বাংলাদেশী সিনেমায় ভিলেনদের বিচরণক্ষেত্র খুবই সীমিত। তারা মদ খায়, নারীলোলুপ, ড্রাগ ব্যবসায়ী, খুন করে, সাধারণ মানুষকে অত্যাচার করে, এবং সিনেমার শেষ দৃশ্যে জেলে যায়, অথবা ‘ট্রেড মার্ক ডায়ালোগ’ আউড়িয়ে গুলি খেয়ে মারা যায়। তামিল সিনেমার ভিলেনদের মতো ব্যাপক বৈচিত্র্য তাদের চরিত্রে নেই, তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য মানুষের ক্ষতি করা। এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ভিলেনদের নিয়ে আমার আলাদা একধরনের আগ্রহ কাজ করেছে, বাংলাদেশের কোনো নায়ককে নিয়েই আমি ততোটা ফ্যাসিনেটেড নই, কিন্তু বেশ কয়েকজন ভিলেন ছিলেন যারা তামিল বা মালায়লাম ইন্ডাস্ট্রির হলে দারুণ সাফল্য পেতেন।
বাংলাদেশী সিনেমার কাল পরিক্রমায় যত ভিলেন ছিলেন বা আছেন, স্ক্রিনজুড়ে সীমাবদ্ধ বিচরণ সত্ত্বেও আমার বিশেষ আগ্রহ সৃষ্টি করতে পেরেছেন ২ জন:রাজীব এবং হুমায়ুন ফরীদি । আগ্রহের তালিকায় থাকবে আহমেদ শরীফ এবং এটিএম শামসুজ্জামানও, তবু বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রাজীব আর ফরীদিই এগিয়ে থাকবেন। শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘ভণ্ড’ সিনেমাতে রাজীব, হুমায়ূন ফরিদী, এটিএম, খলিল, নাসির খান- ৫ জন ভিলেন স্ক্রিন শেয়ার করেছেন (যদিও রাজীব আর নাসির খান বাদে বাকিরা পজিটিভ ক্যারেক্টারে ছিলেন)।
নায়কদের ভালো লাগার তেমন কোনো কারণ নেই। সিনেমাজুড়ে নায়িকার সাথে প্রেম করা আর ভিলেনের সাথে মারামারি করে দর্শকের তালি পায় ঠিকই, কিন্তু সেই কাজগুলোতে ফ্যান্টাসি বেশি। কিন্তু সিনেমায় যদি ভিলেন না থাকে সেই সিনেমা এগিয়ে যাবে কীসের উপর ভিত্তি করে। ভিলেনরাই সিনেমাকে এগিয়ে নেয়। হলভর্তি দর্শকের রাগ-ক্ষোভকে নিজের কাঁধে বহন করে সে সিনেমার গতি নির্ধারণ করে দেয়। তালি পাওয়ার লোভ সবারই, কিন্তু গালি খাওয়ার বাস্তবতাকে হজম করতে পারে সে-ই তো প্রকৃত ত্যাগী। অথচ সিনেমা বিষয়ক সকল আলোচনায় নায়ক-নায়িকার জয়জয়াকার। বোম্বের শোলে সিনেমার গব্বার সিং ছাড়া আর কোনো ভিলেন বোধহয় এই উপমহাদেশের ইতিহাসেই সমাদর পায়নি। অবশ্য ভিলেন সমাদৃত হওয়ার ক্ষেত্রে একটা বড় গণ্ডগোল আছে। নায়কের চাইতে ভিলেন যখন প্রার্থিত বেশি হবেন, ধরে নিতে হবে সেই সোসাইটিতে ভালোর চাইতে খারাপের এপ্রিশিয়েশন বেশি, অন্যায়কে এখানে পজিটিভলি দেখা হয়। কারণ, গ্রেটার পপুলেশনের আচরণের মধ্য দিয়েই সেই সোসাইটির নর্মস এন্ড ভ্যালু রিফ্লেক্টেড হয়। ভিলেন নিন্দিত থাকলে সেটাই স্বস্তিদায়ক। তবে সিনেমাকে যারা কেবলমাত্র এন্টারটেইনমেন্ট মিডিয়াম হিসেবেই বিবেচনা করতে ইচ্ছুক, অথবা সিনেমার মধ্যে নন্দনতত্ত্ব খুঁজতে চান, তারা ভিলেনের প্রতি বেশি অনুভুতি বোধ করতেই পারেন, সেটাই বরঞ্চ যৌক্তিক এপ্রোচ।
