নামহীন-দামবিহীন বইয়ের পাঠ প্রতিক্রিয়া (হাসান মাহবুব)
জনাব হিমালয় পাই,
আপনার নাম না দেয়া নির্দিষ্ট দাম না দেয়া বইটা পড়লাম। তবে এটাকে বইয়ের মর্যাদা কি আপনি আসলেি দিয়েছেন? আপনি অবসেশন দ্বারা পরিচালিত। লেখালেখি আপনার ভালো লাগে না। এতে আপনার অবসেশন কাজ করে না। তাই লেখাকে আপনি আপনার চিন্তা প্রকাশের একটি ‘টুল’ হিসেবে দেখেছেন কেবল। আপনি চিন্তায় বাঁচেন, চিন্তায় হাঁটেন। সেই চিন্তাগুলিকে নিতান্তই অবহেলায় শব্দ দিয়ে বেঁধেছেন, কোন এডিট করেন নি বানান এবং ব্যাকরণের ভুল ছাড়া। তাহলে আমাকে এই কথার উত্তর দিন জনাব তপেন সাহা ওরফে হাইফেন ওরফে হিমালয় পাই, আলোচনা আসলে আপনার বই নিয়ে হওয়া উচিত, না কি আপনার চিন্তা নিয়ে? আপনার চিন্তাধারা সম্পর্কে যদি আমি আগে থেকেই ৭০% জেনে থাকি, তাহলে এই বই আমাকে কেন পড়তে হবে বাকি ৩০% এর জন্যে? ৬১৯ পৃষ্ঠার বই, যার বেশিরভাগ জায়গা জুড়েই আত্মঅহমিকা ৩১৭৯ নামক অতি বোরিং চরিত্রটির সাথে একঘেয়ে আলাপে ভরপুর? আপনি এই রিপিটেশন, এই আত্মম্ভরীতা সবকিছুই স্বীকার করে নিয়েছেন, আবার এগুলোর পক্ষে যুক্তিও দিয়েছেন নানারকম। অভিযোগ উত্থাপন করেছেন দুর্বল ভঙ্গিতে, আর উড়িয়ে দিয়েছেন ডাইনামাইট নিয়ে, এ আপনার কেমন খেলা? তবে আমরা যেহেতু ‘এভারেজ’ মানুষ, আমরা আপনার শব্দের গাঁথুনি, আপনার বাক্যের প্রসার, আপনার চিন্তার ব্যাপকতা সবকিছুকে কাঠামোতেই বাঁধবো, এবং আপনার চিন্তা প্রকাশের ‘টুল’কে লেখা হিসেবেই স্বীকৃতি দিবো।
আপনার বইয়ে আপনি কী লিখেছেন সেট আপনিই ভালো জানেন, তারপরেও এটা সম্পর্কে কিছু বলতে হচ্ছে, যেহেতু লেখাটা ইনবক্সে দিচ্ছি না, ফেসবুক নামক সোশাল মিডিয়ায় দেয়া একটি পাবলিক স্ট্যাটাস এটি। দু-দশজন পড়বে। তাই তাদের উদ্দেশ্যে বইটি সম্পর্কে একঘেয়ে কিছু বলে নেয়া ভালো। এ অংশটি আপনি চাইলে স্কিপ করতে পারেন।
মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয় রচিত পঞ্চম গ্রন্থ এটি। এর আগে তার দুইটি গল্পগ্রন্থ, ১টি অনুবাদ এবং ১টি ক্রিকেট বিষয়ক নিবন্ধের বই বের হয়েছিলো। এই বইটির আঙ্গিক বায়োফিকশন। তার শৈশব থেকে শুরু করে বর্তমানের পথ পরিক্রমা। এখন কথা হচ্ছে এরকম কাহিনী তো অনেক পড়েছেন তাই না? এই যেমন লেখক ছোটবেলায় কোন স্কুলে পড়েছেন, কয়টা বন্ধু হয়েছে, কবে প্রথম প্রেমে পড়েছেন, কতবার হোঁচট খেয়েছেন, তারপর অবশেষে সব বাধা জয় করে আত্মজীবনী লেখার মত জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন, এরকমই হবার না ব্যাপারটা? সফল লোকেরাই সাধারণত মন মেজাজ ভালো থাকলে সময় সুযোগ মিললে আত্মজীবনী লেখে। কিন্তু আমাদের এই বইয়ের লেখককে কি সফল বলা যায়? এটা একটা চরম সাবজেক্টিভ প্রশ্ন হয়ে যাবে। সে সফল লেখক না। তা আগের চারটা বইয়ের একটাও “চলে নাই”। যদিও বীক্ষণপ্রান্ত নামক গ্রন্থটি নিয়ে তার ব্যাপক উচ্চধারণা (বইটি আসলেই ভালো, যারা এক্সপেরিমেন্টাল গল্প পছন্দ করেন তারা পড়তে পারেন)। অর্থবিত্তও তেমন নাই। তাহলে সে কিসের সফল? মজার ব্যাপার হচ্ছে তার কাছে ব্যর্থ হওয়াটাই সবচেয়ে বড় সফলতা। সে বাস করে নিজের তৈরি অবসেশন, নিজের তৈরি ক্যারেক্টারের মোহে, সংখ্যার প্রাসাদে। লেখকে সংখ্যা নিয়ে ব্যাপক অবসেশন আছে। সে সবকিছুকে সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করার উপায় খোঁজে। আপনি, আমি, সম্পর্ক, সবকিছুই সে সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করতে পারে। পুরো বইয়ে সে ৩১৭৯ নামক অনুভূতিপ্রবন নারী এবং ১১৫৭ নামক প্রজ্ঞাবান পুরুষের সাথে কথোপকথনে ব্যস্ত থাকে। এই কথোপকথনের মধ্যে থাকে জীবন সম্পর্কিত নানারকম দর্শন, ঝগড়াঝাটি, শ্লেষ, বিদ্বেষ, বিজিনেস ইত্যাদি। বইটির অধ্যায় মোট সাতটি। সাতটি অধ্যায়ের নামকরণও উদ্ভট সব সংখ্যা দিয়ে। যাই হোক, আশা করি সম্ভাব্য পাঠকদের মোটামুটি ধারণা দিতে পেরেছি বইটি সম্পর্কে। এবার লেখকের সাথে বাৎচিত করা যাক!
আপনাকে আগেই বলেছি, আমি আপনার চিন্তার সাথে কথা বলবো। আপনার শব্দের সাথে না। যেহেতু আপনার কাছে শব্দটা জাস্ট একটা মাধ্যম, এর বেশি কিছু না। আপনার চিন্তাশক্তির পরিচয় আমি আগেও পেয়েছি। বেশ অনেকবারই পেয়েছি। তবে আপনারা এ্যানালিটিকাল এ্যাবিলিটির চেয়ে জীবন বিষয়ক দর্শনই আমাকে বেশি প্ররোচিত করেছে। প্রথম যখন অন্যরকম গ্রুপে আসি, আপনার উদ্ভট কর্মকান্ড আর কথাবার্তা দেখে মনে হতো আপনি ইচ্ছে করে অন্যরকম সাজতে চাইছেন সবার সামনে। কিন্তু আপনি যে আসলে কী মাল, সেইটা বুঝতে অনেকদিন সময় লেগে গেছে। আপনার মনে আছে, প্রথমদিকে যখন ইলেকট্রনিক্সের অফিসে এলাম মিরপুরে, আপনাকে স্মার্টফোন কেনার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কত বুঝিয়েছি! আপনি বলতেন যে আপনার কাছে স্মার্টফোন কেনার পেছনে যে টাকাটা খরচ হবে সেটার চেয়ে নবীশ কাউকে দিয়ে স্টুডিওতে গান গাওয়ানো অথবা কাউকে উদ্ভট কোনো পদকে বা পুরস্কারে ভূষিত করতেই আপনার ভালো লাগে। প্রথমে বিশ্বাস করতে পারি নি। একবার আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে আমি ৫০ লক্ষ টাকা পেলে কী করবো। যখন জবাব পেলেন যে আমি ফ্ল্যাট কিনবো, তাতে খুব আহত হয়েছিলেন। আপনার আহত হওয়া আমাকে অবাক করেছিলো। ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনার ইচ্ছা কেউ করলে এতে আহত হবার কী আছে! এখন আমি বুঝি আপনাকে। তাই আপনার চিন্তাগুলোকে কানেক্ট করতে পারি।
