বিগত এক দশকে ব্লগিং সংক্রান্ত দুটো পরস্পরবিরোধী ধারণা যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে-
ধারণা১- ব্লগের কারণে প্রচুরসংখ্যক নতুন লেখক তৈরি হয়েছে। পত্রিকায় একটি লেখা প্রকাশের জন্য যে পরিমাণ হ্যাপা এবং সাহিত্য বা অন্যান্য বিশ্লেষণমূলক লেখা ছাপা হওয়ার জন্য পত্রিকায় জায়গা বরাদ্দের পরিমাণ লেখকের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। ব্লগিংয়ের কারণে যে কেউই তার চিন্তাধারা লিখে পাঠকের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাচ্ছে। সেই সকল মন্তব্যের ভিত্তিতে লেখক অনেক সময় লেখাতে পরিবর্তন আনছে। বইমেলায় নতুন যারা বই প্রকাশ করছে তাদের বৃহত্তম অংশই কোনো না কোনোভাবে ব্লগিংয়ের সাথে জড়িত। ফেসবুকের ওয়ার্ডলিমিট তুলে দেয়া, বেশ কয়েকজন ব্লগারের খুন হওয়া মিলিয়ে সর্বশেষ কয়েক বছরে ব্লগিং ধারণাটা ফেসবুকিংয়ের সাথে মার্জ হয়ে গেছে।
ধারণা২- ব্লগারদের লেখায় সাহিত্যমান সন্তোষজনক নয়। তাদের অধিকাংশই চরিত্র আর কাহিনী নির্মাণে ব্যর্থ। মন্তব্য আর লাইক পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় ছোট দৈর্ঘ্যের লেখা লিখতে লিখতে অভ্যস্ততার দরুণ তাদের পক্ষে দীর্ঘ পরিসরের লেখায় কনসিসটেন্সি ধরে রাখা কঠিন। তাদের উপস্থাপন এবং বুননে ব্লগিংয়ের ছাপ সুস্পষ্ট। ফলে ব্লগের কারণে বইয়ের বিক্রি বেড়েছে, প্রকাশকরা কিছুটা ধনী হয়েছে, কিন্তু পাঠকরুচি তৈরি বা বিকশিত হয়নি। বরং কোরাম গড়ে উঠেছে, ফ্যানবেইজ গড়ে উঠেছে— যারা ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা অন্য যে কোনো স্বার্থের প্যারামিটারে বই কিনছে ঠিকই, পড়ছে না। দেশের গড় বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা উন্নয়নে ব্লগিংয়ের অবদান শূন্যের সামান্য বেশি।
আমি কেবল অবাক হয়ে ভাবি, সম্পূর্ণ বিপরীত দুই ধারণা জনপ্রিয়তা পেল কীভাবে। এগুলোর মধ্যে ফ্যাক্ট কতটুকু, নাকি পুরোটাই প্রোপাগাণ্ডা?
প্রশ্নের গভীরে ঢুকতে গিয়ে অজস্র প্রশ্নের সুড়ঙ্গ ভেদ করতে হয়।
ব্লগিংয়ের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল? এটা মূলত সিটিজেন জার্নালিজম, বা কিছুক্ষেত্রে ডিজিটাল ডায়েরি। মূলধারার মিডিয়াতে যা সচরাচর আসবে না, অনলাইন প্লাটফরমে সচেতন নাগরিক তার সেই ভাবনা বা পর্যবেক্ষণগুলো লিখে সচেতনতার নেটওয়ার্ক তৈরি করবে। সাংবাদিকতার মধ্যে আমরা এনালিটিক বা ক্রিটিক খুঁজি না, কেবল ঘটনার সত্য উপস্থাপন প্রত্যাশা করি। ক্রিটিক বা এনালিটিক পাওয়া যাবে বিশেষজ্ঞ কলামে।
ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটে থাকে। এখানে মূলত ১০-১২ লাইনের মধ্যে একটি ঘটনা বা অনুভূতি প্রকাশ করা হয়। যারা আরেকটু দীর্ঘ করে লেখেন তারা ব্লগার হিসেবে জনপ্রিয়তা পান। তবে সাধারণ ব্লগার আর তাদের লেখার দৈর্ঘ্যের অনুপাত বড়োজোর 1:9 হবে, এর বেশি হলে তারা ব্লগার হিসেবে জনপ্রিয়তা পাবেন না।
(২০০৮ থেকে ২০১০ পর্যন্ত প্রায় আড়াই বছর বাংলাদেশের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠিত ব্লগেই হিমালয়৭৭৭ নিকে ব্লগিং করেছি। সেই সময়ের পর্যবেক্ষণ থেকেই মন্তব্যটা করা)
অন্যদিকে একটা গোষ্ঠী ছিল বা আছে যারা গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ লিখতে পছন্দ করেন, কিন্তু পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক বা লিটল ম্যাগ গ্রুপের সাথে কদর না থাকায় লেখা প্রকাশের সুযোগ পেত না/ পায় না। ব্লগ তাদের জন্যও লেখালিখি চর্চার একটি প্লাটফরম হয়ে উঠে। ভোটের সময় যেমন জনসংযোগ করতে হয়, প্রোডার্কের করতে হয় মার্কেটিং, তেমনি লেখার পরে কমেন্ট পাওয়ার জন্য অন্যদের লেখাতে কমেন্ট করতে থাকে। এভাবে কয়েক মাসের চেষ্টায় একটি নিজস্ব কমিউনিটি গড়ে তুলে যাদের সাথে সম্পর্কটা লেখার প্রয়োজনে গড়ে উঠলেও লেখার ক্রিটিক ফিকে হয়ে ব্যক্তিসম্পর্কচর্চাই মূখ্য হয়ে উঠে। সিরিয়াস লেখালিখি করতে চাওয়া মানুষদের ভিশন তখন সংকীর্ণ আর সংকুচিত হয়ে আসে। সে তখন প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ( লেখার কনটেন্ট) এর চাইতে সেলস-মার্কেটিংকে ( প্রচার আর জনসংযোগ) গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।
এজন্য কি ব্লগিংকে দায়ী করা যায়?
ব্লগের মূল উদ্দেশ্যের মধ্যেই লেখক তৈরি ব্যাপারটা নেই, সেটা সম্ভবও নয়। ব্লগ চেয়েছে সমকালীন বা সাম্প্রতিক সময়ের ভারচুয়াল কণ্ঠস্বর হতে। অন্যদিকে লেখাকিখি একটি দীর্ঘকালীন চিরন্তন অভ্যাস বা ধ্যানের বিষয়। আজ যদি পেয়াজ বা লবণের দাম বাড়ে সেটা জনজীবনকে প্রভাবিত করবে তাৎক্ষণিকভাবে, ব্লগে সেসব নিয়েও নানামুখী আলোচনা আর প্রতিক্রিয়া চলবে। ২ দিন পরেই অন্য প্রসঙ্গ এসে জনজীবনে হানা দিবে, পেয়াজের কথা ব্লগ ভুলে যাবে। এটা একটা প্রাত্যহিকতার ট্র্যাপ। যারা লেখালিখি করতে চায় তারা এই ট্র্যাপে একবার ধরা পড়লে সেই চোরাবালিতেই ডুবতে থাকে, লেখালিখির মূল এসেন্সটা আর ধরা হয় না। নিজস্ব নেটওয়ার্কিং স্কিল কাজে লাগিয়ে বই হয়তো বিক্রি করা যায়, কিন্তু নিজেও অনুভব করে লেখক হিসেবে কোথাও একটা গোঁজামিল দেয়া হয়ে গেছে।
তবে কি সিরিয়াস লেখকেরা ব্লগিংয়ে মিসফিট? এ বিষয়ে আরো কথা হবে, তার আগে ফেসবুকিং প্রসঙ্গে আসা যাক।
ফেসবুকিংয়ের উদ্দেশ্য কী?
