এক্সিম ব্যাংক এর কর্মকর্তা শফিক সাহেব এর বৈষয়িক জ্ঞানে আমি মুগ্ধ। কিঞ্চিৎ বিস্মিতও। যতবার দেখা হয় ২টা কথা বললেও ১টা থাকবে সঞ্চয়পত্র কেনার পরামর্শসূচক।
মিস হলো না গতকালও
‘মাহফুজ সাহেব, দিনকালের যা অবস্থা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের যে বাতাস, তাতে সামনের দিনে আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে একমাত্র সঞ্চয়পত্র। আপনি এক কাজ করেন, আপনার মাকে বলেন কয়েকটা ফ্ল্যাট বিক্রি করে সেই টাকায় সঞ্চয়পত্র কিনে রাখতে। বাড়ি দিয়ে কী হবে, ভাড়া থাকতে বলুন। সঞ্চয়পত্র ছাড়া গতি নেই মাহফুজ সাহেব, আমার শ্বশুরকেও সেদিন বলে দিয়েছি আপনার বিষয়-সম্পত্তির প্রতি আমার লোভ নেই আব্বু, কখনো মন চাইলে কিছু সঞ্চয়পত্র কিনে দিয়েন’
আমি হাসতে চাই, পারি না; কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, হাসাটা কি উচিত হবে!
‘সঞ্চয়পত্র নাহয় কিনলাম, কিন্তু স্কুলজীবনের সহপাঠীকে আপনি করে বলাটা অস্বস্তিকর লাগছে। স্বস্তিকা মুখার্জি কিংবা জয়া আহসানের অভিনয় দেখার চাইতেও বিরক্তিকর। আপনার সিলসাপ্পরওয়ালা যে নাম লেডিস সুমন, সেই নামে নাহয় না ডাকলাম, জেন্ডার সার্টিফিকেট চেয়ে বসতে পারে আপনার ব্যাংক, কিন্তু নিদেনপক্ষে শফিকুল সুমন তো ডাকতেই পারি, তাই না’?
গলায় বাঁধা সবুজাভ টাইয়ে ঝাঁকি দিয়ে সে বলে-
‘এই যে শার্টটা দেখছেন এটার দাম আড়াই হাজার টাকা, প্যান্ট পরেছি দেড় হাজার, জুতাটা এপেক্স ব্রান্ডের, ৪ হাজার টাকা; এমনকি হলুদ রঙের যে আন্ডারওয়্যার পরে এসেছি এটার দামও ৩০০০ টাকা। ব্যাংক আমাকে টাকা দিয়েছে বলেই রাস্তার ভ্যান থেকে কেনাকাটা বন্ধ করে এসিওয়ালা শো-রুম থেকে কিনি। ব্যাংকে ঢোকার মুখে সিকিউরিটি গার্ড যখন সালাম দেয় তখনই ভুলে যাই কে আমি, আমি কার। তাই ব্যাংকের ভেতরে কোনো বন্ধুত্ব চো*বেন না কাইন্ডলি, বিকেলে চায়ের দোকানে আসুন। তখন দেখা যাবে!’
সুমনের যে স্বভাব তাতে ৩ হাজার টাকার আন্ডারওয়্যার কিনলে সেই গল্প শেয়ার না করে তার ঘুম হারাম হওয়ারই কথা। কিন্তু আমি সঞ্চয়পত্র কিনলে তার লাভটা কী। ভেবে কুলকিনারা না পেয়ে সন্ধ্যার পরে চায়ের দোকানে যাই, দেখা হয় আমাদের। সে একটা আপেল হাতে ধরে তাকিয়ে থাকে অপলক, দেখতে ভীষণ অশ্লীল লাগে, কিন্তু সে নির্বিকার।
‘দোস্ত কিছু মনে করিস না, এই শালার ব্যাংক এর চাকরি জীবন থেকে সব বিনোদন নিয়ে গেছে। আব্বা ব্যাংকে গেলে উনারেও কামাল সাহেব ডাকি। তুই জানোস গত ১০ বছরে একটাও গান শুনি নাই? অথচ একই আমি রবি চৌধুরির প্রতিটা এলবাম সংগ্রহ করছি। তার সবগুলা গানের লিরিক ছিল মুখস্থ। দাঁড়া একটা শোনাই তোরে
প্রেম দাও নয় বিষ দাও
ফুল দাও নয় জ্বালা দাও
আমার জীবন নিয়ে খেলো না তুমি খেলা
লাভ ইউ নীলা, মাই লাভ’
চা খেতে আসা অনেকেই সুমনের পরিচিত, মানিকগঞ্জ শহরে যার ন্যূনতম আয় ২ হাজার টাকা, সে-ই চেনে সুমনকে। তাকে এরকম গান গাইতে দেখে প্রথমে হকচকিত হয়ে যায়।
আমার মাথায় খেলা করছে তখন অন্য গল্প। আমি হাঁটতে থাকি অতীতমুখী গন্তব্যে, সেখানে সুমন থাকে, ফারাবি নামের কিশোরী থাকে, দুজনের মাঝে রবির মতো তেজোদ্দীপ্ততায় জ্বলতে থাকে গায়ক রবি চৌধুরী!
রবি চৌধুরির একটা গান বেশ বিখ্যাত হয়েছিল-
আকাশ হারায় নীল, হারায় আলোর ঝিল
বাগান হারায় ফুল, নদী হারায় কূল
আমি চাই না তোমায় হারাতে, আমার সুখের প্রদীপ নেভাতে’
গানটা পরবর্তীতে বাংলা সিনেমায় ব্যবহৃত হয়, তাতে ঠোঁট মেলায় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির জাদরেল সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান!
সুমনের জীবনটা এমন কেন হলো, একটা জীবন সে কাটিয়ে দিতে চেয়েছিল শুধু রবি চৌধুরীকে ভালোবেসে। আমাদের স্কুলজীবনে শিশু একাডেমিতে মৌসুমি প্রতিযোগিতার আয়োজন হতো৷ সুমন আধুনিক গান এ অংশ নিয়েছিল। সে বাছাই করেছিল রবি চৌধুরীর গান
তুমি আছো আমি আছি, হৃদয়ের কাছাকাছি
এরই নাম ভালোবাসা, এরই নাম পাশাপাশি
বিচারকরা যখন এই গানে আপত্তি তুলে সে দৃঢ়চিত্তে বলে গাইলে রবি চৌধুরির গানই গাইবো, নইলে i quit; সেদিনের আনকম্প্রোমাইজিং সুমন শিশু একাডেমি থেকে সদর্পে বেরিয়ে আসে, তখনো কণ্ঠে তার রবি চৌধুরীর গান
তুমি দুঃখ পাও, তুমি কষ্ট পাও, এ আমি চাই
তুমি বোঝোনি, এ আমাকে, ছিলে ছলনায়
কী করে এ বুকে রাখি তোমায়, কীভাবে বলো সুখী দেখি তোমায়
আমরা তখন মজে আছি বাংলা ব্যান্ড এ। জেমস নাকি বাচ্চু, কার গান বেশি উৎকৃষ্ট সেই বিতর্কে প্রতিদিন ঘন্টাখানেক সময় অতিবাহিত হয়, সেই আসরে সুমনের পৃথিবীতে গায়ক বলতে শুধু রবি চৌধুরী। তার বক্তব্য ছিল- ‘দোস্ত ব্যান্ডের লিরিক খুব সস্তামানের। লিরিক আর মিউজিকাল কম্পোজিশন পছন্দ না হলে সেটাকে আমার গানই মনে হয় না। স্রেফ বাংলাদেশী বলেই রবি চৌধুরীর মূল্যায়ন নেই, তোরা লিরিক বলতেই বুঝিস কলকাতার অঞ্জন দত্ত আর সুমন চ্যাটার্জি। আমি তোকে দুটো লিরিক শোনাই-
