কেইস১- আমি যখন অন্যরকম গ্রুপে যুক্ত ছিলাম যে কোনো পর্যায়ের মানুষের সাথেই নির্বিঘ্নে দেখা করা বা কথা বলা যেত। তাদের যদি বলতাম মানুষের সাথে গল্প করাই আমার জীবনের একমাত্র কাজ, এটা দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা চমকিত হতো, আমার জীবনযাপনের তারিফ করতো।
কেইস২- অন্যরকম গ্রুপের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছি ২ বছর হয়ে এলো প্রায়। উপার্জনের ধরনে পরিবর্তন এসেছে, ঘোরতর অনিশ্চয়তা যুক্ত হয়েছে। গল্প করার অভ্যাস এখনো অটুট। তবে কোম্পানী চালায় বা প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীতে চাকরি করে এরকম মানুষের সাথে কথা বলা বা দেখা করার ক্ষেত্রে নতুন এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই ইদানীং— ধরা যাক, ২য় কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে তার সাথে ইমেইলে বা হোয়াটস এপ এ প্রাথমিক আলাপ হলো। সে বলবে চলতি সপ্তাহে ব্যস্ত আছি, পরের সপ্তাহে বা মাসে যোগাযোগ করুন। নির্ধারিত সময়ে যোগাযোগ করলে আর উত্তর পাওয়া হয় না সচরাচর। একজন অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী কারণ তারা খুঁজে পায় না। বিগত ২ বছরে এই অভিজ্ঞতা এত বেশি পুনরাবৃত্ত হয়েছে বা এখনো হচ্ছে যে, ব্যক্তিক যোগাযোগ সম্বন্ধে নতুন কিছু উপলব্ধি তৈরি হয়েছে বলা যায়।
কেইস৩- একটা এক্সপেরিমেন্ট চালিয়েছিলাম। বিগত ২ বছরে দেখা করতে চেয়ে টালবাহানার শিকার হয়েছি এমন ৪ জন ব্যক্তির সাথে পুনরায় যোগাযোগ করি। তাদের জানাই বাংলাদেশের স্টার্ট আপ ইকোসিস্টেম নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছি, বিভিন্ন উদ্যোক্তাকে নিয়ে পডকাস্ট তৈরি করছি, তার সাথেও কথা বলতে চাই— ৪ জনের মধ্যে ৩ জনই সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে দেখা করা বা কথা বলার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে।
ঘটনাগুলোর কাঠামো পর্যালাচনা করলে কৌতূহলোদ্দীপক কিছু বিষয়ে দৃষ্টিপাত করা যাবে।
প্রথম ক্ষেত্রে, আমার সঙ্গে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সীলমোহর ছিল, ব্যক্তি আমি তার প্রতিনিধিত্ব করতাম, প্রফেশনাল আচরণ এবং প্রয়োজন সম্বন্ধে ধারণা রাখি এরকম একটি পারসেপশন ছিল ব্যক্তিবর্গের মনে। সেই প্রেক্ষাপটে একজন অচেনা মানুষের সাথে কথা বলতে চাওয়াটা নতুন কোনো বিজনেস উইন্ডো সম্প্রসারণের সম্ভাবনা তৈরি করলেও করতে পারে— এই ভাবনা কাজ করতো তাদের মধ্যে।প্রশংসা বা তারিফ নেহায়েতই সৌজন্য বোধ ধরে নেয়া যেত।
