বিজনেস ফিলোসফি বিষয়ক বই হিউম্যান ল্যাব এর ট্যাগ লাইন – মৌন মানুষ মানসে। লাইনটা লেখার পর থেকেই ৩১৭৯ প্রশ্ন করছে আমায়- মৌন মানুষ বলতে কী বোঝাচ্ছো, যারা চুপচাপ বসে থাকে এবং অন্যদের কথা শোনে তারাই কি মৌন মানুষ?

মৌনতা কি সত্যিই সম্মতির লক্ষণ, নাকি এটা একটা ভুল ইন্টারপ্রেটেশন? একটা কিছু অস্বীকার না করলেই সেটা স্বীকার করে নেয়া হয় না। কলহ বা বিবাদ এড়াতেও অনেক সময় মৌন থাকে মানুষ।

শব্দ আমার আমৃত্যু অবসেসন। মৌন আর মন দুয়ের মধ্যে পার্থক্য কেবল ঔ-কারে, একটামাত্র ঔ-কারে অর্থের বিচ্যুতির মাত্রা আসলে কতটুকু? এসব ভাবি আর মন-মৌনের দূরত্ব বোঝার-পরিমাপের চেষ্টা করি। একটা সময়ে দুটোকে অভিন্ন লাগে। তখন মৌন মানুষের মানে হয়ে যায় মনপ্রিয় মানুষ।

মনপ্রিয় মানে মন সংক্রান্ত ভাবনা-পর্যালোচনা বা পর্যবেক্ষণে আগ্রহী মানুষ। মানুষ তো একটি বায়বীয় ধারণা। শরীর, চিন্তা, নাকি বহিঃপ্রকাশ? হয়তো সবকিছুই, অথবা কিছুই না। তার চাইতে এটা বলা সহজ, মানুষ পর্যবেক্ষণে আনন্দ পাওয়া মানুষেরাই মৌন মানুষ।

আমি একটা ঘরোয়া মৌনতা ক্লাব খোলার চিন্তা করছি, যেখানে মানুষের বিভিন্ন আচরণ এবং প্রবণতা বিষয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণ এবং অনুসিদ্ধান্ত শেয়ার করার সুযোগ থাকবে।

এই ক্লাবের লক্ষ্য বা অভিপ্রায় কী?
অদূর ভবিষ্যতে আমি বিজনেস ফিলোসফি সংক্রান্ত একটি কোম্পানি খুলবো। এই প্রতিষ্ঠানের জন্য আমার প্রয়োজন পড়বে আনকনভেনশনাল চিন্তাধারার মানুষ। প্রথাগত চিন্তার মানুষের পক্ষে বিজনেস ফিলোসফার পেশার ব্যাপ্তি, গভীরতা এবংং চ্যালেঞ্জ অনুধাবন করা অনেকটাই অসম্ভব।
মৌনতা ক্লাবকে বলা চলে বিগার বক্স মানসিকতার মানুষকে কানেক্ট করা এবং কর্মোপযোগী করার একটি পাইপলাইন প্রক্রিয়া।
আমি সবসময়ই একাডেমিক পড়াশোনায় তুলনামূলক কম আগ্রহী তরুণদের প্রতি বিশেষ সংবেদনশীল, তাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্ট ফ্লেভার দিতে অন্যরকম গ্রুপে থাকাকালে গঠন করেছিলাম ‘চিন্তাশীল মানুষ’ নামের এক ইয়ুথ ট্যালেন্ট পুল। নানা ঘটনার পরিক্রমায় চিন্তাশীল মানুষ নামটি পরিবর্তন করে ‘পিঁপড়া টিম’ রাখতে হয়, কিন্তু ইয়াং ট্যালেন্টদের প্রতি আগ্রহ এবং দায়িত্ববোধে ঘাটতি হয়নি কখনো।

মৌন ক্লাবের কার্যপ্রণালী নিয়ে এখনো ভাবা হয়নি, তবে নিশ্চিতলি বলতে পারি, এটা কোনো গণমুখী উদ্যোগ নয়, খুবই সিলেক্টিভ কিছু মানুষ নিয়েই কাজ করতে চাই। হতে পারে সংখ্যাটা ১১ জনেরও কম।

ফেসবুক পোস্ট লিখে প্রত্যাশা কী আসলে? তেমন প্রত্যাশা নেই, কারণ এধরনের পোস্টগুলোতে অবান্তর এবং অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্যই বেশি আসে, ৭ জন যোগাযোগ করলে ৬ জনই জানে না কেন যোগাযোগ করেছে। ‘যেখানে দেখিবে ছাঁই উড়াইয়া দেখো তাই’ এই কথাটা এখনকার মানুষ এতটাই অন্ধ অনুসরণ করে যে, ছাঁই উড়াতে উড়াতে আকাশ ঢেকে ফেলেছে ছাঁই দিয়ে, তবু ছাঁই উড়ানোর নেশা কমছে না। তবু ১২৭ জন পোস্টে লাইক দেয়ার পর যদি মাত্র ৩ জন মৌন মানুষ পাওয়া যায় সেটাও হয়তোবা প্রত্যাশার বাড়াবাড়িই হবে কিছুটা।

কোয়ালিটি কন্ট্রোল মেকানিজম পাবলিক পোস্টে প্রয়োগ করা কঠিন, সেটা আমার ইচ্ছাও নয়। বরং এটা নিজের অযোগ্যতা হিসেবেই মেনে নিই যে, সঠিক মানুষকে নিজের উদ্দেশ্যের সাথে মানসিকভাবে একীভূত করার ক্ষেত্রে অমার্জনীয় দুর্বলতা রয়েছে আমার। লাইক বাটন, রিএকশন বাটনগুলো রেখে ফেসবুক খুব ভাইটাল একটা প্রবণতা সনাক্ত করার কৌশল শিখিয়েছে। কিছু না বলেও অনেক কিছু বুঝে ফেলা যায়।

মৌনতা ক্লাবে যোগ দিয়ে কি দেশোদ্ধার করে ফেলা যাবে? একটা চড়ুই পাখিরও ভাগ্য বদলাবে না, তার চাইতে বিজ্ঞাপনের লাইন বলি একটা। স্যাভলন এন্টিসেপটিক ক্রিম, বিপদে সবার ভরসা।

মৌনতা ক্লাবে যোগ দিতে কিছুই করতে হবে না। একটা ছোট্ট ইমেইল লিখতে হবে, ‘ রেফারি বাজায় বাঁশি/ গরুর দরে খাসি’- এই ননসেন্স রাইমকে নিজের ভাষায় ইন্টারপ্রেট করে। ইমেইল ঠিকানা himalay777@gmail.com

মৌনতা ক্লাব মননে মিশুক।