বৃষ্টির মতো দুচোখ বেয়ে,
অশ্রু শুধু আমার ঝরে পড়ে
তুমি নেই কাছে, তবুও তোমায়
ভাবতেই ভালো লাগে
আরেকটা গান শোনাই
মেঘে ঢাকো মুখ, ও চাঁদ মেঘেতে লুকাও
অভিসারে আসবে প্রিয়া, যাও না সরে যাও
তুই আমাকে বল, এর চাইতে সুন্দর লিরিকের গান বাংলা ভাষায় হওয়া সম্ভব? তোরা কালচার বুঝিস না, অপসংস্কৃতিতে ডুবে আছিস। আমি তোদের রবি চৌধুরীর সুররসে মাতোয়ারা হওয়ার দাওয়াত দিলাম’।
কিছুদিন পর সুমন এর মনে কিশোর বয়সের রোমান্টিকতা দোলা দিয়ে উঠে। জানতে পারি সে আমাদেরই এক সহপাঠীকে পছন্দ করেছে, তার ভোকাল টোন নাকি আকর্ষণীয়, তার সাথে একটা ডুয়েট গাইবে। কন্যার নাম ফারাবি, তার পছন্দ বাংলা সিনেমার গান। এক প্রোগ্রামে সে গেয়েছে
প্রেমের আগুনে জ্বলে গেলাম সজনী গো
সে আগুন চোখে দেখলাম না
সেই গান শোনার পর থেকেই সুমনের ইচ্ছা একটা ডুয়েট করবে তার সাথে। শাকিলা জাফরের সাথে রবি চৌধুরীর একটা ডুয়েট টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার গান-
কলিজার ভিতর বাঁধি রাহুম তুয়ারে
সিনার লগে গাঁথি রাহুম তুয়ারে, ও মনাই রে
কিন্তু চট্টগ্রামের ভাষা উচ্চারণ করাটা তার জন্য রীতিমত দুঃসাধ্য। তখনই মনে পড়ে সাবাতানীর সাথে গাওয়া এক ডুয়েট
ভালোবাসা বহুরূপী তাকে চেনা তো যায় না
ভালোবাসা নেই পরিধি, তাকে মাপা তো যায় না
সে হাসায় কাঁদায় যখন তখন, কারো জীবন কারো মরণ
সহজে ধরা তো দেয় না
ফারাবির সাথে অনায়াসেই প্রণয় ঘটে গেল। দিন রাত শুধু ফারাবি আর ফারাবি। বিশেষত বৃষ্টি এলেই সে ভিজতে থাকে। তার জাতীয় সঙ্গীত হয়ে উঠে রবি চৌধুরীর একটা গান
রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টি যখন ঝরে রে
তোমার কথা শুধু মনে পড়ে রে
ঝড়ো হাওয়া ফাগুন হাওয়া বহেরে
তোমার কথা শুধু মনে পড়ে রে
এই লগনে, তুমি কোনখানে, বলো না
কিন্তু তার মন খারাপ, গানগুলো শুনছে বা গাইছে ঠিকই, কিন্তু হৃদয় স্পর্শ করছে না। কারণ রবি চৌধুরীর কোনো গানে ফারাবি নামের নারীর উল্লেখ নেই। একটা গান পায় যেটা তার অনুভূতিকে যথাযথভাবে প্রকাশ করতে পারে, যদিও পাত্রী ভিন্ন-
নাম তার ছিল সঞ্চিতা, যাকে নিয়ে লেখা এ কবিতা
চোখে তার ছিল কল্পনা, রেখে গেছে বুকে যন্ত্রণা
ও তাকে ছাড়া বাঁচবো না।
আমি পুনরায় ফিরে আসি বর্তমানে। সুমন হয়ে পড়েছে নস্টালজিক। বহু বছর বাদে সুমন আজ গান ধরেছে। এসএসসি পাশের পরেই চলে গেলাম ঢাকায়, মধ্যবর্তী ২০ বছরে সুমনের মনোজগতে ঘটে গেছে কত ওলট-পালট, তার খোঁজ কি জানা আছে? আমি তো ঢাকায় যাওয়ার আগে জেনে গিয়েছিলাম ফারাবির সাথে সম্পর্কটা আগায়নি, কারণ সে নাকি সুমনের বাইরেও আরো ৩-৪ জনের সাথে ডুয়েট গায়। সুমনের তাতে আপত্তি ছিল না, কিন্তু তারা রবি চৌধুরীর গান কভার করে না, তাদের প্রিয় শিল্পী উদিত নারায়ণ, কুমার শানু, আসিফ প্রভৃতি।