ডিপজলের আবির্ভাবের পূর্বে অশ্লীল গালাগালি ভিলেনদের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ব্যাপক আকারে ছিলো না, বরং তার আগ পর্যন্ত ভিলেনদের বেশিরভাগ ছিলেন নায়িকার বাবা যিনি অবৈধ ব্যবসা করেন অথবা নায়কের ছোটবেলায় তার বাবাকে খুন করেন। ডিপজল পুরোপুরি এবং কিছুটা মিশা সওদাগর, এই দুজনে মিলে মাঝখানের কয়েক বছর ভিলেনকে রূপান্তরিত করেছিলেন অশ্লীলতার ধ্বজাধারীতে। হুমায়ুন ফরীদিও রাঙা বউ সিনেমাতে অশ্লীল দৃশ্যে অভিনয় করেছেন, তবু ডিপজল বা মিশা সওদাগরের মতো নিয়মিত অশ্লীলতাকে প্রোমোট করেননি।
সিনেমায় ভিলেন দরকার, কারণ আমরা নিজেদের ভিকটিম ভাবতে ভালোবাসি, প্রকাশ্য বা গোপন শত্রুর অস্তিত্ব খুঁজতে তৎপর থাকি, আমাদের প্রত্যেকের মনের মধ্যে বসত করে একজন মাল্টিকালারড সুপারম্যান। ভিলেন ছাড়া এসব দাবি স্যাটিসফাই করবে কে! ভিলেনের একটি গোপন আস্তানা থাকবে, সেখানে সে নায়কের আত্মীয়-স্বজন আর নায়িকাকে বন্দী করবে, নায়ক গাড়ি দিয়ে আস্তানা গুড়িয়ে দিয়ে অথবা লাফ দিয়ে কাচ ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করবে। ভিলেন সমস্ত সম্পত্তি লিখিয়ে নেয়ার জন্য দলিল হাতে রেডি থাকবে, ঠিক সাইন করার মুহূর্তে কেউ একজন এসে বন্দুক ধরবে, এগুলো সবই আমরা জানি, তবু উৎকণ্ঠা নিয়ে দেখি, কারণ এই টেনশন এবং প্রেডিক্টেবল ক্রাইসিস,এসবের মধ্যেই ভিলেনের মাহাত্ম্য। আমরা তো ভিলেনকে নির্মুল করেই বিজয় নিশ্চিত করার নীতিতে বিশ্বাসী মানুষ।
রাজীব আর হুমায়ুন ফরীদির মধ্যে তুলনামূলক আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে আরও কয়েকজন ভিলেনকে নিয়ে সংক্ষেপে কিছু বলতে চাই। স্মৃতি থেকে লিখছি বলে সিনেমার নাম উল্লেখ করতে পারছি না, বা জনপ্রিয় ডায়ালোগগুলোও লিখতে পারছি না ঠিকমতো। তবু সামগ্রীকভাবে কে কেমন ইনফ্লুয়েন্সিয়াল ছিলেন সেটা বলা সম্ভব।
এটিএম শামসুজ্জামান দীর্ঘদিন গ্রামীণ দুষ্ট ভিলেন ছিলেন। মোড়ল, মাতব্বর জাতীয় রোলগুলো তিনি বেশি করতেন। ক্যারিয়ারের মাঝামাঝি এসে তিনি ভিলেন চরিত্রের মধ্যে হিউমার ঢুকিয়ে দেন, যা চরিত্রকে অন্য মাত্রা দেয়। কিছুটা কমেডি আর বোকা বোকা আচরণ অথচ ভিলেন, এরকম ধাঁচের চরিত্রগুলো বেশি দর্শকপ্রিয়তা পায়। ক্যারিয়ারের শেষের দিকে তিনি পুরোদস্তুর কমেডিয়ান হয়ে যান। একসময়কার জাঁদরেল ভিলেন পরিচয়টি বিলীন হয়ে যায়। তবে তিনি অসম্ভব প্রতিভাবান একজন মানুষ। নাটক, থিয়েটার, সিনেমা সবখানেই বিচরণ ছিলো, সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখতেন, ডিরেকশনও দিয়েছেন। এই বহুমুখী প্রতিভাধর মানুষটির অভিনয়দক্ষতা আরও ভালোভাবে টের পাই ‘দায়ী কে’ সিনেমার মাধ্যমে। ‘দুনিয়া তে মজা লে লো, দুনিয়া তোমারি হ্যায়’- এই গানে তার সাথে ছিলেন আরেক শক্তিমান অভিনেতা আনোয়ার হোসেন। এই পোস্টের কনটেক্সট এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় আলোচনা সেদিকে বাড়াচ্ছি না।