এতক্ষণ ধরে ভাবছিলাম লেখাটাকে কীভাবে একটা শেপে আনা যায়। র্যান্ডম কথাবার্তা বেশি হয়ে যাচ্ছিলো। তবে র্যান্ডম কাজকর্মগুলিই আসলে আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয়, তাই না? হ্যাঁ, যেটা বলতে চাচ্ছিলাম, আমার কাছে আপনার বইয়ের মূল থিম মনে হয়েছে কানেক্টিভিটি। কানেক্টিভিটি একটা মহাকারণের জন্যে। এই যে আমাদের বেঁচে থাকা, খাদ্যগ্রহণ, বর্জ্যত্যাগ, দিনের পর দিন, বছরের পর বছর যদি এসবই চলতে থাকে, তাহলে মহাকারণ মুখ থুবড়ে পড়বে। মানুষ হয়তো ব্যক্তিগতভাবে খুব সফল জীবন যাপন করে যেতে পারে, প্রচুর ফূর্তি করতে পারে, পরিবারকে সুখী করতে পারে, কিন্তু সেটা কোনো গ্রেটার পারপোজ সার্ভ করে না। ঠিক না? আপনি আপনার চিহ্নকে হাজারো শরীর, হাজারো অশরীর, হাজারো মনের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান। এটা ঠিক আপনারও চাওয়া না, এটা হলো মহাসাধনার একটা অংশ। আমাদের হয়তো সেভাবেই বলছে কেউ প্যারালাল ওয়ার্ল্ড থেকে, আমরা শুনতে পারছি না। বা শুনলেও অগ্রাহ্য করছি। আপনি প্যারালাল ওয়ার্ল্ডম , ব্ল্যাক ম্যাজিক, নিউমারোলজি ইত্যাদিতে বিশ্বাস করেন। আপনি মনে করেন সংখ্যা, শব্দ এগুলো র্যান্ডম জিনিসপাতি না। এগুলো ভাংলে অনেককিছুই পাওয়া যায়। সবখানেই প্রচুর চিহ্ন আছে। এই চিহ্ন ধরে এগুতে থাকলে একসময় হয়তো বা মহাকারণের উৎস খুঁজে পাওয়া যাবে, হয়তো বা পাওয়া যাবে না, কিন্তু এই পথচলাতেই আপনার আনন্দ। এবং এটাও হয়তো জানেন যে পথের শেষে নিশ্চিতভাবেই কিছু নেই। কিন্তু তবুও থেমে যাওয়া যাবে না। হোঁচট খাওয়া যাবে, তবে থেমে যাওয়া যাবে না।
আপনার ব্যক্তিগত দর্শনের সাথে আমার ভাবনার মিল আছে অনেকটাই। তবে ভিন্নভাবে। আপনার কাছে আর্ট একটা ভেক ধরা Vague জিনিস। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় মানুষ শিল্প-সাহিত্যের মাধ্যমেই মহাকারণের সাথে সবচেয়ে ভালোভাবে কানেক্টেড হতে পারে। আপনার মতে লেখায় শব্দব্যঞ্জন, উপমা, বর্ণনাবাহুল্য থাকা একদমই অপ্রয়োজনীয় জিনিস। আপনার মতে ১১টা বর্ণনানির্ভর উপন্যাস আর ১৭টা আধুনিক কবিতার বই পড়লে পরে এগুলো থেকে আর কিছু পাওয়ার থাকে না। এইখানেই আপনার সাথে আমার সংঘাত। জোর সংঘাত! আপনি একবার বলেছিলেন বিভূতিভূষণের চাঁদের পাহাড় আপনার ভালো লাগে নাই, কারণ ওতে বর্ণনার বাহুল্য আছে। আমি পালটা যুক্তি দিয়েছিলাম প্রকৃতিকে