প্রিয় K,
তুমি হতে পারো যে কেউ। আমি শুধু জানি তুমি ইন্টার পাশ করে বর্তমানে কোথাও ভর্তি হওয়ার অপেক্ষায় আছো, কিংবা ইতিমধ্যে ফার্স্ট ইয়ার-সেকেন্ড ইয়ার সম্পন্ন করেছো। আমি সবচাইতে অপছন্দ করি মানুষকে পরামর্শ/সাজেশন/উপদেশ দেয়া, কারণ প্রত্যেকটা মানুষের জীবনদর্শন আলাদা, সে নিজেই ঠিক করে নিক একটামাত্র জীবন সে কীভাবে পার করে দিতে চায়। তাছাড়া, আমি যেখানে সম্ভাবনা দেখছি আরেকজনের কাছে সেটাকেই মনে হতে পারে সর্বনাশ। তবু ঠিক জানি না কেন, প্রত্যেক মাসেই তোমার মতো অন্তত ৭-৮ জন মানুষ আমাকে মেসেজ করে পরামর্শ চায়; যতই বলি আমি লঘু, সস্তা বা পরামর্শ দেয়া থিওরি বিশ্বাস করি না, মানুষের নিয়তি তার নিজের চেষ্টার উপর নির্ভরশীল, তুমি/তোমরা সেটাকে আমার অহঙ্কার ভেবে তিক্ততা সৃষ্টি করো। মানুষের কথা যার মোটিভেশনের জন্য লাগে, এটা বিপজ্জনক লক্ষণ, ডিমোটিভেটেড হওয়াটাও খুবই সহজ হয়ে যায় তখন। অর্থাৎ তোমার স্বাধীন চিন্তাশক্তি নেই, তুমি বায়বীয়, তোমার মাথা কাঁঠাল ভাঙার জন্য পারফেক্ট প্লেস।
নিজের ভেতর থেকে যার ইনস্পাইরেশন বা জিদ তৈরি হয় না, সে কখনো রিমার্কেবল কিছু করতে পারবে না, ছাঁচে ফেলা আরেকজন মানুষ হবে বড়জোড়। তোমার ইনস্পাইরেশনহীনতার সুযোগ নিয়ে কত-শত মোটিভেশনাল স্পিকার দাঁড়িয়ে গেছে, ক্যারিয়ার মেন্টর হওয়াটাই নিজের ক্যারিয়ার বানিয়েছে। আমি সেরকম কিছু কখনোই করি না। তবু এইসব বিষয়ে আমাকে নক করো কেন?
হতে পারে আমি ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্ট লিখি বলে তোমার মনে হয় আমি বিশাল জ্ঞানী মানুষ, কিংবা আমি স্টুডেন্ট কমিউনিটি নিয়ে কাজ করি বলে মনে হয়েছে আমার কথার ওয়েট আছে। ভুল ভেবেছো ছোট্টবন্ধু; ফেসবুকে আমি লিখি পুরোপুরি ব্যক্তিগত মিশন পূরণের উদ্দেশ্যে, জ্ঞান-ট্যান বড্ড বাজে কথা আমার বেলায়। আর স্টুডেন্ট কমিউনিটি নিয়ে যতটুকু কাজ করেছি এটা খুবই তুচ্ছ লেভেলের। আসলে ফেসবুকের কারণে তিলকে তিমি ভাবার যে হুজুগ, শর্টকাট এবং ব্রেইনলেস এক্টিভিটির মহোৎসব, সেখান থেকে তুমি সম্ভবত বের হতে পারোনি। এটা আমারই ব্যর্থতা, মুখে বলছি আমি লেখক না, অথচ পোস্ট লিখছি বিশাল সাইজের। এই স্ববিরোধীতাই আমি।
এই লেখা লিখেও বিশেষ লাভ হবে না জানি, বিস্মৃতিপ্রিয়তা তোমার মতো নতুন কাউকে আবারো উদ্বুদ্ধ করবে ক্যারিয়ার, পড়াশোনা এসব বিষয়ে আমাকে মেসেজ লিখতে। আমি কলেজ লাইফেই বুঝে গিয়েছিলাম একাডেমিক পড়াশোনা একটা ভেক ব্যাপার, সেলফ লারনিংই হলো বেস্ট এপ্রোচ, এরপর যদিওবা গ্রাজুয়েশন করেছি, কিন্তু সেটা শুধুমাত্র একটা সাইনবোর্ডের বাইরে কিছু হতে পারেনি কখনো। আমি ইন্টারপাশ বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায় আমার এক্টিভিটিকে মানুষ বলে পাগলামি, কৃত্রিম হাপিত্যেশ করে, কিন্তু আমি যদি সত্যিই এসএসসি পাশের পর আর পড়াশোনা কন্টিনিউ না করতাম এরাই বলতো, এসব না করে