বাংলা সিনেমায় নায়িকার বাবা মানেই চৌধুরী সাহেব। এই টাইপ ভিলেন চরিত্রে সবচাইতে বেশি অভিনয় করেছেন গোলাম মোস্তফা। শুধু ভিলেন হিসেবে তাকে সীমাবদ্ধ রাখার মানে হয় না, গোলাম মোস্তফা তার চাইতেও অনেক বেশি কিছু। ৭০ এর দশকে লম্পট ব্যবসায়ী চরিত্রে সবচাইতে বেস্ট অপশন ছিলেন রাজ। এছাড়া স্মাগলার চরিত্রেও বেশ মানিয়ে যেত তাকে। ভরাট কণ্ঠ, স্যুট, ঠোঁটে চুরুট, ঔদ্ধত্যপূর্ণ চাহনি সবমিলিয়ে তিনি ভিলেনের এক পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ।
আরেকজন শক্তিমান ভিলেন ছিলেন খলিল। গ্রাম্য থেকে শহুরে, যে কোনো খারাপ মানুষের চরিত্রেই তিনি মানিয়ে যেতেন। বিশেষত সাদা কালো যুগে ভিলেন হিসেবে তার আধিপত্য ছিলো নজরকারা।
রঙিন সিনেমা শুরুর অল্প কিছুদিন পূর্বে জমজমাট আত্মপ্রকাশ ঘটে আহমদ শরীফের। জসীমের সাথে তার কেমিস্ট্রিটা ছিলো বিশেষ আকর্ষণ। অরুণোদয়ের সূর্যসাক্ষ্মী সিনেমায় নায়ক চরিত্রে অভিনয় করলেও ভিলেন হিসেবেই নিজের চাহিদা বৃদ্ধি করতে সমর্থ হন। তার প্রায় সব সিনেমাতেই ‘হারামীর বাচ্চা’ গালিটা পরিচালক তার মুখ দিয়ে বলাবেনই। নিষ্ঠুর ধরনের ভিলেন হিসেবে তিনি কুখ্যাত, কখনোই তাকে হিউমারাস এপ্রোচ অবলম্বন করতে দেখা যায়নি। মিশা সওদাগর আসার আগ পর্যন্ত তাকেই মনে হতো সবচাইতে কমপ্যাক্ট ভিলেন। বিশেষ করে দাঁতের মাঝখানে ফাঁক থাকার কারণে ক্লোজ শটগুলোতে তাকে লাগতো ভয়ংকর। এখনো সিনেমা করছেন, কিন্তু আশি বা নব্বই দশকে যে রাজত্ব করেছেন, সেটা বয়সের কারণে হারিয়ে এখন পরিণত হয়েছেন চরিত্রাভিনেতায়।
টেলিভিশন মিডিয়া থেকে গিয়ে সাদেক বাচ্চু সিনেমাতে পসার জমানোর চেষ্টা করেছিলেন, মাঝারি মানের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন, কিন্তু ধরে রাখতে পারেননি।
গোলাম মোস্তফাদের সময়ই আরেকজন ভিলেন ছিলেন দারাশিকো। তিনি খুব বেশি অভিনয় না করে সিনেমা প্রযোজনাতেই বেশি মনোযোগী হয়েছিলেন।
তবে স্বাধীনতা পূর্ব এবং পরবর্তী সময়ে সবচাইতে সম্ভাবনাময় ভিলেন ছিলেন রাজু চৌধুরী। নায়িকার সাথে ভিলেনের প্রেম, এরকম অসম্ভব ঘটনাও অফস্ক্রিনে ঘটিয়েছিলেন তিনি। আততায়ীর হাতে খুন হওয়ার আগ পর্যন্ত দাপট অব্যাহত ছিলো তার।