ফারাবিকে হারিয়ে সুমনের প্রায় পাগলপরা দশা। একটা ওয়্যাকম্যান কিনেছিল, দিনভর হেডফোনে একটা গানই শুনতো-
আছো কি গো ভালো তুমি আছো কি গো ভালো
নাকি, আমার মতো তুমিও কি অন্তর জ্বালায় জ্বলো
আমায় ভুলে পড়ছো নাকি ভুল মানুষের প্রেমে
বুঝবে তুমি বুঝবে একদিন বুঝবে ক্রমে ক্রমে
বাসে উঠে বসি, বাস এগুতে থাকে, আমিও ভুলতে থাকি সুমন, ফারাবি আর রবি। হঠাৎ ড্রাইভার হার্ড ব্রেক চাপে, তখনই অনুভব করি ফারাবি থেকে ফা সরিয়ে নিলে থাকে রাবি, একটু বিন্যাসেই হয়ে যায় রবি। সুমন কি তবে ফারাবির মধ্যে আদতে রবি চৌধুরীকেই খুঁজেছিল? উত্তেজনায় ফুটছিলাম টগবগ। কিন্তু সে যুগে ছিল না হাতে-পেটে মোবাইল ফোন, তাই ফুটন্ত কড়াই ঠাণ্ডা হয়ে গেল।
‘ফারাবির সাথে যোগাযোগ আছে এখনো?’– প্রশ্নটা তাতিয়ে দিলো সুমনকে
‘ আমি এখন এফ দিয়ে মাত্র দুইটা শব্দ জানি- প্রথমটা ফাইন্যান্স, ২য় টা কাক; কষ্ট কইরা ক এর জায়গায় ফ বসাইয়া নিস’
তাকে শান্ত করতে প্রসঙ্গ বদলালাম।
‘তাহলে এটা বলো, রবি চৌধুরী ছিল তোমার জান-প্রাণ- পৃথিবী, তার গান শোনা বাদ দিলা। শুধুই কি চাকরির দোষ’?
সুমনের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠে।
‘দোস্ত আমি খুব প্র্যাক্টিকাল মানুষ। গিভ এন্ড টেক এ বিশ্বাস করি। আমি যদি তোর জন্য গলা পানিতে নামি তোর অন্তত হাটু পানিতে নামা উচিত না? ভার্সিটিতে মৌ নামের একজনকে মনে ধরেছিল, একসাথে কক্সবাজার যাচ্ছিলাম। কতটা ডিপ ইমোশন কাজ করলে তাকে রবি চৌধুরির ৬৪ টা এলবামের সবকয়টা গিফট দেয়া যায়, একটু ভেবে দেখ। কিন্তু সে বলে এগুলো চটুল গান, শোনার যোগ্য না। স্রেফ এই কারণে মৌকে বাসে বসিয়ে রেখে আমি কুমিল্লাতে নেমে গিয়েছিলাম; তুই একটা ছেলে দেখা যে এত বড় স্যাক্রিফাইস করবে। অথচ রবি চৌধুরী করলোটা কী! মেঘের কোলে রোদ সিনেমায় ডুয়েট গাইলো আসিফের সাথে-
বলো না কেন ওই আকাশ নেমে আসে সাগরের বুকে
বলো না কেন ওই ঝরনা নদী খোঁজে কিসেরই সুখে
সব কথা বলে না হৃদয়, কিছু কথা বুঝে নিতে হয়
ডুয়েট গাওয়ার জন্য মনির খান, এসডি রুবেল, বাদশাহ বুলবুল, পলাশ কতজন ছিল; আসিফ কেন। সে কি জানে না, ফারাবির সাথে আমার সম্পর্কটা কেন ভাঙলো! তাই অভিমানে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছি। আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয়ে থাকে, যদি আমি কামাল সাহেবের সত্যিকারের সন্তান হয়ে থাকি, দেখিস একদিন রবি চৌধুরি ঠিকই আমাকে স্যরি বলবে। নইলে বুঝবো আমার ভালোবাসায় ঘাপলা আছে’
ব্যাংকের চার দেয়ালে কঠোর বৈষয়িক শফিক সাহেব, যার ধ্যানজ্ঞান সঞ্চয়পত্র, স্রেফ ব্যাংক থেকে বেরিয়েই সে রূপান্তরিত হয় অভিমানী প্রেমিকে। এটাই বোধহয় মানুষের আনপ্রেডিক্টেবিলিটি, ইউনিকনেস। কিন্তু তার অভিমানটা আসলে কার প্রতি; ফারাবি নাকি রবি চৌধুরী?