করারই বা কী ছিলো তোমার, ফেল্টু পোলাপান তো এমন জঙ্গলই হবে। এইজন্য সাইনবোর্ডটা নিজের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার জন্য হলেও লাগে। তাই আমার মতো ট্র্যাকচ্যুত মানুষের কাছে ক্যারিয়ার সাজেশন চাওয়া খুবই রিস্কি চয়েজ, আমি সেটা বহুবার বলি, তবু ফেসবুকে যতদিন এক্টিভলি লেখা পোস্ট করবো, এই ভুলের স্বর্গ থেকে বের হতে পারবো না তুমি, আমি কেউই। মূলত সে কারণেই এই লেখাটা লিখে রাখছি যাতে এরপর তুমি মেসেজ দিলে এটার লিংক দিতে পারি। একই কথার ক্রমাগত পুনরাবৃত্তি ঘটানো খুবই বিরক্তিকর।
যেহেতু আমি উপদেশ বা পরামর্শ দেয়া হেইট বা ঘৃণা করি, আমি ৫টি অভিমত শেয়ার করছি। একদমই নতুন কোনো কথা নয় এগুলো, জীবনে বহুবার শুনেছো, বা এর চাইতে ভালো চিন্তা তুমি নিজেই করতে পারো। স্রেফ ব্যক্তিগত অলসতা আর চর্চার অভাবে তার প্রয়োগ নেই। আমার অভিমতগুলো ফলো করার কিছু নেই, তবু আমার থট প্রসেসটা শেয়ার করছি। তুমি যদি এক্সট্রা অর্ডিনারি কেউ হও, এসব তোমার জন্য নয়, কারণ এই ব্যাকডেটেড প্রসেসের চাইতে অনেক বেশি স্মার্ট আর ইন্টেলিজেন্ট তুমি; নিজের জীবনের ম্যাপ নিজেই একে নিতে পারো, উপরন্তু আরও ২০ জনকে গাইডলাইন দেয়ার সামর্থ্য তোমার আছে; তবু চিন্তা শেয়ারিং এর এঙ্গেল থেকে দেখলে এটা চাইলে পড়তে পারো, নইলে সময় অপচয় নিষ্প্রয়োজন। তুমি যদি শর্টকাট খোঁজা মানুষ বা খুব চাল্লু টাইপ মানুষ হও, এসব কথা তোমারও আঁতেলীয় মনে হবে। কিন্তু তুমি যদি আমার মতো এভারেজ বা গড়পড়তা মানের হও, তুমি পড়ে দেখতে পারো। তোমার প্রত্যাশা হয়তো পূরণ হবে না, তবু আমি নিজের দায়মুক্তি ঘটাতে চাই।
অভিমত ১: হল বা মেস যেখানেই পারো চলে যাও। পরিবারের সাথে অনেক সময় কাটিয়েছো, কিন্তু পৃথিবীর সব মানুষ তোমার পরিবারের মানুষের মতো আপন নয়, রিয়েল লাইফে তোমাকে সেইসব বাইরের মানুষের সাথেই ডিল করতে হবে। সেজন্য যদি পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকে তুমি ভেঙ্গে পড়বে হুড়মুড় করে। হলে বা মেসে থাকা মানে বিভিন্ন টাইপ পারসোনালিটির মানুষের সাথে মেশার অভিজ্ঞতা, প্রতিকূল পরিবেশে এডজাস্ট, সিনিয়রদের ম্যানেজ করা, ব্যাচমেটদের ম্যানেজ করা, যে কখনো আলো জ্বালিয়ে ঘুমুতে পারে না তাকেও তার মধ্যে অভ্যস্ত করে ফেলা, যে কোনো স্বাদের খাবার খেতে পারার দক্ষতা অর্জন, নিজের কাজ নিজে করা। বাড়িতে থেকে কখনোই সেই অভিজ্ঞতা তুমি অর্জন করতে পারবে না। বাড়িতে থাকা মানে তুমি টুয়েলভ থেকে থার্টিন্থ ক্লাশে উঠেছো মাত্র, কিন্তু হলে উঠে যাওয়া মানে তোমার বয়স ১০ বছর বেড়ে গেছে। যাদের ভার্সিটিতে হল নেই তারা মেসে উঠে যাও। হলের পরিসর ব্যাপক হলেও মেসের মধ্যেও মিনি হলের একটা ফ্লেভার পাবে। বাসা থেকে খরচ দিতে না চাইলে বা মা-বাবা রাজি না হলে তাদের বলো ‘তোমরা আমাকে স্বনির্ভর হতে দাও; আমি পারিবারিক হতে চাই বলেই ৪বছর পরিবারবিচ্ছিন্ন