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, আমি একজন ইনডিভিজুয়াল বা ফ্রিল্যান্সার। আমার সঙ্গে কোনো ধরনের প্রতিষ্ঠানেরই ট্যাগ নেই, সুনির্দিষ্ট এবং স্থিতিশীল উপার্জনের উৎস নেই এবং আমার মাধ্যমে কারো আর্থিক বা সামাজিক সমৃদ্ধি পূরণের সুযোগ খুবই সীমিত। অধিকন্তু আমি যার সাথে দেখা করতে চাইছি তার কাছে আমি কোনো কাজ চাইতে পারি, ইনভেস্টমেন্ট চাইতে পারি এমন এক অনুমান তাকে ভাবিত করে, অর্থাৎ সে আপার হ্যান্ডে অবস্থান করছে; আমি তার কৃপাপ্রার্থী। তার মানে ৫ মিনিট বা ১৫ মিনিট যতক্ষণই কথা হোক, ব্যয়িত সময়ের উপযোগ সে খুঁজে পাবে না। এর মধ্যেও যদি কেউ কথা বলা বা দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করে সেটা নিজের ব্যক্তিগত আনন্দ বা কাউকে সহায়তা করতে চাইছি—সেই মহতী তত্ত্ব।
তৃতীয় ক্ষেত্রে, সে জানে তার সাথে কেন দেখা বা কথা বলতে চাই, তার এক্সপোজারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এরকম এক আশ্বাস সে তৈরি করে নিয়েছে। নিজেকে উপস্থাপন বা সেল করার সযোগ থাকলে তা কাজে লাগাতেই চাইবে।
‘কমিউনিকেশন স্কিল’— এই একটিমাত্র ব্যাপারে পৃথিবীর তাবৎ মানুষের যতখানি মনোযোগ এবং বিনিয়োগ, একটু সুচারুরূপে চিন্তা করলে বহু অসংলগ্নতা আবিষ্কৃত হয়ে যেতে পারে। যার কমিনিউনিকেশন স্কিল যতটা উন্নতা সে সামাজিক মানদণ্ডে তত বেশি
সফল মানুষ, যদিও এই স্কিলটা প্রকৃত অর্থে কীরূপ সেসংক্রান্ত সার্বক্ষণিক এক ধোঁয়াশাতেই থাকি বলা যায়।
নিজের ভাবনা অপরকে জানানো, বোঝানো এবং তার মাধ্যমে ভাবনাটি পূরণ করে নেয়া, এক বাক্যে এটিই কমিউনিকেশন স্কিল। কেউ সুন্দর লিখতে পারে, কেউ চমৎকার বক্তব্য দিতে পারে, এসব যোগাযোগেরই মাধ্যম, তবে এসব দক্ষতা ভালো মানেই কমিউনিকেশন স্কিল উন্নত তা বলা যাচ্ছে না। সেই লেখা বহু মানুষকে পড়তে হবে, বক্তব্যের প্রতি বহু মানুষের আগ্রহ থাকতে হবে। লেখা বা বলার কনটেন্ট উৎকৃষ্ট হলেও বৃহৎ এনগেজমেন্টের নিশ্চয়তা নেই।
ফলে যোগাযোগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ পাওয়া গেল এনগেজমেন্ট। তবুও যোগাযোগচক্র পূর্ণ হয়নি। এনগেজমেন্টের ফলাফল কী?
ধরা যাক, আপনার বক্তব্য ৪০০০ মানুষ শুনলো, তারপর কী? আপনি বক্তব্য দিয়েছিলেন কেন। ধরা যাক, কোনো একটি সামাজিক বা ব্যবসায়িক সংগঠনের প্রচারণা চালাতে, বা কোনো কর্মসূচীর সম্বন্ধে মানুষকে জানাতে। সেই ৪০০০ জনের বৃহত্তম অংশই যদি প্রচারণায় আশ্বস্ত হয়ে সেই সংগঠনের সদস্য হয় কিংবা প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কেনে তবেই এনগেজমেন্ট থেকে একটি পজিটিভ ফলাফল পেলেন।
ফলাফল কি এককালীন, নাকি পরম্পরা আর চলমানতা নিশ্চিত করবার দায়ও রয়েছে? অর্থাৎ আরো একটি অনুষঙ্গ যুক্ত হতে চলেছে।
যোগাযোগের ব্যাকরণ বোঝার ক্ষেত্রে মেধা, প্রতিভা আর জ্ঞান সংক্রান্ত সীমারেখাগুলো অনুধাবন জরুরী।
আমার পর্যবেক্ষণ বলে মেধাবী মানুষমাত্রই সচেতনভাবে চতুর। চাতুর্য ব্যতীত মেধাকে যথোপযুক্তভাবে ব্যবহার করে নিজের সমৃদ্ধি আনা মুশকিল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে প্রতিভাবান অধিকাংশ মানুষই ক্ষ্যাপাটে প্রকৃতির এবং আত্মপ্রেমী, অনেক কিছু করতে চায় কিছুই শেষ করে উঠতে পারে না; জীবন নিয়ে খুব বেশি সিরিয়াস না।
মেধাবী আর প্রতিভাবানের মধ্যে তফাত কিসে!