ফেসবুক নিজেদের পরিচয়ে বলছে সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট। অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে মিথস্ক্রিয়া হবে। মিথস্কিয়ার টুলস কী কী হতে পারে? চ্যাটিং, ছবি আপলোড, চেক ইন, ১-২ লাইনে নিজের আপডেট জানানো বা ভাবনা লেখা, কোনোকিছু পড়ে বা দেখে ভালো লাগলে সেটা নেটওয়ার্কের সবার সাথে শেয়ার করবে।
ফেসবুককে বলা যায় ডিজিটাল এলবাম, যেখানে একজন মানুষ তার মুহূর্তগুলোকে ধরে রাখবে। এলবাম আর ডায়েরির যে পার্থক্য ফেসবুক আর ব্লগের পার্থক্যটাও একই পর্যায়ের।
কিন্তু ফেসবুক যখনই বিজনেস প্লাটফরম হয়ে উঠলো, এলবাম থেকে সে পরিণত হলো সুপার শপে। সুপারশপে সেফটিপিন থেকে শুরু করে গরুর মাংস সবই পাওয়া যায় ক্রেতার চাহিদা অনুসারে।
ফেসবুক-সুপারশপ এর প্রধান সেলিং আইটেম সময়, এবং দ্বিতীয়ত মানুষ। বলা যায় হিউম্যান ট্রাফিকিং আর টাইম বিক্রি করেই সুপারশপ এর মূল বিজনেসটা আসছে। ওষুধের দোকান একটা আলাদা বিজনেস এরিয়া, কিন্তু অধিকাংশ সুপারশপেই মেডিসিন কর্নার থাকে। ব্লগকে বলা যেতে পারে সেই ফার্মেসি। ফেসবুক যখন স্ট্যাটাস দেয়ার ক্ষেত্রে শব্দসীমা বহুগুণ বাড়িয়ে দিল, ব্লগিং তখন ফেসবুকিংয়ের সাথে মার্জ হয়ে গেল। তবে এই মার্জিংয়ে একটা সমস্যা হলো বিপনন পলিসির কারণে। সুপারশপে পণ্যের দাম সাধারণ বাজারের তুলনায় সাধারণত কিছুটা বেশি হয়, এক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো। কাঁচাবাজারের চাইতেও সুপারশপে পণ্যের দাম কমানো হয়েছে এগ্রেসিভ কাস্টমার একুইজিশন নীতির প্রদর্শনী হিসেবে। মানুষ আর সময় বিক্রি হবে যেখানে, সেখানে ডিসকাউন্ট তো থাকবেই৷ ফলে কাঁচাবাজার, ঘুঁপচি দোকান বা ফুটপাতের হকার আইটেমগুলোও চলে এসছে সুপারশপে, কীরকম নয়েজ সৃষ্টি হবে ভাবুন একবার।
ফেসবুকিংয়ের মূল উদ্দেশ্যের সাথেও সিরিয়াস লেখালিখি খুব ভালোমতো ম্যাচ করে না। বরং সিরিয়াস লেখা কনটেন্ট হিসেবে অন্য মিডিয়ামে প্রকাশিত হবে, মানুষ সেই মিডিয়ামে পড়ার পরে ফেসবুকে শেয়ার করবে। এখানে মানুষের সময় কাটবে মূলত সামাজিক অসঙ্গতি, দুর্নীতি, বিনোদন আর চলমান ইস্যু নিয়ে ২-৫ লাইনে কথা চালাচালি করে, অথবা বিভিন্ন ট্রেন্ড অনুসরণ করে, ব্রেইন টিজার খেলে। এর মধ্যে একটি গোষ্ঠী থাকবে যারা চলমান ইস্যু, ইমোশনাল ক্রাইসিস প্রভৃতি বিষয়ে ২০-২২ লাইনে ভাসা ভাসা ব্যাখ্যা লেখার চেষ্টা করবে, মানুষ সেসব পড়ে নিজেদের প্রোফাইল থেকে শেয়ার করবে, এবং সেই গোষ্ঠীর ব্যক্তিবর্গকে অনুসরণ তালিকায় রাখবে।
