল্পের জন্য হেরে গেছেন। ক্যারিয়ারের একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত প্রতি কমার্শিয়াল সিনেমাতে সাইড নায়ক হওয়াই ছিলো তার নিয়তি; প্রসেনজিত, মিঠুন চক্রবর্তীর সাথে তো বটেই এমনকি সমসাময়িক জিত বা জুনিয়র দেবের সাথে স্ক্রিন শেয়ারের সময়ও তিনি সাইডনায়কই। এক পর্যায়ে টেলিভিশনে নিয়মিত এংকরিং করাই হয়ে উঠেছিলো তার মিডিয়ায় টিকে থাকার মাধ্যম। কিন্তু কনটেন্টনির্ভর অফট্র্যাক সিনেমার মার্কেটে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যাওয়ায় তার নিয়তির সূতো ছিঁড়ে যাওয়ার বদলে আরো রঙিন হয়ে উঠে।
শাহীন আলম না হতে পারলেন আলিরাজ, না অভিষেক চ্যাটার্জি, না যীশূ সেনগুপ্ত। তিনি সিনেমা থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে ফিরে এসেছেন গাউছিয়া মার্কেটে। কখনো নায়ক, কখনো সাইডনায়কের দোলাচলে থাকা অমিত হাসান পুরোদস্তুর ভিলেন হয়ে ফিল্মপাড়ায় টিকে আছেন, শাহীন আলম সেটাও পারলেন না। কিন্তু কেন। কী আছে অমিত হাসানের মধ্যে যা শাহীন আলমের মধ্যে ছিলো না? তিনি কি উইগ পরে চিবিয়ে চিবিয়ে সংলাপ বলতে পারতেন না আলিরাজের মতো করে?
কেন তিনি ফেরারী? কেন বাংলা সিনেমার দর্শকেরা মেহেদী, সোহেল, সুমনদের নাম জানলেও শাহীন আলমের নাম সেভাবে শোনেনি, কিংবা শুনলেও তার চেহারা চেনে না?
তবে একেবারে চেনে না এও সত্য নয়।
ঢাকার নিকটতম জেলাগুলোর তালিকা করলে প্রথমদিকেই থাকবে মানিকগঞ্জ। আজহারুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক তরুণ ‘মানিকগঞ্জ জেলার ইতিহাস’ শিরোনামে এক বই লিখেছে, ঘটনাক্রমে বইটি আমার হাতে এসে পড়ে। একটা অধ্যায় পাই, ‘মানিকগঞ্জের কৃতিসন্তান’; পৃষ্ঠা উল্টাতে গিয়ে চোখ ছলছল করে উঠে, হায় সেখানে যে ‘জনপ্রিয় চিত্রনায়ক’- এভাবেই উপস্থাপিত হয়েছেন শাহীন আলম!
সিনেমায় শাহীন আলমের জন্য বরাদ্দকৃত সময় খুব সামান্য। তিন পুলিশ,সাংবাদিক, নায়কের বন্ধু, নায়িকার ভাই- মূলত এই ৪টি চরিত্রেই বেশি সুযোগ পেতেন। নায়ক-নায়িকা জুটির মতো সাইডনায়ক হিসেবেও তিনি জুটি গড়েছিলেন। এক্ষেত্রে ২জন নায়িকার নাম বলা যায়- শানু, ময়ূরী। ঝুমকা, নদী, শাপলা প্রমুখদের সাথে বিচ্ছিন্ন কাজ করলেও ঝুমকার সাথে আরেক মেগাসাইডনায়ক মেহেদীর নামই বেশি শোনা যেতো।
শাহীন আলমকে কি বাংলা সিনেমার চেঞ্জমেকার বলা উচিত? শুনলে মনে হবে রসিকতা করছি, হ্যাঁ আসলেই করছি। কারণ,