মেধার মূল আকর্ষণ এস্টাব্লিশমেন্ট। সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় মানদণ্ডে এস্টাব্লিশমেন্টকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় একজন মেধাবীর মূল লক্ষ্যই থাকে সেটা পূরণ করা। এজন্য অনবরত পরিশ্রম করে যেতে হয়, স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতে হয়, হিসাব-নিকাশ করতে হয়— সমগ্র জার্নিটাই বৈষয়িকতায় মোড়ানো। কমিউনিকেশন স্কিল বাজে হলে এস্টাব্লিশমেন্টের স্কেলেও সে পিছিয়ে পড়বে। মেধাবী মানুষেরা মুখচোরা এবং ইন্ট্রোভার্টেড প্রকৃতির হতেই পারে, তাতেই তার কমিউনিকেশন স্কিল খারাপ বলার জো নেই। সে তার কাজটি জায়গামত প্লেস করতে পারলো কিনা সেটাই মূল বিবেচ্য। কিন্তু যারা পারে না অথচ মেধার লক্ষণযুক্ত সেই সকল মানুষকে তবে কী বলা যায়? তাদের জন্য বড়জোর ‘জ্ঞানী’ বিশেষণটি বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে।
বিবিধ তত্ত্ব-তথ্য সম্বন্ধে জানাই যে জ্ঞান নয় এ ব্যাপারে বহু আলোচনা কৌতূহলী মানুষেরা সেরে নিয়েছে। জ্ঞানী হওয়ার তরিকায় সাধনা আর একাগ্রতা তাই অনিবার্য, সেই সাথে স্বকীয় উপলব্ধি। এই ফিল্টারিংয়ে বৃহত্তম অংশের মানুষই ঝরে পড়ে। মেধার লক্ষণযুক্ত দুর্বল কমিউনিকেশন স্কিলের মানুষদের জ্ঞানী না বলে ‘তথ্যবিদ’ বললে যথার্থ হবে।
প্রতিভার মূল বিপর্যয় হেয়ালিপনা আর এন্টিএস্টাব্লিশমেন্ট মানসিকতায়। তাদের মধ্যে ভনিতা, প্রাপ্তিচিন্তা এবং নির্মাণচিন্তা কাজ করে কম,নিজেদের খেয়ালে সময় উদযাপন বা অপচয় করে একসময় নিঃশেষিত হয়ে যায়। যে কারণে দৃশ্যমান কোনো প্রয়োজন তারা পূরণ করে কিনা সে সংক্রান্ত বিতর্ক চলতেই থাকে।
মেধা-প্রতিভার সংঘাত আদতে তাই কমিউনিকেশন স্কিল বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গিজনিত বিরোধ। একজন নিজের কমিউনিকেশনকে সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর করার প্রয়াস চালায়, অন্যজন কমিউনিকেশনকে ‘ডোন্ট গিভ আ ফাক’ বলে উপেক্ষা করে।
পৃথিবীর সিংহভাগ মানুষ মেধা, প্রতিভা আর জ্ঞানের এলিট চক্র ছেড়ে একটি ছাঁচে ফেলা জীবন অতিবাহিত করে। তারা সবচাইতে অস্বস্তি বোধ করে কমিউনিকেশনে। নিজের ভাবনা সম্বন্ধেই তারা কম-বেশি দ্বিধাগ্রস্ত, তা অন্যকে জানানো-বোঝানো এবং সে অনুসারে কাজ করিয়ে নেয়া সমগ্র প্রক্রিয়াটাই তাদের জন্য সমুদ্র সেঁচার মতোই অন্তহীন দুর্ভোগ, তারা প্রতিনিয়ত কমিউনিকেশন শেখার ব্যর্থ সাধনায় মন্ত্র যপতে থাকে।