যারা সিরিয়াসলি লিখতে চায়, তারা ব্লগে গিয়েছিল পাঠকের আশায়, কিন্তু ব্লগের সিটিজেন জার্নালিজম ধারণা ফেসবুকের হিউম্যান ট্রাফিকিং ভিত্তিক সুপারশপ ধারণার কাছে প্রতিযোগিতায় হেরে মার্কেট আউট প্রায়। ফলে লেখালিখি করতে চাওয়া মানুষেরা ফেসবুকে এসে শরণার্থীর ন্যায় এলবামে চিন্তা আপলোড করতে চাচ্ছে। ফেসবুকের এক বাড়তি প্রলোভন লেখা শেয়ারের মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া। ৬ মাস ফেসবুক নিয়মিত ব্যবহার করলেই যে কোনো সেনসিবল মানুষের ধারণা হয়ে যায় কী ধরনের কনটেন্ট বেশি শেয়ার হয়, বা ভাইরালিটি পায়। ভাইরালিটি আরেকটা মরণঘাতী ট্র্যাপ, প্রতিটি লাইন লিখবার পূর্বে কল্পিত পরিসংখ্যান তৈরি হতে থাকে শেয়ার, কমেন্ট আর লাইকের।
সিরিয়াস লেখকেরা তাই ফেসবুকেও আদতে উদ্বাস্তু।
লেখক তো লেখকই, তার পূর্বে ‘সিরিয়াস’ ট্যাগ বসানোর কারণ কী। আমি সিরিয়াস লেখক বলতে তাদের বোঝাচ্ছি যারা কঠোর সাধনা আর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে লেখালিখির প্রস্তুতি নেয়, নিজেকে ভাঙ্গা-গড়া প্রক্রিয়ার মধ্যে রাখে, এবং সেই সাথে নিজস্ব দর্শন, পর্যবেক্ষণ আর চিন্তার মধ্যে সমণ্বয় রক্ষা করে।
নিজস্বতা ধারণাই কি ভেক, বা পৃথিবীতে বিশুদ্ধ মৌলিক পর্যবেক্ষণ বলতে কিছু আছে কিনা তা অবশ্যই আলোচনাসাপেক্ষ, তবে আমার আর্গুমেন্ট হলো ডেলিবারেটলি কোনো চিন্তা বা ট্রেন্ডকে অনুসরণ করা আর বিভিন্ন চিন্তার সমাবেশ ঘটিয়ে নিজের চিন্তাকে সমৃদ্ধ করা দুইয়ের মধ্যে ফারাক বিস্তর। অধিকাংশ লেখক প্রথম ধারায় পড়ে যায়, য্র কারণে তারা গতানুগতিক লেখক হিসেবেই লেখালিখি চালিয়ে যেতে থাকে।
সিরিয়াস লেখকেরা তবে লিখবে কোথায়; ব্লগ, ফেসবুক কোথাও তো তাদের জায়গা হচ্ছে না।
আমরা সোস্যাল মিডিয়ায় যেসব লেখা শেয়ার করি সেগুলোর সোর্স কী? মূলত বিভিন্ন লেখালিখির প্লাটফরম, যেখানে মানুষ যায়-ই পড়ার উদ্দেশ্যে, ডায়েরি বা এলবাম তৈরি করতে নয়। প্রশ্ন হতে পারে, এসব প্লাটফরমে তো খুব বেশিসংখ্যক মানুষ যায় না, নিজের পরিচিতি তৈরি হবে কীভাবে; পরিচিতি না থাকলে বই তো বিক্রি হবে না।
প্রত্যেক সিরিয়াস লেখকের ব্যক্তিগত ব্লগ থাকা উচিত, যেটা তার ডায়েরি নয়, চিন্তার খেরোখাতা হিসেবে ব্যবহৃত হবে। সেখান থেকে ভালো মনে হওয়া লেখাগুলো সে সোস্যাল নেটওয়ার্ক প্লাটফরমে শেয়ার করবে।
প্রশ্ন আসতে পারে, আমি নিজে কেন ফেসবুকে লিখি। আমার নিজস্ব ব্লগ himalaypi.com এ কেন দিই না, বা যখন ব্লগিং করতাম তখনই বা নিজের ব্লগ করিনি কেন?
খুব সোজাসাপ্টা উত্তর।
প্রথমত আমি ফেসবুক ব্যবহার করি মূলত মানুষ নিয়ে রিসার্চ করতে আর আমার ভেঞ্চার হিউম্যানল্যাব৭৭৭ এর ভ্যালু প্রোপজিশন আর ইমপ্যাক্ট সম্বন্ধে মানুষের মধ্যে ইমপ্রেসন তৈরিতে।
দ্বিতীয়ত সুপারশপের ট্র্যাপে পড়ে আমার লেখার কনটেন্টের আকার বা বিষয়বস্তুতে সামান্যতম পরিবর্তন আসে না তা আমার বই যারা পড়েছেন তারা বলতে পারবেন আশা করি।
লেখালিখি করলেই কি বই প্রকাশ করতে হবে?