শাহীন আলম সেই নির্দিষ্ট সময়ের প্রতিনিধি যখন নায়কের চাইতেও সাইডনায়কের কদর বেড়ে গিয়েছিলো। আমরা আবেগিত হয়ে তাকে বলি কাটপিসের যুগ। বৃষ্টিতে নর্তন-কুর্দন, রোম্যান্স, গোসলের দৃশ্যসহ আরো যতরকম অশ্লীলতা ঢোকানো সম্ভব সিনেমাতে সেগুলোতে মূল নায়ক অংশ নিতো কম, অশ্লীলতার চাহিদা মেটাতে গুরুভার বহন করতে হয়েছে সাইডনায়ককে। সিনেমায় তার ভাগে জুটতো ১-২টা মারামারির দৃশ্য (সেটাও সাইডনায়িকার সাথে প্রেম হওয়ার উপলক্ষ্য হিসেবে, কিংবা ধর্ষিত হওয়া থেকে বাঁচাতে), মূল নায়কের সাথে বিচ্ছিন্ন কিছু সংলাপ, তারপর ভিলেনের হাত খুন হওয়া।
সাইডনায়কের নিয়তি চিরকালই মৃত্যু অথবা স্যাক্রিফাইস। কাটপিসপূর্ব সময়ে মূল নায়ক বা নায়িকাকে বাঁচাতে গিয়ে গুলি বা ছুরিকাঘাতে মরতে হতো, মরণকালে ১-২টা অন্তিম সংলাপ দিয়ে প্রস্থান নিতো। কিন্তু ডিপজলের আবির্ভাবে ভিলেনশিপের ধারণায় বড় পরিবর্তন আসে, যেটা পরবর্তীতে আরো সুদৃঢ় হয় মিশা সওদাগরের মাধ্যমে। শেষ দৃশ্যে ভিলেন পুলিশের হাতে ধৃত হওয়ার পরিবর্তে নিহত হয়। কাটপিসের পাশাপাশি ওই সময়টাতে ব্যাপকমাত্রায় ভায়োলেন্স বৃদ্ধি পায়, সিনেমাজুড়ে কেবল রক্তপাত। নায়ক আক্রান্ত হয়, কিন্তু তাকে যেহেতু বাঁচতে হবে, পরিচালকরা ভিলেনের ইগো স্যাটিসফাই করতে মরার স্যাম্পল হিসেবে সাইডনায়ককে তার হাতে তুলে দেয়। আনোয়ার হোসেন যেমন ক্যারিয়ারের মাঝামাঝি থেকেই হয়ে উঠেছিলেন হার্ট এটাক স্পেশালিস্ট, শাহীন আলমের মতো সাইডনায়কদেরও ভিলেনের হাতে খুন হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হতো।
অথচ চরিত্রের এইটুকু ব্যাপ্তির মধ্যেও তার ভাগে গান পড়ে গেছে ২-৩টা। অদ্ভুত লাগে না? সেইসব গানের দৃশ্যায়ন দেখলে অবশ্য চরম হাসি পেতো। কিন্তু তিনি নিজের শিল্পীসত্তার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে পরিচালকের শিল্পচাহিদা পূরণ করতে চাইতেন; মনে হতো কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত একজন সকাল থেকে টয়লেটে বসে আছেন, বিকাল গড়িয়ে গেলেও বের হতে পারছেন না উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়ায়।
শাহীন আলম কি অশ্লীলতার রূপকার, অশ্লীলতা বিরোধী অভিযানই কি তাকে পেছনের দরজা দিয়ে পলায়নের বুদ্ধি দিলো? এই উত্তর খুঁজতে গিয়ে অন্য এক প্রশ্ন মাথায় এলো, কাউকে ফাঁসির হুকুম দেয় রাজা/বিচারক, সেটা এক্সিকিউট করে জল্লাদ। দায়ী কি তবে বিচারক,নাকি জল্লাদ। অশ্লীলতার প্রধান দায় পরিচালক-প্রযোজকেরই, কিন্তু অভিনয়শিল্পী হিসেবেও কিছু দায় নিতে হবে বৈকি। যেমন, জল্লাদের পেশায় না গিয়ে জীবিকার্জনের জন্য অন্য কোথাও নিযুক্ত হলেই চলতো; তাতে কি জল্লাদ হওয়া থেমে থাকতো? কেউ না কেউ দায়িত্ব পালন করতোই।
শাহীন আলমরা সেটাই করেছে। তারা মেষশাবকের দলে ভিড়ে গেছে। ট্রাকে উঠিয়ে পুরো মেষের দলকে যেভাবে পাচার করা হয় , তারাও সেই নিয়মের অধীন হয়েছে।