মিজু আহমেদ খুব অল্প সিনেমাতেই প্রধান ভিলেন থেকেছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আরও কয়েকজন ভিলেনের মধ্যে তিনি একজন হয়ে থাকতেন। একই কথা প্রযোজ্য প্রয়াত নাসির খানের বেলায়ও। তার একটা ডায়ালোগ বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলো –‘মামা বলতো ভাগ্নে, বেশি লোভ করিস নে’।
মিশা সওদাগর শুরু করেছিলেন নায়ক হিসেবে, কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি। ৯০ এর দশকে সালমান শাহ, ওমর সানী বা অমিত হাসানদের তারুণ্যে সিনেমার কনসেপ্ট এ প্রধান ভিলেনের ছেলে বা ছোট ভাইয়ের একটা চরিত্র থাকতো যার কাজ হতো নায়িকাকে বিরক্ত করা। এই চরিত্রগুলোতে একচেটিয়া অভিনয় করতেন মিশা আর ডন। সালমানের সিনেমায় ডন আর ওমর সানীর সিনেমাতে মিশা, এটাই ছিলো কমনচিত্র। সালমানের মৃত্যুর পর ডন পিছিয়ে পড়েন, মিশা উঠতে থাকেন। এখন তো সিনেমার ভিলেন মানেই মিশা সওদাগর; নায়ক হিসেবে শাকিব খানের তবু বিকল্প আছে, কিন্তু মিশা হয়ে উঠেছেন সবেধন নীলমনি। সবচাইতে বেশি সিনেমায় ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করে তিনি রেকর্ড করেছেন। এক্টর হিসেবে মিশা চলনসই, খুব খারাপ বলা চলে না। কিন্তু স্টোরিলাইন এতো নিম্নমানের থাকে যে, তার খুব বেশি কিছু দেখানোর স্কোপও থাকে না।
ডিপজল বাংলা সিনেমাকে পশ্চাদমুখী করার ক্ষেত্রে ভিলেন। তাকে নিয়ে বলার কিছু নেই। খুব কম সিনেমাতেই শেষ দৃশ্যে তাকে পুলিশ ধরেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নায়কের হাতে তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সিনেমা শেষ হয়েছে। তার সংলাপ বলার একটা ইউনিক স্টাইল আছে; সেটা সে যে চরিত্রেই অভিনয় করুক, বদলাতো না।
ইদানীং শানু শিবা (সম্ভবত বাংলা সিনেমার এযাবৎকালের দীর্ঘতম অভিনেতা) ভিলেন হিসেবে উঠে আসার চেষ্টা করছেন। এককালের নায়ক অমিত হাসান পুরোদস্তুর ভিলেন হয়ে গেছেন।
কোনো সিনেমাতেই খুব বেশি সময় উপস্থিতি থাকতো না, তবু ভিলেন বললে জাম্বুর ইমেজ মাথায় আসবেই। দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন এই অভিনেতাটি। তার মুখে সংলাপ থাকতো কম, নায়কের হাতে মার খাওয়াই ছিলো তার একমাত্র কাজ। তবু অদ্ভুত কোনো কারণে তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।
আমীর সিরাজী, বাবর, ইলিয়াস কোবরা, গাঙ্গুয়া-এরা প্রচুর সংখ্যক সিনেমায় অভিনয় করলেও প্রধান ভিলেন হতে না পারার কারণে আলোচনায় থেকেছেন কম। আরমান, মোসলেম, চিতা, সাকোপাঞ্জা এরা মূলত ফাইট ডিরেক্টর, ভিলেনের সহযোগী হিসেবে নায়কের হাতে জীবনভর মার খাওয়াই তাদের নিয়তি ছিলো।
