কিছুদিন আগে মাশরাফিকে নিয়ে একটি ক্রিটিকাল এনালাইটিক পোস্ট লিখেছিলাম। আজ যখন সেই পোস্টের খতিয়ান লিখছি, তার হিসাবনামা এমন- লাইক ৫২৩, কমেন্ট ২৪৮, শেয়ার ৯৩।
অনলাইন কমিউনিটিতে মাশরাফির জনপ্রিয়তম সেলিব্রিটি। বাংলাদেশের অনলাইন কমিউনিটির বয়স যদি ১১ বছর ধরি (২০০৭-১৮) এই সময়ব্যবধিতে তার সমান জনপ্রিয়তা কেউ অর্জন করতে পারেনি।
সুতরাং মাশরাফিকে নিয়ে ক্রিটিকাল এনালাইসিস করার বিপদ এবং ঝুঁকি দুটোই বেশি। ক্রিটিকাল এনালাইসিস শব্দটাই অনলাইন কমিউনিটিতে খুব বেশি পরিচিত নয়, এর গভীরতা এবং ব্যাপ্তি বোঝার প্রজ্ঞা থাকবে না সেটা পূর্বানুমিতই ছিলো। আমার পোস্টগুলো বেশ কয়েকটা অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়। এজন্য কোনো সম্মানি নিই না কখনো।
মাশরাফির পোস্ট প্রকাশিত হওয়ার পরও অনলাইন পোর্টালগুলো সেটা প্রকাশের জন্য যোগাযোগ করেছিলো, স্পষ্টভাষায় বলেছিলাম মাশরাফিকে নিয়ে লেখাতে মানুষ বুঝে না বুঝে মন্তব্য লিখবে, নিজেদের বোধহীনতার পরিচয় দিবে, গালিও আসবে প্রচুর। এই লেখা তাই নিজের প্রোফাইলেই রাখতে চাই, যদি একান্তই আগ্রহ থাকে ২দিন পরে প্রকাশ করতে পারেন। এমনকি স্যাটায়ার পোর্টাল ইয়ারকি ডট কম এর সম্পাদক শিমু নাসেরও যোগাযোগ করেছিলেন। যদিও এই পোস্ট ইয়ারকি এর চরিত্রের সাথে মানানসই নয়, তবু চান তিনি।
মানুষের রেসপন্স সংক্রান্ত আমার যেসব অনুমান ছিলো ডাটার প্রেক্ষিতে সেগুলোকে অনুসিদ্ধান্ত হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়-
১. লেখাটি যারা শেয়ার করেছেন এবং মন্তব্য করেছেন এদের মধ্যে বড়োজোর ১১% মানুষ পুরোটা পড়েছেন এবং মূল কনটেক্সট বুঝতে পেরছেন। ৮৯% এর শেয়ার এবং মন্তব্যই ঝোঁকের বশে করা।
২. সমগ্র লেখায় মাশরাফির নির্বাচন বিষয়ে একটিমাত্র প্যারা ছিলো, অথচ শেয়ারকারী-মন্তব্যকারীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই নির্বাচনের বাইরে ভাবতেই পারেনি। তারা মাশরাফির প্রতি আমাএ বিদ্বেষ আবিষ্কার করেছে। একজন রানিং ক্রিকেটার নির্বাচনে দাঁড়ানোটা খারাপ কালচার। একবার ভাবুন তামিম, মুশফিক কিংবা মিরাজ-মুস্তাফিজ নির্বাচনে দাঁড়িয়ে গেছে; এটা কি খুব সুন্দর প্র্যাকটিস হবে? অন্য পেশাজীবীদের সাথে স্পোর্টসম্যানদের তুলনা করা যায় না, কারণ স্পোর্টস প্রচুর অনুশীলন আর সময় দাবি পূরণ করে, রাজনীতিও তাই। দুটোতেই সময় দিতে গেলে দুজায়গাতেই ফাঁকিবাজি করা হয়। যে কোনো অর্গানাইজেশনের কোড অব কন্ডাক্টে তার কর্মীদের দলীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকে। বিসিবিতেও আছে নিশ্চয়ই। নইলে এতো বছরেও কোনো রানিং খেলোয়াড় প্রকাশ্য রাজনীতি করার দৃষ্টান্ত নেই কেন? মাশরাফি যদি অবসর নিয়ে নেয়/নিতো তার নির্বাচন করা নিয়ে দলীয় রাজনীতিপন্থী মানুষ ব্যতীত কেউই সমালোচনা করতো না। কিন্তু তার হাতে আর সিরিজ আছে মাত্র ৩টা, যার একটা হলো বিশ্বকাপ। ৩টা সিরিজের জন্য ৫ বছরের ফেরে পড়বে কিনা সেই দোটানায় মাশরাফি একটা গ্যাম্বলিং করেছে। এটাকে চাইলে সমর্থন করা যায়, অসমর্থনও করা যায়, কোনোটাই প্রশ্নবিদ্ধ করা যায় না। অনেকটা বেনিফিট অব ডাউট পরিস্থিতি। কিন্তু অতি মাশরাফি ভক্তি থেকে কেউ কেউ এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ টেনে আনছেন। এতে যে বঙ্গবন্ধুর অসম্মান হয়, মাশরাফিকে হাস্যকর বানানো হয় এই বোধ কি আছে আদৌ?