হতে চাই’, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাবা-মা রাজি হবেন, তারা যদি অমত তখনও করেন, অন্তত এক্ষেত্রে তাদের অবাধ্য হও গ্রেটার পারপাস পূরণের প্রয়োজনে। তুমি হয়তো পরিবারে অনেক দায়িত্ব পালন করো, তুমি অনেক প্রোগ্রাম অর্গানাইজ করো, তোমার এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটি প্রচুর, কিন্তু বিশ্বাস করো এসব তোমার কোয়ালিটি ডেভেলপ করেছে, পারসোনালিটি ডেভেলপ করেনি, তোমার চোয়াল শক্ত করেনি। হলে থাকার কারণে অনেকে উচ্ছন্নে গেছে, এই উদাহরণ বড্ড ফালতু। মানুষ তার সকল পরিণতির জন্য সে নিজেই দায়ী, অন্য কিছু নয়। গুগলে রাত জেগে অনেকে আর্টিকেল পড়ে, কেউ এডাল্ট সাইট ভিজিট করে। কাজেই দোষটা ইনটেনশনের, গুগলের নয়। হলের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সমগ্র ভার্সিটি লাইফটাই হলে কাটাতে পারলে বেস্ট হয়, সেটা একান্তই সম্ভব না হলে অন্তত ২ বছর হলে থাকা মাস্ট রিকোয়ারমেন্ট ধরে নাও।
অভিমত২: এডমিশনের রেজাল্ট দেয়ার পরের মাস থেকেই বাসা থেকে হাত খরচ নেয়ার অভ্যাস পুরোপুরি ত্যাগ করো। তুমি অনার্সে ভর্তি হয়েছো মানে তোমার বয়স ১৮+; সুকান্ত ভট্টাচার্যের আঠারো বছর বয়স কবিতাটা তো পাঠ্য ছিলো, ২-১ লাইন কি মনে আছে? সম্প্রতি প্রথম আলো তো এটা নিয়ে গানও করেছে। সেই কবিতা পড়া বা গানটা শোনার জন্য বলছি না, ১৮ এর প্রসঙ্গ পাড়ছি আসলে তুমি একটা নতুন পৃথিবীতে পদার্পণ করেছো। তোমার মাসে কত টাকা খরচ হয়? তুমি যদি এক্সট্রিমলি রাফ এন্ড টাফ না হও (ধরে নিচ্ছি, সাদাসিধে ছেলে), ৪৫০০ টাকায় খুব ভালোমতোই মাস চলে যাবে তোমার। বড় খরচ, যেমন এডমিশন ফি, মেস ভাড়া এগুলো বাসা থেকে নিতে পারো, কিন্তু অন্যান্য খরচটা অবশ্যই নিজেকে বহন করতে হবে। আজকের দিনে একজন তরুণ/তরুণীর জন্য মাসে ৫০০০ টাকা উপার্জন করা কোনো ডিলই নয়। তবে টিউশনিটা খুব ভালো অপশন না, এটা আনপ্রোডাক্টিভ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই (কোচিংয়ে ক্লাশ নেয়া অবশ্য ইফেকটিভ, তাতে জড়তা কেটে যাবে, কনফিডেন্স বাড়বে। টিউশনি বলতে গৃহশিক্ষকতার কথা বলছি)। এখন ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রচুর সুযোগ আছে, পার্ট টাইম চাকরির ব্যবস্থা আছে, পত্রিকায় কন্ট্রিবিউটর হতে পারো, ফেসবুক স্পেশালিস্ট হতে পারো, এনিমেশন শিখতে পারো (এটারও মার্কেট ডিমান্ড আছে); অনেক রকম স্কিলই তৈরি করতে পারো যার মাধ্যমে ওই কয়টা টাকা যোগাড় হয়ে যাবে। টিউশনি হলো লাস্ট অপশন। তবে তোমার যদি একাডেমিক ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছা বা সম্ভাবনা থাকে, মানে ভার্সিটির টিচার, রিসার্সার, বা দেশের বাইরে সেটেলড হওয়ার ইচ্ছা থাকে, সেক্ষেত্রে টিউশনি হলো নিরাপদতম অপশন। কারণ, ২ টা টিউশনি করলেই তুমি প্রয়োজনের চাইতে অনেক বেশি টাকা পেয়ে যাবে। তবে টিউশনিতে ক্যাজুয়ালনেসটা