পাঠকের মনের চোখে ভিজুয়ালাইজ করতে সেই বর্ণনার বিকল্প কী! লেখক নিশ্চয়ই রঙতুলি দিয়ে ছবি আঁকতে বসে যাবেন না! তার জবাবে আপনি বললেন যে সেটা আগেকার যুগের লেখকের জন্যে ঠিক ছিলো, এখন তো সিনেমা তৈরি হয় রঙচঙে ঝকঝকে, তাহলে আর অত ঘটা করে বর্ণনানির্ভর লেখা কেন লিখতে হবে! অদ্ভুত কথা! তবে হ্যাঁ, আপনার কথায়ই ফিরি আবার। ইনটেনশনই আসল। কোনো লেখকের যদি নিয়ত থাকে যে দেখো আমার কত শব্দ আছে, দেখো আমি কত কিছু পারি, সেটা মহাকারণের মোহনায় গিয়ে মিশবে না কখনই। কিন্তু যদি শব্দ তৈরি করা কারো নেশা হয়? কেউ যদি ঘোরের মধ্যে থেকে নতুন এক পৃথিবী, অথবা অজস্র সমান্তরাল পৃথিবী তৈরি করে যায় ক্রমাগত তার কল্পনা দিয়ে, আপনি তাকে “অগভীর চিন্তা, ভেতরে মাল নাই” বলে বাতিল করে দিলে হবে না কি!
দেখেন, আমার কথার মিসইন্টারপ্রেট কইরেন না। আমিও লিখি, এবং আমিও বর্ণনার বাহুল্যতে আক্রান্ত অনেকক্ষেত্রেই এই কারণে আপনাকে এভাবে চেপে ধরা না। আমি আসলে বলতে চাইছি যে, আপনি আপনার এই বক্তব্যের মাধ্যমে কানেক্টিভিটির সূত্রকে অগ্রাহ্য করছেন। আপনি লেখক পরিচয়কে তুচ্ছ করে মেমরি ক্রিয়েট, ইনোভেশন আর উদ্যোগের মাধ্যমে মহাকারণের সাথে সংযুক্ত হতে চান, অগভীর, এভারেজ বলে ছুড়ে ফেলেন লেখক, গায়ক, এমন কি প্রোগ্রামারদেরও। এই চিন্তা একদমই সমর্থন করতে পারলাম না।
আপনার বইয়ে আপনি প্রোগ্রামারদের সম্পর্কে বলেছেন যে তারাও টুল ইউজারের চেয়ে বেশি কিছু না। সিরিয়াসলি? প্রোগ্রামিং কি শুধুই একটি টুল? প্রোগ্রামাররা তো এক ধরণের ঈশ্বর! লেখকরা যেমন ঈশ্বর, কবিরা যেমন ঈশ্বর, তেমন প্রোগ্রামাররাও। তবে হ্যাঁ, সবাই না। কেউ কেউ।
আচ্ছা, টুল শব্দটাকে আপনি এত তুচ্ছ করেন কেন? পেপারওয়েটও এক ধরণের টুল, আবার রকেটও এক ধরণের টুল। এখন আপনেই মিলান! রকেটের কলকব্জা যারা নাড়চাড়া করে তারা কি দুই মাস আবাসিক ট্রেইনিং নিয়ে সব শিখেপড়ে নিতে পারবে? (আমার পরবর্তী উপন্যাস “ছহি রকেট সায়েন্স শিক্ষা”য় পড়ে নিয়েন বিস্তারিত)।
আপনার কাছে সায়েন্সও তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। কারণ সায়েন্স মানুষকে আরো সীমাবদ্ধ করে ফেলে। মানুষ যত বেশি জানে বলে মনে করে, তত বেশি দূরে সরে যায় মহাকারণ থেকে। হারায় কানেক্টিভিটি। এই কথাটা অবশ্য আপনি একদম খারাপ বলেন নাই! সায়েন্স দিয়ে হয়তো সবকিছু আমরা কখনই জানতে পারবো না। কিছু অজানা, কিছু অধরা থেকেই যাবে। কিন্তু তাই বলে যদি আপনি বলে ফেলেন যে নিউমারোলজি, শব্দের ভেতরের গুপ্ত সংকেত, ব্ল্যাক ম্যাজিক এগুলা দিয়ে আপনি প্যারালাল ইউনিভার্সের সন্ধান পাবেন, তাহলে আপনাকে আমি বলবো, আপনার এই ফিলোসফিকাল ম্যাডনেস আমার ভালো লাগে, কিন্তু আপনার ভাষাতেই আপনি সায়েন্স নিয়ে “ভাসা ভাসা” ধারণা নিয়ে বড় বড় কথা বলছেন। সায়েন্স আপনি কখনই সেভাবে আত্মস্থ করতে পারেন নাই(আমিও না), সেই কমপ্লেক্স থেকেই কি এই বয়ান দিলেন?