রাজীব আর হুমায়ুন ফরীদি প্রসঙ্গে ফিরি। রাজীবের বাড়তি এডভান্টেজ ছিলো তার হাইট এবং ভয়েজ। এর বাইরে তিনি ছিলেন প্রচণ্ড ফ্যাশন সচেতন। তার সানগ্লাস, হ্যাট, ড্রেস আপ সবকিছুই সমসাময়িক ভিলেনদের চাইতে তাকে এগিয়ে রাখতো। তার প্রায় সব সিনেমাতেই ভিলেনের একটা কমন ডায়ালোগ থাকতো। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে ‘জানে পানি নাই’, ‘রাজনীতিতে একটা কথা আছে’। তিনি ছলনা খুব ভালো করতেন অনস্ক্রিনে। এফডিসির মহাপরিচালক হওয়ার পর ভিলেন থেকে পজিটিভ ইমেজের চরিত্র বেশি করতে শুরু করেন, আমি মনে করি এটা ছিলো একটা ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ রাজীব বললে মানুষ যেরকমটা বোঝে, পজিটিভ ইমেজে সেই রাজীবকে কোনোভাবেই মানিয়ে নেয়া যায় না।
হুমায়ুন ফরীদির শুরুটা ছিলো থিয়েটারে, সেখান থেকে টেলিভিশন, পরে সিনেমায়। মাঝে কয়েকবছর টেলিভিশন থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিলেন, কিন্তু সংশপ্তক নাটকের কানকাটা রমজানকে মানুষ আজও মনে রেখেছে। অশ্লীলতা বেড়ে যাওয়ার সময়টাতে তিনি আবারো টেলিভিশনেই নিয়মিত হয়েছিলেন। ছিলেন ক্রিকেটপাগল। বাংলাদেশের খেলা হলেই মাঠে চলে যেতেন। ভিলেন প্রসঙ্গে নাটক বা ক্রিকেটের প্রসঙ্গ চলে এলো আসলে তার চারিত্রিক ডাইমেনশন বোঝার অভিপ্রায়ে। তিনি অভিনয় করতে চেয়েছেন, সেটা যে মাধ্যমেই হোক। এতে তিনি সব মাধ্যমেই আছেন, কিন্তু কোথাও ই পরিপূর্ণভাবে নেই। সিনেমার অঙ্গনের মানুষ বলে উনি নাটকের লোক, নাটক পাড়ার মানুষের কাছে সিনেমায় ভীড়ে যাওয়া অভিনেতা। ফলে তার মধ্যে একটা আইডেন্টিটি ক্রাইসিস আছে, যেটায় পড়েছিলেন একদা এটিএম শামসুজ্জামান। তিনি সেটা উতরে গেছেন, কারণ তখনও টিভি মিডিয়া সেভাবে বিকশিত হয়নি। অনস্ক্রিনেও ভিলেন একটি আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগে; সে ক্রমাগত খারাপ কাজ করে, দুষ্টবুদ্ধি বানায়, তার চরিত্রের গন্তব্য নিশ্চিত, সবাই সেটা জানে, তবু সে ফন্দি-ফিকির আটে, যার কোনো মানে নেই। দর্শক পয়সা খরচ করে হলে এসেছে তার পরাজয় দেখতে, তার দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া উপভোগ করতে, এবং সেই উপভোগটা বাড়িয়ে তাতিয়ে দেয়ার জন্য সে কতকিছু দুমড়ে মুচড়ে দেয়। সে জানে কোনো তালি তার জুটবে না, একজন মানুষও তার পক্ষে নেই। পরিচালক সত্যের বিজয় দেখাবেন, আমরা ন্যায়কে সমুন্নত দেখার আশা করি, এর মধ্যে বেচারা ভিলেন নীলকণ্ঠ পাখির আচরণ করে যায়। এর চাইতে বড় আইডেন্টিটি ক্রাইসিস আর কী হতে পারে। তাই হুমায়ুন ফরীদিই সত্যিকার ভিলেন চরিত্রটি রিপ্রেজেন্ট করেন। বস্তুত, তিনি একজন অভিনেতা। পজিটিভ চরিত্রেও তিনি সমান সফল। তামিল সিনেমায় প্রকাশ রাজ যেমন ভালো-মন্দ দুই চরিত্রেই মানানসই, বাংলা সিনেমার জন্য হুমায়ুন ফরীদিও একই রোল প্লে করেছেন, জানি না বাংলা সিনেমার কথা শুনে নাট সিঁটকানো বোদ্ধাগোষ্ঠী আদৌ তা ভেবেছেন কিনা।