একটা ৪ বা ৫ ফর্মার বই প্রকাশ করতে যে পরিমাণ টাকা খরভ হয় সেটা খুব বড়ো কোনো এমাউন্ট নয়। বেকার আর নিম্নবিত্ত ব্যতীত যে কোনো শ্রেণির পক্ষেই তা যোগাড় করা সম্ভব। ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখতে চাওয়ার আর পাওয়ার যে তৃপ্তি তার সাথে খুব কম কিছুই তুলনাযোগ্য। মানুষ লেখা পড়ুক বা সংগ্রহে রাখুক, এই প্রত্যাশার চাইতেও মলাটের উপরে নিজের নাম জ্বলজ্বল করতে দেখা মানুষকে অধিক মুগ্ধ করে। সেই মুগ্ধতা জলে নিজের ছায়া দেখে মুগ্ধ নার্সিসিয়াসের উচ্ছ্বাসের চাইতেও বহুলাংশে বেশি।
অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন যে কোনো ব্যক্তিই লিখতে পারে। তবু লিখে না মূলত দুই কারণে। প্রথমত ধৈর্যের অভাব। দ্বিতীয়ত চিন্তাশক্তি ব্যবহারে অপারঙ্গমতা। এই দুটি বাধা জয় করতে পারলেই লেখা সম্ভব। তবু তাকে কি সিরিয়াস লেখক বলা যাবে?
যার চিন্তা রিফ্লেক্টিভ এবং রিপ্রোডাক্টিভ, সেখানে নিজস্বতা আসবে কোত্থেকে? রিফ্লেকশন, রিপ্রোডাকশন জাতীয় বৈশিষ্ট্যগুলো গবেষক আর প্রতিবেদকের সাথে মিলে যায় খুব, তারাও তাদের প্রাপ্ত ফলাফলকে চিন্তার অক্ষরে প্রকাশ করে, সেখানে নিজস্বতা থাকে কদাচিত।
লেখক হওয়ার প্রস্তুতিতে প্রত্যাখ্যান ( সামাজিক এবং পারিবারিক), প্রতিরোধ ( প্রাতিষ্ঠানিক), প্রতারণা ( সামাজিক/প্রাতিষ্ঠানিক), অবমাননা ( সামষ্টিক) এবং বিচ্ছিন্নতা ( ব্যক্তিগত) অতীব জরুরী। এই ৫টি ফিল্টার বা ছাঁকনির মধ্য দিয়েই লেখকের মধ্যে জেদ আর কর্মস্পৃহা তৈরি হয়। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সামাজিক খ্যাতি আর ক্ষমতা উপভোগই যদি প্রধান প্রতিপাদ্য হয় লেখালিখতে প্রবেশ তার জন্য হাঙ্গরভর্তি সমুদ্রে সাঁতার কাটতে নামার শৌখিনতা। প্রতিপাদ্য আর প্রধান প্রতিপাদ্যের মধ্যে ফারাক বিস্তার, এটুকু মনে রাখা সমীচীন হবে।
এই প্রস্তুতিতে ফেসবুক বা ব্লগিং কেন প্রতিবন্ধকতা? কারণ আপনার টার্গেট পাঠকগোষ্ঠীর খুব সীমিত অংশই সেখানে উপস্থিত। নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে আপনার নামটি যদি চোখে পড়ে পরিচয়বশত একটি লাইক, বা আপনি কোন বিষয়ে লিখেছেন তা অনুমান করে সেই পক্ষেই ২-৪ টা কথা লেখা— এই প্রক্রিয়ায় আত্মমূল্যায়নের সুযোগ খুবই সীমিত।
ফেসবুক বা ব্লগ কখনো লেখক তৈরিই করতে চায়নি, তাদের যা চাওয়া ছিল তা অনেকটাই পূরণ হয়ে গেছে। ‘তুমি এসেছিলে পরশু’ বা ‘ কাকারা আব্বুরা’ জাতীয় বই দিয়ে লেখক তৈরি হবে না, কিছু ভুইফোড় প্রকাশক বাড়বে মাত্র।
কিন্তু লেখকের কোনো চাহিদা সোসাইটিতে আদৌ কি আছে? সেটাই প্রশ্ন