একটা ইন্টারভিউ নেয়া, বা কমিউনিটি এনলাইটেনমেন্ট উদ্যোগ নেয়ায় যতটা আগ্রহ, গত ১৭ই জুলাইয়ের পর থেকে ছবি তোলার ক্ষেত্রেও উদ্দীপনা কাছাকাছি পর্যায়ের ইদানীং; এক্টিভিটি বা আচরণের নিজস্ব ভালোতা মন্দতা নেই, এর পেছনে উদ্দেশ্য কী তাতেই আদতে এর প্রাপ্য নির্ধারিত হয়। উনিশ, তেইশকে নিয়ে যতবার ছবি তুলতে যাই, সচেতনভাবে একটাই বোধ কাজ করে- আমি/আমরা দুটো শিশুর শৈশবের সৌন্দর্য পরিমাপ করছি, ওদের ২৯ বছর বয়সের জন্য মেমরি ক্রিয়েট করছি। প্রতিটি ছবি একেকটি স্বতন্ত্র গল্পকে ধারণ করে, সময়কে বশে রাখে কিছু সময়ের জন্য হলেও। আমার নিজের জীবনের সবচাইতে পুরনো ছবি বলতে ৬ষ্ট জন্মদিনে আম্মুর সাথে ঘিওর স্টুডিওতে স্মৃতি সম্মোহন। তার আগেও জীবন ছিলো, সে জীবনের বহু গল্প আমার স্মৃতিতে রবিশস্যের মতোই সজীব, কিন্তু শিশু আমি দেখতে কেমন ছিলাম তখন, বড় আপা বা আম্মুর কোলে ঘুমিয়ে থাকার বয়সটাতে উচ্ছ্বাস কাজ করতো কেমন, তার কোনো ডকুমেন্টেড স্মৃতি নেই। এটা তাই প্রথম থেকেই আমার পরিকল্পনায় ছিলো উনিশ তেইশকে অন্তত স্মৃতিহীনতার গল্প শেয়ার করতে হবে না। প্রতি মাসেই ওরা নিজেদের সময়গুলোকে খুঁজে নেবে, এর মধ্যে আমি একধরনের নৈর্ব্যক্তিক আনন্দ পাই, কমিটমেন্টের কারুকার্য আবিষ্কার করি। আমাদের দিন হারায় না, স্মৃতি ফুরোয় না, আমরা উনিশ তেইশের মধ্যে পুনর্জন্ম নিই।
আমার জীবন ৭ জন স্পিরিচুয়াল ব্যক্তিত্বের প্রবল প্রতাপে পরিচালিত হয়, এদের একজন পীথাগোরাস। তার মতে পৃথিবীর সবকিছুকেই সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব, এবং মানুষের আত্মা আসলে অন্য মানুষের মধ্যে প্রবেশ করে। দুটো চিন্তাই আমি সেই কৈশোর থেকে উপভোগ করি। উনিশ, তেইশের মধ্যে আমি তাই আমার শৈশবকে যাপন করছি। বলা যায় আমি এখন ৩টি জীবন অতিবাহিত করছি। এজন্যই গল্পগুলো ক্লিশে না হয়ে মোহনীয় লাগে।
আজকের ছবিগুলোর গল্প ‘উপহার বিত্তান্ত’। আরিফা সর্বশেষ যখন শাড়ি পরেছিলো তখন ৫১টাকায় এক কেজি চাল পাওয়া যেত, মগবাজার এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণহেতু আজব যানজট লেগেই থাকতো, এবং ঠাকুরগাঁয়ে তুষার মোল্লা চায়ের দোকানে পান বিক্রি করতো। এত দিন বাদে সে যে শাড়িটা পরিধানের তৃপ্তি নিলো, কবে কোন ব্যস্ত দোকানীকে মূল্য মিটিয়ে এটা ঘরে এনেছিলো জানা নেই আমার। একদিন আরিফা ফিল করলো দেশের অনেক শিক্ষিত তরুণীই নিজেরা পোশাক তৈরি করে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে দেশজুড়ে বিক্রি করে, তাদের এপ্রিশিয়েট করা উচিত। এরপর কোনো একদিন দুপুরের খাবার শেষে সে দরজা খুলে দেখে খুলনা থেকে উনিশ তেইশের জন্য পোশাক এসেছে, যেটা সে নিজেই অর্ডার করেছিলো সূর্যময় সুখে। পোশাকের স্বচ্ছতায় তার আস্থা দেখে আমি পরম খুশিতে ৩১৭৯ এর সাথে আলাপচারিতা চালিয়ে মানব পর্যবেক্ষণ বিষয়ক বই লিখতে থাকি। আর নিজেকে আবৃত করতে যে পাঞ্জাবিটা চাপিয়েছি, এটাও উপহারসূত্রে পাওয়া। কোনো এক চপল মনের তরুণ বৈষয়িক কৃতজ্ঞতাকে আধ্যাত্মিকতায় রূপ দেয়ার লক্ষণ হিসেবে পাঞ্জাবিটা আবিষ্কার করে নিয়েছে। এতসব গল্পের মধ্যে উনিশ, তেইশকে জায়গা দিতে চাই বলেই নিজেরা জায়গা ছেড়ে দিই পবিত্রতার শোধে।
আমি এখন প্রতিটি দিন উদগ্রীব থাকি উনিশ, তেইশ কবে কথা বলতে শিখবে সেই দিনটির প্রতীক্ষায়। উনিশ কথা শেখামাত্র ওকে একটা ইন্টারভিউয়ে নিয়ে যাবো, ও হবে পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ ইন্টারভিউয়ার। একটা ‘কথা সঞ্চালন প্রোগ্রাম’ আয়োজন করতে চাই যেখানে অন্তত ৫৯ জন শুভাকাংখী আসবেন। তারা কাগজে ১১টি লাইন লিখে আনবেন ওদের উদ্দেশে, সেগুলো জমা করে একটা নোটবুক বানাবো, প্রত্যেকে ওদের ১টি করে প্রশ্ন করবে, একটু বড় হলে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখে তাদের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেবে। জন্মদিন আমার কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে না, জীবনের একেকটি বাঁক উন্মোচনকেই বরং উদযাপন করতে চাই সুতীব্র উল্লাসে। কথা সঞ্চালন প্রোগ্রাম নিয়ে বানাতে চাই একটি ডকুমেন্টারি, যেদিন একইসঙ্গে দেয়া হবে পূর্বঘোষিত চিত্তচিন্তা পদক, যার অধীনে ১১ জন মানুষ বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়ায় পুরস্কার হিসেবে পাবেন একটি ক্রেস্ট, একটি সার্টিফিকেট এবং নগদ ৬৭ টাকা। আমি জানি আমি মেন্টালি ইমব্যালেন্সড, পর্যাপ্ত ইম্যাচিউর। তবু এটাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ব্লেজিং এ কথা চাপালিশ গাছের মগডালে উঠেও ঘোষণা দিয়ে বলতে পারি। উনিশ, তেইশের উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনিগুলো অনুরণিত হবে প্রাণপ্রচুর্যের নেশায়। সাধের উনিশ, তেইশ ডাকছে বাবা, বলছে কেমন আছো/ বিষয়চিন্তায় বিফল জীবন, মানুষ হয়েই বাঁচো/ চাওয়ার ছায়া কমাও