‘শুনলাম বিয়ে করেছ; বউ কি মানিকগঞ্জের লোকাল, নাকি বাইরের জেলার?’
দীর্ঘশ্বাসের মধ্যেও সুমনকে চনমনে লাগে, মনে হলো পছন্দের টপিক পেয়েছে, এতক্ষণ ধরে এটাই বলার সুযোগ খুঁজছিল
‘ দোস্ত বিয়া একটা করছি। পাত্রী খালি আফরান নিশোর নাটক দেখে। দৌলতপুর চর এলাকার মেয়ে, ওখান থেকে ঢাকায় পড়ালেখা করেছে, স্ট্রাগল আছে লাইফে। আফরান নিশোর ছবি বুকে নিয়া ঘুমায়। রুচি হয় নাই আরকি। কিন্তু আইরনিটা কী জানোস; ওর নাম ফারহানা! F থেকে আর বাঁচলাম না; ফাইন্যান্স আর কাক এর লুপে লটকায় গেলাম!
ঢাকায় ফিরবো, বিদায় নিচ্ছি, হেঁটে এসেছি বেশ কিছুটা, আচমকা সুমনের ডাকে পিছু ফিরে তাকাই।
‘দোস্ত, রবি চৌধুরীর একটা গান শুইনা যা। আমার জীবন থেকে খাওয়া, ঘুম, বরফপানি খেলা আর রবি চৌধুরী, এই ৪টা মৌলিক প্রবৃত্তি কখনোই যাবে না রে-
ও মানসি কেন বুঝো না
এ আমার ভালোবাসা নয় ছলনা
তোমাকে চাই আমি আপন করে
আমার এ মন শুধু তোমার তরে
তুমি লজ্জার ওই আবীর মাখা ঘোমটা খোলো না
এ আমার ভালোবাসা নয় ছলনা।’
সুমন শেষ করতে পারে না গান। ব্যর্থ টিনেজ প্রেমিকের মতো কাঁদতে থাকে অঝোরে। আমি সেদিকে তাকানোর সাহস পাই না, বাড়িয়ে দিই হাঁটার গতি।
বাসাপানে এগুই। ৩০ বছরের পরিচয়ে প্রথমবারের মতো সুমনের জন্য খারাপ লাগে ভীষণ। রবি চৌধুরী গায়ক হিসেবে কেমন সেই প্রশ্ন কখনো জাগেনি, তবে ৩৫ বয়সী একজন কর্পোরেট ব্যাংকার যখন তাকে ভেবে কাঁদতে থাকে এবং কান্নায় পিছনে ফেলে অভিনেত্রী মেহজাবিনকে, তখনই তার ইনফ্লুয়েন্স বোঝা যায়। শুনলাম সুমন মানিকগঞ্জ থেকে বদলি হয়েছে এক্সিম ব্যাংকের গুলশান ব্রাঞ্চে। তার হাহাকার মিটে যাক; রবি কিংবা ফারাবি, তোমরা কি শুনতে পাও সুমনের অন্তরের ঘেউ ঘেউ!