বেশি থাকে; ফ্রিল্যান্সিং বা অন্য কাজগুলোর ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন স্কিল, প্রফেশনালিজম, ম্যানেজমেন্ট কোয়ালিটিগুলো দ্রুত ডেভেলপ করে। পার্ট টাইম চাকরি করতে পারলে ছাত্রজীবন থেকেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সপেরিয়েন্সটা পাওয়া যায়, ফলে পড়াশোনা শেষে তোমার অন্য ব্যাচমেটরা যখন চাকরি খুঁজবে, তুমি ততদিনে অভিজ্ঞ হয়ে গেছো। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে পার্ট টাইম চাকরি মানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আসলে ফুলটাইম চাকরির মতোই। এটা করতে গেলে পড়াশোনার ক্ষতি হতে পারে। পার্ট টাইম চাকরির বেলায় সতর্কতা অবলম্বন জরুরী। তুমি যদি ছাত্রজীবন থেকেই নিজের খরচটা চালাতে শেখো, তোমার মধ্যে সেন্স অব রেসপনসিবিলিট, ডিগনিটি তৈরি হবে, ম্যাচিউরিটি চলে আসবে অন্যদের তুলনায় অনেক আগে। বুদ্ধিমান মানুষ এক্সকিউজ দেয় না, তাই কাজ কোথায় পাবো, এরকম প্রশ্ন অলস আর নিরুদ্দম মানুষের। কাজের অভাব নেই, কর্মীর অভাব প্রচণ্ড। আরও একটা ব্যাপার ক্লিয়ার করতে চাই, ছাত্রজীবনে কাজ করার একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত হাত খরচ চালানো। তখনই টাকা-পয়সার লোভে পেয়ে বসলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ। তাই মনের লাগাম টানতে জানাও ইকুয়ালি নেসেসারি।
অভিমত ৩: ভার্সিটি ইজ নট এ বিগ ডিল। এটা সত্যি, নামকরা ভার্সিটিতে পড়লে সাইনবোর্ডটা চকচকে হয়, কিছুটা এডভান্টেজ পাওয়া যায় অনেক সময়। কিছু ক্ষেত্রে, ভাব ধরারও একটা আলগা উপলক্ষ পাওয়া যায়। কিন্তু ওই ভাবটা যে কয়দিন ছাত্রজীবন শুধু সেসময়টুকুতেই চলে, পাশ করে গেলে ইনস্টিটিউট খুব কম ক্ষেত্রেই বাইরের মানুষের কাছে মূখ্য থাকে, তারা দেখে পজিশন। এইজন্য যে ভার্সিটিতেই ভর্তি হও, সেটা যদি দেশের সবচাইতে অখ্যাত ভার্সিটিও হয়, মন থেকে মেনে নাও। কারণ এই নিষ্ঠুর সমাজে তোমার স্কিল আর পরিশ্রম দিয়েই তোমাকে জায়গা করে নিতে হবে, কেউ জায়গা ছেড়ে দিবে না, ভার্সিটি তোমাকে জীবিকার সন্ধান দেবে না। এটা তোমাকে সমমনা আরও কিছু মানুষের সাথে মেশার সুযোগ করে দিতে পারে, এটুকুই। সেটা তুমি অন্যভাবেও করতে পারো। তাই ভার্সিটি এবসোলিউটলি কোনো ব্যাপার না। গ্রাজুয়েশন শেষে তোমার মূল স্ট্রাগলটা শুরু হবে, সেটা মোকাবেলার জন্য কতটা রসদ সংগ্রহে আছে সেটা পুরোপুরি তোমার চেষ্টা আর মানসিকতার উপর নির্ভর করবে। খরগোশের মতো খুশি না হয়ে, কচ্ছপের মতো লেগে থাকো, জাস্ট গতিটা বাড়িয়ে নিলেই চলবে।