আপনার এই বিশাল বই নিয়ে লিখতে গেলে আমাকেও বিশাল কিছুই লিখতে হবে। কিন্তু জানেন তো, আমি লেখক যতটা, ততটা সাধক না। আপনি যে আমাকে বলেছেন আমার গল্পের প্যাকেজ সম্পর্কে, এই যে ১৮০০ থেকে ২২০০ শব্দের গঁৎ (৩০০০ শব্দও আছে অবশ্য), সেটা আমি স্বীকার করে নিচ্ছি। তবে এটাও বলে রাখি, বড় করার জন্যে বড় করার মানে হয় না। আপনি ৬১৯ পৃষ্ঠার বই লিখে খুব খুশি। কিন্তু এই বইয়ের কন্টেন্ট ৬১৯ পৃষ্ঠার না। কোনভাবেই না। ৩১৭৯ এর সাথে আপনার কথোপকথন বিরক্তিকর হয়ে ওঠে তখনই যখন সেটা পুনরাবৃত্তির দোষে দায়ী হয়। এর পেছনে আবার আপনি যুক্তি দিয়েছেন, চিন্তার প্যাটার্ন বোঝার জন্যে আরো কত কী সব, ওগুলো বলে লাভ নেই। যা বিরক্তিকর, তা বিরক্তিকরই। ১১৫৭ ছিলো অতি আকাঙ্খিত এক চরিত্র। কিন্তু তার সাথে এত কম কথা বললেন কেন? এর পেছনেও যুক্তি দিবেন? স্যরি মানা যাবে না। আপনি নিজেই বলেছেন যে বই লিখেছেন টাল অবস্থায়। আপনি বইয়ের নান্দনিক দিক, সুবিন্যস্ত করা এসব নিয়ে ভাবেন নি। যা মনে এসেছে লিখে গেছেন। হ্যাঁ, এই কারণেই বইটা মেদবহুল হয়েছে, সেক্সি হয় নাই। আপনি ৩১৭৯ এর প্রতি প্রবলভাবে আসক্ত, এটা বোঝাই যায়। আপনি একটু পরিকল্পনামাফিক লিখলে এইটা প্রতিদিন একবার করে পড়ার মত জিনিস হইতো।
আপনার চরিত্রের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হল হিউমার। আপনার হিউমার বোধ অসাধারণ। তপেন সাহা হলেও, হাইফেন হলেও। আমি আশা করেছিলাম রসে টইটম্বুর এক বই পাবো। বইয়ের শেষের দিকে রসের দেখা পেয়েছিও। তবে আরো বেশি হলে ভালো হতো।
তবে বইয়ের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো বিজিনেস বিষয়ে আপনার চিন্তাভাবনা। আপনি নতুন বিজিনেস খুলতে যাচ্ছেন। আপনার বইয়ে সেটার দিক নির্দেশনা দেয়া আছে, বইটি একই সাথে আপনার সিভি, আবার একটি চাকুরির বিজ্ঞাপনও। আপনি বইয়ের শেষের দিকে আপনার কাল্পনিক মেন্টর মধুসূদনকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন বইটির বহুমাত্রিকতাকে পারলে অপোজ করুক! হ্যাঁ, এটাকে ৩১৭৯র সাথে আপনার প্রেমের বই হিসেবেও দেখা যায়, আপনার ব্যবসার বিজ্ঞাপন হিসেবেও দেখা যায়, আবার আপনার সিভি হিসেবেও দেখা যায়। কিংবা একটা ফিলোসফিক্যাল হলি বুক হিসেবে দেখলেই বা ঠেকাচ্ছে কে?