স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি-ট্রেনিং ইনস্টিটিউট সহ যাবতীয় প্রতিষ্ঠানের একটাই লক্ষ্য- মানুষকে কমিউনিকেশন শেখানো। সেই লক্ষ্য যে পূরণ হয় না তা বিশ্বজুড়ে বিষন্ন মানুষের ক্রমবর্ধমানতা লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়। কমিউনিকেশন নিরেট কৌশল মাত্র। আপনি ৪টার সময় একটি অনুষ্ঠান করতে চান, তার সাথে জড়িত মানুষ যাতে যথাসময়ে উপস্থিত হয় সেজন্য তাদের বলছেন প্রোগ্রাম শুরু সাড়ে ৩টায়, হাতে ৩০ মিনিট রেখে বলছেন। কারণ আপনি ধরেই নিয়েছেন ৪টা মানে কোনোদিনও ৪টা নয়।
আপনার বন্ধু বা আত্মীয় ছবি আঁকে, তার আঁকা আপনার পছন্দ নয়। আপনি তবু বলবেন ‘ছবিগুলো দুর্দান্ত, ইউনিক—আমি ভাবছি ছবি সম্বন্ধে যাদের ধারণা কম তারা বুঝবে কিনা’। কমিউনিকেশনের মূল প্রতিপাদ্য আদতে এটাই- অভিনয়।
অভিনয়ের সমস্যা হলো আমরা এটা টিভি স্ক্রিনে বা মঞ্চে দেখতে চাই, রিয়েল লাইফে এর অস্তিত্ব এবং প্রচলন আমাদের হতাশ করে, ব্যক্তিসম্পর্কের প্রতি আস্থা কমিয়ে দেয়, অথচ এটাও মানি নিজেদের প্রয়োজনে পরিস্থিতিভেদে অভিনয় করেই যাচ্ছি। যত বেশি শেখার চেষ্টা করি অরিজিনালিটি থেকে দূরে সরে যাই, ভেজালযুক্ত হই।
কপটতা/অভিনয় বা কমিউনিকেশন, যা-ই বলি, এর উৎস কোথায়, অরিজিনালিটিও কি এক প্রকারের কমিউনিকেশন নয়? আমার অনুমান ক্ষুধা থেকেই যাবতীয় কপটতার চর্চা হয়। ক্ষুধার দুটো ডাইমেনশন রয়েছে- জৈবিক ক্ষুধা, এবং অবস্তুগত ক্ষুধা। পৃথিবীর বহু মানুষ ৩ বেলা খেতে পায় না, এটা জৈবিক ক্ষুধার একটি রূপায়ণ। কিন্তু বিত্তভিত্তিক যে শ্রেণি (নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত) সেখানে অন্নের ক্ষুধা না থাকলেও অর্থ-খ্যাতি-ক্ষমতা-প্রণোদনা আর বিনোদনের যে ক্ষুধা তা অন্নহীন মানুষের জৈবিক ক্ষুধার তীব্রতাকেও ছাড়িয়ে যায়। ক্ষুধানিবৃত্তির উপায় হিসেবেই মানুষ কৌশলের আশ্রয় নেয়। কৌশলী না হলে অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে।অপরিমিত আহার আর শারীরিক পরিশ্রমহীনতার দৃশ্যমান কুফল আমরা পাই স্থূলকায়াতায়। তখন অনেকে ডায়েট করে, জিমে যায়, সকালে হাঁটে— সমগ্র প্রক্রিয়াটিই জৈবিক ক্ষুধাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। অবস্তুগত ক্ষুধাকে নিয়ন্ত্রণের সচেতন প্রয়াস লক্ষ্য করা তো যায়ই না, উপরন্তু ক্ষুধাবৃদ্ধির জন্য উৎসাহিত করা হয়। সাফল্যক্ষুধা হয়ে উঠে পরম আরাধ্য তাড়না। এবং সেখান থেকেই আরোপিততার সূত্রপাত।