অভিমত৪: ফার্স্ট ইয়ারটা একটু বুঝেশুনে পার করো। ক্রিকেট খেলা যদি দেখে থাকো, তাহলে জানো ওপেনাররা যখন ব্যাটিং করো,বল খুব শক্ত থাকে, সুইং করে বেশি। এইসময়টা দেখে শুনে পার করে দিলে ব্যাটিং খুব ইজি হয়ে যায়। ফার্স্ট ইয়ারের ব্যাপারটাও এরকম। দেখা যায়, মেধাবী অনেক স্টুডেন্ট ফার্স্ট ইয়ারে খারাপ করে উচ্ছন্নে চলে যায়, কেউ কেউ অবাধ স্বাধীনতার যথেচ্ছ ব্যবহার করে দিগভ্রান্ত হয়। ফার্স্ট ইয়ারটা তাই ক্যালকুলেটিভ থাকার পর, সেকেন্ড ইয়ার থেকে মূল মিশন শুরু করা উচিত। ইন্টার পাশের পর হঠাৎ করে আসা নতুন জগতটা ততদিনে চেনা হয়ে যায়। এই সময়টা তাই স্কিল ডেভেলপমেন্ট এ ডেডিকেট করা উচিত। স্কিল ডেভেলপমেন্ট টার্মটা ভেক; ব্যাখ্যা করি। বুকিশ জ্ঞান রিয়েল লাইফে খুব বেশি কাজে আসে না। বরং কমিউনিকেশন স্কিল, অর্গানাইজিং, ডিবেট, লিডারশিপ, কম্প্রোমাইজিং, নেগোশিয়েশন এইসব স্কিলের ব্যবহার আছে যেসব এক্টিভিটিতে সেসবে ইনভলভ হওয়া উচিত। তুমি যেখানেই পড়ো, অন্তত একটা ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, বা ক্যারিয়ার ক্লাবের মেম্বার হও। এসব ক্লাব না থাকলে নিজে উদ্যোগ নিয়ে গড়ে তোলো। সেটা না পারলে ফেসবুকে গ্রুপের মেম্বার হয়ে সেগুলো থেকে রিয়েল লাইফ ইভেন্ট আয়োজন করো। অপশনের অভাব নেই। কীভাবে স্মার্টলি সিভি বানাতে হয় সেটা শেখো। প্রেজেন্টেশন দেয়া শেখো। এভারেজ মানুষের ইগো থাকতে নেই। এটা উচ্চমেধাবীদের সম্পদ, আর নির্বোধের বোঝা। কিন্তু আমরা যারা এভারেজ তাদের জন্য ইগো হচ্ছে আত্মঘাতী বোমা। তুমি একটা কাজ করতে পারো। প্রতিদিন অন্তত ৩০মিনিট সময়, সেলফ করভারসেশনের জন্য রাখো। সারাদিনের রিভিউ, কালকের রাফ স্ক্যাজুয়াল, বা যেভাবে সবকিছু চলছে সেটা ঠিক হচ্ছে কিনা, এরকম একটা ফিলোসফিকাল আলাপ নিজের সাথে নিজে করার প্র্যাকটিস করো ৩ সপ্তাহ; এটা খুবই কাজে দিবে আশা করি। যখন টার্গেট থাকে ৩০৯ তখনকার ব্যাটিং এপ্রোচ আর ১০৯ টার্গেটের ব্যাটিং এপ্রোচ কিন্তু কখনোই সেইম না। এটা বুঝতে হবে।
অভিমত৫: নেটওয়ার্কিং বাড়াও, এবং বাড়াতেই থাকো। এখনকার সময়ে এই স্কিলের বিকল্প নেই। থার্ড ইয়ারে উঠার আগেই বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষের সাথে কানেক্টেড হও, নানা ধরনের প্রোগ্রামে এটেন্ড করো, নিজের প্রেজেন্স জানানো যায় এরকম গঠনমূলক কাজের সংখ্যা বাড়াও। সংখ্যা হাইলি ইম্পর্টেন্ট। ১০ টা কাজ করা আর ১০০টা কাজ করার মধ্যে ফারাক বিস্তর। নেটওয়ার্কিংকে অনেকেই খারাপ চোখে দেখবে, তোমাকে ডিমোটিভেট করার চেষ্টা করবে। সেগুলোকে আমলে নিও না।
অভিমত শেষ। তুমি ভালো থেকো। আমি যে কোনো নতুন মানুষের মেইল, মেসেজ পেলেই কৌতূহলী হই, কিন্তু টপিকগুলো ভিন্ন হলে ভালো হয়। আমার লেখাটা তোমার কাজে আসার সম্ভাবনা কম, খুবই তাড়াহুড়ো করে লেখা, তেমন গভীর ভাবনাও নেই খুব, এনালাইসিসও কম। তুমি বরং এই পয়েন্টগুলোর এনালাইসিস জানতে চেয়ে মেইল লিখো, সেটা আমার জন্য বেটার। কিন্তু, ভাইয়া কী করবো, কোথায় পড়বো, কোনটা ভালো হবে- এই টাইপ প্রশ্ন আমার ভালো লাগে না; কেন করবো, এই প্রশ্নটাই আমার ফ্যাসিনেশন।
কেন মানেই ইনোভেশন; কী বা কীভাবে এর মধ্যে ইন্টারেস্ট কম। শুভ হোক বেঁচে থাকা