৩. আমার খুবই ঘনিষ্ঠ এক মানুষ ইনবক্সে মেসেজ দিয়েছে মাশরাফিকে নিয়ে লেখা পোস্টটা জনতোষণ নীতির বহিঃপ্রকাশ। আমি অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করি, আপনি কি হেডিং দেখে আর কিছু লাইন স্কিম থ্রু করে এই মন্তব্য করলেন? কন্টেন্ট মেরিট না বুঝে কমেন্ট করা কি উচিত? তার বক্তব্য ছিলো, তোমার কন্টেন্টে আগ্রহ পাই না আসলে। তুমি কনফারমেশন বায়াস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে স্টোরি সাজাও নিজের মতো৷ আরো কিছু কথার পরে বোঝা গেলো, সে আসলে পোস্ট পড়ে কিছুই বুঝেনি এবং যেহেতু মাশরাফি নির্বাচন করছে আমি সেই ফায়দা কাজে লাগিয়ে পোস্ট লিখেছি। এই যদি হয় বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার নমুনা!
৪. আজ অনুজপ্রতিম মুরাদুল ইসলাম বললো, ভাই আপনি ফেসবুকে লেখা বাদ দেন, এখানে শুধু চুম্বক অংশ দিবেন৷ আপনি যত এনালাইসিস করে লিখেন ফেসবুকের অডিয়েন্স তেমন নয়। আপনি বরং একটা সিক্রেট গ্রুপ খুলুন, সেখানে আপনার লেখার লিংক শেয়ার করবেন। যারা আগ্রহী তারা মান্থলি সাবস্ক্রাইব করবে ৭৯ টাকায়। আর আপনার চিন্তামূলক পোস্টগুলো এখন থেকে ইংরেজিতে লিখুন, আমি রিডমি তে ডিপ ইনসাইটের বহু লেখা ভাইরাল হতে দেখেছি। আপনার লেখাতে ইউনিক কিছু ইনসাইট আছে যেগুলো বাইরের দেশের বহু আর্টিকেলেও পাওয়া যায় না। আপনি ইংরেজিতে লিখলে গ্লোবাল অডিয়েন্স পাবেন ৩ বছরের মধ্যে। ৭৯ টাকা সাবস্ক্রিপশন ফি এর আইডিয়াটা পছন্দ হয়েছে। ইংরেজিতে লেখার প্রস্তাবটাও অতি উত্তম।
৫. গত রাতে ‘হায়ারিং হেয়ালি’ শিরোনামে রিক্রুটমেন্ট কালচার বিষয়ে পোস্ট লিখেছিলাম। সাড়া নেই একদমই৷ অথচ এই একই পোস্ট ইংরেজিতে লিখলে অনেকেরই নজরে আসতো নিশ্চিত। রিক্রুটমেন্ট ইন্টারভিউতে ফালতু টাইপ কিছু প্রশ্ন করা হয়, যেগুলো দিয়ে আসলে কিছুই যাচাই করা যায় না। সেই ক্রিটিকাল এনালাইসিস বিষয়ে ‘ভাইভা ভাওতা’ নামে আরেকটি পোস্ট লিখবো হয়তো। কিন্তু এই পোস্টেরও রেসপন্স থাকবে না নিশ্চিত।
৬. কোথাও মন্তব্য করতে হলে সেটা যে খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তে হয় এই ন্যূনতম বেসিক জ্ঞানও নেই কেন মানুষের? এটা কি সেলফি আর চেক ইন এর প্রভাব, নাকি মোটভেশনাল স্পিচের বাইপ্রোডাক্ট? ভিশনহীনতা আর অদূরদর্শীতার নৃতাত্ত্বিক গবেষণা হওয়া উচিত। এই খাতে খরচ করবো নিকট ভবিষ্যতে।
৭. মানুষকে উপেক্ষা করাটা বরাবরই কঠিন আমার জন্য। ফালতু কমেন্ট চাইলেই মডারেশনের অধীনে নিয়ে আসা যায়, কিন্তু তাতে ডাটার পর্যাপ্ততা কমে যাবে। ফালতু কমেন্টে রিপ্লাই না দিলেও অস্বস্তি লাগে। কিন্তু একবার রিপ্লাই দিয়ে ফেললে ফালতু আলাপের বাহাস জমে যায় এটাই সমস্যা। ২০১০-২০১৬ এর জুন পর্যন্ত ব্লগিং বন্ধ ছিলো, এরপরে ফেসবুকে ব্লগিং শুরু করি৷ কিন্তু আড়াই বছরে যা ডাটা পেলাম তাতে হিরো আলম কেন নির্বাচনের নমিনেশন নিতে চায় তার ব্যাখ্যাটা স্পষ্ট হয়েছে৷ হিউম্যানল্যাব চালাতে না হলে ফেসবুক থেকে রিটায়ার করতাম ২-৩ বছরের জন্য৷