আমার কাছে এটার ফিলোসফিকাল ভেলু মারাত্মক রকম বেশি। বইটা শেষ করার পর আমি নিজেকে প্রশ্ন করেছিলাম সেই অতি পুরনো জিজ্ঞাসাটি।
কীজন্যে এসেছি? কোন ছাপ রেখে যেতে পারবো কী? নাকি আমার জৈবিক দেহ সার হয়ে কচুগাছের পুষ্টি যোগানোর মাধ্যমেই তার মোক্ষলাভ করবে?
এক সপ্তাহ আগে যে জোশটা এসেছিলো, তা স্বাভাবিকভাবেই খানিকটা ম্রীয়মাণ হয়ে এসেছে, তবে লিখতে লিখতে আবারো আপনার সাথে কানেক্টেড অনুভব করছি। নাহ, আপনাকে ভালোবাসা বা ঘৃণা করা যায়, তবে ইগনর করা যায় না। আপনার বইটাকেও না। অতি জঘন্যরকম এ্যারোগেন্স, রিপিটেশন থাকা স্বত্বেও। আপনি নিজেকে ওপেন করে দিয়েছেন। বইটাকেই একটি শরীর বানাতে চেয়েছেন। আপনার এমন কোনো গোপন নেই যা আপনি বলেন নি। পড়তে গিয়ে অস্বস্তিই লাগে। কিন্তু আপনার এই মহান উদারতা সবার জন্যে সমান না। তাই বিভিন্ন মানুষের সম্পর্কে প্রকাশ্যে যা বলেছেন, বিশেষ করে অন্যরকম গ্রুপকে নিয়ে, এইটা কোনো ভালো চর্চা না। আপনি কি তসলিমা নাসরীনের ‘ক’ লিখতে বসছেন না কি যে সবার দুর্বলতা উন্মোচন করে দিয়ে কাটতি বাড়াবেন?
আজ তাহলে বিদায়। হাইফেন বসরে বইলেন যে আমি বিড়ি খাই না এখন আর তয় তার বিড়ি দেয়ার এ্যাপ্রোচটা ব্যাপক এনজয় করি।
যারা কষ্ট করে এই লেখাটা এতদূর পড়েছেন তারা এই নামহীন এবং নির্দিষ্ট দামহীন বইটিকে পেতে চাইলে himalay777@gmail.com এ মেইল করে জানান কেন বইটি পড়তে চান, এবং এর জন্যে কত দাম নির্ধারণ করেছেন।
যাই…
পুনশ্চ- আপনার কাছে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম বইয়ে সেরকম ‘বাণী’ থাকবে কি না যা উদ্ধৃত হবার মত, চর্চা করার মত, হ্যাঁ সেরকম আনকোরা বেশ কিছুই পেয়েছি। তার মধ্যে দুটো এখানে উল্লেখ করছি।
“ইম্যাচুরিটি এক ধরণের ব্লেসিং”
“এক মণ দুধের মধ্যে এক ফোঁটা চুন পড়লে নষ্ট হয়ে যায়, মানুষ সম্পর্কে এই মানসিকতা জঘন্য”।
আশা করি এমন আরো অনেক উপলব্ধি ছড়িয়ে দিবেন।