শাহীন আলমের কি যোগ্যতা ছিলো মুল নায়ক হওয়ার? এটা বলা কঠিন। শাবনুরের প্রথম সিনেমা চাঁদনী রাতের নায়ক ছিলেন সাব্বির নামের আরেক নবাগত নায়ক, সেই সাব্বির মৌমাছি নামে আরো একটি সিনেমা করেছিলেন মূল নায়ক হিসেবে। আরেক সাইডনায়ক মেহেদীও ‘পাগল মন’ সিনেমায় একক নায়ক হয়েছিলেন, যেটা ‘পাগল মন’ গানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা কাজে লাগানোর এক প্রজেক্ট বলা চলে। শাহীন আলমও হয়তোবা তার ক্যারিয়ারে এরকম ২-৫টা সিনেমা করেছেন যেগুলোতে তিনিই মুল নায়ক, হয়তোবা সেগুলো মুক্তি পায়নি বা পেলেও দর্শক গ্রহণ করেনি, কিংবা ফিল্ম পলিটিক্সে ভুল গ্রুপভুক্ত ছিলো। অনেক কিছুই হতে পারে, কিন্তু তার কোনো একটি নমুনা থেকেও নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়, মূল নায়ক হওয়ার মতো যোগ্যতা তার আদৌ ছিলো কিনা।
তবে কুমকুম নামের এক নায়িকার বিপরীতে ঘাটের মাঝি সিনেমায় সম্ভবত তিনিই মূল নায়ক ছিলেন। (সিনেমাটি না দেখায় নিশ্চিত করে বলতে পারলাম না)। কিন্তু দর্শক গ্রহণ না করায় তাকে সেই সাইডনায়ক হয়েই ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত করতে হলো।
এমনকি মার্শাল আর্টের ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলমও মূল নায়ক হিসেবে বেশ কয়েকবার আবির্ভূত হয়েছেন পর্দায়। তাই ‘শাহীন আলম’ নামটাই সমস্যা কিনা সে ব্যাপারেও কংক্রিট কোনো উপসংহারে উপনীত হওয়া যায় না।
আরো পর্যালোচনা করার মতো পর্যাপ্ত রেফারেন্স ডাটা সরবরাহ না করেই শাহীন আলম চলে গেছেন গাউছিয়ায়। এখনকার কোনো সিনেমায় বাবা বা ভাই হিসেবেও তাকে আর দেখা যায় না, যেমনটা করছেন প্রাক্তন নায়ক সুব্রত।
শাহীন আলমকে কি দর্শক মনে রাখবে? দর্শকের মনস্তত্ব বড়োই অদ্ভুত। কেউ না কেউ মনে রাখবেই হয়তো। কিছুক্ষণ আগে ইউটিউবে ময়ূরীর সাথে তার নাচানাচির গান দেখলাম একটা। মমতাজের ‘মরার কোকিলে’ গানের সুর নকল করে যার কথাগুলো দাঁড়িয়েছে এমন-
আমার পাগল পাগল লাগে রে প্রেমের জ্বালায়/
আমি ভালোবাসার ঠাণ্ডা পানি ঢালবো রে আজ সারা গায়, প্রেমের জ্বালায়
বাংলা চলচ্চিত্রের কাটপিস যুগ একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। ভবিষ্যতে কেউ এবিষয়ে গবেষণা করতে চাইলে শাহীন আলম নামটিকে আমলে নিতেই হবে। শাহীন আলম কী চেয়েছিলেন, কী হতে পারতেন, কেন তিনি অশ্লীল সিনেমার শীর্ষ পছন্দ ছিলেন এরকম অজস্র জিজ্ঞাসার জবাব হয়তোবা মিলবে তখন। সেখানে কিন্তু তিনি সাইডনায়ক নন, তারও বহুঊর্ধ্বে অন্য কোনো পরিচয়ের কেউ একজন।