সাফল্য ব্যক্তিগত নাকি সামষ্টিক বোধ? যে কোনো সামষ্টিকতাই অসংখ্য ব্যক্তিগততার সমণ্বয়। কিন্তু প্রতিটি ব্যক্তিসত্তা যখন স্বতন্ত্রভাবে মূল্যায়িত হয় তখন সাফল্য আর সামষ্টিক থাকে না। মাইক্রোসফটের চাইতে ব্যক্তি বিলগেটস,ফেসবুকের চাইতে ব্যক্তি জাকারবার্গ সামাজিকভাবে অধিক স্বীকৃত এবং মূল্যায়িত। এসব দৃষ্টান্ত দেখার পর সঙ্গত কারণেই সামষ্টিকতা বোধ ততটা প্রবল থাকবে না। অবশ্য সামষ্টিকতা ধারণাটিই বায়বীয়। ১০ জন মানুষের সমাবেশ হলেও সেখানে একজন নেতা নির্বাচন করা হয়, এবং তার ইচ্ছা আর চিন্তাপ্রক্রিয়াতেই দল পরিচালিত হয়। যখনই সামষ্টিকতা আসবে সেখানে সোস্যাল হায়ারারকি সক্রিয়ভাবে কাজ করবে। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য থাকার দরুণ যখনই দলগতভাবে কাজ করতে চাইবে সেখানে ভিন্নমতের তৈরি হবে এবং প্রত্যেকে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে ব্যক্তিগত মুন্সিয়ানা প্রদর্শনের পাশাপাশি দলগত মৈত্রী বজায় রাখতে বৈসাদৃশ্য আর বিরোধের প্রসঙ্গগুলোকে মোলায়েমভাবে উপস্থাপন করবে। এখান থেকেই কপটতার অনিবার্যতা দেখা দেয়।
ব্যক্তিপর্যায়ে খুব বেশি গভীর চিন্তা দ্বারা তাড়িত না হওয়া মানুষ এতোসব জটিল সমীকরণ মাথায় নিতে চায় না। সে প্রতিষ্ঠিত এবং প্রচলিত অনুশাসনকে মেনে নিজের অস্তিত্ব বহন করতে চায় এবং আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ, সামাজিকভাবে প্রশ্রয়যুক্ত জীবন উপভোগ করতে চায়, এবং উন্নত কমিউনিকেশন স্কিল তাকে সেই নিশ্চয়তা দেবে এমন আশ্বাস সে মেধাবী মানুষদের কর্মকাণ্ড থেকে অনুমান করে নেয়। মেধাবী শব্দটা অপপ্রয়োগ হতে পারে; যাকে সে নিজের চাইতে শ্রেষ্ঠ গণ্য করে, যার ভাবনা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তার কার্যক্রম থেকে সে আশ্বাস খোঁজে।
আশ্বাস একটি রাজনৈতিক অভিক্ষেপ। মানসিকভাবে গ্রো করার তরিকা মাত্র একটি- প্রচুর পরিমাণে ব্রেইনওয়ার্ক করতে হবে এবং বিনোদনের পরিমাণে ব্যক্তিগত শুল্ক আরোপ করতে হবে। বিছানা-বালিশ এবং খাদ্য অত্যন্ত লোভনীয় বস্তু, এর আকর্ষণ উপেক্ষা করে ঘাম ঝরানো অতীব দুরূহ কাজ, গড়পড়তা মানুষেরা প্রলোভনের জালে জাটকা মাছের ন্যায় আটকাও পড়ে। সেই অনোন্যাপায়তার সুযোগ নিয়েই কমিউনিকেশন স্কিলের টনিক বিক্রি করা হয়। মানুষ মূলত পরনির্ভর, অথচ স্বনির্ভরতার ভান করে। রাজনৈতিক এই প্যারাডক্সেই প্রতিনিয়ত অভিনয়ের কাছে অরিজিনালিটি পরাজিত হয়। এবং এই পরাজয়ে নেই কোনো গ্লানি বা শূন্যতা, যেন পরাজয়টাই প্রশান্তি!